Friday, August 25, 2017

নাস্তিকদের যুক্তি খণ্ডনঃ পর্ব-১,২,৩

 পর্ব-১

হাজার বছর আগে মুসা নবীকে বনী ইসরাইলিরা নানা ধরনের প্রশ্ন করত: “আল্লাহ ﷻ কোথায়? দেখাও আমাদেরকে। আল্লাহকে ﷻ নিজের চোখে না দেখলে, নিজের কানে তাঁর আদেশ না শুনলে বিশ্বাস করব না।” তার শত বছর পরে নবী মুহাম্মাদ-কেও ﷺ একই ধরনের প্রশ্ন করা হত: “সাফা পাহাড়কে সোনার পাহাড় বানিয়ে দেখাও দেখি? আকাশ থেকে একটা বই এনে দেখাও দেখি?”[১৪] হাজার বছর পরে আজকে বিংশ শতাব্দীতে এসে এখনও আল্লাহর ﷻ সম্পর্কে একই ধরনের প্রশ্ন করতে যায়। শুধু প্রশ্নগুলো আগের থেকে আরও ‘আধুনিক’ এবং ‘বৈজ্ঞানিক’ হয়েছে, এবং কথা ও যুক্তির মারপ্যাঁচে একটু বেশি গম্ভীর শোনায় —এই যা!!!
“যেভাবে মুসাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তোমরাও কি সেভাবেই তোমাদের নবীকে প্রশ্ন করতে চাও? যে ঈমানকে কুফরি দিয়ে বদল করে, সে সঠিক পথ থেকে একেবারেই হারিয়ে গেছে। [আল-বাক্বারাহ ১০৮]”

আজকের যুগে আল্লাহর ﷻ অস্তিত্বকে অস্বীকার করে বিভিন্নধরনের নাস্তিকদের কিছু প্রশ্ন এবং দাবি দেখা যাক—

মহাকাশ বিজ্ঞানী: মহাবিশ্ব শূন্য থেকে নিজে থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে কিছু ছিল না। মহাবিশ্বের কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই। Quantum Vaccum কোয়ান্টাম শূন্যতা থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। মহাবিশ্ব কোনো স্রস্টা বানিয়েছে, তার প্রমাণ কী?

পদার্থবিজ্ঞানী: মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে এক অতি-মহাবিশ্ব থেকে। একে কোনো সৃষ্টিকর্তা বানায় নি। এক অতি-মহাবিশ্ব, যাকে মাল্টিভার্স বলা হয়, সেখানে প্রতিনিয়ত সকল ধরনের সৃষ্টি জগত তৈরি হয়। সকল সম্ভাবনা সেখানে বিদ্যমান। এরকম অসীম সংখ্যক মহাবিশ্বের একটিতে আমরা রয়েছি। আরেকটি মহাবিশ্বে হয়ত আমারই মত একজন রয়েছে, যে আমার থেকে একটু লম্বা। আরেকটিতে আমার থেকে একটু খাটো। মোট কথা যত কিছুই ঘটা সম্ভব, তার সবই ঘটেছে, ঘটছে এবং ঘটবে। এই মহাবিশ্বই একমাত্র মহাবিশ্ব, যাকে কোনো একক সত্তা সৃষ্টি করেছে, এর প্রমাণ কী?

দার্শনিক: মহাবিশ্ব অনন্তকাল থেকে রয়েছে। পদার্থ এবং শক্তি অবিনশ্বর। এদের সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না। এদের শুধু রূপান্তর হয়। সময় অসীম। মহাবিশ্ব যে একদিন ছিল না, সময় যে একসময় শুরু হয়েছে, এবং একে যে কোনো এক অতিসত্তা সৃষ্টি করেছে, তার প্রমাণ কী?

জীববিজ্ঞানী: কোনো অতিবুদ্ধিমান সত্তা মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ সৃষ্টি করেনি। এগুলো সবই প্রাকৃতিক নিয়মের ফলাফল। বিবর্তনের ফলে এক কোষী প্রাণী থেকে বহুকোষী প্রাণী তৈরি হয়েছে এবং কোটি কোটি বছর ধরে তা উন্নত হতে হতে একসময় বানর বা শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণী তৈরি হয়েছে। মানুষ কোনো বিশেষ প্রাণী নয়, শুধুই বানর থেকে বিবর্তনের ফলে একটু উন্নত প্রাণী। প্রমাণ কী যে, কোনো অতিবুদ্ধিমান সত্তা নিজের ইচ্ছা মত ডিজাইন করে সমস্ত প্রাণী এবং উদ্ভিদ তৈরি করেছে?

ঐতিহাসিক: যদি কোনো বুদ্ধিমান সত্তা মহাবিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করতই, তাহলে ইতিহাসে অনেক ঘটনা থাকতো, যা থেকে বোঝা যেত: কোনো বুদ্ধিমান সত্তা সেগুলো ঘটিয়েছে, যা কোনোভাবেই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে ঘটা সম্ভব নয়। এরকম ঘটনা ঘটতে তো দেখা যাচ্ছে না। তাহলে প্রমাণ কী যে, আল্লাহ বলে সত্যিই কেউ আছে?

উঠতি নাস্তিক: আল্লাহ ﷻযদি সবকিছু সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে তাকে সৃষ্টি করলো কে?

হতাশাগ্রস্থ নাস্তিক: সত্যিই যদি আল্লাহ ﷻথাকে, তাহলে পৃথিবীতে এত দুঃখ, কষ্ট, মুসলিমদের উপর এত অত্যাচার, এত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি হয় কেন? আল্লাহ ﷻএগুলো হতে দেয় কেন?

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নাস্তিক: আল্লাহ ﷻবলে কেউ আছে —এর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞান সম্মত প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, সৃষ্টিজগৎ কোনো অতিবুদ্ধিমান সত্তা বানিয়েছে। সুতরাং আল্লাহ ﷻবলে কেউ নেই।

আঁতেল নাস্তিক: আল্লাহ ﷻধারণাটা আসলে মানুষের কল্পনা প্রসূত। মানুষ যখন কোনো প্রাকৃতিক ঘটনা ব্যাখ্যা করতে পারত না, তখন তারা মনে করত: নিশ্চয়ই কোনো অতিপ্রাকৃত সত্তা রয়েছে, যে এসব ঘটাচ্ছে। একারণে মানুষ এমন কোনো সত্তাকে কল্পনা করে নেয়, যার কোনো দুর্বলতা নেই। যেমন: তার ক্ষুধা, ঘুম পায় না; সে মারা যায় না; কেউ তাকে জন্ম দেয় না; তার কোনো শরীর নেই যেখানে সে আবদ্ধ; তার কোনো আকার নেই, যা তাকে দুর্বল করে দেবে। এরকম নিরাকার, অবিনশ্বর, অসীম ক্ষমতা ইত্যাদি যত সব কল্পনাতীত গুণ মানুষ চিন্তা করে বের করতে পেরেছে, তার সবকিছু ব্যবহার করে সে এক স্রষ্টা সৃষ্টি করেছে। এর মানে তো এই না যে, স্রষ্টা বলে আসলেই কেউ আছে?

ঘৃণাস্তিক: ধর্মের নামে যে পরিমাণ মানুষ হত্যা হয়েছে, আর অন্য কোনোভাবে এত মানুষ মারা যায়নি। ধর্মের কারণে মানুষে মানুষে ঝগড়া, ঘৃণা, মারামারি, দলাদলি, এক জাতি আরেক জাতিকে মেরে শেষ করে ফেলা —এমন কোনো খারাপ কাজ নেই যা হয় না। পৃথিবীতে যদি কোনো ধর্ম না থাকতো, তাহলে মানুষে-মানুষে এত ভেদাভেদ, এত রক্তারক্তি কিছুই হতো না। যদি আল্লাহ বলে আসলেই কেউ থাকে, তাহলে ধর্মের নামে এত হত্যা কেন হয়? ধার্মিকরা এতঅসাধু হয় কেন? যতসব চোর, লম্পট, প্রতারকরা দেখা যায় টুপি-দাঁড়ি পড়ে মসজিদে নামাজ ঠিকই পড়ে।

এবার আসুন এই প্রশ্নগুলোর কিছু উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি—

মহাকাশবিজ্ঞানী: মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে শূন্য থেকে
সবচেয়ে অবৈজ্ঞানিক এবং ফিলসফির দিক থেকে অবাস্তব দাবি হলো: মহাবিশ্ব নিজে থেকেই, শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে, এর কোনো কারণ/উৎপাদক নেই। এর মানে দাঁড়ায়: কোনো জিনিস একই সাথে অস্তিত্ব থাকতে পারে, আবার অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে। একে সহজ ভাষায় বললে, আপনার মা নিজেই নিজেকে জন্ম দিয়েছেন, কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। একদিন তিনি ছিলেন না। তারপর হঠাৎ করে তিনি নিজেই নিজেকে জন্ম দিলেন।
P. J. Zwart তার বইয়ে দেখিয়েছেন, এটা কত অবাস্তব একটা দাবি—
“If there is anything we find inconceivable it is that something could arise from nothing.”যদি অবিশ্বাস্য বলে কিছু থাকে, তাহলে সেটা হলো যে, কোনো কিছু শূন্য থেকে উৎপত্তি হতে পারে।[২১৬]
এরপর বিজ্ঞানীরা তাদের খেলা পালটিয়ে ফেলেন। প্রফেসর স্টিফেন হকিন্স, লরেন্স ক্রাউস-এর মতো বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা বলেন, শূন্য বলতে আসলে Quantum Vaccum বা কোয়ান্টাম শূন্যতা বোঝানো হচ্ছে। কোয়ান্টাম শূন্যতা হলো ভৌত কোনো কিছুর অনুপস্থিতি। এটি সব জায়গায় বিরাজমান একটি স্পন্দিত শক্তির ক্ষেত্র।
“…is not‘nothing’; it is a structured and highly active entity.”
এটা ঠিক ‘শূন্য’ নয়; এটি বিশেষ গঠনের অত্যন্ত সক্রিয় অস্তিত্ব[২১৭]
তাহলে প্রশ্ন হলো, এই কোয়ান্টাম শূন্যতা আসলো কোথা থেকে? কে একে সৃষ্টি করলো? কীভাবে এটি এমন সব গুণ পেল, যা থেকে এটি এক বিশাল মহাবিশ্ব বিশেষভাবে ডিজাইন করে তৈরি করতে পারে? কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের সেই নিয়মগুলো আসলো কোথা থেকে?
এগুলো সবই হচ্ছে স্রস্টাকে অস্বীকার করার জন্য নানা অজুহাত। মহাবিশ্বের যে সৃষ্টি হয়েছে, সেটার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা দিতে পারছে না।আবার একই সাথে মানতে পারছে না যে, স্রস্টা বলে কেউ আছে। তাহলে কী করা যায়? ‘কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়ম’ নামের এক মহাজটিল অস্তিত্ব জন্ম দেই। তাহলে বেশ কিছুদিন এটানিয়ে মানুষকে ঘোল খাওয়ানো যাবে।

পদার্থবিজ্ঞানী: মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে এক অতি-মহাবিশ্ব Multiverse (মাল্টিভার্স)থেকে
আজকাল মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে নতুন এক ধারণার প্রচারণা শুরু হয়েছে – মাল্টিভার্স থিওরি। বিজ্ঞানীরা দাবি করছে এই মহাবিশ্বের কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই। আমাদের মহাবিশ্বটি এক মহা-মহা-মহাবিশ্বের বা মাল্টিভার্স-এর মধ্যে থাকা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন মহাবিশ্বের মধ্যে একটি।
বিজ্ঞানীরা কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারছেন না: কীভাবে আমাদের এই মহাবিশ্বটি এত নিখুঁতভাবে, এত পরিকল্পিতভাবে প্রাণের সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করে তৈরি করা হয়েছে। অভিকর্ষ বল যদি ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ বেশি বা কম হতো, তাহলে কোনো গ্রহ সৃষ্টি হতো না, প্রাণের সৃষ্টির কোনো সম্ভাবনাই থাকতো না। বিগ ব্যাংগের সময় যে শক্তির প্রয়োজন ছিল, সেটা যদি ১০৬০ ভাগের এক ভাগ এদিক ওদিক হতো, তাহলে অভিকর্ষ বলের সাথে অসামঞ্জস্য এত বেশি হতো যে, এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়ে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারতো না। ১০৬০ হচ্ছে  ১ এর পরে ৬০টি শূন্য বসালে যে বিশাল সংখ্যা হয়, সেটি। বিগ ব্যাংগের মুহূর্তে প্ল্যাঙ্ক সময়ের পর মোট পদার্থের যে ঘনত্ব ছিল, সেটা যদি ১০৫০ ভাগের এক ভাগও এদিক ওদিক হতো, তাহলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতো না, যাতে আজকের মতো নক্ষত্র, গ্রহ এবং প্রাণ সৃষ্টি হতো।[১০২] — এরকম শত শত ভারসাম্য কীভাবে কাকতালীয় ভাবে মিলে গেলো? কীভাবে এগুলো সব অত্যন্ত নিখুঁতভাবে নির্ধারণ করা হল, যেন নক্ষত্র, গ্রহ, পানি, ভারী মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি হয়ে একদিন প্রাণের সৃষ্টি হয়, যেই প্রাণ বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে একদিন মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীর জন্ম দিবে? — এর পক্ষে তারা কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারছে না।
এতগুলো সূক্ষ্ম ভারসাম্য এক সাথে মিলে যাওয়া যে কোনোভাবেই গাণিতিক সম্ভাবনার মধ্যে পড়ে না —এটা তারা বুঝে গেছে। তারা এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এক নতুন থিওরি নিয়ে এসেছে: আমাদের মহাবিশ্ব আসলে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন মহাবিশ্বের মধ্যে একটি। একেক মহাবিশ্বে পদার্থ বিজ্ঞানের ধ্রুবকগুলোর একেক মান রয়েছে। কিছু মহাবিশ্ব বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না, কারণ সেই মহাবিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানের ধ্রুবকগুলোর মানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য থাকে না।  আর কিছু মহাবিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানের ধ্রুবকগুলোর মান এমন হয় যে, সেখানে কোনোদিন সূর্যের মতোএকটি তারা এবং পৃথিবীর মতো একটি গ্রহ তৈরি হতে পারে না। যার ফলে সেই সব মহাবিশ্বে কোনো প্রাণ সৃষ্টি হয় না। পদার্থবিজ্ঞানের সুত্রগুলোর যতগুলো সম্ভাব্য সম্ভাবনা হওয়া সম্ভব, সেটা যতই কল্পনাতীত, অবাস্তব একটা ব্যাপার হোক না কেন, যা কিছু হওয়া সম্ভব তার সবকিছুই সেই মাল্টিভারসের ‘ল্যান্ডস্কেপ’-এ কোথাও না কোথাও হয়েছে এবং হয়ে যাচ্ছে। আমরা মানুষেরা, সেই অসীম সংখ্যক সম্ভাবনাগুলোর একটি, যেখানে পদার্থবিজ্ঞানের হাজার হাজার নিয়ম কাকতালীয়ভাবে, কল্পনাতীত সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করে কোনোভাবে মিলে গেছে এবং যার কারণে আজকে আমরা এই মহাবিশ্বে দাঁড়িয়ে নিজেদেরকে উপলব্ধি করতে পারছি।[১০৩]
তাদের দাবিটা হচ্ছে এরকম: ধরুন কোনো এক সমুদ্রের তীরে বালুতে আপনি একটি মোবাইল ফোন পড়ে থাকতে দেখে তাদেরকে জিগ্যেস করলেন, এই মোবাইল ফোনটা নিশ্চয়ই কোনো বুদ্ধিমান সত্ত্বা বানিয়েছে। তারা বলবে, “না, কোটি কোটি বছর ধরে সমুদ্রের পানি বালুতে আছড়িয়ে পড়তে পড়তে এবং ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাতের ফলে বালুতে রায়ায়নিক বিক্রিয়া হয়ে একসময় এই মোবাইল ফোনটি তৈরি হয়েছে। এটি কোনো বুদ্ধিমান সত্ত্বা বানায়নি, এটি পদার্থবিজ্ঞানের সুত্রগুলোর অসীম সব সম্ভাবনাগুলোর একটি। এরকম কোটি কোটি সমুদ্রের তীর আছে যেগুলোর একটিতে হয়তো শুধুই একটা প্লাস্টিকের বাক্স তৈরি হয়েছে, পুরো মোবাইল ফোন তৈরি হতে পারেনি। কিছু তীর আছে যেখানে হয়তো একটা স্ক্রিন পর্যন্ত তৈরি হয়েছে, কিন্তু কোনো বাটন তৈরি হয়নি। আপনি, আমি আসলে সেই অসীম সব সমুদ্রের তীরগুলোর বিশেষ একটিতে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে পদার্থ বিজ্ঞানের সব সম্ভাবনা কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে, যে কারণে এইতীরে একটি সম্পূর্ণ মোবাইল ফোন সৃষ্টি হয়েছে।” এই হচ্ছেমাল্টিভার্স থিওরি।
মাল্টিভার্সথিওরির পক্ষে বিন্দুমাত্র প্রমাণ নেই। কিন্তু এনিয়ে শত শত বই, ডিসকভারি চ্যানেলে শত শত প্রোগ্রাম, হাজার হাজার লেকচার এমন ভাবে দেওয়া হচ্ছে যে, এটা বিগ ব্যাং থিওরির এর মতই একটা ফ্যাক্ট। বিজ্ঞানীদের এক বিশেষ দল, যাদের মধ্যে সবাই নাস্তিক, এবং শুধু নাস্তিকই নয়, এদেরকে বিশেষ ভাবে Militant Atheist বলা হয়, এরা উঠে পড়ে লেগেছে ডারউইনের বিবর্তনবাদের মতো মাল্টিভার্স থিওরিকেও মানুষের মধ্যে গলার জোরে ফ্যাক্ট বলে চালিয়ে দেওয়ার। কারণ একমাত্র মাল্টিভার্স থিওরিই পারে – “মহাবিশ্বের কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই” – সেটার পক্ষে কোনো ধরণের ‘বিশ্বাসযোগ্য’ চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দিতে, যেটা পড়ে সাধারণ মানুষ, যার মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে ভালো জ্ঞান নেই, অবাক হয়ে ভাবে, “আরে! এতো দেখি চমৎকার এক ব্যাখ্যা! মহাবিশ্বের দেখি সত্যিই কোনো সৃষ্টিকর্তার দরকার নেই!”
একারণেই আল্লাহﷻ আমাদেরকে মু’মিন হবার জন্য প্রথম শর্ত দিয়েছেন –
"যারা মানুষের চিন্তার ক্ষমতার বাইরে এমন সব বিষয়ে বিশ্বাস করে।" [আল-বাক্বারাহ: ৩]
আমাদেরকে মানতে হবে যে, আমরা কোনোদিন প্রমাণ করতে পারবো না: কীভাবে, কী কারণে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমরা কোনোদিন কোনো রেডিও এন্টেনা দিয়ে জান্নাত, জাহান্নাম খুঁজে পাবো না। আমরা কোনোদিন এক্সরে করে ফেরেশতাদেরকে দেখতে পারবো না। আমরা কোনোদিন পদার্থ বিজ্ঞানের কোনো সুত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারবো না: কীভাবে আমরা মরে, ধ্বংস হয়ে, মহাবিশ্বে ছড়িয়ে যাওয়া আমাদের দেহের অণু পরমাণুগুলো থেকে একদিন আমাদেরকে আবার একই অবস্থায় ফেরত আনা হবে। আমাদেরকে এই সব কিছু বিশ্বাস করতে হবে, কোনোই বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছাড়া, শুধুই কু’রআনের প্রমানের উপর ভিত্তি করে এই শর্তে যে কু’রআন সন্দেহাতীত ভাবে আল্লাহর ﷻ বাণী। যদি কোনো প্রমাণ না থাকার পরেও বিবর্তনবাদ, ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জি, স্ট্রিং-থিওরিতে ঠিকই বিশ্বাস করতে পারি, তাহলে কু’রআনের বাণীর উপর বিশ্বাস না করার পেছনে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না, যেখানে কি না কু’রআন যে মানুষের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব না, এর পক্ষে শত শত প্রমাণ আছে। একারণে আমরা যদি অদেখায় বিশ্বাস করতে না পারি, তাহলে আমরা কোনোদিন মু’মিন হতে পারবো না।

দার্শনিক: মহাবিশ্ব অনন্তকাল থেকে রয়েছে
Bertrand Russell এর মতো কিছু বিখ্যাত ফিলসফার এই ধারণাটিকে বেশ জনপ্রিয় করার চেষ্টাকরেছেন। তাদের দাবি হচ্ছে, মহাবিশ্ব আদি এবং অনন্ত। এটি অসীম সময় ধরে চলবে, এবং চলছে।
‘অসীম’ ধারণাটি আসলে একটি ধারণা মাত্র। বাস্তব জীবনে কোনো ‘অসীম’ বলে কিছু নেই, কারণ অসীম ধারণাটি নানা সমস্যার জন্ম দেয়১) ধরুন আপনার অসীম সংখ্যক বল রয়েছে। যদি সেখান থেকে দুটি বল নিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে কীদাঁড়ায়? “অসিম – ২ = ?” সংখ্যক বল রয়েছে? যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের গুণতে পারা উচিত কয়টা বল বাকি থাকলো। যদি গুণতে পারি, তার মানে দাঁড়ায় সেটাএমন একটা সংখ্যা, যার সাথে ২ যোগ করলে হঠাৎ করে সেটা অসীম সংখ্যা হয়ে যায় —যা অবাস্তব। আর যদি গুণতে না পারি, তাহলে অসীম ধারণাটাই অবাস্তব। সুতরাং, অসীম ধারণাটা একটি ধারণা মাত্র, প্রকৃতিতে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। বিখ্যাত জার্মান গণিতবিদ David Hilbert বলেছেন—
“The infinite is nowhere to be found in reality. It neither exists in nature nor provides a legitimate basis for rational thought…the role that remains for the infinite to play is solely that of an idea.”বাস্তবতায় অসীমের কোনো অস্তিত্ব নেই। এর প্রকৃতিতে কোনো অস্তিত্ব নেই, এটা কোনো যুক্তিযুক্ত চিন্তাভাবনার গ্রহণযোগ্য ভিত্তিও দেয় না… অসীমের একমাত্র ভূমিকা হলো এটি একটি ধারণা মাত্র।[২১৮]
২) ধরুন আপনি একজন সৈনিক। আপনাকে গুলি করার আগে আপনার পেছনের একজন সৈনিকের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু তাকেও তার পেছনের সৈনিকের অনুমতি নিতে হবে, আপনাকে অনুমতি দেওয়ার আগে। এভাবে পেছনের দিকে অসীম সময় পর্যন্ত অনুমতি নেওয়া চলতে থাকবে। যদি তাই হয়, তাহলে আপনি কি কোনোদিন গুলি করতে পারবেন? পারবেন না। এটা প্রমাণ করে যে, এরকম পেছনের দিকে অসীম পর্যন্ত চলতে থাকা — এটি একটি অবাস্তব ধারণা। এরকম হলে কোনোদিন কোনো ঘটনা ঘটতো না। সুতরাং, কখনই অসীম পর্যন্ত কোনো ঘটনার পেছন দিকে যাওয়া যায় না।
৩) আপনাকে এক মিটার লম্বা একটা লাঠি দেওয়া হলো। এখন আপনাকে বলা হলো, তাকে সমান দুইভাগ করতে। তার একটি ভাগকে আবার সমান দুই ভাগ করতে। তার একটি ভাগ নিয়ে আবার সেটাকে সমান দুই ভাগ করতে।  এভাবে অসীম সময় পর্যন্ত ভাগ করে যেতে হবে। আপনিকি কোনোদিন অসীম-ক্ষুদ্রতম ভাগটি পর্যন্ত যেতে পারবেন? সুতরাং দেখা যায়, অসীম একটি অবাস্তব ধারণা। এর কোনো বাস্তবতা নেই। এরিস্টটল বলেছেন—
“…the infinite is potential, never actual”
অসীম একটি সম্ভাবনা মাত্র, এর কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই[২১৯]
সুতরাং আমরা দেখতে পাই, কোনো ঘটনার পেছন দিকে অসীম সময় পর্যন্ত যাওয়া যায় না। সুতরাং মহাবিশ্ব কখনই অসীম সময় পর্যন্ত ছিল না, মহাবিশ্ব সসীম। সুতরাং মহাবিশ্বের একটি সূচনা রয়েছে।
"সত্য অস্বীকারকারীরা কি দেখে না যে, সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবী একসময় একসাথে একটি সত্তা ছিল, তারপর আমি তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করেছি? তারা কি দেখে না: আমি প্রতিটি প্রাণ সৃষ্টি করেছি পানি থেকে? এরপরও কি তারা বিশ্বাস করবে না?" [আল-আম্বিয়া ২১:৩০]


সূত্র:
  • [১৪] তাফসির আল কুরতুবি।
  • [২১৬] P. J. Zwart, About Time (Amsterdam and Oxford: North Holland Publishing Co., 1976), pages 117-19
  • [২১৭] John Polkinghorne and Nicholas Beale. Questions of Truth. 2009, page 41
  • [২১৮] David Hilbert. On the Infinite, in Philosophy of Mathematics, ed. with an Intro. by P. Benacerraf and H. Putnam. Prentice-Hall. 1964, page151.
  • [২১৯] Aristotle, “Physics 207b8″ http://classics.mit.edu/Aristotle/physics.html

পর্ব-২

জীববিজ্ঞানী: সকল প্রাণী বিবর্তনের ফসল
প্রথমে ভেবে দেখুন, আপনি কীভাবে জন্ম নিলেন? আপনি এসেছেন আপনার বাবা-মা’র কাছ থেকে। আপনার বাবা-মা এসেছেন তাদের বাবা-মা’র কাছ থেকে। এভাবে যদি পেছন দিকে যেতে থাকেন, একসময় আপনি পৃথিবীর সর্বপ্রথম বাবা এবং মা পর্যন্ত পৌঁছে যাবেন, যাদেরকে কেউ জন্ম দেয়নি। এখন প্রশ্ন হলো, তারা কোথা থেকে এলেন?
এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে গত দুশো বছরে পৃথিবীতে তোলপাড় হয়ে গেছে। একদল মানুষ বিশ্বাস করে: সৃষ্টিকর্তা সেই প্রথম মানব এবং মানবীকে অন্য কোথাও বানিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, অথবা তিনি পৃথিবীতেই তাদেরকে কোনো অতিপ্রাকৃত প্রক্রিয়ায় বানিয়েছেন। আরেকদল মানুষ মনে করে, সেই প্রথম আধুনিক মানব-মানবী এসেছেন কোনো গরিলা/শিম্পাঞ্জীর মতো দেখতে আদি পিতা-মাতা থেকে, যারা ঠিক আজকের মানুষের মতো ছিলেন না। কোনো কারণে প্রথমবারের মতো সেই আদি পিতা-মাতা একটি আধুনিক মানব এবং মানবী শিশুর জন্ম দেন এবং তাদের থেকে পৃথিবীতে আজকের যত মানুষ রয়েছে সবার জন্ম হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেই আদি পিতা-মাতারা এসেছেন আরেকটু বেশি বানরের কাছাকাছি দেখতে আদিমানব, আদিমানবী থেকে, যারা নাকি এসেছেন আরও বেশি বানরের মতো দেখতে আরও আদিমানব এবং আদিমানবী থেকে—এই হচ্ছে ডারউইনের বিখ্যাত বিবর্তনবাদ, যা পৃথিবীর মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছে—আস্তিক ও নাস্তিক।

ডারউইনের বিবর্তনবাদ
ডারউইনের বিবর্তনবাদ অনুসারে একজন আদি পিতা ও মাতা—যারা ঠিক আজকের মানুষের মতো মানুষ ছিলেন না—বিশেষ কোনো জেনেটিক মিউটেশনের কারণে তারা প্রথম একজন আধুনিক মানব শিশুর জন্ম দেন। এটি দৈব চক্রে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা মাত্র: এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য নেই, কোনো সৃষ্টিকর্তার হাত নেই। প্রকৃতির হাজার খেলার মধ্যে এটি ছিল একটি খেলা। এই একই প্রক্রিয়ায় পৃথিবীতে সকল প্রাণের উদ্ভব হয়েছে।
বিবর্তনবাদ অনুসারে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে দৈব চক্রে। কোনো কারণে ৩.৬ বিলিয়ন বছর আগের আদি পৃথিবীতে, কোনো এক জায়গার কাদা মাটিতে কিছু অজৈব পদার্থ কাকতালীয়ভাবে একসাথে মিশে প্রথম অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরি করে। এরকম অনেকগুলো অ্যামাইনো অ্যাসিড কোনো কাকতালীয় কারণে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে একসাথে হয়ে প্রোটিন তৈরি হয়। তারপর কয়েকটি বিশেষ প্রোটিন কোনো কাকতালীয় কারণে একসাথে হয়ে ডিএনএ তৈরি হয় এবং তারপর সেখান থেকে আরও বিরাট কোনো কাকতালীয় কারণে প্রথম এককোষী প্রাণীর সৃষ্টি হয়। সেই এককোষী প্রাণীরা বহু বছর ধরে বিবর্তিত হয়ে একসময় কোনো কাকতালীয় কারণে বহুকোষী প্রাণীতে পরিণত হয়। তার বহু বছর পরে সেই বহুকোষী প্রাণীরা বিবর্তিত হয়ে আরও জটিল জলচর প্রাণীতে পরিণত হয়। তারপর সেই জলচর প্রাণীগুলো একসময় হাত-পা গজিয়ে ডাঙায় উঠে এসে নানা ধরনের স্থলচর প্রাণীতে পরিণত হয়। এরপর সেই স্থলচর প্রাণীগুলো কোটি কোটি বছর ধরে বিবর্তিত হয়ে একসময় গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির মতো প্রাণীতে পরিণত হয়। এবং সবশেষে একই প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে বানররূপী আদিমানব থেকে উদ্ভব হয়েছে আধুনিক মানুষের।
এখানে লক্ষ্য করুন: এই গোটা প্রক্রিয়ায় কতগুলো কাকতালীয় ব্যাপার রয়েছে। এই প্রতিটি কাকতালীয় ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা হচ্ছে কমপক্ষে কোটি কোটি কোটি সম্ভাবনার মধ্যে একটি। যেমন ৩০০ অণু দিয়ে গঠিত একটি প্রোটিন তৈরি হবার সম্ভাবনা হচ্ছে ১০৩৯০ এর মধ্যে একটি। ১০ এর পরে ৩৯০টি শূন্য দিলে যে বিরাট সংখ্যা হয় ততগুলো সম্ভাবনার মধ্যে একটি।যার অর্থ হচ্ছে— এটা গাণিতিকভাবে দেখলে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

বিবর্তনবাদ কি আসলেই কোনো প্রমাণিত বিজ্ঞান?
বিবর্তনবাদ যদি সত্যি হতো তাহলে—
১) আমরা এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে বিবর্তিত হওয়ার সময়, তার মাঝামাঝি অবস্থার অনেক নিদর্শন প্রকৃতিতে দেখতে পারতাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা যে লক্ষ লক্ষ ফসিল পেয়েছি, তার কোথাও কোনোদিনও এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে বিবর্তিত হওয়ার সময় মাঝামাঝি অবস্থার কোনো প্রাণী দেখা যায়নি।[২২০] যেমন, এখনও পর্যন্ত এমন কোনো বানর বা গরিলার ফসিল পাওয়া যায়নি—যেটার মাথা ছিল মানুষের মতো, বা যেটার গায়ের লোম মানুষের মতো একদম ছোট, বা যেটার হাত মানুষের হাতের মতো—যেগুলো দেখে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, গরিলা বা বানর থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তন হয়ে মানুষ এসেছে।
২) প্রাণীদের মধ্যে সূক্ষ্ম বিবর্তনের (Microevolution) নিদর্শন মিললেও বড় ধরনের বিবর্তনের কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি, যেখানে এক প্রজাতির প্রাণী বিবর্তিত হয়ে আরেক প্রজাতির প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। Macroevolution বা স্থূল বিবর্তনের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে মাছির বিবর্তন করার চেষ্টা করেছিলেন। অনেক চেষ্টার পরে দেখা গেল তিন ধরনের মাছি তৈরি হলো—১) আগে যেরকম ছিল সেরকমই, ২) মিউটেটেড বাবিকৃত, অথবা ৩) মৃত।[২২১] ২০১০ সালে একটিগবেষণায় মাছির ৬০০ প্রজন্ম পরীক্ষা করেও কোনো বিবর্তনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।[২২২] একইভাবে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার ৪০,০০০ প্রজন্মের উপর বিবর্তনের চেষ্টা করেও বিবর্তনবাদের পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।[২২৩] সুতরাং অতীতেও বিবর্তন হয়ে একটি প্রজাতির প্রাণী অন্য প্রজাতির প্রাণীতে রূপান্তরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, বর্তমানেও না।
৩) বিবর্তনবাদ দাবি করে যে, জেনেটিক মিউটেশনের মাধ্যমে প্রাণীদের মধ্যে বিবর্তন হয়ে উন্নততর এবং বেশি টেকসই প্রাণীর সৃষ্টি হয় এবং এইভাবেই আদি-মানুষ থেকে আধুনিক মানুষ এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় উলটো প্রমাণ পাওয়া গেছে। উদ্ভিদ এবং মানুষ উভয়েরই উপর গবেষণায় দেখাগেছে বেশিরভাগ মিউটেশনের ফলে দেহে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয় না।কিন্তু খারাপ মিউটেশন হয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এবং এগুলো কোষের বংশ পরম্পরায় টিকে থাকে। একে বলা হয় জেনেটিক এনট্রপি। প্রত্যেক মানুষ তার নিজের মিউটেশন এবং তার পূর্ব পুরুষদের মিউটেশন বহন করে এবং তারপর তার বংশধরের মধ্যে দিয়ে দেয়।[২২৪]
সাম্প্রতিক কালে হিউমেন জিনোম গবেষণার উন্নতির ফলে বিজ্ঞানীরা ২১৯ জন মানুষ এবং ৭৮ জন বাবা-মা এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে গবেষণা করে দেখেছেন, প্রতি বংশ পরম্পরায় ৬০টি নতুন মিউটেশন যোগ হয়![২২৫]
বিবর্তনবাদীরা দাবি করে: ২.৪ মিলিয়ন বছর আগে, এক বানর/গরিলার কাছাকাছি দেখতে আদি মানুষ থেকে আধুনিক মানুষের উদ্ভব হয়েছে। যার অর্থ দাঁড়ায় এই পর্যন্ত মানুষের প্রায় ১২০,০০০ প্রজন্ম এসেছে। এখন প্রতি প্রজন্ম যদি ৬০টি মিউটেশন যোগ করে, তাহলে ১২০,০০০ প্রজন্মে আজকে মানুষের মধ্যে ৭,২০০,০০০ মিউটেশন থাকার কথা। এতো মিউটেশন হলে মানুষ আর মানুষ থাকত না, এবং অনেক আগেই মানব জাতি পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।
৪) এক প্রজাতির প্রাণীর থেকে অন্য প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে ধাপে ধাপে বিবর্তন কখনও সম্ভব নয়। যেমন, সরীসৃপের দ্বিমুখী ফুসফুস কখনই পাখির একমুখী ফুসফুসে বিবর্তিত হতে পারে না। সেটা হতে হলে বিবর্তন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরীসৃপকে শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে—যেটা কেবল হাস্যকরই নয়, বরং অযৌক্তিক। সুতরাং বিবর্তনবাদীরা যে-দাবি করে সরীসৃপ থেকে পাখির বিবর্তন হয়েছে, সেটা ভুল।[২২৬] একইভাবে উভচর প্রাণীর তিন-কক্ষ-বিশিষ্ট হৃদপিণ্ড থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণীর চার-কক্ষ-বিশিষ্ট হৃদপিণ্ডের বিবর্তন হওয়া কখনও সম্ভব নয়, কারণ সেটা হতে হলে প্রথমে উভচর প্রাণীর হৃদপিণ্ডের মধ্যে নতুন দেওয়াল সৃষ্টি হতে হবে, যা রক্ত চলাচল ব্যহত করবে, না হয় নতুন রক্তনালীর সৃষ্টি হতে হবে, যা রক্ত চলাচলকে ব্যহত করবে।
এরকম অনেক প্রমাণ রয়েছে, যা থেকে সহজেই দেখানো যায় যে, এক প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে ধীরে ধীরে বিবর্তন হয়ে অন্য প্রজাতির প্রাণী সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। কারণ বিবর্তনের সময় মাঝামাঝি যেই অবস্থাগুলো হতে হবে, সেগুলো প্রাণীর জন্য কোনোভাবেই কল্যাণকর নয়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এইধরনের অর্ধেক বিবর্তন সেই প্রাণীর জন্য মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং বিবর্তনবাদ শুধুই একটি থিওরি। এর পক্ষে কোনো গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিকপ্রমাণ নেই।

প্রকৃতিতে কী ধরনের বিবর্তন হয়?
একটি ব্যাপার পরিষ্কার করা দরকার: Microevolution বা সূক্ষ্ম-বিবর্তন অবশ্যই প্রকৃতিতে হয়। এবং সেটা হয় একই প্রজাতির মধ্যে, অল্প কিছু জেনেটিক পরিবর্তন থেকে। আর এভাবেই একসময় উপ-প্রজাতির সৃষ্টি হয়।[২২৭] কিন্তু এই সূক্ষ্ম বিবর্তন হতে হতে একসময় Macroevolution বা স্থুল-বিবর্তন হয়ে একপ্রজাতির প্রাণী সম্পূর্ণ অন্য প্রজাতির প্রাণীতে পরিণত হয় না—যেটা বিবর্তনবাদীরা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। মজার ব্যাপারহচ্ছে এটা নিয়ে বিবর্তনবাদীদের মধ্যেই দ্বিমত রয়েছে।[২২৮] কাজেই বলা যায়, বানরের মধ্যে সূক্ষ্ম বিবর্তন হয়ে বিভিন্ন প্রজাতির বানর তৈরি হয়, কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত বানরই থাকে; মানুষ হয়ে যায়না।
বিবর্তনের টেক্সট বইগুলোতে বিবর্তনবাদের পক্ষে যে সব উদাহরণ দেখানো হয়— যেমন ডারউইনের পাখির ঠোটের ‘বিবর্তন’, ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার ‘বিবর্তন’ হয়ে এন্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিস্টেন্স, এইচআইভি ভাইরাসের ‘বিবর্তন’—এগুলো সবই হয় একই প্রজাতির মধ্যে। পাখি বিবর্তনের পরে পাখিই থাকে, ডাইনোসর হয়ে যায় না। একইভাবে ব্যাকটেরিয়া শেষ পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়াই থাকে, ফাঙ্গাস হয়ে যায় না।[২২৯]

ঐতিহাসিক: প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে ঘটা ঘটনার বাইরে কোনো ঘটনা নেই
ফিরাউন যখন মুসা ﷺ নবীর দাবি অস্বীকার করলো এবং বনী ইসরাইলকে মুক্ত করে দিতে অস্বীকার জানালো, তখন আল্লাহ ﷻ মিশরে একের পর এক অতিপ্রাকৃত দুর্যোগ পাঠালেন, যা কোনো স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা ছিল না। কু’রআনের কিছু আয়াতে এই ঘটনাগুলো বর্ণনা করা হয়েছে—
আমি ফিরাউনের লোকদের উপর বছরের পর বছর খরা, ফসলহানি দিলাম, যাতে করে তারা নির্দেশ শোনে। … কিন্তু তারা বলল, “তুমি আমাদের উপর জাদু করার জন্য যতই অলৌকিক ঘটনা দেখাও, আমরা তোমাকে বিশ্বাস করব না।” তাই আমি ওদের উপর বন্যা, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ, রক্ত পাঠালাম — একদম পরিষ্কার নিদর্শন। কিন্তু ওরা ছিল এক অহংকারী সম্প্রদায় এবং দুর্নীতিবাজ।  [আল-আরাফ ৭:১৩০-১৩৩]
১৯ শতকের শুরুর দিকে মিশরে একটি প্রাচীন ফলক আবিষ্কার হয়, যা হল্যান্ডের মিউজিয়ামে অনুবাদ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এই প্রাচীনফলকের নাম ‘ইপুয়ের-এর ফলক’ যেখানে মিশরের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর ঘটনা বর্ণনা করা আছে। ফলকটি ইপুয়ের নামের একজন প্রাচীন মিশরীয় লিখেছেন, এবং ধারণা করা হয় তিনি এই ঘটনাগুলো নিজের চোখে দেখেছেন। তিনি কী লিখেছেন দেখা যাক—
সারাদেশে মহামারি, চারিদিকে রক্ত… পুরো নদীতে রক্ত… সবগুলো শহর ধ্বংস হয়ে গেছে… চারিদিকে চিৎকার, হাহাকার… সব গাছপালা ধ্বংস হয়ে গেছে… কোথাও কোনো ফল, শাকসবজি নেই… কোথাও কোনো আলো নেই…  দেখ! এক বিশাল আগুন[২৩০]
এধরনের ঘটনা প্রকৃতির কোনো স্বাভাবিক নিয়মে ঘটে না।
থামুদ নামে কু’রআনে এক জাতির কথা বলা আছে, যারা আল-হিজর নামে একটি জায়গায়  পাহাড় কেটে বিশাল সব প্রাসাদ, বাড়ি বানিয়েছে। তাদের এই বিশেষ ক্ষমতা অন্য কোনো জাতির দেখা যায়নি। শক্ত পাহাড়ের পাথর কেটে বানানো তাদের বিশাল সব প্রাসাদ, স্তম্ভ, বাড়িঘর আজও অটুট রয়েছে। কিন্তু সেই থামুদ জাতির মানুষরা কোনো কারণে ধ্বংস হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এরকম প্রযুক্তিতে অগ্রসর, বিত্তশালী, শক্তিশালী জাতি কীভাবে রাতারাতি বিলুপ্ত হয়ে গেল, অথচ তাদের বানানো বাড়িঘরগুলো ঠিকই থাকলো — সেটা আজও একটা বিস্ময়।
কু’রআনে বলা আছে সেদিন কী ঘটেছিল—
আল-হিজরের বাসিন্দারা আমার রাসুলদের অস্বীকার করেছিল। আমি ওদেরকে আমার নিদর্শন দেখিয়েছিলাম, কিন্তু ওরা মানল না। ওরা পাহাড় কেটে বাড়িঘর বানাত, নিরাপদে বসবাস করত। সকাল বেলা এক প্রচণ্ড আঘাত ওদেরকে শেষ করে দিল। ওরা কতকিছু অর্জন করেছিল, যার কিছুই ওদের কোনো কাজে আসলো না। [আল-হিজর ১৫:৮০-৮৫]
এই সব রহস্য প্রমাণ করে যে, পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক ঘটনা রয়েছে, যার কোনো স্বাভাবিক প্রাকৃতিক কারণ নেই, যা কোনো প্রচলিত প্রাকৃতিক নিয়মে ব্যাখ্যা করা যায় না। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো,  যে সব জাতিগুলো এরকম রহস্যময়ভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের প্রত্যেকের ধ্বংসাবশেষ ঘাঁটলে দেখা যায় যে, এরা সবাই সম্পদে, প্রাচুর্যে অন্ধ হয়ে নৈতিকভাবে একেবারেই নিচে নেমে গিয়েছিল এবং জঘন্য সব কাজ করত তারা। এদের শহরগুলো ভর্তি মদের পাত্রের ছড়াছড়ি। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পতিতালয়। দেওয়ালে দেওয়ালে সমকামিতার ছবি। উদ্ধার করা প্রাচীন লিপিগুলোতে বর্ণনার যোগ্য নয় এমন নোংরা সবঘটনার বর্ণনা। তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখাযায় যে, এই সব অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলো ঘটেছে পরিকল্পিতভাবে। এগুলো কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। কেউ একজন আছেন, যিনি চরমভাবে দুর্নীতিগ্রস্থ, নৈতিকভাবে একেবারেই নষ্ট হয়ে যাওয়া এই ধরনের জাতিগুলোকে বার বার ধ্বংস করে দেন।

উঠতি নাস্তিক: আল্লাহ যদি সবকিছু সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে তাকে সৃষ্টি করলো কে?
আল্লাহকে ﷻ যে সৃষ্টি করেছে, তাকে তাহলে কে সৃষ্টি করেছে? সেই মহাসত্তাকে যে সৃষ্টি করেছে, সেই মহা-মহাসত্তাকে কে সৃষ্টি করেছে? সেই মহা-মহাসত্তাকে যেই মহা-মহা-মহাসত্তা সৃষ্টি করেছে, তাকে কে সৃষ্টি করেছে?…
এই প্রশ্নের শেষ নেই। এটা চলতেই থাকবে।
দ্বিতীয়ত, এই প্রশ্নটা একটা ভুল প্রশ্ন। কারণ এখানে সৃষ্টিকর্তা অর্থ যে সৃষ্ট নন বরং যিনি সৃষ্টি করেন।
সুতরাং কেউ যখন জিজ্ঞেস করে, “সৃষ্টিকর্তাকে কে বানিয়েছে?”, সে আসলে জিজ্ঞেস করছে—
যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি, তাকে কে সৃষ্টি করেছে?”
এধরনের অনেক প্যাঁচানো প্রশ্ন আপনারা ফিলোসফার এবং নাস্তিকদের কাছ থেকে পাবেন, যারা ভাষার মারপ্যাচ দিয়ে এমন সব প্রশ্ন তৈরি করে, যা পড়ে আপনার মনে হবে – “আসলেই তো! এর উত্তর কি হবে? হায় হায়! আমি কি তাহলে ভুল বিশ্বাস করি?”তাদের আসল সমস্যা হচ্ছে তারা ভাষা এবং বিজ্ঞান ঠিকমত বোঝে না এবং তাদের প্রশ্নগুলো যে ভাষাগতভাবে ভুল এবং বৈজ্ঞানিকভাবে অবাস্তব, সেটা তারা নিজেরাই ঠিকমত চিন্তা করে দেখেনি। এরা আপনাকে ভাষাগত ভাবে ভুল বাক্য তৈরি করে, বৈজ্ঞানিক ভাবে অবৈজ্ঞানিক একটা প্রশ্ন করে, তারপর আপনার কাছে দাবি করবে একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়ার।
আগের পর্বে আমরা বিস্তারিত দেখিয়েছি, কেন এরকম অসীম পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি হওয়া সম্ভব নয়। অসীম একটি ধারণা মাত্র, এর কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই।

হতাশাগ্রস্থ নাস্তিক: আল্লাহ থাকলে এত খারাপ কিছু হয় কেন?
নাস্তিকদের দেওয়া তর্কটি এরকম—
  • স্রষ্টা একজন পরম করুণাময়, ন্যায়পরায়ণ সত্তা, যিনি সবকিছু করতে পারেন।
  • সৃষ্টিজগতে অন্যায় হয়।
  • সুতরাং সৃষ্টিকর্তা ন্যায়পরায়ণ নন, তিনি পরম করুণাময়ও নন, এবং তিনি অন্যায় প্রতিরোধ করতে পারেন না। সুতরাং স্রষ্টা বলে কেউ নেই।
যুক্তিটা বেশ ভালোই। কিন্তু এর মধ্যে দুটো ব্যাপার ধরে নেওয়া হয়েছে, যা প্রকাশ করা হয়নি—
  • স্রষ্টা এমন একটি জগৎ সৃষ্টি করতে বাধ্য, যেখানে কোনো অন্যায় থাকবে না।
  • স্রষ্টা পরম করুণাময়, ন্যায়পরায়ণ হলে তিনি কোনোভাবেই অন্যায় হতে দিতে পারেন না।
আল্লাহ ﷻ যদি এমন একটা জগৎ সৃষ্টি করেন, যেখানে কেউ কোনো অন্যায় করতে পারে না, তাহলে সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা বলে কিছু থাকবে না। মানুষ হয়ে যাবে ফেরেশতা অথবা অন্যান্য পশুদের মত আরেকটি সৃষ্টি, যাদের সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা নেই। যারা নিজেদের ইচ্ছামত কিছুই করতে পারেনা। মানুষকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য সেটা ছিল না।

সূত্র:
  • [২২০] Appendix in Morris, J. and F. Sherwin. 2009. The Fossil Record. Dallas, TX: Institute for Creation Research.
  • [২২১] Nüsslein-Volhard, C. and E. Wieschaus. 1980. Mutations affecting segment number and polarity in Drosophila. Nature. 287 (5785): 795-801.
  • [২২২] Burke, M. K. et al. 2010. Genome-wide analysis of a long-term evolution experiment with Drosophila. Nature. 467 (7315): 587-590.
  • [২২৩] Barrick, J. E. et al. 2009. Genome evolution and adaptation in a long-term experiment with Escherichia coli. Nature. 461 (7268): 1243- 1247.
  • [২২৪] Sanford, J. 2008. Genetic Entropy & the Mystery of the Genome. Waterloo, NY: FMS Publications.
  • [২২৫] Kong, A. et al. 2012. Rate of de novo mutations and the importance of father’s age to disease risk. Nature. 488 (7412): 471-475.
  • [২২৬] Thomas, B. Do New Dinosaur Finger Bones Solve a Bird Wing Problem? ICR News. Posted on icr.org July 9, 2009, accessed March 9, 2012.
  • [২২৭] Leonard, B. Critical Analysis of Evolution — Grade 10. Draft Reflecting Changes Made at March 2004 State Board of Education Meeting, page 314. Ohio Department of Education. www.texscience.org.
  • [২২৮] Allaby, M. (ed.) 1992. The Concise Oxford Dictionary of Zoology. New York: Oxford University Press.
  • [২২৯] Nathaniel T. Jeanson, Ph.D. “Is Evolution an Observable Fact?” http://www.icr.org/article/7165/
  • [২৩০] Henry, Roger “Synchronized Chronology: Rethinking Middle East Antiquity” http://goo.gl/kDfpHK, page 24.


পর্ব-৩

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নাস্তিক: স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই
এই ধরনের নাস্তিকদের দাবি, “স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে কোনো প্রমাণ কেউ দেখাতে পারেনি। সুতরাং স্রষ্টা নেই।” ফিলসফির ভাষায় একে বলে Ad Ignorantiam। যারা এই ধরনের প্রশ্ন করে, তাদেরকে আপনি প্রশ্ন করুন:
  • মানুষ কি এখন পর্যন্ত যা কিছু প্রমাণ করা সম্ভব, তার সব কিছু প্রমাণ করে দেখেছে?
  • মানুষ কি এখন পর্যন্ত সমস্ত ‘বিজ্ঞান সম্মত’ ঘটনা দেখেছে? ‘বিজ্ঞান সম্মত’-এর সংজ্ঞা কি বাকি জীবন পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে?
  • মানুষ কি এখন পর্যন্ত যা জানা সম্ভব, তার সব কিছু জেনেছে?
  • মানুষ কি এখন পর্যন্ত সৃষ্টিজগতের ১%-ও বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি ‘না’ হয়, তাহলে কেবল মাত্র একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মানুষের পক্ষেই বলা সম্ভব যে, স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। কেউ যদি এই ধরনের দাবি করে, তবে তাকে আগে দেখাতে হবে যে, সৃষ্টিজগতে যাকিছু প্রমাণ করা সম্ভব, তার সব প্রমাণ হয়ে গেছে। সৃষ্টিজগতে যা কিছু জানা সম্ভব, তার সব সে জেনেছে। মানুষের আর জানার, বোঝার, প্রমাণ করার কিছুই বাকি নেই। যেহেতু আর কিছু বাকি নেই, তাই তখনও যদি স্রষ্টার পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া না যায়, তখন নিশ্চিতভাবে দাবি করা যাবে: স্রষ্টা বলে কেউ নেই।
“মানুষ কি নিজে থেকেই সৃষ্টি হয়েছে, নাকি তারা নিজেরাই নিজেদেরকে সৃষ্টি করেছে? মানুষ কি আকাশগুলো এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছে?না! ওদের একেবারেই কোনো জ্ঞান নেই।” [আত-তুর ৫২:৩৫-৩৬]
বৈজ্ঞানিকভাবে যন্ত্র দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা বা প্রমাণ করাটার যে কত সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এবং সেটি যে মোটেও যথেষ্ট নয়, তার জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে Quantum Entanglement বা কোয়ান্টাম আঁতাত।[২৩২] বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে প্রমাণ করেছেন যে, উপপারমানবিক কণিকাগুলো, যেমন ইলেকট্রন, কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, যদিও কিনা তাদের মধ্যে বিশাল দূরত্ব থাকে। তাদের মধ্যে দূরত্ব ১ মিটার হোক, বা কোটি কোটি আলোকবর্ষ হোক না কেন, তারা কোনো ভাবে জানে অন্যরা কী করছে। এটি আইনস্টাইনের বিখ্যাত তত্ত্ব: কোনো যোগাযোগ আলোর গতিবেগকে অতিক্রম করতে পারে না — এর বিরুদ্ধে যায়।
এই গবেষণা থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে, এই কণিকাগুলোর কোনো এক বিশেষ জগৎ বা স্তরে আলাদা একটি অস্তিত্ব রয়েছে, যেখানে তারা সবাই ‘একসাথে’ থাকে এবং একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। আমাদের এই সৃষ্টিজগতে আমরা এই সব উপপারমানবিক কণাগুলোর একটি প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই মাত্র। এটাই তাদের একমাত্র অস্তিত্ব নয়। শুধু তাই না, এটা তাদের মুল অস্তিত্বও নয়। তাদের মুল অস্তিত্ব রয়েছে অন্য কোথাও। সেটা কোথায়, সেটা কী —আমরা তা জানি না। এই তত্ত্বকে Holographic Universe বলা হয়।[২৩১] এই তত্ত্ব অনুসারে আমাদের চারপাশে আমরা এই যে বিশাল সৃষ্টিজগৎ দেখতে পাচ্ছি, সেটা হচ্ছে একটি প্রতিচ্ছবি মাত্র। এই মহাবিশ্বের প্রতিটি কণিকা, শক্তি অন্য কোনো জগতে আরেকটি অস্তিত্ব রয়েছে।
এর অর্থ হলো, ভৌত বিজ্ঞান যেভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করে: কোনো কিছুর এই মহাবিশ্বে যে ভৌত অস্তিত্ব রয়েছে, সেটাকে ভৌত পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে পৌছা — সেটা সঠিক নয়। কোনো কিছুকে এই মহাবিশ্বে পর্যবেক্ষণ করতে না পারলেই যে আর সেটার অস্তিত্ব নেই, এটা এখন আর সঠিক নয়। কোয়ান্টাম বিজ্ঞানে এরকম অনেক কিছুই আছে, যার কোনো ‘বৈজ্ঞানিক’ ব্যাখ্যা নেই, প্রচলিত ভৌত বিজ্ঞানের নিয়ম অনুসারে।
বিজ্ঞান একটি পদ্ধতি, আর এই পদ্ধতির কাজ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কোনো কিছু কিভাবে কাজ করে সেটির ব্যাখ্যা দেয়া। আধুনিকতার তথাকথিত বেড়াজালে পড়ে আমরা এখন দাবী করি: যেহেতু আমরা জানি এটা কীভাবে কাজ করে, সেহেতু এর কোনো স্রষ্টার প্রয়োজন নেই। অথচ আমরা ভুলে যাই: কীভাবে কাজকরে, আর কেন এভাবে কাজ করে —এই দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। কোনো কিছু এভাবে কাজ করে বলে এটিকে কেউ সৃষ্টি করেনি —এই ধারণায় বিজ্ঞান কখনোই আসে না। কারণ সেটি বিজ্ঞানের পদ্ধতির আওতায় পড়ে না। বিজ্ঞান আমাদেরকে বলে “কীভাবে”, কিন্তু সে কখনো “কেন” প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয় না, আর সেটি নিয়ে মাথা ঘামানো বিজ্ঞানের কাজ নয়।
যেমন, আপনি রাস্তায় একটা বরফের টুকরো পড়ে থাকতে দেখে সেটা নিয়ে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ শুরু করলেন। বিজ্ঞান আপনাকে বলতে পারবে সেটা কী দিয়ে তৈরি, কীভাবে তৈরি, কখন তৈরি হয়েছে ইত্যাদি। কিন্তু বিজ্ঞান কখনোই আমাদেরকে বলতে পারবে না: কে সেটিকে কেন তৈরী করেছে? সেটি কোনো প্রাকৃতিক কারণে শিলা হয়ে মেঘ থেকে পড়েছে, নাকি কেউ তার ফ্রিজ থেকে এক টুকরো বরফ নিয়ে এসে রাস্তায় ফেলে রেখেছে?

আঁতেল নাস্তিক: আল্লাহ ধারণাটা আসলে মানুষের কল্পনা প্রসূত
এই ধরনের নাস্তিকদের দাবি হচ্ছে: মানুষ নিজে থেকেই চিন্তাভাবনা করে একজন স্রষ্টার ধারণা বের করেছে। যেহেতু মানুষের সীমাবদ্ধতা আছে, মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে না, তাই একরকম নিরাকার, অবিনশ্বর, অসীম ক্ষমতা ইত্যাদি যত সব কল্পনাতীত গুণ মানুষচিন্তা করে বের করতে পারে, তার সবকিছু ব্যবহার করে সে এক স্রষ্টাকে সৃষ্টি করেছে। কিন্তু বাস্তবে এরকম কোনো স্রষ্টা নেই।
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ধাপে ধাপে কিছু যুক্তি দাঁড় করাতে হবে এবং একটি লম্বা কল্পনা-অনুশীলন করতে হবে—
কল্পনা করুন:একটা বিশাল খালি ঘর, যার ভেতরটা একদম শূন্য। এর ভেতরে কিছুই নেই। কোনো আলো, বাতাস, পদার্থ, শক্তি, ক্ষেত্র — কিছুই নেই। ভেতরটা হচ্ছে ঘুটঘুটে অন্ধকার, পরম শূন্যতা।
এখন আপনার উদ্দেশ্য হচ্ছে: এই ঘরের ভেতরে কিছু একটা তৈরি করার। কিন্তু শর্ত হচ্ছে: আপনি বাইরে থেকে কিছু ব্যবহার করতে পারবেন না।
ধরুন, আপনি সেই ঘরের ভেতর এক মুহূর্তের জন্য একটা আলো জ্বালাতে চান। কিন্তু আপনি তা করতে পারবেন না, কারণ আলো জ্বালানোর জন্য যা কিছু দরকার, তা আপনাকে বাইরে থেকে দিতে হবে।
এখন আপনি দাবি করতে পারেন যে, আমরা যদি কোটি কোটি বছর অপেক্ষা করি, তাহলে একদিন হয়ত সেই ঘরের শূন্যতার মধ্যে একটা ক্ষুদ্র কণা, অণু, বা পরমাণু আপনা আপনিই তৈরি হবে। তারপর আরও কয়েক কোটি বছর পার হলে তা থেকে একসময় তেল, ম্যাচ, কাঠ তৈরি হয়ে একসময় আগুন ধরে যাবে এবং আলো তৈরি হবে। কিন্তু এই দাবির সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, সময় নিজে থেকে কিছু করে না। কোনো ঘটনা ঘটলে, তা ঘটে সময়ের মধ্যে, কিন্তু সময় সেই ঘটনা ঘটায় না। যেমন, আপনি যদি চুলায় ডাল দিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেন, তাহলে সেই পনের মিনিট কিন্তু ডাল রান্না করে না, বরং চুলার তাপ ডাল রান্না করে। আপনি যদি চুলা না জ্বালিয়ে চুপচাপ ১৫ মিনিট বসে থাকতেন, তাহলে আপনা আপনি ডাল রান্না হয়ে যেত না।
সুতরাং আমরা যদি অসীম সময় পর্যন্তও অপেক্ষা করি, সেই ঘরের ভেতরে কিছুই আপনা থেকে সৃষ্টি হবে না। সেটা একটা অত্যন্ত ক্ষুদ্র কণিকা হোক, বা একটা বড় ফুটবল হোক না কেন।
তাহলে এখন প্রশ্ন আসে, যদি কোটি কোটি বছর আগে মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে শূন্যতা বিরাজ করছিল, তাহলে এখনও কেন শূন্যতা নেই? শূন্যতা থেকে তো কোনো কিছু আসতে পারেনা। তাহলে তো এখনও শূন্যতা বিরাজ করার কথা। কিন্তু যেহেতু আপনি আছেন এবং আপনি এই আর্টিকেল পড়ছেন, তার মানে দাঁড়ায় এখন শূন্যতা নেই, কিছু একটা আছে।
এর মানে দাঁড়ায়: শূন্যতা কখনই ছিল না। কিছু একটা সবসময় ছিল। এখন প্রশ্ন হলো: সেটা কী?
সেটা কি একটা কণিকা ছিল? এক ধরনের শক্তি? একটা না হয়ে অনেক কিছু কি ছিল?
আমাদের কল্পনার ঘরে ফেরত যাই। ধরে নেই: সেই ঘরে পাঁচটি বল রয়েছে। সেই বলগুলো চিরকাল থেকে সেই ঘরের ভেতরে ছিল। এখন আমরা যদি আরও দশ বছর অপেক্ষা করি, তাহলে কি আরেকটা বল তৈরি হবে? যদি কয়েক কোটি বছর অপেক্ষা করি, তাহলে কি হবে? হবে না। যদি পাঁচটি বলের বদলে কোটি কোটি বল থাকে, তাহলে কি সেই বলগুলো থেকে আরেকটি বল সৃষ্টি হবে? হবে না। সুতরাং সংখ্যা এখানে কোনো ব্যাপার নয়। সময় কোনো ব্যাপার নয়। নিষ্প্রাণ বস্তু কখনো অন্য কোনো বস্তুর জন্ম দেবে না, তার সংখ্যা যতই হোক না কেন এবং যতই সময় দেওয়া হোক না কেন।
এখন ধরুন বলের বদলে সেই ঘরে একটা মোরগ রয়েছে। এখন আমরা যদি কয়েক বছর অপেক্ষা করি, তাহলে কি একটা মুরগির বাচ্চার জন্ম হবে? হবে না। কিন্তু যদি একটা মোরগ এবং মুরগি রাখা হয়, তাহলে একটা বাচ্চা মুরগির জন্ম হতে পারে।
সুতরাং, আমরা দেখছি এখানে সংখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বলের বেলায় সংখ্যার কোনো গুরুত্ব নেই, কিন্তু মুরগির বেলায় সংখ্যার গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, সেই ঘরের শূন্যতার মধ্যে যেই জিনিস রয়েছে তার গুণ কী। তার গুণ নির্ধারণ করে যে, সে অন্য কোনো কিছু সৃষ্টি করতে পারে, কি পারে না।
মুরগির উদাহরণটাতে কিছু সমস্যা আছে। একটা মোরগ এবং মুরগি যদি একটা ঘরের শূন্যতার মধ্যে ভাসতে থাকে, তাহলে তারা কোনোদিনও একটা মুরগির বাচ্চার জন্ম দিতে পারবে না। কারণ সেই ঘরের মধ্যে কোনো প্রকৃতি নেই। কোনো বাতাস নেই, কোনো খাবার নেই, হাটার মত মাটি নেই। ওরা কিছুই খেতে পারে না, হেঁটে একজন আরেকজনের কাছে আসতে পারে না। ওদের পক্ষে কিছুই জন্ম দেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি তাদের পক্ষে সেখানে বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়।
সুতরাং সেইঘরের শূন্যতার মধ্যে যদি কিছুর অস্তিত্ব থাকে, তবে সেটি হতে হবে এমন একটা কিছু, যার কোনো বাতাস, আলো, শক্তি — কিছুরই দরকার নেই। সেটা এমন একটা কিছু, যার সাথে আমাদের পরিচিত কোনো প্রাণীর কোনোই মিল নেই।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কোনো প্রাণী না থাকুক, কোনো জড় বস্তু তো থাকতে পারে? তাদের তো কোনো খাবার, পানি, আলো-বাতাসের দরকার নেই? আমরা আগেই দেখেছি বলের উদাহরণটা। ধরুন, বলের বদলে পাঁচটি অণু রয়েছে। তাহলে কী দাঁড়াবে?  যতই সময় যাক না কেন, সেই পাঁচটি অণুই থাকবে। নতুন কিছুই সৃষ্টি হবে না।
এখন চিন্তা করে দেখুন, সেই অণুগুলো থাকার জন্য কী দরকার। কয়েক বছর আগে সরকারি পর্যায়ে কয়েকটি পশ্চিমা দেশের উদ্যোগে Large Hadron Collider নামে একটি বিশাল যন্ত্র তৈরি করা হয়, যা কয়েক মাইল চওড়া একটি যন্ত্র। এর মধ্যে দুটো অণুকে প্রচণ্ড গতিবেগে চালিয়ে একে অন্যের সাথে সংঘর্ষ ঘটানো হয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি অতি ক্ষুদ্র কণিকা জন্ম দেওয়া। বিপুল পরিমাণ শক্তি খরচ করে এই সংঘর্ষ থেকে একটি মাত্র অতি ক্ষুদ্র কণিকা তৈরি করা হয়। সুতরাং আমাদের সেই কল্পনার ঘরে যদি পাঁচটি অণু থাকতে হয়, তাহলে এক বিশাল পরিমাণের শক্তির প্রয়োজন।
এতক্ষণে আমরা যা জানলাম, তা থেকে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়— প্রথমত, সৃষ্টির আগে যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে সেটি হবে এমন একটি কিছু, যার অস্তিত্বের জন্য অন্য কিছুর দরকার নেই। যেটি একটি একক সত্তা। এর অস্তিত্বের জন্য অন্য কোনো কিছুর দরকার নেই। সেটি অমুখাপেক্ষী, কোনো কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়।
দ্বিতীয়ত, সেটির ক্ষমতা থাকতে হবে অন্য কোনো কিছুর সৃষ্টি করার। কারণ যদি সেটির সৃষ্টি করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে আমাদের চারপাশে এই যে বিশাল সৃষ্টিজগৎ, এর কিছুরই অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। যেহেতু আপনি, আমি আছি, তাই সৃষ্টির আগে কিছু একটা ছিল, যার সৃষ্টি করার ক্ষমতা রয়েছে।
তৃতীয়ত, সেই কিছু একটার অকল্পনীয় ক্ষমতা থাকতে হবে। আজকে আমরা একটি অতি ক্ষুদ্র কণিকা তৈরি করতে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে যন্ত্র বানিয়ে, লক্ষ মেগাওয়াট শক্তি খরচ করি। এই পরিমাণ শক্তি যদি একটি মাত্র অতি ক্ষুদ্র কণিকা তৈরি করতে লাগে, তাহলে আপনি, আমি, আমাদের চারপাশ, এই বিশাল পৃথিবী, লক্ষ পৃথিবীর সমান বিরাট সূর্য, কোটি কোটি সূর্যের মত বিশাল তারা দিয়ে ভরা প্রকাণ্ড ছায়াপথ, এরকম কয়েকশ কোটি প্রকাণ্ড  ছায়াপথসহ মহাবিশ্বের সবকিছু সৃষ্টি করতে কী পরিমাণ শক্তির দরকার?
সুতরাং এই পর্যায়ে এসে আমরা কয়েকটি ব্যাপার প্রমাণ করলাম—
  • সৃষ্টির আগে ‘কিছু একটা’ ছিল।
  • সেই কিছু একটার অকল্পনীয় ক্ষমতা।
  • সেই কিছু একটার ‘অন্য কিছু’ সৃষ্টির ক্ষমতা আছে।
  • সেই কিছু একটা ‘অন্য কিছু’ অবশ্যই সৃষ্টি করেছে।
  • সেই কিছু একটা অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়।
  • অন্য কোনো কিছুই সেটার সাথে তুলনা করার যোগ্য নয়।
এখন চলুন সৃষ্টির আগে চলে যাই। শুধুই সেই অবিনশ্বর জিনিসটা রয়েছে। আর কিছুই নেই। এখন যদি অন্য কোনো কিছুর সৃষ্টি করতে হয়, তাহলে সেটা শুধুমাত্র সেই অবিনশ্বর জিনিসটাকে দিয়েই সম্ভব। আর অন্য কোনো কিছু নেই, যা কিনা তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা সেই জিনিসটাকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে কিছু একটা সৃষ্টি করার জন্য।
এখন সেই জিনিসটার কোনো কিছু সৃষ্টি করার কোনোই প্রয়োজন নেই, কারণ সে নিজে থেকেই অস্তিত্ব নিয়ে থাকতে পারে, এবং সবসময়ই ছিল। যেহেতু সেটার কোনোই প্রয়োজন নেই অন্য কোনো কিছু সৃষ্টি করার, তার মানে হলো: যদি কিছু সৃষ্টি হয়, তাহলে সেটা সৃষ্টি হয়েছে সেই অবিনশ্বর জিনিসটার ‘ইচ্ছা’র কারণে। এমনটা নয় যে, সেই অবিনশ্বর জিনিসটার প্রকৃতি হচ্ছে এমন যে, সেটি ‘কিছু সময়’ পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্য কোনো কিছু সৃষ্টি করা শুরু করবে। কারণ ‘কিছু সময়’ হচ্ছে একটা ‘অন্য কিছু’, যা এখনো সৃষ্টি হয়নি। যদি সেই জিনিসটা ‘কিছু সময়’ সৃষ্টি না করে, তাহলে ‘কিছু সময়’-এর কোনো অস্তিত্ব হবে না।
এখন আমরা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার উপলব্ধি করলাম: সেই জিনিসটার ‘ইচ্ছা’ আছে। সুতরাং সেই জিনিসটা কোনো ‘জিনিস’ নয়, সেটা ‘কেউ একজন’ — কোনো চেতন সত্তা। আমরা আর সেটাকে ‘সেটা’ বলতে পারব না, বলতে হবে ‘তিনি’।
এখন অনেকে দাবি করতে পারেন: যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে, সেটা তো দৈবক্রমে, বা ঘটনাচক্রেও সৃষ্টি হতে পারে? ‘ইচ্ছা’-এর দরকার নাও থাকতে পারে? যদি ইচ্ছা’র দরকার না থাকে, তাহলে আর কোনো চেতন সত্তার দরকার নেই। তখন সেটা অচেতন ‘কোনো জিনিস’ হতেই পারে।
যেহেতু ‘দৈবক্রম’ বা ‘ঘটনাচক্র’ হচ্ছে ‘অন্য কিছু’ একটা, যা সেই অবিনশ্বর জিনিসটা নয়, এবং আমরা এর আগে দেখেছি যে, ‘অন্য কিছু’ সৃষ্টি হওয়া শুধুমাত্র সেই অবিনশ্বর জিনিসটার পক্ষেই করা সম্ভব, সুতরাং এই ‘দৈবক্রম’ বা ‘ঘটনাচক্র’ সেই অবিনশ্বর জিনিসটাকেই সৃষ্টি করতে হবে। ‘দৈবক্রম’ বা ‘ঘটনাচক্র’ কখনই সেইঅবিনশ্বর জিনিসটার বাইরে নিজে থেকেই থাকতে পারে না।
তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম অবিনশ্বর সত্তাটি একটি অতি পরমাণু, সেটি কোনো চেতন সত্তা নয়। সেটির সৃষ্টি করার ক্ষমতা রয়েছে। সেই অণুটির যতই ক্ষমতা থাকুক, যত কিছুই সৃষ্টি করার সামর্থ্য থাকুক না কেন, সৃষ্টি করার ‘ইচ্ছা’ না থাকলে সেই অণুটা চিরজীবন যেমন ছিল, তেমনই থাকবে।যেহেতু এর অন্য কোনো কিছু সৃষ্টি করার কোনোই প্রয়োজন নেই, সেটি কখনই কিছু সৃষ্টি করবে না। কিন্তু অন্য কিছু সৃষ্টি অবশ্যই সৃষ্টি হয়েছে, কারণ আপনি-আমি আজকে আছি।
সুতরাং দৈবক্রম, বা ঘটনাচক্র বলে কিছু নেই। থাকলে সেটা সেই অবিনশ্বর সত্তারই সৃষ্টি। যদি তাই হয়, তার মানে সেই অবিনশ্বর সত্তা ‘ইচ্ছা’ করেন বলেই অন্য কিছু সৃষ্টি হয়। যদি ‘ইচ্ছা’ না থাকত, তাহলে যতই ক্ষমতা থাকুক না কেন, যতই সময় পার হোক না কেন, অন্য কোনো কিছুই সৃষ্টি হতো না। এথেকে আমরা এটা দাবি করতে পারি, সেই অবিনশ্বরসত্তার ‘ইচ্ছা’ আছে।
এখন আমরা আগে দেখেছি, সেই অবিনশ্বর সত্তা অন্য কোনো কিছু ছাড়াই থাকতে পারেন। সুতরাং, তিনি সময়-স্থানে আবদ্ধ নন, কারণ তিনি সময় এবং স্থান সৃষ্টি করেছেন। একইভাবে যেহেতু তিনিই স্থান সৃষ্টি করেছেন, তাই তিনি ইচ্ছা করলেই স্থানের বাইরে অদৃশ্য থাকতে পারেন, যেন তাঁকে কোনোভাবেই বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যবেক্ষণ এবং পরিমাপ করা না যায়। আবার তিনি ইচ্ছা করলেই স্থানের ভেতরে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন, যেন তাঁর সৃষ্টি তাঁকে দেখতে এবং শুনতে পারে।
এবার ধরি সেই অবিনশ্বর সত্তা একটি অণু সৃষ্টি করলেন। তিনি কি সেই অণুটির ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব তার সবকিছু জানেন? অবশ্যই, কারণ তিনি শূন্য থেকে সেই অণুটি সৃষ্টি করতে পারেন। শূন্য থেকে কোনো কিছুবানানো, আর তেল ময়দা মাখিয়ে পরোটা বানানোর মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে। আমরা যা কিছুই বানাই, আমরা কখনই তা শূন্য থেকে বানাই না। একারণে কোনো কিছুর ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব, তার সব কখনই আমরা জানতে পারবো না। আমাদের জ্ঞান সবসময়ই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।
এখন ধরুন তিনি দুটি ভিন্ন ধরনের অণু সৃষ্টি করলেন। তিনি কি সেই দুটো অণুর ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব, তার সবকিছু জানেন? অবশ্যই, একটার ব্যাপারে জানলে, দুটোর বেলায় কেন হবে না?
সুতরাং আমরা দেখছি তাঁর সৃষ্ট কোনো কিছুর ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান, কয়টি সৃষ্টি হয়েছে, তার সংখ্যার উপর নির্ভর করে কমে না বা বাড়ে না। এভাবে তিনি যদি কোটি কোটি কোটি অণুও সৃষ্টি করেন, তারপরেও তিনি সেগুলোর প্রত্যেকটির ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব, তার সবকিছুই জানবেন। সুতরাং আমরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, তিনি শুধুই অকল্পনীয় জ্ঞানের অধিকারীই নন, তাঁর সবকিছুর ব্যাপারে সবরকম জ্ঞান রয়েছে। তিনি পরমজ্ঞানী, সকল জ্ঞানের অধিকারী।
যদি সেই সত্তা প্রতিটি অণুর ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব, তাঁর সব কিছু জানেন, তার মানে দাঁড়ায় সেই অণুগুলো যা কিছু ঘটাচ্ছে, ঘটিয়েছে, এবং ঘটাবে, অর্থাৎ সৃষ্টিজগতে যা কিছুই ঘটে, সবকিছুর ব্যাপারেই জানেন। সুতরাং তিনি প্রতিটি শব্দ শোনেন, প্রতিটি ঘটনা দেখেন। শুধু তাই না, যেহেতু তিনি প্রতিটি অণু বানিয়েছেন, তাই প্রতিটি অণু যা কিছুই ঘটাতে পারে, তার সবকিছুই তিনিই নির্ধারণ করেদিয়েছেন। সুতরাং মহাবিশ্বের প্রতিটি ঘটনা তাঁর অনুমতিতে ঘটে। তিনিই সবকিছু ঘটান। তাঁর ঘটানো ঘটনার বাইরে অন্য কোনো কিছু ঘটে না।
  • সৃষ্টির আগে ‘কোনো একজন’ ছিলেন।
  • সেই ‘কোনো একজন’-এর অকল্পনীয় ক্ষমতা।
  • সেই ‘কোনো একজন’-এর ‘অন্য কিছু’ সৃষ্টির ক্ষমতা আছে।
  • সেই ‘কোনো একজন’ ‘অন্য কিছু’ অবশ্যই সৃষ্টি করেছেন।
  • সেই ‘কোনো একজন’ অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল নন।
  • অন্য কোনো কিছুই সেই ‘কোনো একজন’-এর সাথে তুলনা করার যোগ্য নয়।
  • সেই ‘কোনো একজন’ সবকিছুর ব্যাপারে সব জানেন, সব দেখেন, সব শোনেন।
  • মহাবিশ্বের প্রতিটি ঘটনা ঘটে সেই ‘কোনো একজন’-এর ইচ্ছায়।
উপরের এই যুক্তিগুলো ব্যবহার করে আমরা যে সত্তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করলাম, তিনি কোনো কাল্পনিক সত্তা নন। তিনি থাকতে বাধ্য। না হলে উপরের সবগুলো যুক্তিমিথ্যা। যদি উপরের যুক্তিগুলো মিথ্যা হয়, তাহলে আপনার কোনো অস্তিত্ব নেই। যেহেতু আপনার অস্তিত্ব আছে, তাই উপরের যুক্তিগুলো ধারাবাহিকভাবে সবগুলো সত্যি। সুতরাং এরকম একজন সত্তা অবশ্যই আছেন।
এই মহান সত্তাকে আমরা ‘আল্লাহ’ নামে ডাকি, কারণ তিনি অনুগ্রহ করে আমাদেরকে তাঁর সম্পর্কে জানিয়েদিয়েছেন—
বল, তিনিই আল্লাহ, অদ্বিতীয়। তিনি অমুখাপেক্ষী, সবকিছু তাঁর উপর নির্ভরশীল। তিনি কোনো উত্তরসূরি জন্ম দেন না এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষ আর কিছুই নেই! [সুরা ইখলাস]
তিনিই আল্লাহ, যিনি অবিনশ্বর, পরম অস্তিত্বধারী। তন্দ্রা বা ঘুম তাকে আচ্ছন্ন করতে পারে না। আকাশগুলো এবং পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সব তাঁর। কে আছে, যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর সামনে সুপারিশ করতে পারে? তাদের আগে কী ঘটেছে এবং পরে কী ঘটবে — তিনি সব জানেন। তিনি নিজে থেকে তাদেরকে যা শেখান, তার বাইরে তাঁর জ্ঞানের কিছু জানার কোনো ক্ষমতাই তাদের নেই। তার নিয়ন্ত্রণ-সিংহাসন সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীর উপরে বিস্তৃত। এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তিনি মোটেও ক্লান্ত হন না। তিনি সর্বোচ্চ সত্তা, প্রচণ্ড ক্ষমতাবান। [আয়াতুল কুরসি, আল-বাক্বারাহ ২:২৫৫]
তিনি যেটা করতে ইচ্ছা করেন, সেটাই করেন। [আল-বুরুজ ৮৫:১৬]
ওদেরকে জিজ্ঞেস করো, “কে তোমাদেরকে আকাশ এবং পৃথিবী থেকে তোমাদের বেঁচে থাকার জন্য যা দরকার, সবকিছু দেন? তোমাদের শোনা এবং দেখাকে কে নিয়ন্ত্রণ করেন? কে তোমাদেরকে নিষ্প্রাণ অবস্থা থেকে প্রাণ দেন এবং জীবিত থেকে মৃত করেন? সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন কে?”
ওরা নির্দ্বিধায় বলবে, “আল্লাহ!তাহলে ওদেরকে জিজ্ঞেস করো, “তবে কেন তোমরা তাঁর ব্যাপারে সাবধান থাকো না?”তিনিই আল্লাহ, তোমার পালনকর্তা, শাশ্বত সত্য। এই সত্য ছাড়া যা কিছু আছে, তার সব মিথ্যা ছাড়া আর কী? তাহলে কিসের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছো তোমরা? [ইউনুস ১০:৩১]
তিনি আল্লাহ, যিনি ছাড়া উপাসনার যোগ্য কোনো সত্তা নেই। গোপন এবং প্রকাশ্য সব জ্ঞানের অধিকারী। পরম করুণাময়, নিরন্তর করুণাময়।
তিনি আল্লাহ, যিনি ছাড়া উপাসনার যোগ্য কোনো সত্তা নেই। একমাত্র অধিপতি, পবিত্র সত্তা, সকল শান্তির উৎস, নিরাপত্তাদাতা, সবকিছুর অভিভাবক, সব ক্ষমতা কর্তৃত্বের অধিকারী, যে কোনো কিছুকে বাধ্য করতে সক্ষম, সবার থেকে উপরে। ওরা আল্লাহর সাথে যা কিছুরই তুলনা করে, ওসবের থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।
তিনি আল্লাহ, একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবক, রূপদায়ক। সমস্ত সুন্দর নামগুলো তাঁর। আকাশ  এবং পৃথিবীতে সবকিছু তাঁর মহিমা প্রকাশ করছে। তিনি সকল ক্ষমতা কর্তৃত্বের অধিকারী, পরম প্রজ্ঞাময়। [আল-হাশর ৫৯:২২-২৪]

ঘৃণাস্তিক: যদি আল্লাহ বলে আসলেই কেউ থাকে, তাহলে ধর্মের নামে এত অন্যায় হয় কেন?
Encyclopedia of Wars নামের তিনখণ্ডের এক বিশাল বইয়ে ১৭৬৩টি যুদ্ধের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এর মধ্যে ১২৩টি যুদ্ধকে ধর্ম সম্পর্কিত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার অর্থ এই পর্যন্ত যত যুদ্ধ হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ৬.৯৮% যুদ্ধধর্ম সম্পর্কিত। ৯৩% যুদ্ধের সাথে ধর্মের কোনোই সম্পর্ক নেই।
R. J. Rummel এর বিখ্যাত Lethal Politics এবং Death by Government বইয়ে দেখানো হয়েছে, নাস্তিকদের কারণে হত্যার পরিমাণ কতখানি—
Non-Religious Dictator                            Lives Lost
Joseph Stalin                                                  42,672,000
Mao Zedong                                                  37,828,000
Adolf Hitler                                                    20,946,000
Chiang Kai-shek                                            10,214,000
Vladimir Lenin                                                4,017,000
Hideki Tojo                                                     3,990,000
Pol Pot                                                            2,397,000

রামেল বলেন—
প্রায় ১৭০ মিলিয়ন পুরুষ, মহিলা এবং শিশুকে গুলি করে, পিটিয়ে, নির্যাতন করে, কুপিয়ে, পুড়িয়ে, অভুক্ত রেখে, বরফে জমিয়ে, পিষে বা জোর করে কাজ করিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। জীবন্ত পুঁতে, পানিতে ডুবিয়ে, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, বোমা মেরে, বা অন্য আরও নানা পদ্ধতি ব্যবহার করে সরকারগুলো নিরস্ত্র, অসহায় দেশবাসী এবং বিদেশীদের হত্যা করেছে। মোট মৃতের সংখ্যা ৩০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে। মানব জাতি যেন এক কালো মহামারির শিকার। কিন্তু এই মহামারি কোনো জীবাণু থেকে মহামারি নয়, বরং শক্তির মোহ থেকে সৃষ্ট মহামারি।
নাস্তিকরা এই বিংশ শতাব্দীতে ১৫ কোটির বেশি মানুষ খুন করেছে। পুরো বাংলাদেশের জনসংখ্যার সমান মানুষতারা এই বিংশ শতাব্দীতেই মেরে শেষ করেছে। (সূত্রঃ The Irrational Atheist, TheodoreBeale-এর লেখা বই)
১৯১৭ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত মোট ১৪.৮ কোটি মানুষ মারা গেছে ৫২ জন নাস্তিকের[২৩৩] কারণে, যা পুরো বিংশশতাব্দীতে যুদ্ধ, গৃহ যুদ্ধ এবং সকল অন্যয়ের কারণে মারা যাওয়া মোট জনসংখ্যার চেয়ে ৩ গুণ বেশি! নোবেল পুরস্কার জয়ী Aleksandr Solzhenitsyn পঞ্চাশ বছর ধরে গবেষণা করে বের করেছেন যে রাশিয়াতে যে ৬কোটি মানুষ মারা গেছে কমিউনিজমের কারণে, তার আসল কারণ নাস্তিকতা[২৩৩]
দুঃখজনকভাবে আজকে আধুনিক যুগের মানুষরা মিডিয়ার গণমগজ ধোলাইয়ের শিকার। মিডিয়া বেশিরভাগ মানুষকে সফলভাবে বোঝাতে পেরেছে যে, যত মারামারি, খুনাখুনি, হত্যা হয়, তার বেশিরভাগ হয় ধর্মের কারণে। ধর্ম না থাকলে মানুষ অনেক শান্তিতে বাস করতে পারত। মিডিয়ার নানা ধরনের মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়ে মানুষ এতটাই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে যে, তারা জানে মিডিয়া যা বলে তার বেশিরভাগই উদ্দেশ্য প্রণোদিত, বিকৃত, কিন্তু তারপরেও তারা মিডিয়াকেই বিশ্বাস করে, যখন তা ধর্মের ব্যপারে কিছু বলে।

সূত্র: