Saturday, August 6, 2016

(মুসলমানদের ঈদের একদিন পর) ফ্রান্সের রাস্তায় একদল তরুণ-তরুণী গায়ে লাল রং মেখে প্রতিকী আন্দোলন করে।


 তারা খাদ্যের জন্য পশুর হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং সবাইকে ভেজিটেরিয়ান (নিরামিষভোজী) বা ভেগান (উদ্ভিদভোজী) হতে আহবান করে।
এ তরুণ-তরুণীরা পশু হত্যাকে নৃংশস বলে দাবি করে রক্ত মেখে শুয়ে থাকাতে দেখে আমার একটা কাহিনী মনে পড়লো। প্রায়শঃ দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠন অনশন করে। সবাই একযোগে না খেয়ে শুয়ে থেকে দাবি করে, তারা খাচ্ছে না। কিন্তু একটু পর পর দেখা যায়, একজন করে উঠে যাচ্ছে, কোথায় যেনো যাচ্ছে, এরপর সে ফিরে এসে শুয়ে পড়ছে, আরেকজন যাচ্ছে। এভাবে পালাক্রমে চলতে থাকে অনশনকারীদের বাইরে যাওয়ার কার্যক্রম। খবর নিয়ে দেখা যায়, সবাই পালা করে হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসছে। কেননা, খাদ্য ছাড়া মানুষের পক্ষে বাচা সম্ভব নয়। তারা অনশন করেছে লোক দেখানোর জন্য, নিজের জন্য নয়। তাই নিজেরা ঠিকই খাচ্ছে, তবে লোক চক্ষুর আড়ালে, এই আরকি। তো এখানে তরুণ-তরুণীরা আরাম করে লাল রং মেখে শুয়ে থাকলেও তারা কতজন যে আসার সময় কেএফসি’র মুরগী খেয়ে এসেছেন সেটাও গণনার প্রয়োজন আছে।
যাই হোক, আমি সেদিকে যাচ্ছি না। একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন, সৃষ্টিকর্তা প্রাণীকুলকে বানিয়েছেন একটা সাইকেলের মাধ্যমে। একটা পুকুরের মধ্যে কোন কিছুই ফেলনা নয়। ছোট ছোট উদ্ভিদগুলোকে খায় ছোট মাছ, ছোট মাছকে আবার খায় বড় মাছগুলো। সেই বড় মাছটি আবার কালক্রমে ছোট ছোট উদ্ভিদের খাদ্য হয়ে ঘুড়ে আসে। এভাবেই সৃষ্টিকর্তা পরিবেশের মধ্যে সাইকেল বা চক্র তৈরী করে দিয়েছেন। একটা বাঘ যখন একটা ছোট হরিণকে দৌড়ে গিয়ে ধরে তখন দৃশ্যটি দেখতে সত্যিই খারাপ লাগে, বাঘটিকে ভিলেন ভিলেন মনে হয়। কিন্তু হরিণকে যদি কোনভাবে বাচিয়ে রাখা হয়, তখন কিন্তু বাঘ আর বাচতে পারবে না, অটোমেটিক বাঘের সংখ্যা কমতে থাকবে। তাই সৃষ্টিকর্তা যে নিয়ম করে দিয়েছেন, আপনি তা ভাঙ্গতে চান, তবে কিন্তু আপনি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টকারী হবেন, আপনি ভেগান বা ভেজিরেটিয়ান হওয়ার কারণে কিছু প্রাণী হয়ত বাচাবে, কিন্তু পরিবেশ থেকে অটোমেটিক অসংখ্য প্রানী হারিয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক।
সত্যিই বলতে, ভেজিটেয়িান বা ভেগান বলে চিৎকার করলেও পরিবেশে এমন অনেক অনেককিছু উৎপন্ন হয়, যা মানুষ গ্রহণ করতে পারে না। যেমন ধরুন একটি ধানগাছ। এই ধানগাছের মধ্যে কতকিছু হচ্ছে, অথচ পুরো ধানগাছ থেকে মানুষ কেবল কয়েকটি চালগ্রহণ করতে পারে, বাকিটা পারছে না। বাকি যে খড় সদৃশ্য অংশটা বের হচ্ছে, সেটা কিন্তু গরু খেতে পাচ্ছে। কারণ খড়গুলো গরুর পেটে হজম হয়, মানুষের পেটে নয়। এরপর সেই গরুকে আবার মানুষ খাচ্ছে। ব্যাপারটা এমন, সৃষ্টিকর্তা পরিবেশকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছে যেন কোন কিছুই অপচয় না হয়। প্রত্যেকটি জিনিসিই যেন ঘুরে ফিরে চক্রাকারে ফিরে আসে। তাই আপনি ভেজিটেরিয়ান হলে পরিবেশের সবচেয়ে বড় অপচয়কারী হবেন, এটাই বলা যায়।
আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, যারা আজ প্রাণীকে খাওয়াকে বর্বর বলে দাবি করছে, তাদেরও জানা উচিত, উদ্ভিদেরও তো জীবন আছে। সেটা তারা এড়াবে কিভাবে ? বরং আমার দৃষ্টিতে উদ্ভিদ নিধন করা প্রাণী হত্যার থেকে অধিক বর্বর। কেননা প্রাণী তো তাও জীবন বাচানোর জন্য ছোটাছুটি করতে পারে, চিৎকার করতে পারে, পালিয়ে বাচতে পারে। কিন্তু উদ্ভিদ তো পুরোই অবলা। সে না পারে হাটতে, না পারে চিৎকার করতে, না পারে পালিয়ে বাচতে। তাহলে এমন একটা অবলা জীবকে হত্যা করতে উৎসাহ দেওয়া কি আরো অধিক নৃশংসতা নয় ?
তাই যে বা যারা কথিত ভেজিটেরিয়ান (নিরামিষভোজী) বা ভেগান (উদ্ভিদভোজী) হতে সবাইকে আহ্বান করছে, তারা কিন্তু কৌশলে পরিবেশ নষ্ট করার পায়তারা করছে। এরা উপর দিয়ে প্রাণীকূলের জন্য খুব মায়া দেখাচ্ছে, কিন্তু ভেতর দিয়ে পুরো প্রাণী ও উদ্ভিতজগতের ভারসাম্য নষ্টের ছক আকঁছে। তাই এ ধরনের উদ্ভট প্রচারণা থেকে সবাইকে সচেতন থাকার আহবান করছি।
ছবি ও খবরের সূত্র:
১) http://www.kalerkantho.com/online/world/2015/09/29/273485
২) http://goo.gl/5mnPyv