Monday, August 29, 2016

আমি কে? উত্তর পাইনি কোথাও খুঁজে। মানুষ কি? বরং সেই উত্তরটা নেই বুঝে।

প্রান থাকায় মানুষ দাবী করছে প্রানী, কিন্তু দৃশ্য অদৃশ্য বৃহৎ ক্ষুদ্র বৈচিত্রময় এই বিশাল প্রানীজগতে মানুষের অবস্থান কোথায়? দেখা যাক, প্রানী বিজ্ঞানই-বা কীভাবে মানুষ হিসাবে আমাদের শ্রেনী বিন্যস্ত করেছে-
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসঃ
-------------------------------
জগৎ: প্রাণী জগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: স্তন্যপায়ী
বর্গ: প্রাইমেট
পরিবার: হোমিনিডি
উপপরিবার: হোমিনিনে
গোত্র: হোমিনিনি
গণ: হোমো
প্রজাতি: হোমো স্যাপিয়েন্স
বাইনোমীল নাম: হোমো স্যাপিয়েন্স।
ক্যারোলাস লিনীয়াস, ১৭৫৮
মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স) হলো প্রাইমেট গণভুক্ত একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী যা তাদের সন্তানদের মাতৃদূগ্ধ পান করায়, দুইপায়ে ভর দিয়ে হাটতে পারে।প্রাইমেট বর্গের কোন প্রাণীই মানুষের ঠিক প্রত্যক্ষ পূর্বসূরী নয়। কিন্তু বর্তমানে জীবন্ত অন্যান্য প্রাইমেট ও মানুষেরা এক সাধারণ বিবর্তনের ইতিহাসের অংশীদার, বিবর্তনীয় মামাতো ফুফাতো কাকাতো ভাইয়ের মতোই। মানুষ ব্যতীত অন্যান্য প্রাইমেটদের আচরণ ও শারীরিক গঠন গবেষণা করে প্রাইমেটদের বিবর্তন সম্পর্কে তত্ত্ব দাঁড় করানো সম্ভব। মানুষের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য গবেষণা করে আমরা বোঝার চেষ্টা করতে পারি কীভাবে ও কেন প্রাইমেটদের একটি ধারা কালক্রমে বিবর্তিত হয়ে মানুষের আবির্ভাব হলো আর অন্য একটি ধারা বিবর্তিত হয়ে শিম্পাঞ্জি ও গরিলার আবির্ভাব ঘটলো।
প্রাইমেটদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো হলো, পায়ের নিচের অংশে ও হাতের সামনের অংশে দুইটি হাড়ের উপস্থিতি, কাঁধ ও বক্ষ সংযোগকারী অস্থি বা কলারবোন, কোন কিছু আঁকড়ে ধরার জন্য হাতের ও আঙ্গুলের বিশেষ গঠন, ঘনছকীয় বা স্টিরিওস্কোপিক দৃষ্টি, তুলনামূলকভাবে বড় মস্তিষ্ক, একবারে সাধারণত মাত্র একটি করে সন্তান উৎপাদন, অপত্যের পরিপক্কতাপ্রাপ্তির দীর্ঘ সময় এবং সামাজিক জীবন ও শিখনের উপর উচ্চমাত্রার নির্ভরশীলতা।
প্রাইমেট বর্গটি দুইটি উপবর্গে বিভক্ত -- প্রোসিমিয়ান ও অ্যানথ্রোপয়েড।
অ্যানথ্রোপয়েডদের তুলনায় প্রোসিমিয়ানেরা তথ্যের জন্য ঘ্রাণের উপর বেশি নির্ভরশীল। প্রোসিমিয়ানরা কান নাড়াতে পারে, এদের গোঁফ, বড় নাক ও মুখাগ্রভাগ চোঙাকৃতি লম্বাটে থাকে এবং এদের মুখের অঙ্গভঙ্গিতে তেমন কোন পরিবর্তন হয় না।
অ্যানথ্রোপয়েডরা আবার টারজিয়ার, নতুন বিশ্ব বানর, পুরাতন বিশ্ব বানর এবং হোমিনয়েড (পঞ্জিড বা এপ, এবং হোমিনিড বা মানুষ) --- এই ভাগগুলিতে বিভক্ত। অ্যানথ্রোপয়েডদের মাথার খুলি গোলাকৃতি, এদের কান আকারে ছোট ও নড়নক্ষম নয়, এবং এদের মুখ ছোট ও চ্যাপ্টা, চোঙাকৃতি নয়। এরা আঙ্গুলের সাহায্যে হাতের কাজে অত্যন্ত কুশলী।
পঞ্জিড বা এপ জাতীয় অ্যানথ্রোপয়েডগুলি আবার ক্ষুদ্রাকার এপ (গিবন ও সিয়ামাং) এবং বৃহদাকার এপ (ওরাংউটান, গরিলা এবং শিম্পাঞ্জি) --- এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত।
গরিলা ও শিম্পাঞ্জিদের রক্তের রসায়ন ও মানুষের রক্তের রসায়নে অনেক মিল রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য অনেক শারীরিক ও আচরণিক দিক থেকেও এরা মানুষের মতনই। বন্য শিম্পাঞ্জিরা প্রাকৃতিক বস্তুকে বিশেষ প্রয়োজনে হাতিয়ারেও রূপান্তরিত করতে পারে। গরিলা ও শিম্পাঞ্জিরা প্রতীকী ভাষা শেখার ব্যাপারেও উঁচুমানের চিন্তাশক্তির প্রমাণ দিয়েছে।
প্রাইমেটদের বিভিন্ন শারীরিক ও আচরণগত বৈচিত্র্য পরিবেশের বিচিত্রতা, কাজকর্মের ভিন্নতা এবং পুষ্টির ভিন্নতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। নিশাচর প্রাইমেটরা আকারে ছোট হয় এবং একা কিংবা খুব ছোট দলে বাস করে আর দিবাচর প্রাইমেটদের মধ্যে বৃক্ষারোহী প্রাইমেটগুলি ভূমিচারী প্রাইমেটদের চেয়ে আকারে ছোট হয় এবং অপেক্ষাকৃত ছোট দলে বাস করে। ফলাহারী প্রাইমেটদের মগজ তুলনামূলকভাবে বড় হয়।
মানুষেরা অন্যান্য প্রাইমেটদের থেকে বিভিন্ন দিক থেকে আলাদা। মানুষেরা সম্পূর্ণ দ্বিপদী; এরা হাতের সাহায্য না নিয়েই দুই পায়ে চলাচল করতে সক্ষম। মানুষের মগজ সমস্ত প্রাইমেটের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও জটিল, বিশেষত মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্স এলাকায়। অন্য প্রাইমেটদের স্ত্রী জীবদের সাথে মনুষ্য স্ত্রীলোকদের পার্থক্য হল এরা বছরের যেকোন সময়ে যৌন প্রজননে অংশ নিতে পারে, তাই মানুষের যৌনকর্মের নির্ধারিত মৌসুম নেই। মানুষের শিশুরা তুলনামূলকভাবে বেশিদিন-ই পরনির্ভরশীল থাকে। অন্যান্য প্রাইমেটদের তুলনায় মানুষের আচরণের উপর সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রভাব অনেক বেশি। মুখের ভাষা এবং এক হাতিয়ার ব্যবহার করে অন্য আরও হাতিয়ার বানানোর বৈশিষ্ট্য মানুষের একান্তই নিজস্ব। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য বিতরণ প্রক্রিয়াতে শ্রমবিভাজন পরিলক্ষিত হয়।
উৎপত্তিঃ
-----------
মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে নানা নৃতাত্ত্বিক মতবাদ আছে। খুব সম্ভবত আজকের সব মানুষ একই উৎস থেকে উদ্ভূত হয়ে পরে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। মানুষের খুব নিকটাত্মীয় কিন্তু ভিন্ন উৎসজাত অন্যান্য শাখাগুলি অতীতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় আজ শিম্পাঞ্জী ও গরিলা-ই মানুষের নিকটতম আত্মীয, কিন্তু পূর্বসুরি নয়।
বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ আর পৃথিবীর বুকে চড়ে বেড়ানো অন্যান্য নরবানরেরা অনেক অনেককাল আগে একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়ে বিবর্তিত হয়েছে এবং আলাদা আলাদা ধারা বা লিনিয়েজ তৈরি করেছে। সে হিসেবে আমরা আধুনিক নরবানরগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও ঠিক সরাসরি উত্তরসূরী নই। আমরা আসলে এসেছি বহুদিন আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ধরনের সাধারণ পূর্বপুরুষ হিসেবে কথিত প্রাইমেট থেকে। বানর থেকে মানুষের উদ্ভব হয়নি, বরং সঠিকভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ প্রজাতিরও উদ্ভব ঘটেছে বহুদিন আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ধরনের সাধারন প্রাইমেট থেকে এবং সেই একই সাধারন পূর্বপুরুষ থেকে শিম্পাঞ্জি, গরিলা এবং ওরাং ওটাং-এর মতো প্রাণীকূলেরও উদ্ভব ঘটেছে। প্রাণের বিকাশ এবং বিবর্তনকে একটা বিশাল গাছের সাথে তুলনা করলে একই পূর্বপূরুষ থেকে উদ্ভূত হয়ে বিবর্তনীয় জাতিজনিত বৃক্ষের বিভিন্ন ডাল পালা তৈরি হয়েছে । এর কোন ডালে হয়তো শিম্পাঞ্জির অবস্থান, কোন ডালে হয়ত গরিলা আবার কোন ডালে হয়ত মানুষ। অর্থাৎ, একসময় তাদের সবার এক সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিলো, ১.৪ কোটি বছর আগে তাদের থেকে একটি অংশ বিবর্তিত হয়ে ওরাং ওটাং প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। তখন, যে কারণেই হোক, এই পূর্বপুরুষের বাকি জনপুঞ্জ নতুন প্রজাতি ওরাং ওটাং এর থেকে প্রজননগতভাবে আলাদা হয়ে যায় এবং তার ফলে এই দুই প্রজাতির বিবর্তন ঘটতে শুরু করে তাদের নিজস্ব ধারায়। আবার প্রায় ৯০ লক্ষ বছর আগে সেই মুল প্রজাতির জনপুঞ্জ থেকে আরেকটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং পরবর্তিতে ভিন্ন ধারায় বিবর্তিত হয়ে গরিলা প্রজাতির উৎপত্তি ঘটায়। একইভাবে দেখা যায় যে, ৬০ লক্ষ বছর আগে এই সাধারণ পুর্বপুরুষের অংশটি থেকে ভাগ হয়ে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির বিবর্তন ঘটে। তারপর এই দুটো প্রজাতি প্রজননগতভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তখন থেকেই একদিকে স্বতন্ত্র গতিতে এবং নিয়মে মানুষের প্রজাতির বিবর্তন ঘটতে শুরু করে, আর ওদিকে আলাদা হয়ে যাওয়া শিম্পাঞ্জির সেই প্রজাতিটি ভিন্ন গতিতে বিবর্তিত হতে হতে আজকের শিম্পাঞ্জিতে এসে পৌঁছেছে।
ব্যুৎপত্তিঃ
------------
প্রাণীবিদ্যা অনুসারে মানুষ (অর্থাৎ আমরা) শিম্পাঞ্জীদের নিকটাত্মীয় একরকম দ্বিপদ স্তন্যপায়ী প্রাণী। মানব জাতি সম্পর্কিত গবেষণা এক বিশেষ বিষয় যার নাম নৃতত্ত্ব বা নৃবিজ্ঞান। নৃবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান শাখা হল দৈহিক নৃবিজ্ঞান। দৈহিক নৃবিজ্ঞানের একটি উপশাখায় পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব ও পরবর্তীকালে তাদের শারীরিক বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয়; এই ক্ষেত্রটি মনুষ্য জীবাশ্মবিজ্ঞান নামে পরিচিত। দৈহিক নৃবিজ্ঞানের আরেকটি উপশাখায় বর্তমান মনুষ্য সমাজগুলির মধ্যকার দৈহিক বৈচিত্র্যের প্রকৃতি ও কারণ আলোচনা করা হয়; এই ক্ষেত্রটি মনুষ্য বৈচিত্র্য নামে পরিচিত।
নৃবিজ্ঞানের দ্বিতীয় প্রধান শাখা হল সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান আবার তিনটি উপশাখায় বিভক্ত---প্রত্নবিজ্ঞান, নৃতাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞান ও জাতিবিজ্ঞান। এই তিনটি উপশাখাই মানুষের সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। এগুলি থেকে কোন নির্দিষ্ট সমাজের চিন্তাধারা ও আচরণের রীতিনীতি বুঝতে পারা যায়।
প্রত্নবিজ্ঞানীরা প্রাগৈতিহাসিক মানুষদের দৈনন্দিন জীবন এবং রীতিনীতি তাত্ত্বিকভাবে পুনর্গঠন করতে চেষ্টা করেন। এছাড়াও তাঁরা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন অনুসরণ করেন এবং এই পরিবর্তনগুলি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। তারা পুরাতন মনুষ্য সংস্কৃতিগুলির অবশেষ থেকে ইতিহাস পুনর্নির্মাণের চেষ্টা চালান।
সামাজিক বিবর্তনঃ
-------------------------
অন্যন্য বাঁদর জাতীয় স্তন্যপায়ীর মত মানুষও সাধারণতঃ দলবদ্ধ-ভাবে থাকে। কিন্তু মানুষের স্থায়ী বসতি প্রতিষ্ঠা অপেক্ষাকৃত নতুন (১৫ হাজার বছরর কম)। প্রাইমেটকে বানরের শব্দার্থ হিসেবে বিবেচনা করলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে, মানুষও একধরনের প্রাইমেট বা বানর জাতীয় প্রানী বৈ কিছু নয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মাঙ্কি একটি অধিবর্গ বা প্যারাফাইলেটিক গ্রুপ, আধুনিক ফাইলোজেনেটিক্সে প্যারাফাইলেটিক গ্রুপ শক্তভাবে এড়িয়ে চলা হয়। আমরা কোন মাঙ্কি অবশ্যই নই, তবে অবশ্যই অবশ্যই আমরা প্রাইমেট। আমাদের পাশাপাশি অবস্থিত একজোড়া চোখ, ত্রিমাত্রিক, রঙ্গীন, স্টেরিও দৃষ্টি, চোখের পেছনে বিশাল বড় একটা মাথা, আড়াই শত দিনের কাছাকাছি গর্ভকালীন সময়, বয়ঃপ্রাপ্ত হবার পূর্বে একটা অস্বাভাবিক রকম বিশাল শৈশব, ল্যাটেরাল থেকে ক্রমান্বয়ে স্ক্যাপুলার ডোর্সাল অক্ষে পিছিয়ে যাওয়া , পেন্ডুলার পিনেস এবং টেস্টস, অস্বাভাবিক বিকাশপ্রাপ্ত প্রাইমারি সেন্সরি কর্টেক্স আমাদের বানায় বানরজাতীয় জীব বা প্রাইমেট, এটা আমরা পছন্দ করি আর নাই করি। মানুষ সহ সব বনমানুষই স্তন্যপায়ী প্রানীর অন্তর্গত প্রাইমেট বর্গে পড়েছে। এখন পর্যন্ত প্রাইমেটদের দু'শরও বেশি প্রজাতির সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। মানুষকে এই প্রাইমেট বর্গের মধ্যে হোমিনিডি অধিগোত্রের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়।
মানব বিবর্তনঃ
-------------------
মানব বিবর্তন বা মানুষের উৎপত্তি বলতে বিবর্তন এর মাধ্যমে অন্যান্য হোমিনিড এবং বনমানুষ থেকে একটি আলাদা প্রজাতি হিসেবে হোমো স্যাপিয়েন্স-দের উদ্ভবকে বোঝায়। এই বিষয়টি নিয়ে অধ্যয়ন করতে হলে বিজ্ঞানের অনেক শাখার সাহায্য নিতে হয়, যেমন: নৃবিজ্ঞান, প্রাইমেটবিজ্ঞান, জীবাশ্মবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব এবং জিনতত্ত্ব।
"মানুষ" বা "হিউম্যান" শব্দটি দ্বারা এখানে প্রকৃতপক্ষে কেবল হোমো গণের অন্তর্ভুক্ত প্রাণীদেরকে বোঝানো হচ্ছে, যদিও মানব বিবর্তন গবেষণা করতে গিয়ে অস্ট্রালোপিথেকাস গণের অনেক প্রজাতি নিয়ে অধ্যয়ন করতে হয়- স্বভাবত সেগুলোর আলোচনাও এই বিষয়ের অধীনেই হয়। আনুমানিক ২৩ লক্ষ থেকে ২৪ লক্ষ বছর পূর্বে আফ্রিকাতে হোমো গণটি অস্ট্রালোপিথেকাস গণ থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল। হোমো গণে অনেক প্রজাতিরই উদ্ভব ঘটেছিল যদিও একমাত্র মানুষ ছাড়া তাদের সবাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ ধরণের বিলুপ্ত মানব প্রজাতিগুলোর মধ্যে রয়েছে হোমো ইরেক্টাস যারা এশিয়ায় বাস করতো এবং হোমো নিয়ানডার্টালেনসিস যারা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ছড়িয়ে ছিল। আর্কায়িক হোমো স্যাপিয়েন্স-দের উদ্ভব ঘটেছিল আনুমানিক ৪০০,০০০ থেকে ২৫০,০০০ পূর্বের সময়কালের মধ্যে। আর্কায়িক বলতে হোমো স্যাপিয়েন্সদের প্রাচীনতম সদস্যদের বোঝানো হয় যারা প্রজাতিগত দিক দিয়ে এক হলেও আধুনিক মানুষের চেয়ে কিছু ক্ষেত্রে পৃথক ছিল।
এবার দেখি এইসকল প্রত্নতাত্বিক আবিষ্কারগুলো মানব বিবর্তনে কী কী স্বাক্ষ্যপ্রমান দেয়-
১) ৮,৫০,০০০ বছর পূর্বের মানব পদচিহ্ন পাওয়া গেলো নরফক, ভার্জিনিয়াতে ।
২) ২০০১ সালে অ্যালেইন ব্যুভিলেইন, ফ্যানন গঙডিবি, মহামাত আদুম এবং আহুমতা জিমদুমালবে এর তত্ত্বাবধানে আফ্রিকান দেশ চাদে পাওয়া যায় সাহেলানথ্রোপাস চাদেন্সিস এর প্রাচীন জীবাশ্ম বা ফসিল , যে প্রজাতি থেকে শিম্পাঞ্জি আর মানুষ আলাদা হয়ে গেছে বলে ধারনা, সেটাও প্রায় ৭০,০০,০০০ বছরের পুরনো ।
৩) ১৯৭৮ সালে শুনতাং লিউ এর তত্ত্বাবধানে আধুনিক মানুষের কাছাকাছি ২,০০,০০০ বছরের পুরনো হোমো ইরেক্টাস এবং হোমো স্যাপিয়েন্স এর মাঝামাঝি লিঙ্ক ফসিল পাওয়া যায় চায়নাতে ।
৪) ১৯৬৭ সালে রিচার্ড লীকি এর তত্ত্বাবধানে আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্স এর প্রাচীন ফসিল পাওয়া যায় ইথিউপিয়াতে , যা প্রায় ১,৯০,০০০ বছরের পুরনো ।
৫) ১৮৬৮ সালে লুইস ল্যার্টেড এর তত্ত্বাবধানে ৩০,০০০ বছরের পুরনো আধুনিক হোমো সেপিয়েন্স প্রজাতির ক্রো-ম্যাগনন-১ ফসিলটি ফ্রান্সে আবিষ্কৃত হয় ।
সেই সাথে ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ বছরের পুরনো আধুনিক মানুষের প্রজাতির আরও ফসিল পাওয়া যায়, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলংকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, রোমানিয়া, যুক্তরাজ্য এবং জাপানে ।
৬) সর্বশেষ ২০০৩ সালে পিটার ব্রাউন এর তত্ত্বাবধানে ইন্দোনেশিয়াতে আবিষ্কৃত হয় ১৮,০০০ বছরের প্রাচীন খর্বাকৃতি বামন মানুষ হোমো ফ্লোরেসিয়েন্সিস এর ফসিল ।
৭) প্রায় ৩২০০০ বছর আগের মানুষের আঁকা ফ্রান্সের গুহায় আবিস্কৃত “বাইসন” এর পেইন্টিং এর কথা জানি ।
আধুনিক মানুষ হোমো সেপিয়েন্স এর কাছাকাছি বাকিসকল প্রজাতিগুলো বিভিন্ন সময় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাওয়া যায়, যা নির্দেশ করে পৃথিবীতে তাদের বিচরন ও বিলুপ্তকাল..
১) হোমো রুডলফেন্সিস(২৩ - ২৫লক্ষ বছর পূর্ব),
২) হোমো হ্যাবিলিস(১৯লক্ষ বছর পূর্ব),
৩) হোমো ইরেক্টাস(১৮লক্ষ বছর পূর্ব),
৪) হোমো এরগ্যাস্টার(১৬লক্ষ বছর পূর্ব),
৫) হোমো গ্যটেনজেন্সিস(১৫-২০লক্ষ বছর পূর্ব),
৬) হোমো এন্টেসেসর(১২লক্ষ বছর পূর্ব),
৭) হোমো হেইডেলবার্গেন্সিস।(৬-১৪লক্ষ বছর পূর্ব),
৮) হোমো রডেসিয়েন্সিস( ৫লক্ষ বছর পূর্ব),
৯) হোমো নিয়ান্ডার্টালেন্সিস(২.৫লক্ষ বছর পূর্ব ),
১০) হোমো সেপিয়েন্স ইডাল্টু(১.৬লক্ষ বছর পূর্ব),
১১) হোমো ফ্লোরেসিয়েন্সিস(১৮হাজার বছর পূর্ব)
দেহের অভ্যন্তরীন গড়নের দিক থেকে সম্পূর্ণ আধুনিক মানুষের উদ্ভব নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য অনুকল্প হচ্ছে "আউট অফ আফ্রিকা" বা "আফ্রিকা থেকে বহির্গমন" অনুকল্প যার সারকথা হচ্ছে আমরা আফ্রিকাতে উদ্ভূত হওয়ার পর আনুমানিক ৫০,০০০-১০০,০০০ বছর পূর্বে বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছি।আমাদের বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতির সময়টাতেই এশিয়া থেকে হোমো ইরেক্টাস (যাদেরকে ইরেক্ট ডাকা হয়) এবং ইউরোপ থেকে নিয়ানডার্টালরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আরেকটি ভিন্ন অনুকল্প হচ্ছে, আনুমানিক ২৫ লক্ষ বছর পূর্বে ইরেক্ট বা এরগ্যাস্টরা আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল, এদের উত্তরপুরুষ হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পৃথক পৃথক ভাবেই আমাদের উৎপত্তি ঘটেছে, তবে ভৌগলিকভাবে পৃথক সেসব হোমো-দের মধ্যে অন্তঃপ্রজনন সম্ভব ছিল। প্রতিনিয়তই মানব বিবর্তন সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য জানতে পারছি আমরা।
কোন জীবের বংশধরদের মাঝে যে জিনরাশি ছড়িয়ে পড়ে তারাই বংশপ্রবাহে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে। জিনের পরিব্যক্তির মাধ্যমে জীবের নির্দিষ্ট কোন বংশধরে নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হতে পারে বা পুরনো বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটতে পারে। যদিও একটি প্রজন্মে জীবের বৈশিষ্ট্যের যে পরিবর্তন সাধিত হয়, তা খুবই সামান্য। কিন্তু কালক্রমে জীবগোষ্টীতে সেই পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য হয়ে দেখা দেয় এবং এমনকি একসময় তা নতুন প্রজাতির উদ্ভবেরও কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যকার দৃশ্যমান বিভিন্ন অঙ্গসাংস্থানিক ও জিনগত সাদৃশ্যগুলো একটা ধারণা দেয় যে আমাদের পরিচিত সকল প্রজাতির প্রাণীই এক ধারাক্রমিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি "সাধারণ পূর্বপুরুষ" থেকে ধীরে ধীরে উৎপত্তি লাভ করেছে।
বিবর্তনের ভিত্তি হচ্ছে বংশপরম্পরায় জিনের সঞ্চারণ। যা একটি জীবের বংশগতভাবে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য দায়ী, তা-ই জিন। এই জিনগুলোর বিভিন্নতার কারণে একটি জীবগোষ্ঠীর বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে বংশগত বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য বা প্রকরণ সৃষ্টি হয়। বিবর্তন মূলত দুটি বিপরীত নিয়ামকের ফল, একটি প্রক্রিয়ায় ক্রমাগতভাবে নতুন প্রকরণ সৃষ্টি হয়, আর অন্যটির প্রভাবে এই প্রকরণগুলোর কোন কোনটির সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং কোন কোনটির সংখ্যা হ্রাস পায়। নতুন প্রকরণ উৎপন্ন হয় দুটি প্রধান উপায়েঃ ১. জিনগত মিউটেশন বা পরিব্যপ্তির মাধ্যমে এবং ২. বিভিন্ন জীবগোষ্ঠী বা প্রজাতির মধ্যে জিনের স্থানান্তরের মাধ্যমে। "জিনেটিক রিকম্বিনেশন" বা জিনগত পূনর্গঠনের মাধ্যমেও নতুন বৈশিষ্ট্যসূচক জিন তৈরি হয় যা জীবগোষ্ঠীর মধ্যকার প্রকরণ বৃদ্ধির অন্যতম কারন।
দুটি প্রধান করণকৌশল নির্ধারণ করে কোন একটি ভ্যারিয়্যান্টের সংখ্যা বাড়বে কি কমবে। একটি হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচন, যে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে একদিকে একটি জীবগোষ্ঠীর অস্তিত্বের অনুকূল বৈশিষ্ট্যের (যে বৈশিষ্ট্যগুলো কোন একটি জীবের অধিককাল ধরে বেঁচে থাকা এবং সন্তান উৎপাদনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে) অধিকারী সদস্য বা ভ্যারিয়্যান্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ও কালক্রমে তা ঐ জীবগোষ্ঠীর সাধারণ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয় এবং অন্যদিকে ক্ষতিকর বা কম সুবিধাদায়ক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভ্যারিয়্যান্টদের সংখ্যা হ্রাস করে, ফলে সেই ভ্যারিয়্যান্টগুলো ধীরে ধীরে বিরল হয়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাপেক্ষে সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সদস্যগুলো অধিককাল বেঁচে থাকে এবং অধিক সংখ্যক সন্তান জন্ম দিতে পারে। ফলে বংশপরম্পরায় সেই বৈশিষ্ট্যগুলো বংশগতভাবে পরবর্তী প্রজন্মগুলোতে বেশি পরিমাণে সঞ্চারিত হয়। প্রজন্মান্তরে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ছোট ছোট দৈব পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্যগুলো ক্রমান্বয়ে জীবগোষ্ঠীতে প্রকট হয়ে দেখা দেয় এবং এভাবে সেই জীবগোষ্ঠী তার পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়।বিবর্তনের আরেকটি প্রধান করণকৌশল হচ্ছে "জিনেটিক ড্রিফট", যে স্বাধীন পদ্ধতিতে গোষ্ঠীস্থিত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতির হার দৈবাৎ পরিবর্তিত হয়।
ভাষার আবির্ভাবঃ
------------------------
মানুষের বুদ্ধির উন্নতি মানুষের জটিল ভাষা ব্যবহার করার ক্ষমতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত।তাই এরা আজ আধুনিক সভ্যতা আবিস্কার করতে পেরেছে, আমাদের সংস্কৃতির বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে এই ভাষার অবদান। কিন্তু ভাষার উৎপত্তি ঠিক কবে কোথায় প্রথম হয়েছিলো, এর স্বপক্ষে তেমন বেশীকিছু প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন বা জিবাশ্মিক প্রমান নেই। ভাষার উৎসের জন্য আমাদেরকে অপ্রত্যক্ষ প্রমাণের উপরেই নির্ভর করতে হবে। প্রাচীন মানুষদের বাগযন্ত্র (জিহ্বা, ঠোঁট, স্বরযন্ত্র) সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারলে আমরা হয়তো অনেক কিছু জানতে পারতাম, কিন্তু এগুলি নরম পেশীকলা দিয়ে তৈরি বলে আজ আর এগুলির অস্তিত্ব নেই। নৃবিজ্ঞানীদেরকে তাই খুলির হাড় থেকেই প্রমাণ সংগ্রহ করতে হয়েছে। এর বাইরে প্রাচীন মনুষ্যবসতির আশেপাশে পাওয়া পাথরের হাতিয়ার, ফেলে দেওয়া জীবজন্তুর হাড় ও অন্যান্য উপকরণ থেকে যতদূর সম্ভব তথ্য আহরণ করতে হয়।
৮০ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকার কিছু জঙ্গলে বাস করত এপ-জাতীয় কিছু প্রাণী, যেই এপ-জাতীয় প্রাণীগুলির মধ্যে শিম্পাঞ্জি ও মানুষদের পূর্বপুরুষও ছিল। এরা সম্ভবত ছিল বর্তমান গরিলাদের মতো। এরা মূলত বৃক্ষে বসবাস করত, মাটিতে চার পায়ে হাঁটত এবং বিশ-ত্রিশটার মত ভিন্ন ডাকের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করত। আজ থেকে ২০ লক্ষ বছর আগে মানুষের পূর্বপুরুষ এই প্রাণীটি শিম্পাঞ্জিদের পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে এই প্রাণীগুলির ভাষা ছিল তুলনামূলকভাবে বেশ উন্নত; কিন্তু মানুষদের এই আদি পূর্বপুরুষদের ভাষার প্রকৃতি সম্পর্কে খুব কমই জানতে পারা গেছে। আধুনিক মানুষ তথা হোমো স্যাপিয়েন্স-এর ভাষার উৎস নিয়ে বিংশ শতাব্দীর বেশির ভাগ সময় ধরেই তেমন কোন গবেষণা হয়নি। কেবল অতি সম্প্রতি এসেই এ বিষয়ে নৃবিজ্ঞানী, জিনবিজ্ঞানী, প্রাইমেটবিজ্ঞানী এবং স্নায়ুজীববিজ্ঞানীদের আহরিত তথ্য কিছু কিছু ভাষাবিজ্ঞানী খতিয়ে দেখছেন।
নৃবিজ্ঞানীরা আরও মনে করেন, ভাষার উৎপত্তির ঘটনা ইতিহাসে একবারই ঘটেছিল, একাধিকবার নয়। বিশ্বের সর্বত্র প্রচলিত মনুষ্য ভাষাগুলির মধ্যে গাঠনিক সাদৃশ্য এই অনুমানের ভিত্তি। ধারণা করা হয় আধুনিক ভাষাক্ষমতা বলতে যা বোঝায়, তার সূচনা ঘটেছিল অস্ট্রেলিয়াতে হোমো স্যাপিয়েন্সদের বসতি স্থাপনের মধ্য দিয়ে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণা অনুসারে এই ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে ৪০ থেকে ৬০ হাজার বছর আগে।
অন্যদিকে এ কথাও সত্য যে আধুনিক মুখের ভাষাগুলির বিভিন্ন ধ্বনি উচ্চারণের জন্য মানুষের বিশেষ উল্টো L আকৃতির বাগনালী প্রয়োজন, এবং স্বরযন্ত্র বা ল্যারিংক্সের গলার বেশ ভেতরে থাকা প্রয়োজন। কোন কোন প্রত্নতাত্ত্বিকের মতে নিয়ান্ডার্থাল মানুষদের মধ্যেও ল্যারিংক্সের অবস্থান গলার বেশ উপরের দিকে ছিল এবং তাদের পক্ষে বর্তমান মনুষ্য ভাষার ধ্বনিগুলি উচ্চারণ করা সম্ভব ছিল না। আবার কোন কোন প্রত্নতাত্ত্বিক মনে করেন মানুষ যখন দুই পায়ে হাঁটা শুরু করেছিল, তখন মানুষের মাথার খুলি মেরুদণ্ডের সাথে একই রেখাতে চলে আসে এবং খুলির ভিত্তির সংকোচন ঘটে, ফলে মানুষের স্বরযন্ত্র গলার গভীরে নেমে আসে। এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন দ্বিপদী মানুষটি হল অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেন্সিস প্রজাতির লুসি-র কঙ্কাল, যার বয়স প্রায় ৩০ লক্ষ বছর। সুতরাং অনুমান করা যায়, ঐ সময়ের দিকেই মানুষের ভাষা উৎপাদনকারী বিশেষ বাগযন্ত্রেরও উৎপত্তি হয়েছিল।
শারীরিক গঠন ও প্রক্রিয়াঃ
-----------------------------------
চার পায়ের বদলে দুই পায়ে চলতে আরম্ভ করার সাথে সাথে মানব শরীর-গঠন ও শরীর-প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে নানা পরিবর্তন দেখা দিতে আরম্ভ করে। যেমন পেটের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিকে নীচে পড়ে যাওয়ার থেকে রক্ষা করার জন্য শ্রোণীচক্রের ব্যাস ছোট হয়। বাচ্চার জন্মের পথ সরু হয়ে যাওয়াতে গর্ভে মস্তিষ্ক বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বাচ্চাকে ভূমিষ্ঠ হতে হয়। তার ফল সদ্যোজাত মানবশিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে পরনির্ভরশীল। তাকে বহুদিন মা-বাবা ও অন্যান্যদের অভিভাবকত্বে বড় হতে হয়। এখানে ভাষার অবদান গুরত্বপূর্ণ। মুখ ও গলার গঠনে পরিবর্তন হওয়ার কারণে মানুষ অনেক জটিল মনোভাব আদানপ্রদানে সক্ষম হয়। মানুষের উদ্বর্তনের সবথেকে মূল্যবান উপহার মস্তিষ্কের উন্নতি। মানুষের মস্তিষ্ক প্রাণীরাজ্যে বৃহত্তম না হলেও আপেক্ষিকভাবে বৃহত্তরদের অন্যতম। মানুষ জন্মাবার বহুবছর অবধি স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ অব্যহত থাকে। অন্যান্য মানুষদের সঙ্গে ভাষা ও ভঙ্গীর সাহায্যে ভাব বিনিময় করতে করতে বহু আচার-ব্যবহার অধীকৃত হয়, যা জন্মগত ভাবে (জীনের মাধ্যমে) সহজে বর্তায়না। দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থাও এতে উপকৃত হয়। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে বয়স্কা মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয় তথা রজোনিবৃত্তি ঘটে বলে তাদের ভুমিকা মায়ের বদলে দিদিমায় উপনীত হয়, ফলে তাদের দুই প্রজন্ম পরের মানবশিশুদেরও সুরক্ষা বর্ধিত হয়, শিক্ষা ত্বরান্বিত হয়। মানুষই একমাত্র প্রাণী যাদের বয়ঃসন্ধি ও রজোনিবৃত্তি আছে।
কোটি কোটি বছরের প্রানবৈচিত্রে এইতো সেদিন পর্যন্ত এই পৃথিবীতে মানুষের গুরুত্ব, ওরাংওটাং, শিম্পাঞ্জি, সরিসৃপ, উভচর কিংবা শুয়োপোঁকার চেয়ে খূব একটা বেশী ছিলোনা, সেদিন এই মানুষেরই কোন পূর্বপুরুষ সেই প্রাইমেটরা ভুলেও ভাবতে পারেনি, আমাদের উত্তরসূরীরাই একদিন পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াবে, ভিনগ্রহ উপগ্রহে পাড়ি জমাবে, অনু পরমানু কনিকা ভেংগে ফেলবে। অমরত্বের পথে ধাবমান মানুষ মহাজাগতিক রহস্যময় প্রশ্নের উত্তর নিজেই খুঁজে নিবে-
আমি কে?
আমি কী?
মহাজাগতিক প্রানবৈচিত্রে আমিত্ব সন্ধানীঃ
-----------------------------------------------------
তথ্যসূত্রঃ "মানুষ" "মানব বিবর্তন" "বিবর্তন" "জিনতত্ব", "জিবাশ্ববিজ্ঞান", "প্রাইমেটবিজ্ঞান", "নৃতত্ত্ব", "ভাষার উৎপত্তি" শিরোনামে উইকিপিডিয়া থেকে প্রায় কপিকৃত।
Global Mammal Assessment Team (2008).
Homo sapiens. In: IUCN 2009.
IUCN Red List of Threatened Species. Version 2009.2.
Heng HH (May 2009)। "The genome-centric concept: resynthesis of evolutionary theory"। Bioessays 31 (5): 512–25। DOI:10.1002/bies.200800182। PMID 19334004।
Stringer, C.B. (1994)। "Evolution of early humans"। in Steve Jones, Robert Martin & David Pilbeam (eds.)। The Cambridge Encyclopedia of Human Evolution। Cambridge: Cambridge University Press। page 242। ISBN 0-521-32370-3. Also ISBN 0-521-46786-1 (paperback)
McHenry, H.M (2009)। "Human Evolution"। in Michael Ruse & Joseph Travis. Evolution: The First Four Billion Years। Cambridge, Massachusetts: The Belknap Press of Harvard University Press. page 265.ISBN 978-0-674-03175-3.
"Out of Africa Revisited - 308 (5724): 921g - Science". Sciencemag.org. 2005-05-13. DOI:10.1126/science.308.5724.921g. collected 2009-11-23.
Nature (2003-06-12)। "Access : Human evolution: Out of Ethiopia"। Nature। collected 2009-11-23.
"Origins of Modern Humans: Multiregional or Out of Africa?"। ActionBioscience।
"Modern Humans - Single Origin (Out of Africa) vs Multiregional"। Asa3.org
Groves, C. (2005)। Wilson, D. E., & Reeder, D. M., Mammal Species of the World (3rd edition)। Johns Hopkins University Press.
Futuyma, Douglas J. (2005)]. Evolution. Sunderland, Massachusetts: Sinauer Associates, Inc. ISBN 0-87893-187-2.
Lande R, Arnold SJ (1983). "The measurement of selection on correlated characters". Evolution 37 (6): 1210–26. doi:
Ayala FJ (2007).Darwin's greatest discovery: design without designer
Ian C. Johnston (1999). History of Science: Early Modern Geology
http://records.viu.ca/~johnstoi/darwin/sect2.htm. Retrieved 2008-01-15.
Peter J.(2003). Evolution:The History of an Idea. University of California Press. ISBN 0-520-23693-9.
Darwin, Charles (1859). On the Origin of Species (1st ed.). London: John Murray. p. 1. http://darwin-online.org.uk/content/frameset…. . Related earlier ideas were acknowledged in Darwin, Charles (1861). On the Origin of Species (3rd ed.). London: John Murray. xiii. http://darwin-online.org.uk/content/frameset….
AAAS Council (December 26, 1922). "AAAS Resolution: Present Scientific Status of the Theory of Evolution". American Association for the Advancement of Science. http://archives.aaas.org/docs/resolutions.php?doc_id=450.
IAP Statement on the Teaching of Evolution" (PDF). The Interacademy Panel on International Issues. 2006. http:/www.interacademies.net/Object.File/Master/6/150/Evolution%20statement.pdf. Retrieved 2007-04-25. Joint statement issued by the national science academies of 67 countries, including the United Kingdom's Royal Society
Board of Directors, American Association for the Advancement of Science (2006-02-16). "Statement on the Teaching of Evolution" (PDF). American Association for the Advancement of Science. http://www.aaas.org/…/relea…/2006/pdf/0219boardstatement.pdf. from the world's largest general scientific society
"Statements from Scientific and Scholarly Organizations". National Center for Science Education. http://ncse.com/media/voices/science.
Kutschera U, Niklas K (2004). "The modern theory of biological evolution: an expanded synthesis". Naturwissenschaften 91 (6): 255–76. doi:10.1007/s00114-004-0515-y. PMID 15241603.
Theodosius Dobzhansky, "Biology, Molecular and Organismic", American Zoologist, volume 4 (1964), pp 443-452. The phrase appears on page 449 as "nothing makes sense in biology except in the light of evolution, sub specie evolutionis."
Coyne, Jerry A (2009)। Why Evolution Is True। USA: Viking Adult। ISBN 0670020532।
"NCSE Resource". Cans and Can`ts of Teaching Evolution. National Center for Science Education. 2001-02-13.
http://ncse.com/evo…/education/cans-cants-teaching-evolution. Retrieved 2008-01-01.
Science and Creationism: A View from the National Academy of Sciences, Second Edition (1999), National Academy of Sciences (NAS), National Academy Press, Washington DC, 2006.
ড. ম. আখতারুজ্জামান, বিবর্তনবিদ্যা, বাংলা একাডেমী।
বন্যা আহমেদ, বিবর্তনের পথ ধরে।
Evolution Makes Sense of Homologies
বিবর্তনের চাক্ষুষ প্রমাণ, দৈনিক সমকাল
Primitive Language, (2007-02-27)
Experimental Evolution, Celebrating 50,000 Generations of the Long Term Lines
http://www.theguardian.com/…/oldest-human-footprints-happis…
Voboghure Bidrohee's photo. 
 
 Voboghure Bidrohee's photo.

Voboghure Bidrohee's photo.