Saturday, August 6, 2016

স্রষ্টার অনস্তিত্বের সম্ভাবনা কতটুকু ?

1.    এ মহা বিশ্বের স্রষ্টা আছেন কি নেই- এই প্রশ্নের বিচার করার আগে প্রথমেই বলে নেই যে, প্রমাণ বলতে চাক্ষুস প্রমান বোঝালে তা নেই এবং তা থাকতেও পারে না। তিনি যদি থেকে থাকেন তবে কোনদিন তিনি এসে আমাদের সামনে দাড়িয়ে বলেন নি যে-এই যে আমি তোমাদের স্রষ্টা এবং নি:সন্দেহে বলা যায় যে, কোনদিন তা দাঁড়াবেন না।
কারণ, তাহলে মানুষ নামের এই বিশেষ সৃষ্টিটি অর্থহীন হয়ে যেত, আমরা গাছ-পাথর, হাতি-ঘোড়ার মত শুধু আরেকটি সৃষ্টি হয়ে যেতাম। দ্বিতীয়ত : আমাদের বিশ্বাস জন্মানই যদি কথা হয়ে থাকে তবেও তাকে নিজে দেখা দিয়ে চাক্ষুস প্রমাণ দেয়ার দরকার নেই। কারণ তিনি সর্বশক্তিমান স্রষ্টা হয়ে থাকলে তিনি ইচ্ছা করলেই তো পৃথিবীর সমস্ত মানুষ এই মুহুর্তে তাকে না দেখেই বিশ্বাস করবে। (সূরা আল-আনআম:৩৫, সূরা ইউনুস:৯৯, সূরা নাহল: ০৯)। তাকে সামনে এসে দাড়াবার প্রয়োজনই হবে না। এতে প্রমাণ হচ্ছে যে, স্রষ্টা যদি থেকে থাকেন তবে তিনি নিজে দেখা দিয়ে বা ইচ্ছে করে আমাদের মনে তার অস্তিত্বের বিশ্বাস এনে দিতেু চান না। তিনি দেখতে চান তিনি যে একটি মাত্র সৃষ্টিকে বুদ্ধি, যুক্তির শক্তি, উপলব্ধির শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করলেন সেটা অর্থাৎ মানুষ তার ঐ শক্তিগুলো দিয়ে চাক্ষুস নয়, তাকে উপলব্ধি করে কিনা। এ জন্য তিনি লক্ষ কোটি নিদর্শন দিয়েছেন। মানুষকে এ যুক্তি বোঝার শক্তি দিয়েছেন যে, ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকবেই। এখন আমাদের দেখতে হবে ধোয়া অর্থাৎ স্রষ্টার অস্তিত্বের এ ধরনের প্রমাণ আছে কিনা।
মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ব বিষয়ে বিজ্ঞান এখনো কোন চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছতে পারে নি। Big bang (প্রচন্ড বিষ্ফোরণ), Steady State (স্থিতাবস্থা), এবং Oscillating (স্পন্দনশীল) নিয়ে মতবিরোধ যাই থাকুক একথা অনস্বীকার্য যে, সম্ভাবনা মাত্র দুটির মধ্যেই সিমাবদ্ধ। হয় মহাবিশ্ব নিজে নিজে আচম্বিত হয়ে গেছে (Accidental) নয়ত এটা পরিকল্পিত সৃষ্টি (Planned)। তৃতীয় কোন সম্ভাবনা নেই।
এখন দেখা যাক আচম্বিতের ধারণা। এই থিওরী মতে মহাশুন্য শুধু গ্যাস আর ধুলিকণা (Dust) দিয়ে পূর্ণ ছিল। এই গ্যাস আর ধুলিকণা কোথা থেকে এল তা কিন্তু তারা বলাতে পারে না। শুধু বলে আগে থেকেই ছিল- যদিও স্রষ্টা ছাড়া এগুলোর সৃষ্টি কেমন করে হল তার কিন্তু কোন উত্তর নেই। যাই হোক এই গ্যাস আর ধুলিকনার উৎপাদন দিয়েই মহাবিশ্বের সৃষ্টি আরম্ভ হল। ক্রমে ক্রমে কোটি কোটি অর্বুদ, অর্বুদ বছর ধরে নানা রকম আচম্বিত ঘটনার মধ্য দিয়ে আজকের এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। কিভাবে কি কি ঘটনার ভিতর দিয়ে আজকের অবস্থানে পৌছল তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে নানা মতবিরোধ, নানা থিওরী বিদ্যমান। তো এই আচম্বিতের থিউরী মতে অর্বুদ অর্বুদ বছর আগে থেকে আজ পর্যন্ত সৃষ্টিতে যা কিছু হয়ে আসছে তাতে কোন পরিকল্পনা (Plan) নেই। কারন স্রষ্টাইতো নেই-সব হয়েছে এবং হচ্ছে আচম্বিত। পরিকল্পনার কথা আসলেইতো স্রষ্টা এসে যান। আরেকটা কথা হচ্ছে-এই যে আচম্বিত ঘটনাগুলো ঘটেছে এবং ঘটছে এগুলো যেখানে খুশি, যখন খুশি ভাবে ঘটেনি। এগুলোকে ঘটতে হয়েছে ধারাবাহিক ভাবে (In sequence)। একটা আচম্বিত ঘটনা যখন ঘটেছে বলে মানুষ ও প্রাণীজগৎ বেচে আছে, ঐ ঘটনাটা তখন না ঘটে যদি তার আগে বা পরে ঘটতো তবে কোন প্রাণী পৃথিবীতে থাকত না, কোন প্রানীর অস্তিত্বে আসাই সম্ভব হত না। কাজেই অচম্বিত ঘটনা ঘটেছে এবং ধারাবাহিক ভাবেই ঘটেছে। এরূপ ঘটনাগুলোর (Accident) সংখ্যা কোটি, কোটি-অগনিত। এবার দেখা যাক এটা কতটুকু সম্ভব।
আমরা ঠিক একই আকারের দশটি গোল চাকতি নেই এবং এগুলোর উপর এক থেকে দশ পর্যন্ত সংখ্যা লিখি। এ চাকতিগুলো হল সেই কোটি কোটি আচম্বিত ঘটনাগুলোর মাত্র দশটি প্রতীক এবং সংখ্যাগুলো হল ওগুলোর ধারাবাহিকতা (Sequence)- যার কথা বলে এলাম। এই দশটি নাম্বারের দশটি চাকতি উলটপালট করে পকেটে ঢুকালাম। এবার পকেট থেকে একটি চাকতি বের করলাম। এ চাকতিটি এক থেকে দশ নাম্বারের যে কোনটি হতে পারে। এবং প্রথম বারেই ১ নাম্বার ওয়ালা চাকতি বের হবার সম্ভাবনা দশের মধ্যে এক। (১ : ১০)। এবার এটাকে পকেটে ঢুকিয়ে আবার একটা চাকতি বের করলাম। এবার ২ নাম্বার ওয়ালা চাকতিটি বের হবার সম্ভাবনা একশর মধ্যে এক। অর্থাৎ আমরা যদি একশ বার পকেট থেকে একটা একটা করে চাকতি বের করি তাহলে এক নাম্বার উঠবার ঠিক পরের বারে দুই নাম্বার ওয়ালা চাকতিটি উঠে আসার সম্ভাবনা থাকবে একশ বারের মধ্যে একবার। অর্থাৎ (১ : ১০ x ১০ = ১০০)। ঠিক তেমনি ভাবে পরের বারে তিন নাম্বারটা উটে আসার সম্ভাবনা থাকবে এক হাজার বারের মেধ্যে একবার। অর্থাৎ (১ : ১০০ x ১০ = ১০০০)। অর্থাৎ আমরা যদি দশবার পকেট থেকে চাকতি বের করি তাহলে এক থেকে ধারাবাহিক ভাবে দশ পর্যন্ত সিরিয়াল ভাবে বের হবার সম্ভাবনা হল এক হাজার কোটি বারের মধ্যে একবার (১ : ১০০০০০০০০০০)।
আমরা কোটি কোটি নয়, অসংখ্য অগনিত আচম্বিত ঘটনার মধ্যে মাত্র দশটির প্রতীক নিয়েছিলাম। তাতেই এই সংখ্যার সম্ভাবনা পাচ্ছি। তাহলে কোটি কোটি নিলে দেখা যাবে সৃষ্টিজগৎ আচম্বিত ধারাবাহিক ভাবে সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা অসীম সংখ্যার মধ্যে একবার অর্থাৎ অসম্ভব। এখন দুটো সম্ভাবনার মধ্যে একটি অসম্ভব হলে দ্বিতীয় থিওরী অর্থাৎ “সৃষ্টি জগৎ পরিকল্পিত ভাবে সৃষ্টি হয়েছে” মেনে নেয়া ছায়া তৃতীয় কোন পন্থা নেই।
আর এ হিসেব ঠিক উল্টো দিক থেকেও করা যায়। অর্থৎ যে কোটি কোটি আচম্বিত ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটে আসার দরুন আমরা আজ বর্তমান যে অবস্থানে এসে পৌছেছি; ঠিক তেমনি কোটি কোটি অন্য রকম আচম্বিত ঘটনা এই মহাকালের মধ্যে ঘটতে পারত। যার একটি মাত্র ঘটনাও সমস্ত সৃষ্টি জগৎ লন্ড ভন্ড করে দিত। কিন্তু তেমন একটি মাত্র ঘটনাও ঘটেনি। যেমন ধরুন, উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর জমানো বরফ যদি গলে যেত তবে বিজ্ঞানীদের মতে পাহাড়-পর্বত ছাড়া সমগ্র পৃথিবী পানির নীচে ডুবে যাবে। যা ঘটতে পারত কিন্তু ঘটেনি।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, অংকের হিসেবে (Mathematics Figure of chance) স্রষ্টার প্রমান পাওয়া যাচ্ছে। এবার আসি নাস্তিকভাই দের এ প্রসঙ্গে যে, মানুষকে ভাল পথে পরিচালনার জন্য মানুষ নিজেই স্রষ্টার ধারনাকে সৃষ্টি করেছে।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নাই যে, স্রষ্টার ধারণা আজকের নয়। ইতিহাসের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়েই যখন থেকে মানুষ সম্বন্ধে জানা যায় তখন থেকেই মানুষ একজন স্রষ্টার ব্যাপারে সচেতন ছিল। প্রত্নতাত্বিকরা মাটি খুড়ে হাজার হাজার বছর আগের যে সব জনবসতির সন্ধান পেয়েছেন, তাতে দেখা যায় সর্বত্রই ধর্মের অর্থাৎ স্রষ্টার কোন না কোন রকমের ধারণা ছিল। বিভিন্ন মহাদেশে, পৃথিবীর যেখানেই কোন প্রাক-ঐতিহাসিক জনপদের সন্ধান পাওয়া গেছে সেখানেই পাওয়া গেছে ধর্মের চিহৃ। অর্থৎ স্রষ্টা সম্বন্ধে একটা চেতনা পৃথিবীময় ছড়িয়ে ছিল এটা সন্দেহাতীত। পৃথিবীর প্রধান ভূ-ভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়াতেও যেসব প্রাক-ঐতিহাসিক মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে সেসবগুলোর চিত্র ও এক। যখন এ সব বিভিন্ন জনগোষ্ঠির মধ্যে কোন সংযোগ বা পরিচিতি ছিলনা, ভাষা-সংস্কৃতি সব কিছুই ছিল ভিন্ন, একে অন্নের অস্তিত্ব পর্যন্ত জানত না, তখন ঐ একটি ব্যাপারে সবাই সচেতন ছিল এটাও কি বিজ্ঞানীদের সেই আচম্বিত ঘটনা ? পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এ জনগোষ্ঠিগুলো যে শুধু স্রষ্টার ব্যাপারে সচেতন ছিল তাই নয়, তারা ঐ স্রষ্টার গুণাবলী বা সিফাতের ব্যাপারেও ঐকমত্য ছিল। অর্থৎ স্রষ্টা মহা শক্তিশালী, সর্বব্যাপী, দয়ালু, যা ইচ্ছা তা করতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে দেখা যাচ্ছে, মানুষ যদি স্রষ্টার ধারণাকে সৃষ্টি করে থাকে তাহলে প্রাক-ঐতিহাসিক যুগে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী বিচ্ছিন্ন ও অকল্পনীয় বিভিন্ন স্থানে মানুষ একটা জুজুর ভয় সৃষ্টি করল, যে জুজুটার গুণাবলীও অকষ্মাৎ ভাবে সকলের কাছে একি রকম ছিল। অর্থাৎ ঐ জুজুটা সর্বশক্তিমান, সবত্র বিরাজমান, সর্বজ্ঞানী, অতীব ক্ষমাশীল, দয়াময় ইত্যাদি। এবার দেখা যাক এ আচম্বিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কতটুকু।
পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তির অস্তিত্ব এখন একটা প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং এ মধ্যাকর্ষণ শক্তি যে পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই আছে তাও প্রতিষ্ঠিত সত্য। পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এটা এক মুহুর্তে জন্যেও থামেনি তাহলে পৃথিবী অচল হয়ে যেত। কিন্তু মানুষ এই সর্বব্যাপি শক্তির কথা জানতে পারল এই কিছু দিন আগে। কেন ? এতদিন কি মানুষ তার মগজ ব্যাবহার করেনি ? নিশ্চয়ই করেছে। নিউটনের মধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কারের আগেই মানুষ বহু কিছু আবিষ্কার করেছে। পিরামিডের মত কালজয়ী সৌধ তৈরী করেছে, কিন্তু যে শক্তির অধীনে থেকে তার জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত অতিবাহিত হচ্ছে, যে শক্তি এক মুহুর্ত বিরতি দিলে সে পৃথিবীর বহির্মুখ, অপকেন্দ্রিক শক্তির ফলে ছিটকে মহাশুন্যে নিক্ষিপ্ত হবে সে শক্তি সম্বন্ধে সে ছিল সম্পূর্ণ অজ্ঞ-মাত্র কয়েক বছর আগ পর্যন্ত।
যেটা নেই (স্রষ্টা) তাকে মানুষ সেই প্রাক-ঐতিহাসিক কাল থেকে কল্পনা করে নিল, শুধু কল্পনাই নয় বরং সেটা কিরকম তার বিস্তৃত বিবরণ পৃথিবীর এধার থেকে ওধার পর্যন্ত বিশ্বাস করে নিল-কিন্তু যেটা আছে (মধ্যাকর্ষণ) সেটাকে মানুষ হাজার হাজার বছরেও আবিষ্কার করতে পারলো না ? আসল কথা হচ্ছে স্রষ্টা তার প্রেরিতদের দিয়ে সেই প্রথম মানুষটি থেকেই তার অস্তিত্ব ও গুণাবলী অর্থাৎ তিনি কেমন তা মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন বলেই মানুষ তার সম্পর্কে জানে, আর মধ্যাকর্ষণ সম্বন্ধে নিউটনর আগে কাউকে জানাননি বলেই মানুষ তা জানতে পারেনি। স্রষ্টা যদি মানুষ সৃষ্টি করে তাকে পৃথিবীতে ছেড়ে দিয়েই ক্ষান্ত হতেন, প্রেরিতদের দিয়ে নিজের সম্বন্ধে কিছু না জানাতেন তবে নি:সন্দেহে বলা যায় যে, মানুষ আজও তার সম্বন্ধে কিছুই জানত না কিংবা জানলেও তার গুণাবলী ও সিফাতের ব্যাপারে পুরোপুরি অজ্ঞই থেকে যেত।
এখন প্রশ্ন হল আমরা তার অস্তিত্বের প্রমাণ পেলাম, কিন্তু আমরা কি তাকে ধারণা করতে পারি ? এর উত্তরে তিনি নিজে বলেছেন- না, তোমরা তা পার না। (সূরা আল-আনাম:১০৩)। কারন আমরা সৃষ্ট, আমাদের শক্তি সীমিত। ধারণার শক্তিও সীমিত। স্রষ্টা অসীম। স্রষ্টাকে কেন, এই মহা সৃষ্টির একটা সামান্য অংশকেও আমরা ধারণা করতে পারি না। যেখানে সৃষ্টির অসীম Space এবং অসীম Time এর বিন্দুমাত্র আমরা ধারণায় আনতে অক্ষম সেখানে অসীম স্রষ্টার ধারণা করতে আমরা কি করে সক্ষম হব ?

2.    Niloy 
”আমাদের বিশ্বাস জন্মানই যদি কথা হয়ে থাকে তবেও তাকে নিজে দেখা দিয়ে চাক্ষুস প্রমাণ দেয়ার দরকার নেই। কারণ তিনি সর্বশক্তিমান স্রষ্টা হয়ে থাকলে তিনি ইচ্ছা করলেই তো পৃথিবীর সমস্ত মানুষ এই মুহুর্তে তাকে না দেখেই বিশ্বাস করবে।”
ভাই যদি তাই হয় তাহলে যুগে যুগে নবী রাসুল পাঠানোর কি প্রয়োজন ছিল?
” স্রষ্টা যদি মানুষ সৃষ্টি করে তাকে পৃথিবীতে ছেড়ে দিয়েই ক্ষান্ত হতেন, প্রেরিতদের দিয়ে নিজের সম্বন্ধে কিছু না জানাতেন তবে নি:সন্দেহে বলা যায় যে, মানুষ আজও তার সম্বন্ধে কিছুই জানত না কিংবা জানলেও তার গুণাবলী ও সিফাতের ব্যাপারে পুরোপুরি অজ্ঞই থেকে যেত।”
নিজেকে জানানোর জন্যে প্রেরিত পুরুষ এর কি প্রয়োজন ছিল? স্রষ্টা চাইলে মানুষ কে সৃষ্টি করার সময় ই তার মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে দিতে পারতেন , সেই ক্ষেত্রে প্রেরিত দের সত্যতা নিয়ে যে বিতর্ক তাও হত না।
”পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এ জনগোষ্ঠিগুলো যে শুধু স্রষ্টার ব্যাপারে সচেতন ছিল তাই নয়, তারা ঐ স্রষ্টার গুণাবলী বা সিফাতের ব্যাপারেও ঐকমত্য ছিল।”
আপনার লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সকল ধর্ম ই এক ঈশ্বর প্রদত্ত।সেই জন্যেই সেগুলির মধ্যে এত মিল । যদি তাই হয় তাহলে এক ধর্ম আরেক ধর্ম কে মিথ্যা বলে কেন?ধর্ম গ্রন্থ গুলিই বা কেন একে অপরের বিরোধিতা করে?আর পৃথিবীর এত এত ধর্মের মধ্যে কোনটা সঠিক ঈশ্বর প্রদত্ত ধর্ম তাই বা কি করে বুঝব?
”এখন প্রশ্ন হল আমরা তার অস্তিত্বের প্রমাণ পেলাম, কিন্তু আমরা কি তাকে ধারণা করতে পারি ? এর উত্তরে তিনি নিজে বলেছেন- না, তোমরা তা পার না। (সূরা আল-আনাম:১০৩)। কারন আমরা সৃষ্ট, আমাদের শক্তি সীমিত। ধারণার শক্তিও সীমিত। স্রষ্টা অসীম। স্রষ্টাকে কেন, এই মহা সৃষ্টির একটা সামান্য অংশকেও আমরা ধারণা করতে পারি না। যেখানে সৃষ্টির অসীম Space এবং অসীম Time এর বিন্দুমাত্র আমরা ধারণায় আনতে অক্ষম সেখানে অসীম স্রষ্টার ধারণা করতে আমরা কি করে সক্ষম হব ?”
যে স্রষ্টাকে আমরা আমাদের সীমিত জ্ঞান দ্বারা ধারণা ই করতে পারব না তাকে কিভাবে বিশ্বাস করব?

3.    কায়সার 
ভাই আমি ত এতকিসু বুঝি না ।। আমি কি বলব ভাই ?? শুধু একটা কথাই বুঝি যে , আমরা বাঙালি আমরা সবাই একসাথে আনন্দে থাকতে চাই :D
o    একসাথে থাকার পরিবেশ সৃষ্টি তো করা চাই। যদি সবাইকে ভাগ ভাগ করে ফেলেন তাহলে সেটা কি করে সম্ভব? তাই আগে সাপ্রদায়িকতা, কুসংস্কার দূর করতে হবে। আপ টু ডেট হতে হবে।

4.    সাগর 
আমার ইসলাম সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন আছে দয়া করে উত্তর দিবেন আসা করি
১। ফেরাউন এর লাশ নাকি কিছু দিন আগে পাওয়া গেছে যদি তাই সত্যি হয় তবে ইসলাম সত্যি নয় কি ?
২। বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্ধে মোহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে উল্লেখ আছে তাহলে এটা কি করে সম্ভব ? এবং তার মা বাবা এর নাম ও উল্লেখ আছে হিন্দু ধর্ম গ্রন্ধ বেদ এ এটা কি সত্যি ?
আমি সত্যি জানতে চাই দয়া করে সত্যি জানাবেন ।
o    মুক্ত বিবেক 
ফেরাউনের লাশে পচন না ধরার ব্যাপারে সংক্ষেপে বলা যায়, ” পচনরোধ তাপমাত্রা বলে একটা বিষয় আছে। তাই সেটা হতে পারে পানির নিচে, ফ্রিজের মধ্যে এমনকি মাটির নিচে। এই পচনরোধ তাপমাত্রায় মানুষের মরদেহ থাকলে তা পচে না। এক্ষেত্রে বায়ুর তাপমাত্রা -১২ ডিগ্রি হলে লাশ পচবে না। ২য়ত জীবের দেহে থেকে ব্যাণ বায়ু নষ্ট হয়ে গেলে তা আর পচে না। যেমন- সুতিকা রোগীর ব্যাণ বায়ু জীবত থাকতেই নষ্ট হয়ে যায়, তাই তার লাশ যেখানেই রাখা হোক আর পচবে না।
এসব কারণের আওতায় পড়লে লাশ পচবে না। তাই উক্ত ব্যাক্তি যত উৎকৃষ্ট বা নিকৃষ্ট যাই হোক না কেন।
ভাল মানুষের লাশকে মানুষ যখন অক্ষত দেখে তখন একথা বলে যে —
“নবিজি বলেছিলেন …… আল্লাহ পাকের পছন্দনীয় ব্যক্তিদের দেহ কখনো পচবে না, গলবে না, প্রাকৃতিক পচন প্রণালী কাজ করবে না।”
কিন্তু আমরা তো দেখতেই পাচ্ছি নিকৃষ্ট মানুষের লাশও নষ্ট হয় নি। তাহলে এটা আচার্য কোন বিষয়ই নয় বা মোজেজা জাতীয় কিছুও নয়।

o    মুক্ত বিবেক 
২য় প্রশ্ন ছিল,
বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্ধে মোহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে উল্লেখ আছে তাহলে এটা কি করে সম্ভব ? এবং তার মা বাবা এর নাম ও উল্লেখ আছে হিন্দু ধর্ম গ্রন্ধ বেদ এ এটা কি সত্যি ?
হযরত মুহাম্মদের আগমনী বার্তা কি ইহুদী-খ্রিস্টানদের কিতাবে উল্লেখ আছে?

ছোটবেলায় বড়দের মুখে শুনতাম গৌতম বুদ্ধ তার শিষ্যদের কাছে হযরত মুহাম্মদের আগমনের সংবাদ পৌঁছে দিয়ে বলেছিলেন তিনি যা করতে বলবেন তা শুনতে কিন্তু বুদ্ধের মৃত্যুর পরে শিষ্যরা সেটা না করে নিজেদের মত ধর্ম চালাতে থাকে। …এখন জানি গৌতম বুদ্ধ ঈশ্বর, স্বর্গ, নরক বিবর্জিত একটি নাস্তিক্য মতবাদ প্রচার করেছিলেন। উনার “ধর্মে” ঈশ্বর পরকালের কোন স্থান নেই। সেখানে কেমন করে মুহাম্মদের আগমন বার্তা তিনি প্রচার করেন এখন ভাবলে হাসিই পায়। একজন সাধারণ মুসলিম জ্ঞান হবার পর থেকে কিছু কমন বিষয়ে বিশ্বাস রাখে যেমন- শুধুমাত্র মুসলিমরাই বেহেস্তে (এখন জান্নাত বলার চর্চা দেখছি!) যাবে, বাকী অমুসলিমরা সব দোযগে প্রবেশ করবে। হযরত মুহাম্মদ সর্বশ্রেষ্ঠ এবং উনার আগমন বার্তা দুনিয়ার সমস্ত ধর্মীয় কিতাবে উল্লেখ ছিল যা কফেররা হীন স্বার্থে বিকৃত করে ফেলেছে। সাধারণ মুসলমানের এসব বিশ্বাস করতে কোন কিতাব লাগে না। তারা এগুলো কুসংস্কারের মত পরিবার থেকে পায়। তাদের ধারণা অন্য ধর্মে হযরত মুহাম্মদের নামধাম, ঠায়-ঠিকানা, বাবা-মার নামধাম, বংশ-ঠিকজি মায় মক্কার আবদুল মোতালিবের নাতি উল্লেখ করে বুঝি লেথা ছিল! ব্যাপারটা আসলে তা নয়। এরকম লেখা থাকলে কথিত হযরত মুহাম্মদ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মানোর আগে এরকম আরো বহু হযরত মুহাম্মদ জন্মাতো! এ যাবত কালে কথিত “ঈমাম মেহেদী” জন্মানোর সংখ্যাটা কত সেটা স্মরণ করলে বুঝতে পারবেন ধর্মীয় গ্রন্থে ভবিষ্যত নবীদের আগমনী বার্তা কি ফল বয়ে আনে। ইমাম মেহেদীর কিছু লক্ষণ ছাড়া ধর্মীয় বইতে কোথায় কোন বাড়িতে জন্মাবে এরকম কোন নিদের্শনা নেই। তাতেই এইসব ঈমাম মেহেদী দাবীকারীরা দেখিয়েছে ধর্মীয় বর্ণনা তার সঙ্গেই সবচেয়ে খাপেখাপ মিলে যায়! অথচ ইমাম মেহেদী তো একজনই হবেন- তাই না? এইসব ইমাম মেহেদীদের ভক্ত ও অনুসারীদের সংখ্যাও কিন্তু অনেক। তারাও মিল খুঁজে পান কিতাবের বর্ণনায় সঙ্গে। যেমনটা মুসলিম পন্ডিতরা খুঁজে পান তাওরাত কিংবা অন্যান্য ধর্মের কিতাবে হযরত মুহাম্মদের আগমনী সুসংবাদ! কি আছে তাহলে এইসব ভবিষ্যত বাণীতে? কি লেখা থাকে মহাপুরুষ সম্পর্কে?
আসলে বইয়ের মধ্যে “ক” অক্ষর আর কুত্তার লেজের মধ্যে “কলেজ” যেভাবে মিশে থাকে, (বইয়ের ক + কুকুরের লেজ = কলেজ!) এইসব নবীদের আগমনী বার্তা আসলে এরকমই কষ্ট কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। এসব নিয়ে আলোচনার আগে একটু বলে নেয়া ভাল যে, কেন ধর্মীয় বইগুলোতে ভবিষ্যতে আরেকজন নবীর আগমনের সংবাদ লেথা থাকে? কি উদ্দেশ্য এসবের? এর উদ্দেশ্য আসলে রাজনৈতিক। খেয়াল করুন মুসার বিদ্রোহ কিন্তু শাসক ফেরাউনের বিরুদ্ধে। ফেরাউনের স্বৈরাচারী শাসনে অতিষ্ট নিপিড়িত শোষিত জনগণকে একটা আন্দোলনে সামিল করতে ইহুদী ধর্মের সৃষ্টি। সে যুগে রাজাও হতেন ঈশ্বরের প্রতিনিধ নয়ত স্বয়ং ঈশ্বর। ফেরাউন ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর। নিজেদের সম্পর্কে এসব বললে জনগণ ভয়ে কোনদিন মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না এটাই ছিল সম্রাটদের উদ্দেশ্য। যেমন রাজা দাউদ নিজেকে নবী বলতেন। তো একজন ঈশ্বরের প্রতিনিধি বা স্বয়ং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে লড়তে হলে একজন ঈশ্বর প্রতিনিধি ছাড়া জনগণ তার পাশে আসবে কিভাবে। এভাবেই মুসার কিংবদন্তির মাধ্যমে ঈহুদী, যীশুর কিংবদন্তির মাধ্যমে খ্রিস্টান ধর্মের সূচনা। আর ইহুদীদের তাওরাত গ্রন্থে ভবিষ্যত আরেকটি ঈশ্বর প্রেরতি প্রতিনিধির কথা বলা হয়েছে রাজনৈতিক কারণেই যাতে সময় ও যুগ বিবেচনায় ধর্মকে পরিবর্তন করার জন্য মডিফাই করা যায়। খ্রিস্টান ধর্মটি তো ইহুদীদের একটা অংশ দাঁড়া করিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এতে অনেকগুলো ধর্মের সূচনা হয়েছে। যা পরবর্তীকালে সমকালিন সামাজিক-রাজনৈতিক চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যতের ধর্মীয় জঞ্জালের পাহাড় সৃষ্টি করেছে। সেমেটিক ধর্মের এই তিন জঞ্জালের পাহাড় হচ্ছে ইহুদী, খ্রিস্টান আর ইসলাম।
অনুগ্রহ করে এই লেখাটিকে কেউ ভাববেন না যেন হযরত মুহাম্মদকে মিথ্যা প্রতিয়মান করাই একমাত্র উদ্দেশ্য, বরং লেখাটি বলতে চায়- এই জগতের সমস্ত জীবিত ও মৃত মানুষই জন্মেছিল কোটি কোটি তার সহধর প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করে মাত্র একটি শুক্রাণুই শেষ পর্যন্ত নিজের অস্তিত্বকে বজায় রাখার মাধ্যমে। তাই এই জগতের সমস্ত মানুষই বাইচান্স জন্মেছেন! রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইন, গান্ধি, হযরত মুহাম্মদ, গৌতম বুদ্ধ, স্বামী বিবেকান্দ, শেক্সপিয়র- সবাই না জন্মে তাদের মায়ের গর্ভে অন্য কেউ জন্মাতে পারত! এটি গূঢ় চিন্তার বিষয়। বিগত এক-দেড়শো বছরের বিজ্ঞান মানুষকে জানিয়েছে- তুমি পূর্ব নির্ধারিত কেউ নও। কাজেই কারুর জন্মের কয়েক হাজার বছর পূর্বেই তার ভবিষ্যত বাণী মানুষের কল্পনা মাত্র। এ ধরণের প্রচারণার সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর দিক হচ্ছে বংশ মর্যাদা, জাত্যাভ্যিমান, সামন্তবাদী রাজতন্ত্রকে ঐশ্বরিকভাবে সাধারণ অন্ত্যজ জনগণের কাছ থেকে সম্ভ্রম আদায় করা নেয়া। তাই দেখা যায় প্রাচীনকালে শুধু রাজাই ঈশ্বরের প্রতিনিধি হন। কয়েক পুরুষ নিজেদের নবী বলে দাবী করেন। ইব্রাহিমের পুত্রের সুসংবাদ পাওয়া, কৃষ্ণের জন্মের আগমনী বার্তা এসবই ছিল উদ্দেশ্য।
হযরত মুহাম্মদের নিজেকে নবী বলে ঘোষণার যত রকম সামাজিক আর রাজনৈতিক কারণ বা উদ্দেশ্য থাক, নিজেকে নবী বলে দাবী করতে তাকে তাওরাতের পুরাতন ও নতুন নিয়মে যে ভবিষ্যত নবীর আগমনের সুসংবাদ ঘোষণা করা হয়েছে, নিজেকে সেই বর্ণনার সঙ্গে মিলাতে হবে। তিনি নবী কিনা সেটি সেমিটিক ঐতিহ্য, লক্ষণ ও ভবিষ্যতবাণী দ্বারা প্রমাণ করতে হবে। কুরআন এই বিষয়ে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি স্রেফ এটুকু বলা ছাড়া-
হে নবী! আমি তো তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষি রূপে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী ও সাধারণ লোকদের প্রহরী রূপে…”- (সুরা আল আহযাব- ৩৩:৪৫)।
তবে একটি হাদিসে দাবী করা হয়েছে হযরত মুহাম্মদই তাওরাত বর্ণিত নবী। হাদিসটি সহি বোখারী যেখানে হযরত আতা বিন ইয়াসা বলেছ্নে, আমি হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর আসের সঙ্গে দেখা করে জিজ্ঞেস করি তাওরাতে কি রাসূল্লাহ সম্পর্কে কিছু বলা আছে? তিনি জানান যে হ্যা সে সম্পর্কে বলা আছে। তারপর তিনি তাওরাত থেকে বলেন, তাওরাতে লেখা আছে, দেখো আমার গোলাম ও আমার রাসুল আমার বাছাই করা বান্দা যার উপর আমি সন্তুষ্ট। সে চিৎকার করবে না বা জোরে কথা বলবে না। সে রাস্তায় রাস্তায় তার গলার স্বর শোনাবে না। সে মন্দের বদলে মন্দ করবে না। কিন্তু সে ক্ষমা করবে এবং দয়া করবে। ঈশ্বর তাকে তুলে না নেয়া পর্যন্ত তাকে দিয়ে বক্র ধর্মমতকে সরল করবেন। ফলে লোকেরা বলবে- আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুত নাই। আর সে অন্ধদের চোখ খুলে দিবে। কালাদের কান খুলে দিবে। কঠিন হৃদয়কে খুলে দিবে।… তাওরাতের পুরাতন নিয়মে ৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নবী ইশাইয়া এমন ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন।
হাদিসটি তাওরাতের ভবিষ্যতবাণীটিকে গ্রহণ করেছে। আগেই বলেছি কুরআনে হযরত মুহাম্মদের আগমনী বার্তা সম্পর্কে নিশ্চিত কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি বার বার “তারা তাদের কিতাব বিকৃত করে ফেলেছে” এই জাতীয় কথা বলে। প্রশ্ন জাগে, আল্লাহ কি এতটাই অসহায় যে মানুষ তার কিতাবকে বিকৃত করে ফেললে সেটিকে আর উদ্ধার করতে পারে না? প্রমাণ দেখাতে পারে না শুধু মুখের কথা ছাড়া! যেহেতু কুরআনে কিছু নেই নবীর নবীত্ব প্রমাণে সেহেতু তাওরাতে কি আছে সেটা থেকেই প্রমাণ করতে হবে আসলই কি এখানে হযরত মুহাম্মদের সম্পর্কে কিছু বলা আছে কিনা। খুব সোজাসাপ্টা প্রশ্ন: হযরত মুহাম্মদের আগমনী বার্তা কি ইহুদী-খ্রিস্টানদের কিতাবে উল্লেখ আছে?
আমরা যদি ধরে নেই ইহুদীদের একটা অংশ নতুন নবীর ধোঁয়া তুলে রাজনৈতিক ফয়দা লুটতে খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তন করেছে তাহলে কিন্তু তাওরাতের পুরাতন নিয়মের সঙ্গে যীশুর মিলটাই বেশি মেলে। যীশু নম্র মৃদুভাষী ছিলেন। এখানে মুহাম্মদকেও ফেলা যায়। এরপরে আছে সে মন্দের বদলে মন্দ করবে না। যীশুর সঙ্গে এটা মেলে। যীশু বলেছেন কেউ একটা চড় দিলে অন্য গালটা পেতে দিতে। কেউ তোমার চাদর ধরে টান দিলে চাদরটাই দিয়ে দিতে…। কিন্তু মুহাম্মদ চুরির দায়ে হাত কাটতে বলেছেন। বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে পাথর ছুড়ে মারতে বলেছেন। তিনি খুনের বদলে খুন নির্ধারন করেছেন। তিনি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। বহু পরিবার সেই যুদ্ধগুলোতে ধ্বংস হয়েছে। তাদের স্বজনকে হারিয়েছে। এই অংশটি তাই মুহাম্মদের সঙ্গে বেমানান! এরপরে আছে আল্লাহ তাকে তুলে নেয়ার আগ পর্যন্ত, -এখানে এই “তুলে নেয়া” কথাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ ইসলামই বলে যীশুকে আল্লাহ তুলে নিয়েছেন। তাওরাতও সেটা বলছে। তারপর আছে, অন্ধকে চোখ দান, কালাকে শ্রবন শক্তি ফিরিয়ে দেয়ার কথা। তাওরাতের নতুন নিয়মে দেখা যায় যীশু অন্ধদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিচ্ছেন। মৃতদের জীবিত করছেন। কালাকে জবান খুলে দিচ্ছেন। যদি তাওরাতে বর্ণনাকে রূপক অর্থে ধরি যেমন অন্ধ মানে যারা সত্যের পথে নেই আর কালা মানে হচ্ছে যারা হেদায়ত পায়নি তাহলেও কিন্তু মুহাম্মদ একক চান্স পাচ্ছেন না কারণ রূপক অর্থে ধরলেও এসব যীশুর কাজের মধ্যেও পড়ে। উপরন্তু মুহাম্মদের যুদ্ধের মাধ্যমে ইসলামকে বিজয়ী করার কথা বিবেচনা করলে এই বৈশিষ্টের সঙ্গেও তাকে রাখা যায় না। অস্ত্রের মাধ্যমে কোন ধর্মকে প্রতিষ্ঠা নিশ্চয় অন্ধকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়া বলা যায় না। আমার জানা মতে কথিত যীশু কোন যুদ্ধ করেননি। যীশু কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাও করেননি। কাজেই পুরাতন নিয়মে খুব বেশি করে যীশুকেই ভবিষ্যত নবী বলা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। যীশুকে যারা তৈরি করেছেন তারা তাওরাতের বর্ণনাকে মাথায় রেখেই করেছেন। মুহাম্মদের সে সুযোগ ছিল না। উল্টো তাওরাতের মধ্যে নিজেকে আবিস্কার করতে গিয়ে ভক্তদের কাছে নিজেকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। এবার তাহলে দেখি নতুন নিয়মের তাওরাতে কি বলা আছে।
নতুন নিয়মের তাওরাতের কথা বলার আগে কুরআনের সুরা আল সাফ (৬১:৬) নিয়ে একটু বলি। এখানে বলা হয়েছে যে,
মরিয়ম তনয় ঈসা বলেছেন যে, হে বণি ইজরাইল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহ’র রাসূল এবং আমার আগে থেকে বর্ণিত তাওরাতের একজন সমর্থক। এবং আমার পরে “আহমদ” (এর অর্থ প্রশংসাকারী) নামের যে নবী আসবে আমি তার সুসংবাদদাতা। কিন্তু যখন সে আসিল তারা স্বীকার করল না, বলল এ তো স্পষ্ট এক জাদু!
... কুরআন এখানে তাওরাতের নতুন নিয়মে যীশুর বর্ণিত একজন ভবিষ্যত নবীকে মুহাম্মদ বলে দাবী করা হচ্ছে। বলে রাখা ভাল যে তাওরাত বিকৃত হয়ে গেছে বলে বলে নবী মুহাম্মদ মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন কিন্তু এখন সেই তাওরাতকেই সাক্ষি মানছেন! তবু আমরা নিরাশ হবো না। দেখতে চাইবো এর মধ্যে আসলেই মুহাম্মদ আছেন কিনা। তুমুল বিতর্ক আছে তাওরাতের একটি শব্দকে নিয়ে যার অর্থ হয় উকিল, সহায়ক, মধ্যস্থকারী ইত্যাদি রূপে। মুসলিমরা দাবী করেন এই শব্দটির অর্থ হচ্ছে মুহাম্মদ নামের অনুরূপ। রূপকভাবে এখানে মুহাম্মদকে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু যীশু তাওরাতে বলছেন,
যদি তোমরা আমাকে ভালবাস তাহলে আমি যা হুকুম করেছি তা পালন করো। এবং আমি পিতার কাছে চাইব আরেকজন সহায়তাকারী তোমাদের জন্য যেন তিনি চিরদিন তোমাদের সঙ্গে থাকেন (ইউহোন্না ১৪:১৪-১৫)।
এই আশ্বাসে কোথায় মুহাম্মদের আগমনীর কথা বলা হয়েছে বুঝা যায় কি? মুহাম্মদ যীশু যা বলেছেন তা করতে বলেন নাই। বরং বলেছেন যীশুর অনুসারীরা বিকৃত হয়ে গেছে। খেয়াল রাখুন যীশু কিন্তু কখনই তাওরাতের পুরাতন নিয়মকে (মুসার উপর লিখিত) বিকৃত বা বাতিল করেননি। মুহাম্মদ শুধু বাতিলই করেননি নিজেকে মুসা ও ঈসার চেয়ে এত উঁচু করেছেন যেখানে মুসা আর ঈসা তুচ্ছ! তাদের অনুসারীদেরকে অবিশ্বাসী কাফের বলেছেন। যীশু ইহুদীদের সেরকম কিছু বলেননি। গুরুতর বিষয় হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ যখন নিজেকে নবী বলে দাবী করেন তখন মক্কার ইহুদীরা তার কাছে প্রমাণ চেয়েছিল তিনি যে নবী তার প্রমাণ দিতে। কারণ ইতপূর্বে তাওরাতে দেখা গেছে আল্লাহ মুসার সঙ্গে সিনাই পর্বতে তার সাহাবীদের সম্মুখে কথা বলে চমক দিয়েছেন। যীশু কয়েকবার তার প্রভুর সঙ্গে কথা বলেছেন যা তার সাহাবীরা নিজ কানে শুনেছিলো। এসব তাওরাতে আছে। খোদ ইসলাম ধর্মও মুসার সঙ্গে আল্লার বাক্যালাপকে উল্লেখ করেছে। ইউহোন্না লিখিত সুসমাচারে আছে তিনি যীশুকে প্রশ্ন করছেন,
“তাহলে কি এমন আশ্চর্য কাজ আপনি করবেন যা দেখে আমরা আপনার উপর ঈমান আনতে পারি? (ইউহোন্না ৬:৩০)।
এরপর যীশু ৫টি রুটি ও ২টি মাছ দিয়ে পাঁচ হাজার মানুষকে খাইয়ে তার মুজেজা দেখিয়েছিলেন। এরকম কিছু মুহাম্মদকে দেখাতে বললে আল্লাহ আশ্চর্য রকম নিষ্কৃয় হয়ে পড়েন! কুরআনে তিনি মুহাম্মদের হয়ে জবাব দেন,
“উহারা বলে তাহার প্রতিপালকের নিকট হইতে নিদর্শন প্রেরিত হয় না কেন? … বলো নিদর্শন আল্লাহরই এখতিয়ারে। আমি তো একজন প্রকাশ্য সতর্ককারী মাত্র। ইহা কি উহাদের জন্য যথেষ্ঠ নহে যে, আমি তোমার কাছে কুরআন অবর্তীর্ণ করেছি যাহা উহাদের নিকট পাঠ করা হয়…( সুরা আল আনকাবুত, ২৯:৫০-৫১)।
কি অদ্ভূত কথা! অবিশ্বাসীদের কাছে কুরআনের কি মূল্য আছে? “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের” জন্য আল্লাহ তার কুদরাতের একটিও নিদর্শন না দেখিয়ে এসব কি ধানাইপানই বলছেন! যার কথা তিনি দু-দুটো তাওরাতে অগ্রিম বলে রেখেছেন!
আসলেই কি বলা ছিল তাওরাতের নতুন নিয়মে। ইসলাম যে ইমাম মেহেদীর গল্প করেছে তাওরাতের নতুন নিয়মে যীশুর মুখ দিয়ে সেই কথাটিই বলা হয়েছিল। হযরত মুহাম্মদ বিজয়ী হয়েছিলেন বলেই নব্যুয়ত খতম করে শুধু ইমাম মেহেদীর আসার একটা রাস্তা রেখে গেছেন। এটি রাখার উদ্দেশ্য সম্ভবত তাওরাতের কথার সঙ্গে কুরআনের মিল রাখা। কিন্তু এই ছিদ্রটি দিয়েই আজতক যতজন নিজেকে ইমাম মেহেদী বলে দাবী করেছেন তারা কুরআন-হাদিস-সিরাত থেকে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছেন। ভবিষ্যতে আরো বহু ইমাম মেহেদীর পয়দা হবে। তাদের পক্ষে-বিপক্ষে দু ধরণের প্রমাণই থাকবে। তবে তাওরাত অনুসারণ করে মুহাম্মদকে কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হয়েছিল। মুহাম্মদ ইহুদীর সন্তান না হওয়ায় তাওরাত অনুসারে তার নবী হওয়ার ন্যুনমত যোগ্যতাও থাকে না। একজন নবী পাঠানোর যে শপথ আল্লাহ তুর পবর্তে করেছিলেন সেখানে তিনি কি বলেছিলেন দেখা যাক।
“আমি তাদের ভাইদের মধ্য থেকে তাদের জন্য তোমার মত একজন নবী দাঁড় করাবো। তার মুখ দিয়েই আমি আমার কথা বলব, আর আমি তাকে যা বলতে হুকুম দিবো সে তা-ই তাদের বলবে। সেই নবী আমার নাম করে যা করতে বলবে কেউ যদি আমার সেই কথা না শুনে, তবে আমি নিজেই সেই লোককে দায়ী করবো।“ তাওরাত, ১৮:১৮-১৯।
“তোমাদের মাবুদ তোমাদের মধ্য থেকে, তোমাদের ভাইদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য আমার মত একজন নবী দাড় করাবেন। তার কথা মত তোমাদের চলতে হবে। তুর পাহাড়ের নিকট যেদিন তোমরা সকলে মাবুদের নিকট সমবেত হয়েছিলে, তোমরা তখন মাবুদের নিকট তা-ই চেয়েছিলে। তোমরা বলেছিলে, আর আমরা আমাদের মাবুতের কথা শুনতে কিংবা এই মহান আগুন দেখতে চাই না, তাহলে আমরা মারা যাবো। তাওরাত, দ্বিতীয় ববরণ সিপারা ১৮:১৫,১৯।
তাওরাত অনুসারে তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি আল্লাহ নবী পাঠাবেন ইহুদীদের মধ্য থেকেই একজনকে। তিনি বলছেন “তোমাদের মাবুত তোমাদের মধ্যে থেকে”, “তোমাদের ভাইদের মধ্য থেকে” একজনকে নবী পাঠাবেন। আমরা জানি যে হযরত মুহাম্মদ আরব পৌত্তলিক বাবা-মার ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। ইসলাম ঘোষণার পর তিনি দাবী করেছিলেন তিনি ইব্রাহিম পুত্র ইসমাইলের বংশধর যার আসলে কোন প্রমাণ নেই। আবদুল মোতালেব অর্থ্যাৎ মুহাম্মদের দাদা কি এমনটা দাবী করতেন? তবু তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে মুহাম্মদ ইসমাইলের বংশধর তবু তাওরাত অনুযায়ী তিনি নবী হন না কারণ বলা হচ্ছে ইহুদীদের মধ্য থেকেই একজন নবীকে পাঠানো হবে। এই অসংগতির কথাটা ইসলামী পন্ডিতরা জানেন তাই তারা এখানে এসে দাবী করেন তাওরাত উল্লেখিত “তোমাদের ভাইদের মধ্য থেকে” বলতে আসলে ইসমাইলকে বুঝানো হয়েছে। অর্থ্যাৎ ইসহাকের ভাই ইসমাইলের বংশ থেকে নবী করা হবে। উপরের তাওরাতের আয়াতের যে উল্লেখ করেছি সেখানে একটাতেও কি মনে হয়েছে এখানে ইসহাকের অবৈধ ভাই ইসমাইলের বংশে নবী পাঠানোর কথা বলা হয়েছে? সেটা যে ইহুদীদের উগ্র জাতীয়তাবাদী ঈশ্বর বলেননি তার প্রমাণ তাওরাতে ভয়ংকর উগ্র ইহুদী প্রেমি আল্লাহ অন্যত্র বলছেন-
“তোমাদের মাবুত তোমাদের জন্য যে দেশটি দিতে চাচ্ছেন, সেখানে গিয়ে তোমরা যখন বলবে, আমাদের আশেপাশের জাতিগুলোর মত এসো, আমরা আমাদের জন্য একজন বাদশাহ খুঁজে নেই। সে যেন তোমাদের ইজরাইলী ভাইদের মধ্যে একজন হয়। যে তোমাদের ভাই নয়, এমন ভিন্ন জাতির কোন লোককে তোমরা তোমাদের বাদশাহ করবে না।– তাওরাত, ১৭:১৪-১৫।
ইহুদী রক্তের প্রতি এখানে ঈশ্বর যে পক্ষপাত দেখালেন তাতে কি আর কারুর সন্দেহ থাকতে পারে যে তাওরাত ইব্রাহিমের অবৈধ পুত্র ইসমাইলের বংশে নবীর কথা বলেছেন? প্রাসঙ্গিক বলে রাখা ভাল ইয়াকুব নবীর বংশধরকেই ইহুদী বলা হয়। ইয়াকুব ইব্রাহিম পুত্র ইসহাকের বংশধর। ইহুদী ধর্মের সঙ্গে মৌলিক ও নিউক্লিয়াস বিরোধ ইসলামের এখানেই। এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছিলাম ইস্টিশনে একটা লেখায়। লেখাটা এখানে পাবেন।
ইসমাইল আসলে কখনই ইব্রাহিমের উল্লেখযোগ্য পুত্র ছিল না। দাসী হাজেরার পুত্র হওয়ায় তাকে ইব্রাহিমের অবৈধ পুত্র হিসেবে পরিচিতি পেতে হয়েছে। ইসমাইলকে তার মা হাজেরার সঙ্গে মরুভূমিতে নির্বাসন দেয়া হয়। হযরত মুহাম্মদ দাবী করেছিলেন ইসমাইলকে তার মায়ের সঙ্গে মক্কায় নির্বাসন দেয়া হয়েছিল কিন্তু সেই যুগে জেরুযালেম থেকে পায়ে হেঁটে মক্কায় আসা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাছাড়া ইহুদীদের মধ্যেই বরাবর নবী উৎপাদন হয়ে এসেছে। এর কারণটা হচ্ছে সেমিটিক ধর্মের অন্যতম প্রধান ও প্রভাবশালী শাখা হিসেবে ইহুদী ধর্মই ছিল সরব। খোদ কুরআনে আছে-
সুরা আল-আ’রাফ, আয়াত- ৭:৬৫, ৭৩, আদ জাতির কাছে আমি উহাদের ভ্রাতা হূদকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো…ছামুদ জাতির কাছে তাদের ভ্রাতা সালিহকে পাঠিয়েছিলাম।
… এই নবীদের সবাই ইহুদী বংশের। একমাত্র কথিত ইসমাইল বংশে জন্মে ছিলেন হযরত মুহাম্মদ! যা কিনা তাদের বংশ কুরাইশদেরই অজানা আর অজ্ঞাত ছিল! নইলে সেমিটিক ধর্ম রেখে কেন হুবাল দেবতার কাবাঘরের রাখাল হবেন তারা বংশ পরম্পরায়?