উৎসঃ- রহস্যময় বিজ্ঞান জগত·
 
প্রথমে নিউটন বলেছিলেন, আলো হলো কণা। যেই কণা আমাদের চোখে পড়লে আমরা কোন কিছু দেখতে পাই। পরে বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে বললেন, আলো হলো আসলে একটি তরঙ্গ। তখন একটি প্রশ্ন আসলো বিজ্ঞানী মহল থেকে। প্রতিটি তরঙ্গের চলতে একটি মাধ্যম লাগে। আলো যখন সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসে তখন তো আলো মাঝখানে কোন মাধ্যম পায় না। মাধ্যম ছাড়া কোন তরঙ্গ চলতেও পারে না। বিজ্ঞানীরা কিছুটা জোর করেই একটা তত্ত্ব দাড় করালেন। তারা কল্পনা করে নিলেন, সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে ইথার নামক একটি পদার্থ আছে। আলো যাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে এক জায়গা থেকে অন্য যায়গায় চলাফেরা করে।
বিজ্ঞানীরা হিসাব নিকাশ করে ইথারের কয়েকটি বৈশিষ্ট লিপিবদ্ধ করেনঃ
 
১. ভরহীন
২. সান্দ্রতা বিহিন
৩. ইথারের সাপেক্ষে আলোর বেগ ২৯৯৭৯২৪৫৮ মি/সে
 
এদিকে মাইকেলসন মর্লি চিন্তা করে দেখলেন, যদি আলো সত্যিই ইথার মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়, তবে পৃথিবীর দুই প্রান্তে আলোর বেগ অবশ্যই ভিন্ন হউয়া উচিত।
 
      
         
 ইথার বাতাসের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর ছুটে চলা-----
 
 
 
 
 
পাশের চিত্রটি একটু লক্ষ করলে দেখতে পাবেন ইথারের বাতাসের মধ্যে দিয়ে পৃথিবী চলছে। এখন  আমি   যদি ইথারের প্রবাহের দিকে আলো নিক্ষেপ করি তাহলে আলোর যে বেগ পাবো, ইথারের উল্টো দিকে আলো নিক্ষেপ করলে অবশ্যই তার চেয়ে কম পাবো। (ছোটবেলার অংক। স্রোতের দিকে সাঁতরালে আমার বেগ বেশী হবে, স্রোতের বিপরীত দিকে সাঁতরালে বেগ কম হবে। ) মাইকেলসন মর্লি চিন্তা করলেন, তারা ইথারের সাপেক্ষে পৃথিবীর বেগ মেপে দেখবেন। তারা বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন দিকে আলোর বেগ নির্ণয় করলেন। কিন্তু তারা যেভাবেই আলোর বেগ নির্ণয় করেন না কেন, বেগ তারা সবক্ষেত্রেই একই পেলেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমান হলো যে ইথার নামক কোন মাধ্যম নেই। তাহলে আলো সূর্য হতে পৃথিবীতে আসে কিভাবে? আলো আসলে একই সাথে কণা ও তরঙ্গ। কখনও তার আচরন কণার মতো, আবার কখনও তরঙ্গের মতো। আমি মনে হয় মাইকেলসন মর্লির পরীক্ষা হতে অন্যদিকে চলে যাচ্ছি। এখন একটু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি, কিভাবে এই পরীক্ষাটি করা হলো।

মাইকেলসন মর্লির পরীক্ষা

সম্প্রতি গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ সনাক্ত করা হয়েছে। গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ সনাক্তকরণের জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, মাইকেলসন মর্লির পরীক্ষায় প্রায় একই পদ্ধতি ব্যবহার হয়েছিলো। একটি আলোক উৎস থেকে একটি আলোক রশ্মি একটি হাফ সিল্ভারড মিরর দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। হাফ সিল্ভারড মিরর হচ্ছে এমন একটি আয়না, যেখানে আলো পড়লে ৫০% আলো প্রতিফলিত হবে এবং ৫০% আলো ভিতর দিয়ে চলে যাবে। এখন হাফ সিল্ভারড মিররটি আলোক রশ্মির সাথে ৪৫° কোণ করে থাকে। তাহলে আলোক রশ্মি দুইভাগ হয়ে দুইপাশে চলে যাবে এবং আয়নাটি আলোকরশ্মির সাথে ৪৫° কোণ করে হউয়ায় আলোকরশ্মি দুটি পরস্পর হতে ৯০° কোণ করে থাকবে। তখন একটি তরঙ্গ আরেকটির উপর উপরিপাতনের ফলে একটি ব্যতিচার সৃষ্টি হবে। এই পর্যন্ত কোন সমস্যাই নেই। এরপর তারা এই যন্ত্রের নিচের গোলাকার অংশকে বিভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিলেন। যদি ইথার থাকে, তাহলে আলোর বেগ বিভিন্ন দিকে বিভিন্ন হবে। ফলে ব্যতিচার ও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম হওয়ার কথা। কিন্তু তারা দেখতে পেল, আলো যেদিকেই যাক না কেন তার ব্যতিচার একই রকম হবে। অন্যভাবে বললে বলা যায়, সকল দিকেই আলোর বেগ একই থাকবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে মাইকেলসন ও মর্লি ঘোষণা করেন যে ইথার বলে কোন মাধ্যম নেই।

 
ব্যাতিচার নকশা