Wednesday, August 30, 2017

রোজা-শবে বরাত এবং সূর্য কেন্দ্রিক সৌরজগত

 লেভিটেশন (Levitation):

প্যারাসাইকোলজির চোখ দিয়ে দেখলে লেভিটেশন বা ট্রান্সভেকশক, সাইকোকাইনেসিস বা টেলিকাইনেসিস এর সাথে ব্যাপকভাবে সম্পর্কিত। সাইকোকাইনেসিস বলতে আসলে বোঝায়, অতিইন্দ্রিয় শক্তি ব্যবহার করে কোনো অবজেক্ট বা বস্তুকে সরানো, স্থানচ্যুত করা বা ম্যানুপুলেট করা। এই অবজেক্টটি মানুষও হতে পারে। লেভিটেশন শব্দটার সাথে আমরা অনেক বেশি পরিচিত। এই লেভিটেশন জিনিসটিও বলতে পারেন একধরনের সাইকোকাইনেসিস, যেখানে অবজেক্ট আপনি নিজে  সাধারনভাবে লেভিটেশন মানে হচ্ছে শূন্যে ভেসে থাকা । মাটি থেকে কোনো কিছুর অবলম্বন ছাড়া কিছুটা উপরে বেশ কিছুটা সময় থাকতে পারার ক্ষমতাকেই লেভিটেশন বলে ।
১.১ লেভিটেশনের প্রকারভেদ (Types of Levitation):

লেভিটেশন বলতে আমরা শুধু অতিইন্দ্রিয় বা মনস্তাত্বিক কোনো ক্ষমতার কথাই ভেবে থাকি। চলুন পরিচিত হয়ে আসি আরো কিছু লেভিটেশনের সাথে।
• সাইকিক লেভিটেশন- এখানে লেভিটেশন বা ট্রান্সভেকশন বলতে কোনো রহস্যময় প্রক্রিয়ায় মানব দেহ বা অন্য যে কোনো অবজেক্ট শুণ্যে ভেসে থাকা বোঝায়। প্যারাসাইকোলজির কিছু পাগলাটে ধরনের ভক্ত এবং ধর্মবিশ্বাসীরা মনে করে থাকে যে এই লেভিটেশন হচ্ছে মনস্তাত্বিক বা স্পিরিচুয়াল কোনো এক অতিপ্রাকৃতিক শক্তির ফল। বিজ্ঞানীমহল বা সায়েন্টিফিক কমুনিটির সদস্যগণ বলেন, এখানে লেভিটেশনের কোনো চাক্ষুস প্রমাণ নেই, অথবা একে বৈজ্ঞানিক থিওরি দ্বারা ব্যাখ্যাও করা যায় না। সাইকিক লেভিটেশন শুধুমাত্র কোনো যাদুর ট্রিক, ইলুশন অথবা হ্যালুজিনেশন।
• ম্যাগনেটিক লেভিটেশন- অনেকেই ম্যাগনেটিক লেভিটেশন সম্পর্কে শুনেছেন। বিশেষ করে জাপানের ম্যাগট্রেন এর রেকর্ড এর পর থেকে, এই ট্রেন ম্যাগনেটিক লেভিটেশন এর মাধ্যমে চলে। ম্যাগনেটিক লেভিটেশন চৌম্বক এর বিকর্ষণ ধর্ম ব্যবহার করে কাজ করে। ৬০৩ কিমি বেগের বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে ম্যাগট্রেন নামক এই ট্রেন।
• ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক লেভিটেশন- ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক লেভিটেশনে ইলেক্ট্রোনিক ফিল্ড ব্যবহার করা হয় গ্রাভিটেশনাল ফোর্সকে কাউন্টারএক্ট করার জন্য।
• এরোডাইনামিক লেভিটেশন- এরোডাইনামিক লেভিটেশন কাজ করে কোনো গ্যাস এর স্ট্রিম ব্যাবহার করে। যেমন, ভ্যাকিউম ক্লিনারকে ব্লো মুড এ করে রেখে কোনো পিং পং বলকে লেভিটেট করা যায়। যদি যথেষ্ঠ সোর্স থাকে, তাহলে যে কোনো বড় অবজেক্টকে এই প্রক্রিয়ায় লেভিটেট করা সম্ভব।
• একোস্টিক লেভিটেশন- একোস্টিক লেভিটেশনে যা ব্যবহার করা হয় তা হলো সাউন্ড ওয়েভ বা শব্দ তরঙ্গ। যার মাধ্যমে লেভিটেশন করার মত ফোর্স বা শক্তি উৎপন্ন করা হয়।
• অপটিক্যাল লেভিটেশন- অপটিক্যাল লেভিটেশন অনেকটা নয় পুরোটাই আমাদের দেখা সায়েন্স ফিকশন মুভির দৃশ্যের মত। ব্যাখ্যা করি, আমরা অনেক সায়েন্স ফিকশন মুভিতে দেখে থাকবো যে কোনো একটি অবজেক্ট কোনো একটি বেস এর উপর ঘুরছে বা শুণ্যে ঝুলে আছে। এই প্রক্রিয়া হলো অপটিক্যাল লেভিটেশন। অপটিক্যাল লেভিটেশনে কোনো একটি উপরিমুখি বল দ্বারা মহাকর্ষ বলকে পরাজিত করা হয়। আর এই কোনো একটি উপরিমুখি বল হলো, ‘ফোটন মোমেনটাম ট্রান্সফার’। (এখানে ফোটন এর রেডিয়েশন প্রেসারকে ব্যবহার করা হয়।)
• বোয়েন্ট লেভিটেশন- যখন কোনো গ্যাস এর প্রেসার এর কারণে এর ঘনত্ব বেড়ে যায় (কোনো কঠিন বস্তুর থেকে বেড়ে যায়), তখন ঐ কঠিন বস্তুকে ঐ গ্যাসের প্রেসার দ্বারা লেভিটেট করা সম্ভব। এটা হয়ে থাকে বোয়েন্সি এর কারণে। এজন্য নিষ্ক্রিয় গ্যাস ব্যবহার করা হয়, যেন তার কোনো অবজেক্ট এর সাথে রাসায়নিক ক্রিয়া না করতে পারে। যেমন, জেনন। জেনন ১৫৪ এটিএম প্রেসারে পলিইথিলিন লেভিটেট করতে ব্যবহার করা হয়।
• কাজিমির ফোর্স- সম্প্রতি বিজ্ঞান এই কাজিমির ফোর্স আবিষ্কার করেছে। এটি কোয়ান্টাম মেথড মেনে চলে এবং শুধুমাত্র অতি ক্ষুদ্র কণা লেভিটেট করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
২.০ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ:

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে লেভিটেশনের কিছু চমকপ্রদ ঘটনা পাওয়া যায়। সাইকিক লেভিটেশন সম্পর্কে জানতে হলে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
• বৌদ্ধ ধর্ম- কথিত আছে গৌতম বৌদ্ধ একবার এক ব্রাক্ষ্মনকে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের দীক্ষা দেয়ার জন্য পানির উপর দিয়ে হেটে (পা পানিতে না ছুইয়ে শুন্যে ভাসমান অবস্থায়, যাকে আমরা লেভিটেশন বলতে পারি) গিয়েছিলো। আরেক বৌদ্ধ গুরু মিলারেপার নাকি এমন মনস্তাত্বিক ক্ষমতা ছিলো যে তিনি লেভিটেশন করা অবস্থায় হাটতে, বিশ্রাম করতে এবং ঘুমাতে পারতেন। এছাড়া বৌদ্ধ পুরাণ আরো বলে, “Sitting crosslegged he flies through the air like a winged bird.”
• খৃষ্টান ধর্ম-  বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট এর মথি (ম্যথুস গসপেল) চ্যাপ্টার ১৪: আয়াত  ২৫-৩১ এ বলা আছে যে যীশু খৃস্ট একবার তার শিষ্যদের সাথে সাক্ষাত করতে পানির উপর দিয়ে হেটে গিয়েছিলেন, যারা কিনা নৌকার উপর বসে ছিলো।
২৫ সকাল তিনটে থেকে ছ’টার মধ্যে যীশুর শিষ্যরা নৌকায় ছিলেন। এমন সময় যীশু জলের উপর দিয়ে হেঁটে তাঁদের কাছে এলেন।
২৬ যীশুকে হ্রদের জলের ওপর দিয়ে হেঁটে আসতে দেখে শিষ্যরা ভয়ে আঁতকে উঠলেন, তারা ‘ভূত, ভূত’ বলে ভয়ে চিত্‌কার করে উঠলেন।
২৭ সঙ্গে সঙ্গে যীশু তাঁদের বললেন, ‘এতো আমি! সাহস কর! ভয় করো না।’
২৮ এর উত্তরে পিতর তাঁকে বললেন, ‘প্রভু, এ যদি সত্যিই আপনি হন, তবে জলের ওপর দিয়ে আমাকেও আপনার কাছে আসতে আদেশ করুন।’
২৯ যীশু বললেন, ‘এস।’ পিতর তখন নৌকা থেকে নেমে জলের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যীশুর দিকে এগোতে লাগলেন।
৩০ কিন্তু যখন দেখলেন প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস বইছে, তখন খুবই ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি আস্তে আস্তে ডুবতে লাগলেন আর চিত্‌কার করে বললেন, ‘প্রভু, আমাকে বাঁচান।’
৩১ যীশু তখনইহাত বাড়িয়ে পিতরকে ধরে ফেলে বললেন, ‘হে অল্প-বিশ্বাসী! তুমি কেন সন্দেহ করলে?’


St. Bessarion the Great, wonderworker of Egypt (466) এ বলা আছে যে তিনি একবার পানির উপর হেটে নদী পার হয়েছিলেন .
সেইন্ট তেরেসা (এভিলায় জন্ম) তিনি নাকি ভূমি থেকে ফুটখানেক উপরে উঠে ভেসে থাকতে পারতেন এবং প্রায় আধা ঘন্টা যাবত পারতেন।
খৃষ্টান ধর্মে যত গুলো লেভিটেশনের ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়, সেটা এখানে লিখতে গেলে আপনাদের যা বিরক্ত করছি তার মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তাই আগ্রহীদের জন্য ঠিকানা বলে দিলাম, ঢু মেরে আসবেন।
রেফারেন্স – ১০ ১১
• সনাতন ধর্ম- সনাতন ধর্মেও খৃষ্টান ধর্মের মত লেভিটেশনের ঘটনা আছে শত শত। সনাতন ধর্মালম্বীরা বিশ্বাস করে সনাতন গুরুরা দীর্ঘদিন সাধনার পর সিদ্ধি লাভ করে। তাদের বলে সিদ্ধ পুরুষ এবং তারা লেভিটেশন করার ক্ষমতা লাভ করে। সংস্কৃততে এই ক্ষমতাকে বলে লাঘুমান অথবা দারদউরা সিদ্ধি। ইয়োগানন্দর লেখা ‘অটোবায়োগ্রাফি অব এ ইয়োগি’ বইয়ে কিছু সিদ্ধ পুরুষের কথা বলা আছে, যারা সিদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে লেভিটেশনের ক্ষমতা অর্জন করেছেন।
Subbayah Pullavar নামের একজন সনাতনী যোগী পুরুষ ৬ জুন ১৯৩৬ সালে ১৫০ জন মানুষের সামনে প্রায় চার মিনিট পর্যন্ত শুন্যে ভেসে ছিলেন। এই সময় সে শুধু তার হাত দিয়ে একটা কাপড়াবৃত লাঠি আলতো ভাবে ধরে ছিলো।
এছাড়া সিদ্ধি সাই বাবা নামক আরেকজনের খোজ পাওয়া যায় যে ঘুমের সময় লেভিটেশনের একটা বর্ণনা ও সম্ভবত দাবী পেশ করেন। এছাড়াও মহাঋষী মহেষ নামক এক যোগীর Transcendental Meditation movement নামে একটা অর্গানাইজেশন আছে, যেখানে নানা মেডিটেশনাল প্রোগ্রাম হয়ে থাকে। যোগী উড়ণ বা (Yogic Flying) নামে একটি প্রোগ্রাম হয় সেখানে। তবে লেভিটেশন বা শূণ্যে ভেসে থাকার কোনো রেকর্ড সেখানে আছে কিনা জানা নেই।
• জুডাইজম- এখানে বালাম নামে এক প্রোফেট কথা জানা যায় যার লেভিটেশন করার ক্ষমতা ছিলো। এছাড়া আদি ইজরাইল এর রাজা সোলায়মান (ইসলামের নবী), তার নাকি হাওয়ায় ভর করে ভেসে বা উড়ে যাওয়ার ক্ষমতা ছিলো। ইসলাম ধর্মেও অনেকটা এরকম বর্ণনা পাওয়া যায়।
• ইসলাম ধর্ম- ইসলামে লেভিটেশন এর তেমন কোনো বর্ণনা বা ব্যাখ্যা কিছুই পাওয়া যায় না। তবে নবী সোলায়মান যে হাওয়ায় ভেসে ভেসে খুব দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারতেন তা বলা হয় কোরআনের ৩৪ নং সূরা ‘সাবা’ এর ১২ নং আয়াতে।
وَلِسُلَيْمَانَ الرِّيحَ غُدُوُّهَا شَهْرٌ وَرَوَاحُهَا شَهْرٌ وَأَسَلْنَا لَهُ عَيْنَ الْقِطْرِ وَمِنَ الْجِنِّ مَن يَعْمَلُ بَيْنَ يَدَيْهِ بِإِذْنِ رَبِّهِ وَمَن يَزِغْ مِنْهُمْ عَنْ أَمْرِنَا نُذِقْهُ مِنْ عَذَابِ السَّعِيرِ
আর আমি সোলায়মানের অধীন করেছিলাম বায়ুকে, যা সকালে এক মাসের পথ এবং বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আমি তার জন্যে গলিত তামার এক ঝরণা প্রবাহিত করেছিলাম। কতক জিন তার সামনে কাজ করত তার পালনকর্তার আদেশে। তাদের যে কেউ আমার আদেশ অমান্য করবে, আমি জ্বলন্ত অগ্নির-শাস্তি আস্বাদন করাব।


৩.০ ইতিহাস:
ইতিহাস ঠিকঠাক ভাবে ঘাটলে এমন অনেক মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা লেভিটেশন এর দাবীদার বা জনসম্মুখে লেভিটেশন করেছেন। প্রথমেই বলি কলিন এভান (Colin Evans) এর কথা। যিনি একজন আধ্যাত্মবাদী। এবং তিনি ১৯৩৭ সালে লন্ডন এর একটি পাবলিক পার্কে জনসম্মুখে লেভিটেশন করেন। এবং তার কিছুদিন পরেই তার লেভিটেশনের এর সিক্রেট উন্মোচন হয় এবং সে ফ্রড হিসেবে চিহ্নিত হয়।

ড্যনিয়েল ডুঙ্গলাস নামের আরেক আলোচিত লেভিটেটর এর খোজ পাওয়া যায় ইতিহাসে। Les Mystères de la science (বিজ্ঞান রহস্য) নামের একটি ফরাসি ম্যাগাজিন ড্যানিয়েল এর এই লেভিটেশনকে একটি লিথোগ্রাফ হিসেবে ব্যাখ্যা করে।

৪.০ স্পেশাল হেড:
স্পেশাল হেড একটি ছদ্ম নাম। এই নামটি ব্যবহার করে লেভিটেশনে আলোচিত ব্যক্তিটির আসল নাম ড্যানি ওলভার্টন (Danny Worverton)। ওনার ফেসবুক আইডি লিংক এখানে
স্পেশাল হেড ওনার স্টেজ নেম। প্রকৃতপক্ষে সে একজন এন্টার্টেইনার বা স্টেজ পারর্ফমার। তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন আমেরিকা গট ট্যালেন্ট এর সিজন ৮ এ লেভিটেশন স্টেজ পার্ফরমেন্স করে। আসলে ড্যানি ইন্ডিয়ার একটা ক্লাসিক কলা (এই কলা কিন্তু Banana নয় , এই কলা মানে Art) আমেরিকাতে খুব শৌল্পিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। তার এই কলা বা লেভিটেশনটি মূলত একধরনের যাদু কৌশল। সে এমেরিকা গট ট্যালেন্ট ছাড়াও Das Super Talent, Tengo Talento Much Talento, এবং Good Day New York শো তেও তার এই কৌশন প্রদর্শন করেছেন। স্পেশাল হেড আসলে মাল্টি ট্যালেন্টেড একটা লোক। অর্থাৎ সে শুধু লেভিটেশনের যাদু দেখিয়েই বেড়ান না। সে আরো অনেক ম্যাজিক শো করে থাকেন।

পাশাপাশি সে একজন মিউজিশিয়ান ও। তার মিউজিক গুলাও তার ম্যাজিক শোতেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া সে ইলেক্ট্রনিক ড্যান্স মিউজিক এর প্রোডিউসার ও। তিনি ২০০৭ সালে আফ্রিকা গিয়েছিলেন কিছু মিউজিক রেকর্ড করার জন্য। এবং আফ্রিকার গ্রামগুলো ঘুড়ে ঘুড়ে মিউজিক রেকর্ড ও করে ফেরেন তিনি। অবশেষে সাউথ আফ্রিকান ও কেনিয়ান গানের এলবামও প্রোডিউস করেন। দুটোই ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয়। Detached And Unplugged এবং Off the Map।
তার নিজের দুইটা সোলো এলবামও প্রকাশিত হয়েছে। একটা ২০১১ সালে এবং আরেকটা ২০১৪ সালে। Doing Back Flips on Top of Saguaros Naked এবং Levitation Music নামে।
এই কারণেই তাকে মাল্টিট্যালেন্টেড বলেছিলাম। যাই হোক, এমেরিকা গট ট্যালেন্ট এ পারর্ফম করার পর তার পারর্ফমেন্সের ভিডিও রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। টুইটারের অফিসিয়াল ট্রেন্ডিং স্ট্যাটিস্টিক অনুযায়ি ‘স্পেশাল হেড’ শব্দটা ঐ দিন টুইটারে সবচেয়ে বেশি টুইট হওয়া শব্দগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে ছিলো। তার ম্যাজিক পারর্ফমেন্সকে সবাই আধ্যাত্মিক বানিয়ে রেখেছিলো। আর ড্যনিও তার ফায়দা লুটছিলো খুব ভালো ভাবেই। স্পেশাল হেড কোয়াটার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিলেন, সে সুবাদে লাস ভেগাস এবং নিউ ইউর্কে এমেরিকা গট ট্যালেন্ট এর স্টেজে পারর্ফম করেছেন। সে কোয়াটার ফাইনালে যে পারর্ফমেন্সটা প্রদর্শন করে, তা ছিলো একটি কৃত্তিম পিরামিডের চূড়ায় বসে লেভিটেশন করা।
লিঙ্ক –
Audition in America’s got talent
Performance of las vegas

আর তার কোয়াটার ফাইনাল এর পারর্ফমেন্সে ঘটে বিড়ম্বনা। ধোয়া এবং অন্ধকারের মাঝেই তার পা এবং মাথা দেখা যায়, যা দ্বারা স্পষ্ট তার ট্রিক সবাই ধরে ফেলে। এবার সে যথেষ্ট ভোট না পাওয়ার কারণে আর সেমিফাইনালে যেতে পারে না। এখানে শেষ হয় এমেরিকা গট ট্যালেন্টে তার লেভিটেশন যাত্রা। এটা ছিলো এমেরিকা গট ট্যালেন্ট এর ৮১০ নম্বর এপিসোড। স্পেশাল হেড এর উদ্দেশ্যে Heidi Klum বলেন, “we could all see your special head.”
৫.০ যাদু ব্যাখ্যা:

শুণ্যে ভেসে থাকা বা লেভিটেশন এর ম্যাজিক প্রদর্শন এর জন্য যে বহুল আলোচিত ও জনপ্রিয় ম্যাজিক ট্রিক্স ব্যবহার করা হয়, তার নাম এরিয়েল সাসপেনশন।
অনেক প্রসিদ্ধ যাদুর মত এই যাদুরও উদ্ভব ভারতবর্ষে। টমাস ফ্রস্ট নামের এক ব্রিটিশ লেখককে এক ভারতীয় ব্রাহ্মণ ১৮২৮ সালে এই জাদু দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। পরে মাদ্রাজেও ওই একই জাদু দেখতে পান টমাস। কোনো ক্ষেত্রেই অবশ্য তাঁকে জাদুর রহস্য বলতে রাজি হননি জাদুকররা। ইউরোপে প্রথম এই জাদু দেখান রহস্যময় জাদুকর চিং লাও। পরবর্তীকালে রবার্ট হুডিনি এ রকম একই জাদু দেখিয়ে বেশ নাম কামান। অবশ্য রবার্টের ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম ছিল। তিনি মাটির সমান্তরালে একটি লাঠি স্পর্শ করে শুয়ে থাকতেন। ভারতের জাদুকর পিসি সরকারও এই অ্যারিয়াল সাসপেনশন দেখিয়ে বেশ হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। বাস্তবে এই শূন্যে ভেসে থাকার পেছনের রহস্যটি অতি মামুলি। যে বাঁশ বা লাঠিটা ধরে জাদুকর ভেসে থাকেন, সেটি সাধারণত হয় লোহা বা ইস্পাতে নির্মিত অত্যন্ত মজবুত একটি রড। এর নিচের অংশ স্টেজের সঙ্গে শক্ত করে আটকানো থাকে। আর ওপরের অংশে থাকে জাদুকরের বসার মতো প্রশস্ত একটি পাটাতন। জাদুকর স্রেফ পাটাতনের ওপর বসে লাঠিটা স্পর্শ করে থাকেন। জাদুকরের পরনে থাকা লম্বা আলখাল্লা বা পোশাক পাটাতনটিকে পুরোপুরি ঢেকে রাখে। তাই খালি চোখে মনে হয়, শূন্যে ভেসে রয়েছেন।

তবে শূন্যে ভাসার এই জাদুর সঙ্গে লেভিটেশনকে গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। লেভিটেশন জাদুর ক্ষেত্রে জাদুকর কোনো লাঠি বা অনুরূপ বস্তু ছাড়াই মাটির কয়েক ইঞ্চি ওপরে উঠে ভাসতে পারেন, তবে সীমিত সময়ের জন্য। আদতে এই লেভিটেশন পায়ের কারসাজি ছাড়া কিছুই নয়। দর্শকের দৃষ্টির সঙ্গে একটি বিশেষ কোণ সৃষ্টি করে জাদুকররা এমনভাবে দাঁড়ান, যাতে মনে হয় তিনি শূন্যে দাঁড়িয়ে আছেন।
প্রফেশনাল ম্যাজিশিয়ানদের বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি লেভিটেশন ট্রিক ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি ।
প্রথম উপায়
এই ট্রিকটায় সামান্য কিছু অবলম্বনের উপরে শরীরটা দাঁড়িয়ে থাকে ।সেই সামান্য অবলম্বন (লাঠি/কাঠি /বাশ ইত্যাদি)টা চেষ্টা করা হয় দর্শকের চোখের সামনে থেকে যতটা সম্ভব আড়াল করে রাখতে । পিকে নামক হিন্দি সিনেমায় দেখা যায় একজন সন্যাসী একটা লাঠির উপর হাত দিয়ে মাটি থেকে ৫ ফুট উপরে শূন্যে স্থির হয়ে ভেসে রয়েছেন ।তার সারা শরীরে গেরুয়া রঙের আলখাল্লা জড়ানো ।একটা এক্সিডেন্টে তার গেরুয়া আলখাল্লা খুলে যায় ।দেখা যায়,হাতের লাঠির সাথে বিশাল বড় একটা স্টিলের সিট এটাচড ।সেই সিটের উপরেই সন্যাসী বসে থাকেন। লাঠির শেষ মাথা থেকে লুকানো সিটের পুরোটা অংশ গেরুয়া আলখাল্লা দিয়ে ঢাকা থাকে ,বাইরে থেকে দেখা যায়না ।

ময়মনসিংহে জাদু শিবলি নামের এক লোক তার লেভিটেশনের ছবি ফেসবুকে দিয়ে কিছুটা আলোড়ন তুলেছেন ।ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনি একটা বিলের ভেতরে  কোনো কিছুর অবলম্বন ছাড়াই শূন্যে ভেসে আছেন ।

এই সিকুয়েন্সের বেশ কয়েকটা ছবি তিনি ফেসবুকে আপলোড দিয়েছেন । মজার ব্যাপার হল, তাদের মধ্যকার একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে শিবলি সাহেবের নিচে একটু পেছনে একটা বাশ রয়েছে । সম্ভবত বাশের সাথে কোন এক ধরনের সিট বসানো আছে,সেই সিটের উপরেই শিবলি বসে থাকে ।

সম্ভবত অন্যান্য ছবিগুলাতে শিবলি সাহেব এই বাশটাকে ফটোশপ করে মুছে দিয়েছেন । ফলে তাকে দেখে মনে হচ্ছে যে তিনি কোনো কিছুর অবলম্বন ছাড়াই শূন্যে ভেসে রয়েছেন ।
খোলা বিলের তুলনায় কোনো বদ্ধ ঘরে এই ম্যাজিকটা দেখালে সেটা বেশি এফেক্টিভ হবে ।পীর ফকির সাধু সন্যাসীরা এই কাজ বেশি করেন । তারা কোনো একটা দেয়ালের কাছাকাছি বসেন ।দেয়ালে কয়েক ফুট উচুতে একটা কাঠ/স্টিলের সিট কিংবা রড বসানো থাকে ।পীর সাহেব সেই সিটের উপরে বসে থাকেন ।সাধারনত রুমের আলো কম থাকে ।ব্যাকগ্রাউন্ড দেওয়ালের সাথে সিটের রঙ একই রকম থাকে, এমনকি পীরের গায়ের কাপড়ের রঙ ও একই রকম হয়ে থাকে। এর ফলে পিছনের সিট কিংবা রড চোখে পড়েনা । ভক্তরা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখেন যে কিভাবে পীর সাহেব শূন্যে ভেসে আছেন ।


ফেসবুকে শাকিল নামের এক ছেলে এইভাবে নিজের ছবি আপলোড করেছেন । অবশ্য ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে এটা জাস্ট ফটোশপ ও হতে পারে ।
দ্বিতীয় উপায়
এই পদ্ধতিতে কোনো বদ্ধ রুমের ভেতরে চুম্বকের সাহায্যে মানুষের শরীরকে শূন্যে ভাসানো হয় । ছোটোবেলায় বিটিভিতে ঈদের সময় সার্কাস দেখাতো ।সার্কাসে মূল জাদুকরের সাথে যে সাহায্যকারী মেয়েরা থাকত,তাদেরকে যতটা সম্ভব কম কাপড় চোপড় পরিয়ে বিভিন্ন ম্যাজিক প্রদর্শন করা হত ।মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই লেভিটেশনের ম্যাজিকে যে মেয়েটাকে আনা হত,সেই মেয়েটা অনেক বেশি কাপড় চোপড় পরেই আসতো ।মেয়েটাকে জাদুকর একটা খাটের উপর শোয়াতো ।তারপর তার মুখের উপর হাত পা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জাদুর কাঠি নাড়িয়ে অনেক মন্ত্র উচ্চারন করতো জাদুকর ।একসময় দেখা যেত মেয়েটার বডি আস্তে আস্তে খাট ছেড়ে উপরে উঠে যাচ্ছে ।রুমের মাঝামাঝি এসে মেয়েটার বডি স্থির হয়ে যেত ।কিছুক্ষন পরে যাদুকর আবার কিছু ভং চং করে মেয়েটাকে নিচেয় নামিয়ে আনতো ।


কাহিনী হচ্ছে ,মেয়েটার কাপড় চোপড়ের তলে অনেক গুলা চুম্বক রাখা হত (প্রাকৃতিক চুম্বক) । রুমের পাশের দেয়ালে,ফ্লোরে এবং সিলিং এ ইলেক্ট্রিক চুম্বক রাখা থাকত ।মেয়েটাকে খাটে শোয়ানোর পরে অন্য চুম্বকগুলাতে কারেন্ট চালু করে দিয়ে চুম্বকগুলাকে জ্যান্ত করা হত ।আস্তে আস্তে চুম্বকের শক্তি বাড়ানো হত ।চুম্বকগুলার আকর্ষনে মেয়েটার শরীর (অর্থাৎ মেয়েটার শরীরে লাগানো চুম্বক)আস্তে আস্তে রুমের মাঝখানে এসে স্থির হয়ে যেত । রুমের মাঝখানে থাকার কারন হচ্ছে ,এই পজিশনে সিলিং এর চুম্বক আর ফ্লোরের চুম্বকের আকর্ষন সমান হয়ে যায় । যখন নিচে নামার সময় হয়,তখন চুম্বকের ক্ষমতা আস্তে আস্তে কমানো হতে থাকে ।মেয়েটের খাটেও কখনো কখনো চুম্বক লাগানো হয়ে থাকে । এইসব কারনে মেয়েটা আস্তে আস্তে নিচে নেমে আবার খাটের উপরে শুয়ে পড়ে ।ম্যাজিক শেষ হয় .

এই একই ম্যাজিক আগের নিয়মেও দেখানো যায় ।অর্থাৎ চুম্বক ব্যবহার না করে একটা প্লাটফর্মে করে মেয়েটাকে শূন্যে ভাসানো হয় ।যদি কোনো দেয়ালের সামনে রেখে এইভাবে লেভিটেশন করা হয়,ক্যামেরা শুধুমাত্র একদিক থেকেই ছবি তোলে,দেয়ালের কিনারায় কখনো না দেখায়,তাহলে বুঝবেন এখানে প্লাটফর্মের ব্যবহার হয়েছে ।আর যদি রুমের মাঝখানে লেভিটেশন ঘটে,ক্যামেরা সব দিক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায়,তাহলে বুঝবেন এটা চুম্বকের ব্যবহার ।
প্রাসঙ্গিক কয়েকটি ইউটিব ভিডিও লিংক দেখলে বিষয়টা ক্লিয়ার হবে ।
  ৩
তৃতীয় উপায়
এই পদ্ধতিতে সূক্ষ তারের সাহায্যে জাদুকরের বডি ঝুলানো হয় শূন্য থেকে ।ক্যামেরা সেই এঙ্গেল থেকেই ছবি তোলে,যে এঙ্গেল থেকে সূক্ষ তারগুলো দেখা যায়না ,সূক্ষ তারগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়
অনেক ম্যাজিশিয়ান অনেক ম্যাজিকের ক্ষেত্রেই সূক্ষ তার ইউজ করেন । যেমন –জাদুর লাঠির খেলার ক্ষেত্রে জাদুকর হাত থেকে ১ ফুট দূরে লাঠিকে রেখেই জাস্ট হাতের ইশারায় লাঠিকে বিভিন্নভাবে নাচাতে পারেন ।আসল কাহিনী হচ্ছে জাদুকরের হাতের সাথে এই ধরনের সূক্ষ তার লাগানো থাকে ।সেই তারের সাহায্যেই জাদিকর লাঠিকে নাচান ।কামেরায় সেই এঙ্গেল থেকেই ছবি তোলা হয় যেখান থেকে সূক্ষ তার বোঝা যাবেনা
শূন্যে ভেসে থাকার ব্যাপারেও সেই একই টেকনোলজি ইউজ করা হয় ।ম্যাজিকটা আকর্ষনীয় হয় তখনই যখন আশেপাশে তার ঝুলানোর দৃষ্টিগ্রায্য কোনো জায়গা না থাকে ।দেখে মনে হয় একেবারে কোন সাহায্য ছাড়াই লোকটা শুন্যে ঝুলে রয়েছে । তবে এখানেও রয়েছে প্রায় অদৃশ্য তারের কারসাজি ।অনেক উচু ক্রেন থেকে অদৃশ্য সুতা ঝুলালে কারো চোখে ধরা পড়ার কথা নয় ।এটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে,যদি ২ টা ক্রেন কিংবা উচু টাওয়ার থেকে অদৃশ্য সুতা ঝুলিয়ে সমান্তরাল লাইন বানানো হয় (যেভাবে রাস্তায় ২ টা খাম্বার মাঝখানে তার ঝুলানো হয়)নেক্সট ওই তারের সাথে নতুন তার ঝুলানো হয়,সেই তারের সাথে জাদুকরের দেহ বাধা হয় ।বিশেষ এঙ্গেল থেকে দেখলে কিংবা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুললে/ভিডিও করলে এই প্রায় অদৃশ্য সুতা দেখা অসম্ভব ।এভাবেই জাদুকর অদৃশ্য হয়ে শূন্যে ভেসে থাকে ।
ইউটিউব ভিডিও দেখলে বিষয়টা আরো ভালভাবে বুঝতে পারবেন ।