Monday, May 17, 2021

Fermi Paradox.

কলমে - সুপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়। 

ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশিষ্ট আজকের ব্যস্ত পৃথিবী তে আপনি হয়তো অনেক ব্যস্ত। কিন্তু, আমি আপনাকে শৈশবের গ্রীষ্মের সেই সন্ধ্যেগুলোর কথা মনে করিয়ে দিতে চাই যখন সন্ধ্যে হলেই আপনি বাড়ির ছাদে গিয়ে সময় কাটাতেন এবং আপনার চোখ যেতো আকাশের ওপর। অপার বিস্ময়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আপনি কল্পনা করার চেষ্টা করতেন আকাশে দৃশ্যমান তারাগুলোর ওইপারের দুনিয়া টা ঠিক কীরকম। এই মহাবিশ্ব কতই না বড়ো। এবং, এই বিশাল মহাবিশ্বে আমরা মানুষ ই কী একমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণী ? যদি আর কেউ থেকেই থাকে তবে সেই বুদ্ধিমান প্রাণী রা কোথায় ? 

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে পদার্থবিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি ও ঠিক এই প্রশ্ন করেছিলেন - "Where is everyone ? " অর্থাৎ সবাই কোথায় ? লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে এক দুপুরে ফার্মি তার সহকর্মী এমিল কনপিনস্কি, এডওয়ার্ড টেলার এবং হার্বার্ট ইয়র্কের সাথে আলাপ করছিলেন। বিষয় ছিল সাম্প্রতিক সময়ের একটি তথাকথিত ইউএফও সংক্রান্ত ঘটনার বিতর্কিত খবর। এরপর আলোচনা করতে করতে হঠাৎ ফার্মি মন্তব্য করেন, "সবাই কোথায় ?" কারণ তার মতে এর মধ্যেই পৃথিবীতে বহুবার ভিনগ্রহের প্রাণীদের দেখা যাওয়ার কথা ছিল। এক দশক পর, ডঃ ড্রেক একটি পদ্ধতিগত উপায়ে ভিনগ্রহী প্রাণের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্ভাবনা গুলো খতিয়ে দেখে তৈরী করেন Drake equation বা ড্রেক সমীকরণ। যা অনুসারে আমরা এই মহাবিশ্বে একা নই। অন্তত আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথে ( Milky Way Galaxy ) নূন্যতম ১০ টি এবং সর্বোচ্চ কয়েক হাজার এরও বেশী উন্নত বুদ্ধিমান সভ্যতা উপস্থিত রয়েছে। 

এই সমীকরণ তৈরী করতে গিয়ে তার বিবেচ্য বিষয়গুলো ছিল  

১। Galaxy বা ছায়াপথে নক্ষত্র  সৃষ্টির হার। 
২। গ্রহ আছে এরকম  নক্ষত্রের সংখ্যা। 
৩। গ্রহ আছে এরকম নক্ষত্রের মধ্যে, যেসব গ্রহ বাসযোগ্য তার হিসাব। 
৪। সেসব গ্রহের কতগুলোতে প্রাণের উদ্ভব হয়েছে। 
৫। সেসব প্রাণী যোগাযোগ করার মতো বুদ্ধিমান কিনা তার সংখ্যা। 
৬। সর্বশেষে সেসব সভ্যতার স্থায়ীত্ব। 

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে নিকোলাই কার্দশেভ এক পরিমাপ পদ্ধতি তৈরী করেন যাকে কার্দশেভ স্কেল বলা হয়। যা অনুসারে, আমাদের মহাবিশ্বে ৩ প্রকারের সভ্যতার উপস্থিতি থাকা উচিৎ । 

১। টাইপ ওয়ান সভ্যতা  - যে সভ্যতা তার গ্রহের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করতে পারে৷ আমরা পৃথিবীবাসীরা এখনও টাইপ ওয়ান সভ্যতায় পরিনত হতে পারিনি। কার্দশেভ স্কেল অনুযায়ী আমরা বর্তমানে ০.৭২ সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত। টাইপ ওয়ান সভ্যতায় পরিনত হতে আমাদের আরো কয়েকশো বছর প্রয়োজন। 

২। টাইপ টু সভ্যতা  - যে সভ্যতা ডাইসন স্ফিয়ার এর সাহায্যে তার নক্ষত্রের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করতে পারে। 

৩ । টাইপ থ্রি সভ্যতা  - যে সভ্যতা তার ছায়াপথের (Galaxy) সমস্ত শক্তি ব্যবহার করতে পারে। 

তবুও আজ অবধি কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর দেখা আমরা পাইনি কেনো ? 

একেই বলা হয় - Fermi paradox. 

বিজ্ঞানীরা এই  ফার্মি প্যারাডক্স এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যে সমস্ত সম্ভাব্য কারণ গুলো তুলে ধরেন, সেগুলি হলো  - 

১। হয়তো আমাদের মহাবিশ্বে এখনও অবধি টাইপ টু এবং টাইপ থ্রি সভ্যতা তৈরীই হয়নি। এবং, টাইপ ওয়ান সভ্যতার প্রাণীদের প্রযুক্তি এতটা উন্নত নয় যে তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। তাই আমরা এখনও ভিনগ্রহীদের দেখা পাইনি। 

২। হয়তো ভিনগ্রহীরা আমাদের signal পাঠিয়েছে কিন্তু, আমাদের প্রযুক্তি এখনও এতোটা উন্নত নয় যে আমরা তাদের signal decode করতে পারি।  

৩। আমাদের এই মহাবিশ্ব ১৩.৭ বিলিয়ন বছরের পুরোনো। হয়তো, বেশ কিছু উন্নত সভ্যতা ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে৷ হয়তো তারা পৃথিবীতেও এসেছিলো, কিন্তু তখন আমরা বা আমাদের পূর্বসূরিরা পৃথিবীতে ছিলোনা। 

৪। Zoo Hypothesis - আমরা যেমন চিড়িয়াখানায় আমাদের তুলনায় কম উন্নত প্রানীদের বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করি সেরকম টাইপ টু এবং টাইপ থ্রি সভ্যতার প্রাণীরাও তাদের তুলনায় যথেষ্ট কম উন্নত প্রানী অর্থাৎ মানুষদের পর্যবেক্ষণ করছে। 

১৩.৭ বিলিয়ন বছরের পুরোনো মহাবিশ্বে আমরা পৃথিবীবাসীরা মাত্র কয়েক লক্ষ বছর এর পুরোনো। যেখানে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাস মাত্র কয়েক শো বছরের। তবে আজ বিজ্ঞানের exponential growth এর যুগে আমরা স্বপ্ন দেখতেই পারি ভীনগ্রহী প্রাণী যদি থেকেই থাকে তাহলে আগামী দিনে নিশ্চয়ই আমরা তাদের দেখা পাবো৷ 

সুপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়। 
দোহার৷