Wednesday, August 30, 2017

মরা কি কখনো জ্যান্ত হয় ?


যে মানুষ একবার মরে যায় ,সে কি আবার জীবিত হতে পারে ? এটাও কি সম্ভব কখনো ? ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা দেখি যে এমন ঘটনা একেবারে দুর্লভ নয় । মাঝে মাঝেই কিছু মৃত মানুষের জীবিত হওয়ার সংবাদ পাই । এইরকম কিছু সংবাদ কম্পাইল করার চেষ্টা করছি ।
ঘটনা ১ 
ফরিদপুরে এক মৃত বাচ্চার পুনরায় বেচে ওঠা নিয়ে বেশ কিছুদিন আগে নিউজপেপারে খুব আলোচনা হচ্ছিল । ২১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২ টায় বাচ্চাটার জন্ম হয় ফরিদপুর শহরের ডাক্তার জাহিদ মেমোরিয়াল হাসপাতালে । বাচ্চা প্রসবের পর কর্তব্যরত ডাক্তার বাচ্চাটিকে পরীক্ষা করে দেখেন ,যে,সে নিঃশ্বাস নিচ্ছে না এবং তার হৃদপিন্ড ও চলছে না । ডাক্তার তখন বাচ্চাটিকে মৃত বলে ঘোষনা করেন । মৃত বাচ্চাটিকে একটি কাগজের বাক্স (কার্টন)এ ভর্তি করে ২২শে সেপ্টেম্বর সকালে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় আলীপুর পৌর কবরস্থানে । কবর দেওয়ার পূর্বে কবর খানার লোক বাচ্চাটিকে বাক্স থেকে বের করে, এবং তখনই বাচ্চাটি কেদে ওঠে ।বাচ্চাটিকে তখন আবার নিয়ে যাওয়া হয় ডাক্তার জাহিদ মেমোরিয়াল হাসপাতালে ।সেখানে তাকে ইনকিউবেটরে রেখে প্রয়োজনীয় লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয় ।
প্রসংগত উল্লেখ্য, এই বাচ্চাটি প্রিম্যাচিউরড । প্রেগন্যান্সির ৫ মাস ২২ দিন পরেই এ জন্মগ্রহন করেছে । তাই ডাক্তাররা একে নিয়ে খুব বেশি নড়াচড়াও করতে চায়নি । অথচ উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে গেলে ভাল হত বলেই তারা মনে করছিলেন । বাচ্চাটির অবস্থার কথা শুনে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী হেলিকপ্টার ভাড়া করে বাচ্চাটিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন ।বাচ্চাটি স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল ।বাচ্চাটির নাম রাখা হয়েছিল গালিবা হায়াত ।

দুঃখের বিশয় হচ্ছে, জন্মের ৪ দিনের মাথায় (দ্বিতীয়বার জন্মের ২ দিনের মাথায়) ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে রাত ১১ টা ৪৭ মিনিটে গালিবা হায়াত মারা যায় । ডাক্তাররা বলেছেন , কম বয়সে এবং কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহন করার কারনে বাচ্চাটিকে বাচানো যায়নি ।

[রেফারেন্স , , , ]
ঘটনা ২ 
১৮ই মে ২০১৫ তারিখে ৫০ বছর বয়সী রাশিদা বেগমকে ভীষণ অসুস্থ্ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ই মে ২০১৫ সাড়ে সাতটার দিকে হাসপাতালের চিকিৎসকগণ তাকে মৃত ঘোষণা করে।
ওইদিন সকাল ১০টার দিকে তার লাশ বাড়িতে আনা হয়। মৃত রাশিদা বেগমের লাশ গোসল করানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হলে তখনই গা ছিম ছিম হওয়ার ঘটনা ঘটে। হঠাৎই মৃত রাশিদা বেগম জেগে উঠলে উপস্থিত সবাই চমকে উঠেন এবং খেয়াল করেন যে রাশিদার গা বেশ গরম ও নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। মৃত রাশিদার ভাগিনা-ভাগনি দাবি করেন যে- তাদের কাছে মৃত রাশিদা পানিও চেয়েছেন এবং তা পান করেন। পানি পান করার কিছুক্ষণ পরই ফের মারা যান রাশিদা বেগম। হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তাররা তার শরীরে জীবনের কোনো লক্ষন খুজে পাননি [রেফারেন্স ,]
ঘটনা ৩ 
২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর ঢামেকে ভর্তি করা হয়েছিলো অজ্ঞাতপরিচয় (৪৫)এক নারীকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ভবনের ৮০২ নং ওয়ার্ডের ৭ নং ইউনিটে তাকে রাখা হয়েছিলো চিকিৎসার জন্য।
দু’দিনচিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডবয় বেলাল মৃত ঘোষণার কাগজপত্র নিয়েমর্গ অফিসে যান। মর্গ অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা নূরে আলম বাবু মৃত ঘোষণার কাগজপত্র গ্রহণ করে আজিজ নামে এক কর্মীকে মৃত নারীর লাশ আনতে পাঠান।
বেলালকে নিয়ে আজিজ লাশ আনতে গেলে লক্ষ্য করেন, ‘মৃত’ নারীর হাত-পা নড়ছে। এতে পুরো ওয়ার্ডসহ ঢামেক জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। ওই নারীকে আবারো হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয় ।
unknown 02-12-2014
৫ই ডিসেম্বর ওই মহিলা মারা যান । অপুষ্টি এবং দুর্বলতার কারনে তিনি মারা গিয়েছিলেন বলে ডাক্তাররা জানান ।
[রেফারেন্স , ]
ঘটনা ৪ 
২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি শুক্রবার রাত ১০টায় কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকা থেকে সুলতানা আক্তার নামে এক গৃহবধূ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। রাত ১২টার দিকে ওই মহিলার একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। সুলতানার সন্তানটি জন্ম হয়েছিল সাড়ে ৬ মাসের মাথায়। বাচ্চাটি কাঁদেনি। তার শ্বাস-প্রশ্বাস ছিল না। শিশুটিকে ২১১ নম্বর ওয়ার্ডের ইনকিউবেটরে রাখা হয়। শনিবার সকালে শিশুটির নানি হনুফা বেগম তাকে কোলে নিয়ে দেখতে পান শিশুটির শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক নেই। এরপর ২১২ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসককে জানালে তিনি ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রারকে পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। সহকারী রেজিস্ট্রার হৃৎস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করে শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর তিনি শিশুটির ডেথ সার্টিফিকেট লেখেন। ডেথ সার্টিফিকেট নম্বর ৬৩৭০/১৮০। সকাল ৯টার দিকে শিশুটিকে ক্লিনিক্যালি ডেথ ঘোষণা করে তার অভিভাবকদের কাছে দেয়া হয়।
শিশুটির বাবা জাহাঙ্গীর আলম জানান, হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে তিনি বাচ্চাটিকে দাফনের জন্য আজিমপুর কবরস্থানে যান। এ সময় কয়েকজন ছাত্র তাকে জানালেন শিশুটি নড়ছে। ওই ছাত্রদের সহযোগিতায় তিনি শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এই শিশুটিও পরেরদিন আবার মারা যায় ।
[রেফারেন্স ]
ঘটনা ৫ 
চাদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউপির দশনাপাড়ার আবদুর রবের স্ত্রী আলেয়া বেগম মাতৃত্বজনিত কারণে ২০১৩ শালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন। ৯ ফেব্রক্তয়ারি বিকাল সাড়ে ৪টায় আলেয়া নরমাল ডেলিভারীতে মাত্র ৬ মাসের অশ্চঃসত্ত্বা অবন্সায় একটি কন্যা সশ্চান প্রসব করেন। এ সময় হাসপাতালের কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স লুৎফা বেগম শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করে সহকর্মী বিভাগে ফাইল নোট দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বাসায় ফিরে যান। ইত্যবসরে আলেয়ার হ্নামী মোঃ রব হাসপাতালের দিনমজুর মোস্তাফিজের মাধ্যমে একটি বাক্সে করে শিশুটির লাশ চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডন্স পৌর কবরস্থানে পাঠিয়ে দেন। মোস্তাফিজ বাক্সটি কবরন্সানের কেয়ারটেকার আবুল হাসেমের কাছে ১শ’ টাকাসহ দাফনের জন্য দিয়ে আসে। হাসেম, রুহুল আমিন এবং আবদুর রহমান ভূঁইয়া কবর তৈরি করে শিশুটিকে কবরস্থ করার সময় শিশুটি নড়ে ওঠে। ভয়ে ওরা ৩ জন কবরস্থানের বাইরে চলে আসে। খবরটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি সিভিল সার্জনকে জানানো হলে তিনি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মরত ডা. নূরুল আমিনকে এম্বুল্যান্সসহ কবরস্থানে পাঠান। [রেফারেন্স ১০]
ঘটনা ৬ 
বাংলাদেশ ছেড়ে যদি আমরা, একটু বহির্বিশ্বের দিকে তাকাই ,তাহলেও সেখানে অনেক মৃত মানুষ জীবিত হওয়ার ঘটনা দেখতে পাব । ২০১৩ সালের ১৫ই অক্টোবর মুম্বাইএর রাস্তায় এক মাতাল লোক পড়ে ছিল । পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় । ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করে বলে, এ মারা গেছে । তার ডেডবডি নিয়ে যাওয়া হয় পোস্ট মর্টেম করার জন্য । ছুরি দিয়ে কাটাকুটি শুরু আগ মুহুর্তে লোকটা বেচে ওঠে [৯] কিছুদিন আগে ১১ আগস্ট পাকিস্তানের ক্রিকেটার হানিফ মোহাম্মাদ এর হৃদপিন্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিট পরে আবার চালু হয়ে যায় । অবশ্য হানিফ মোহাম্মদ এর পরের দিন চিরস্থায়ীভাবেই মারা যান ।
ডাক্তার কিভাবে একজন রোগীকে মৃত হিসেবে সনাক্ত করে? 
কোনো রোগীকে ক্লিনিকালি ডেড ঘোষনা করার জন্য ডাক্তাররা সাধারনত হাতের পালস, হৃদপিন্ডের পালস এবং নিঃশ্বাস চেক করেন । এই গুলার কোনটাই যদি না থাকে, তাহলে রোগীকে মৃত বলা যেতে পারে। আরো নিশ্চিত হয়ার জন্য হার্টের ইসিজি করা হয় । ব্রেইনের সেল্গুলো বেচে আছে কিনা সেটাও অনেক সময় চেক করা হয়, তবে এগুলো কিছুটা খরচের ব্যাপার । হার্ট বিট যদি না পাওয়া যায় তাহলেই ডাক্তাররা ব্যস্ত হয়ে ওঠে রোগীর হার্ট চালু করার জন্য । বন্ধ হয়ে যাওয়া হার্ট চালু করার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হল CPR (Cardiopulmonary resuscitation )
মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করার কিছু মেডিকাল প্রচেষ্টা 
হঠাৎ করে যখন হূৎপিণ্ড ও ফুসফুস অকার্যকর হয়ে যায়, তখন আমাদের শরীরের শিরা-উপশিরায় যে পরিমাণ অক্সিজেন জমা থাকে তা দিয়ে চার থেকে ছয় মিনিট বেঁচে থাকা সম্ভব। আর সিপিআর প্রয়োগের জন্য এই চার থেকে ছয় মিনিট সময়টুকুই সবচেয়ে জরুরি। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কার্যকরভাবে সিপিআর প্রয়োগ করতে পারলে অনেককেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
সিপিআর দেওয়ার নিয়ম হচ্ছে , রোগীর বুকে খুব জোরে বেশি চাপ দিয়ে এবং দ্রুত চাপ দিতে হবে ।এত জোরে চাপ দিতে হবে যেন রোগীর বুক ২ ইঞ্চি ডেবে যায় । এত দ্রুত চাপ দিতে হবে যেন ১ মিনিটে ১২০ বার চাপ দেওয়া যায় । এভাবে সিপিআর দিতে থাকলে রোগীর হৃদপিন্ড ও চালু হয়ে যেতে পারে কখনো কখনো । ডাক্তার বা নার্স ছাড়াও যে কেউ সিপিআর দিয়ে অন্য লোকের জীবন বাচাতে পারে ।এই ভিডিওতে দেখে নিন কিভাবে সঠিক নিয়মে সিপিআর দিতে হয় [১০]
সিপিআর দিয়ে প্রতিবছর অনেক মানুষকেই মৃত্যুর মুখ থেকে বাচানো যায় । কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারনা করা হয় প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী কয়েক হাজার রোগী সিপিআর এর মাধ্যমে নতুন জীবন পায় । সিপিআর এর ফলে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা কয়েক রোগীর গল্প পাবেন এখানে [রেফারেন্স ১১]
CPR সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে উইকিপিডিয়া দেখুন [রেফারেন্স ১২]
থেমে যাওয়া হৃদপিন্ড চালু করার জন্য সিপিআর হল ম্যানুয়াল পদ্ধতি । হাত দিয়ে প্রেস করতে হয় । ইলেক্ট্রিকাল কারডিওভার্শন নামে আরেকটা পদ্ধতি আছে । মূলত এই পদ্ধতিতে ইরেগুলার হার্ট বিটকে রেগুলার করা হয় । রোগীর বুকে লিমিটেড ইলেক্ট্রিক শক দেওয়া হয় ,চামড়া ভেদ করে এই ইলেক্ট্রিক সিগনাল পৌছে যায় রোগীর হৃদপিন্ডে । হার্টের কিছু নোড থাকে যারা ইলেকট্রিসিটি ট্রান্সমিট করে ।এদের সচল করার জন্য সেই ইলইক্ট্রিক শক দেওয়া হয় । বাংলা সিনেমায় এই ধরনের শক দিতে খুব দেখা যায় । ২ হাতে ২ টা ইস্ত্রির মত জিনিস নিয়ে রোগীর বুকে ছোয়ায় , আর রোগীর বডি বিছানা থেকে লাফ দিয়ে ওঠে [রেফারেন্স ১৩]
বন্ধ হৃদপিন্ড চালু করার উপায় নিয়ে এতক্ষন আলোচনা করা হল । ফুসফুস যদি বন্ধ হয়ে যায়, তখন সেটি চালু করার কোনো উপায় কি আছে ?
সৌভাগ্যের বিষয় হল, হ্যা , বন্ধ ফুসফুস চালু করার ও একটা উপায় আছে । একে বলে Mouth-to-mouth resuscitation , বাংলায় অনেক সময় একে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস বলে অভিহিত করা হয় । রোগীর মুখে ডাক্তার/নার্স/সাহায্যকারী মুখ লাগিয়ে তার মুখে বাতাস ফুকে দেয় । ডাক্তারের স্বাস প্রশ্বাসের সাথে সাথে একই তালে যেন রোগীর ফুসফুসেও বাতাস ঢোকে এবং বের হয়, সেই চেষ্টা করা হয় (মানুষের মুখ এবং নাকের ভিতরে আন্তঃসংযোগ আছে ।মুখের ভিতরে বাতাস ঢুকলে সেটা নাকের নালী হয়ে ফুসফুসে যায় ) সাধারনত পানিতে ডোবা রোগীর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে ফুসফুস চালু করা হয় । অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীকে cpr এবং mouth to mouth breathing একসাথেই দেওয়া হয় [রেফারেন্স ১৪]
সম্ভাব্য সকল প্রসেসে রোগীকে বাচানোর চেষ্টা করার পরেই একজন ডাক্তার কোনো রোগীকে মৃত ঘোষনা করেন । বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এই সব প্রচেষ্টা ছাড়াই কোনো কোনো ব্যক্তির হৃদপিন্ড মৃত্যুর কিছু সময় পরে অটোমেটিকালি চালু হয়ে যায় । এই ঘটনাকে বলে ল্যাজারাস ( lazarous ) সিন্ড্রোম
সম্ভাব্য সকল প্রসেসে রোগীকে বাচানোর চেষ্টা করার পরেই একজন ডাক্তার কোনো রোগীকে মৃত ঘোষনা করেন । বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এই সব প্রচেষ্টা ছাড়াই কোনো কোনো ব্যক্তির হৃদপিন্ড মৃত্যুর কিছু সময় পরে অটোমেটিকালি চালু হয়ে যায় । এই ঘটনাকে বলে ল্যাজারাস সিন্ড্রোম . lazarous নামটা এসেছে বাইবেল থেকে । যীশুর একজন প্রিয় শিষ্য ছিলেন lazarous । বাংলা বাইবেলে এই শিষ্যের বানান লেখা হয়েছে ‘লাসার’ । ল্যাজারাস মারা যাওয়ার পরে যীশু তার অলৌকিক ক্ষমতার প্রভাবে তাকে বাচিয়ে দিয়েছিলেন বলে বাইবেলে উল্লেখ আছে । আমি এখানে বুক অফ জন এর চ্যাপ্টার ১১ থেকে কোট করছি
১ লাসার নামে একটি লোক অসুস্থ ছিলেন; তিনি বৈথনিযা গ্রামে থাকতেন। ।
৩ তাই লাসারের বোনেরা একটি লোক পাঠিয়ে যীশুকে বলে পাঠালেন, ‘প্রভু, আপনার প্রিয় বন্ধু লাসার অসুস্থ।’
——-
১১ তিনি একথা বলার পর তাদের আবার বললেন, ‘আমাদের বন্ধু লাসার ঘুমিয়ে পড়েছে; কিন্তু আমি তাকে জাগাতে যাচ্ছি।
১২ তখন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে বললেন, ‘প্রভু, সে যদি ঘুমিয়ে থাকে তবে সে ভাল হয়ে যাবে।’
১৩ যীশু লাসারের মৃত্যুর বিষয়ে বলছিলেন, কিন্তু তাঁরা মনে করলেন তিনি তাঁর স্বাভাবিক ঘুমের কথা বলছেন।
১৪ তাই যীশু তখন তাদের স্পষ্ট করে বললেন, ‘লাসার মারা গেছে।
১৫ আর তোমাদের কথা ভেবে আমি আনন্দিত য়ে আমি সেখানে ছিলাম না, কারণ এখন তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে। চল, এখন আমরা তার কাছে যাই।’
———————-
২১ মার্থা যীশুকে বললেন, ‘প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকতেন তাহলে আমার ভাই মরত না।
২২ কিন্তু এখনও আমি জানি য়ে, আপনি ঈশ্বরের কাছে যা কিছু চাইবেন, ঈশ্বর আপনাকে তাই দেবেন।’
২৩ যীশু তাঁকে বললেন, ‘তোমার ভাই আবার উঠবে।’
২৪ মার্থা তাঁকে বললেন, ‘আমি জানি শেষ দিনে পুনরুত্থানের সময় সে আবার উঠবে।’
২৫ যীশু মার্থাকে বললেন, ‘আমিই পুনরুত্থান, আমিই জীবন। য়ে কেউ আমাকে বিশ্বাস করে, সে মরবার পর জীবন ফিরে পাবে।
২৬ য়ে কেউ জীবিত আছে ও আমায় বিশ্বাস করে, সে কখনও মরবে না। তুমি কি একথা বিশ্বাস কর?’
২৭ মার্থা তাঁকে বললেন, ‘হ্যাঁ, প্রভু! আমি বিশ্বাস করি য়ে জগতে যাঁর আসার কথা আছে আপনিই সেই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র।’
—————–
৩৪ তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা তাকে কোথায় রেখেছ?’ তারা বললেন, ‘প্রভু, আসুন, এসে দেখুন।’
৩৫ যীশু কেঁদে ফেললেন।
৩৬ তখন সেই ইহুদীরা সকলে বলতে লাগল, ‘দেখ! উনি লাসারকে কত ভালোবাসতেন।’
৩৭ কিন্তু তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ বলল, ‘যীশু তো অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি দিয়েছেন; কেন তিনি লাসারকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালেন না?’
৩৮ এরপর যীশু আবার অন্তরে বিচলিত হয়ে উঠলেন। লাসারকে য়েখানে রাখা হয়েছিল, যীশু সেই কবরের কাছে গেলেন। কবরটি ছিল একটা গুহা, যার প্রবেশ পথ একটা পাথর দিয়ে ঢাকা ছিল।
৩৯ যীশু বললেন, ‘ঐ পাথরটা সরিয়ে ফেল।’সেই মৃত ব্যক্তির বোন মার্থা বললেন, ‘প্রভু চারদিন আগে লাসারের মৃত্যু হয়েছে। এখন পাথর সরালে এর মধ্য থেকে দুর্গন্ধ বের হবে।’
৪০ যীশু তাঁকে বললেন, ‘আমি কি তোমায় বলিনি, যদি বিশ্বাস কর তবে ঈশ্বরের মহিমা দেখতে পাবে?’
৪১ এরপর তারা সেই পাথরখানা সরিয়ে দিল, আর যীশু উর্দ্ধ দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘পিতা, আমি তোমায় ধন্যবাদ দিই, কারণ তুমি আমার কথা শুনেছ।
৪২ আমি জানি তুমি সব সময়ই আমার কথা শুনে থাক। কিন্তু আমার চারপাশে যাঁরা দাঁড়িয়ে আছে তাদের জন্য আমি একথা বলছি, য়েন তারা বিশ্বাস করে য়ে তুমি আমায় পাঠিয়েছ।’
৪৩ এই কথা বলার পর যীশু জোর গলায় ডাকলেন, ‘লাসার বেরিয়ে এস!’
৪৪ মৃত লাসার সেই কবর থেকে বাইরে এল। তার হাতপা টুকরো কাপড় দিয়ে তখনও বাঁধা ছিল আর তার মুখের ওপর একখানা কাপড় জড়ানো ছিল।যীশু তখন তাদের বললেন, ‘বাঁধন খুলে দাও এবং ওকে য়েতে দাও।’
[রেফারেন্স ১৫]
এই গল্পের সত্যতা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে । তবে মেডিকেল সায়েন্সে ল্যাজারাস নামটা চিরস্থায়ী জায়গা পেয়ে গিয়েছে । গত একশ’ বছরে Lazarus Syndrome-এর মাধ্যমে পুনর্জীবন প্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা ৩৯। এ ৩৯ টি ঘটনার মধ্যে ২৫ টিই ঘটেছে ১৯৮২ সালের পরে। কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করি ।
ঘটনা ৭
১৯৯৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ।ঘটনাস্থল -ইংল্যান্ডের হান্টিংডন শহরের নিকটবর্তী গ্রাম-স্টোনলি ।বছরের শেষ রাত টা কাটাচ্ছেন ৬১ বছর বয়স্ক ডাফনে ব্যাঙ্কস ।না , কোন ধরনের থার্টি ফার্স্ট নাইট পার্টি তে যাচ্ছেন না তিনি । বেশ কয়েক বছর ধরে তার মৃগী রোগ হয়েছে । ডাক্তাররা তাকে গাড়ি চালাতে নিষেধ করে দিয়েছেন ।হাটাচলাও ঠিক মত করতে পারেন না । এই সব অক্ষমতা তাকে সারাদিন বিষন্ন করে রাখে ।
থার্টি ফার্স্ট নাইটের সন্ধ্যায় তিনি সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নিলেন । তিনি তার মৃগী রোগের ওষুধ গুলো খেলেন ,অনেক বেশি করে । সাথে ঘুমের ওষুধ ও খেলেন একগাদা । তলিয়ে গেলেন গভির ঘুমে ।
তাকে তার বিছানায় অচেতন অবস্থায়া আবিষ্কার করেন তার স্বামী ক্লড ব্যাঙ্কস । ডাকা হয় পারিবারিক ডাক্তার ডেভিড রবার্টকে । তিনি এসে মিসেস ব্যাঙ্কস কে মৃত ঘোষনা করেন ।
কয়েক ঘন্টা পরে তাকে নেওয়া হয় হিঞ্চিংব্রুক হাসপাতালের মর্গে , তার ডেডবডি সংরক্ষন করার জন্য । তার শবদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয় কেন ডেভিসনের কাছে । কেন ডেভিসন হলেন একজন আন্ডারটেকার । তার কাজ ডেডবডিকে গোসল দেওয়া,কাপড়চোপড় পরানো,কবার খোড়া ইত্যাদি । তিনি মৃতদেহটিকে প্রস্তুত করে একটি একটি রেফ্রিজারেটিং ট্রে তে উঠানো শুরু করেছিলেন (যেখানে ডেডবডিটি পরবর্তী কয়েক দিন সংরক্ষিত থাকবে ,কবর দেওয়ার আগ পর্যন্ত) । ঠিক এই সময় তিনি ডাফনে ব্যাঙ্কস এর গলা থেকে মৃদু ঘড়ঘড়ানি শুনতে পান । তিনি মিসেস ব্যাঙ্কস এর কবজি পরীক্ষা করলে সেখানেও শিরার চলাচল লক্ষ্য করেন । দ্রুত তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয় । সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি ।
তবে তার সূস্থ হতে অনেক সময় লেগে যায় । তিনি প্রথম চোখ মেলেন ২ জানুয়ারি সকাল ৮ টায় । কিন্তু তার পরপরই আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে যান । ২ জানুয়ারি থেকে ৫ জানুয়ারি তিনি ঘুম এবং জাগরনের মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলেন । ৫ জানুয়ারি থেকে তিনি সম্পূর্ণ সূস্থ হয়ে ওঠেন [রেফারেন্স ১৬]
ঘটনা ৮ 
আরেকটি ঘটনা বলি । ২০১১ সালের ২৬শে এপ্রিল ।বাড়ির লনে দাঁড়িয়ে ৬৫ বছর বয়স্ক মি. এনজি সুই হোক তাঁর ৭০ বছর বয়স্ক বড়ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করছিলেন। দেখতে দেখতে তা হাতাহাতির পর্যায়ে চলে গেল। ডান হাতে আঘাত পেলেন মি. হোক। দ্রুত তাঁকে বাড়ির ভেতর নিয়ে যাওয়া হল। কিন্তু তাঁর বৃদ্ধ হৃৎপিণ্ড বেশি উত্তেজনা সহ্য করতে পারলনা। তিনি স্ট্রোক করলেন।
পেনাং হাসপাতাল কাছেই, সেখানে নিয়ে যাওয়া হল মি. হোক কে। কিন্তু ডাক্তারদের সব চেষ্টা ব্যর্থ। তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হল। তখন দুপুর বারোটা।
দুপুর দুইটার দিকে মি. হোক-এর ছেলে ও স্ত্রী পুলিশের কাছে গেল ডেথ সার্টিফিকেট তৈরী করতে। সার্টিফিকেট তৈরী করা মাত্র শেষ হয়েছে, এই সময় পেনাং হাসপাতাল থেকে ফোন এল। মি. হোক বেঁচে উঠেছেন। এখনও জ্ঞান ফেরেনি, তবে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক।
পড়ি কি মরি করে মা-ছেলে ছুটে গেল হাসপাতালে। সেখানে অতি চমৎকার দৃশ্য। যাঁকে ঘণ্টা দুয়েক আগে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে মর্গে নেয়ার ট্রলিতে নেয়া হয়েছিল, তাঁকে পুনরায় আইসিইউতে নেয়া হয়েছে, বুক শ্বাস-প্রশ্বাসে উঠানামা করছে।[রেফারেন্স ১৭]
Lazarus Syndrome-এর সুষ্ঠু কারণ বিজ্ঞানীরা এখনও বের করতে পারেননি। কোমা, কিংবা অন্যান্য প্রায়-মৃত সিন্ড্রোমের সাথে এর মূল পার্থক্য হচ্ছে, এক্ষেত্রে রোগীকে প্রায় মৃত নয়, মৃত বলেই ঘোষণা করা হয়। হৃৎপিন্ডের পাম্পিং বন্ধ হয়ে যায়, মস্তিষ্কে অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্রেনও মৃত্যুবরণ করে। অন্য একজন সাধারণ মৃত মানুষের সাথে তার কোন পার্থক্য থাকেনা।
Lazarus Syndrome-এর কিছু কারণ বিজ্ঞানীরা সনাক্ত করার চেষ্টা করেছেন, যদিও কোনটিই শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত হল, ভিক্টিমের বন্ধ হয়ে যাওয়া হৃৎপিন্ড কোনভাবে এপিনেফ্রিন হরমোনের প্রভাবে পুনরায় শক্তি অর্জন করে, এবং পাম্পিং শুরু করে। উল্লেখ্য, এপিনেফ্রিন হরমোন হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তনালীর মধ্য দিয়ে এয়ার প্যাসেজ তৈরী করে ঠিকভাবে রক্ত চলাচলের জন্যে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই থিওরীর পর এ পর্যন্ত বহু মৃত মানুষকে তাদের পরিবারের অনুরোধে মৃত্যুর পর হেভি ডোজের এপিনেফ্রিন দেয়া হয়েছে, কিন্তু এভাবে কেউই পুনর্জীবন প্রাপ্ত হয়নি। অর্থাৎ এপিনেফ্রিনের মাধ্যমে Lazarus Syndrome ঘটে থাকলেও কৃত্রিমভাবে সেটা সম্ভব নয়। কিন্তু অচল হয়ে যাওয়া ব্রেন নিজ থেকে কিভাবে এপিনেফ্রিন ক্ষরণের নির্দেশ দেয় হৃৎপিণ্ডকে সচল রাখার জন্যে, তাও ডাক্তারদের বোধগম্য নয়। তাছাড়া এ প্রক্রিয়া তো তাহলে সব মানুষের ক্ষেত্রেই হওয়ার কথা, শুধু হাতে গোনা কয়েকজনের মধ্যেই কেন?
অনেকে অবশ্য মনে করেন কার্ডিও-পালমোনারী রিসাসিটেশনের কারণে হার্টে যে চাপ সৃষ্টি হয়, তার ফল হিসেবেই এটি হয়ে থাকে। যদিও এ রিসাসিটেশন প্রয়োগ করা হয় তৎক্ষণাত হার্টবিট বৃদ্ধি করার জন্যে, মৃত্যুর পর পুনরায় সেটা শুরু করার জন্যে নয়। তাই এ ব্যাখ্যাও কিছুটা অচল, কারণ মানুষের শরীরে এমন কোন রিজার্ভার নেই, যা রিসাসিটেশনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পালস সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। তাই তাঁদের ব্যাখ্যটা অনেকটা এরকম দাঁড়ায়, ‘রিসাসিটেশনের ফলে যে বৈদ্যুতিক চাপ হৃৎপিণ্ডে পড়ে, তা-ই কোনভাবে মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তে শরীর সংরক্ষণ করে রাখে। পরবর্তীতে সেই চাপ প্রয়োগ করে হৃদপিণ্ডকে পুনরায় প্রসারিত করা হয়, যার ফলে হার্টবিট শুরু হয়, মানুষ জীবন ফিরে পায়’। তবে ‘কি’ চাপ প্রয়োগ করে, তার কোন উত্তর নেই।
এছাড়া এখানেও সেই একই সমস্যা। এক্ষেত্রেও যাদের উপর রিসাসিটেশন প্রয়োগ করা হয়, তাদের সবারই জীবন ফিরে পাবার কথা! কিন্তু সেটা কখনোই হয়না। তাছাড়া এতো মাত্র বিশ-ত্রিশ বছর আগের প্রযুক্তি, এর আগে যারা Lazarus Syndrome-এর মাধ্যমে জীবন ফিরে পেয়েছেন, তাদের ব্যাখ্যা কি?
পুনর্জীবনের শুরুতে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে হাঁটুর কাঁপুনি, ঘাড় ও বাহুর লোম দাঁড়িয়ে যাওয়া অর্থাৎ Goosebump। ভিক্টিমের হাত বিছানার ওপর থাকলে সাধারণত তা আপনাতেই উঠে বুকের ওপর আড়াআড়ি ভাবে থাকে, এরপর খুব ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস দেখা যায়। এ পর্যন্ত Lazarus Syndrome এর লক্ষণ দেখে অন্তত ষোলজন নার্স এবং দুজন ডাক্তার জ্ঞান হারিয়েছেন, অন্তত তিনজন মহিলা ভয়ের আধিক্যে স্ট্রোক করেছেন। অস্ট্রিয়ায় এক গ্রামে একজন ভিক্টিমকে জীবন ফিরে পাবার পরও জোর করে মাটি চাপা দেয়া হয়েছিল, কারণ গ্রামবাসীর ভাষ্যমতে, শয়তান মৃতদেহ দখল করেছিল। জোর করে এভাবে পুনর্জীবন প্রাপ্তদের মেরে ফেলার ঘটনা গত শতাব্দীতে অন্তত পাঁচবার ঘটেছে। তবে যখন থেকে মেডিকেল সাইন্স একে একটি Syndrome বলে আখ্যা দিয়েছে, তারপর থেকে এরকম অপ্রত্যাশিত ঘটনা তেমন ঘটেনি। বরং গত পঞ্চাশ বছরে এমন প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই রোগীকে দ্রুত আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
Lazarus Syndrome-এর ব্যাপারটা যে আজকে নতুন নয়, তার প্রমাণ অসংখ্য। ধারণা করা হয়, প্রাচীন মিশরে এ সিন্ড্রোমের কয়েকটি ঘটনার কারণেই পিরামিডে মৃতকে মমি করে রাখার ব্যাপারটা শুরু হয়। এমনকি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনও এ সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিলেন, যে কারণে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর অন্তত দু সপ্তাহ পরে তাঁকে দাফন করতে। ১৮৯০ সালে পেনসিলভেনিয়ায় একটি বিশেষ ধরনের কবরস্থান তৈরী করা হয়েছিল, যার প্রতিটি ভল্টের সাথে ‘Escape Hatch’ ছিল, যাতে মৃতরা কোনভাবে পুনর্জীবন প্রাপ্ত হলে তাদের ফিরে আসতে কোন অসুবিধা না হয়!
একজন ভিক্টিম কতো সময় পর বেঁচে উঠবে, কিংবা পরবর্তীতে কতোদিন বেঁচে থাকবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়না। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ছয়দিন পর একজন মানুষ বেঁচে উঠেছিলেন, যাকে হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছিল। এবং Lazarus Syndrome-এ আক্রান্ত হওয়ার পর সর্বোচ্চ এগারো বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার রেকর্ড পাওয়া গিয়েছে।। তবে এটা ঠিক, পুনর্জীবন প্রাপ্তরা পরবর্তীতে তেমন সুস্থভাবে জীবন কাটাতে পারেননি।
শুধু মানুষ না, অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও বিস্তৃত, যা Lazarus Taxon নামে পরিচিত। Lazarus Taxon হল সেই প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে বহু বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া কোন প্রাণী পুনরায় আবির্ভূত হয়। যেমন- La Palma Giant Lizard নামক টিকটিকি ১৫০০ সালে বিলুপ্ত হয়েছিল বলে ধরা হয়েছিল, কিন্তু ২০০৭ সালে এসে এদের পুনরায় আবিষ্কার করা হয়। শুধু প্রাণীই না, অনেক গাছপালাতেও Lazarus Taxon দেখা যায়।
একবিংশ শতাব্দীত শুরুতেই Lazarus Syndrome-এর তিনটি ঘটনা বিজ্ঞানীদের আরও কোতূহলী করে তুলেছে। আর ২০১১ সালে পরপর এমন দুটি ঘটনায় তো রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে। এ ব্যাপারেও বিজ্ঞানীরা একমত, যে কাগজে-কলমে হিসাব ছাড়াও প্রতি বছরে পৃথিবীতে অন্তত একবার Lazarus Syndrome-এর ফলে মানুষ পুনর্জীবন ফিরে পাচ্ছে। বেশিরভাগ সময়ই সেসব চাপা পড়ে যায় ভীতি, কুসংস্কার, হিংসা, লোভ ইত্যাদি ঘটনায়। যেমন- মৃত বাবা পুনর্জীবন লাভ করার পর সম্পত্তির লোভে তাঁকে জোর করে মেরে ফেলার ঘটনা অন্তত চারবার ঘটেছে।
[রেফারেন্স ১৮]
বাংলাদেশের ফরিদপুরের বাচ্চাটির ঘটনা ল্যাজারাস সিনড্রোম কি না সেটা নিয়ে কোথাও কোনো বিশেষজ্ঞ মতামত পেলাম না । বাংলাদেশে এর আগেও যে ঘটনা গুল ঘটেছে সেগুলর ও ভালভাবে এনালাইসিস হয়েছে কিনা জানা যায়নি । ল্যাজারাস সিনড্রোম বাদেও মৃত মানুষ জ্যান্ত হওয়ার আরেকটা উপায় আছে । মেডিকেলের পরিভাষায় একে বলে সাসপেন্ডেড এনিমেশন । খুব ঠান্ডার ভিতরে মানুষ পড়ে গেলে এই ধরনের সাসপেন্ডেড এনিমেশন অবস্থায় চলে যেতে পারে । এই সময় মানুষের ফুসফুস,হৃদপিন্ড সব কিছুই খুব ধীরে ধীরে কাজ করা শুরু করে । ফলে লোকটির ক্ষুধা তৃষনা কিছু পায়না , এবং লোকটি মারাও যায়না [রেফারেন্স ১৯,২০]
২০০৬ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে নিখোজ ছিলেন জাপানী ভদ্রলোক মিছুটাকা উচিকোশি । প্রকৃতপক্ষে তিনি পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন । এক্সিডেন্ট করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকেন পাহাড়েই । প্রচন্ড ঠান্ডায় তার বডি চলে যায় সাসপেন্ডেড এনিমেশন পর্যায়ে । ২৪ দিন পরে একজন পথিক এসে তাকে উদ্ধার করে । সাসপেন্ডেড এনিমেশন অবস্থা থেকে তিনি বেচে ফিরে আসেন [রেফারেন্স ২১]
মৃত বা প্রায় মৃত অবস্থা থেকে যদি কেউ ফিরে আসে, তাহলে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ভালভাবে চেক আপ করাতে হবে , শরীরের অন্য কোথাও কোনো অসূস্থতা আছে কিনা দেখতে হবে । কখনো কখনো কিছু পীর/ফকির/সন্যাসী মানুষের ধর্ম বিশ্বাস কাজে লাগিয়ে মৃত মানুষকে জ্যান্ত করার দাবি করে । সাধারন মানুষ এদের বিশ্বাস করে অনেক সময় টাকা পয়সাও দেয় , কিন্তু মৃত মানুষ এর জীবন আর ফেরত পায়না ।
২০১১ সালের জুন মাস । ঘটনাস্থল পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রাম । গ্রামের বাসিন্দা জাকির মুন্সীর স্ত্রী মাসুদা বেগম (৩৬) দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস রোগে ভুগে গত ৬ জুন সকালে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। একইদিন দুপুরে তার মৃতদেহ মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
দাফনের দু’দিন পর অর্থাৎ ৯ জুন সকালে ওই বাড়ির সামনে হাজির হয় ভণ্ড পীর লাইলী বেগম ও তার দুই সহযোগী। বাড়ির সামনে গিয়ে লাইলি লোকজনকে বলতে থাকে, ‘বান মেরে হত্যা করা হয়েছে মাসুদাকে। সে মরে নাই। ওরে আমি আবার জীবিত করতে পারমু।’
প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানায়, দুপুরে লাইলী ও তার দুই সহযোগী কবরের ওপরের মাটি সরিয়ে দেয়। এরপর লাশের মাথা থেকে কাফনের কাপড় খুলে ফেলে, পানি ছিটিয়ে দেয়। এরপর ভণ্ড পীর ধ্যানে বসেন এবং ঘোষণা দেন, ‘দুই ঘণ্টা পরে লাশ জ্যান্ত হবে।’
খবরটি মোবাইলের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে সহস্রাধিক উৎসুক মানুষ জড়ো হয় কবরের সামনে। ২ ঘন্টা পরেও মাসুদা জীবিত না হলে স্থানীয় লোকজন লাইলী ও তার সহযোগীদের গণধোলাই দিতে শুরু করে। পালিয়ে যায় লাইলীর দুই সহযোগী। পরে পুলিশ এসে লাইলীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। [রেফারেন্স ২২]
২০১১ সালের ৩ নভেম্বর একই ঘটনা ঘটে কোলকাতায় । বলাবাহুল্য এখানেও ফকিরের তর্জন গর্জনই সার হয়েছিল । কাউকে তারা জ্যান্ত করতে পারেনি [রেফারেন্স ২৩]
শেষ করব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ছোটগল্প ‘কাদম্বরী’ দিয়ে । কাদম্বরী দেবী মারা গিয়েছিলেন কলেরায় । ছোয়াচে রোগ বলে তার আত্মীয় স্বজন তাকে দ্রুত দাহ করারনোর ব্যবস্থা করেছিল । শ্মশানে তার আত্মীয়স্বজনেরাও কেউ যায়নি । প্রফেশনাল ডোমরা কাদম্ব্রীর মুখে অল্প একটু আগুন লাগিয়েই চলে যায় । তারা অযথা জালানি কাঠ অপচয় করতে চায়নি । সেই রাতে নামল বৃষ্টি । বৃষ্টিতে চিতার আগুন নিভে গেল । কাদম্বরী জ্ঞান ফিরে পেলেন । সিচুয়েশন বুঝতে পেরে নিজের বাসায় ফিরে এলেন ।
কিন্তু তার নিজের বাসায় কেউ তাকে গ্রহন করল না । সবাই বলল ,’তুমি কাদম্বরীর ভূত। প্রেতাত্মা ।তুমি চলে যাও । আমাদের ভয় দেখিও না ‘ । কাদম্বরী কাউকেই কনভিন্দ করতে পারলেন না । মনের দুঃখে তিনি পুকুরে ডুব দিয়ে সুইসাইড করলেন । গল্পের শেষ লাইন হল–কাদম্বরী মরিয়া প্রমান করিল যে সে মরে নাই । গল্পটি পড়তে পারবেন [রেফারেন্স ২৪] এর লিংক থেকে
বাস্তব জীবনে আপনার সামনে কোনো মৃত মানুষকে জ্যান্ত হতে দেখলে আপনি কি করবেন ? ল্যাজারাস সিন্ড্রোম কিংবা সাস্পেন্ডেড এনিমেশন ভেবে তাকে ডাক্তার  দেখাবেন , নাকি কাদম্বরীর ভূত এর মত কিছু ভেবে তাকে আবারো মেরে ফেলবেন ?
রেফারেন্সেস :
[১]http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/982921/
[২]http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/983869/
[৩] http://www.prothom-alo.com/…/হেলিকপ্টারেই-ঢাকায়-নেওয়া-হলো-…
[৪]http://dhakatimes71.com/archives/1038
[৫]https://vidsn.com/v/-bangla-news-2016+EcIOyw9Df–.html
[৬]http://newstoday24.com/%E0%A6%A2%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%B…/
http://newstoday24.com/ঢাকা-মেডিকেল-কলেজ-হাসপাত-2/
[৭]http://www.jugantor.com/old/first-page/2015/02/01/213632
[৮]http://www.dailysangram.com/…/25471-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A…
http://www.dailysangram.com/…/25471-হাসপাতালে-মৃত-ঘোষিত-শিশ…
[৯]http://www.bbc.com/…/2015/10/151012_sg_mumbai_dead_man_alive
http://www.bbc.com/…/2015/10/151012_sg_mumbai_dead_man_alive
[১০]https://www.youtube.com/watch?v=6pttP7v6YGM
[১১]http://kellicline.com/c…/how-many-are-saved-with-cpr-yearly/
[১২]https://en.wikipedia.org/wiki/Cardiopulmonary_resuscitation
[১৩]https://en.wikipedia.org/wiki/Cardioversion
[১৪]https://en.wikipedia.org/wiki/Mouth-to-mouth_resuscitation
[১৫]http://www.ebanglalibrary.com/…/%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%B…/
http://www.ebanglalibrary.com/banglabible/যোহন-১১/
[১৮]https://www.facebook.com/misirali2015/posts/616232011810507
[১৯]https://en.wikipedia.org/wiki/Suspended_animation
[২০]http://zafrulmobin.blogspot.com/2015/…/lazaraussyndrome.html
[২১]http://news.bbc.co.uk/2/hi/asia-pacific/6197339.stm
[২২]http://www.banglanews24.com/…/%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%A4-%…
http://www.banglanews24.com/national/news/bd/44077.details
[২৩]http://www.anandabazar.com/…/%E0%A6%95-%E0%A6%B8-%E0%A6%B8-…#
http://www.anandabazar.com/…/ক-স-স-ক-র-র-প-রক-প-এ-ব-র-কবর-থ…
[২৪]https://bn.wikisource.org/…/%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%…
https://bn.wikisource.org/wiki/জীবিত_ও_মৃত