লিখেছেনঃ মুক্তমনা!
হযরত আয়েশাকে নিয়ে কুরআনে যে সুরাটি লেখা হয় তার নাম “সুরা নূর”। এই সূরার নামকরণ কি আল্লার তরফ থেকে এসেছে? কুরআনের প্রতিটি সুরার যে নামকরণ আমরা দেখি সেটা কি লওহে মাহফুজে লিখিত কুরআনে উল্লেখ আছে? তা যে নেই তার প্রমাণ আমরা পাই প্রতিটি সুরার নামকরণ দেখে। যেমন সুরা নূরের পঞ্চম রুকূ’র প্রথম আয়াত থেকে এই সুরার নাম “নূর” নামকরণ করা হয়েছে। এই আয়াতে আল্লাহকে একটি আলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তবে আমাদের এই আলোচনায় কেবল হযরত আয়েশাই থাকবে মূখ্যত। এই সুরা লেখার অন্যতম কারণ হলো আয়েশাকে অসতী সন্দেহ ও তাকে এ থেকে দায়মুক্তি।
আয়েশাকে নিয়ে যে বিতর্ক ঘটে সেটি বনীল মুসতালিক যুদ্ধের সময়ের একটি ঘটনা। বনীল মুসতালিক গোত্রটি বনী খুযা’আর একটি শাখা। ৬ হিযরি শাবান মাসে হযরত মুহাম্মদ বনীল মুসতালিক গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানে বের হন। কারণ সেই যথারীতি “মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র”! অভিযান সফল হয় মুহাম্মদের। আক্রমণ করে গোত্রের সয়-সম্পদ হস্তগত হয় ভাল মতই। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা করে আছে ভয়াবহ এক পারিবারিক দুর্যোগ। এর আগে ৫ হিজরী যিলকদ মাসে এক কেলেংকারিতে বড় রকমের এক ধাক্কা খেতে হয়েছে তাকে ও তার নতুন ধর্ম ইসলামকে। পুত্রবধূ যয়নবকে বিয়ে করে তিনি খোদ মুসলিমদের মধ্যেই তীব্র অসন্তোষের কারণ হয়েছিলেন। আরবে সেই আধা সভ্য সমাজেও এই কাজকে অনৈতিক হিসেবে দেখা হয়েছিল। সেই ধাক্কা আল্লার উপর চাপিয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পেলেও সামনে যে ধাক্কাটি মুহাম্মদের জন্য অপেক্ষা করে ছিল তার জন্য তিনি সম্ভবত স্বপ্নেও কোনদিন ভাবেননি। প্রিয়তম স্ত্রী হযরত আয়েশার পরপুরুষের সঙ্গে রাত্রী যাপন! ছিঃ ছিঃ করে উঠল মুহাম্মদের অনুসারীরা। খোদ প্রিয় সন্তানতুল্য হযরত আলী পরামর্শ দিলেন আয়েশাকে পরিত্যাগ করতে। হযরত মুহাম্মদ ঘরের বাঁদীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন আয়েশার মধ্যে খারাপ কিছু দেখেছে কিনা। কি করবেন মুহাম্মদ ভেবে কূল পেলেন না। তিনি নিশ্চিত নন আয়েশা সত্যিই বিশ্বাস ভঙ্গের মত কিছু করেছে কিনা। যে জিব্রাইল ঘন্টায় ঘন্টায় তার কাছে হাজির হন তখন সে লাপাত্তা! মুহাম্মদ মসজিদে খুদবায় ব্যথিত চিত্তে তার সাহাবীদের কাছে পরামর্শ চাইলেন, বললেন, আমার স্ত্রীর মধ্যে আমি কোনদিন কোন খারাপ কিছু দেখিনি। আবার যে পুরুষকে (সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী) নিয়ে কথা উঠছে সে-ও কোনদিন আমার অনুপস্থিতে বাড়িতে আসার চেষ্টা করেনি…।
সা’দ ইবনে মু’আয (কুখ্যাত বনু কুরাইজা ইহুদী গণহত্যার মুহাম্মদের অন্যতম সহযোগী) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, যদি বলেন তো আমরা তাকে (সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী) হত্যা করি! সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী ছিলেন অন্য গোত্রের লোক। তার গোত্রের লোকেরা এ কথা শুনে প্রতিবাদ শুরু করে দিলো। মসজিদে নববীতে দু’গ্রুপে তখন হাতাহাতি লেগে যাবার উপক্রম। স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ তখন মিম্বরে বসে আছেন। একটা রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ মুহাম্মদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত এড়ানো যায়। এসবের কিছুই আয়েশা তখন জানেন না। বনীল মুসতালিক অভিযান থেকে আসার পর আয়েশা অসুস্থ হয়ে যান। হাদিসে আয়েশা বর্ণনা করেছেন, ঘটনার পর রসুল্লাহ আমাকে এড়িয়ে চলতেন। কথা বলতেন না। ঘরে আসলে অন্যদের কাছে খবর নিতেন, ‘ও কেমন আছে’ বলে। আয়েশা এসব দেখে নিজের মায়ের বাড়ি যেতে চাইলেন। আয়েশার যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। [দেখুন-বুখারী শরীফ-৮ম খণ্ড-হাদিস নাম্বার ৪৩৯১ ও সহীহ বুখারী, আল মাগাযী অধ্যায়, হাদীস নং ৩৮৪৬]
আয়েশার বনীল মুসতালিক অভিযানে মুহাম্মদের সফর সঙ্গী হওয়ার কারণটি এই অবসরে বলে নেয়া উচিত। মুহাম্মদের ১৩ স্ত্রীদের যে কোন একজনকে তার সফর সঙ্গী হিসেবে নেয়া হতো। এই কাজটি মুহাম্মদ লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করতেন। বনীল মুসতালিক অভিযানের সময় আয়েশার নাম উঠেছি। উল্লেখ্য হযরত মুহাম্মদ জোতিষি, গণক, ভাগ্য গণনা করা শিরক ও হারাম করে দিয়েছেন। তাহলে তিনি নিজেই তার ও তার স্ত্রীদের ভাগ্য লটারির মাধ্যমে কেন নির্ধারণ করতেন? তাছাড়া এটি তো স্ত্রীদের প্রতি ন্যায় বিচারকেও নিশ্চিত করে না। যদি একই নাম একাধিকবার উঠতে থাকে তখন যে কেউ বঞ্চিত হবে। আরো একটি প্রশ্ন উঠে, যদি বনীল মুসতালিক অভিযানে আয়েশার নাম না উঠত তাহলে কি সুরা নূর লেখা হতো? কুরআন তাহলে লওহে মাহফুজে কেমন করে আগে থেকে লেখা থাকে?
সূরা নূরের যত প্রসিদ্ধ তাফসির পাওয়া যায় তা পাঠ করে, হাদিসে আয়েশা নিজে এই ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেই গল্পটি আমার কাছে অজুহাত টাইপের চেয়ে বেশি কিছু মনে হয়নি। আয়েশা নিজে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে বলেছেন, বনীল মুসতালিক অভিযানের শেষে ফেরার পথে মদিনার কাছাকাছি এক জায়গায় তাদের বাহিনী রাত্রী যাপনের জন্য তাবু ফেলে। রাত কাটিয়ে ভোররাতে যখন পুরো দল রওনা দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয় তখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে আয়েশা তাবুর বাইরে যান এবং ফেরার পথে খেয়াল করেন তার গলার হারটি হারিয়ে গেছে। হারটি খুঁজতে তিনি সময় নষ্ট করায় ফিরে এসে দেখেন তাকে ফেলেই পুরো কাফেলা চলে গেছে। কাফেলার লোকজন ভেবেছিল আয়েশা দলেই ছিলেন। আয়েশা সে জায়গাতেই ফের চাদরে নিজেকে জড়িয়ে শুয়ে পড়েন। সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখেন সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী মাত্রই উটে করে রওনা দিচ্ছেন।
আয়েশা বলেন, সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী বেলা করে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস ছিল। তাই সবাই রওনা হয়ে যাবার পর সে একা একা রওনা দিয়েছিল। আয়েশাকে সে দেখতে পেয়ে তাকে উটে উঠিয়ে নেন। দ্রুত প্রচার হয়ে যায় কাফেলায় আয়েশা নেই! কাফেলা এসে মদিনায় পৌঁছার পর সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামীর উট থেকে আয়েশা নেমে আসেন।… এই হচ্ছে কাহিনী। আবদুল্লাহ ইবন উবাই আয়েশাকে নিয়ে প্রকাশ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেন। মুহাম্মদ এমন বেকায়দায় পড়ে যান যে স্বয়ং আল্লার পক্ষেও এই অবস্থা থেকে তাকে বাঁচানোর উপায় নেই! আয়েশা যদি সত্যিই অসতী হন তো আল্লাহও সেটা চেপে রাখতে পারবেন না। উপরেই উল্লেখ করেছি মুহাম্মদ আয়েশার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আয়েশাই সেটা হাদিসে বর্ণনা করেছেন। কাজেই এই ঘটনা দিয়ে আল্লাহ ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছেন বলার কোন উপায় নেই। বরং এরপর আমরা দেখবো এই ঘটনা জের ধরে কি ভয়ংকর ইসলামী আইনের প্রণয়ন করা হয়েছিল। মাসাধিককাল অতিবাহিত হওয়ার পর যখন নিশ্চিত হলো যে আয়েশার রজস্রাব শুরু হয়েছে তখন আসমান-জমিনের সর্বজ্ঞাত আল্লাহ নিশ্চিত হলেন আয়েশা আর উক্ত সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামীর মধ্যে কিছু হয়নি!
তারপরই আল্লাহ আইন পেশ করলেন- //আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ লাগায়, তারপর চারজন সাক্ষী আনে না , তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং তাদের সাক্ষ কখনো গ্রহণ করো না ৷ তারা নিজেরাই ফাসেক ৷(সুরা নূর, ৪)//
এই হচ্ছে আল্লার মেডিকেল টেস্ট! কিভাবে সতী নারীর “সতীত্ব” নিশ্চিত হলো? সুরা নূর বলছে-
সুরা নূর পুরোটা পাঠ করলে দেখবেন এই ঘটনার পর কতখানি ভীত-তস্ত্র হয়েছিলেন মুহাম্মদ যে নারীকে একদম কাপড়ে মুড়ে ঘরের চার দেয়ালে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন নতুন আইন বানিয়ে। সেই অভিশাপের নিচে আজো মুসলিম নারী নিপীড়িত হচ্ছে। আজো মুসলিম নারী পর্দার নামে মানুষ হিসেবে নুন্যতম মানবাধিকার হতে বঞ্চিত। চারজন সাক্ষির যে আইন মুহাম্মদ জারি করলেন সুরা নূরে সেই বিধানের বদৌলতে ইসলামী বিশ্বে কোন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েও বিচার চাইতে পারেন না ধর্ষকের বিরুদ্ধে কারণ ধর্ষণের সময় হতভাগী নারীর চারজন সাক্ষি ছিলো না! বরং ধর্ষণের কথা প্রচার করলে সেই নারীটিকে বেভিচারের অভিযোগে একশটি বেত মারা হয়। পালক পুত্র যায়েদের স্ত্রী জয়নবের রূপ-লাবণ্য দেখে মুহাম্মদ যে কান্ড ঘটিয়েছিলেন সেটা নিশ্চিত তার মনে ছিল। তারপর আয়েশার ঘটনায় মুহাম্মদ নারীফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন নিশ্চিত! কারণ আমরা দেখি সুরা নূরে মুহাম্মদ নারীকে চরম সাজা দেন যা আজো ইসলামী রা্ষ্ট্রের নারীরা ভোগ করে থাকে।
হযরত আয়েশাকে নিয়ে কুরআনে যে সুরাটি লেখা হয় তার নাম “সুরা নূর”। এই সূরার নামকরণ কি আল্লার তরফ থেকে এসেছে? কুরআনের প্রতিটি সুরার যে নামকরণ আমরা দেখি সেটা কি লওহে মাহফুজে লিখিত কুরআনে উল্লেখ আছে? তা যে নেই তার প্রমাণ আমরা পাই প্রতিটি সুরার নামকরণ দেখে। যেমন সুরা নূরের পঞ্চম রুকূ’র প্রথম আয়াত থেকে এই সুরার নাম “নূর” নামকরণ করা হয়েছে। এই আয়াতে আল্লাহকে একটি আলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তবে আমাদের এই আলোচনায় কেবল হযরত আয়েশাই থাকবে মূখ্যত। এই সুরা লেখার অন্যতম কারণ হলো আয়েশাকে অসতী সন্দেহ ও তাকে এ থেকে দায়মুক্তি।
আয়েশাকে নিয়ে যে বিতর্ক ঘটে সেটি বনীল মুসতালিক যুদ্ধের সময়ের একটি ঘটনা। বনীল মুসতালিক গোত্রটি বনী খুযা’আর একটি শাখা। ৬ হিযরি শাবান মাসে হযরত মুহাম্মদ বনীল মুসতালিক গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানে বের হন। কারণ সেই যথারীতি “মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র”! অভিযান সফল হয় মুহাম্মদের। আক্রমণ করে গোত্রের সয়-সম্পদ হস্তগত হয় ভাল মতই। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা করে আছে ভয়াবহ এক পারিবারিক দুর্যোগ। এর আগে ৫ হিজরী যিলকদ মাসে এক কেলেংকারিতে বড় রকমের এক ধাক্কা খেতে হয়েছে তাকে ও তার নতুন ধর্ম ইসলামকে। পুত্রবধূ যয়নবকে বিয়ে করে তিনি খোদ মুসলিমদের মধ্যেই তীব্র অসন্তোষের কারণ হয়েছিলেন। আরবে সেই আধা সভ্য সমাজেও এই কাজকে অনৈতিক হিসেবে দেখা হয়েছিল। সেই ধাক্কা আল্লার উপর চাপিয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পেলেও সামনে যে ধাক্কাটি মুহাম্মদের জন্য অপেক্ষা করে ছিল তার জন্য তিনি সম্ভবত স্বপ্নেও কোনদিন ভাবেননি। প্রিয়তম স্ত্রী হযরত আয়েশার পরপুরুষের সঙ্গে রাত্রী যাপন! ছিঃ ছিঃ করে উঠল মুহাম্মদের অনুসারীরা। খোদ প্রিয় সন্তানতুল্য হযরত আলী পরামর্শ দিলেন আয়েশাকে পরিত্যাগ করতে। হযরত মুহাম্মদ ঘরের বাঁদীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন আয়েশার মধ্যে খারাপ কিছু দেখেছে কিনা। কি করবেন মুহাম্মদ ভেবে কূল পেলেন না। তিনি নিশ্চিত নন আয়েশা সত্যিই বিশ্বাস ভঙ্গের মত কিছু করেছে কিনা। যে জিব্রাইল ঘন্টায় ঘন্টায় তার কাছে হাজির হন তখন সে লাপাত্তা! মুহাম্মদ মসজিদে খুদবায় ব্যথিত চিত্তে তার সাহাবীদের কাছে পরামর্শ চাইলেন, বললেন, আমার স্ত্রীর মধ্যে আমি কোনদিন কোন খারাপ কিছু দেখিনি। আবার যে পুরুষকে (সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী) নিয়ে কথা উঠছে সে-ও কোনদিন আমার অনুপস্থিতে বাড়িতে আসার চেষ্টা করেনি…।
সা’দ ইবনে মু’আয (কুখ্যাত বনু কুরাইজা ইহুদী গণহত্যার মুহাম্মদের অন্যতম সহযোগী) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, যদি বলেন তো আমরা তাকে (সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী) হত্যা করি! সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী ছিলেন অন্য গোত্রের লোক। তার গোত্রের লোকেরা এ কথা শুনে প্রতিবাদ শুরু করে দিলো। মসজিদে নববীতে দু’গ্রুপে তখন হাতাহাতি লেগে যাবার উপক্রম। স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ তখন মিম্বরে বসে আছেন। একটা রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ মুহাম্মদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত এড়ানো যায়। এসবের কিছুই আয়েশা তখন জানেন না। বনীল মুসতালিক অভিযান থেকে আসার পর আয়েশা অসুস্থ হয়ে যান। হাদিসে আয়েশা বর্ণনা করেছেন, ঘটনার পর রসুল্লাহ আমাকে এড়িয়ে চলতেন। কথা বলতেন না। ঘরে আসলে অন্যদের কাছে খবর নিতেন, ‘ও কেমন আছে’ বলে। আয়েশা এসব দেখে নিজের মায়ের বাড়ি যেতে চাইলেন। আয়েশার যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। [দেখুন-বুখারী শরীফ-৮ম খণ্ড-হাদিস নাম্বার ৪৩৯১ ও সহীহ বুখারী, আল মাগাযী অধ্যায়, হাদীস নং ৩৮৪৬]
আয়েশার বনীল মুসতালিক অভিযানে মুহাম্মদের সফর সঙ্গী হওয়ার কারণটি এই অবসরে বলে নেয়া উচিত। মুহাম্মদের ১৩ স্ত্রীদের যে কোন একজনকে তার সফর সঙ্গী হিসেবে নেয়া হতো। এই কাজটি মুহাম্মদ লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করতেন। বনীল মুসতালিক অভিযানের সময় আয়েশার নাম উঠেছি। উল্লেখ্য হযরত মুহাম্মদ জোতিষি, গণক, ভাগ্য গণনা করা শিরক ও হারাম করে দিয়েছেন। তাহলে তিনি নিজেই তার ও তার স্ত্রীদের ভাগ্য লটারির মাধ্যমে কেন নির্ধারণ করতেন? তাছাড়া এটি তো স্ত্রীদের প্রতি ন্যায় বিচারকেও নিশ্চিত করে না। যদি একই নাম একাধিকবার উঠতে থাকে তখন যে কেউ বঞ্চিত হবে। আরো একটি প্রশ্ন উঠে, যদি বনীল মুসতালিক অভিযানে আয়েশার নাম না উঠত তাহলে কি সুরা নূর লেখা হতো? কুরআন তাহলে লওহে মাহফুজে কেমন করে আগে থেকে লেখা থাকে?
সূরা নূরের যত প্রসিদ্ধ তাফসির পাওয়া যায় তা পাঠ করে, হাদিসে আয়েশা নিজে এই ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেই গল্পটি আমার কাছে অজুহাত টাইপের চেয়ে বেশি কিছু মনে হয়নি। আয়েশা নিজে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে বলেছেন, বনীল মুসতালিক অভিযানের শেষে ফেরার পথে মদিনার কাছাকাছি এক জায়গায় তাদের বাহিনী রাত্রী যাপনের জন্য তাবু ফেলে। রাত কাটিয়ে ভোররাতে যখন পুরো দল রওনা দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয় তখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে আয়েশা তাবুর বাইরে যান এবং ফেরার পথে খেয়াল করেন তার গলার হারটি হারিয়ে গেছে। হারটি খুঁজতে তিনি সময় নষ্ট করায় ফিরে এসে দেখেন তাকে ফেলেই পুরো কাফেলা চলে গেছে। কাফেলার লোকজন ভেবেছিল আয়েশা দলেই ছিলেন। আয়েশা সে জায়গাতেই ফের চাদরে নিজেকে জড়িয়ে শুয়ে পড়েন। সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখেন সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী মাত্রই উটে করে রওনা দিচ্ছেন।
আয়েশা বলেন, সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী বেলা করে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস ছিল। তাই সবাই রওনা হয়ে যাবার পর সে একা একা রওনা দিয়েছিল। আয়েশাকে সে দেখতে পেয়ে তাকে উটে উঠিয়ে নেন। দ্রুত প্রচার হয়ে যায় কাফেলায় আয়েশা নেই! কাফেলা এসে মদিনায় পৌঁছার পর সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামীর উট থেকে আয়েশা নেমে আসেন।… এই হচ্ছে কাহিনী। আবদুল্লাহ ইবন উবাই আয়েশাকে নিয়ে প্রকাশ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেন। মুহাম্মদ এমন বেকায়দায় পড়ে যান যে স্বয়ং আল্লার পক্ষেও এই অবস্থা থেকে তাকে বাঁচানোর উপায় নেই! আয়েশা যদি সত্যিই অসতী হন তো আল্লাহও সেটা চেপে রাখতে পারবেন না। উপরেই উল্লেখ করেছি মুহাম্মদ আয়েশার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আয়েশাই সেটা হাদিসে বর্ণনা করেছেন। কাজেই এই ঘটনা দিয়ে আল্লাহ ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছেন বলার কোন উপায় নেই। বরং এরপর আমরা দেখবো এই ঘটনা জের ধরে কি ভয়ংকর ইসলামী আইনের প্রণয়ন করা হয়েছিল। মাসাধিককাল অতিবাহিত হওয়ার পর যখন নিশ্চিত হলো যে আয়েশার রজস্রাব শুরু হয়েছে তখন আসমান-জমিনের সর্বজ্ঞাত আল্লাহ নিশ্চিত হলেন আয়েশা আর উক্ত সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামীর মধ্যে কিছু হয়নি!
তারপরই আল্লাহ আইন পেশ করলেন- //আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ লাগায়, তারপর চারজন সাক্ষী আনে না , তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং তাদের সাক্ষ কখনো গ্রহণ করো না ৷ তারা নিজেরাই ফাসেক ৷(সুরা নূর, ৪)//
এই হচ্ছে আল্লার মেডিকেল টেস্ট! কিভাবে সতী নারীর “সতীত্ব” নিশ্চিত হলো? সুরা নূর বলছে-
// দুশ্চরিত্রা মহিলারা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং দুশ্চরিত্র
পুরুষরা দুশ্চরিত্রা মহিলাদের জন্য৷
সচ্চরিত্রা মহিলারা সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং
সচ্চরিত্র পুরুষরা সচ্চরিত্রা মহিলাদের জন্য ৷ লোকে যা বলে তা থেকে তারা পূত-পবিত্র ৷ তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও মর্যাদাপূর্ণ
জীবিকা৷// (সুরা নূর-২৬)।
অথচ
আমরা দেখলাম মুহাম্মদ আয়েশাকে কতখানি অবিশ্বাস করেছিলেন। আল্লাহ
তখন
কেন এই কথাটা মুহাম্মদকে জানালেন না? সত্যি বলতে কি, তখন এরকম
ভাববাদী কথা
মুহাম্মদকে যদি কেউ বলতো মুহাম্মদের মন কি তাতে শান্ত হতো? যখন তিনি
নিশ্চিত
হলেন আয়েশার শরীর ঠিক আছে- তখনই না এরকম ভাববাদী কথা তার মনে আসবে। সুরা নূরের
এই জায়গায় তাই আমরা একজন স্বস্তির হাঁফ ছাড়া মানুষের কন্ঠস্বরকে
শুনতে পাই।
আর
নিশ্চিত করেই সেটা হযরত মুহাম্মদের কন্ঠস্বর…।সুরা নূর পুরোটা পাঠ করলে দেখবেন এই ঘটনার পর কতখানি ভীত-তস্ত্র হয়েছিলেন মুহাম্মদ যে নারীকে একদম কাপড়ে মুড়ে ঘরের চার দেয়ালে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন নতুন আইন বানিয়ে। সেই অভিশাপের নিচে আজো মুসলিম নারী নিপীড়িত হচ্ছে। আজো মুসলিম নারী পর্দার নামে মানুষ হিসেবে নুন্যতম মানবাধিকার হতে বঞ্চিত। চারজন সাক্ষির যে আইন মুহাম্মদ জারি করলেন সুরা নূরে সেই বিধানের বদৌলতে ইসলামী বিশ্বে কোন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েও বিচার চাইতে পারেন না ধর্ষকের বিরুদ্ধে কারণ ধর্ষণের সময় হতভাগী নারীর চারজন সাক্ষি ছিলো না! বরং ধর্ষণের কথা প্রচার করলে সেই নারীটিকে বেভিচারের অভিযোগে একশটি বেত মারা হয়। পালক পুত্র যায়েদের স্ত্রী জয়নবের রূপ-লাবণ্য দেখে মুহাম্মদ যে কান্ড ঘটিয়েছিলেন সেটা নিশ্চিত তার মনে ছিল। তারপর আয়েশার ঘটনায় মুহাম্মদ নারীফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন নিশ্চিত! কারণ আমরা দেখি সুরা নূরে মুহাম্মদ নারীকে চরম সাজা দেন যা আজো ইসলামী রা্ষ্ট্রের নারীরা ভোগ করে থাকে।
// আর হে নবী! মু’মিন মহিলাদের বলে দাও তারা যেন
তাদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং তাদের
লজ্জাস্থানগুলোর হেফাজত করে আর তাদের সাজসজ্জা না দেখায়, যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় তা ছাড়া ৷ আর তারা যেন তাদের ওড়নার আঁচল
দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে৷ তারা যেন তাদের
সাজসজ্জা প্রকাশ না করে, তবে নিম্নোক্তদের সামনে ছাড়া স্বামী,বাপ,স্বামীর বাপ,
নিজের
ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, নিজের
মেলামেশার মেয়েদের , নিজের মালিকানাধীনদের, অধীনস্থ
পুরুষদের যাদের অন্য কোন রকম উদ্দেশ্য নেই এবং এমন শিশুদের সামনে ছাড়া যারা মেয়েদের গোপন বিষয় সম্পর্কে এখনো অজ্ঞ ৷ তারা যেন
নিজেদের যে সৌন্দর্য তারা লুকিয়ে রেখেছে তা
লোকদের সামনে প্রকাশ করে দেবার উদ্দেশ্য সজোরে
পদক্ষেপ না করে৷
হে মু’মিনগণ! তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে তাওবা করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে৷//- (সুরা নূর, ৩১)
সুরা
আহযাব ও সুরা নূর হচ্ছে কুরআনের দুই নারী বিদ্বেষ ও নারী নিপীড়নের ক্রীড়নক। এই দুই সুরার
আঘাতে আজো মুসলিম শাসনে থাকা নারী সমাজ তাদের নুন্যতম মানবাধিকার নিশ্চিত করতে
পারে না। মানুষ হিসেবে
তাদেরকে নয়, বরং
ভোগ্য
পণ্য ও পশুর মত বিবেচনা করা হয়। আয়েশার ঘটনার পর পর্দা বিষয়ে কঠরতা ইসলামে জারি
হতে থাকে যা আজ জগদ্দল পাথরের মত মুসলিম নারীর পায়ে বাধা। যার থেকে আজো
তাদের মুক্তি মেলেনি।হে মু’মিনগণ! তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে তাওবা করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে৷//- (সুরা নূর, ৩১)
হযরত
আয়েশাকে নিয়ে কুরআনে যে সুরাটি লেখা হয় তার নাম “সুরা নূর”। এই সূরার
নামকরণ কি আল্লার তরফ থেকে এসেছে? কুরআনের প্রতিটি সুরার যে নামকরণ আমরা
দেখি সেটা কি লওহে মাহফুজে লিখিত কুরআনে উল্লেখ আছে? তা যে নেই তার প্রমাণ
আমরা পাই প্রতিটি সুরার নামকরণ দেখে। যেমন সুরা নূরের পঞ্চম রুকূ’র প্রথম
আয়াত থেকে এই সুরার নাম “নূর” নামকরণ করা হয়েছে। এই আয়াতে আল্লাহকে একটি
আলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তবে আমাদের এই আলোচনায় কেবল হযরত আয়েশাই থাকবে
মূখ্যত। এই সুরা লেখার অন্যতম কারণ হলো আয়েশাকে অসতী সন্দেহ ও তাকে এ থেকে
দায়মুক্তি।
আয়েশাকে নিয়ে যে বিতর্ক ঘটে সেটি বনীল মুসতালিক যুদ্ধের সময়ের একটি ঘটনা। বনীল মুসতালিক গোত্রটি বনী খুযা’আর একটি শাখা। ৬ হিযরি শাবান মাসে হযরত মুহাম্মদ বনীল মুসতালিক গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানে বের হন। কারণ সেই যথারীতি “মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র”! অভিযান সফল হয় মুহাম্মদের। আক্রমণ করে গোত্রের সয়-সম্পদ হস্তগত হয় ভাল মতই। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা করে আছে ভয়াবহ এক পারিবারিক দুর্যোগ। এর আগে ৫ হিজরী যিলকদ মাসে এক কেলেংকারিতে বড় রকমের এক ধাক্কা খেতে হয়েছে তাকে ও তার নতুন ধর্ম ইসলামকে। পুত্রবধূ যয়নবকে বিয়ে করে তিনি খোদ মুসলিমদের মধ্যেই তীব্র অসন্তোষের কারণ হয়েছিলেন। আরবে সেই আধা সভ্য সমাজেও এই কাজকে অনৈতিক হিসেবে দেখা হয়েছিল। সেই ধাক্কা আল্লার উপর চাপিয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পেলেও সামনে যে ধাক্কাটি মুহাম্মদের জন্য অপেক্ষা করে ছিল তার জন্য তিনি সম্ভবত স্বপ্নেও কোনদিন ভাবেননি। প্রিয়তম স্ত্রী হযরত আয়েশার পরপুরুষের সঙ্গে রাত্রী যাপন! ছিঃ ছিঃ করে উঠল মুহাম্মদের অনুসারীরা। খোদ প্রিয় সন্তানতুল্য হযরত আলী পরামর্শ দিলেন আয়েশাকে পরিত্যাগ করতে। হযরত মুহাম্মদ ঘরের বাঁদীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন আয়েশার মধ্যে খারাপ কিছু দেখেছে কিনা। কি করবেন মুহাম্মদ ভেবে কূল পেলেন না। তিনি নিশ্চিত নন আয়েশা সত্যিই বিশ্বাস ভঙ্গের মত কিছু করেছে কিনা। যে জিব্রাইল ঘন্টায় ঘন্টায় তার কাছে হাজির হন তখন সে লাপাত্তা! মুহাম্মদ মসজিদে খুদবায় ব্যথিত চিত্তে তার সাহাবীদের কাছে পরামর্শ চাইলেন, বললেন, আমার স্ত্রীর মধ্যে আমি কোনদিন কোন খারাপ কিছু দেখিনি। আবার যে পুরুষকে (সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী) নিয়ে কথা উঠছে সে-ও কোনদিন আমার অনুপস্থিতে বাড়িতে আসার চেষ্টা করেনি…। সা’দ ইবনে মু’আয (কুখ্যাত বনু কুরাইজা ইহুদী গণহত্যার মুহাম্মদের অন্যতম সহযোগী) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, যদি বলেন তো আমরা তাকে (সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী) হত্যা করি! সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী ছিলেন অন্য গোত্রের লোক। তার গোত্রের লোকেরা এ কথা শুনে প্রতিবাদ শুরু করে দিলো। মসজিদে নববীতে দু’গ্রুপে তখন হাতাহাতি লেগে যাবার উপক্রম। স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ তখন মিম্বরে বসে আছেন। একটা রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ মুহাম্মদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত এড়ানো যায়। এসবের কিছুই আয়েশা তখন জানেন না। বনীল মুসতালিক অভিযান থেকে আসার পর আয়েশা অসুস্থ হয়ে যান। হাদিসে আয়েশা বর্ণনা করেছেন, ঘটনার পর রসুল্লাহ আমাকে এড়িয়ে চলতেন। কথা বলতেন না। ঘরে আসলে অন্যদের কাছে খবর নিতেন, ‘ও কেমন আছে’ বলে। আয়েশা এসব দেখে নিজের মায়ের বাড়ি যেতে চাইলেন। আয়েশার যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। [দেখুন-বুখারী শরীফ-৮ম খণ্ড-হাদিস নাম্বার ৪৩৯১ ও সহীহ বুখারী, আল মাগাযী অধ্যায়, হাদীস নং ৩৮৪৬]
আয়েশার বনীল মুসতালিক অভিযানে মুহাম্মদের সফর সঙ্গী হওয়ার কারণটি এই অবসরে বলে নেয়া উচিত। মুহাম্মদের ১৩ স্ত্রীদের যে কোন একজনকে তার সফর সঙ্গী হিসেবে নেয়া হতো। এই কাজটি মুহাম্মদ লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করতেন। বনীল মুসতালিক অভিযানের সময় আয়েশার নাম উঠেছি। উল্লেখ্য হযরত মুহাম্মদ জোতিষি, গণক, ভাগ্য গণনা করা শিরক ও হারাম করে দিয়েছেন। তাহলে তিনি নিজেই তার ও তার স্ত্রীদের ভাগ্য লটারির মাধ্যমে কেন নির্ধারণ করতেন? তাছাড়া এটি তো স্ত্রীদের প্রতি ন্যায় বিচারকেও নিশ্চিত করে না। যদি একই নাম একাধিকবার উঠতে থাকে তখন যে কেউ বঞ্চিত হবে। আরো একটি প্রশ্ন উঠে, যদি বনীল মুসতালিক অভিযানে আয়েশার নাম না উঠত তাহলে কি সুরা নূর লেখা হতো? কুরআন তাহলে লওহে মাহফুজে কেমন করে আগে থেকে লেখা থাকে?
সূরা নূরের যত প্রসিদ্ধ তাফসির পাওয়া যায় তা পাঠ করে, হাদিসে আয়েশা নিজে এই ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেই গল্পটি আমার কাছে অজুহাত টাইপের চেয়ে বেশি কিছু মনে হয়নি। আয়েশা নিজে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে বলেছেন, বনীল মুসতালিক অভিযানের শেষে ফেরার পথে মদিনার কাছাকাছি এক জায়গায় তাদের বাহিনী রাত্রী যাপনের জন্য তাবু ফেলে। রাত কাটিয়ে ভোররাতে যখন পুরো দল রওনা দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয় তখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে আয়েশা তাবুর বাইরে যান এবং ফেরার পথে খেয়াল করেন তার গলার হারটি হারিয়ে গেছে। হারটি খুঁজতে তিনি সময় নষ্ট করায় ফিরে এসে দেখেন তাকে ফেলেই পুরো কাফেলা চলে গেছে। কাফেলার লোকজন ভেবেছিল আয়েশা দলেই ছিলেন। আয়েশা সে জায়গাতেই ফের চাদরে নিজেকে জড়িয়ে শুয়ে পড়েন। সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখেন সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী মাত্রই উটে করে রওনা দিচ্ছেন। আয়েশা বলেন, সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী বেলা করে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস ছিল। তাই সবাই রওনা হয়ে যাবার পর সে একা একা রওনা দিয়েছিল। আয়েশাকে সে দেখতে পেয়ে তাকে উটে উঠিয়ে নেন। দ্রুত প্রচার হয়ে যায় কাফেলায় আয়েশা নেই! কাফেলা এসে মদিনায় পৌঁছার পর সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামীর উট থেকে আয়েশা নেমে আসেন।… এই হচ্ছে কাহিনী। আবদুল্লাহ ইবন উবাই আয়েশাকে নিয়ে প্রকাশ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেন। মুহাম্মদ এমন বেকায়দায় পড়ে যান যে স্বয়ং আল্লার পক্ষেও এই অবস্থা থেকে তাকে বাঁচানোর উপায় নেই! আয়েশা যদি সত্যিই অসতী হন তো আল্লাহও সেটা চেপে রাখতে পারবেন না। উপরেই উল্লেখ করেছি মুহাম্মদ আয়েশার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আয়েশাই সেটা হাদিসে বর্ণনা করেছেন। কাজেই এই ঘটনা দিয়ে আল্লাহ ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছেন বলার কোন উপায় নেই। বরং এরপর আমরা দেখবো এই ঘটনা জের ধরে কি ভয়ংকর ইসলামী আইনের প্রণয়ন করা হয়েছিল। মাসাধিককাল অতিবাহিত হওয়ার পর যখন নিশ্চিত হলো যে আয়েশার রজস্রাব শুরু হয়েছে তখন আসমান-জমিনের সর্বজ্ঞাত আল্লাহ নিশ্চিত হলেন আয়েশা আর উক্ত সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামীর মধ্যে কিছু হয়নি! তারপরই আল্লাহ আইন পেশ করলেন- //আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ লাগায়, তারপর চারজন সাক্ষী আনে না , তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং তাদের সাক্ষ কখনো গ্রহণ করো না ৷ তারা নিজেরাই ফাসেক ৷(সুরা নূর, ৪)//
এই হচ্ছে আল্লার মেডিকেল টেস্ট! কিভাবে সতী নারীর “সতীত্ব” নিশ্চিত হলো? সুরা নূর বলছে-
সুরা নূর পুরোটা পাঠ করলে দেখবেন এই ঘটনার পর কতখানি ভীত-তস্ত্র হয়েছিলেন মুহাম্মদ যে নারীকে একদম কাপড়ে মুড়ে ঘরের চার দেয়ালে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন নতুন আইন বানিয়ে। সেই অভিশাপের নিচে আজো মুসলিম নারী নিপীড়িত হচ্ছে। আজো মুসলিম নারী পর্দার নামে মানুষ হিসেবে নুন্যতম মানবাধিকার হতে বঞ্চিত। চারজন সাক্ষির যে আইন মুহাম্মদ জারি করলেন সুরা নূরে সেই বিধানের বদৌলতে ইসলামী বিশ্বে কোন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েও বিচার চাইতে পারেন না ধর্ষকের বিরুদ্ধে কারণ ধর্ষণের সময় হতভাগী নারীর চারজন সাক্ষি ছিলো না! বরং ধর্ষণের কথা প্রচার করলে সেই নারীটিকে বেভিচারের অভিযোগে একশটি বেত মারা হয়। পালক পুত্র যায়েদের স্ত্রী জয়নবের রূপ-লাবণ্য দেখে মুহাম্মদ যে কান্ড ঘটিয়েছিলেন সেটা নিশ্চিত তার মনে ছিল। তারপর আয়েশার ঘটনায় মুহাম্মদ নারীফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন নিশ্চিত! কারণ আমরা দেখি সুরা নূরে মুহাম্মদ নারীকে চরম সাজা দেন যা আজো ইসলামী রা্ষ্ট্রের নারীরা ভোগ করে থাকে।
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/19225#sthash.I0PhMwEZ.4z8lr1vQ.dpuf
আয়েশাকে নিয়ে যে বিতর্ক ঘটে সেটি বনীল মুসতালিক যুদ্ধের সময়ের একটি ঘটনা। বনীল মুসতালিক গোত্রটি বনী খুযা’আর একটি শাখা। ৬ হিযরি শাবান মাসে হযরত মুহাম্মদ বনীল মুসতালিক গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানে বের হন। কারণ সেই যথারীতি “মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র”! অভিযান সফল হয় মুহাম্মদের। আক্রমণ করে গোত্রের সয়-সম্পদ হস্তগত হয় ভাল মতই। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা করে আছে ভয়াবহ এক পারিবারিক দুর্যোগ। এর আগে ৫ হিজরী যিলকদ মাসে এক কেলেংকারিতে বড় রকমের এক ধাক্কা খেতে হয়েছে তাকে ও তার নতুন ধর্ম ইসলামকে। পুত্রবধূ যয়নবকে বিয়ে করে তিনি খোদ মুসলিমদের মধ্যেই তীব্র অসন্তোষের কারণ হয়েছিলেন। আরবে সেই আধা সভ্য সমাজেও এই কাজকে অনৈতিক হিসেবে দেখা হয়েছিল। সেই ধাক্কা আল্লার উপর চাপিয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পেলেও সামনে যে ধাক্কাটি মুহাম্মদের জন্য অপেক্ষা করে ছিল তার জন্য তিনি সম্ভবত স্বপ্নেও কোনদিন ভাবেননি। প্রিয়তম স্ত্রী হযরত আয়েশার পরপুরুষের সঙ্গে রাত্রী যাপন! ছিঃ ছিঃ করে উঠল মুহাম্মদের অনুসারীরা। খোদ প্রিয় সন্তানতুল্য হযরত আলী পরামর্শ দিলেন আয়েশাকে পরিত্যাগ করতে। হযরত মুহাম্মদ ঘরের বাঁদীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন আয়েশার মধ্যে খারাপ কিছু দেখেছে কিনা। কি করবেন মুহাম্মদ ভেবে কূল পেলেন না। তিনি নিশ্চিত নন আয়েশা সত্যিই বিশ্বাস ভঙ্গের মত কিছু করেছে কিনা। যে জিব্রাইল ঘন্টায় ঘন্টায় তার কাছে হাজির হন তখন সে লাপাত্তা! মুহাম্মদ মসজিদে খুদবায় ব্যথিত চিত্তে তার সাহাবীদের কাছে পরামর্শ চাইলেন, বললেন, আমার স্ত্রীর মধ্যে আমি কোনদিন কোন খারাপ কিছু দেখিনি। আবার যে পুরুষকে (সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী) নিয়ে কথা উঠছে সে-ও কোনদিন আমার অনুপস্থিতে বাড়িতে আসার চেষ্টা করেনি…। সা’দ ইবনে মু’আয (কুখ্যাত বনু কুরাইজা ইহুদী গণহত্যার মুহাম্মদের অন্যতম সহযোগী) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, যদি বলেন তো আমরা তাকে (সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী) হত্যা করি! সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী ছিলেন অন্য গোত্রের লোক। তার গোত্রের লোকেরা এ কথা শুনে প্রতিবাদ শুরু করে দিলো। মসজিদে নববীতে দু’গ্রুপে তখন হাতাহাতি লেগে যাবার উপক্রম। স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ তখন মিম্বরে বসে আছেন। একটা রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ মুহাম্মদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত এড়ানো যায়। এসবের কিছুই আয়েশা তখন জানেন না। বনীল মুসতালিক অভিযান থেকে আসার পর আয়েশা অসুস্থ হয়ে যান। হাদিসে আয়েশা বর্ণনা করেছেন, ঘটনার পর রসুল্লাহ আমাকে এড়িয়ে চলতেন। কথা বলতেন না। ঘরে আসলে অন্যদের কাছে খবর নিতেন, ‘ও কেমন আছে’ বলে। আয়েশা এসব দেখে নিজের মায়ের বাড়ি যেতে চাইলেন। আয়েশার যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। [দেখুন-বুখারী শরীফ-৮ম খণ্ড-হাদিস নাম্বার ৪৩৯১ ও সহীহ বুখারী, আল মাগাযী অধ্যায়, হাদীস নং ৩৮৪৬]
আয়েশার বনীল মুসতালিক অভিযানে মুহাম্মদের সফর সঙ্গী হওয়ার কারণটি এই অবসরে বলে নেয়া উচিত। মুহাম্মদের ১৩ স্ত্রীদের যে কোন একজনকে তার সফর সঙ্গী হিসেবে নেয়া হতো। এই কাজটি মুহাম্মদ লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করতেন। বনীল মুসতালিক অভিযানের সময় আয়েশার নাম উঠেছি। উল্লেখ্য হযরত মুহাম্মদ জোতিষি, গণক, ভাগ্য গণনা করা শিরক ও হারাম করে দিয়েছেন। তাহলে তিনি নিজেই তার ও তার স্ত্রীদের ভাগ্য লটারির মাধ্যমে কেন নির্ধারণ করতেন? তাছাড়া এটি তো স্ত্রীদের প্রতি ন্যায় বিচারকেও নিশ্চিত করে না। যদি একই নাম একাধিকবার উঠতে থাকে তখন যে কেউ বঞ্চিত হবে। আরো একটি প্রশ্ন উঠে, যদি বনীল মুসতালিক অভিযানে আয়েশার নাম না উঠত তাহলে কি সুরা নূর লেখা হতো? কুরআন তাহলে লওহে মাহফুজে কেমন করে আগে থেকে লেখা থাকে?
সূরা নূরের যত প্রসিদ্ধ তাফসির পাওয়া যায় তা পাঠ করে, হাদিসে আয়েশা নিজে এই ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেই গল্পটি আমার কাছে অজুহাত টাইপের চেয়ে বেশি কিছু মনে হয়নি। আয়েশা নিজে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে বলেছেন, বনীল মুসতালিক অভিযানের শেষে ফেরার পথে মদিনার কাছাকাছি এক জায়গায় তাদের বাহিনী রাত্রী যাপনের জন্য তাবু ফেলে। রাত কাটিয়ে ভোররাতে যখন পুরো দল রওনা দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয় তখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে আয়েশা তাবুর বাইরে যান এবং ফেরার পথে খেয়াল করেন তার গলার হারটি হারিয়ে গেছে। হারটি খুঁজতে তিনি সময় নষ্ট করায় ফিরে এসে দেখেন তাকে ফেলেই পুরো কাফেলা চলে গেছে। কাফেলার লোকজন ভেবেছিল আয়েশা দলেই ছিলেন। আয়েশা সে জায়গাতেই ফের চাদরে নিজেকে জড়িয়ে শুয়ে পড়েন। সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখেন সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী মাত্রই উটে করে রওনা দিচ্ছেন। আয়েশা বলেন, সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী বেলা করে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস ছিল। তাই সবাই রওনা হয়ে যাবার পর সে একা একা রওনা দিয়েছিল। আয়েশাকে সে দেখতে পেয়ে তাকে উটে উঠিয়ে নেন। দ্রুত প্রচার হয়ে যায় কাফেলায় আয়েশা নেই! কাফেলা এসে মদিনায় পৌঁছার পর সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামীর উট থেকে আয়েশা নেমে আসেন।… এই হচ্ছে কাহিনী। আবদুল্লাহ ইবন উবাই আয়েশাকে নিয়ে প্রকাশ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেন। মুহাম্মদ এমন বেকায়দায় পড়ে যান যে স্বয়ং আল্লার পক্ষেও এই অবস্থা থেকে তাকে বাঁচানোর উপায় নেই! আয়েশা যদি সত্যিই অসতী হন তো আল্লাহও সেটা চেপে রাখতে পারবেন না। উপরেই উল্লেখ করেছি মুহাম্মদ আয়েশার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আয়েশাই সেটা হাদিসে বর্ণনা করেছেন। কাজেই এই ঘটনা দিয়ে আল্লাহ ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছেন বলার কোন উপায় নেই। বরং এরপর আমরা দেখবো এই ঘটনা জের ধরে কি ভয়ংকর ইসলামী আইনের প্রণয়ন করা হয়েছিল। মাসাধিককাল অতিবাহিত হওয়ার পর যখন নিশ্চিত হলো যে আয়েশার রজস্রাব শুরু হয়েছে তখন আসমান-জমিনের সর্বজ্ঞাত আল্লাহ নিশ্চিত হলেন আয়েশা আর উক্ত সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামীর মধ্যে কিছু হয়নি! তারপরই আল্লাহ আইন পেশ করলেন- //আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ লাগায়, তারপর চারজন সাক্ষী আনে না , তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং তাদের সাক্ষ কখনো গ্রহণ করো না ৷ তারা নিজেরাই ফাসেক ৷(সুরা নূর, ৪)//
এই হচ্ছে আল্লার মেডিকেল টেস্ট! কিভাবে সতী নারীর “সতীত্ব” নিশ্চিত হলো? সুরা নূর বলছে-
// দুশ্চরিত্রা মহিলারা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষরা দুশ্চরিত্রা মহিলাদের জন্য৷ সচ্চরিত্রা মহিলারা সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষরা সচ্চরিত্রা মহিলাদের জন্য ৷ লোকে যা বলে তা থেকে তারা পূত-পবিত্র ৷ তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবিকা৷// (সুরা নূর-২৬)।অথচ আমরা দেখলাম মুহাম্মদ আয়েশাকে কতখানি অবিশ্বাস করেছিলেন। আল্লাহ তখন কেন এই কথাটা মুহাম্মদকে জানালেন না? সত্যি বলতে কি, তখন এরকম ভাববাদী কথা মুহাম্মদকে যদি কেউ বলতো মুহাম্মদের মন কি তাতে শান্ত হতো? যখন তিনি নিশ্চিত হলেন আয়েশার শরীর ঠিক আছে- তখনই না এরকম ভাববাদী কথা তার মনে আসবে। সুরা নূরের এই জায়গায় তাই আমরা একজন স্বস্তির হাঁফ ছাড়া মানুষের কন্ঠস্বরকে শুনতে পাই। আর নিশ্চিত করেই সেটা হযরত মুহাম্মদের কন্ঠস্বর…।
সুরা নূর পুরোটা পাঠ করলে দেখবেন এই ঘটনার পর কতখানি ভীত-তস্ত্র হয়েছিলেন মুহাম্মদ যে নারীকে একদম কাপড়ে মুড়ে ঘরের চার দেয়ালে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন নতুন আইন বানিয়ে। সেই অভিশাপের নিচে আজো মুসলিম নারী নিপীড়িত হচ্ছে। আজো মুসলিম নারী পর্দার নামে মানুষ হিসেবে নুন্যতম মানবাধিকার হতে বঞ্চিত। চারজন সাক্ষির যে আইন মুহাম্মদ জারি করলেন সুরা নূরে সেই বিধানের বদৌলতে ইসলামী বিশ্বে কোন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েও বিচার চাইতে পারেন না ধর্ষকের বিরুদ্ধে কারণ ধর্ষণের সময় হতভাগী নারীর চারজন সাক্ষি ছিলো না! বরং ধর্ষণের কথা প্রচার করলে সেই নারীটিকে বেভিচারের অভিযোগে একশটি বেত মারা হয়। পালক পুত্র যায়েদের স্ত্রী জয়নবের রূপ-লাবণ্য দেখে মুহাম্মদ যে কান্ড ঘটিয়েছিলেন সেটা নিশ্চিত তার মনে ছিল। তারপর আয়েশার ঘটনায় মুহাম্মদ নারীফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন নিশ্চিত! কারণ আমরা দেখি সুরা নূরে মুহাম্মদ নারীকে চরম সাজা দেন যা আজো ইসলামী রা্ষ্ট্রের নারীরা ভোগ করে থাকে।
// আর হে নবী! মু’মিন মহিলাদের বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানগুলোর হেফাজত করে আর তাদের সাজসজ্জা না দেখায়, যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় তা ছাড়া ৷ আর তারা যেন তাদের ওড়নার আঁচল দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে৷ তারা যেন তাদের সাজসজ্জা প্রকাশ না করে, তবে নিম্নোক্তদের সামনে ছাড়া স্বামী,বাপ,স্বামীর বাপ, নিজের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, নিজের মেলামেশার মেয়েদের , নিজের মালিকানাধীনদের, অধীনস্থ পুরুষদের যাদের অন্য কোন রকম উদ্দেশ্য নেই এবং এমন শিশুদের সামনে ছাড়া যারা মেয়েদের গোপন বিষয় সম্পর্কে এখনো অজ্ঞ ৷ তারা যেন নিজেদের যে সৌন্দর্য তারা লুকিয়ে রেখেছে তা লোকদের সামনে প্রকাশ করে দেবার উদ্দেশ্য সজোরে পদক্ষেপ না করে৷ হে মু’মিনগণ! তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে তাওবা করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে৷//- (সুরা নূর, ৩১)সুরা আহযাব ও সুরা নূর হচ্ছে কুরআনের দুই নারী বিদ্বেষ ও নারী নিপীড়নের ক্রীড়নক। এই দুই সুরার আঘাতে আজো মুসলিম শাসনে থাকা নারী সমাজ তাদের নুন্যতম মানবাধিকার নিশ্চিত করতে পারে না। মানুষ হিসেবে তাদেরকে নয়, বরং ভোগ্য পণ্য ও পশুর মত বিবেচনা করা হয়। আয়েশার ঘটনার পর পর্দা বিষয়ে কঠরতা ইসলামে জারি হতে থাকে যা আজ জগদ্দল পাথরের মত মুসলিম নারীর পায়ে বাধা। যার থেকে আজো তাদের মুক্তি মেলেনি।
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/19225#sthash.I0PhMwEZ.4z8lr1vQ.dpuf
হযরত
আয়েশাকে নিয়ে কুরআনে যে সুরাটি লেখা হয় তার নাম “সুরা নূর”। এই সূরার
নামকরণ কি আল্লার তরফ থেকে এসেছে? কুরআনের প্রতিটি সুরার যে নামকরণ আমরা
দেখি সেটা কি লওহে মাহফুজে লিখিত কুরআনে উল্লেখ আছে? তা যে নেই তার প্রমাণ
আমরা পাই প্রতিটি সুরার নামকরণ দেখে। যেমন সুরা নূরের পঞ্চম রুকূ’র প্রথম
আয়াত থেকে এই সুরার নাম “নূর” নামকরণ করা হয়েছে। এই আয়াতে আল্লাহকে একটি
আলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তবে আমাদের এই আলোচনায় কেবল হযরত আয়েশাই থাকবে
মূখ্যত। এই সুরা লেখার অন্যতম কারণ হলো আয়েশাকে অসতী সন্দেহ ও তাকে এ থেকে
দায়মুক্তি।
আয়েশাকে নিয়ে যে বিতর্ক ঘটে সেটি বনীল মুসতালিক যুদ্ধের সময়ের একটি ঘটনা। বনীল মুসতালিক গোত্রটি বনী খুযা’আর একটি শাখা। ৬ হিযরি শাবান মাসে হযরত মুহাম্মদ বনীল মুসতালিক গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানে বের হন। কারণ সেই যথারীতি “মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র”! অভিযান সফল হয় মুহাম্মদের। আক্রমণ করে গোত্রের সয়-সম্পদ হস্তগত হয় ভাল মতই। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা করে আছে ভয়াবহ এক পারিবারিক দুর্যোগ। এর আগে ৫ হিজরী যিলকদ মাসে এক কেলেংকারিতে বড় রকমের এক ধাক্কা খেতে হয়েছে তাকে ও তার নতুন ধর্ম ইসলামকে। পুত্রবধূ যয়নবকে বিয়ে করে তিনি খোদ মুসলিমদের মধ্যেই তীব্র অসন্তোষের কারণ হয়েছিলেন। আরবে সেই আধা সভ্য সমাজেও এই কাজকে অনৈতিক হিসেবে দেখা হয়েছিল। সেই ধাক্কা আল্লার উপর চাপিয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পেলেও সামনে যে ধাক্কাটি মুহাম্মদের জন্য অপেক্ষা করে ছিল তার জন্য তিনি সম্ভবত স্বপ্নেও কোনদিন ভাবেননি। প্রিয়তম স্ত্রী হযরত আয়েশার পরপুরুষের সঙ্গে রাত্রী যাপন! ছিঃ ছিঃ করে উঠল মুহাম্মদের অনুসারীরা। খোদ প্রিয় সন্তানতুল্য হযরত আলী পরামর্শ দিলেন আয়েশাকে পরিত্যাগ করতে। হযরত মুহাম্মদ ঘরের বাঁদীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন আয়েশার মধ্যে খারাপ কিছু দেখেছে কিনা। কি করবেন মুহাম্মদ ভেবে কূল পেলেন না। তিনি নিশ্চিত নন আয়েশা সত্যিই বিশ্বাস ভঙ্গের মত কিছু করেছে কিনা। যে জিব্রাইল ঘন্টায় ঘন্টায় তার কাছে হাজির হন তখন সে লাপাত্তা! মুহাম্মদ মসজিদে খুদবায় ব্যথিত চিত্তে তার সাহাবীদের কাছে পরামর্শ চাইলেন, বললেন, আমার স্ত্রীর মধ্যে আমি কোনদিন কোন খারাপ কিছু দেখিনি। আবার যে পুরুষকে (সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী) নিয়ে কথা উঠছে সে-ও কোনদিন আমার অনুপস্থিতে বাড়িতে আসার চেষ্টা করেনি…। সা’দ ইবনে মু’আয (কুখ্যাত বনু কুরাইজা ইহুদী গণহত্যার মুহাম্মদের অন্যতম সহযোগী) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, যদি বলেন তো আমরা তাকে (সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী) হত্যা করি! সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী ছিলেন অন্য গোত্রের লোক। তার গোত্রের লোকেরা এ কথা শুনে প্রতিবাদ শুরু করে দিলো। মসজিদে নববীতে দু’গ্রুপে তখন হাতাহাতি লেগে যাবার উপক্রম। স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ তখন মিম্বরে বসে আছেন। একটা রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ মুহাম্মদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত এড়ানো যায়। এসবের কিছুই আয়েশা তখন জানেন না। বনীল মুসতালিক অভিযান থেকে আসার পর আয়েশা অসুস্থ হয়ে যান। হাদিসে আয়েশা বর্ণনা করেছেন, ঘটনার পর রসুল্লাহ আমাকে এড়িয়ে চলতেন। কথা বলতেন না। ঘরে আসলে অন্যদের কাছে খবর নিতেন, ‘ও কেমন আছে’ বলে। আয়েশা এসব দেখে নিজের মায়ের বাড়ি যেতে চাইলেন। আয়েশার যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। [দেখুন-বুখারী শরীফ-৮ম খণ্ড-হাদিস নাম্বার ৪৩৯১ ও সহীহ বুখারী, আল মাগাযী অধ্যায়, হাদীস নং ৩৮৪৬]
আয়েশার বনীল মুসতালিক অভিযানে মুহাম্মদের সফর সঙ্গী হওয়ার কারণটি এই অবসরে বলে নেয়া উচিত। মুহাম্মদের ১৩ স্ত্রীদের যে কোন একজনকে তার সফর সঙ্গী হিসেবে নেয়া হতো। এই কাজটি মুহাম্মদ লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করতেন। বনীল মুসতালিক অভিযানের সময় আয়েশার নাম উঠেছি। উল্লেখ্য হযরত মুহাম্মদ জোতিষি, গণক, ভাগ্য গণনা করা শিরক ও হারাম করে দিয়েছেন। তাহলে তিনি নিজেই তার ও তার স্ত্রীদের ভাগ্য লটারির মাধ্যমে কেন নির্ধারণ করতেন? তাছাড়া এটি তো স্ত্রীদের প্রতি ন্যায় বিচারকেও নিশ্চিত করে না। যদি একই নাম একাধিকবার উঠতে থাকে তখন যে কেউ বঞ্চিত হবে। আরো একটি প্রশ্ন উঠে, যদি বনীল মুসতালিক অভিযানে আয়েশার নাম না উঠত তাহলে কি সুরা নূর লেখা হতো? কুরআন তাহলে লওহে মাহফুজে কেমন করে আগে থেকে লেখা থাকে?
সূরা নূরের যত প্রসিদ্ধ তাফসির পাওয়া যায় তা পাঠ করে, হাদিসে আয়েশা নিজে এই ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেই গল্পটি আমার কাছে অজুহাত টাইপের চেয়ে বেশি কিছু মনে হয়নি। আয়েশা নিজে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে বলেছেন, বনীল মুসতালিক অভিযানের শেষে ফেরার পথে মদিনার কাছাকাছি এক জায়গায় তাদের বাহিনী রাত্রী যাপনের জন্য তাবু ফেলে। রাত কাটিয়ে ভোররাতে যখন পুরো দল রওনা দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয় তখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে আয়েশা তাবুর বাইরে যান এবং ফেরার পথে খেয়াল করেন তার গলার হারটি হারিয়ে গেছে। হারটি খুঁজতে তিনি সময় নষ্ট করায় ফিরে এসে দেখেন তাকে ফেলেই পুরো কাফেলা চলে গেছে। কাফেলার লোকজন ভেবেছিল আয়েশা দলেই ছিলেন। আয়েশা সে জায়গাতেই ফের চাদরে নিজেকে জড়িয়ে শুয়ে পড়েন। সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখেন সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী মাত্রই উটে করে রওনা দিচ্ছেন। আয়েশা বলেন, সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী বেলা করে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস ছিল। তাই সবাই রওনা হয়ে যাবার পর সে একা একা রওনা দিয়েছিল। আয়েশাকে সে দেখতে পেয়ে তাকে উটে উঠিয়ে নেন। দ্রুত প্রচার হয়ে যায় কাফেলায় আয়েশা নেই! কাফেলা এসে মদিনায় পৌঁছার পর সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামীর উট থেকে আয়েশা নেমে আসেন।… এই হচ্ছে কাহিনী। আবদুল্লাহ ইবন উবাই আয়েশাকে নিয়ে প্রকাশ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেন। মুহাম্মদ এমন বেকায়দায় পড়ে যান যে স্বয়ং আল্লার পক্ষেও এই অবস্থা থেকে তাকে বাঁচানোর উপায় নেই! আয়েশা যদি সত্যিই অসতী হন তো আল্লাহও সেটা চেপে রাখতে পারবেন না। উপরেই উল্লেখ করেছি মুহাম্মদ আয়েশার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আয়েশাই সেটা হাদিসে বর্ণনা করেছেন। কাজেই এই ঘটনা দিয়ে আল্লাহ ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছেন বলার কোন উপায় নেই। বরং এরপর আমরা দেখবো এই ঘটনা জের ধরে কি ভয়ংকর ইসলামী আইনের প্রণয়ন করা হয়েছিল। মাসাধিককাল অতিবাহিত হওয়ার পর যখন নিশ্চিত হলো যে আয়েশার রজস্রাব শুরু হয়েছে তখন আসমান-জমিনের সর্বজ্ঞাত আল্লাহ নিশ্চিত হলেন আয়েশা আর উক্ত সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামীর মধ্যে কিছু হয়নি! তারপরই আল্লাহ আইন পেশ করলেন- //আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ লাগায়, তারপর চারজন সাক্ষী আনে না , তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং তাদের সাক্ষ কখনো গ্রহণ করো না ৷ তারা নিজেরাই ফাসেক ৷(সুরা নূর, ৪)//
এই হচ্ছে আল্লার মেডিকেল টেস্ট! কিভাবে সতী নারীর “সতীত্ব” নিশ্চিত হলো? সুরা নূর বলছে-
সুরা নূর পুরোটা পাঠ করলে দেখবেন এই ঘটনার পর কতখানি ভীত-তস্ত্র হয়েছিলেন মুহাম্মদ যে নারীকে একদম কাপড়ে মুড়ে ঘরের চার দেয়ালে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন নতুন আইন বানিয়ে। সেই অভিশাপের নিচে আজো মুসলিম নারী নিপীড়িত হচ্ছে। আজো মুসলিম নারী পর্দার নামে মানুষ হিসেবে নুন্যতম মানবাধিকার হতে বঞ্চিত। চারজন সাক্ষির যে আইন মুহাম্মদ জারি করলেন সুরা নূরে সেই বিধানের বদৌলতে ইসলামী বিশ্বে কোন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েও বিচার চাইতে পারেন না ধর্ষকের বিরুদ্ধে কারণ ধর্ষণের সময় হতভাগী নারীর চারজন সাক্ষি ছিলো না! বরং ধর্ষণের কথা প্রচার করলে সেই নারীটিকে বেভিচারের অভিযোগে একশটি বেত মারা হয়। পালক পুত্র যায়েদের স্ত্রী জয়নবের রূপ-লাবণ্য দেখে মুহাম্মদ যে কান্ড ঘটিয়েছিলেন সেটা নিশ্চিত তার মনে ছিল। তারপর আয়েশার ঘটনায় মুহাম্মদ নারীফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন নিশ্চিত! কারণ আমরা দেখি সুরা নূরে মুহাম্মদ নারীকে চরম সাজা দেন যা আজো ইসলামী রা্ষ্ট্রের নারীরা ভোগ করে থাকে।
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/19225#sthash.I0PhMwEZ.4z8lr1vQ.dpuf
আয়েশাকে নিয়ে যে বিতর্ক ঘটে সেটি বনীল মুসতালিক যুদ্ধের সময়ের একটি ঘটনা। বনীল মুসতালিক গোত্রটি বনী খুযা’আর একটি শাখা। ৬ হিযরি শাবান মাসে হযরত মুহাম্মদ বনীল মুসতালিক গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানে বের হন। কারণ সেই যথারীতি “মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র”! অভিযান সফল হয় মুহাম্মদের। আক্রমণ করে গোত্রের সয়-সম্পদ হস্তগত হয় ভাল মতই। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা করে আছে ভয়াবহ এক পারিবারিক দুর্যোগ। এর আগে ৫ হিজরী যিলকদ মাসে এক কেলেংকারিতে বড় রকমের এক ধাক্কা খেতে হয়েছে তাকে ও তার নতুন ধর্ম ইসলামকে। পুত্রবধূ যয়নবকে বিয়ে করে তিনি খোদ মুসলিমদের মধ্যেই তীব্র অসন্তোষের কারণ হয়েছিলেন। আরবে সেই আধা সভ্য সমাজেও এই কাজকে অনৈতিক হিসেবে দেখা হয়েছিল। সেই ধাক্কা আল্লার উপর চাপিয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পেলেও সামনে যে ধাক্কাটি মুহাম্মদের জন্য অপেক্ষা করে ছিল তার জন্য তিনি সম্ভবত স্বপ্নেও কোনদিন ভাবেননি। প্রিয়তম স্ত্রী হযরত আয়েশার পরপুরুষের সঙ্গে রাত্রী যাপন! ছিঃ ছিঃ করে উঠল মুহাম্মদের অনুসারীরা। খোদ প্রিয় সন্তানতুল্য হযরত আলী পরামর্শ দিলেন আয়েশাকে পরিত্যাগ করতে। হযরত মুহাম্মদ ঘরের বাঁদীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন আয়েশার মধ্যে খারাপ কিছু দেখেছে কিনা। কি করবেন মুহাম্মদ ভেবে কূল পেলেন না। তিনি নিশ্চিত নন আয়েশা সত্যিই বিশ্বাস ভঙ্গের মত কিছু করেছে কিনা। যে জিব্রাইল ঘন্টায় ঘন্টায় তার কাছে হাজির হন তখন সে লাপাত্তা! মুহাম্মদ মসজিদে খুদবায় ব্যথিত চিত্তে তার সাহাবীদের কাছে পরামর্শ চাইলেন, বললেন, আমার স্ত্রীর মধ্যে আমি কোনদিন কোন খারাপ কিছু দেখিনি। আবার যে পুরুষকে (সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী) নিয়ে কথা উঠছে সে-ও কোনদিন আমার অনুপস্থিতে বাড়িতে আসার চেষ্টা করেনি…। সা’দ ইবনে মু’আয (কুখ্যাত বনু কুরাইজা ইহুদী গণহত্যার মুহাম্মদের অন্যতম সহযোগী) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, যদি বলেন তো আমরা তাকে (সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী) হত্যা করি! সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী ছিলেন অন্য গোত্রের লোক। তার গোত্রের লোকেরা এ কথা শুনে প্রতিবাদ শুরু করে দিলো। মসজিদে নববীতে দু’গ্রুপে তখন হাতাহাতি লেগে যাবার উপক্রম। স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ তখন মিম্বরে বসে আছেন। একটা রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ মুহাম্মদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত এড়ানো যায়। এসবের কিছুই আয়েশা তখন জানেন না। বনীল মুসতালিক অভিযান থেকে আসার পর আয়েশা অসুস্থ হয়ে যান। হাদিসে আয়েশা বর্ণনা করেছেন, ঘটনার পর রসুল্লাহ আমাকে এড়িয়ে চলতেন। কথা বলতেন না। ঘরে আসলে অন্যদের কাছে খবর নিতেন, ‘ও কেমন আছে’ বলে। আয়েশা এসব দেখে নিজের মায়ের বাড়ি যেতে চাইলেন। আয়েশার যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। [দেখুন-বুখারী শরীফ-৮ম খণ্ড-হাদিস নাম্বার ৪৩৯১ ও সহীহ বুখারী, আল মাগাযী অধ্যায়, হাদীস নং ৩৮৪৬]
আয়েশার বনীল মুসতালিক অভিযানে মুহাম্মদের সফর সঙ্গী হওয়ার কারণটি এই অবসরে বলে নেয়া উচিত। মুহাম্মদের ১৩ স্ত্রীদের যে কোন একজনকে তার সফর সঙ্গী হিসেবে নেয়া হতো। এই কাজটি মুহাম্মদ লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করতেন। বনীল মুসতালিক অভিযানের সময় আয়েশার নাম উঠেছি। উল্লেখ্য হযরত মুহাম্মদ জোতিষি, গণক, ভাগ্য গণনা করা শিরক ও হারাম করে দিয়েছেন। তাহলে তিনি নিজেই তার ও তার স্ত্রীদের ভাগ্য লটারির মাধ্যমে কেন নির্ধারণ করতেন? তাছাড়া এটি তো স্ত্রীদের প্রতি ন্যায় বিচারকেও নিশ্চিত করে না। যদি একই নাম একাধিকবার উঠতে থাকে তখন যে কেউ বঞ্চিত হবে। আরো একটি প্রশ্ন উঠে, যদি বনীল মুসতালিক অভিযানে আয়েশার নাম না উঠত তাহলে কি সুরা নূর লেখা হতো? কুরআন তাহলে লওহে মাহফুজে কেমন করে আগে থেকে লেখা থাকে?
সূরা নূরের যত প্রসিদ্ধ তাফসির পাওয়া যায় তা পাঠ করে, হাদিসে আয়েশা নিজে এই ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেই গল্পটি আমার কাছে অজুহাত টাইপের চেয়ে বেশি কিছু মনে হয়নি। আয়েশা নিজে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে বলেছেন, বনীল মুসতালিক অভিযানের শেষে ফেরার পথে মদিনার কাছাকাছি এক জায়গায় তাদের বাহিনী রাত্রী যাপনের জন্য তাবু ফেলে। রাত কাটিয়ে ভোররাতে যখন পুরো দল রওনা দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয় তখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে আয়েশা তাবুর বাইরে যান এবং ফেরার পথে খেয়াল করেন তার গলার হারটি হারিয়ে গেছে। হারটি খুঁজতে তিনি সময় নষ্ট করায় ফিরে এসে দেখেন তাকে ফেলেই পুরো কাফেলা চলে গেছে। কাফেলার লোকজন ভেবেছিল আয়েশা দলেই ছিলেন। আয়েশা সে জায়গাতেই ফের চাদরে নিজেকে জড়িয়ে শুয়ে পড়েন। সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখেন সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী মাত্রই উটে করে রওনা দিচ্ছেন। আয়েশা বলেন, সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামী বেলা করে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস ছিল। তাই সবাই রওনা হয়ে যাবার পর সে একা একা রওনা দিয়েছিল। আয়েশাকে সে দেখতে পেয়ে তাকে উটে উঠিয়ে নেন। দ্রুত প্রচার হয়ে যায় কাফেলায় আয়েশা নেই! কাফেলা এসে মদিনায় পৌঁছার পর সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামীর উট থেকে আয়েশা নেমে আসেন।… এই হচ্ছে কাহিনী। আবদুল্লাহ ইবন উবাই আয়েশাকে নিয়ে প্রকাশ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেন। মুহাম্মদ এমন বেকায়দায় পড়ে যান যে স্বয়ং আল্লার পক্ষেও এই অবস্থা থেকে তাকে বাঁচানোর উপায় নেই! আয়েশা যদি সত্যিই অসতী হন তো আল্লাহও সেটা চেপে রাখতে পারবেন না। উপরেই উল্লেখ করেছি মুহাম্মদ আয়েশার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আয়েশাই সেটা হাদিসে বর্ণনা করেছেন। কাজেই এই ঘটনা দিয়ে আল্লাহ ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছেন বলার কোন উপায় নেই। বরং এরপর আমরা দেখবো এই ঘটনা জের ধরে কি ভয়ংকর ইসলামী আইনের প্রণয়ন করা হয়েছিল। মাসাধিককাল অতিবাহিত হওয়ার পর যখন নিশ্চিত হলো যে আয়েশার রজস্রাব শুরু হয়েছে তখন আসমান-জমিনের সর্বজ্ঞাত আল্লাহ নিশ্চিত হলেন আয়েশা আর উক্ত সাফওয়ান ইবনে মু’আত্তাল সালামীর মধ্যে কিছু হয়নি! তারপরই আল্লাহ আইন পেশ করলেন- //আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ লাগায়, তারপর চারজন সাক্ষী আনে না , তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং তাদের সাক্ষ কখনো গ্রহণ করো না ৷ তারা নিজেরাই ফাসেক ৷(সুরা নূর, ৪)//
এই হচ্ছে আল্লার মেডিকেল টেস্ট! কিভাবে সতী নারীর “সতীত্ব” নিশ্চিত হলো? সুরা নূর বলছে-
// দুশ্চরিত্রা মহিলারা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষরা দুশ্চরিত্রা মহিলাদের জন্য৷ সচ্চরিত্রা মহিলারা সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষরা সচ্চরিত্রা মহিলাদের জন্য ৷ লোকে যা বলে তা থেকে তারা পূত-পবিত্র ৷ তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবিকা৷// (সুরা নূর-২৬)।অথচ আমরা দেখলাম মুহাম্মদ আয়েশাকে কতখানি অবিশ্বাস করেছিলেন। আল্লাহ তখন কেন এই কথাটা মুহাম্মদকে জানালেন না? সত্যি বলতে কি, তখন এরকম ভাববাদী কথা মুহাম্মদকে যদি কেউ বলতো মুহাম্মদের মন কি তাতে শান্ত হতো? যখন তিনি নিশ্চিত হলেন আয়েশার শরীর ঠিক আছে- তখনই না এরকম ভাববাদী কথা তার মনে আসবে। সুরা নূরের এই জায়গায় তাই আমরা একজন স্বস্তির হাঁফ ছাড়া মানুষের কন্ঠস্বরকে শুনতে পাই। আর নিশ্চিত করেই সেটা হযরত মুহাম্মদের কন্ঠস্বর…।
সুরা নূর পুরোটা পাঠ করলে দেখবেন এই ঘটনার পর কতখানি ভীত-তস্ত্র হয়েছিলেন মুহাম্মদ যে নারীকে একদম কাপড়ে মুড়ে ঘরের চার দেয়ালে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন নতুন আইন বানিয়ে। সেই অভিশাপের নিচে আজো মুসলিম নারী নিপীড়িত হচ্ছে। আজো মুসলিম নারী পর্দার নামে মানুষ হিসেবে নুন্যতম মানবাধিকার হতে বঞ্চিত। চারজন সাক্ষির যে আইন মুহাম্মদ জারি করলেন সুরা নূরে সেই বিধানের বদৌলতে ইসলামী বিশ্বে কোন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েও বিচার চাইতে পারেন না ধর্ষকের বিরুদ্ধে কারণ ধর্ষণের সময় হতভাগী নারীর চারজন সাক্ষি ছিলো না! বরং ধর্ষণের কথা প্রচার করলে সেই নারীটিকে বেভিচারের অভিযোগে একশটি বেত মারা হয়। পালক পুত্র যায়েদের স্ত্রী জয়নবের রূপ-লাবণ্য দেখে মুহাম্মদ যে কান্ড ঘটিয়েছিলেন সেটা নিশ্চিত তার মনে ছিল। তারপর আয়েশার ঘটনায় মুহাম্মদ নারীফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন নিশ্চিত! কারণ আমরা দেখি সুরা নূরে মুহাম্মদ নারীকে চরম সাজা দেন যা আজো ইসলামী রা্ষ্ট্রের নারীরা ভোগ করে থাকে।
// আর হে নবী! মু’মিন মহিলাদের বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানগুলোর হেফাজত করে আর তাদের সাজসজ্জা না দেখায়, যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় তা ছাড়া ৷ আর তারা যেন তাদের ওড়নার আঁচল দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে৷ তারা যেন তাদের সাজসজ্জা প্রকাশ না করে, তবে নিম্নোক্তদের সামনে ছাড়া স্বামী,বাপ,স্বামীর বাপ, নিজের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, নিজের মেলামেশার মেয়েদের , নিজের মালিকানাধীনদের, অধীনস্থ পুরুষদের যাদের অন্য কোন রকম উদ্দেশ্য নেই এবং এমন শিশুদের সামনে ছাড়া যারা মেয়েদের গোপন বিষয় সম্পর্কে এখনো অজ্ঞ ৷ তারা যেন নিজেদের যে সৌন্দর্য তারা লুকিয়ে রেখেছে তা লোকদের সামনে প্রকাশ করে দেবার উদ্দেশ্য সজোরে পদক্ষেপ না করে৷ হে মু’মিনগণ! তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে তাওবা করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে৷//- (সুরা নূর, ৩১)সুরা আহযাব ও সুরা নূর হচ্ছে কুরআনের দুই নারী বিদ্বেষ ও নারী নিপীড়নের ক্রীড়নক। এই দুই সুরার আঘাতে আজো মুসলিম শাসনে থাকা নারী সমাজ তাদের নুন্যতম মানবাধিকার নিশ্চিত করতে পারে না। মানুষ হিসেবে তাদেরকে নয়, বরং ভোগ্য পণ্য ও পশুর মত বিবেচনা করা হয়। আয়েশার ঘটনার পর পর্দা বিষয়ে কঠরতা ইসলামে জারি হতে থাকে যা আজ জগদ্দল পাথরের মত মুসলিম নারীর পায়ে বাধা। যার থেকে আজো তাদের মুক্তি মেলেনি।
- See more at: http://www.istishon.com/?q=node/19225#sthash.I0PhMwEZ.4z8lr1vQ.dpuf