বিগ ব্যাং থেকেই আমাদের মহাবিশ্বের সৃষ্টি।
বিগ ব্যাং এর ফলেই আমাদের অস্তিত্ব রয়েছে।
বিগ ব্যাং এর আগে কিছুই ছিলো না।
স্থান কাল সব কিছুর সৃষ্টি বিগ ব্যাং এর পরে।
বিগ ব্যাং এর আগে কোনো স্থান ছিলো না।
আসলেই কি তাই?
আচ্ছা তার আগে আমাদের একটু বুঝে নিতে হবে স্থান সম্পর্কে।
স্থান কি?
what is space?
কোনো ঘটনা ঘটানোর জন্য যে ক্ষেত্র প্রয়োজন সেটাই স্থান। আরেক ভাবে স্থান হচ্ছে কোনো ঘটনার ফলাফল ও প্রতিক্রিয়ার অস্তিত্ব থাকার জন্য অপরিহার্য একটি মাত্রা। স্থান আছে বলেই অস্তিত্ব আছে। স্থান ছাড়া কোনো কিছুই কল্পনা করা যায় না। স্থান হতে পারে কোনো সমতুল ভূমি আবার হতেও পারে কোনো একটি অদৃশ্য বা দৃশ্যমান শূন্য।
আমাদের পৃথিবী ও শুক্র গ্রহের মাঝখানে মহাকাশে একটি ফাঁকা স্থান রয়েছে। ধরুন সেই ফাঁকা স্থানে পৃথিবীকে মুভ করা হলো। ( Just imagine ) সেই ফাঁকা স্থানে নেওয়ার পর পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকবে? হ্যাঁ মানছি পৃথিবী তার কক্ষপথ থেকে সরে গেলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তো পৃথিবী ধ্বংস হলেও পৃথিবীর উপাদান বা টুকরো গুলো কি গায়েব হয়ে যাবে? নিশ্চয়ই কোনো না কোনো স্থানে অস্তিত্ব যেভাবেই হোক থাকবে। পুরো মহাবিশ্বটাই একটা স্থান। গ্রহ নক্ষত্র একটা স্থানে অবস্থান করছে বিধায় তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। সৌরজগতও একটা স্থানে অবস্থান করছে। সম্পুর্ন গ্যালাক্সিও একটা স্থানে অবস্থান করছে। ইংরেজিতে এজন্যই তো মহাকাশকে বলা হয় 'Space' ।
এই স্থানেই আমরা যা কিছু করছি। সৃষ্টি ধ্বংস দেখছি। ইতিহাসের বহু ঘটনা এই স্থানে ঘটেছে। যে কোনো একটি ঘটনা একটি নির্দিষ্ট স্থানে ঘটেছে। সমতল বা দৃশ্যমান কোনো কিছু হলে আমরা পরিমাপ করে বের করতে পারি নির্দিষ্ট কোনো স্থান। কিন্তু শূন্যস্থানের নির্দিষ্ট ঘটনার অবস্থান নির্ণয় করা বেশ জটিল ব্যাপার। বিগ ব্যাং এর পরেই এই স্থানের সৃষ্টি। তার মানে বিগ ব্যাং নামক একটি মহাজাগতিক ঘটনার ফলে মহাবিশ্বের সকল ঘটনা ঘটে চলেছে। স্থান ছাড়া অস্তিত্ব ও ঘটনা কোনো কিছুই কল্পনা করা যায় না। এটা বুঝতে নিশ্চয়ই বিশেষ কোনো জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। আর এটাই বিজ্ঞান। বাস্তব জগতের কোনো ঘটনা ঘটতে হলে স্থানের প্রয়োজন। স্থান ছাড়া কোনো ঘটনাকে অবাস্তব বলেই ধরে নেওয়া উচিত। কেননা স্থান ছাড়া কোনো ঘটনা ঘটলে তার অস্তিত্বটাই বা কোথায়? ঘটনার প্রতিক্রিয়া ও স্থায়িত্বকালটাই বা কিভাবে থাকবে?
আচ্ছা এবার আসি বিগ ব্যাং এর আগে কিছু ছিল কিনা এর উত্তর বিশ্লেষণে। বিগ ব্যাং নিশ্চয়ই একটি মহাজাগতিক ঘটনা। একটা বিস্ফোরণ ঘটলো তারপর মহাবিশ্বের সৃষ্টি হলো। সেটা কি কোনো স্থান ছাড়াই ঘটেছে? বিস্ফোরণটা ঘটলোই বা কোথায়? স্থান না থাকলে বিস্ফোরণের পর মহাবিশ্বের অস্তিত্বটা কিভাবে আছে? হ্যাঁ হতে পারে স্থানটা আমাদের অজানা, অদৃশ্য। অনেকেই বলেন বিগ ব্যাং এর আগের কিছুই কল্পনা করা যায় না। আমার মতে কল্পনা মানেই সব করা যায়। যাই হোক কোনো এক অজানা, অজ্ঞাত স্থানেই বিগ ব্যাং ঘটেছে। সেই অজানা স্থান যদি অস্বীকার করা হয় তাহলে পুরো বিজ্ঞান ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করা হবে। স্থান ছাড়া কোনো ঘটনা অবাস্তব। স্থান ছাড়া বিগ ব্যাং সংঘটিত হয়ে তারপর স্থানের সৃষ্টি? ব্যাপারটা কেমন আজগুবি হলো না? অবাস্তব থেকে বাস্তবের অস্তিত্ব? 'নাই' থেকে 'আছে' এর অস্তিত্ব? এটা আবার বিজ্ঞান কিভাবে গ্রহণ করতে পারে! বিজ্ঞান তো এটা মানে যে স্থান ছাড়া কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই, কোনো কিছুরই অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। তাহলে এটা বিজ্ঞান কিভাবে মানে যে কোনো স্থান ছাড়া বিগ ব্যাং এর মতো এতো বড় একটি মহাজাগতিক ঘটনা ঘটেছে, স্থান ছাড়াই বিস্ফোরিত হয়ে আমাদের অস্তিত্ব ও বাস্তব জগত তৈরি হয়েছে? স্থান ছাড়া অবাস্তব থেকে বাস্তব কিভাবে আসতে পারে?
জেনারেল রিলেটিভিটি হিসাবে আনলে, বিগ ব্যাং এর আগে কাল বা সময় বলে কিছু নাই (কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে সেটা আলাদা, কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি আসলে না বুঝায় কিছু ঝামেলা চলে আসবে)।
বিগ ব্যাং থেকেই সময়ের শুরু।
মহাবিশ্বের বয়স তথা সময়ের বয়স 14 বিলিয়ন বছর।
মাত্র 190 আলোকবর্ষ দূরে ( আমাদের ছায়াপথেই ) HD 140283 নামে, অথবা মেথুসেলা।
এই নক্ষত্রের বয়স 14.5 বিলিয়ন বছর। সময়ের চেয়ে পুরোনো নক্ষত্র।
তাহলে কি তারাটি আমাদের সমস্ত ফিজিক্স ও গণিতকে কাঁচকলা দেখিয়ে দিছে? যখন 2002 সালে প্রথম এটা জ্যোতির্বদদের নজরে পড়েছিল, তখন এর বয়স হিসেব করা হয়েছিল 16 বিলিয়ন year। পরবর্তী 10 বছর হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে মেথুসেলার দূরত্ব, গঠন উপাদান আরো সূক্ষভাবে নির্ণয় করে বয়স বের করা হয়েছে 14.5 বিলিয়ন বছর। তবু ভুল থাকতে পারে, ভুলের পরিমান + 800 মিলিয়ন অথবা - 800 মিলিয়ন বছর। যদি আমরা 800 মিলিয়ন বছর মাইনাস করি তবু এর বয়স দাঁড়াচ্ছে 13.7 বিলিয়ন বছর। মহাবিশ্বের জন্মের পর এত দ্রুত কোন নক্ষত্র জন্ম নেয়া সম্ভবই না। হয় আমরা মহাবিশ্বের বয়স ভুল পরিমাপ করেছি অথবা নক্ষত্রের বয়স হিসাব আরো কয়েক দশক ধরে সূক্ষাতিসূক্ষভাবে করতে হবে। তাহলে কি আমাদের মহাবিশ্বে আমারা যা হিসাব করেছি তার চেয়ে অনেক বেশী পুরোণো? না, কারন ম্যাথুসেলার বয়সে বিশাল আনসার্টেইন্টি আছে। প্লাস মাইনাস দেখে বুঝা যায়। আর বিগ ব্যাং এর মধ্যে থেকেও সেটাকে ব্যাখ্যা করা যায়।
বিগ ব্যাং এর আগে ঐ অজানা স্থানের প্রমাণ আরেক ভাবেও পাওয়া যায়। শুধু চিন্তা করলেই হবে। কেননা প্রাসঙ্গিক ও ধারাবাহিক বৈধ চিন্তার ফলেই যতো আবিস্কার হয়েছে, যতো অজানাকে জানা গেছে। আমরা সবাই জানি যে মহাবিশ্ব প্রতিনিয়তই সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেই বিগ ব্যাং থিওরি প্রকাশ করা হয়েছে। যদি সম্প্রসারিত হয় তাহলে নিশ্চয়ই মহাবিশ্বের সব কিছু আগে একসাথে ছিলো। বিস্ফোরণের পর তা ছড়িয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। মানে স্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ স্থান বৃদ্ধি না পেলে সম্প্রসারিত হচ্ছে কিভাবে? বিগ ব্যাং এর আগে যেহেতু সব কিছু একসাথে ছিলো তাহলে মহাবিশ্ব যতো বড়ই হোক না কেন আমাদের মহাবিশ্ব সীমিত। নতুন করে কিছু তৈরি হচ্ছে না। তাহলে সম্প্রসারিত হচ্ছে কিভাবে? নিশ্চয়ই বাইরে থেকে কিছু একটা মহাবিশ্বে ঢুকছে যার ফলে মহাবিশ্বের স্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা Dark Matter বা Dark Energy সম্পর্কে মতবাদ দিয়েছেন। রহস্যময় Dark Matter বা Dark Energy-ই বাইরে থেকে আমাদের মহাবিশ্বে ঢুকছে যার ফলে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাহলে এতে কোনো সন্দেহ নেই। হোক না অজানা, সেই Dark Matter-ই অজ্ঞাত স্থান যেখানে বিগ ব্যাং ঘটেছিলো। ব্যাপারটা কড়াইয়ের তেলে সকালের নাস্তার জন্য তরল ডিম ভাজার মতো।