Thursday, August 31, 2017

কোরআনে ওহী নাযিলের পদ্ধতি এবং ওহী নাযিলে শয়তানের কারসাজি প্রসঙ্গ !1

ওহী  বা  প্রত্যাদেশ  নাজিল  নিয়ে  ও  সন্দেহ  ? 

      
এই  লেখাটি  আরম্ভ  করার  পূর্বে  কিছু  ভূমিকার  উল্লেখ  করা  হল  ৷  কারণ  কোরআনে  কি  ভাবে  এবং  কোন  পদ্ধতিতে    ওহী  নাযিল  হয়  বা  হয়েছে  তা  না  জানলে  বিষয়টি  স্পষ্ঠ  হবে  না  ৷  তাই  ওহী  নাযিলের  একটি  পটভূমি   ব্যাখ্যা  করে  মূল  লেখাটায়  আলোকপাত  করা  হয়েছে  ৷  সমঝদারদের     জন্যে  ইশারাই  কাঁফি  !!  তাই  বিস্তারিত কিছু না  লিখে  কোনো  মন্তব্য  ছাড়া  শুধু  ঘটনাগুলির বিবরণাদি  দেয়া  হল  আগ্রহিদের  জন্যে ৷ পাঠকরা  নিজেরাই একটি সিন্ধান্তে পৌছাতে  পারবেন  ঘটনাগুলো  অবগতির  পর     আশাকরি  ৷ তাই  প্রথমে  তথ্যাদি  বর্ণনা করা                                   হল ,  পরে  মূল  ঘটনা  বর্ণনা    করা  হল আগ্রহীদের  জন্যে ৷   একটি  প্রশ্ন  মনে  আসতে  পারে  যে  এতো  সতর্কতার  পরেও  শয়তান  কীভাবে  ওহী  নকল  করেছে  বা  কীভাবে  ভূল  আয়াত  নাযিলে বা  যুক্ত  করতে  কৃতকার্য  হয়েছে   ?   না কি  ডালমে  কোচ  হায় ? 
             কোরআনে        ওহি নাযিল  বিষয়ে   কিছু  তথ্যাদি ;-
          সাধারণত  মানুষের  মধ্যের  তিনটি  জিনিষের  ক্ষমতা  নাকি  অনুশীলনের  মাধ্যমে  বৃদ্ধি  করা  সম্ভব  হয়  ৷  প্রথমটি  পঞ্চইন্দ্রিয় ,  দ্বিতীয়টি  বোধি  বা  জ্ঞান  এবং  শেষটি  হচ্ছে   অলৌকিকভাবে  কোনো  গায়েবী  বা  পরলৌকিক  ক্ষমতা  অর্জন  ৷  কিন্তু ৩য়  বা   শেষটিকে  ধর্মীয়  দৃষ্টিভঙ্গি  এবং  ধর্মীয়  বিশ্বাসীরা  অলৌকিক  নির্দেশ  প্রাপ্তি  বা  ওহী ( প্রাত্যাদেশ )  নাযিল  হওয়া  বলেন  ৷  ওহী  শুধু আল্লাহ্  মনোনিত ধর্মীয়  গুরু  অর্থাৎ  নবী  এবং  রসুলরা  পেয়ে  থাকেন  ৷  অর্থাৎ  মানুষ  অনেক  কিছুই  তাদের  পঞ্চইন্দ্রিয়ের  মাধ্যমে  জানতে  পারে, বুঝতে  পারে   ৷  আবার  বোধী  বা  ধ্যান , তপস্যা  ইত্যাদির  মাধ্যমে  ও  মানুষ  অনেক  শক্তি  অর্জন  করে  অনেক  কিছু  উপলব্দী  করতে  সক্ষম  হয়  ৷ 
          কিন্তু  যে  সমস্ত  বিষয়াদি  সাধারণ  মানুষদের    অর্জিত  ইন্দ্রিয়লব্দ  অভিজ্ঞতা  কিংবা  বোধী প্রাপ্ত  জ্ঞান  আহরণের  বাইরে  থেকে  যায়  , যাকে  সাধারণ  মানুষ  বা  বিশেষভাবে  অনুশীলনপ্রাপ্ত  জ্ঞানি  মানুষরা  কোনো বোধী ,  ধ্যান , তপস্যা বা  আরাধণার  মাধ্যমে  অর্জন  করতে  সক্ষম  হয় না ,  তাহাই  সষ্টার  বা  আল্লাহ্ র  পক্ষ  থেকে   আল্লাহ্ র  মনোনিত  নবী  বা  রসূলরা  ওহী  বা  প্রত্যাদেশের  মাধ্যমে  পেয়ে  থাকেন  ৷  অনেকের  মতে  মানুষের  জ্ঞান  বা  বুদ্ধির  সীমা  যেখানে  শেষ  হয়ে  যায় ,  সেখান  থেকেই  ওহী  প্রাপ্তি  জ্ঞানের  কার্যকারিতা  শুরু  হয়ে  যায়  ৷
          ওহী  বা  প্রত্যাদেশ  প্রাপ্তির  ও  মোটামোটি  ৫ টি  পদ্ধতি  আছে  বলে  প্রাপ্ত  তথ্য  থেকে  জানা  যায়  ৷
          ১ম  পদ্ধতি  হচ্ছে  যার  উপর  ওহী  নাযিল  হবে  , ওহী  নাযিলের  পূর্বে  তাঁর  কিছু  শারীরিক  প্রক্রিয়া  শুরু  হয়ে  যায়  ৷  তাছড়া  ঘণ্টার আওয়াজ শোনা সহ  তিনি  নানা প্রকার  শারীরিক  অভিজ্ঞতার   সম্মূখিন  হতে  হয়  ৷  শারীরিক  অনেক  কষ্ট  সহ্য  করার  মুহূর্তে  মৃদ  কিছু  শব্দ  করে  ওহী  নাযিল  সম্পূর্ণ  হয়  ৷ তবে  ওহী  গ্রহণকারী  তা  অনায়াসে  গ্রহণ  করতে  পারেন  ৷  তবে  ঐ  সময়ে  ঐ  স্থানে  ৩য়  কোনো  পক্ষের  উপস্থিতি  কেহ  টের  পায়  না  ৷ তবুও  বিশ্বাসীরা  শুনতে  পাওয়া  মৃদ  আওয়াজকে  ৩য়  কোনো  পক্ষের  আওয়াজ  বলে  বিশ্বাস  করেন  ৷
          ২য়  পদ্ধতিতে  আল্লাহ্ র  দূত  ফেরেশতা  হযরত  জিবরাঈল (আ: )  স্বয়ং  মানুষের  রূপে নবীজী (স:) এর  কাছে  উপস্থিত  হয়ে  সরাসরি  নবীজীকে (স:) ওহী  পৌঁছে  দিয়ে  যেতেন  ৷  ঐ  সময়ে  হযরত  জিবরাঈল সাধারণত  সাহাবী  হযরত  কালবী  ( রা ) এর  আকৃতি  ধারণ  করে  আসতেন বলে  বিভিন্ন  তথ্য  থেকে  জানা  যায়  ৷
          ৩য়  পদ্ধতি ; এই  পদ্ধতিতে  হযরত  জিবরাঈল (আ:)  অন্য  কারো  রূপ  ধারণ  না  করে  সরাসরি  নিজের  আসল  রূপেই আবির্ভূত  হতেন  ৷ তবে  শেষ  নবীর  জীবনে  নাকি  মাত্র  তিনবার  নবীজী(স:) এর  সামনে  উপস্থিত  হয়েছেন  ৷  একবার  নবীজী(সঃ) এর  অনুরোধে  স্বরূপে  আবির্ভূত  হয়েছেন  ৷  ২য়  বার  মি’রাজের  রাতে  এবং  শেষবার  নবুওয়েতের  প্রাথমিক  যুগে  মক্কার “ আজইয়াদ”  নামক  স্থানে  ৷  তবে  ৩য়  বারের  দেখা দেয়ার  ব্যাপারটি  সন্দেহযুক্ত  বলে  মনে  করেন  কেউ  কেউ  ৷ ( সূত্র; ফতহুল-বারী , ১ম - খন্ড , ১৮-১৯ পৃষ্ঠা )
          চতুর্থ  পদ্ধতি  হচ্ছে  কোনো  মাধ্যম  ছাড়া  সরাসরি  আল্লাহ্ র  সঙ্গে  সরাসরি  বাক্যালাপ  ৷  যেমন  মি’রাজের  রাত্রিতে  এরকম  ঘটনা  ঘটেছে  ৷  অন্য  একবার  নাকি  নবীজী (সঃ) স্বপ্নযোগে  আল্লাহ্ র  সঙ্গে  বাক্যালাপ  করেছেন  ৷ ( সূত্র; আল-এতক্কান- ১ম, খন্ড , ৪৬ পৃষ্ঠা ) 
          পঞ্চম  এবং  শেষ  পদ্ধতি ; হজরত  জিবরাঈল (আঃ) অদৃশ্য  অবস্থায়  থেকে  নবীজীর  অন্তরের   মধ্যে  কোনো  কথা  ফেলে  দিতেন , যাকে   “ ফছফির-বুহ” বলা  হয় ৷ (সূত্র; আল- এতক্কান - ১ম খনড , ৪৩ পৃষ্ঠা ) 
          এই  পদ্ধতিগুলোকে  আবার  বিভিন্ন  সুরাতে  আয়াত  নাযিল  করে  নিশ্চিত  করা  হয়েছে  ৷  নিম্নে  এরকম  কিছু  আয়াতের  উল্লেখ  করা  হল ৷  
          কোরআনের  ২নং  সুরা  বাকারার   ৯৭নং  আয়াত ;
                    “ বলো   ‘ যে  জিবরাঈলের  শক্রু  সে  জেনে  রাখুক  সে  তো  আল্লাহ্ র  নির্দেশে  তোমার  হৃদয়ে  এ  পৌঁছে  দেয়  যা  এর  পূর্ববর্তী ( কিতাবের ) সমর্থক  আর  বিশ্বাসীদের  জন্য  যা  পথপ্রদর্শক  ও  শুভসংবাদ” ৷
          কোরআনের  ১৬ নং  সুরা নাহল এর   আয়াত  -১০১ ,  ১০২  ও  ১০৩ নং -
        ১০১ নং-আয়াত ;   “আমি  যখন  এক  আয়াতের  জায়গায়  অন্য  এক  আয়াত  উপস্থিত  করি , তখন  তারা  বলে , ‘ তুমি তো কেবল  মিথ্যা  বানাও ’ ৷  আল্লাহ্  যা  অবতীর্ণ  করেন  তা  তিনি  ভালো  জানেন  , কিন্তু  ওদের  অনেকেই ( তা ) জানে  না  ৷
          ১০২ নং আয়াত ;  “ বলো,  ‘ তোমার  প্রতিপালকের  কাছ  থেকে  পবিত্র  আত্মা ( জিবরাঈল ) সত্যসহ  এ  নিয়ে  এসেছে  বিশ্বাসীদেরকে   শক্ত  করার  জন্য  এবং  মুসলমানদের  জন্য  পথনির্দেশ  ও  সুখবররূপে ”   ৷
          ১০৩ নং  আয়াত ; “ আমি  অবশ্যই  জানি  যে  ওরা  বলে , ‘ তাকে ( মুহাম্মদকে ) শিক্ষা  দেয়  এক  মানুষ ’  , ওরা  যার  প্রতি  ইঙ্গিত  করে  তার  ভাষা তো  অ- আরবি , কিন্তু  এ তো  পরিষ্কার  আরবি  ভাষা ”  ৷
          প্রসঙ্গতঃ  উল্লেখযোগ্য  যে  তখন  অবিশ্বাসীদের  মধ্যে  একটি  কথা  প্রচলিত  ছিল  যে , নবী  মুহাম্মদ (সঃ) কে  খৃষ্টধর্ম  থেকে  বহিস্কৃত  সারজিয়াস  নামক  এক  মস্ক বা পোরহিত  যে  খৃষ্ট  ধর্মের  ব্যাপারে   ভ্রান্ত  ধারণা  পোষণ  করার  জন্যে  তাকে  খৃষ্ট জগত  থেকে  বের  করে  দেয়া  হয় , সে  গোপনে  নবীর  সঙ্গে  সাক্ষাত  করে  নবীকে  খৃষ্ট ধর্মের  ব্যাপারে  ভ্রান্ত  ধারণা  দেয়ার  চেষ্টা  করে   ৷  এরই  প্রেক্ষাপটে  সুরা  নাহল  এর  ১০৩  নং  আয়াত  নাযিল  হয়েছে  ৷
      মূল  ঘটনাবলি; 

     
                                                                                                                                              হিজাজের  বেদুঈন  সহ  আরবরা  আল-লাত  ,                                            আল- উয্ যা  এবং  মানত  কে  প্রতিমা  রূপে   অত্যান্ত  সম্মানের   চোখে  দেখত    এই  জন্যে  তারা  এই  তিন  দেবতার  অবস্থানের  স্থান  -  নাখলাহ্  ,  তায়েফ  , এবং  কুদাইদকে    পবিত্র  স্থান  এবং  পবিত্র  উপাসনার  গৃহ  মনে  করে  সেই  সব স্থান  দর্শনে    নিজেদের  অস্তিত্বের  খোঁজ  পেত  এবং  এক  ধরনের  আধ্যাত্মীক  শান্তিি  পেত   
                       পবিত্র  কোরানে  এই  তিন  কন্যার  ব্যাপারে  একটি  আয়াত  নাজিল  হয়েছে    অনেকের  মতে  কোরানে  এই  তিন  দেবীকে  স্বীকৃতি  দেয়া  একটি নাজিলকৃত  আয়াত  পরে  জিরাইল (আ)   এর  মাধ্যমে  নাজিল  হয়  নাই  প্রমানিত  হওয়ায়  তা  প্রত্যাহার  করা  হয়  
                      ইবনে  সা  এবং  তাবারি  লিখিত  ইতিহাস  থেকে  জানা  যায়  যে  , একবার  শয়তান   ঐশী  বা  প্রাত্যাদেশ  অবতরণের  সময়ে  হস্তক্ষেপ  করতে  সক্ষম  হয়েছিল    কোরানের  ৫৩ নং  সুরা   নজম  অবতীর্ণ  হওয়ার  সময়  এমন  দুটি  আয়াত  উচ্চারণের  প্রেরণা  লাভ  করেছিলেন মুহাম্মদ (সঃ )  ৷   যেখানে  আল-লাত  আল-উয্ যা  এবং  মানতকে  ঈশ্বর    মানুষের  মাঝে  একটা  মাধ্যম  হিসেবে  শ্রদ্ধা  করা  যাবে  এমন  ঘোষণা   নাকী  ছিল   ?    কুরাইশরা  যেহেতু  বানাত  আল-ল্লাহ্ কে  স্বর্গীয়  সত্তা  বলে  বিবেচনা  করত    তাই  তারা  ভূলবশতঃ  বিশ্বাস  করে  বসেছিল  যে  কোরান এবং  মুহাম্মদ (সঃ)    তিন  কন্যাকে  ঈশ্বরের  সমমর্যাদায়  স্থান  দিয়েছেন  অবশেষে   তাই  তাদের  মধ্যেকার  তিক্ত  বিরোধের  অবসান  ঘটে  যাচ্ছে   বলে  ধারণা  জন্মে  যায়  কুরাইশদের  মনে  
                  কিন্তু  মূল  গল্পটা  ছিল  এমন  যে  মুহাম্মদ ( সঃ এর  পর  যে  প্রত্যাদেশ  লাভ  করেন  তাতে  এমন  ইঙ্গিত  প্রদান  করা  হয়  যে  বানাত  আল-ল্লাহ্   বিশ্বাসকে  মেনে  নিয়ে আয়াত নাজিল  হওয়ার  ব্যাপারটি  আসলে  শয়তানের  অনুপ্রেরণায়  ঘটেছে  
                এর  পরিণামে  পরবর্তিতে   কোরান  থেকে    তথাকথিত  দুটো  আয়াত  এক্সপাঞ্জ  করা  হয়   এবং  তার  স্থলে  নিম্নলিখিত নতুন আয়াত  প্রতিস্থাপিত  হয়    সেখানে  ঘোষিত  হয় ;    তিন  কন্যা  বা  দেবী  আরবদের  কল্পনা  মাত্র   এবং  তারা  উপসনার  কোনো  যোগ্যতাই  রাখে  না    তবে  মুসলিমরা  এগল্পকে  অপ্রামাণিত  এবং  অসত্য  গল্প বলে  দৃঢ়ভাবে  বিশ্বাস  করে  
                  মক্কায়  অবতীর্ণ  ৫৩  নং  সুরা  নজ্   এর  ১৯  নং থাকে  ২৩  নং   আয়াতে  বলা  হয়েছে যে 
 -
        ১৯ তোমরা  কি  ভেবে  দেখেছ  লাত    উজ্জা  সম্বন্ধে  ,
 ২০- আর  মানাত  সম্বন্ধে  ?
 ২১ - তোমরা  কি  মনে  কর  তোমাদের  জন্যে  পুত্রসন্তান  আর  আল্লাহ্   জন্য  কন্যাসন্তান  ?  
২২ -এরকম  ভাগ  তো  অন্যায়  
  ২৩ - এগুলো  তো  কেবল  কতকগুলো  নাম  যা  তোমাদের  পূর্বপুরুষেরা    তোমরা  রেখেছ    আর  এর  সমর্থনে  আল্লাহ্  কোনো  দলিল  প্রেরণ  করেন  নি    তোমরা  তো  অনুমান    নিজেদের   স্বভাবেরই  অনুসরণ  কর , যদিও  তোমাদের  কাছে  তোমাদের  প্রতিপালকের  তরফ  থেকে  পথনির্দেশ  এসেছে   (* )
                     ঐতিহাসিক  তথ্য  মতে  এবং  মুহাম্মদ (সঃ এক  নিকট  আত্মীয়  উরওয়াহ  বিন  আল-যুআয়ের  ভাষ্য  থেকে  জানা  যায়  যে  প্রথমদিকে  কুরাইশরা  মহাম্মদ (সঃ)   কে  মেনেই  নিয়েছে    তবে    তিনি  যতক্ষণ  দরিদ্র  এবং  অভাবীদের  জন্যে  দরদ  মেশান  আল্লাহ্   ধর্ম  প্রচার  করেছেন  ততক্ষণ  পর্যন্ত  ৷   মক্কার  প্র্ত্যেকে  প্রাচীন  পরম  ঈশ্বরের  পরিবর্তিত  ধর্ম  গ্রহণ  করতে  প্রস্তুত  ছিল   
           
                  কিন্তু  যেই  তিনি  ঘোষণা  দিলেন  যে  আল্লাহ্   উপাসনা  করার  পূর্বশর্ত  হিসেবে  অন্যান্য  প্রাচীন  দেবতার  অর্চনা  বাদ  দিতে  হবে    তখনই  কুরেইশরা  তাঁর  এবং  তাঁর  অনুসারীদের  বিরুদ্ধে  ক্ষিপ্ত  হয়ে  ওঠে    আর  এদের  মধ্যে  বেশিরভাগ  ছিল  যাদের  সম্পত্তি  আল-লাত  দেবতার  শহর  তায়েফে  ছিল ,   সেই  সব  কুরাইশরা ছিল  সবার  মধ্যে  প্রথম  এবং  সংখ্যায়  ও  অধিক     তবে  আব - আলিয়াহ্   বক্তব্য  থেকে   আরো   জানা  যায়  যে  কুরাইশরা  একটা  আপোস  রফায়  আসতে  চেয়েছে  যদি  মুহাম্মদ  (সঃ তিন  বানাত  আল-ল্লাহ্  সম্পর্কে  কিছু  ভাল  মন্তব্য  করেন    আর  এর  জন্যে  কুরাইশরা  মুহাম্মদ ( সঃ) কে  মক্কার  ক্ষমতার  কেন্দ্রবিন্দুতে  ঢোকার  অনুমতি  দিতে ও  প্রস্তুত ছিল        সে  অনুযায়ী  বলা  হয়ে  থাকে  যে  ,   হয়ত  মুহাম্মদ (সঃ)   আল-লাত  ,  আল-উযযা  এবং  মানাতের   ব্যাপারে  প্রশংসাসূচক  দুটো  আয়াত  আবৃত্তি  করেছেন   আর  তাদের  বৈধ  মধ্যস্থতাকারী  হিসেবে  বর্ণনা  করেছেন  
                     ঐতিহাসিক  তাবারির  মতে  মুহাম্মদ (সঃ সত্যিকার  এবং  সৃজনশীল  একটা  সমাধানের  চেষ্টায়  থাকা কালিন  সময়ে   একদিন  কাবায়  ধ্যানরত  অবস্থায়    ৫৩ নং  আয়াতের  দুটো  আয়াতের    আবৃত্তি  করেছেন     তখন  কাবায়  উপস্থিত  কুরাইশরা  তা শুনতে  পেয়ে   অন্যদেরকে    জানায়  এবং  সবাই  আনন্দও  প্রকাশ  করেছে          দুটো  আয়াত  বলা  হয়-যে
                     তোমরা  কি  ভেবে  দেখেছ  লাত    উযযা  সম্মন্ধে , আর  তৃতীয়টি  মানাত  সম্বন্ধে  ,  এরা  মহিমান্বিত   পাখী (যারানিক )  যাদের  মধ্যস্থতা  স্বীকৃত  
                    ঘটনার  এই  বিবরণ  অনুযায়ী এই আবৃত্তিকে   নতুন  এক  প্রত্যাদেশে    মনে  করে  কুরাইশরা  অত্যন্ত  খুশি  হয়ে  উঠে    এবং  ইহা  সারা  শহরে  রটিয়ে  দিয়ে  বলে  যে  মুহাম্মদ ( সঃ) কুরাইশদের  তিন  দেবতার  সম্পর্কে  চমৎকার  কথা  বলেছেন  যাতে  দেবতাদের  কে  মহামান্বিত  যারনিক  উল্লেখ  করে  তাদের  মধ্যস্থতার  অনুমোদন  দিয়েছেন  
                এর  পর  মুহাম্মদ ( সঃ)   যখন  শুনলেন  তাঁর  উচ্চারিত  আয়াতগুলোতে  শয়তানের  প্ররোচনা  ছিল    তিনি  তখন  বিপর্যস্ত  হয়ে  পড়েন    তখন  ঈশ্বর  সঙ্গে  সঙ্গে  একটা  প্রাত্যাদেশ  পাঠানোর  মাধ্যমে  তাঁকে  আশ্বস্ত  করেন    যেখানে  বলা  হয়েছে  অন্য  পয়গম্বরগণও  একই  রকম   শয়তানি  ভ্রান্তি  শিকার  হয়েছেন    কারণ  ঈশ্বর  সবসময়  বাতিলযোগ্য  আয়াতের  চেয়ে  অনেক  উন্নতমানের  আয়াত  নাজিল  করে  অবস্থার  উন্নতি  ঘটান  ৷ এই  ব্যাপার নিয়ে  নাজিল কৃত     ২২ নং  সুরা  হজ  এর ৫১ ৫২  এবং  ৫৩ নং  আয়াতের  উল্লেখ  করা  হল  নিম্নে  
      ২২ নং   সুরা  হজ (মক্কায়  অবতীর্ন ) 
              আয়াত  ৫১ আর  যারা  প্রবল  হওয়ার  উদ্দেশ্যে  আমার  আয়াতকে  নাস্যাৎ  করার  চেষ্টা  করে  তারাই  জাহান্নামে  বাস  করবে  
              ৫২ নং  আয়াত আমি  তোমার  পুর্বে  যেসব  নবি    রসুল  পাঠিয়েছিলাম  তারা  যখনই  কিছু  আবৃত্তি  করত  তখনই  শয়তান  তাদের  আবৃত্তিতে  বাইরে  থেকে  কিছু  ছুড়ে  ফেলত    কিন্তু  শয়তান  যা  বাইরে  থেকে  ছুড়ে  ফেলে  আল্লাহ্  তা  দূর  করে  দেন  ৷   তারপর  আল্লাহ্  তাঁর  আয়াতগুলোকে  সুসংবদ্ধ  করেন    আর  আল্লাহ্  তো  সর্বজ্ঞ  তত্ত্বজ্ঞানী   
            ৫৩ নং  আয়াত এজন্য  যে শয়তান  যা  বাইরে  থেকে  ছুড়ে  ফেলে  তা  দিয়ে  তিনি  পরীক্ষা  করেন  তাদেরকে  যাদের  অন্তরে  ব্যাধি  রয়েছে এবং  যারা  পাষাণহৃদয়  ৷৷  সীমালঙ্ঘনকারীরা  অশেষ  মতভেদে  রয়েছে  
   (*) সূত্র - কোরানশরিফ সরল  বঙ্গানুবাদ ,  অনুবাদক  মুহাম্মদ  হাবিবুর রহমান )
     কুরাইশদের  সঙ্গে  চূড়ান্ত  বিচ্ছেদের  ঠিক  পরে  ১১২  নং  সুরা  ইখলাস  অবতীর্ন  হয়    যাতে    বলা  হয়েছে  -
  ১ ) বলো  , তিনি  আল্লাহ্ ( যিনি) অদ্বিতীয়  
 ২) আল্লাহ্  সবার  নির্ভরস্থল ৷
  ৩ ) তিনি  কাউকে  জন্ম  দেন  নি    তাঁকেও  কেউ  জন্ম  দেয়  নি  
  ৪ )আর  তাঁর  সমতুল্য  কেউ  নেই   
             র  পর  উল্লেখিত  বিতর্কের   চীর  অবসান  হয়  
     ১ ) 
সূত্র; -মুহাম্মদ মহানবীর (সঃ) জীবনী :
         মূল : ক্যারেন  আর্মস্ট্রং , 
   অনুবাদ : শওকত  হোসেন  
 ২ ) তফসীরে  মা’আরেফুল- কোরাআন ( ১ম খন্ড,
     অনুবাদ , মাওলানা  মুহিউদ্দিন  খান
  ইসলামিক  ফাউণ্ডেশন, বাংলাদেশ ,১৯৮৮ ইং
৩) প্রাসঙ্গিক  হওয়ায়  পূর্বের  একটি  লেখার  কিছু  অংশ  এই  লেখাতে  যুক্ত  করা  হয়েছে