Tuesday, August 29, 2017

ইসলামে পতিতাবৃত্তি এবং শীত-গ্রীষ্ম ও জ্বরের ইসলামি কারন

ইসলামি পন্ডিতরা খুব তারস্বরে একটা দাবী করে ইসলাম পতিতাবৃত্তিকে বন্দ করেছে। কিন্তু বাস্তবে কি তাই ? দেখা যাক  এ বিষয়ে কিছু হাদিস –

সালামা ইবনে আল আকবা ও জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ বর্ণিত: আল্লাহর নবী আমাদের কাছে আসলেন ও সাময়িক বিয়ের অনুমতি প্রদান করলেন। সহি মুসলিম, বই-৮ , হাদিস-৩২৪৭
ইবনে উরাইজ বর্ণিত: আতি বর্ণিত যে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ উমরা পালনের জন্য আসল এবং আমরা কিছু লোক তার কাছে গেলাম ও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন- আমরা নবীর আমলে সাময়িক বিয়ে করে আনন্দ করতাম ও এটা আবু বকর ও ওমরের আমল পর্যন্ত চালু ছিল। সহি মুসলিম, বই -৮, হাদিস- ৩২৪৮
দেখা যাচ্ছে নবী সাময়িক বিয়ে তথা পতিতাবৃত্তিকে অনুমতি দিয়েছিলেন।  যা তিনি করেছিলেন আল্লাহর হুকুমেই যেমন –
এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। সুরা নিসা, ৪:২৪
উক্ত ৪: ২৪ আয়াতের এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয় অংশটুকুই হলো পতিতাবৃত্তির সনদ। অংশটুকু পড়লেও সেটা বোঝা যায়। শুধুমাত্র ব্যভিচারের অভিযোগ এড়ানোর জন্য একটা মোহর ধার্য করে বিয়ের অভিনয় করতে হবে। ইসলামে এটার নাম দেয়া হয়েছে- মূতাহ বিয়ে। অভিনয় কেন ? কারন সাময়িক তথা ২/৪ দিনের জন্য বিয়ে কোন বিয়ে হতে পারে না। খেয়াল করতে হবে সেটা পরিস্কার হয় পরের অংশে- অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। অর্থাৎ উক্ত সাময়িক ভাবে বিয়ের অভিনয় করার পর তাকে ভোগ করে তার যথার্থ প্রাপ্য তাকে দিতে হবে। এখানে যে বিষয়টির ওপর বেশী জোর দেয়া হয়েছে তা হলো – নারীকে ভোগ করার পর তার প্রাপ্য যথাযথ ভাবে দিতে হবে , ঠকান যাবে না। এটা একটা ভাল দিক। এ থেকে এটাও মনে হয় যে – সে সময় যৌনকাতর আরবরা অনেক সময় জোর করে নারীদের সাথে যৌনকাজ করে তাদেরকে কোন মূল্য দিত না। আমাদের দয়াল নবি বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে এ ধরনের নির্যাতন রোধ কল্পেই মূল্য পরিশোধের ওপর মারত্মক জোর দিয়েছেন।  ইরানে তাই আজও এ ধরনের  মুতা বিয়ে তথা পতিতাবৃত্তির বহুল প্রচলন বিদ্যমান। আর একটা হাদিস দেখা যাক,
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ বর্ণিত: সামান্য কিছু খাদ্য বা অন্য কিছুর বিনিময়ে আমরা নবীর আমলে সাময়িক বিয়ে করতাম, এটা আবু বকরের আমলেও আমরা এটা করতাম তবে ওমর এটা নিষেধ করে দেন। সহি মুসলিম, বই ৮,হাদিস-৩২৪৯
উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে হযরত ওমর উক্ত পতিতাবৃত্তি রদ করে দেয়। কিন্তু কথা হলো যে আদেশ স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছে , সে আদেশ রদ করার ক্ষমতা কি ওমরের আছে ? এটা কি ওমরের খোদার সাথে খোদাগিরি করা হয়ে গেল না ? আমরা কোরানে দেখেছি আল্লাহ প্রায়ই তার বানী পাল্টে ফেলত, চঞ্চলমতি মানুষের মত। যেটা আল্লাহ নিজে বলেছেও , যেমন –
আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?সুরা বাকারা , ২: ১০৬
এখানে আল্লাহ বলছে যে সে মন চাইলেই  কোন আয়াত রহিত করে নতুন কোন আয়াত নাজিল করে, কারন আল্লাহ সব কিছুর ওপর শক্তিমান । অথচ আমরা দেখছি আল্লাহ ৪: ২৪ আয়াতের মাধ্যমে পতিতাবৃত্তিকে অনুমতি দিয়ে পরে কোন আয়াত দ্বারা সেটা রদ করে নি। রদ করেছে খলিফা ওমর। যেহেতু সব কিছুর ওপর শক্তিশালী বলেই আল্লাহ যখন ইচ্ছা খুশী তার বানী পাল্টে নুতন বানী আমদানী করতে পারে , অথচ এ ক্ষেত্রে খলিফা ওমর আল্লাহ বানীকে রদ করে দিয়ে নতুন বিধান চালু করছে , তাহলে খলিফা ওমর কি আল্লাহর ওপরও শক্তিশালী ? যদি তা না হয় , মুতা বিয়ে তথা পতিতা বৃত্তি ইসলামে কিয়ামত পর্যন্ত বৈধ। এটা রদ করার ক্ষমতা কারও নেই।
সর্বশেষ প্রশ্ন – এই যদি প্রকৃত অবস্থা হয় ,তথাকথিত ইসলামী পন্ডিতরা কেন এভাবে ডাহা মিথ্যা কথা যাবতীয় মিডিয়াতে খুবই উচ্চৈস্বরে প্রচার করে ? এ ধরনের মিথ্যা বলার সময় তাদের কোন সমস্যা হয় না ? নাকি মিথ্যা কথা বলাই তাদের পেশা ?

ইসলামি মতে শীত গ্রীষ্ম ও জ্বরের তাপের কারন
আমরা অনেকেই জানি না দুনিয়াতে  শীত বা গ্রীষ্ম কাল কেন হয়। কেনই বা জ্বর হলে মানুষের শরীরে তাপ সৃষ্টি হয়। এসবের কারন হিসাবে বিজ্ঞানীরা নানা রকম আজগুবি কথা বার্তা বলে। কিন্তু তাদের কথার যেহেতু কোন স্থিরতা নেই , তাই আমরা উক্ত  ঘটনার কারন সমূহ জানতে আল্লাহর মনোনীত একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলাম ও আমাদের প্রিয় নবির স্মরণাপন্ন হতে পারি। কারন তার কথাই চির সত্য যা আমাদের বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করা উচিত।
যাহোক এবার শীত গ্রীষ্ম কেন হয় সেটা জানতে পড়তে হবে নিচের হাদিস:
আবু হোরায়রা হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযুর বলিয়াছেন, দোজখ তাহার প্রভুর কাছে অভিযোগ করে এবং বলে, হে মাবুদ! আমার এক অংশ অপর অংশকে খাইয়া ফেলিয়াছে। তখন আল্লাহতালা তাহাকে দুইটি নি:শ্বাস ছাড়িবার অনুমতি দেন। একটি নি:শ্বাস ছাড়িবার অনুমতি দেন শীতকালে ও অপরটি গ্রীষ্মকালে। সুতরাং তোমরা যে শীতের তীব্রতা ও গ্রীষ্মের প্রচন্ডতা অনুভব করা তাহা ঐ নি:শ্বাসের ফল।সহি বুখারী, বই-৫৪, হাদিস-৪৮২
আমরা জানি আল্লাহ পাপীদের জন্য দোজখ তৈরী করে রেখেছে। দোজখে আছে আগুন আর তার উত্তাপ মারাত্মক। এক হাদিসে আছে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সে উত্তাপ নাকি সত্তর গুন বেশী। সুতরাং বোঝাই যায় কি মারাত্মক উত্তপ্ত সেই দোজখ। যেহেতু এখনো কেয়ামত হয় নি , তাই দোজখে কোন পাপীর থাকার কথা নয়। কিন্তু দোজখ তো বেকার থাকতে পারে না। তাই বর্তমানে তার ওপর কিছু কাজ অর্পন করেছে আমাদের পরম করুনাময় আল্লাহ যা দেখা যাচ্ছে উক্ত হাদিসে। যদি দোজখ এভাবে নিয়ম করে শ্বাস প্রশ্বাস না ছাড়ত , তাহলে দুনিয়াতে শীত গ্রীষ্ম থাকত না। যেহেতু শ্বাস ছাড়ার ফলে দুনিয়াতে দোজখ থেকে তাপ এসে দুনিয়াকে উত্তপ্ত করে তাই সহজেই বোঝা যায় নি:শ্বাস নেয়ার সময় দুনিয়াতে শীত কাল হয়। তাই যদি আল্লাহ দোজখকে বর্তমানে এ দায়িত্ব না দিত তাহলে দুনিয়াতে সব সময় মারাত্মক শীতই থাকত। বসবাসের জন্য তখন দুনিয়া নিতান্তই অযোগ্য হয়ে পড়ত। পরম করুনাময় আল্লাহ আমাদের এ হেন দু:খ বুঝতে পেরেই সে দয়া পরবশ হয়ে দোজখের মাধ্যমে দুনিয়াকে উষ্ণ রাখার একটা ব্যবস্থা করেছে, সে জন্যে আমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
তবে দোজখের এ কাজ ছাড়াও আর একটা কাজ আছে যেমন :
আবু জামরাহ জুবাই হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মক্কায় ইবনে আব্বাস এর নিকট বসিতাম। একদিন আমি জ্বরে আক্রান্ত হইলাম, তখন ইবনে আব্বাস বলিলেন, তোমার শরীরের জ্বর যমযমের পানি দ্বারা শীতল কর। কেননা হুযুর বলিয়াছেন, জ্বর দোজখের তেজ হইতেই হইয়া থাকে। তাই তাহা পানি দ্বারা কিংবা বলিয়াছেন যমযমের পানি দ্বারা শীতল কর।সহি বুখারী হাদিস, বই-৫৪, হাদিস-৪৮৩
আয়শা হইতে বর্ণিত,জ্বরের তাপ দোজখের তাপ হইতেই আসে, তাই তা পানি দ্বারা ঠান্ডা করতে হয়।সহি বুখারি হাদিস, বই-৫৪, হাদিস-৪৮৫
ইবনে ওমর হইতে বর্ণিত, হুযুর বলিয়াছেন, জ্বরের তাপ আসে দোজখের তাপ হইতে।তাই তা পানি দিয়ে প্রশমন কর। সহি বুখারী হাদিস , বই-৫৪, হাদিস-৪৮৬
এটা আসলেই একটা বিস্ময়কর ব্যপার ছিল যে শরীরে জ্বর হলে হঠাৎ কেন শরীর গরম হয়ে যায়। আমরা আগে সেটা জানতাম না। শরীরের মধ্যে তো আগুন জ্বলে ওঠে না, তাহলে কোথা থেকে তাপ আসত। আমাদের নবিজী সেটাও আমাদেরকে জানিয়েছেন যে সেই তাপ আসে দোজখের আগুন থেকে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো – আমরা যেন দোজখের আগুনের উত্তাপ কিছুটা হলেও বুঝতে পারি , আগুনে পোড়ার  কষ্টটাকে উপলব্ধি করি ও পরকালে যাতে দোজখকে এড়ান যায় তার জন্য ইহ জগতেই সঠিকভাবে ইসলাম পালন ও আমল করতে পারি। আমাদের জন্যে নবির এ হেন দয়ার জন্য আমরা তার জন্যও সব সময় শুকরিয়া আদায় করি।