Wednesday, August 31, 2016

লিখেছেন সবাক!

একটি অবাস্তব গল্প

লিখেছেন সবাক
১.
আমার ঠ্যাং ভেঙ্গে দিছে শুয়োরের বাচ্চায়এক ঘন্টা ধরে বসে আছি তালুকদারের বাড়ির সামনে
২.
তালুকদারের বড় পোলাজমির আইল ঠেলছে দেড় হাতকইলাম, কিগো বাজান এ কেমন কারবার, এক ঠেলায় দেড় হাত! এটা অবিচার, কঠিন অবিচার
পোলায় আমারে কয় চুপ থাকতেচুপ না থাকলে নাকি ঠ্যাং ভেঙ্গে দিবে!
মিজাজটা খারাপ হয় না কন? আমিও কইলাম সাহস থাকলে ভেঙ্গে দেখাইতেতারপর সত্য সত্য ঠ্যাংটা ভেঙ্গে দিলো! ডান ঠ্যাং, হাঁটুর নিচ বরাবরতব্ধা খাইলামএইভাবে কেউ দুই কথায় কারো ঠ্যাং ভেঙ্গে দিতে পারে!
৩.
ভাঙ্গা ঠ্যাং টানতে টানতে গেলাম তালুকদারের কাছেচিল্লানি শুনে ঘরের বাইরে আইলেনকইলাম, তালুকদার সাব আপনার বড় পোলা আমার ঠ্যাং ভেঙ্গে দিছে বিশ্বাস করেন, আমার কোন দোষ নাইআমি তারে একটা গাইলও দিই নাইখালি কইছি জমির আইল ঠেলা ঠিক নাএটা অবিচার
এটা শুনে তালুকদার ঘরের ভিতরে গেলেনআমি ভাবলাম বন্দুক নিয়ে বার হবেন বোধ হয়তারপর পোলার কাছে গিয়ে বন্দুক তাক করে কইবেন আমার ঠ্যাং ভালো করে দিতে, নইলে গুলি করে মারবেনকিন্তু তালুকদার সাব আইলেন দুইটা একশ টাকার নোট নিয়াহাতে ধরায়া বাংলার সাথে ইংরেজি মিশিয়ে কইলেন, যা হওয়ার হয়া গেছে টাকাটা নে, কিছু প্রুট কিনে খা, নাদান পোলাটারে বদদোয়া দিস না
পুরা বেক্কল হই গেলামএ কেমন বিচার! দেশ থেকে কি বিচার আচার উঠি গেলো নাকি! যাইহোক, একশ টাকার নোট দুইটা ফেরত দিই নাইগেরামের সবাইরে দেখামু কমু, পোলা আমার ঠ্যাং ভাঙছে, বাপে দুইশ টাকা হাতে ধরায়া দিছে
৪.
ভাঙ্গা ঠ্যাং টানতে টানতে তালুকদারের বাড়ি থেকে বার হইলামবার হয়েই রাস্তায় মসজিদের ইমাম সাবের দেখা পাইলামকইলাম, তালুকদারের বাদাইম্যাটা আছে না? ওইটা আমার ঠ্যাং ভেঙ্গে দিছেএটা শুনে ইমাম সাব তার মাথা উঁচা কইরা আকাশের দিকে তাকাইলেনতারপর মাথাটা নামায়া আমারে কইলেন, আল্লা যা করেন ভালোর জন্য করেন, দোয়া করি যেন এই ভাঙ্গা ঠ্যাং নিয়েই তার খেদমত করতে পারো
মিজাজটা খারাপ হয় না কন? আল্লা নাকি ভালোর জন্য আমার ঠ্যাং ভাঙছেন! কার ভালোর জন্য? আমার? নাকি ইমাম সাবের? নাকি তালুকদারের?
৫.
ভাঙ্গা ঠ্যাং টানতে টানতে এবার গেলাম মাতবরের কাছেকইলাম, তালুকদারের পাঠায় আমার ঠ্যাং ভেঙ্গে দিছে, আর পাঠার বাপে হাতে দুইশ টাকা ধরায়া দিছে কথাটা শুনে মাতবরের চেহারায় কোন সমবেদনা নাই, চু চু করা আপসোস নাইমাতবর কয় শনিবারে হাটে যাইতেদুইশ টাকা দিয়ে একটা ঠ্যাং কিনে নিতেতারপর আরো কইলো তালুকদার দিল দরিয়া মানুষদেড়শ টাকাতেই নাকি ভালো ঠ্যাং পাওন যায়
মিজাজটা খারাপ হয় না কন? হাটে নাকি ঠ্যাং পাওন যায়! তামাশা করে আমার লগে, আমি তামাশার পাত্র
৬.
এবার হইলো আলগা বিপদগেরামের দুষ্টু পোলাপান পিছু নিছেভারি বেয়াদব এসব পোলাপানআমার ভাঙা ঠ্যাং নিয়ে মশকরা করেকয়
বড় পোলার ছোট চ্যাং, রহমতের ভাঙ্গা ঠ্যাং
ঠ্যাং করে ট্যাং ট্যাং, ব্যাং ডাকে ঘ্যাঙর ঘ্যাং
আচ্ছা বুঝলাম এরা অবুঝএখনো শেখেনি কারো ভাঙ্গা ঠ্যাং নিয়ে মশকরা করতে নাইকিন্তু মেম্বার সাব? তিনিতো অবুঝ নাদুই দুইটা বৌয়ের স্বামী, পঞ্চাশের মত বয়সমেম্বার সাবের কাছে গিয়ে কইলাম, তালুকদারের ধামড়াটা আছে না? ওই হারামির বাচ্চা আমার ঠ্যাং ভেঙ্গে দিছেবিচার নিয়ে গেলাম ধামড়ার বাপের কাছেধামড়ার বাপ আমার হাতে দুইশ টাকা ধরায়া দিয়ে কইলো প্রুট কিনে খাইতেআপনি এর একটা বিচার করেন
মেম্বার সাব কয় একদিন না একদিন এসব অনাচারের বিচার হবেঘুচে যাবে জরা, মুছে যাব ব্যাধিএই পৃথিবীতেই হবে অত্যাচারির সমাধি
মিজাজটা খারাপ হয় না কন? হালারপুতরে ভোট দিয়ে মেম্বার বানাইছি কবিতা শোনার লাগি!
৭.
আবার টানোভাঙ্গা ঠ্যাং টানোটানতে টানতে গেলাম চেয়ারম্যানের কাছেনতুন প্রজন্মের চেয়ারম্যানহেবি ইস্মার্টকম বয়সী শিক্ষিত চ্যাংরা পোলা ভাবলাম নতুন কিছু শুনাইবোবিচার পাবোকিন্তু নতুন প্রজন্মের কচি মুখে সেই পুরানা কথাদম নিয়ে ধীরস্থির হয়ে খুব ভদ্রভাবে চেয়ারম্যানরে প্রথমে কইলাম বেয়াদবি মাপ করতেতারপর কইলাম, হারামি তালুকদারের জাওরা পোলাটা আমার ঠ্যাং ভেঙ্গে দিছেবিচার চাইতে গেলাম আর জাওরার বাপে একশ টাকার দুইটা নোট হাতে ধরায়া দিছেএর একটা বিহিত করেনএকটা সুবিচার করে দেন
চেয়ারম্যান কয় তালুকদার সম্মানি মানুষদানবীরতার বিচার করন যাইবো না গেরামের রাস্তার কামের জন্য তালুকদার নাকি চল্লিশ হাজার টাকা ডোনেশন দিছে উন্নয়ন খুব জরুরী বিষয়কিছু পাইতে হইলে কিছু দিতে হয়গেরামের উন্নয়নের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়ত্যাগ স্বীকার না করলে উন্নয়ন হইবো না
চেয়ারম্যান আরো কয় আমার ঠ্যাং নাকি গেরামের রাস্তার কামের জন্য ডোনেশন হিসেবে ধরে নিছেনউন্নয়নের জন্য আমি নাকি ঠ্যাং বিসর্জন দিছিএটা উনি উনার ডায়েরিতে লিখে রাখবেনআমার এই দানের কথা স্মরণ রাখবেন
মিজাজটা আর কত খারাপ হইতে পারে? এসব নতুন প্রজন্মের কুত্তার বাচ্চাগোরে কী করতে মন চায় কন? এসব দেখলে কী যে কষ্ট লাগে বুঝাইতে পারুম নাবাঁশের কঞ্চি দিয়ে চেয়ারম্যানের পাছায় সারাদিন পিডাইলেও পরাণ ঠান্ডা হইবো না পরাণটা এমন পোড়া পুড়তেছে
আমি যা বুঝার বুঝছি, এখন যা করার তা করবো
৮.
ঠ্যাঙের ব্যাথা ম্যালা বাড়ছেতাতে কী হইছে! ব্যাথায় গোঙাইতে গোঙাইতে গেছি কামারের দোকানেদুইশ টাকা দিয়া দুই ইঞ্চি মোটা আড়াই হাত লম্বা একটা রড কিনছিরডের মাথাটা বাঁকা করে ঘুরায়া নিছিএবার তালুকদার হারামিরে বুঝাবো রহমতের মিজাজ গরম হলে সে কী করতে পারে
৯.
এক ঘন্টা ধরে বসে আছি তালুকদারের বাড়ির সামনেতালুকদার নাকি বাজারে গেছে আসুক, বাজার থেকে আসুকবাড়িতে ঢোকার সময় রড দিয়ে পথ আটকায়া বলবো, শুয়োরের বাচ্চা, তোর পোলা আমার এক ঠ্যাং ভাঙছেএখন তুই যদি তোর পোলার দুই ঠ্যাং না ভাঙ্গস, তাহলে আমি তোর ঠ্যাং দুইটাতো ভাঙবো ভাঙবো, হাতও কুঁচা কুঁচা কইরা দিবো
১০.
রহমত আজ ক্ষেপছে



একটি যাত্রী ছাউনি এবং তিনজন বিচ্ছিন্ন মানুষ


লিখেছেন সবাক
হাশেমের আনন্দদন্ড
তিনদিন ধরে একটানা বৃষ্টি হচ্ছেঝুম বৃষ্টিসব ভেসে গেছেপ্রতিদিন প্রায় এক হাত করে পানি বাড়ছেখাল, পুকুর ভরাট হয়ে পানি ঢুকে পড়েছে রাস্তায়, বাগানে, উঠানেঘর দুয়ারে পানি, মনে হচ্ছে কেউ দরজা খুলে দিলেই ঘরে ঢুকে পড়বে
বিগত কয়েক বছরে গ্রামের মানুষ এমন বৃষ্টি দেখেনিএকটু বয়স্করা স্মৃতি হাতড়ে মনে করার চেষ্টা করছে শেষ কবে এত বৃষ্টি হয়েছেআর কম বয়সীরা ভাবছে, এইভাবেও বৃষ্টি হতে পারে! তিনদিন একটানা!
বৃষ্টির নিজস্ব শব্দ আছে, আর সেই শব্দের নিজস্ব সমস্যাও আছেটানা কিছুক্ষণ বৃষ্টির শব্দ শোনার পর মনে হয় আমাদের আর কোন শব্দ নেই, সুর নেই, গান নেইবৃষ্টি ছাড়া আমাদের আর কিছু নেই, কেউ নেই
এখন মধ্যরাতবাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকারআকাশ নেইথাকলেও দেখা যাচ্ছে না অনেকক্ষণ পরপর একটা দুইটা বিজলি জ্বলেবরাবরের মত অদেখা আকাশ তার দুই হাত ভরে পানি ঢালছেটিনের চালে ঘুমুর ঘুমুর শব্দসবাই যার যার মত করে তার তার ঘরে, শুধু হাশেম ছাড়াহাশেম আছে পরের ঘরেমারজাহানের ঘরহারিকেনের মৃদু আলোমারজাহান উত্তেজনায় হাঁপাচ্ছেহাশেম অন্ডকোষ মুঠে চেপে ধরে বসে আছে মুঠো বেয়ে টুপ টুপ রক্ত ঝরছেমারজাহান হাশেমের আনন্দদন্ড কেটে দিয়েছে
ঠিক এই মুহূর্তে হাশেমকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, মারজাহান কে? হাশেম বলবে মারজাহান একটি ডাইনিকিন্তু আসলে তা নয়মারজাহান হচ্ছে এই গ্রামেরই মন্নাসের বৌমন্নাস থাকে সৌদি আরবআজ ঘরে মারজাহান একা থাকলেও সবসময় কিন্তু একা থাকে নাসাথে শাশুড়ি আর দেবর থাকেটানা বৃষ্টি শুরুর দিন সকালে মারজাহানের শাশুড়ি আর দেবর গিয়েছে মারজাহানের ননদের বাড়িবৃষ্টিতে আটকা পড়েছে
 
হাশেম সবসময় মারজাহানকে ইশারা ইঙ্গিতে উত্যক্ত করতোএসব ইশারা ইঙ্গিতের আড়ালে প্রেম আছে কিনা মারজাহান জানে নাথাকলেও সেই প্রেম নোংরা, ইতরের প্রেমমারজাহানের ফুলের বাগান আছে, সেই বাগানে প্রজাপতি আসে, ভ্রমর আসে মারজাহান ফুল দেখেপ্রজাপতি আর ভ্রমর দেখেআড়চোখে হাশেমের ইশারা দেখে আবার ফুল দেখেপ্রজাপতি আর ভ্রমর দেখে
গত দুইদিন হাশেমের মতিগতি খুব খারাপ ছিলোএত বৃষ্টি, এত পানি উপেক্ষা করে হাশেম এসে মারজাহানের ঘরের চারপাশে ঘুরঘুর করে, ইশারা দেয়, ইঙ্গিত করে হাশেম রাত্রি বেলা ভেসে যাওয়া আগানে বাগানে আন্ধা বড়শি পেতে রাখে, কারেন্ট জাল বসিয়ে রাখে মাছের জন্যমাছ যেদিকেই থাকুক না কেন, হাশেমের বড়শি আর জাল থাকে মারজাহানের ঘরের আশপাশেহাশেমের জিহ্বা বেয়ে ঝরে পড়া লালসার লালা বৃষ্টির জলে মিশে যায়তবুও মারজাহান সেটা দেখেমারজাহান মেয়েতো, জানে ইতরের লালা কখন কিভাবে ঝরে
 
আজ বিকালে হাশেমের ইশারা চিরতরে বন্ধ করতে মারজাহান হাশেমকে পাল্টা ইশারা করেইঙ্গিত করেমারজাহানের মাত্র একটি ইশারায় হাশেমের আনন্দদন্ডের কোরবানি হয়ে গেলোমাত্র একটি ইশারায় হাশেমের জিহ্বা, গলা, খাদ্য নালী প্রস্রাবের নালী, সব শুকিয়ে গেছেএই গ্রামের সবকিছু এখন ভেজা, শুধু হাশেমের ভেতরটা ছাড়াএক ফোটা লালা নেই, ভয়-আতংক-ব্যাথা ছাড়া আর কিছু নেই
পরিষ্কার সুতি কাপড়, স্যাভলন, ছোট বাটি আর পানির জগ নিয়ে আসে মারজাহান মারজাহান বলে, রক্ত বন্ধ করেন, নইলেতো মরে যাবেনআপনার জানের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেইশত্রুতা যেটার সাথে, সেটা কেটে ফেলেছিকোনমতে ব্যথাটা সহ্য করেন, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে
হাতে বড় সাইজের একটা দাও ধরে মারজাহান হাশেমকে জানায়, ইশারা দিয়েন জায়গামত, যেখানে যা মানায়
এক টুকরো বড় পলিথিন আর কিছু টাকা দিয়ে মারজাহান হাশেমকে বলে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতেনইলে ঘরে গিয়ে বৌয়ের হাতে ধরা খাবেমান সম্মান সব যাবেশুধু কি নিজের বৌ? ঘরে পুত্রের বৌও আছেমানে পুরা চুনকালি মাখামাখি হয়ে যাবে
 
আসলে গ্রাম ছেড়ে যাওয়া ছাড়া হাশেমের আর কোন উপায় নেইতাই আনন্দদন্ড হারিয়ে হতবিহ্বল হাশেম আগে পিছে কিছু চিন্তা না করে বেহায়ার মত মারজাহানের কাছ থেকে টাকাগুলো নিয়ে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে পড়েসবকিছু কেমন গোলমাল পাকানোমনে মনে অনেক কিছুই ভাবছে, সব এলোমেলোক্ষণে ক্ষণে ভাবছে সে বোধহয় স্বপ্ন দেখছে, আসলে কেউ তার ওটা কেটে দেয়নি
হাশেম চলে যাওয়ার পর ঘরের মেঝে থেকে দন্ডটুকরো তুলে নেয় মারজাহান পলিথিন কেটে বানানো জামাটা পরে ঘর থেকে বেরিয়ে পানি ডিঙিয়ে খালপাড়ে যায় মাংসপিন্ডটি খালের জলে ছুঁড়ে মারেএত জোরালো স্রোতে ঢুবে যাওয়ার উপায় নেই কে জানে আবুল হাশেমের আনন্দদন্ড ভাসতে ভাসতে কোথায় যায়, কার পেটে যায় মাছে খাবে নাকি সাপে খাবে, নাকি পঁচে গলে পানিতে মিশে যাবে
আহারে হাশেম! পুরো শরীর নিয়ে গ্রাম ছাড়লো, শুধু ইয়েটা জলে গেলো

এক্টিভিস্ট হিম সাগর
সকাল বেলা বাবা কানের নিচে চটকোনা মেরে বলেছে, আর পদ্য লিখিসনাএখন গদ্যের বাজার ভালো, দুচার লাইন গদ্য লিখ
মা বলেছে, একটু বাজারে যা, কিছু সবজি কিনে আন
ছোট বোন বলেছে, ভাইয়া একটু এদিকে আয়, আমার অংকটা দেখে দে
কিন্তু কবি হিম সাগর গদ্য লিখবে না, সবজি কিনতে বাজারে যাবে না, বোনের অংক দেখে দিবে নাহিম সাগর গাঁজা খাবেসকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার পর গাঁজা খেতে হয়তারপর টয়লেটটা ঠিকমত হয়টয়লেট সেরে ভাবে আজ নয়, কাল থেকে গদ্য লিখবোআজ নয়, কাল থেকে বাজারে যাবোআজ নয়, কাল থেকে সোনিয়ার অংক দেখে দিবোগত কয়েক মাস ধরে হিম সাগর এরকম করে যাচ্ছেআজ নয় কাল

আসলে তার নাম আবদুর রহিম সাগরআবদুর পুরোটা ফেলে দিয়েছে, রহিম এর র তারপর নাম হয়েছে হিম সাগরএকবার ভেবেছিলো নাম রাখবে মাইকেল সাগরঅনেকেইতো রাখেযেমন আলফ্রেড খোকন, হেনরি স্বপন ইত্যাদিপরে ভাবলো এটা ঠিক না শুনতে ভালো শোনায় নাবেখাপ্পা লাগেতারচে এত বড় নামটা একটু কাটছাঁট করে রাখতে পারলে ভালোহিম সাগরপুরোপুরি বাংলা নামমানানসই
কিন্তু আজ ভিন্ন পরিস্থিতিগাঁজা বানাতে গিয়েও বানায়নিছোট বোনের অংক দেখে দিয়ে বাজারের থলে হাতে বেরিয়ে পড়েছেগদ্য নিয়ে ভাবছেখুব ভাবছে কিন্তু গদ্য আসে নাপদ্যের ঢং চলে আসেতবু হাল ছাড়ছে না হিম সাগরভেবেই যাচ্ছে
হিম সাগর ফেসবুকে কবিতা লিখেপাঠক তেমন একটা নেইপ্রতি কবিতায় গড়ে দুই আড়াইশ করে লাইক পায়কমেন্ট পায় খুব কমযা দুএকটি পায়, তাতে ঘুরে ফিরে একটাই প্রশ্ন থাকে ভাই কবিতাটার অর্থ কী?

এসব কমেন্ট দেখে হিম সাগরের রাগ হয়, মেজাজ গরম হয়দুনিয়ায় মানুষ অনর্থক কত কিছু করেকিন্তু কবিতার একটা অর্থ থাকতেই হবেঅর্থ ছাড়া কবিতা লেখা যেন অপরাধতাছাড়া অবশ্যই কবিতা অনর্থক নয়, কিন্তু পাঠক না বুঝলে কবির কী করার আছে
সবজি কিনে ফেরার পথে হিম সাগর গদ্য নিয়ে ভেবে যাচ্ছেজীবনটা আজ নতুন করে শুরু হবেহার মানলে চলবে নাজিততে তাকে হবেইঅনেক ভেবে এক লাইন গদ্য পেয়েছেমানুষ বোধহয় সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সবজি কিনতে বাজারে যাওয়ার জন্যই বেঁচে থাকে
কিন্তু ঠিক মন ভরছে নাবাক্যটিতে যাপিত জীবনের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেলেও দর্শনের ঘাটতি আছেএটি একটি সামাজিক বাক্য বটে, কিন্তু বাক্যে জীবনবোধের গভীরতায় কমতি আছেনতুন করে আবার ভাবতে হবে
ভাবতে ভাবতে এবার যা পেয়েছে, হিম সাগরের কাছে তা অসাধারণ মনে হয়েছেঘুম থেকে উঠে সবজি কিনতে বাজারে যাওয়ার জন্য সারা জীবন বেঁচে থাকোকিন্তু গাঁজা খাওয়ার জন্য অন্তত একটি দিন হলেও বাঁচো
পকেট থেকে স্মার্টফোন বের করে ফেসবুকে পোস্ট করে দিলো
বাসায় এসে ফোন বের করে দেখে লাইক পড়েছে বিশটিকমেন্ট ছয়টিএর মধ্যে চারটিই গালিগালাজএকটি কমেন্ট মনে দাগ কেটেছে। -শালার কবিদের এই একটাই সমস্যা, দেশ জাহান্নামে যাক, উনাদের কাব্যচর্চা বন্ধ হয় না

গদ্যকার হিম সাগর ভাবলো দেশের কী হয়েছে দেখা দরকারনিউজ ফিডে কিছুক্ষণ ঘুরলোফ্রেন্ডলিস্টে বেশিরভাগ কবি, তাই নিউজফিড জুড়ে প্রায় সব পোস্টেই কবিতাএর মাঝে বন্ধুদের শেয়ার করা পোস্ট থেকে দেশের কিছু খবর পাওয়া গেলো জয়পুরহাটে মাকে বেঁধে মেয়েকে ধর্ষণফেনীতে কিশোরীকে ধর্ষণ শেষে খুন করেছে পাষন্ডরাকিশোরগঞ্জে পুরোহিতকে জবাই করে হত্যাদিনাজপুরে বিএসএফ এর গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত
দেশ জাহান্নামে যাচ্ছে ঠিক আছে, কিন্তু জাহান্নামে যাওয়ার আগে একইসাথে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর খুন, জবাই, তারপর আবার ভিনদেশি সেনার গুলি খেয়ে গেলেতো সমস্যাএতকিছুর পর দেশের আর কীইবা থাকে, কী নিয়ে জাহান্নামে যাচ্ছে, খালি হাতে?
হিম সাগর ভাবলো পদ্য গদ্য বাদএক্টিভিজম করতে হবেসমাজটাকে বদলাতে হবেদেশের জন্য কিছু করতে হবেআর কত চুপ করে থাকা যায়, এই দুর্বৃত্তায়নের খাঁচা ভাঙতেই হবেমুখ খুলতে হবেকিছু বলতে হবে, কিছু একটা করতে হবে
এক্টিভিস্ট হিম সাগর কোনভাবেই দেশকে জাহান্নামে যেতে দিবে নাআজ থেকে ফেসবুকে সামাজিক অন্যায় অবিচার নিয়ে প্রতিবাদ করবেসোচ্চার হবেকিন্তু একসাথে এতকিছু নিয়েতো লেখা যাবে নাঅনেকেই আছে প্রতিদিন ফেসবুকে দশ বারোটা করে পোস্ট দেয়বন্ধুদের প্রতি এটা একটা অবিচারএকজন মানুষ তার নিউজফিডের কয়টা পোস্ট পড়তে পারেবেশি বেশি পোস্ট দেয়া মানেই বন্ধুদের উপর নির্যাতন করাহিম সাগর এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে
এখন ফেসবুক এক্টিভিজমের জন্য বিষয় নির্বাচন করতে হবেএকটা সেইরকম পোস্ট দিয়ে এক্টিভিজম শুরু করতে হবেজয়পুরহাটের বিষয়টা খুবই জঘন্য হয়েছেমায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণকত বড় জানোয়ার হলে এটা করতে পারে! কিন্তু ফেনীরটা আরো ভয়ংকরকারণ শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, মেরেও ফেলেছেধর্ষণের পর হয়তো মেয়েটি আত্মহত্যা করতো নাসে বেঁচে থাকতোপাষন্ডরা তাকে মেরে ফেলেছে অবশ্য মেয়েটিকে তার মায়ের সামনে ধর্ষণ করেনিএদিক দিয়ে ঘটনাটি গুরুত্ব হারিয়েছেতারপর এই যে পুরোহিতকে জবাইয়ের ঘটনাকিছুদিন আগে হিমসাগর শুনেছে জঙ্গীরা নাকি বলেছে জবাই করে মারলে সওয়াব বেশিচিন্তা করা যায়, তারা খুনের পন্থা নির্বাচন করে সওয়াবের ভিত্তিতে! বেশ কিছুদিন ধরে এই বিশেষ ধরনের খুন হচ্ছেএটা মাথা ব্যাথারতাছাড়া সংখ্যালঘুদের উপর বেশি আক্রমণ হচ্ছেএটা আমাদের জাতীয় পরিচয়কে সংকটে ফেলে দিচ্ছেএকটা দুইটা ধর্ষণের চেয়ে এটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়সীমান্তের হত্যার বিষয়টা জাস্ট অসহ্য সীমান্তে শুধু বাংলাদেশের নাগরিকরাই মরেঅথচ আমাদের সরকার কিছুই করছে না অথবা করতে পারছে নানিজ দেশের সরকারের এমন মেরুদন্ডহীনতার কথা চিন্তা করলে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়আমাদের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব আজ প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষীদের হাতে মানুষ মরেই যাচ্ছে, কোন থামাথামি নেই

কিন্তু এক্টিভিস্ট হিম সাগর এখন কী করবে? সবগুলো বিষয় সমান গুরুত্বপূর্ণকোনটা ছেড়ে কোনটা নেবে, ভেবে পাচ্ছে নাআবার সবগুলো বিষয় নিয়ে লেখা চাট্টিখানি কথা নয়এক লাইন গদ্য মাথায় আনতে একবার বাজারে যেতে হয়েছে, আবার ফিরতে হয়েছেআর এখন যদি এতগুলো ইস্যু নিয়ে লিখতে যায়, তাহলে হিম সাগরকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে নাতবুও ঠান্ডা মাথায় চোখ বন্ধ করে ভেবে যাচ্ছে হিম সাগরউপায় একটা বের হবেই
এক্টিভিস্ট হিম সাগর ভাবছে একটু গাঁজা টেনে নিলে মনে হয় বিষয়টা সহজ হবে তার বিশ্বাস, গাঁজা ব্রেইন খুলে দেয়উদারভাবে চিন্তা করা যায়কিন্তু গাঁজা টানলে তার নতুন জীবন শুরু করা যাবে নাআবার না টানলে এই সংকটের সমাধান হবে নামনের সাথে অনেক যুদ্ধ করে গাঁজার চুরুট ধরিয়ে দিলো কয়েক টানতারপর দৌড়ালো বাথরুমে
বাথরুম থেকে বেরিয়ে হিম সাগর ভাবছে আজ নয়, কাল থেকে এক্টিভিজম শুরু করবো

মেয়েটির নাম জাহান, মারজাহান
এই মারজাহান সেই মারজাহান নয়এই মারজাহান হচ্ছে জাহানএবং এই মারজাহানের কোন গল্প নেইঅন্যের গল্পে মারজাহান ঢুকে পড়েকারণ ওইসব গল্প মারজাহানকে ছাড়া হয় নাযেমন বাইশ বছর আগে তার বাবা মা, দাদা দাদী, খালা ফুফু সবাই খুব চিন্তা করছিলো এই নবজাতকের নাম কী রাখবেপরে নবজাতকের বাবা বললেন, নাম হোক মারজাহানবাবার দেয়া নাম সবাই পছন্দ করেছেতারপর মারজাহান নামেই সে বেড়ে উঠেছে
মারজাহান বড় হলোবয়স হলো চারমারজাহানকে স্কুলে দিবেইংলিশ মিডিয়ামে নাকি বাংলা মিডিয়ামে, এই নিয়ে বাবা মার টেনশনমা বললো বাংলা মিডিয়ামেই দাওইংরেজি বিষয়ের জন্য আলাদা মাস্টার রেখে দিবোসমস্যা নেইতারপর মারজাহান বাংলা মিডিয়ামের স্কুলে গেলো
প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষে মাধ্যমিকে ভর্তি করানোর সময় আবারো মারজাহানের বাবা মার অন্তহীন চিন্তাকোন স্কুলে ভর্তি করাবে, কোন স্কুল ভালো, কোন স্কুলের শিক্ষকদের কোন বদনাম নেইঅনেক ভাবনা চিন্তার পর মারজাহানকে একটা স্কুলে ভর্তি করায়তার বাবা মা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়
মারজাহান আরো বড় হলোক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠলোএখন বাবা মা দুশ্চিন্তা মেয়ে কোন লাইনে পড়াশোনা করবেসায়েন্স, আর্টস নাকি কমার্স সায়েন্স অনেক কঠিনমেয়ে মানুষ কমার্সে গিয়ে কী করবে? আর্টসটাই মনে হয় ভালোইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে পড়বেঅন্যদিকে খেয়াল কম যাবে এসব ভেবে শেষে বাবা মা মিলে সিদ্ধান্ত নিলো মারজাহান আর্টসে পড়বে
আরো বড় হলোএসএসসি পাশ করেছেকলেজে ভর্তি করাতে হবেকিন্তু কোন কলেজে ভর্তি করাবে? কো এডুকেশন নাকি গার্লস কলেজ? গার্লস কলেজ হলে, সেটা কোন কলেজ? মারজাহানকে তার মা বলে তোর চিন্তায় চিন্তায় তোর বাবার অবস্থা কাহিল মারজাহান খেয়াল করে দেখে আসলেই তার চিন্তায় চিন্তায় বাবা মা দুজনই শুকিয়ে যাচ্ছেমারাজাহানের কোন চিন্তা নেইবাবা বলে তোর আবার কিসের চিন্তা, আমরাতো আছি
এখন মারজাহানের বাবা মা চিন্তায় একেবারে জমে গেছেমেয়ের বিয়ে দিতে হবে ডাক্তার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ইয়ার নাকি প্রবাসী ছেলের হাতে তুলে দিবে? মারজাহানের মায়ের বোনের ছেলেটা মারজাহানকে পছন্দ করেআবার বাবার বন্ধুর ছেলেও পছন্দ করেকিন্তু বোনের ছেলেকে বাবার পছন্দ না, বন্ধুর ছেলেকে মায়ের পছন্দ নাতাই যে যার দায়িত্ব নিয়ে দুই পাত্রকে মানা করে দিয়েছেকিন্তু মানা করে দিয়ে কী হবে, চিন্তাতো আর কমে নাএই সময় একটা ভালো পাত্র পাওয়া যে কত কঠিন, তা যাদের মেয়ে আছে শুধু তারাই জানে মারজাহানের মা মারজাহানকে বলে তুই কোন চিন্তা করিস না মা, একটা ভালো ছেলের হাতে তোকে তুলে দিবোসুখে থাকবি

এখন, ঠিক এই মুহূর্তে মারজাহান যাচ্ছে শপিংয়েদুই বছর হলো একা একা শপিংয়ে যাওয়ার অধিকার অর্জন করেছেঅর্জন বলা যাবে না, দয়া করে বাবা মা এই অধিকারটুকুন তাকে দিয়েছেমারজাহান শপিং খুব পছন্দ করেউপভোগ করেসকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই শপিং মল থেকে ওই শপিং মল, এই শোরুম থেকে ওই শোরুম, এই ব্র্যান্ড থেকে ওই ব্র্যান্ড, ঘুরতে থাকেএকটার পর একটা জামা, কসমেটিক, জুতা দেখেদেখতে দেখতে স্তুপ করে ফেলেতারপর চেহারায় খুব অসন্তুষ্টি নিয়ে কিন্তু অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলে, একটাও পছন্দ হয়নি, পাশের দোকানে দেখি পছন্দ হয় কিনা
শুধুমাত্র শপিং করতে আসলে ভালোমত দেখে, শুনে, বুঝে, চিন্তা করে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার, নিজের পছন্দ নিজে করার সুযোগ পায়কেউ তাকে বলে না, তুই কোন চিন্তা করিস না, একটা ভালো জামা-জুতা আমরা কিনে দিবোই
শপিং করতে আসলে মারজাহান অনেক চিন্তা করেকারণ এখানে কেউ তার হয়ে চিন্তা করার সুযোগ পায় না

রোদে পুড়তে থাকা যাত্রী ছাউনি
আনন্দদন্ড হারানো হাশেম ঢাকা এসে পোঁছেছে বেশিক্ষণ হয়নিমতিঝিলে এক খাতিরের লোক থাকেতার কাছে যাবেঢাকায় এসে বাস থেকে নেমে খাতিরের লোককে ফোন করেছেখাতিরের লোক বলেছে বাসে করে সোজা শাপলা চত্বর এসে নেমে কোন দোকান থেকে আরেকটা কল করতেতারপর তিনি এসে নিয়ে যাবেনকিন্তু আবুল হাশেম ভুল বাসে উঠে এখন আগারগাঁওপ্রখর রোদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে কোমরে অনেক ব্যাথা নিয়ে যাত্রী ছাউনিতে বসে আছে বাসের জন্য
এদিকে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বাজারে গিয়ে সবাইকে অবাক করে দেয়া আবদুর রহিম সাগরের বাবা ভাবলেন ছেলে বোধহয় লাইনে চলে এসেছেতাই ছেলেকে একটা কাজে কাওরান বাজার যেতে বললেনগাঁজা খেয়ে বুঁদ হয়ে থাকা হিম সাগর তার বাবাকে না করতে পারেনিমনে মনে ভেবেছে আজ নয় কাল যাবে কাওরান বাজারকিন্তু মনের বিরুদ্ধে গিয়ে শরীরটাকে নিয়ে আজই বেরিয়ে পড়েছেযাত্রী ছাউনিতে বসে আছে বাসের অপেক্ষায়

বাইরে ঠাডাভাঙ্গা রোদরোদ থেকে বাঁচতে ছাতা ব্যবহার করা একদম পছন্দ করে না মারজাহানতারচে বরং ঘর থেকে বেরিয়ে পাঁচ টাকা দিয়ে একটা পত্রিকা কিনে নিলেই হয়অন্তত মাথাটা রোদ থেকে বাঁচানো যায়হাঁটতে হাঁটতে বাস স্টপিজে আসে মারজাহানযাত্রী ছাউনিতে বসে
আজ ছুটির দিনতবুও রাস্তায় প্রচুর যানজটবাস আসতে দেরি করছেযাত্রী ছাউনিতে তিনজন মানুষআবুল হাশেম, আবদুর রহিম সাগর আর মারজাহানএক কোনায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে হাশেমমাঝখানে বসে পত্রিকা দিয়ে চেহারায় বাতাস করছে মারজাহানআরেক পাশে বসে বসে উদাস দৃষ্টিতে কোথায় যেন তাকিয়ে আছে হিম সাগর

অনেক সময় হলো, বাস আসছে নাঅপেক্ষার বিরক্তি কাটাতে মারজাহান পত্রিকাটা মেলে পড়ার চেষ্টা করেপ্রথম পাতায় দুইটা ধর্ষণ আর তিনটা খুনের খবরমানুষ কেন পত্রিকা পড়ে, এটা ভেবে অবাক হয় মারজাহানটাকা দিয়ে পত্রিকা কিনে দুঃসংবাদ পড়ে কী লাভ! ধর্ষণের খবরে চোখ রেখে আপন মনে বলে, এদেরকে গুলি করে মারা উচিত
এটা শুনে ডানপাশে উদাস হয়ে বসে থাকা হিম সাগর বলে, মেরে ফেললেতো বেঁচে যাবেওদের নুনু কেটে দেয়া উচিতস্যরি, ফর ব্যাড ওয়ার্ড
হিমসাগরের মুখে এটা শুনে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা আবুল হাশেম চমকে ওঠে নুনু কাটার কথা শুনে তার গা কাঁপতে থাকেকাঁপুনির তীব্রতা এত বেশি যে যাত্রী ছাউনির বেঞ্চটাও কেঁপে ওঠেটের পায় মারজাহান ও হিম সাগরদেখে একজন মোটামুটি বয়স্ক মানুষ জড়সড় হয়ে থর থর করে কাঁপছেমারজাহান আবুল হাশেমের কাছে যায়আবুল হাশেম ভয় পায়মারজাহান আবুল হাশেমের কপালে হাত দেয়আবুল হাশেম আরো ভয় পায়মারজাহান বলে আরে, আপনারতো অনেক জ্বরআপনি কোথায় থাকেন, কোথায় যাচ্ছেন?

আবুল হাশেম কথা বলে নামারাহান আবার জিজ্ঞাসা করেআবুল হাশেম এবারও কিছু বলে নাভয়ংকরভাবে কেঁপে যাচ্ছেমারজাহান বলে, চলেন আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই
আবুল হাশেম নড়ে নাখেমটি মেরে বসে থাকেহিম সাগর কিছু বলছে না, কৌতুহলী দৃষ্টিতে চেয়ে আছেমারজাহান আবুল হাশেমকে জোর করেবলে, আপনি আমার বাবার বয়সী, ভয় পাচ্ছেন কেন? চলেন হাসপাতালে যাইকাছেই একটা হাসপাতাল আছে
প্রায় জোর করে আবুল হাশেমকে বসা থেকে উঠায় মারজাহানএমন সময় মারজাহানের ফোনে কল আসেকল রিসিভ করেওই প্রান্ত থেকে কী বলছে কে জানে, মারজাহান বলছে আমি তিথি নই, মারজাহান
ফোন রেখে দেয়আবুল হাশেমের চোখে যেন আগুন জ্বলে উঠেকোথায় জ্বর আর কোথায় কাঁপুনি, গায়ে জানোয়ারের শক্তি ভর করেসর্বশক্তি দিয়ে মারজাহানকে ধাক্কা মেরে বলে, দূর হ ডাইনি!
তারপন হন হন করে হেঁটে চলে যায়ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় মারজাহানবেঞ্চের সাথে আঘাত খেয়ে ভ্রুর উপরে কপালের খানিকটা কেটে গিয়ে রক্ত ঝরছেএবার আর চুপ মেরে বসে থাকতে পারেনি হিম সাগরগা ঝাড়া দিয়ে উঠে মারজাহানকে তোলে
হিম সাগর বলে, চলুন আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই




ঈশ্বর আমার মৃত্যু কামনা করেন


লিখেছেন সবাক
যার যার ঈশ্বর দেখতে তার তার পূর্ব পুরুষদের মতনঈশ্বরের চেহারায় পূর্ব পুরুষদের ছাপ থাকেগতরাতে আমার ঘুম আসছিলো না এমনিতে ঘুম না এলে স্বপ্ন আসেএদিন স্বপ্ন আসেনি, তাই তিনি এলেনতিনি বললেন, দেখো, আমার চেহারায় তোমার বাবা ও দাদার ছাপ আছেআমিই তোমার ঈশ্বর
নিজেকে আধুনিক ঈশ্বর বলে দাবি করেন এবং বলেন, তিনি আসবেন তাই আমার ঘুম আসেনিআমি নাকি তার জন্য অপেক্ষা করছিএ কথা শুনে কিছুক্ষণ হাসলামতিনিও হাসলেন
ঈশ্বর এলেন মৃত্যুর দাবি নিয়েতিনি চান আমি যেন স্ব-ইচ্ছায় মৃত্যুবরন করিএখনো স্পষ্ট মনে আছে, আমার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ এনেছেন এবং বলেছেন এসব মেনে নিতেঈশ্বর যখন অভিযোগসমূহ বলছিলেন, তখন তাকে খুব রাগান্বিত দেখিয়েছেবেশ ক্ষুব্ধতার সাথে তার অভিযোগ বললেন
-গত বর্ষায় বৃষ্টির দিনে তোমার বাসার বাম পাশের গলির মুখে যমদূত পাঠিয়েছিলামকথা ছিলো তুমি খুন হবে এবং বৃষ্টির জলধারা রক্তে লাল হয়ে নেমে পড়বে ওয়াসার ড্রেনেকিন্তু তুমি গেলে ডান পাশের গলি দিয়ে এক সুন্দরী নারীর ছাতা ভাগাভাগি করে
-দুঃখিতবিষয়টা আমি জানতাম না
তার কিছুদিন পর অফিসের পাশে আন্ডারপাসের সিঁড়িতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকার কথা ছিলোযেখানে সিঁড়ি শেষ, সেখানে সামান্য জল জমে থাকবে আর তোমার রক্ত সিঁড়ি বেয়ে সেই জলে মিশে যাবেঅথচ তুমি সেদিন অফিসেই গেলে নাবাসায়ও ছিলে না
আপনার এই পরিকল্পনার কথাও আমার অজানা ছিলো
পরের সপ্তাহের একদিন রাত বারোটায় তোমার সিগারেট শেষ হয়ে গেলে সিগারেট কিনতে বের হবেওঁৎ পেতে থাকা যমদূত তোমার প্রাণ নিয়ে আমার কাছে ফিরে আসবে এই দেখো, ঠিক এরকমই লেখা আছে তোমার প্ল্যান বুকেসিগারেট ঠিকই শেষ হয়েছে কিন্তু সিগারেট কিনতে বের হয়েছিলো তোমার বন্ধুর গাড়ির ড্রাইভারএবং সেটা তোমার বন্ধুর বাসায়মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে বৌ বাচ্চাকে ঘরে একা রেখে বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলে মদ খেতে, আড্ডা দিতেযমদূত দেখেছে তোমার স্ত্রী ভয়ে সারা রাত ঘরে আলো জ্বেলে রেখেছিলোঅথচ তোমার কোন লজ্জা হয়নি
-বন্ধুর বাসায় গিয়ে মদ খাওয়া এবং আড্ডা দেয়ার বিষয়ে আমার স্ত্রীর কোন অভিযোগ ছিলো নাসে আলো ভালোবাসে, তাই আলো জ্বালিয়ে রেখেছিলোসত্যি কথা বলতে কী, আমাদের পরিবারের সবাই অন্ধকারে অনভ্যস্ত

ঈশ্বর বললেন, আমাদের পারিবারিক বিষয়ে তার কোন আগ্রহ নেইকিন্তু আমি যা করেছি, কিছুই তার পরিকল্পনায় ছিলো নাআমি নিজ পরিকল্পনায় চলছি এবং আইন অনুযায়ী একজন বিদ্রোহীকিন্তু যেহেতু নিজস্ব পরিকল্পনায় চলার যোগ্যতা অর্জন করেছি, সেহেতু যোগ্যতার মর্যাদাস্বরূপ কোন শাস্তি পেতে হবে নাশুধু তার পরিকল্পনা মতে মৃত্যুকে বরন করে নিলেই তিনি খুশি
খুব জোরশব্দে হাসার চেষ্টা করলামপেরেছিওএমন উচ্চস্বরে খুব টান টান দম নিয়ে এর আগে কখনো হাসিনিআমি জানি কারো হাসির শব্দ দূর থেকে মনযোগ দিয়ে শুনলে খুব বিশ্রী লাগেঅস্বস্তিকরহাসি থামিয়ে জানতে চাইলাম আমাকে কেন এভাবে পথে ঘাটে মরে থাকতে হবে এবং আমার রক্ত কেন উচ্ছিষ্ট জলে গিয়ে মিশবে? এমন অপ্রচলিত মৃত্যুর কারণ কী?
ইশ্বর ভরাট গলায় বললেন, তোমার দেশের বেশিরভাগ মানুষ এরকম মৃত্যু পছন্দ করেতাছাড়া তোমার বন্ধুদের মধ্যে যারা এর আগে এভাবে মারা গেছে, তাদের মৃত্যু দেশের অধিকাংশ মানুষকে আহত করেনিঅর্থাৎ তোমাদের জন্য এটাই প্রচলিত মৃত্যু
কিন্তু বিষয়টাতো আমার উপর নির্ভর করছেএভাবে মারা যাওয়া আমার পছন্দ নয়আমি আরো সম্ভ্রান্ত মৃত্যু চাই
শোনো, তোমার দেশে এখন একপক্ষ মরছে, আরেকপক্ষ মারছেএরা সংখ্যায় কম সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এসব মৃত্যুর জন্য যারা মরছে তাদেরকে দোষ দিচ্ছেতোমার উচিত জনমতকে শ্রদ্ধা জানানোআমি চাই তুমি আরো গণতান্ত্রিক হও
এসব কথা আপনার মত করে বলছেনমানুষের মত পরিবর্তন হয়এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়াআপনি এমন একজনকে মানুষের মতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মরে যেতে বলছেন, যে কিনা মানুষের মত পরিবর্তনের জন্য কাজ করেআপনি যুক্তি ছাড়া কথা বলছেনআপনি একজন অযৌক্তিক ঈশ্বর
এরপর ঈশ্বর বললেন আমি যেন তাকে তুমিসম্বোধন করিতিনি আমার বয়সে ছোট আমার আর আমার ঈশ্বরের জন্ম একই সময়ে হয়নিআমার জন্মের অনেক পরে নাকি তাকে সৃষ্টি করেছি
-মিথ্যা কথাআমি তোমাকে সৃষ্টি করিনি
তোমার বাবা, দাদা, মক্তবের হুজুর, স্কুলের শিক্ষকরা মিলে আমাকে তোমার জন্য সৃষ্টি করেছেএরপর তুমি ধারণ করেছো
কিন্তু শেষে তোমাকে ঘৃনা করেছিদূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছি
-হ্যাঁ, ঘৃনার আড়ালে ভালোবাসা লুকিয়ে থাকেসেই ভালোবাসার টানে এসেছিতুমি রাজি হও, খুন হয়ে যাওপ্লীজ!
কী অদ্ভুত!
আচ্ছা তোমরা ঈশ্বরকে সৃষ্টি করার পর যে পরিমান ক্ষমতা বা পাওয়ার দিয়ে থাকো, সত্যি সত্যি যদি কেউ সমপরিমান মহাপরাক্রমশালী হয়ে তোমার প্রাণ নিতে আসে, তুমি কি তাকে বাধা দিতে পারবে?
আমরা কি কোন ব্যাটারিচালিত ঈশ্বর নিয়ে আলোচনা করছি? এ বিষয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই
এবার তিনি খুব হতাশ হলেনআমার কাছে এরকম আচরণ আশা করেননিকথাটিকে গালি হিসেবে গ্রহণ করেছেনতার মতে ঈশ্বররা অদৃশ্য ক্ষমতায় চলেন, তাদের কোন ব্যাটারির প্রয়োজন হয় নাঅথচ তার মতামতকে আমি এতটুকু মূল্য দিইনিএমন কথার জবাবে তাচ্ছিল্যে হাসি হাসলাম
তার সাথে আলোচনায় আগ্রহ হারাচ্ছি দেখে তিনি আমার সাথে মৃত্যুর উপায় নিয়ে কথা বলা শুরু করলেনকয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মৃত্যুর কথা বললেনঈশ্বরের মতে এটা একটা সুযোগতিনি আমাকে মৃত্যুর অপশন দিবেনসেখান থেকে পছন্দসই উপায়ে মারা যেতে পারবোএই বিশেষ সুযোগটি কেবল আমার জন্যএরকম বললেন
মনে করো তারা তোমাকে নিয়ে একটি ৩০ তলা দালানের উপর উঠলোতারপর চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলোদালানের যে পাশে ধাক্কা মারবে, সে পাশে থাকবে একটি সুন্দর ফুলবাগানসেক্ষেত্রে তোমার রক্ত ফুল বাগানের মাটিতে মিশে যাবেসার হবে এবং সেই সারের পুষ্টিতে বাগানে আরো বেশি বেশি ফুল ফুটবেরক্ত ড্রেনের জলে মিশে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না
রক্তের শক্তিতে হৃষ্টপুষ্ট ফুলের জবাবে আমি কিছু বলিনি
অথবা ধরো তারা তোমাকে একটি বড় মাঠে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করলোতারপর ঠিক সেখানেই মাটিতে পুঁতে ফেললো
জ্যন্ত পুঁতে ফেললে কী হয়?
যাদের জন্য তুমি মারা যাবে, তাদের আত্মতৃপ্তির একটা ব্যাপার থাকে না! চাপাতি দিয়ে কোপানোর বিষয়টা এখন কালচারএভাবেই হচ্ছে
বাদ দাও এসব
আচ্ছা, আরো একটা উপায় বলিপ্রথমে তারা একটি গর্ত খুঁড়লোএরপর তোমাকে সেখানে শুইয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মাটিচাপা দিয়ে দিলোএতে আপত্তি আছে?
তুমি কি ঈশ্বর? নাকি ডেথ প্ল্যানার? এত নৃশংস মৃত্যু পরিকল্পনা নিয়ে বেঁচে আছোতোমার লজ্জা করে না?
দেখো, ঈশ্বর কখনো কাউকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে নাতিনি যে কাজে দক্ষ, সেটা হচ্ছে মৃত্যুআজ পর্যন্ত দেখেছো ঈশ্বর কাউকে বাঁচিয়ে রেখেছে? সবাই মরে যায়মরতে হয়
উনার কথা শুনে আমার গা গুলিয়ে বমি আসতে চাইলোতখনো ভোর হতে ঘন্টাখানেক বাকি ছিলোবমি করার জন্য যথেষ্ট সময় ছিলোচেষ্টাও করেছি, কিন্তু হয়নি ঠান্ডা মাথায় তাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি, যেহেতু আমি তাকে বিশ্বাস করি না, সেহেতু তিনি যেন আমার কাছে না আসেনআমার এসব ভালো লাগে না
আরেকটি কথা তাকে স্পষ্টভাবে বলেছিতার ইচ্ছা অনুযায়ী মারা যাওয়ার কোন আগ্রহ আমার নেইতিনি বললেন আগ্রহ যে নেই, এটা পুরোপুরি ঠিক নাতার দেয়া মৃত্যুর অপশন বিষয়ক আলোচনায় আমি অংশ নিয়েছি এবং জ্যন্ত পুঁতে ফেলার মত একটি অপশন প্রস্তাব করেছিপরোক্ষভাবে এটা নাকি আমার সম্মতিআমি বলেছি, এটা আমার সম্মতি নয়বরং এটা হচ্ছে ভয়কখনো যদি খুনীর মুখোমুখি হই, তখন হয়তো তাদের কাছে রক্তপাতহীন মৃত্যু দাবি করবোআমি লাল গোলাপ, লাল শিমুল, লাল ফিতা, লাল চুড়ি, লাল জুতো, লাল সূর্য, লাল ওয়াইন পছন্দ করিকিন্তু রক্ত নয়এতকিছু বলার পরও তিনি আমার মৃত্যু নিয়ে আলোচনা চালিয়ে গেলেনখুব অসহায়বোধ করলাম
-কিছু কথা বলি, মন দিয়ে শোনোএই দেশে তুমি যখন তখন মরে যেতে পারোমনে করো তুমি অটোরিক্সা করে কাওরান বাজার থেকে মতিঝিল যাচ্ছএকটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তোমাকে বহন করা অটোরিক্সাটি চাপা দিলোতুমি গেলেঅথবা মনে করো শশুর বাড়ি যাওয়ার সময় লঞ্চে করে পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছোএকটি ডুবো চরে ধাক্কা খেয়ে লঞ্চের তলায় ফাটল ধরে পানি ঢুকে ডুবে যেতে লাগলোক্লান্ত শরীরে তুমি তখন ঘুমিয়ে আছোঘুম ভাঙতে ভাঙতে লঞ্চের সবগুলো লাইফবয় অন্য যাত্রীরা দখল করে নিলোঅনেক কিছু আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকতে চাইলে, কিন্তু পারলে নাডুবে মরলে
প্লীজ, এসব বন্ধ করোতুমি এত বর্বর কেন? একটি মৃত্যু নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়লে কেন? এটা খুব বোরিং
এমনওতো হতে পারে তোমার বাসায় আগুন লাগলোবৌ বাচ্চাদের বাসা থেকে বের করতে গিয়ে শেষে নিজেই আটকা পড়লেআচ্ছা মানলাম তুমি আগুনে পুড়ে মরলে না কিন্তু ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মরে গেলেআসলে আমি বুঝাতে চাচ্ছি যে, জঙ্গীদের হাতে চাপাতির কোপ খেয়ে না মরলেও অন্য অনেক কারণে মরে যেতে পারোএখানে মরার জন্য হাজারটা সহজলভ্য উপায় আছেমরেই যখন যাবে, তখন আগামীকালই মরবে না কেন? আচ্ছা ঠিক আছেপরশু মরোঅথবা তার পরদিনতুমি একটা ডেট দাওসেদিন যমদূত পাঠাবোকোন ঝামেলা না করে মরে যাও
প্রয়োজনে আমি দেশ ছাড়বোএমন দেশে যাবো, যেখানে মৃত্যুর হাজারটা সহজলভ্য উপায় নেই
কোথায় যাবে? জামার্নী, সুইডেন, নরওয়ে, কানাডা, নেদারল্যান্ডস অথবা মনে করো সুইজারল্যান্ডই গেলেসবগুলো শীতের দেশমনে করো এমন শীত পড়লো যে, তুমি বরফে জমে গেলেমৃত্যু কিন্তু তোমার পিছু ছাড়বে নাআচ্ছা বাদ দাও শোনো, তোমার সাথে কথা বলাটা এখন আর এনজয় করছি নাখুব বোরড ফীল করছিএটা দ্রুত শেষ করো
আসলে ততক্ষণে আমিও খুব বিরক্ত ও বিব্রতবোধ করছিলামকখনো ভাবিনি ঈশ্বরের সাথে শুধু মৃত্যু নিয়ে কথা বলবোকিছুদিন ধরে প্রচুর মুভি দেখছিকয়েকটা মুভিতে ভয়াবহ প্লটহোল খুঁজে পেয়েছিখুব ভালো হতো যদি উনার সাথে মুভি নিয়ে কথা বলতে পারতামঅথবা আমার ছোট ছেলের মাথার চুল নিয়েতার চুলগুলো খুব দ্রুত বাড়ছে এবং বাদামী হয়ে যাচ্ছেএটা নিয়ে আমরা পারিবারিকভাবে অত্যন্ত ব্যস্ততার চুলের বেড়ে উঠা এবং রং পরিবর্তন নিয়ে বেশিরভাগ সময় আলোচনা করি কিন্তু ঈশ্বর এলেন শুধুই মৃত্যু নিয়ে কথা বলতেঅসহ্যএমনকি আমার সাথে তার কোন ভালো সম্পর্কও নেইআমার কাছে তিনি মঞ্চের ভাঁড়ের চাইতে হাস্যকর, এবং ভাঙা মদের গ্লাসের চাইতে বিরক্তিকরকখনোই আমি তাকে আশা করিনি
এতো বেশি ঘৃনা করা ঠিক নাতোমার চারপাশে অনেক উদাহরণ আছেযারা একসময় আমাকে খুব ঘৃনা করতো, এখন তারচে বেশি ভালোবাসেযখনই তুমি আমাকে ঘৃনা করতে থাকবে, তখনই আমি আশাবাদী হতে থাকবোকারণ আমি জানি একসময় তুমি আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসবেতাছাড়া তুমি যদি আমাকে আশা না করতে, আমি এখানে আসতে পারতাম নাযেভাবেই হোক, তুমি আমাকে আশা করেছতাই এসেছি
না, আমি তোমাকে আশা করিনিএকটুও না
তাহলে তোমার স্বপ্ন আসেনি কেন? তুমি কী অস্বীকার করতে পারবে যে দিন দিন কেমন স্বপ্নহীন হয়ে যাচ্ছোঈশ্বরের কোন ক্ষমতা নেই আত্মবিশ্বাসী কোন স্বপ্নবান মানুষের কাছে ঘেঁষারআজ তুমি সম্পূর্ণরূপে স্বপ্নহীন ছিলে বলেই আমি এসেছিঅথচ কেমন বাজে ব্যবহারটাই না করলেযদিও তাতে বিন্দুমাত্র অবাক হইনিকারণ মানুষের প্রতি এখন আর আমার কোন বিশ্বাস নেইমানুষ নিজে যাকে সৃষ্টি করে, আবার তাকেই ধ্বংস করে
এতক্ষণে একজন অভিমানী ঈশ্বরের দেখা পেলামহা হা হা
দেখো, আমি আমাকে সৃষ্টি করিনিএটা সম্ভব নাতোমরা ঈশ্বর বানাও, ধর্মগ্রন্থ বানাওআবার ঈশ্বরকে ধ্বংস করো, ধর্মগ্রন্থ নিয়ে হাসাহাসি করো এসব গ্রন্থ কি আমি লিখেছি? তোমরা এখন এসব গ্রন্থকে হাস্যকর বলো, উদ্ভট বলো অথচ এগুলো তোমাদের পূর্ব পুরুষরাই লিখে গেছেতোমরা নিজেরা যা জানো না, যা বুঝো না, যা আবিষ্কার করতে পারোনি, তার সবকিছু ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ঈশ্বরকে সৃষ্টি করেছোতোমাদের সকল ব্যর্থতার ভার আমাদেরকে বহন করতে হয় অনেক সময় কৃতিত্বের ভাগও দাওকিন্তু সেটা সবসময় নাতোমরা নিজেদের মত করে আমাদেরকে মহিমান্বিত করেছোতারপর আবার তুচ্ছতাচ্ছিল্যও করছোতোমরা আমাকে নিয়ে খেলছোএটা খুবই ফালতু একটা গেইম, যা তোমরাই সৃষ্টি করেছো
বলে যাওখারাপ লাগছে না
আমাকে তোমার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছেঅথচ আজ তুমি আমাকে স্বীকার করো নাআমি তোমার কাছে আসার জন্য, পাশে বসার জন্য শকুনের মতো তাকিয়ে থাকিকখন একটু সুযোগ পাবো, এই আশায়বহুদিন পর আজ সুযোগ পেয়েছিযতই অবহেলা, অপমান করো না কেন, আমার ভালো লেগেছেতুমি হয়তো জানো না, একা থাকার কী কষ্ট
তোমার কথায় যুক্তি আছেএতক্ষণে মনে হচ্ছে তোমার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া উচিত
কিন্তু আমাকে বলো কেন তুমি মরতে চাও না?
আসলে এটা মৃত্যুর জন্য সঠিক বয়স নয়তুমি জানো আমি এখন কী পরিমান ব্যস্তহাতে অনেক কাজতাছাড়া আমার দুটো ছেলে এখনো অনেক ছোটআমি তাদের যুবক বয়সটা দেখে যেতে চাইতারা কিভাবে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলে, কিভাবে অন্যের কাছে আকর্ষনীয়ভাবে উপস্থান করে, তাদের প্রতি আমার কতটুকু প্রভাব নিয়ে বেড়ে উঠে, কেমন মেয়ের সাথে প্রেম করবে, এসবতাছাড়া তাদেরকে সাথে নিয়ে আমি পাহাড় বাইতে যাবোতারা আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবেবলবে, কিভাবে পাহাড় বাইতে হয়
তুমি কি এটাকে তোমার স্বপ্ন হিসেবে নির্মাণ করেছো?
অনেকটা তাই
তুমি আমাকে এভাবে দুর্বল করতে পারো নাআমিও কিছু স্বপ্ন নিয়ে তোমার কাছে এসেছিকিন্তু তোমার স্বপ্ন যেভাবে নির্মিত হয়, আমার স্বপ্ন একই সাথে একইভাবে ধ্বংস হয়খুব মন খারাপ হলোকিছুটা সময় একা থাকতে পারলে ভালো লাগতোআশপাশে কেউ থাকলে মন খারাপ শেষ করা যায় নাবড়জোর এড়িয়ে যাওয়া যায়
তার আগে একেবারে সত্যি করে বলো, তুমি কেন আমাকে মারতে এত আগ্রহী
কারণ আমি মুক্তি চাইতোমার আমার জন্ম একইসাথে না হলেও আমাদের মৃত্যু একইসাথে হবেমানুষের মৃত্যুর পর আর তার ঈশ্বর বেঁচে থাকে নাইশ্বর তার মালিক ছাড়া একা বাঁচতে পারে নাহয় আমাকে ভালোবাসো, নয় মুক্তি দাও
আলোচনা এমন মানবিক রূপ ধারন করবে বুঝিনিঈশ্বরকে একটু একা থাকতে দিয়ে জলপান করতে রান্না ঘরে যাইজগে জল ছিলো নাজার থেকে জল ঢেলে খুব প্রশান্তি নিয়ে পেটভরে জল নিলামজানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি বাইরে ভোরের আলো ছড়িয়েছেগতকালের ভোরের সাথে আজকের ভোরের বিশেষ পার্থক্য নেইএকইরকম আলো, একইরকম কুয়াশাহঠাৎ খুব শীত শীত লাগছেখেয়াল করে দেখি, আমার গায়ে একটি হালকা ফুলহাতা টীশার্টঅথচ এতক্ষণ শীত গরম কিছুই অনুভব করিনিকিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে রীতিমত কাঁপছিদ্রুত শোবার ঘরে গেলাম সোয়েটার পরতেগিয়ে দেখি আমি আমার বিছানার উপর বসে আছিসোয়েটার পরেশোবার ঘরে এখন দুটো আমি একটি সোয়েটার পরা, আরেকটি সোয়েটার ছাড়াঈশ্বর চেহারা পাল্টে হুবহু আমার রূপ ধরে বসে আছেনবললেন, খুব শীত পড়ছে, এসো ঘুমিয়ে পড়ি
তার কথা এড়িয়ে যেতে পারিনিহঠাৎ চোখের পাতায় প্রচুর ঘুম নেমে আসে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলামপ্রতিদিন আমি দুটো বালিশ মাথায় দিয়ে খাটের মাঝখানে ঘুমাইঈশ্বর বালিশ দুটো পাশাপাশি রাখলেনতিনি ডানের বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লেনশীত থেকে বাঁচার জন্য আমিও দ্রুত বাম পাশের বালিশে শুয়ে পড়িঠিক তখন কানের কাছে মুখ এনে ঈশ্বর ফিসফিস করে বললেন, “মারা যাওয়ার কথাটা মাথায় রেখোচাইলে আত্মহত্যাও করতে পারো
তারপর আর কিছু মনে নেইসম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছিলামআজ দুপুরে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি ঈশ্বরের বালিশে শুয়ে আছিবাম পাশের বালিশটি খালিশোবার ঘরে আমি ছাড়া কেউ নেই