Wednesday, August 10, 2016

খায়বার যুদ্ধ - ১,২,৩,৪,৫,৬

খায়বার যুদ্ধ - ১: কে ছিল হামলাকারী?: কুরানে বিগ্যান (পর্ব-১৩০): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত চার

লিখেছেন গোলাপ
"যে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"
আদি উৎসের (Primary source) ইসলামে নিবেদিতপ্রাণ বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই প্রাণবন্ত ও বিস্তারিত বর্ণনার আলোকে হিজরি ৬ সালের জিলকদ মাসে কী কারণ ও প্রেক্ষাপটে (পর্ব-১১১) স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর ১৪০০ সশস্ত্র (পর্ব-১১২) অনুসারীদের মক্কা প্রবেশের চেষ্টায় কুরাইশরা সক্রিয় বাধা প্রদান করেছিলেন; নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় এই চুক্তি আলোচনার পূর্বে কুরাইশরা যখন মুহাম্মদের কাছে তাঁদের বেশ কিছু প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন, তখন মুহাম্মদ অনুসারীরা তাঁদের প্রতি কী ধরনের অশ্রাব্য গালি বর্ষণ করেছিলেন (পর্ব-১১৫); কী পরিস্থিতিতে কুরাইশ প্রতিনিধি সুহায়েল বিন আমরের সাথে মুহাম্মদ এই চুক্তির প্রস্তুতি ও আলোচনা সম্পন্ন করেছিলেন (পর্ব: ১১৮-১১৯); এই সন্ধিচুক্তির শর্তগুলো কী ছিল (পর্ব-১২২); এই চুক্তির প্রতিটি শর্তের প্রতি মুহাম্মদ পূর্ণ বিশ্বস্ত ছিলেন বলেই তিনি সুহায়েল বিন আমরের পুত্র আবু জানদাল বিন সুহায়েলকে কুরাইশদের কাছে ফেরত দিয়েছিলেন - ইসলাম-বিশ্বাসীদের এই দাবি কী কারণে মিথ্যাচার ও হাস্যকর (পর্ব-১২০); আবু জানদাল যেন তার জন্মদাতা পিতাকে হত্যা করতে পারে, এই অভিপ্রায়ে এই সন্ধিচুক্তির প্রাক্কালে উমর ইবনে খাত্তাব কীরূপ আচরণ করেছিলেন (পর্ব-১২১); নিজেদের বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার পর মুহাম্মদের প্রায় সকল অনুসারী এই সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষর করার আগে ও পরে কী কারণে অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত হয়েছিলেন ও মুহাম্মদের প্রতি আস্থা হারিয়েছিলেন; মুহাম্মদ তাঁদের এই অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ও তাঁর হৃতগৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠার কারণে মদিনা প্রত্যাবর্তনের প্রাক্কালে পথিমধ্যেই 'সূরা আল ফাতহ' অবতীর্ণ করার মাধ্যম এই সন্ধিচুক্তিটিকে 'এক সুস্পষ্ট বিজয়' নামে অবিহিত করার পর তাঁর মক্কা-বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অবিশ্বাসী জনপদের ওপর কমপক্ষে যে আঠারটি হামলার সাথে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন সেই হামলাগুলো কী কী (পর্ব-১২৪); এই সন্ধিচুক্তি সম্পন্ন করার পর মদিনায় প্রত্যাবর্তনের পরেই (পর্ব-১২৮) ও তার পরবর্তী দুই বছরে কমপক্ষে আরও চারবার কী ধরনের কলাকৌশলের মাধ্যমে মুহাম্মদ এই সন্ধিচুক্তির প্রায় প্রত্যেকটি শর্ত ভঙ্গ করেছিলেন; দশ বছরের শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করার পর কমপক্ষে চারবার নিজেই এর প্রত্যেকটি শর্ত ভঙ্গ করার পর, 'চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ' এনে বিনা নোটিশে কুরাইশদের আক্রমণ করা কী কারণে প্রতারণার এক অনন্য দৃষ্টান্ত (পর্ব-১২৯) - ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা গত উনিশটি পর্বে করা হয়েছে।
হুদাইবিয়া সন্ধিচুক্তির প্রাক্কালে তাঁর যে সমস্ত অনুসারী তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন, মুহাম্মদ পথিমধ্যেই তাদেরকে কীভাবে 'আসন্ন বিজয়-পুরস্কার ও লুটের মালের ওয়াদা’ প্রদান করেছিলেন (৪৮:১৮-২০) তার বিস্তারিত আলোচনা 'আল-রিযওয়ানের শপথ (পর্ব-১১৭) ও সূরা আল ফাতহ (পর্ব-১২৩)' পর্বে করা হয়েছে। মুহাম্মদ তাঁর এই প্রতিশ্রুতির প্রতি পূর্ণ বিশ্বস্ত ছিলেন।
তাই তিনি এই সন্ধিচুক্তি সম্পন্ন করার মাত্র দেড়-দুই মাস পর হিজরি ৭ সালের মহরম মাসে (মে-জুন, ৬২৮ সাল) শুধু তাঁর সঙ্গে হুদাইবিয়া যাত্রায় অংশগ্রহণকারী ও আল-রিযওয়ানের শপথ গ্রহণকারী অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে মদিনা থেকে ৯৫ মাইল দূরবর্তী খায়বার নামক স্থানের ইহুদি জনপদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালান। মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, আল-তাবারী, আল-ওয়াকিদি, ইমাম বুখারী প্রমুখ আদি উৎসের প্রায় সকল মুসলিম ঐতিহাসিক এই ঘটনার বর্ণনা তাঁদের নিজ নিজ গ্রন্থে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। সবচেয়ে বিস্তারিত ও প্রাণবন্ত বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন আল-ওয়াকিদি তাঁর 'কিতাব আল-মাগাজি' গ্রন্থে। 
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনা: [1] [2] [3] [4]
'আল-হুদাইবিয়া হতে প্রত্যাবর্তনের পর আল্লাহর নবী যিলহজ মাস ও মহরম মাসের কিয়দংশ মদিনায় অবস্থান করেন, [তখন] তীর্থযাত্রীদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন মুশরিকরা। অতঃপর তিনি খায়বার অভিযানে যাত্রা করেন। [5]
এমন এক ব্যক্তি যাকে আমি কোনো সন্দেহ করি না, আনাস বিন মালিক-এর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমাকে বলেছেন: আল্লার নবী লোকদের ওপর হামলা করার জন্য সকাল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। যদি তিনি প্রার্থনার আহ্বান (এর সাধারণ মানে হলো 'আজান', কিন্তু এখানে, সম্ভবত, লোকজনদের সকালে কাজে বের হওয়া অর্থে বোঝানো হয়েছে) শুনতে পান, তিনি পিছুটান দেন; যদি তিনি তা শুনতে না পান, তবে তিনি তাদেরকে আক্রমণ করেন। আমরা রাত্রিকালে খায়বারে পৌঁছাই, আল্লাহর নবী সেখানে রাত্রি যাপন করেন; সকালে যখন লোকজনদের চলা ফেরার শব্দ তিনি শুনতে পান না, তখন তিনি অশ্বের পিঠে সওয়ার হন ও আমরাই তাঁর সাথে সওয়ার হই; আমি বসেছিলাম আবু তালহার পিছে ও আমার পা আল্লাহর নবীর পা স্পর্শ করছিলো।
আমরা সাক্ষাৎ পাই শ্রমজীবী মানুষদের, যারা কোদাল ও ঝুড়ি নিয়ে সকালে বের হয়ে এসেছিলো। যখন তারা আল্লাহর নবী ও তাঁর সৈন্যদের দেখতে পায়, তারা চিৎকার করে বলে, "মুহাম্মদ ও তার বাহিনী", অতঃপর ঘুরে সজোরে দৌড়ে পালায়। আল্লাহর নবী বলেন, "আল্লাহু আকবর! খায়বার ধ্বংস হয়েছে। যখন আমরা জনগণের উন্মুক্ত স্থানে আসি, তখন তা ছিল ঐ লোকদের দুর্ভাগ্যজনক সকাল, যাদেরকে তারা সতর্ক করেছিল।" আনাস-এর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে > হুমায়েদ > হারুন আমাদের একই রূপ বর্ণনা অবহিত করিয়েছেন।
আল্লাহর নবী যখন মদিনা থেকে খায়বার অভিমুখে রওনা হন, তিনি 'ইসর' (মদিনা ও ওয়াদি-উল ফুর-এর মধ্যবর্তী এক পর্বত)-এর রাস্তা দিয়ে গমন করেন ও সেখানে তাঁর জন্য এক মসজিদ নির্মাণ করা হয়; অতঃপর তিনি আল-সাহবা (খায়বার থেকে এক সন্ধ্যার পথ)-এর রাস্তা দিয়ে যান। অতঃপর তিনি তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে সামনে অগ্রসর হন ও আল-রাজী নামের এক উপত্যকায় পৌঁছে যাত্রা বিরতি দেন [এই আল-রাজী স্থানটি ও তায়েফের নিকটবর্তী আল-রাজী, যেখানে হিজরি ৪ সালে মুসলমানদের এক ছোট দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল, (পর্ব-৭২) একই জায়গা নয়]। [6]   
এই যাত্রা বিরতিটি ছিল খায়বার ও ঘাতাফান গোত্রের লোকদের লোকালয়ের মধ্যবর্তী স্থানে, এই কারণে যে তিনি যেন ঘাতাফান গোত্রের লোকদেরকে খায়বারের লোকদের সাহায্য প্রদানে বাধা প্রদান করতে পারেন; তারা তাদের পক্ষে আল্লাহর নবীর বিরুদ্ধে ছিলেন। আমি শুনেছি যে, যখন ঘাতাফান গোত্রের লোকেরা আল্লাহর নবীর আক্রমণের খবর শুনতে পায়, তারা একত্রিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ইহুদিদের সাহায্যের জন্য রওনা হয়। কিন্তু এক দিনের রাস্তা অগ্রসর হওয়ার পর তারা তাদের সম্পত্তি ও পরিবার সম্বন্ধে এক গুজব শুনতে পায় ও  মনে করে যে, তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের লোকদের আক্রমণ করা হয়েছে। তাই তারা আল্লাহর নবীর খায়বার যাবার পথ উন্মুক্ত অবস্থায় রেখে তাদের রাস্তায় ফিরে যায়।
আল্লাহর নবী তাদের কাছে গমন করেন এবং একটা একটা করে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন ও একে একে তাদের দুর্গগুলো দখল করে নেন। প্রথম যে-দুর্গটির পতন হয়, তার নাম হলো নাইম দুর্গ ( fort of Na'im); যেখান থেকে নিক্ষিপ্ত এক জাঁতার আঘাতে মাহমুদ বিন মাসলামা খুন হয়; অতঃপর পতন হয় বানু আবু আল-হুকায়েক-এর আল-কামুস (al-Qamus) দুর্গ আল্লাহর নবী তাদের লোকদের বন্দী করেন, যাদের মধ্যে ছিলেন কিনানা বিন আল-রাবি বিন আবু আল-হুকায়েক এর স্ত্রী সাফিয়া বিনতে হুয়েই বিন আখতাব ও তার দুই কাজিন।
আল্লাহর নবী তাঁর নিজের জন্য সাফিয়াকে পছন্দ করেন। দিহায়া বিন খালিফা আল-কালবি (Dihya b. Khalifa al-Kalbi) সাফিয়াকে পাওয়ার জন্য আল্লাহর নবীর কাছে আবেদন করে, অতঃপর যখন আল্লাহর নবী তাঁর নিজের জন্য তাকে বাছাই করেন, তখন তিনি তাকে দান করেন তার দুই কাজিনকে। খায়বারের মহিলাদেরকে মুসলমানদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেয়া হয়। মুসলমানরা গৃহপালিত উটের মাংস ভক্ষণ করে ও আল্লাহর নবী উঠে দাঁড়ান ও লোকদের কিছু সংখ্যক কাজকর্ম করতে নিষেধ করেন, যা তিনি পরপর উল্লেখ করেছিলেন।'

আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) অতিরিক্ত প্রাসঙ্গিক বর্ণনা:
আল্লাহর নবী আল-হুদাইবিয়া থেকে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন হিজরি ৬ সালের যিলহজ মাসের শেষ দিকে। তিনি যিলহজ মাসের শেষের দিনগুলো ও মহরম মাস মদিনায় অবস্থান করেন। তিনি হিজরি ৭ সালের সফর মাসে - কেউ কেউ বলে, মাসটি ছিল রবিউল আওয়াল- খায়বার গমন করেন।  আল্লাহর নবী তাঁর অনুসারীদের হামলার প্রস্তুতি নেয়ার আদেশ করেন, আর প্রস্তুতি কল্পে তারা ছিলেন নিরলস (diligent); তিনি তাঁর আশে পাশের অনুসারীদের তাঁর সঙ্গে অভিযানে যেতে করেন উত্তেজিত। যারা পেছনে অবস্থান করেছিল, তারা তাঁর কাছে আসে এই আশায় যে, তারা তাঁর সাথে লুটতরাজে অংশ নেবে। তারা বলে, "আমরা আপনার সঙ্গে যাবো!" তারা আল-হুদাইবিয়া যাত্রায় অংশ গ্রহণ না করে আল্লাহর নবী ও মুসলমানদের সম্বন্ধে মিথ্যা রটনা করেছিল। কিন্তু এখন তারা বলছে, "আমরা আপনার সঙ্গে খায়বার যাবো। নিশ্চয়ই এটি হিজাযের গ্রামাঞ্চলের একটি, যা খাদ্য ও সম্পত্তিতে সমৃদ্ধ।" আল্লাহর নবী বলেন, "তোমরা আমার সাথে অংশগ্রহণ করতে পারবে না, যদি না তোমরা 'জিহাদ' অভিলাষী হও। লুটতরাজের জন্য, একজনও নয়।" তিনি এক ঘোষককে উচ্চস্বরে বাইরে ঘোষণা করার জন্য পাঠান, "একমাত্র যারাই 'জিহাদ' অভিলাষী, শুধু তারাই আমাদের সঙ্গে যাবে। লুটতরাজের জন্য - একজনও নয়!"
যখন লোকেরা খায়বার অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, মদিনার ইহুদিদের জন্য তা ছিল দুঃসহ, তারা আল্লাহর নবীর সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ ছিলো। তারা জানতো যে, যদি মুসলমানরা খায়বার-এ প্রবেশ করে, আল্লাহ খায়বার ধ্বংস করবে - ঠিক যেমনটি সে ধ্বংস করেছিল বনি কেইনুকা [পর্ব-৫১], বনি নাদির [পর্ব-৫২] ও বনি কুরাইজা গোত্রকে [পর্ব: ৮৭-৯৫]।---’ [7]
- অনুবাদ, টাইটেল, ও [**] যোগ - লেখক।
ইমাম বুখারী (৮১০-৮৭০ সাল) বর্ণনা:
এই প্রসঙ্গে ইমাম বুখারীর বর্ণনা (৫:৫৯:৫১২ ৫:৫৯:৫১০) মুহাম্মদ ইবনে ইশাক ও আল-তাবারী ও আল-ওয়াকিদির ওপরে বর্ণিত বর্ণনারই অনুরূপ; পার্থক্য হলো এই যে, উপাখ্যানের বিস্তারিত বর্ণনা সেখানে অনুপস্থিত।  [4]
>>> আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় যে-বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো, খায়বার-এর ইহুদি জনপদবাসী মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের ওপর আগ্রাসী আক্রমণ করতে আসেননি। বরাবরের মতই আগ্রাসী দলটি ছিল নিঃসন্দেহে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা। খায়বারে অধিষ্ঠিত এই ইহুদি জনপদবাসীর অনেকেই ছিলেন মুহাম্মদের আগ্রাসনের শিকার হয়ে মদিনা থেকে নির্বাসিত বনি নাদির গোত্রের লোকেরা [পর্ব: ৭৫] মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা এই ইহুদি জনপদবাসীর ওপর কীরূপ নৃশংসতা প্রদর্শন করেছিলেন, তার বিস্তারিত ইতিহাস "খায়বার যুদ্ধ (হামলা)" অধ্যায়ের পরবর্তী পর্বগুলোতে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হবে। [8]
ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে আল-ওয়াকিদির অতিরিক্ত প্রাসঙ্গিক মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। ইবনে ইশাকের মূল ইংরেজি অনুবাদ ইন্টারনেটে বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক: তথ্যসূত্র  [1]

The additional relevant narratives of Al-Waqidi:
‘—The Messenger of God arrived in Medina from al- Hudaybiyya in Dhul-Hijja at the end of the year six AH. He stayed in Medina for the rest of Dhul-Hijja and Muharam. He went out in Safar of the year seven - some say it was in the month of Rabiul Awal – to Khaybar. The Messenger of God ordered his companions to prepare to raid, and they were diligent in their preparation, and he stirred up those around him to go raiding with him. Those who had stayed behind came to him desiring to go out with him hoping for plunder. They said, “We will go out with you!” They had stayed behing during the raid of al-Hudaybia spreading falsehood about the Prophet and the Muslims. But now they said, “We will go out with you to Khaybar. Surely it is the countryside of the Hijaz with rich food and property.” The Messenger of God said, “You will not go out with me unless you desire ‘Jihad’. As for plunder, there will be none.” He sent a herald out to cry, “Only those desiring ‘Jihad’ will go out with us.  And for plunder there will be none!” When the people prepared for Khaybar it was unbearable to the Jews of Medina who had agreement with the Messenger of God. They knew that if the Muslims entered Khaybar, God would destroy Khaybar just as He had destroyed the Banu Qaynuqa, Nadir and Qurayza. ---  ’
(চলবে)
[কুরানের উদ্ধৃতি সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হারাম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা  থেকে নেয়া, অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট ইংরেজি অনুবাদকারীর ও চৌত্রিশ-টি বিভিন্ন ভাষায় পাশাপাশি অনুবাদ এখানে]

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৫১০- ৫১১ http://www.justislam.co.uk/images/Ibn%20Ishaq%20-%20Sirat%20Rasul%20Allah.pdf
[2] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৭৬-১৫৭৭ http://books.google.com/books?id=sD8_ePcl1UoC&printsec=frontcover&source=gbs_ge_summary_r&cad=0#v=onepage&q&f=false
[3] অনুরূপ বর্ণনা “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৩৪-৬৫২  
ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩১২-৩২১
[4] অনুরূপ বর্ণনা- সহি বুখারী: ভলিউম ৫, বই ৫৯, নম্বর ৫১০
Narrated By Anas: Allah's Apostle reached Khaibar at night and it was his habit that, whenever he reached the enemy at night, he will not attack them till it was morning. When it was morning, the Jews came out with their spades and baskets, and when they saw him (i.e. the Prophet), they said, "Muhammad! By Allah! Muhammad and his army!" The Prophet said, "Khaibar is destroyed, for whenever we approach a (hostile) nation (to fight), then evil will be the morning for those who have been warned."---
http://www.hadithcollection.com/sahihbukhari/92--sp-608/5546-sahih-bukhari-volume-005-book-059-hadith-number-510.html
সহি বুখারী: ভলিউম ৫, বই ৫৯, নম্বর ৫১২
Narrated Anas: The Prophet offered the Fajr Prayer near Khaibar when it was still dark and then said, "Allahu-Akbar! Khaibar is destroyed, for whenever we approach a (hostile) nation (to fight), then evil will be the morning for those who have been warned." Then the inhabitants of Khaibar came out running on the roads. The Prophet had their warriors killed, their offspring and woman taken as captives. Safiya was amongst the captives, She first came in the share of Dahya Alkali but later on she belonged to the Prophet. The Prophet made her manumission as her 'Mahr'
[5] Ibid “সিরাত রসুল আল্লাহ”- ইবনে হিশামের নোট নম্বর ৭৫৯, পৃষ্ঠা ৭৭০
‘তিনি মদিনার ভারপ্রাপ্তে রাখেন নুমায়লা বিন আবদুল্লাহ কে ও যুদ্ধের ঝাণ্ডাটি দেন আলী কে। সেটি ছিল সাদা রংয়ের’।
[6] Ibid “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- আল-তাবারী, নোট নম্বর ৪৮৬
[7] Ibid “কিতাব আল-মাগাজি”- আল-ওয়াকিদি -পৃষ্ঠা ৬৩৪; ইংরেজি অনুবাদ পৃষ্ঠা ৩১২
[8] খায়বার হামলা (যুদ্ধ): সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক - পৃষ্ঠা ৫১০-৫৩৩; Ibid: আল-তাবারী পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৭৬-১৫৯১; Ibid “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি- ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৩৩-৭২২, ইংরেজি অনুবাদ: পৃষ্ঠা ৩১১-৩৫৫

 

খায়বার যুদ্ধ - ২: “হত্যা করো! হত্যা করো!”: কুরানে বিগ্যান (পর্ব- ১৩১): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত পাঁচ

লিখেছেন গোলাপ
"যে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর হুদাইবিয়া যাত্রায় অংশগ্রহণকারী অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে খায়বারে অবস্থিত ইহুদি জনপদবাসীদের ওপর আক্রমণের উদ্দেশ্যে কীভাবে মদিনা থেকে রওনা হয়েছিলেন; পথিমধ্যে কোথায় তিনি সাময়িক যাত্রা বিরতি দিয়েছিলেন; দিনের কোন সময়ে তিনি অবিশ্বাসী জনপদের ওপর হামলা চালাতেন; যখন তিনি তাদেরকে আক্রমণ করেছিলেন, তখন তাঁরা কী অবস্থায় ছিলেন; "মুহাম্মদ ও তার বাহিনী" বলে চিৎকার করতে করতে নিজেদের প্রাণ রক্ষা  ও অন্যান্য লোকদের সাবধান করার জন্য যখন লোকেরা দৌড়ে পালাচ্ছিলেন, তখন "আল্লাহু আকবর! খায়বার ধ্বংস হয়েছে" ঘোষণা দিয়ে মুহাম্মদ তাদেরকে কীভাবে আক্রমণ করেছিলেন - ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে। আমরা জেনেছি যে, ঘাতাফান গোত্রের লোকেরা খায়বারের ইহুদিদের সাহায্যের জন্য রওনা হয়ে এক দিনের রাস্তা অগ্রসর হওয়ার পর যে-খবরটি শুনতে পেয়ে ফিরে গিয়েছিলো, তা হলো, তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের লোকদের আক্রমণ করা হয়েছে।
আল-ওয়াকিদির বিস্তারিত বর্ণনায় আমরা জানতে পরি যে, ঘাতাফান গোত্রের ঐ লোকেরা যখন তাদের আবাসস্থল হেইফা (Hayfa)-তে ফিরে যায় ও জানতে পারে যে, এই খবরটি মিথ্যা-গুজব, তখন তাদের দলনেতা ইউয়েনা বিন হিসন (পর্ব: ৭৭) অভিযোগ করে যে, এই প্রতারণাটি করেছিলেন মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা, উদ্দেশ্য তাদেরকে বিভ্রান্ত করা ('Uyana said to his companions, "This, by God, is one of the tricks of Muhammad and his companions. He misled us, by God."')। [1]
আদি উৎসের নিবেদিতপ্রাণ মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই বর্ণনায় যে-বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো - মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের এই হামলাটি ছিল "অতর্কিত!" খায়বারের জনপদবাসীর অতি প্রত্যূষের ঘুমের আমেজ যখন তখনও কাটেনি, কোদাল ও ঝুড়ি নিয়ে কিছু কিছু শ্রমিক যখন সবেমাত্র কাজে বের হয়েছেন, তখন মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা অতর্কিতে তাঁদের ওপর এই নৃশংস আক্রমণটি চালান। তাঁরা এই হামলাকারীদের দেখতে পেয়ে "মুহাম্মদ ও তার বাহিনী" বলে চিৎকার করে লোকদের সতর্ক করতে করতে দৌড়ে পালিয়ে এসে তাঁদের দুর্গ মধ্যে আশ্রয় নেয়। আর মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের নিয়ে "আল্লাহু আকবর! খায়বার ধ্বংস হয়েছে!" বলে তাঁদের ওপর আক্রমণ চালায় (পর্ব:১৩০);  মুহাম্মদ সর্বপ্রথম তাঁদের যে-দুর্গটি আক্রমণ করেন তা হলো, খায়বারের আল-নাটা (al-Nata) নামক স্থানের "নাইম দুর্গ।"
আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) বর্ণনা: [2]
'পরদিন সকালে আল্লাহর নবী মুসলমানদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ব্যানার সহ বাইরে বের হন। তাদের শ্লোগান ছিল, "ইয়া মানসুর, হত্যা করো!" আল-হুবাব বিন আল-মুনধির তাঁকে বলেন, "এটি সুনিশ্চিত যে, ইহুদিরা তাদের খেজুর গাছগুলোকে তাদের প্রথম সন্তানের চেয়েও বেশি মূল্যবান বলে বিবেচনা করে। সুতরাং তাদের খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলো।"
আল্লাহর নবী খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলার নির্দেশ জারি করেন। মুসলমানরা ত্বরা করে সেগুলো কেটে ফেলা শুরু করে। আবু বকর তাঁর কাছে আসেন ও বলেন, "হে আল্লাহর নবী, নিশ্চয়ই সর্বশক্তিমান আল্লাহ আপনাকে খায়বার বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আপনাকে দেয়া তার সেই প্রতিশ্রুতি সে নিশ্চয়ই পূরণ করবে। সুতরাং খেজুর গাছগুলো কাটবেন না।" আল্লাহর নবী তাঁর এক ঘোষককে ঘোষণা করতে বলেন যে, তারা যেন খেজুর গাছগুলো আর না কাটে ও তা কাটায় বাধা প্রদান করে। মুহাম্মদ বিন ইয়াহিয়া তার দাদা হইতে > তার পিতার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমাকে বলেছেন, তিনি বলেছিলেন, "আমি খায়বারের নাটা নামক স্থানে খেজুর গাছগুলো টুকরা অবস্থায় দেখেছি, তা ছিলো এই কারণে যে, আল্লাহর নবীর অনুসারীরা তা কেটে ফেলেছিলেন।"
           
জাফর বিন মাহমুদ বিন মুহাম্মাদ বিন মাসলামার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ওসামা বিন যায়েদ আল-লেইথি আমাকে বলেছেন, "মুসলমানরা নাটার ইদিকে (Idhq) ৪০০ টি খেজুর গাছ কেটে ফেলেছিলো। তা কাটা হয়েছিল শুধু নাটাতেই।"  
মুহাম্মদ বিন মাসলামা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আচারের মধ্যে খেজুর দেখে বলেছিলেন, "আমি নিজের হাতে খেজুরগুলো কেটেছিলাম যতক্ষণে না আমি শুনতে পাই যে বেলাল আল্লাহর নবীর সিদ্ধান্ত চিৎকার করে ঘোষণা করছে, "খেজুর গাছগুলো কেটো না!", অতঃপর আমরা তা কাটা বন্ধ করি।"
তিনি বলেছেন, "মাহমুদ বিন মাসলামা সেই সময়ে মুসলমানদের পক্ষে যুদ্ধ করছিলো, সেটি ছিল গ্রীষ্মকালের খুবই গরম একটি দিন। নাটার লোকদের বিরুদ্ধে আল্লাহর নবীর যুদ্ধের সেটিই ছিল প্রথম দিন। অত্যধিক সূর্যতাপ যখন মাহমুদের ওপর পড়েছিল, স্বভাবের বশবর্তী হয়ে আচ্ছাদিত পোশাকে ছায়া পাবার আশায় সে নাইম দুর্গের শেডের নীচে বসেছিল। এটিই ছিলো প্রথম দুর্গ, আল্লাহর নবী যেখান থেকে শুরু করেছিলেন। মাহমুদ চিন্তাও করেনি যে, তার ভেতরে কোনো যোদ্ধা আছে। সে সত্যিই ভেবেছিল যে, এর ভেতরে আছে আসবাবপত্র অথবা পণ্য; কারণ নাইম নামের এই ইহুদি ব্যক্তিটির বেশ কয়েকটি দুর্গ ছিলো, এটি ছিলো তারই একটি। মারহাব ওপর থেকে এক জাঁতা নিক্ষেপ করে, যা মাহমুদের মাথায় আঘাত করে। এটি তার মাথার হেলমেটে লাগে ও তাতে তার কপালের চামড়া খুলে মুখের ওপর এসে পড়ে। তাকে আল্লাহর নবীর কাছে নিয়ে আসা হয়, তিনি চামড়াটি এমনভাবে ঠেলা দেন যে, তা ঠিক ফের আগের জায়গায় চলে যায়। আল্লাহর নবী কাপড় দিয়ে তা ব্যান্ডেজ করেন। যখন সন্ধ্যা হয়, আল্লাহর নবী আল-রাজী-তে প্রত্যাবর্তন করেন; কারণ তিনি আশংকা করছিলেন যে, তাঁর অনুসারীরা আক্রান্ত হতে পারে।
সেখানে তিনি তাঁবু নির্মাণ করেন ও তার ভেতরে রাত্রিযাপন করেন। তিনি আল-রাজী-তে সাত দিন অবস্থান করেছিলেন। উসমান ইবনে আফফান-কে আল-রাজীর ক্যাম্পের দায়িত্বে নিয়োজিত রেখে, ব্যানার ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় তিনি তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন হামলা চালাতেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি নাটার লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন। যখন সন্ধ্যা হতো, তিনি প্রত্যাবর্তন করতেন আল-রাজী-তে। প্রথম দিন তিনি আল-নাটার নিচের দিক থেকে যুদ্ধ করেন। অতঃপর পরে ফিরে এসে তিনি দুর্গের ওপর দিক থেকে যুদ্ধ করেন, যতক্ষণে না আল্লাহ তা বশীভূত করে।'
ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ সাল): [3]
'খায়বারে অনুসারীদের সিংহনাদ ছিল, "হে বিজয়ীরা, হত্যা করো হত্যা করো! (The war cry of the companions at Khaybar was “O victorious one, slay slay!")।
- অনুবাদ, টাইটেল, ও [**] যোগ - লেখক।
>>> আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, এই আক্রমণকালে তাদের সিংহনাদ ছিল "হত্যা করো হত্যা করো!" দুর্গ মধ্যের আক্রান্ত লোকদের উত্তেজিত করতে আল-হুবাব বিন আল-মুনধির নামের এক অনুসারী মুহাম্মদকে এই বলে পরামর্শ দেন যে, খায়বারের লোকেরা যেহেতু তাদের খেজুর গাছগুলোকে তাদের প্রথম সন্তানের চেয়েও বেশি মূল্যবান বলে মনে করে, তাই মুহাম্মদের উচিত তিনি যেন তাঁদের অত্যন্ত প্রিয় এই খেজুর গাছগুলো ধ্বংস করেন। তার পরামর্শ মুহাম্মদের মনঃপুত হয়! তাই তিনি তাঁর অনুসারীদের এই গাছগুলো কেটে ফেলার আদেশ জারি করেন। অতি দ্রুততায় তারা ৪০০ টি খেজুর গাছ কেটে ফেলে। মুহাম্মদের এই কর্মে আবুবকর মুহাম্মদকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, তিনি আল্লাহর রেফারেন্স ঘোষণা করেছিলেন যে, আল্লাহ তাঁকে ওয়াদা করেছেন যে তাদের জন্য আছে "আসন্ন বিজয় (পর্ব: ১২৩)" এবং তা আবুবকর মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন। তাই মুহাম্মদের কাছে তাঁর অনুরোধ এই যে, মুহাম্মদ যেন এই খেজুর গাছগুলো ধ্বংস না করেন। আবু বকরের এই অনুরোধে মুহাম্মদ এই খেজুর গাছগুলো কাটা বন্ধ ঘোষণা করেন।
প্রশ্ন হলো,
"আল্লাহর প্রতিশ্রুতির প্রতি যদি আবু বকরের মত মুহাম্মদও পূর্ণ বিশ্বাসী হতেন, তবে কি তিনি তাঁর অনুসারীদের খায়বারের লোকদের খেজুর গাছগুলো কাটার অনুমতি দিতেন? নাকি মুহাম্মদ একদা আল্লাহর রেফারেন্সে তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশ্যে যা ঘোষণা করেছিলেন, তা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন ও আবু বকর তা স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর তা তাঁর মনে পড়েছিলো? কোনটি সত্য?"

স্বঘোষিত আখেরি নবী মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ 'বনি নাদির গোত্রের’ লোকদের আক্রমণকালে এই একই কাজটি করেছিলেন। ভীত-সন্ত্রস্ত বনি নাদির গোত্রের লোকেরা যখন তাদের দুর্গ মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন, মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের তাঁদের পাম-গাছ কেটে ফেলার ও পুড়িয়ে ফেলার হুকুম জারি করেছিলেন; যার সাক্ষ্য হয়ে আছে আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই রচিত 'সিরাত (মুহাম্মদের জীবনী) ও হাদিস গ্রন্থের বর্ণনা ও মুহাম্মদের স্বরচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থ কুরান:
৫৯:৫ - তোমরা যে কিছু কিছু খর্জুর বৃক্ষ কেটে দিয়েছ এবং কতক না কেটে ছেড়ে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই আদেশ এবং যাতে তিনি অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করেন। [4]
দুর্গ মধ্য থেকে তখন বনি নাদির গোত্রের লোকেরা চিৎকার করে বলেছিলেন, "হে মুহাম্মদ, তুমি না কারও সম্পত্তি ধ্বংস করাকে ভীষণ অন্যায় বলে প্রচার করো এবং এই অপকর্মকারীদের তুমি অপরাধী বলে রায় দাও। সেই তুমিই কেন আমাদের পাম-গাছগুলো ধ্বংস করছো ও পুড়িয়ে দিচ্ছ?" - যার বিস্তারিত আলোচনা "বনি নাদির গোত্রকে উচ্ছেদ ও তাদের সম্পত্তি লুট (পর্ব: ৫২)!" পর্বে করা হয়েছে। 
ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা আরও জানতে পারি যে, অতর্কিত আক্রমণের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর নিজেদের জীবন ও সম্পদ বাঁচানোর চেষ্টায় খায়বার অধিবাসীরা তাঁদের দুর্গ মধ্য থেকে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আগ্রাসী হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। মাহমুদ বিন মাসলামা নামের এক মুহাম্মদ অনুসারী যখন তার যুদ্ধ পোশাক ও হেলমেট পরিহিত অবস্থায় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ("অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন হামলা চালাতেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত") নাইম দুর্গের ছায়ার নীচে বসেছিলেন, তখন সেই দুর্গ মধ্য থেকে মারহাব নামের এক ব্যক্তি তাকে লক্ষ্য করে জাঁতা নিক্ষেপ করেন, যার আঘাতে মাহমুদ গুরুতর আহত হোন ও পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করেন।
কে এই মাহমুদ বিন মাসলামা?
মাহমুদ বিন মাসলামা ছিলেন মুহাম্মদ বিন মাসলামার ছোট ভাই। এই সেই মুহাম্মদ বিন মাসলামা, যিনি মুহাম্মদের আদেশে প্রতারণার আশ্রয়ে ইহুদি কবি কাব বিন আল-আশরাফ-কে নৃশংসভাবে খুন করেছিলেন। এই কবির অপরাধ ছিলো এই যে, তিনি বদর যুদ্ধে মুহাম্মদের অমানুষিক নৃশংস কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কবিতার মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছিলেন ও শোকার্ত ক্ষতিগ্রস্ত কুরাইশদের সমবেদনা প্রকাশ ও সান্ত্বনা দেয়ার অভিপ্রায়ে মক্কায় গমন করেছিলেন। তাঁকে খুন করার পর খুনিরা তাঁর কাটা মুণ্ডটা প্রত্যূষের নামাজের সময় মুহাম্মদের কাছে নিয়ে আসেন (পর্ব: ৪৮), অত:পর:
"--তারা সেই কাটা মুণ্ডুটি তাঁর সামনে নিক্ষেপ করে। তিনি (আল্লাহর নবী) তাকে খুন করার জন্য আল্লাহর প্রশংসা আদায় করেন।"
কাব বিন আল-আশরাফ-কে খুন করার পর মুহাম্মদ আর একটি ঘাতক দল প্রেরণ করেছিলেন, যারা এই খায়বারেই এসে সাললাম ইবনে আবুল হুকায়েক (আবু রাফি) নামের এক ব্যক্তিকে প্রতারণার আশ্রয়ে নৃশংসভাবে খুন করে - যার বিস্তারিত আলোচনা "আবু রাফিকে খুন (পর্ব: ৫০)!" পর্বে করা হয়েছে। 
মাহমুদ বিন মাসলামার ওপর মারহাবের এই আক্রমণটি ছিলো নিঃসন্দেহে আত্মরক্ষামূলক। একদল বহিরাগত লোক তাঁদের এলাকায় এসে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়েছে। এই আক্রমণকারী দলের একজন সদস্য তাঁদের দুর্গের নিচে বসে আছে, এমত পরিস্থিতিতে এই দুর্বৃত্তদের প্রতি আক্রান্ত লোকজনদের সম্ভাব্য আচরণ যেমনটি হতে পারে, মারহাবের আচরণটি ছিলো ঠিক তেমন। মারহাব কোনো অপরাধ করেননি। তা সত্ত্বেও মুহাম্মদের আদেশে মুহাম্মদ বিন মাসলামা এই মারহাবকে কীরূপ অমানুষিক নৃশংসতায় খুন করেছিলেন, তার আলোচনা পরবর্তীতে করা হবে।
ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে আল-ওয়াকিদির মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। ইবনে ইশাকের মূল ইংরেজি অনুবাদ ইন্টারনেটে বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক: তথ্যসূত্র [3]
The Narratives of Al-Waqidi: [2]
‘The next morning the Messenger of God moved out with the Muslims under their banners. Their slogan was: Ya Mansur kill! Al-Hubab b al-Mundhir said to him, “Surely the Jews consider their date palms to be more precious than their first born children. So cut down their date palms.” The Messenger of God ordered the cutting down of the date palms. The Muslims began to cut them down in haste. Abu Bakr came to him and said, “O Messenger of God, surely God most high has promised you Khaybar, and He will fulfill what he has promised you. So do not cut down the date palms.” The Messenger of God commanded a herald to call out and prevent them from cutting the date palms. Muhammad b Yahya related to me from his father from his grand father, who said, “I saw the date palms of Khaybar, in Nata, in pieces, and that was from what the companions of the Messenger of God cut down.” Usama b Zayd al-Laythi related to me from Jafar b Mahmud b Muhammad b Maslama, who said: The Muslims cut down four hundred date palms of Idhq in al-Nata. They were cut only in Nata.’
Muhammad b Maslama observing the date in the pickle said: I cut this date with my own hands until I heard Bilal call out with resolution from the Messenger of God, “Do not cut the date palm!” and we stopped. He said: Mahmud b Maslama was fighting with the Muslims at that time, and it was a very hot summer’s day. It was the first day the Messenger of God fought with the people of Nata. When the heat was strongest over Mahmud, it was his custom, in all his attire, to sit under the fortress of Naim desiring its shade. It was the first fortress the Messenger of God began with. Mahmud did not think that there were any worriors in it. Indeed he thought that there was furniture or goods in it, for Naim was a Jew who possessed a number of fortresses, including this one.  Marhab threw down a millstone and it struck Mahmud’s head. It struck the helmet of his head until the skin of his forehead fell on his face. He was brought to the Messenger of God and he pushed the skin until it returned just as it was. The Messenger of God bandaged it with a cloth.  When it was evening, the Messenger of God moved to Al-Raji for he feared his companions would be attacked. He struck up his tent there and he stayed up the night in it.  He stayed in Al-Raji for seven days. He raided every day with the Muslims under their banner, in armor, leaving the camp site in al-Raji, appointing Uthman b Affan to take his place. He fought the people of Nata from day to night. When it was evening he returned to Al-Raji. The first day he fought from below al-Nata. Then he returned later and fought them from above the fortress, until God conquered it.’
(চলবে)
[কুরানের উদ্ধৃতি সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হারাম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা  থেকে নেয়া, অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট ইংরেজি অনুবাদকারীর ও চৌত্রিশ-টি বিভিন্ন ভাষায় পাশাপাশি অনুবাদ এখানে]

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1] “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৫২; ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩২১
[2] Ibid “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৪৪-৬৪৬; ইংরেজি অনুবাদ: পৃষ্ঠা ৩১৭-৩১৮

 [3] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, ইবনে হিশামের নোট নম্বর ৭৬০, পৃষ্ঠা ৭৭০
[4] ইমাম বুখারীর (৮১০-৮৭০ সাল) বর্ণনা: http://www.hadithcollection.com/sahihbukhari/92--sp-608/5690-sahih-bukhari-volume-005-book-059-hadith-number-365.html
 
 
 

খায়বার যুদ্ধ - ৩: উমর ইবনে খাত্তাবের কাপুরুষতা!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব-১৩২): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত ছয়

লিখেছেন গোলাপ
"যে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীরা খায়বারের ইহুদি জনপদবাসীর ওপর যে-অতর্কিত আগ্রাসী হামলাটি পরিচালনা করেছিলেন, তার সিংহনাদ (War cry) কী ছিল; ভীত-সন্ত্রস্ত খায়বারবাসী যখন তাঁদের দুর্গ মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন মুহাম্মদ কেন তাঁদের খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলার হুকুম জারি করেছিলেন; অতঃপর কী কারণে তিনি তাঁর সেই আদেশ বাতিল করেছিলেন; মাহমুদ বিন মাসলামা নামের এক মুহাম্মদ অনুসারী নাইম দুর্গ-ছায়ার নিচে থাকা অবস্থায় কীরূপে গুরুতর আহত হয়েছিলেন - ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা আল-নাটার দুর্গগুলো অবরোধ করে রাখেন ও তাঁদের ওপর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনের পর দিন আক্রমণ চালান। মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, আল-তাবারী, আল-ওয়াকিদি, ইমাম বুখারী প্রমুখ আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকরা এই ঘটনাগুলোর প্রাণবন্ত বর্ণনা তাঁদের নিজ নিজ গ্রন্থে বিভিন্নভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। 
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনা: [1] [2] [3]
'বুরায়েডা বিন সুফিয়ান বিন ফারওয়া আল-আসলামি < তার পিতা সুফিয়ান এর কাছ থেকে প্রাপ্ত হয়ে < সালামা বিন আমর বিন আল-আকওয়া হইতে উদ্ধৃত তথ্যের ভিত্তিতে আমাকে বলেছেন:
আল্লাহর নবী আবু বকর-কে তাঁর ঝাণ্ডাসহ ('সেটি ছিল সাদা রং এর' [4]) খায়বারের এক দুর্গের লোকজনদের ওপর আক্রমণ করার জন্য পাঠান। তিনি যুদ্ধ করেন কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির বশবর্তী হয়ে তা জয় না করেই প্রত্যাবর্তন করেন। পরদিন সকালে তিনি উমর-কে পাঠান, অতঃপর সেই একই ঘটনাটি ঘটে। আল্লাহর নবী বলেন, "আগামীকাল আমি এই ঝাণ্ডাটি এমন এক ব্যক্তিকে দেব, যে আল্লাহ ও তার রসুলকে ভালবাসে। তার বদৌলতে আল্লাহ আমাদের বিজয়ী করবে; সে পলায়নপর ব্যক্তি নয়।"
অতঃপর তিনি ডেকে পাঠান আলী-কে, তখন সে ছিল চোখের অসুখে আক্রান্ত; তিনি তার চোখে থুতু নিক্ষেপ করেন ও বলেন, "এই ঝাণ্ডাটি নাও ও রওনা হও, যতক্ষণে না আল্লাহ তোমার মাধ্যমে আমাদেরকে বিজয়ী করে।"
আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) বর্ণনা: [5]
'নাইম দুর্গের সংখ্যা ছিল অনেক। সে সময় ইহুদিরা তীর নিক্ষেপ করছিলো। আল্লাহর নবীর অনুসারীরা নবীকে রক্ষা করে। তখন আল্লাহর নবী দু’টি বর্ম আবরণ, মস্তকাবরণ ও হেলমেট পরিহিত অবস্থায় আল-যারিব নামের এক ঘোড়ার পিঠে বসেছিলেন। তাঁর হাতে ছিল বল্লম ও ঢাল। তাঁর অনুসারীরা তাঁকে ঘিরে রেখেছিলেন।
তিনি যুদ্ধের ঝাণ্ডাটি মুহাজিরদের একজনকে দেন, কিন্তু সে কোনোকিছু অর্জন না করেই ফিরে আসে। অতঃপর তিনি ঝাণ্ডাটি অন্য একজনকে দেন, কিন্তু সেও কোনোকিছু অর্জন না করেই ফিরে আসে। অতঃপর আল্লার নবী ঝাণ্ডাটি আনসারদের একজনকে দেন, সে রওনা হয় ও কোনোকিছু অর্জন না করেই প্রত্যাবর্তন করে। ----আল্লাহর নবী বলেন, "আগামীকাল আমি এই ঝাণ্ডাটি এমন একজন লোককে দেবো, যাকে আল্লাহ ও তার রসুল ভালবাসে; আল্লাহ তার মাধ্যমে আমাদের জয়যুক্ত করবে এই কারণে যে, সে পলায়ন করবে না। হে মুহাম্মদ বিন মাসলামা, আনন্দ করো, কারণ যদি আল্লাহ চায়, আগামীকাল তোমার ভাইয়ের এই লড়াই চলবে ও ইহুদিরা পলায়ন করবে।"
আল্লাহর নবী সকালবেলা আলী ইবনে আবু তালিবকে ডেকে পাঠান, তখন তার চোখে ছিল ইনফেকশন। সে বলে, "আমি উপত্যকা বা পাহাড় কোনোকিছুই দেখতে পাই না।" আল্লাহর নবী তার কাছে যান ও বলেন, "তোমার চোখ খোল।" যখন সে তার চোখগুলো খোলে, আল্লাহর নবী তাতে থুতু নিক্ষেপ করেন; আলী বলেছে, "তারপর থেকে আমার চোখে কোনো অসুখ হয়নি।" আল্লাহর নবী তার হাতে ঝাণ্ডাটি দেন এবং তাঁর ও তাঁর সঙ্গে গমনকারী অনুসারীদের জন্য দোয়া করেন, যেন তারা বিজয়ী হতে পারে।"
আল-তাবারীর (৮৩৮-৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ) অতিরিক্ত বর্ণনা: [6]
‘ইবনে বাশার <মুহাম্মদ বিন জাফর < আউফ (বিন আবি জামিলাহ আল-রাবি (৬৭৮-৭৬৫ সাল) <মেইমুন (আবু আবদুল্লাহ) <আবদুল্লাহ বিন বুরায়েদা (৬৩৭-৭৩৩ সাল) <বুরায়েদা আল-আসলামি (মৃত্যু ৬৭৯-৬৮৪ সাল) হইতে বর্ণিত:
যখন আল্লাহর নবী খায়বার দুর্গের জনপদবাসীদের অভিমুখে শিবির স্থাপন করেছিলেন, তিনি উমর বিন আল-খাত্তাবকে যুদ্ধের ঝাণ্ডাটি দেন। তার সঙ্গে কিছু লোক যাত্রা করে ও তারা খায়বার অধিবাসীদের মুখোমুখি হয়। উমর ও তার সঙ্গীরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে। যখন তারা আল্লাহর নবীর কাছে প্রত্যাবর্তন করে, উমরের সঙ্গীরা তাকে কাপুরুষ হিসাবে অভিযুক্ত করে; সে ও তাদেরকে অভিযুক্ত করে একই অভিযোগে। আল্লাহর নবী বলেন, "আগামীকাল আমি এই ঝাণ্ডাটি এমন একজন লোককে দেবো যে, আল্লাহ ও তার রসুলকে ভালবাসে এবং যাকে ভালবাসে আল্লাহ ও তার রসুল।" পরদিন ---------’
- অনুবাদ, টাইটেল, ও [**] যোগ - লেখক।
ইমাম বুখারী (৮১০-৮৭০ সাল) বর্ণনা:
ইমাম বুখারীর বর্ণনা (৫:৫৯:৫২১) মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, আল-তাবারী ও আল ওয়াকিদির বর্ণনারই অনুরূপ, কিন্তু ঘটনার পূর্ণ বিবরণ সেখানে অনুপস্থিত[3]
>>> আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, অতর্কিত আক্রমণের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর নিজেদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার প্রচেষ্টায় খায়বার জনপদবাসী তাঁদের দুর্গ-মধ্য থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত আল-তাবারীর অতিরিক্ত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, খায়বার হামলাকালে মুহাম্মদের কিছু অনুসারী উমর ইবনে খাত্তাবকে 'কাপুরুষ' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। 'ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ' শিরোনামের গত একশত পাঁচটি পর্বের আলোচনায় আমরা উমর ইবনে খাত্তাব সম্বন্ধে আর যে-তথ্যগুলো জানতে পেরেছি, তা হলো:

১) মুহাম্মদ তাঁর দশ বছরের মদিনা জীবনে যে প্রায় একশোটি হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, তার মাত্র একটিতে তিনি উমর ইবনে খাত্তাবকে নেতৃত্ব-পদমর্যাদায় (Leadership position) নিয়োগ দিয়েছিলেন! সেই হামলাটি হলো তুরাবা হামলা - যার আলোচনা 'আল ফাতহ' বনাম আঠারটি হামলা (পর্ব- ১২৪)' পর্বে করা হয়েছে। এই হামলাটি হলো মুহাম্মদের সবচেয়ে অখ্যাত হামলাগুলোর একটি, সিংহভাগ ইসলাম-বিশ্বাসী যার নামও কখনো শোনেননি। উল্লেখ্য, মুহাম্মদ তাঁর জীবদ্দশায় উমরের মতোই আবু-বকরকেও মাত্র একটি হামলায় নেতৃত্ব-পদমর্যাদায়  নিয়োগ দিয়েছিলেন (বানু ফাযারাহ হামলার নেতৃত্বে কে ছিলেন, এ বিষয়ে আদি উৎসে দ্বিমত আছে - যার বিস্তারিত আলোচনা 'উম্মে কিরফা হত্যাকাণ্ড (পর্ব: ১১০)' পর্বে করা হয়েছে); আর সেই হামলাটিও হলো মুহাম্মদের সবচেয়ে অখ্যাত হামলাগুলোর আর একটি - নাম: 'নাজাদ আক্রমণ (পর্ব: ১২৪)']
২) হুদাইবিয়া সন্ধি প্রাক্কালে যখন কুরাইশ প্রতিনিধি সুহায়েল বিন আমর ও তাঁর সঙ্গীরা (পর্ব: ১১৮) মুহাম্মদের সাথে সন্ধিচুক্তি নিয়ে আলোচনা করছিলেন ও মুহাম্মদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুহয়েল পুত্র আবু জানদাল-কে তাঁর পিতার কাছে ফেরত পাঠানো হচ্ছিল তখন:
‘উমর লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ান ও আবু জানদালের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে বলেন, "ধৈর্য ধারণ করো, কারণ তারা শুধুই মুশরিক, তাদের রক্তে (তাবারী: 'তাদের যে কোন একজনের রক্তে') কুকুরের রক্ত ছাড়া আর কিছুই নাই," এবং তিনি তার তরবারির হাতলটি তার নিকটে নিয়ে আসেন। উমর প্রায়ই বলতেন, "আমি আশা করেছিলাম যে, সে ঐ তরবারিটি নেবে ও সেটি দিয়ে তার পিতাকে হত্যা করবে;”’ - যার বিস্তারিত আলোচনা 'উমর ইবনে খাত্তাবের অভিপ্রায় (পর্ব: ১২১)!' পর্বে করা হয়েছে। 
প্রশ্ন হলো:
“জন্মদাতা পিতাকে খুন করার জন্য সন্তানকে অস্ত্র জোগান দিয়ে যে-ব্যক্তি সাহায্য করার চেষ্টা করে, সেই ব্যক্তিটির মানসিকতাকে কীভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে?”
৩) হুদাইবিয়া সন্ধি প্রাক্কালে মুহাম্মদ উমরকে "কী কারণে তিনি এখানে এসেছেন" তা তাঁর পক্ষ হতে কুরাইশ নেতাদের অবহিত করানোর জন্য মক্কায় কুরাইশদের কাছে প্রেরণ করার জন্য তলব করেন, তখন উমর মুহাম্মদকে বলেন যে, তিনি কুরাইশদের হাতে মৃত্যুভয়ে ভীত -তিনি সুপারিশ করেন যে, সেখানে তার চেয়ে বেশি পছন্দের কোনো লোককে যেন পাঠানো হয়, যেমন উসমান। - যার বিস্তারিত আলোচনা 'উসমান ইবনে আফফান হত্যার গুজব (পর্ব: ১১৬)!' পর্বে করা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো:
“মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে যে-কাজটি কোনো ব্যক্তি নিজে করতে পারে না কিন্তু 'অজুহাত হাজির করে', সেই একই কাজটি করার জন্য অন্য একজনকে সুপারিশ করে - সেই ব্যক্তিটিকে কি 'সাহসী যোদ্ধা' হিসাবে মূল্যায়ন করা যায়?”
৪) মুহাম্মদের নেতৃত্বে 'বানু আল-মুসতালিক' অভিযানকালে মুহাজির ও আনসাররা কোন্দলে লিপ্ত হয় ও সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মদিনার আল-খাযরাজ গোত্র-নেতা আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সালুল রোষান্বিত হয়ে “এক উক্তি করেছেন” বার্তাটি শোনামাত্র তার কোনোরূপ সত্যতা যাচাই না করেই এই উমর ইবনে খাত্তাব মুহাম্মদকে যে-পরামর্শটি দিয়েছিলেন, তা হলো: “আববাদ বিন বিশার-কে হুকুম করুন যেন সে তাকে খুন করে।" - যার বিস্তারিত আলোচনা ‘মুমিন বনাম মুনাফিক–বিভাজনের শুরু (পর্ব: ৯৮)!’ আবদুল্লাহ বিন উবাই পুত্রের আর্জি (পর্ব: ৯৯)!’ পর্বে করা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো:
"খবরের সত্যতা যাচাই ছাড়াই যে-ব্যক্তি কোনো মানুষকে খুন করার সুপারিশ করতে পারে, সেই ব্যক্তিকে কি কখনো মহান ও বিবেকবান হিসাবে আখ্যায়িত করা যায়? বা বিবেচনাও কি করা যায়?"
৫) ওহুদ যুদ্ধের প্রাক্কালে আহত মুহাম্মদকে যুদ্ধের ময়দানে অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে মুহাম্মদের যে সমস্ত অনুসারী দিকভ্রান্তের মতো সেদিন পালিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের একজন ছিলেন উমর ইবনে খাত্তাব - যার বিস্তারিত আলোচনা 'নিহত মুহাম্মদ (পর্ব: ৬২)!নবী গৌরব ধূলিসাৎ! (পর্ব: ৬৯)' পর্বে করা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো:
"নিজ নেতাকে অসহায় অবস্থায় শত্রু কবলে ফেলে রেখে যে-ব্যক্তি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে, তাকে কি অসীম সাহসী যোদ্ধা ও নেতার প্রতি সুগভীর ভালবাসার অধিকারী ব্যক্তি হিসাবে আখ্যায়িত করা যায়?"
৬) বদর যুদ্ধশেষে পথিমধ্যেই দু'জন যুদ্ধবন্দীকে বন্দী অবস্থাতেই খুন করার পর বাকি ৬৮ জন বন্দীকে মদিনায় ধরে নিয়ে আসার পর তাঁদেরকে কী করা হবে, সে বিষয়ে যখন মুহাম্মদ তাঁর বিশিষ্ট সাহাবিদের মতামত জানতে চান, তখন এই উমর ইবনে খাত্তাব মুহাম্মদকে যে-পরামর্শটি দিয়েছিলেন, তা হলো, "নবীর উচিত এই বন্দীদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা এবং তা যেন হয় এই বন্দীদের একান্ত নিকট-আত্মীয়দের মাধ্যমে!" মুহাম্মদ তার এই পরামর্শ গ্রহণ না করায় অনুতপ্ত হয়ে পরদিন সকালে "আল্লাহর নামে" যে-ওহী নাজিল করেছিলেন তা হলো,
৮:৬৭-৬৯ - "নবীর পক্ষে উচিত নয় বন্দীদিগকে নিজের কাছে রাখা, যতক্ষণ না দেশময় প্রচুর রক্তপাত ঘটাবে। তোমরা পার্থিব সম্পদ কামনা কর, অথচ আল্লাহ চান আখেরাত। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা। যদি একটি বিষয় না হত যা পূর্ব থেকেই আল্লাহ লিখে রেখেছেন, তাহলে তোমরা যা গ্রহণ করছ সেজন্য বিরাট আযাব এসে পৌছাত। ---।" এ বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা 'বন্দীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত - কী ছিল আল্লাহর পছন্দ (পর্ব: ৩৬)?' পর্বে করা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো:
"নিরস্ত্র বন্দী অবস্থায় ৬৮ জন লোককে যে-ব্যক্তি ঐ বন্দীদেরই একান্ত নিকট-আত্মীয়দের মাধ্যমে একে একে গলা কেটে খুন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে, তাকে "ঠাণ্ডা মাথার এক ভয়ঙ্কর খুনি" ছাড়া আর কীভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে?"
>> ইসলামের ইতিহাসে উমর ইবনে আল-খাত্তাব একটি অতি পরিচিত নাম। তিনি ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের দ্বিতীয় খুলাফায়ে রাশেদিন। মুহাম্মদের মৃত্যুর (জুন, ৬৩২ সাল) দিনটিতে তাঁর লাশটি বিছানায় ফেলে রেখে মুহাম্মদ অনুসারীরা কোন্দলে লিপ্ত হন। ইস্যু, "কে বসবেন ক্ষমতায়?" আনসারদের পক্ষ থেকে সা'দ বিন উবাইদা (Sa’d bin Ubadah)-এর অধীনে আনসাররা; আর মুহাজিরদের পক্ষে আবু বকর ও উমর (মুহাম্মদের দুই শ্বশুর) গং, এবং আলীর পক্ষে কিছু আনসার, তালহা ও যুবায়ের গং (এ বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তীতে করা হবে); মুহাম্মদের একান্ত পরিবার-সদস্যবৃন্দ ও কিছু আনসার সদস্য তখন মৃত মুহাম্মদের সৎকার-কার্য নিয়ে ব্যস্ত।  উমর ইবনে খাত্তাবের প্রত্যক্ষ (এক পর্যায়ে 'সশস্ত্র') হস্তক্ষেপে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন আবু বকর ইবনে কুহাফা (৫৭৩-৬৩৪ সাল) - ইসলামের ইতিহাসের প্রথম খুলাফায়ে রাশেদিন!
উমরের এই সাহায্যের প্রতিদান আবু বকর তাকে দিয়েছিলেন। দুই বছরের শাসন শেষে (৬৩২-৬৩৪ সাল) মৃত্যুকালে তিনি উমর ইবনে খাত্তাবকে মুসলিম জাহানের শাসক হিসাবে নিযুক্ত (Selected) করেন। আবু বকরের নিযুক্ত এই শাসক মুসলিম জাহানের অধিপতি হিসাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকেন সুদীর্ঘ দশ বছর - ৬৩৪ থেকে ৬৪৪ সাল। উমর তার শাসন-আমলে ইসলামের নামে দিকে দিকে “আরব সাম্রাজ্যবাদ”-এর বিস্তার লাভ করান।
কী ভাবে?
“অবশ্যই তলোয়ারের মাধ্যমে!”
উমর ইবনে খাত্তাব তার দশ বছরের শাসন-আমলে কমপক্ষে বারোটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৬৪১ সাল থেকে ৬৪৪ সাল পর্যন্ত সময়ে পারস্যবাসীদের (বর্তমান ইরান) বিরুদ্ধে উমর পর পর বেশ কয়েকটি নৃশংস আক্রমণ চালান। এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের  ফসল, ৬৪৪ সালে তার সম্পূর্ণ পারস্য বিজয়। ঐ একই বছর আবু লুলু ফিরোজ (Abu Lulu Firoz) নামের এক আদি পারস্যবাসী অগ্নি-উপাসক দাসের মারফত তিনি নৃশংসভাবে খুন হন। উমর ইবনে খাত্তাবের এই করুণ মৃত্যুর মাধ্যমে শেষ হয় খুলাফায়ে রাশেদিন নামের মুহাম্মদের শ্বশুর-জামাই রাজত্বের প্রথম অধ্যায়, "মুহাম্মদের দুই শ্বশুরের রাজত্বকাল!" অতঃপর শুরু হয় শ্বশুর-জামাই রাজত্বের দ্বিতীয় অধ্যায়, "মুহাম্মদের দুই জামাইয়ের রাজত্বকাল!" স্থায়িত্বকাল পরবর্তী সতের বছর (৬৪৪-৬৬১ সাল), যার পরিসমাপ্তি ঘটে আলী ইবনে আবু-তালিবকে নামাজরত অবস্থায় নৃশংস খুনের মাধ্যমে!
ইসলামের ইতিহাসের চারজন খুলাফায়ে রাশেদিনের তিনজনকেই নৃশংসভাবে খুন হতে হয়েছে! শেষের দু'জনকে (উসমান ও আলী) খুন করেছেন মুহাম্মদ অনুসারীরা!
সেই ইতিহাসের পর কালের পরিক্রমায় প্রায় ১৪০০ বছর গত হয়েছে। কিন্তু পারস্যবাসীরা (ইরানীরা) উমর ইবনে খাত্তাবকে এখনও এমনভাবে মনে রেখেছেন যে, তাঁরা তাঁদের কোনো সন্তানের নাম 'উমর' রাখেন না (তাঁদের কাছে 'আয়েশা'-ও এমনই একটি নাম); ইরানীদের কাছে 'উমর' নামটি হলো একটি গালি, যেমন বাংলায় 'মীর জাফর' নামটি। বাংলায় যেমন "আমি মীর জাফর নই!" প্রবাদ বাক্যটির মাধ্যমে বক্তা বোঝাতে চান যে, তিনি কোনো খারাপ ও বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তি নন, যেমন "তুই একটা মীর জাফর!" প্রবাদ বাক্যের মাধ্যমে বাঙালিরা অপরকে দেয় গালি; তেমনই ইরানীরা তাঁদের ফারসি ভাষায় "মান উমর নিসতাম (আমি উমর নই)!" প্রবাদ বাক্যটির মাধ্যমে বোঝাতে চান যে, তিনি কোনো খারাপ ও বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তি নন, "তু উমর হাসতি (তুই একটা উমর)!" প্রবাদ বাক্যের মাধ্যমে তাঁরা অপরকে দেয় গালি। জীবনের অনেকগুলো বছর আমি কাটিয়েছি ইরানে, "উমর ও আয়েশা" নামের শিয়া মুসলমানদের কেউ আছেন, এমন খবর আমি কক্ষনো শুনিনি।
অন্যদিকে,
সুন্নি সম্প্রদায়ভুক্ত মুসলমানরা উমর ইবনে খাত্তাবকে জানেন এক অতি চরিত্রবান, মহানুভব ও অসীম সাহসী যোদ্ধা হিসাবে!
সেলুকাস! কী বিচিত্র ইসলামের ইতিহাস!
ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে আল-ওয়াকিদি ও আল-তাবারীর মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। ইবনে ইশাকের মূল ইংরেজি অনুবাদ ইন্টারনেটে বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক: তথ্যসূত্র [1]
The narrative of Al- Waqidi: [5]
‘The Fortressess of Naim were numerous. The Jews aimed at that time with arrows. The Companions of Messenger of God shielded the Messenger of God. At that time The Messenger of God wore two armors, cap and helmet, and he was on a horse named al-Zarib. In his hand was a spear and shield. His companions surrounded him.  He gave the flag to a man from the Muhajirin, and he returned without accomplishing anything. Then he gave the flag to another, and he returned without accomplishing anything. Then the Messenger of God gave the flag of the Ansar to one of the Ansar and he set out and returned without accomplishing anything. ---- The Messenger of God said, “Tomorrow I will give the flag to someone that God and His messenger loves, and God will conquer through him for he will not flee. Rejoice, O Muhammad b Maslama, for tomorrow if God wills, the battle of your brother will be fought and the Jews will flee.”  In the morning the Messenger God sent for Ali b Abi Talib, who had an eye infection.  He said, “I cannot see either valley or mountain.” The prophet went to him and said, “Open your eyes.” And when he opened them, and the prophet spat on them, Ali said: I have had no eye disease since that time. The Messenger of God handed him the flag, and prayed for him and those who were with him from his companions, to be victorious.” 
The additional Narrative of Al-Tabari: [6]
‘According to Ibn Bashshar < Muhammad b Jafar < Awf < Maymun (Abu Abdullah) < Abdallah b Buraydah < Buraydah Al-Aslami, who said: When the Messenger of God encamped at the fortress of the people of Khaybar, he gave the banner to Umar b al-Khattab. Some of the people set out with him, and they encountered the people of Khaybar. Umar and his companions were put to flight. When they returned to the Messenger of God, Umar’s companions accused him of cowardice, and he accused them of the same. The Messenger of God said, “Tomorrow I shall give the banner to a man who loves God and his Messenger and whom God and his Messenger loves.” ---
(চলবে)
[কুরানের উদ্ধৃতি সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হারাম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা  থেকে নেয়া, অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট ইংরেজি অনুবাদকারীর ও চৌত্রিশ-টি বিভিন্ন ভাষায় পাশাপাশি অনুবাদ এখানে]

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৫১৪
[2] অনুরূপ বর্ণনা: “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৮০ 
[3] অনুরূপ বর্ণনা- সহি বুখারী: ভলিউম ৫, বই ৫৯, নম্বর ৫২১ ও ৫২০
Narrated Sahl bin Sad:  On the day of Khaibar, Allah's Apostle said, "Tomorrow I will give this flag to a man through whose hands Allah will give us victory. He loves Allah and His Apostle, and he is loved by Allah and His Apostle." The people remained that night, wondering as to who would be given it. In the morning the people went to Allah's Apostle and every one of them was hopeful to receive it (i.e. the flag). The Prophet said, "Where is Ali bin Abi Talib?" It was said, "He is suffering from eye trouble O Allah's Apostle." He said, "Send for him." 'Ali was brought and Allah's Apostle spat in his eye and invoked good upon him. So 'Ali was cured as if he never had any trouble. Then the Prophet gave him the flag. 'Ali said "O Allah's Apostle! I will fight with them till they become like us." Allah's Apostle said, "Proceed and do not hurry. When you enter their territory, call them to embrace Islam and inform them of Allah's Rights which they should observe, for by Allah, even if a single man is led on the right path (of Islam) by Allah through you, then that will be better for you than the nice red camels.
[4] Ibid “সিরাত রসুল আল্লাহ”- ইবনে হিশামের নোট নম্বর ৭৬২, পৃষ্ঠা ৭৭০
[5] “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৫২-৬৫৪; ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩২১-৩২২
[6] Ibid “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী; পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৭৯
 

খায়বার যুদ্ধ - ৪: আলী ইবনে আবু তালিবের বীরত্ব!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব-১৩৩): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত সাত

লিখেছেন গোলাপ
"যে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীদের অতর্কিত আগ্রাসী হামলার আকস্মিকতা কাটিয়ে ওঠার পর খায়বারের ইহুদি জনপদবাসী তাঁদের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষার প্রচেষ্টায় যে-প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, তা মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে আবু বকর ইবনে আবি কুহাফা ও উমর ইবনে আল-খাত্তাব যখন তাদের দলবল নিয়ে মুহাম্মদের কাছে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, তখন মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশ্যে কী ঘোষণা দিয়েছিলেন;  উমরের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী মুহাম্মদ অনুসারীরা উমরের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ এনেছিলেন; পরদিন সকালে চোখের অসুখে আক্রান্ত আলী ইবনে আবু তালিব-কে যুদ্ধের ঝাণ্ডাটি দেয়ার আগে মুহাম্মদ কীভাবে আলীর চোখের চিকিৎসা করেছিলেন [কুরান (পর্ব: ১-৯ ও ১৩) ও হাদিস গ্রন্থে এরূপ বহু 'ইসলামী বিগ্যান' এর সন্ধান পাওয়া যায়!]; মুহাম্মদ তাঁর দশ বছরের মদিনা-জীবনে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যে বিপুল সংখ্যক সংঘর্ষে জড়িত ছিলেন, তার কয়টিতে তিনি উমর ইবনে খাত্তাব ও আবু বকর ইবনে আবি কুহাফা-কে অধিনায়ক হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন; নেতৃত্ব-পদমর্যাদায় (Leadership position) নিম্নতম অভিজ্ঞতা ও এ সকল যুদ্ধ-বিগ্রহের কোনোটিতেই কোনোরূপ বিশেষ অবদানের স্বাক্ষর না রাখা সত্ত্বেও মুহাম্মদের মৃত্যুর দিনটিতে তাঁর লাশটি বিছানায় ফেলে রেখে আবু বকর কোন ব্যক্তির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন; মৃত্যুকালে আবু বকর সেই ব্যক্তিকে কী পুরস্কারে পুরস্কৃত করেছিলেন - ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনা পুনরারম্ভ: [1] [2]
পূর্ব প্রকাশিতের (পর্ব: ১৩২) পর:
'তাই আলী সেটি [ঝাণ্ডা] নিয়ে রওনা হয়, ত্বরা করার কারণে সে হাঁপাচ্ছিল আর আমরা তার পথ অনুসরণ করে পেছনে পেছনে আসছিলাম যতক্ষণে না সে তার ঝাণ্ডাটি দুর্গের নিচের এক স্তূপ পাথরের ওপর আটকে রাখে। এক ইহুদি ওপর থেকে তাকে দেখে ও জিজ্ঞাসা করে যে, সে কে, যখন সে তাকে তা জানায়, তখন সে বলে, "তুমি জিতে গেছো, যা মুসার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল!", কিংবা এরকম কোনো বাক্য (আপাতদৃষ্টিতে ইহুদিটি আলীর নামটি-কে ওমেন (omen) মনে করেছিল যখন সে বলেছিল 'আলাতুম'); তার মাধ্যমে আল্লাহর বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত সে ফিরে আসে না।
আল্লাহর নবীর মুক্তিপ্রাপ্ত আবু রাফি নামের এক দাস হইতে > তার পরিবারের এক সদস্যের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে > আবদুল্লাহ বিন হাসান আমাকে বলেছেন:
"যখন আল্লাহর নবী তাঁর যুদ্ধের ঝাণ্ডাটি সহ আলীকে প্রেরণ করেন, আমারা তার সঙ্গে রওনা হই। অতঃপর যখন সে দুর্গের নিকটে আসে তখন দুর্গ-সেনারা বের হয়ে আসে ও সে তাদের সাথে যুদ্ধ করে। এক ইহুদি তাকে এমনভাবে আঘাত করে যে, তার ঢালটি তার হাত থেকে পড়ে যায়, তাই আলী দুর্গ পাশের এক দরজা টেনে তুলে তা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে। যুদ্ধরত অবস্থায় সেটি সে তার হাতেই ধরে রাখে যতক্ষণে না আল্লাহ আমাদের বিজয়ী করে, সবকিছু শেষ হলে সেটা সে দূরে নিক্ষেপ করে। আমি যা নিজে দেখেছি, তা হলো, আরও সাতজন লোক নিয়ে সেই দরজাটি আমরা ওল্টানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আমরা তা পারিনি।
আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) বর্ণনা: [3]
'প্রথমেই যে ব্যক্তি বের হয়ে তাদের দিকে আসে সে হলো মারহাবের ভাই আল-হারিথ ও তার দল। মুসলমানরা তাদের সম্মুখীন হয়, আলী লাফ দিয়ে গিয়ে তাকে সজোরে আঘাত করে ও তাকে হত্যা করে। আল-হারিথের সঙ্গীরা দুর্গে ফিরে যায় ও ভেতরে প্রবেশ করে তারা সেটির দরজা বন্ধ করে নিজেদের আবদ্ধ করে রাখে।---
আবু রাফি হইতে বর্ণিত: "যখন আল্লাহর নবী আলীকে তার ঝাণ্ডাসহ প্রেরণ করেন তখন আমরা তার সাথে ছিলাম। দুর্গের দরজায় আলী এক লোকের সম্মুখীন হয়। লোকটি আলীকে আঘাত করে, আর আলী তার ঢাল দিয়ে নিজেকে রক্ষা করে। অতঃপর আলী দুর্গ মধ্যে অবস্থিত একটি দরজা হাতে নেয় ও সেটি দিয়ে নিজেকে রক্ষা করে। তার মাধ্যমে আল্লাহর এই দুর্গ জয়ের পূর্ব পর্যন্ত দরজাটি ছিল তার হাতেই। সে দুর্গ জয় করে তার ভেতরে প্রবেশ করতে যাচ্ছে খবরটি পৌঁছে দেয়ার জন্য সে এক লোককে আল্লাহর নবীর কাছে পাঠায়। এই দুর্গটি ছিল মারহাবের।

(‘The first of those who set out to them was al-Harith, the brother of Marhab, with the runners. The Muslims appeared, and Ali Jumped and struck hard, and Ali killed him. The companions of al-Harith returned to the fortress, entered and locked themselves in.’---)
- অনুবাদ, টাইটেল, ও [**] যোগ - লেখক।
>>> আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি, পর পর দুই-তিন দিন ব্যর্থ হামলার পর নাটার এই দুর্গটির পতন হয় আলী ইবনে আবু তালিবের নেতৃত্বে। 'ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ' শিরোনামের গত একশত ছয়টি পর্বের বিস্তারিত আলোচনায় আমরা জেনেছি যে, অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে মুহাম্মদের বিপুল সংখ্যক যুদ্ধবিগ্রহে আলী ইবনে আবু তালিব বিভিন্ন সময়ে যে-বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন, এই উপাখ্যানটি তার আর একটি উদাহরণ। মুহাম্মদের জীবদ্দশায় বিভিন্ন যুদ্ধে আলী ইবনে আবু তালিবের বীরত্বগাথার যে-পরিচয় আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি, তা হলো:
১) বদর যুদ্ধে আলী নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলেন প্রথমে ওতবা বিন রাবিয়ার ছেলে আল-ওয়ালিদ বিন ওতবা কে, অতঃপর তাঁর পিতা ওতবা বিন রাবিয়াকে - যার বিস্তারিত আলোচনা "নৃশংস যাত্রার সূচনা (পর্ব ৩২)!" পর্বে করা হয়েছে।
২) ওহুদ যুদ্ধে যখন মুহাম্মদ গুরুতর আহত হয়েছিলেন, এই আলী ইবনে আবু তালিব তাঁর হাতটি ধরে রাখেন ও তালহা ইবনে ওবায়েদুল্লাহ তাঁকে টেনে ওঠান, যতক্ষণে না তিনি খাড়া হয়ে দাঁড়াতে পারেন। এই যুদ্ধে মুহাম্মদের বডি-গার্ড মুসাব বিন উমায়ের নিহত হওয়ার পর মুহাম্মদ যুদ্ধের ঝণ্ডাটি দিয়েছিলেন আলীকে, আর আলী অন্যান্য মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন - যার বিস্তারিত আলোচনা "আহত মুহাম্মদ (পর্ব: ৬০)!" "আক্রান্ত মুহাম্মদ (পর্ব: ৬১)!” পর্বে করা হয়েছে।
৩) খন্দক যুদ্ধে আলী তাঁরই পিতার বন্ধু আমর বিন আবদু উদ্দ-কে নৃশংসভাবে হত্যা করেন! তাঁর পিতার এই বন্ধুটি সেখানে বলেছিলেন, "হে আমার ভাতিজা, আমি তোমাকে হত্যা করতে চাই না।" প্রতি-উত্তরে আলী তার জবাব দিয়েছিলেন এই বলে, "কিন্তু আমি তোমাকে হত্যা করতে চাই।"- যার বিস্তারিত আলোচনা "আলী ইবনে আবু তালিবের নৃশংসতা (পর্ব ৮২)!" পর্বে করা হয়েছে।
অন্যদিকে,
আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের রচিত 'সিরাত ও হাদিস' গ্রন্থের বর্ণনায় যে-বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো - মুহাম্মদ তাঁর জীবদ্দশায় আবু বকর ও উমর-কে কোনোরূপ গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব-পদমর্যাদায় শুধু যে-নিয়োগ দান করেননি (পর্ব: ১৩২) তাইই নয়, এই বিপুল সকল যুদ্ধবিগ্রহের কোনোটিতেই এই দুই ব্যক্তি আলী ইবনে আবু তালিব ও মুহাম্মদের অন্যান্য বিশিষ্ট অনুসারীদের মত কোনো 'বিশেষ বীরত্ব' প্রদর্শন করেছিলেন, এমন তথ্যও কোথাও বর্ণিত হয়নি। সাধারণ সুন্নি মুসলমানদের কাছে এই তথ্যটি খুবই আশ্চর্যজনক মনে হতে পারে, কিন্তু আদি উৎসের বর্ণনায় এই প্রামাণিক তথ্যটি (Evidence) অত্যন্ত স্পষ্ট।
তা সত্ত্বেও,
মুহাম্মদের মৃত্যুর পর মুহাম্মদের এই দুই অনুসারী কী প্রক্রিয়ায় নিজেদেরকে মুসলিম জাহানের অধিপতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তা আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকরা অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় তাঁদের নিজ নিজ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। ওমর ইবনে খাত্তাবের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর মুহাম্মদের একান্ত পরিবার সদস্যদের বিরুদ্ধে এই আবু-বকর ও ওমর কীরূপ আচরণ করেছিলেন, তার আলোচনা "হিন্দের প্রতিশোধ স্পৃহা! (পর্ব ৬৪)" পর্বে করা হয়েছে। আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে, আয়েশার প্রতি অপবাদ শ্রবণ করার পর যখন মুহাম্মদ এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য আলী ইবনে আবু তালিব-কে  তলব করেন ও তাঁর পরামর্শ চান, তখন আলী তাঁকে যে-পরামর্শটি দিয়েছিলেন, তা হলো, "অঢেল মহিলা আছে, আপনি সহজেই একজনের পরিবর্তে অন্য একজনকে গ্রহণ করতে পারেন (পর্ব: ১০৩)।" - এই ঘটনাটি কোনোভাবেই আলী ইবনে আবু-তালিবের সঙ্গে আয়েশা ও তার পরিবারের সুসম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে না।  নিজ কন্যার বিরুদ্ধে এমন একটি অপমানজনক উক্তি অতি সহজেই  কী কেউ ভুলে যেতে পারেন? অসহায় সেই মুহূর্তে আলীর এই অপমানজনক উক্তি কি আয়েশার পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব?
অতঃপর চব্বিশটি বছর (৬৩২-৬৫৬ সাল) মুহাম্মদের নিজস্ব পরিবারের (হাশেমী বংশের) কোনো সদস্য মুসলিম জাহানের অধিপতি হবার সুযোগ পাননি। মুহাম্মদের মৃত্যুর চব্বিশ বছর পর ইসলামের ইতিহাসের তৃতীয় খুলাফায়ে রাশেদিন উসমান ইবনে আফফানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর এক অস্বাভাবিক পরিবেশে মুহাম্মদের নিজস্ব পরিবারের সদস্য এই আলী ইবনে আবু-তালিব ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার সুযোগ পান। অতঃপর বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সীমাহীন নৃশংসতার উদাহরণ সৃষ্টি করেও (পর্ব: ৮২) মুহাম্মদের নিজস্ব পরিবারের এই সদস্য মাত্র পাঁচ বছর (৬৫৬-৬৬১ সাল) ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছিলেন!
শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত মুসলমানরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, মুহাম্মদের মৃত্যুর ঐ দিনটি থেকেই আলী ইবনে আবু-তালিব সহ মুহাম্মদের নিজস্ব পরিবার (হাশেমী বংশ) সদস্যদের নেতৃত্ব বঞ্চিত করতে যে-লোকগুলো ক্ষমতার রাজনীতি শুরু করেছিলেন, তাদের প্রথম ও প্রধান ছিলেন আবু-বকর ইবনে আবি কুহাফা ও উমর ইবনে আল-খাত্তাব। শিয়া মুসলমানদের কাছে উমর ও আবু বকর (ও আয়েশা) নামটি হলো ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত চরিত্র!  তাঁদের এই বিশ্বাসের ভিত্তি হলো আদি উৎসে বর্ণিত ইসলামের ইতিহাসের এই সব তথ্য-উপাত্ত।
(চলবে)
 

খায়বার যুদ্ধ - ৫: রক্তের হোলি খেলা - ‘নাইম’ দুর্গ দখল!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব- ১৩৪): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত আট

লিখেছেন গোলাপ
"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।" 
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীদের অতর্কিত আগ্রাসী আক্রমণের শিকার হয়ে খায়বারের ভীত-সন্ত্রস্ত ইহুদি জনপদবাসী তাদের দুর্গ-মধ্যে আশ্রয় নিয়ে নিজেদের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষার প্রচেষ্টায় মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে কীরূপ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন; পর পর দু'-তিন দিন ব্যর্থ হবার পর আলী ইবনে আবু তালিবের নেতৃত্বে মুহাম্মদ যে-হামলাকারী দলটি পাঠিয়েছিলেন, তার মোকাবিলায় দুর্গ-মধ্য থেকে কোন ইহুদি লোকটি সর্বপ্রথম বের হয়ে এসে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন; কে তাঁকে হত্যা করেছিলেন; এই যুদ্ধে আলী ইবনে আবু তালিব কীরূপ বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি সাধারণ যুদ্ধ-ঢালের পরিবর্তে কোন বস্তুকে যুদ্ধ-ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন; মুহাম্মদের জীবদ্দশায় বিভিন্ন যুদ্ধে আলী অসাধারণ বীরত্বের প্রকাশ করা সত্ত্বেও কী কারণে আলীসহ মুহাম্মদের নিজস্ব পরিবারের (হাশেমী বংশ) কোনো সদস্য সুদীর্ঘকাল মুসলিম জাহানের অধিপতি হবার সুযোগ পাননি; কারা তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিলেন বলে শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত মুসলমানরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, তাঁদের সেই বিশ্বাসের ভিত্তি কী - ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
ইসলাম-বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা ইসলামের ইতিহাসের খায়বার যুদ্ধ আলোচনায় যে-উপাখ্যানগুলো তাঁদের ওয়াজ মাহফিল, বক্তৃতা, বিবৃতি, রেডিও-টেলিভিশন আলোচনা ও টক-শো, সামাজিক মেলামেশায় ইসলামের আলোচনা - ইত্যাদি অনুষ্ঠানে গর্বভরে বয়ান করেন; মাদ্রাসা-স্কুল-কলেজের পাঠ্য পুস্তক সিলেবাসে শিক্ষা বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত করেন ও প্রশ্নপত্র তৈরি করেন; বুদ্ধিজীবীরা বই লেখেন; সাংবাদিকরা খবরের কাগজে আর্টিকেল লেখেন - তার সর্বাগ্রে ও শীর্ষস্থানে অবস্থান করে খায়বার যুদ্ধে আলী ইবনে আবু তালিবের এই বীরত্বের ইতিহাস! সে-কারণেই আলীর বীরত্বের এই উপাখ্যান অসংখ্য ইসলাম-বিশ্বাসীরই মুখে মুখে।
প্রশ্ন হলো:
"আলী ইবনে আবু-তালিব ও তাঁর সঙ্গীদের এই বিজয় ও বীরত্বের 'রক্ত-মূল্য' কত ছিলো?"
অর্থাৎ,
"মুহাম্মদ ও আলীর নেতৃত্বে খায়বারের নিরপরাধ (তাঁরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের ওপর আক্রমণ করতে আসেননি, আক্রমণকারী মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা) ইহুদি জনগণের মোট কতজন লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর মুহাম্মদের প্রতিশ্রুত (পর্ব: ১২৩) এই আসন্ন বিজয় (কুরান: ৪৮:১৮-২১) কর্মটি সম্পন্ন হয়েছিলো?"  
 
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনা পুনরারম্ভ: [1] [2] [3]   
পূর্ব প্রকাশিতের (পর্ব: ১৩৩) পর:
আবদুল্লাহ বিন সাহল বিন আবদুল রহমান বিন সাহল নামের বানু হারিথা গোত্রের এক ভাই জাবির বিন আবদুল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমাকে বলেছেন:
 
ইহুদি মারহাব অস্ত্রসহ তাদের দুর্গ থেকে বের হয়ে আসে ও কবিতার মাধ্যমে [সিরাতে- 'কবিতা'] নিজের বীরত্বগাথা বলতে বলতে সকলকে একক যুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে। -- আল্লাহর নবী বলেন, "কে এই লোকটির সঙ্গে মোকাবেলা করবে?" মুহাম্মদ বিন মাসলামা বলে যে, সে তা করবে, কারণ গতকাল যে-লোকটি তার ভাইকে হত্যা করেছে [পর্ব-১৩১], তার প্রতিশোধ নিতে সে অঙ্গীকারবদ্ধ। আল্লাহর নবী তাকে যেতে বলেন ও তার সাহায্যের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
তারা একে অপরের দিকে এগিয়ে যায়, তাদের মাঝখানে ছিল এক পুরানো গাছ ও তার নরম ডাল-পালা, যার আড়ালে তারা আত্মগোপন করা শুরু করে। তারা একে অন্যের কাছে থেকে নিজেকে আড়াল করে। যখনই একজন গাছের আড়ালে লুকায়, অন্যজন তার তরবারি দিয়ে মাঝখানের ডাল-পালা ফালা-ফালা করে কেটে ফেলে তারা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। ডাল-পালা শূন্য গাছটি এমনভাবে অবশিষ্ট থাকে, যেন মনে হয়, এটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক মানুষ। মারহাব আক্রমণ ও আঘাত করে মুহাম্মদ বিন মাসলামা-কে। সে তার তরবারির তীব্র আঘাতটি ঢাল দিয়ে প্রতিহত করে ও অবিচল থাকে। অতঃপর মুহাম্মদ হত্যা করে মারহাব-কে।
মারহাব নিহত হবার পর তার ভাই ইয়াসির দ্বন্দ্ব-যুদ্ধের আহ্বান নিয়ে বের হয়ে আসে। [সিরাতে: 'কবিতা']
হিশাম বিন উরওয়া [c. ৬৮০-৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দ] হইতে বর্ণিত: আল-যুবায়ের বিন আল-আওয়াম [পর্ব: ১২৪] ইয়াসির-এর সাথে যুদ্ধের জন্য এগিয়ে আসে। তার মা সাফিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব [মুহাম্মদের ফুপু: পর্ব-১২] বলে, "হে আল্লাহর নবী, সে কি আমার পুত্রকে হত্যা করবে?" তিনি জবাবে বলেন, "না, যদি আল্লাহ চায়, তোমার ছেলে তাকে হত্যা করবে।" অতঃপর, আল-যুবায়ের অগ্রসর হয়। যখন এই দুইজন একে অপরের সম্মুখীন হয়, আল-যুবায়ের হত্যা করে ইয়াসির-কে। হিশাম বিন উরওয়া আমাকে বলেছেন যে, আল-যুবায়ের কে যখন বলা হয়েছিল, "আল্লাহর কসম, ঐ দিন তোমার তরবারিটি নিশ্চয়ই খুব ধারালো ছিলো", জবাবে সে বলেছিল যে, সেটি ধারালো ছিলো না, শুধুই সে তা ব্যবহার করেছিল প্রবল শক্তিতে।  [4]
আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) বিস্তারিত বর্ণনা: [3]
'সেটি ছিল মারহাবের দুর্গ। বিবৃত আছে: মারহাব প্রতিদ্বন্দ্বী মদ্দা ঘোড়ার মত সম্মুখে এসে হাজির হয়, ও তাঁর বীরত্বগাথা শোনায় কবিতার মাধ্যমে:
"খায়বার জানে যে, আমি মারহাব, আছে যার শাণিত অস্ত্র;
এক প্রমাণিত সাহসী, মাঝে মাঝে আমি করবো আঘাত, মাঝে মাঝে হবো আঘাতপ্রাপ্ত।"
সে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বান করে। মুহাম্মদ বিন মাসলামা বলে, "হে আল্লাহর নবী, আমি অন্যায়ের শিকার এক ক্ষুব্ধ ব্যক্তি। গতকাল আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে, সুতরাং আমাকে আপনি মারহাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি দিন, কারণ সে হলো আমার ভাইয়ের হত্যাকারী।" আল্লাহর নবী তাকে দ্বন্দ্বযুদ্ধ করার অনুমতি দেন। তিনি তার জন্য দোয়া করেন ও তাকে তাঁর তরবারিটি দেন। মুহাম্মদ অগ্রসর হয় ও চিৎকার করে বলে,
"এই মারহাব, তুই কি দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বান করেছিস?"
সে বলে, "হ্যাঁ।" মারহাব কবিতার মাধ্যমে নিজের বীরত্বগাথা বলতে বলতে তার সামনে এগিয়ে যায়: [সিরাতে 'কবিতা']।---
মারহাব যে বর্ম-আবরণটি পরিধান করেছিলো তা ছিল ওপরে গুটানো। মুহাম্মদ তার দুই ঊরুতে আঘাত করে ও সেগুলো কেটে ফেলে। বিবৃত আছে: মুহাম্মদ বিন মাসলামা তার ঢাল দিয়ে নিজেকে রক্ষা করে - মারহাব যখন তরবারি সমেত তার হাতটি ওপরে উঠিয়েছিল, তখন তার বর্ম-আবরণটি ছিল ওপরে গুটানো; মুহাম্মদ তরবারি সমেত ঝুঁকে পড়ে তার দুই পা কেটে ফেলে, মারহাব ভূপাতিত হয়। মারহাব বলে, "হে মুহাম্মদ, আমাকে শেষ করে ফেলো!"
মুহাম্মদ জবাবে বলে, "মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ কর, আমার ভাই মাহমুদ যেমন করে সে স্বাদ গ্রহণ করেছে!" সে তাকে পেছনে ফেলে রেখে হেঁটে যায়। অতঃপর আলী তার কাছে যায় ও তার কল্লা কেটে ফেলে এবং তার মালামাল লুণ্ঠন করে।
তারা আল্লাহর নবীর সম্মুখে এসে লুটের মাল নিয়ে ঝগড়া করে। মুহাম্মদ বিন মাসলামা বলে, "হে আল্লাহর নবী, নিশ্চয়ই আমি তার পা দুটো কেটে ফেলেছিলাম, অতঃপর তাকে কেবল এ জন্যই জীবিত রেখেছিলাম, যেন সে তরবারির তিক্ত স্বাদ আস্বাদন করে ও ধুকে ধুকে মরে, যেমন করে আমার ভাই তিন দিন যাবত মৃত্যুকষ্টে তা করেছিল। তাকে শেষ করে না ফেলার পেছনে আমার কোনোই বাধা ছিল না। তার পা দুটো কেটে ফেলার পরই আমি তাকে শেষ করতে পারতাম।" আলী বলে, "সে সত্য বলেছে। তার পা দুটো কাটার পর আমি তার কল্লা কেটে ফেলেছিলাম।"
আল্লাহর নবী মারহাবের তরবারি, ঢাল, টুপি ও শিরস্ত্রাণ মুহাম্মদ বিন মাসলামা-কে প্রদান করেন। সেই তরবারিটি ছিল মুহাম্মদ বিন মাসলামার পরিবারের কাছে ও তার সাথে ছিল এক ডকুমেন্ট - তেইমার এক ইহুদি ওটা পড়ার আগে কেউই জানতো না যে, তাতে কী লেখা ছিলো। তাতে লিখা ছিলো, "এটি মারহাবের তরবারি। যে তার স্বাদ আস্বাদন করে, সে মৃত্যুবরণ করে।"
জাবির হইতে বর্ণিত > মুহাম্মদ বিন আল-ফাদল-এর পিতা হইতে > মুহাম্মদ বিন আল-ফাদল আমাকে জানিয়েছে, সালামা বিন সালামা হইতে বর্ণিত > আবদুল্লাহ বিন আবি সুফিয়ান-এর পিতা হইতে > আবদুল্লাহ বিন আবি সুফিয়ান হইতে > যাকারিয়া বিন যায়েদ আমাকে জানিয়েছে, এবং মুজামমি বিন হারিথা হইতে বর্ণিত > মুজামমি বিন ইয়াকুব-এর পিতা হইতে > মুজামমি বিন ইয়াকুব আমাকে জানিয়েছে। তারা সবাই আমাকে যা বলেছে, তা হলো, মারহাব-কে হত্যা করেছিলো মুহাম্মদ বিন মাসলামা।
তারা বলেছে: উসায়ের আবির্ভূত হয়। সে ছিল এক শক্তিশালী মানুষ, যদিও সে ছিল খাটো; অতঃপর সে চিৎকার শুরু করে, "এমনকি কেউ আছে, যে দ্বন্দ্বযুদ্ধ করবে?"  মুহাম্মদ বিন মাসলামা তার কাছে আসে ও তারা একে অপরকে ঘাত-প্রতিঘাত করে, অতঃপর মুহাম্মদ বিন মাসলামা তাকে হত্যা করে।
তারপর ইয়াসির বের হয়ে আসে। সে ছিল অত্যন্ত বলিষ্ঠ ব্যক্তিদের একজন। মুসলমানদের ঠেকিয়ে রাখার জন্য তার কাছে ছিল এক বল্লম। আলী অগ্রসর হয়ে তার কাছে আসে, আল যুবায়ের তাকে বলে, "তোমার কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ এই যে, তাকে তুমি আমার হাতে ছেড়ে দাও।" আলী তা-ই করে। ইয়াসির তার বল্লম নিয়ে অগ্রসর হয় ও তার দ্বারা লোকদের তাড়িয়ে দেয়। আল-যুবায়ের তার সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধ করে।
সাফিয়া বলে, "হে আল্লাহর নবী, আমি বিষণ্ণ। হে আল্লাহর নবী, আমার সন্তানকে হত্যা করা হবে।" তিনি বলেন, "বরং তোমার ছেলেই তাকে হত্যা করবে।" তারা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে ও আল-যুবায়ের তাকে হত্যা করে। আল্লাহর নবী তাকে বলেছিলেন, "তোমার আঙ্কল ও আন্টি যেন হয় তোমার মুক্তিপণের মাধ্যম।" অতঃপর তিনি যোগ করেন, "প্রত্যেক নবীরই শিষ্য থাকে, আল-যুবায়ের হলো আমার শিষ্য ও সে আমার ফুপুর ছেলে [পর্ব: ১২]।"
মারহাব ও ইয়াসির খুন হবার পর আল্লাহর নবী বলেন, "আনন্দ করো! খায়বার আমাদের স্বাগত জানিয়েছে ও অসুবিধা লাঘব করেছে।"
অতঃপর আমির বের হয়ে আসে, সে ছিল এক লম্বা মানুষ। যখন আমির আবির্ভূত হয়, আল্লাহর নবী বলেন, "তোমরা কি মনে করো যে, সে পাঁচ হাত লম্বা?" সে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বান করে, তার তলোয়ার উঁচিয়ে আস্ফালন করে। সে যে বর্ম আবরণটি পরিধান করেছিল, তা ছিল লৌহ আবৃত। সে চিৎকার করে বলে, "কে আমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে?" লোকজন তার কাছ থেকে পিছু হটে। আলী তার কাছে এগিয়ে যায় ও তাকে আঘাত করে। কিন্তু তার কোন কিছুই কাজে আসে না যতক্ষণে না সে তার দুই পায়ে আঘাত হানে। অতঃপর সে পড়ে যায়, আলী তাকে সাবাড় করে ও তার অস্ত্র নিয়ে নেয়।
আল-হারিথ, মারহাব, উসায়ের, ইয়াসির ও আমির ছাড়াও ইহুদিদের আরও বহু লোককে হত্যা করা হয়েছিল - কিন্তু যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তা করা হয়েছে এই কারণে যে, তারা ছিলো তাদের মধ্যে সাহসী। এই লোকদের সবাই ছিলো নাইম দুর্গের ভিতরে।'
- অনুবাদ, টাইটেল, ও [**] যোগ - লেখক।
আল-তাবারীর (৮৩৯-৯২৩ সাল) অতিরিক্ত বর্ণনা: [5] 
ইবনে বাশার < মুহাম্মদ বিন জাফর < আউফ (বিন আবি জামিলাহ আল-আরাবী [৬৭৮-৭৬৩ সাল]) < মেইমুন (আবু আবদুল্লাহ) < আবদুল্লাহ বিন বুরায়েদা (৬৩৭-৭৩৩ সাল) < বুরায়েদা বিন আল-আসলামী (মৃত্যু: ৬৭৯-৬৮৪ সাল) হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে; এবং আবু কুরায়েব < ইউনুস বিন বুকায়ের (মৃত্যু: ৮১৫ সাল) < আল-মুসায়েব বিন মুসলিম আল-আউদি < আবদুল্লাহ বিন বুরায়েদা < তার পিতা (বুরায়েদা বিন আল-হুসায়েব) হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে:
আল-তাবারী আমাদের জানিয়েছেন যে, মারহাব-কে হত্যা করেছিল আলী ইবনে আবু-তালিব। 
ইমাম মুসলিমের (৮২১-৮৭৫ সাল) বর্ণনা: [6]
ইমাম মুসলিমের বর্ণনা (সহি মুসলিম: নম্বর-০১৯:৪৪৫০) মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, আল-তাবারী ও আল ওয়াকিদির বর্ণনারই অনুরূপ, কিন্তু ঘটনার পূর্ণ বিবরণ সেখানে অনুপস্থিত (পর্ব-১২১)। ইমাম মুসলিমের এই দীর্ঘ হাদিসের বর্ণনা মতে মারহাব-কে খুন করেছিল আলী ইবনে আবু-তালিব।
তাঁর বর্ণনা মতে, মারহাবের সাথে প্রথমে যুদ্ধ করেছিলেন আমির নামের মুহাম্মদের এক অনুসারী, যিনি ছিলেন এই হাদিস বর্ণনাকারী ইবনে সালামাহ [<তার পিতা সালামাহ বিন আল-আকওয়া হইতে(পর্ব: ১১০)] এর আঙ্কল। লড়াইয়ের সময় আমির তার নিজের তরবারির আঘাতেই গুরুতর আহত হন ও মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় মুহাম্মদের কিছু অনুসারী যখন বলাবলি শুরু করে যে, আমির জিহাদে অংশগ্রহণ করলেও যেহেতু সে নিজেই নিজের জীবন নাশ করেছে, তাই সে তার যাবতীয় কর্মের সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। জবাবে মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের নিশ্চিত করেন যে আমিরের জন্য অপেক্ষা করছে "দ্বিগুণ পুরষ্কার!"
এই দীর্ঘ হাদিসে আর যে-তথ্যটি আমরা জানতে পারি, তা হলো, হুদাইবিয়া সন্ধি (পর্ব: ১১১-১২৯) শেষে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করার "মাত্র তিন দিন পর" মুহাম্মদ তাঁর হুদাইবিয়া যাত্রায় অংশগ্রহণকারী অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে খায়বারের জনপদের ওপর আগ্রাসী হামলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন।
>>> ইসলামের ইতিহাস পড়ার সময় যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সর্বদাই মনে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন, তা হলো, "ইসলামের যাবতীয় ইতিহাস একপেশে ও পক্ষপাতদুষ্ট (পর্ব:৪৪)!" এই ইতিহাসগুলো পড়ার সময় অতিরিক্ত সজাগ ও অনুসন্ধিৎসু না হলে এবং বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য-উপাত্ত যাচাই না করলে যে কোনো ব্যক্তিই বিভ্রান্ত হতে বাধ্য! 
ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ) সম্পাদিত ও A. GUILLAUME অনুদিত মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের 'সিরাত' গ্রন্থে খায়বার যুদ্ধের যে-উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে, তা পাঠ করে খায়বার যুদ্ধে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের বীভৎস ও নৃশংস কর্মকাণ্ডের প্রকৃত স্বরূপ জানা সম্ভব নয়। আর হাদিস গ্রন্থ? তার অবস্থা আরও খারাপ [বিস্তারিত: উমর ইবনে খাত্তাবেরঅভিপ্রায় (পর্ব: ১২১)!]। ইবনে হিশাম সম্পাদিত “সিরাত রসুল আল্লাহ” ও সমস্ত হাদিস গ্রন্থে (বিচ্ছিন্নভাবে) খায়বার যুদ্ধের যে-উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে, তা পাঠ করে সাধারণ পাঠকরা বিভ্রান্ত হতে পারেন এই ভেবে যে, খায়বারের মাত্র দু'জন লোককে হত্যা করে আলী ও তার সঙ্গীরা খায়বার যুদ্ধ জয় করে ফেলেছিলেন! বাস্তবিকই এই গ্রন্থগুলোতে খায়বার যুদ্ধ উপাখ্যানের এই পর্যায়ের বর্ণনায় মাত্র দু'জন (মারহাব ও ইয়াসির) ইহুদিকে হত্যার বর্ণনা ছাড়া আর কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
ইবনে হিশাম সম্পাদিত এই 'সিরাত' গ্রন্থের ৫১৮ পৃষ্ঠায় খায়বার যুদ্ধে যে মোট ১৮-২০ জন মুহাম্মদ-অনুসারী নিহত হয়েছিলেন, তাদের নাম ও গোত্রের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। [7]কিন্তু, মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা কতজন ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন, তার কোনো উল্লেখ ইবনে হিশাম সম্পাদিত এই সিরাত, আল-তাবারীর সিরাত ও হাদিস গ্রন্থে নেই! সে কারণেই, "শুধু" মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের সিরাত, আল-তাবারীর সিরাত ও হাদিস গ্রন্থ পাঠ করে "খায়বার যুদ্ধের বীভৎসতা" সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়।
বিষয়টি আর একটু খোলসা করা যাক:
“সশস্ত্র নৃশংস ১৪০০ জনের এক সন্ত্রাসী দল এক বিশেষ অভীষ্ট লক্ষ্যে একটি জনপদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ঐ জনপদের সমস্ত লোকদের যে কোনো মূল্যে (জখম-হত্যা-বন্দী ও দাস-দাসীকরণ) পরাস্ত করে তাদের সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি লুণ্ঠন করার অভিপ্রায়ে ঐ জনপদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা এখন এই জনপদবাসীর দোরগোরায় উপস্থিত হয়ে তাঁদের বাড়ী-ঘর (দুর্গ) ঘেরাও করে রেখেছে। অতঃপর ঐ আক্রান্ত জনপদবাসী তাঁদের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষার প্রচেষ্টায় প্রাণপণ লড়াই করে চলেছেন। তাঁদের এই প্রতিরক্ষা এতটাই তীব্র ছিলো যে, এই আক্রমণকারীরা পর পর দুই-তিন দিন কোনো সুবিধেই করতে পারেনি (পর্ব: ১৩২)। অতঃপর তাদের সর্বাধিনায়ক তার এক ক্ষমতাবান অনুসারীকে নেতৃত্ব দিয়ে এই জনপদবাসীদের পরাস্ত করার জন্য পাঠিয়েছেন। অতঃপর সেই ক্ষমতাবান অনুসারী ও তার সঙ্গীরা বিপুল বীরত্বে মাত্র দু'জন ব্যক্তিকে হত্যা করে সেই জনপদ দখল করে ফেলেছিলেন - এমন বর্ণনা উদ্ভট, অযৌক্তিক ও নিঃসন্দেহে সত্যের অপলাপ।”
অন্যদিকে,
আল-ওয়াকিদির বর্ণনা অনেক বেশি স্বচ্ছ, প্রাণবন্ত ও বিস্তারিত। আল-ওয়াকিদির বিস্তারিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি, আলী ও তার সহযোগীরা খায়বারের জনপদবাসীর আল-হারিথ, মারহাব, উসায়ের, ইয়াসির ও আমির ছাড়াও ইহুদিদের আরও বহু লোককে হত্যা করেছিলেন।
প্রশ্ন ছিল:
"মুহাম্মদ ও আলীর নেতৃত্বে খায়বারের নিরপরাধ ইহুদি জনগণের মোট কতজন লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর মুহাম্মদের প্রতিশ্রুত "এই আসন্ন বিজয়" সম্পন্ন হয়েছিলো? আলী ইবনে আবু-তালিব ও তাঁর সঙ্গীদের এই বিজয় ও বীরত্বের 'রক্তমূল্য' কত ছিলো?"
এই প্রশ্নটির সুনির্দিষ্ট জবাব আমরা জানতে পারি আল-ওয়াকিদির বিস্তারিত বর্ণনায়। তাঁর বর্ণনা মতে, খায়বার যুদ্ধে মোট ৯৩ জন ইহুদিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এদের অধিকাংশকেই হত্যা করা হয়েছিল এই 'নাটায়'। তাঁর বর্ণনামতে মুসলমানদের মোট নিহতের পরিমাণ ১৫ জন, অধিকাংশই এই নাটায়। [8]
অর্থাৎ প্রশ্নটির জবাব হলো:
"আলী ইবনে আবু-তালিব ও তাঁর সঙ্গীদের এই বিজয় ও বীরত্বের 'রক্তমূল্য' ছিলো খায়বারের অসংখ্য লোককে বন্দী করে দাস ও দাসীকরণ ও তাঁদের সমস্ত সম্পত্তি লুণ্ঠন করা ছাড়াও প্রায় তিরানব্বুই জন ইহুদিকে নৃশংসভাবে হত্যার হোলি খেলা!"
ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে আল-ওয়াকিদির মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। ইবনে ইশাকের মূল ইংরেজি অনুবাদ ইন্টারনেটে বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক: তথ্যসূত্র [1]
The detailed narrative of Al-Waqidi: [3]
‘It was the fortress of Marhab. It was said: Marhab appeared like a competing stallion reciting rajaz verse:
Khaybar knows that I am Marhab of the piercing weapons,
A proven brave, I will strike sometimes, and sometimes will be struck.
He called for a duel. Muhammad b Maslama said, “O Messenger of God, I am a wronged and angry person. My brother was killed yesterday, so permit me to fight Marhab for he is a killer of my brother.” The Messenger of God permitted him to duel. He prayed for him and gave him his sword. Muhammad went out shouting, “O Marhab, did you call for a duel?” He said, “Yes.” Marhab came out to him reciting rajaz. ---Marhab was wearing armor that was rolled up. Muhammad struck the thighs of Marhab and cut them. It was said: Muhammad b Maslama protected himself with the shield – the armor from Marhab’s legs was pulled up when he raised his hand with the sword, and Muhammad bent with the sword and cut his two legs, and Marhab fell. Marhab said, “Finish me off, O Muhammad!” Muhammad replied, “Taste death, just as my brother Mahmud tasted it!” and he walked past him. Then Ali passed by and struck off his head, and took his booty.
They quarreled before the Messenger of God about his booty. Muhammad b Maslama said, “O Messenger of God, surely I cut of his legs and left him only that he may taste the bitterness of the sword and the violence of death just as my brother did, for he stayed three days dying. Nothing prevented me from finishing him off. I could have finished him off after I cut his legs.” Ali said, “He is truthfull. I cut off his head after his legs had been cut off.” The Messenger of God gave Muhammad b Maslama Marhab’s sword, shield, cap and helmet. The family of Muhammad b Maslama has his sword, and with it a document – no one knew what it was until one of the Jews of Tayma read it. It said: This is the sword of Marhab. Whoever tastes it will die.
Muhammad b al-Fadl related to me from his father from Jabir, and Zakarriyya b Zayd related to me from Abdullah b Abi Sufyan, from his father, from Salama b Salama; and Mujammi b Yaqub from his father from Mujammi b Haritha. They all said that Muhammad b Maslama killed Marhab.   
They said: Usayr appeared. He was a strong man though he was short, and he began to shout, “Is there anyone for a duel?” Muhammad b Maslama went out to him and they exchanged strokes and Muhammad b Maslama killed him.
Then Yasir came out. He was among the vigorous. He had a spear to keep back the Muslims. Ali went out to him and al-Zubayr said, “I entreat you leave him to me.” So Ali did. Yasir approached with his spear and drove the people with it. Al-Zubayr dueled him. Safiyya said, “O Messenger of God, it makes me sad. My son will be killed, O Messenger of God.” He said, “Rather your son will kill him.” He said: They fought each other and al-Zubayr killed him. The Messenger of God said to him, “May your Ransom be your uncle and aunt.” Then he added, “To every prophet is a disciple, and al-Zubyr is my disciple and the son of my aunt.”
When Marhab and Yasir were killed the Messnger of God said, “Rejoice! Khaybar welcomes and facilitates.”
Then Amir came out: He was a tall man. When Amir appeared, the Messenger of God said, “Do you think he is five arm lengths?” He called for a duel, brandishing his sword. He wore armor covered in Iron. He shouted, “Who will contest me?” The people recoiled from him. Ali went out to him and struck him. But all that did nothing until he struck his legs. Then he fell down, and Ali finished him off and took his weapons.
Al-Harith, Marhab, Usayr, Yasir and Amir were killed with many people from the Jews – but those who were named were mentioned because they were the brave ones. Those were all in the fortress of Naim.’
(চলবে)
[কুরানের উদ্ধৃতি সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হারাম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা  থেকে নেয়া, অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট ইংরেজি অনুবাদকারীর ও চৌত্রিশ-টি বিভিন্ন ভাষায় পাশাপাশি অনুবাদ এখানে]

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৫১২-৫১৪ http://www.justislam.co.uk/images/Ibn%20Ishaq%20-%20Sirat%20Rasul%20Allah.pdf
[2] অনুরূপ বর্ণনা: “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৭৭-১৫৭৮
[3] “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৫৫-৬৫৮; ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩২২-৩২৪
[4] ‘হিশাম বিন উরওয়া আল-যুবায়ের ছিলেন উরওয়া বিন আল-যুবায়ের পুত্র। তিনি আনুমানিক ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে (হিজরি ৬১ সাল) মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন, মৃত্যুবরণ করেন ৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দে (হিজরি ১৪৬ সাল) বাগদাদে। তিনি ছিলেন এক মুহাদ্দিস ও আইনজ্ঞ (transmitter of traditions and a jurist)’।
[5] Ibid: “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক” লেখক: আল-তাবারী - পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৭৯-১৫৮১
[6] ইমাম মুসলিম (৮২১-৮৭৫ সাল) - সহি মুসলিম: হাদিস নম্বর-০১৯:৪৪৫০
অনেক বড় হাদিস- এই পর্বের প্রাসন্গিক অংশ:
It has been narrated on the authority of Ibn Salama. He heard the tradition from his father who said: We arrived at Hudaibiya with the Messenger of Allah (may peace be upon him) and we were fourteen hundred in number. -------------Thus, I reached Medina ahead of him.  By God, we had stayed there only three nights when we set out to Khaibar with the Messenger of Allah (may peace be upon him). -------
Salama continued: When we reached Khaibar, its king named Marhab advanced brandishing his sword and chanting:  Khaibar knows that I am Marhab (who behaves like). A fully armed, and well-tried warrior. When the war comes spreading its flames.
My uncle, Amir, came out to combat with him, saying: Khaibar certainly knows that I am 'Amir, a fully armed veteran who plunges into battles. They exchanged blows. Marhab's sword struck the shield of 'Amir who bent forward to attack his opponent from below, but his sword recoiled upon him and cut the main artery: in his forearm which caused his death. Salama said: I came out and heard some people among the Companions of the Holy Prophet (may peace be upon him) as saying: Amir's deed has gone waste; he has killed himself. So I came to the Holy Prophet (may peace be upon him) weeping and I said: Messenger of Allah. Amir's deed has gone waste. The Messenger (may peace be upon him) said: Who passed this remark? I said: Some of your Companions. He said: He who has passed that remark has told a lie, for 'Amir there is a double reward.
Then he sent me to 'Ali who had tore eyes, and said: I will give the banner to a man who loves Allah and His Messenger or whom Allah and His Messenger love. So I went to 'Ali, brought him beading him along and he had sore eyes, and I took him to the Messenger of Allah (may peace be upon him), who applied his saliva to his eyes and he got well. The Messenger of Allah (may peace be upon him) gave him the banner (and 'Ali went to meet Marhab in a single combat). The latter advanced chanting: Khaibar knows certainly that I am Marhab, a fully armed and well-tried valorous warrior (hero). When war comes spreading its flames. 'Ali chanted in reply: I am the one whose mother named him Haidar, (And am) like a lion of the forest with a terror-striking countenance. I give my opponents the measure of sandara in exchange for sa' (i.e. return the attack with one that is much more fierce). The narrator said: 'Ali struck at the head of Marhab and killed him, so the victory (capture of Khaibar) was due to him. This long tradition has also been handed down Through a different chain of transmitters.’
[7] Ibid: “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, পৃষ্ঠা ৫১৮
[8] Ibid “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৯৯-৭০০; ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩৪৪-৩৪৫
 

খায়বার যুদ্ধ - ৬: 'জিহাদ' এর ফজিলত!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব- ১৩৫): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত নয়

লিখেছেন গোলাপ

(আগের পর্বগুলোর সূচী এখানে)
"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।" 
ইসলাম-বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা খায়বার যুদ্ধ উপাখ্যানের আলোচনার প্রাক্কালে গর্বভরে আলী ইবনে আবু তালিবের যে-বীরত্বগাথার উপাখ্যান প্রচার করেন, তার "রক্ত মূল্য" কত ছিলো; স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও আলী ইবনে আবু তালিব-এর নেতৃত্বে মুহাম্মদ অনুসারীরা খায়বারের অসংখ্য লোককে বন্দী করে দাস ও যৌনদাসীকরণ ও সমস্ত সম্পত্তি লুণ্ঠন করা ছাড়াও তাঁদের মোট কতজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে অমানুষিক নৃশংসতায় হত্যা করেছিলেন; কী কারণে শুধু ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দ) সম্পাদিত “সিরাত রসুল আল্লাহ”, আল-তাবারীর সিরাত ও সমস্ত মুখ্য হাদিস গ্রন্থ পড়ে খায়বার যুদ্ধে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের বীভৎস নৃশংস কর্মকাণ্ডের প্রকৃত স্বরূপ জানা সম্ভব নয় - ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
আল-তাবারীর (৮৩৯-৯২৩ সাল) বর্ণনা: [1] [2] [3]  
পূর্ব প্রকাশিতের (পর্ব: ১৩৪) পর:
ইবনে হুমায়েদ < সালামাহ < মুহাম্মদ ইবনে ইশাক < বানু আসলাম গোত্রের আবদুল্লাহ বিন আবি বকর হইতে বর্ণিত:
বানু আসলাম গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বানু সাহম গোত্রের লোকেরা আল্লাহর নবীর কাছে আসে ও বলে, "হে আল্লাহর নবী, আল্লাহর কসম আমরা খরা-তাড়িত জনগণ ও নিঃসম্বল (ইবনে হিশাম: ‘--আল্লাহর নবীর কাছে আসে ও অভিযোগ করে যে, তারা যুদ্ধ করেছে, কিন্তু কোনো কিছুই অর্জন করতে পারেনি')।" কিন্তু তারা দেখে যে, আল্লাহর নবীর কাছে এমন কিছু নেই, যা তিনি তাদের দিতে পারেন।
তাই আল্লাহর নবী বলেন, "হে আল্লাহ, তাদের অবস্থা তুমি জানো - তাদের কোনো শক্তি নেই ও আমার কাছে এমন কিছু নেই, যা আমি তাদেরকে দিতে পারি। খায়বারে সর্বশ্রেষ্ঠ দুর্গটি তুমি তাদের [বিজয়ের] জন্য উন্মুক্ত করো, এমন একটি যেখানে আছে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য ও চর্বিযুক্ত মাংস।" পরদিন সকালে আল্লাহ তাদের [বিজয়ের] জন্য যা উন্মুক্ত করে, তা হলো - আল-সাব বিন মুয়াধ দুর্গ। খায়বারে এমন কোনো দুর্গ ছিল না, যেখানে এর চেয়ে অধিক পরিমাণ খাদ্য ও চর্বিযুক্ত মাংস মজুত ছিলো।’  
আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) বিস্তারিত বর্ণনা: [3]
'আল-সাব বিন মুয়াধ দুর্গটি ছিল আল-নাটায়। ইহুদিদের এই দুর্গে ছিলো খাদ্য, মাংস, গবাদিপশু ও সাজসরঞ্জাম। এর ভেতরে ছিল পাঁচ শত সৈন্য। লোকেরা (মুসলমান) দিনের পর দিন যুদ্ধাবস্থায় অবস্থান করে, কিন্তু একমাত্র যে-খাবারটি তারা খেতে পায়, তা হলো 'আল-আলাফ'[4]
মুয়াত্তিব আল-আসলামি হইতে বর্ণিত:
আমরা আল-আসলাম গোত্রের জনগণ, যখন আমরা খায়বারে পৌঁছাই, তখন ছিলাম নিঃস্ব। আমরা দশ দিন যাবৎ নাটার দুর্গগুলোর কাছে থেকেছি, কিন্তু আমরা তেমন কোনো খাবার খেতে পাইনি। আসলাম গোত্রের লোকেরা আসমা বিন হারিথা-কে ডেকে আনে ও বলে, "আল্লাহর নবী মুহাম্মদের কাছে যাও ও তাঁকে বলো যে, আসলাম-এর লোকেরা তাঁকে সালাম জানিয়েছে, আর তাঁকে জানাও যে, আমরা ক্ষুধার জ্বালায় সম্পূর্ণরূপে ক্লান্ত ও দুর্বল।"
বুরায়েদা বিন আল-হুসায়েব বলে, "আল্লাহর কসম, আমি আজকের মত এমন অবস্থা কখনোই প্রত্যক্ষ করিনি, আরবরা এটি যা করছে!" হিন্দ বিনতে হারিথা বলে, "আল্লাহর কসম, আমারা আশা করছিলাম যে, আল্লাহর নবীর এই মিশন হবে আমাদের উন্নতির চাবিকাঠি।" অতঃপর আসমা বিন হারিথা তাঁর কাছে আসে ও বলে, "হে আল্লাহর নবী, আসলাম গোত্রের লোকেরা বলছে: 'নিশ্চিতই আমরা ক্ষুধার জ্বালায় সম্পূর্ণরূপে ক্লান্ত ও দুর্বল, সুতরাং আপনি আমাদের জন্য আল্লাহকে বলুন।"
 
 
আল্লাহর নবী তাদের জন্য দোয়া করেন ও বলেন, "আল্লাহর কসম, আমার হাতে এমন কিছু নেই, যা আমি তাদেরকে দিতে পারি।" তারপর তিনি লোকদের সম্পর্কে চিৎকার করে বলেন, "হে আল্লাহ, খায়বারে সর্বশ্রেষ্ঠ দুর্গটি তাদের জন্য উন্মুক্ত করো, যেখানে আছে অনেক খাদ্য ও মাংস।" অতঃপর তিনি যুদ্ধের ঝাণ্ডাটি আল-হুবাব বিন আল-মুনধির বিন আল-জামুহ-কে দেন ও তিনি লোকদের উজ্জীবিত করেন; অতঃপর আল্লাহ আমাদের জন্য আল-সাব বিন মুয়াধ দুর্গ বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত আমরা প্রত্যাবর্তন করিনি।
উম্মে মুতা আল-আসলামিয়া বলেছে যে, সে অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে আল্লাহর নবীর খায়বার অভিযান প্রত্যক্ষ করেছিলো, সে বলেছে: প্রকৃতপক্ষেই আমি আসলাম গোত্রের লোকদের দেখেছি, যখন তারা আল্লাহর নবীর কাছে তাদের দুরবস্থার বিষয়ে অভিযোগ করছিলো। আল্লাহর নবী লোকদের উজ্জীবিত করেন ও লোকেরা উজ্জীবিত হয়। আমি দেখেছি যে, আসলাম গোত্রের লোকেরাই প্রথম আল-সাব বিন মুয়াধ দুর্গের নিকট পৌঁছে, যার মধ্যে ছিল পাঁচশত সৈন্য। যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ তা দখল করে নেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সেদিন সূর্য অস্তমিত যায়নি।
- অনুবাদ, টাইটেল, ও [**] যোগ - লেখক।
>>> বানু আসলাম গোত্রটি ছিলো বানু খোজা গোত্রেরই এক অংশ, যারা মুহাম্মদের সাথে জোটবদ্ধ ছিলেন (বিস্তারিত: 'হুদাইবিয়া সন্ধি: চুক্তি ভঙ্গ -পাঁচ [পর্ব- ১২৯]!’); তাদের এলাকা ছিল মদিনা ও মক্কার পশ্চিম অঞ্চলে [5]।  মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, আল-তাবারী ও আল-ওয়াকিদির ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, খায়বার যুদ্ধের প্রাক্কালে বানু আসলাম গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বানু সাহম গোত্রের লোকেরা আল্লাহর নবীর কাছে এসে তাদের দুরবস্থার কথা জানায় ও তাঁকে অভিযোগ করে এই বলে যে, তারা যুদ্ধ করেছে কিন্তু তারা কোনো কিছুই আয়ত্ত করতে পারেনি। তারা দশদিন যাবত প্রায় অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন অতিবাহিত করছে ও সম্পূর্ণরূপে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে।
তাদের এই দুরবস্থার কথা শুনে মুহাম্মদ আল্লাহর কাছে দোয়া করেন এই বলে যে, আল্লাহ যেন তাদেরকে খায়বারের সবচেয়ে খাদ্য ও সম্পদশালী দুর্গটি দখলের ব্যবস্থা করে তার ভেতরের সমস্ত খাদ্য ও সম্পদ লুণ্ঠন কারার তৌফিক দান করেন!
আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই বর্ণনায় যা আমরা নিশ্চিতরূপে জানি, তা হলো - খায়বারের জনপদবাসী মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের ওপর আক্রমণ করতে আসেননি। তাঁরা নিরপরাধ। আক্রমণকারী মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা (বিস্তারিত: পর্ব-১৩০)। মুহাম্মদ তাঁর হুদাইবিয়া যাত্রায় অংশগ্রহণকারী অনুসারীদের অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ও তাঁর নবী-গৌরব ও নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে হুদাইবিয়া সন্ধি শেষে মদিনায় প্রত্যাবর্তনের প্রাক্কালে 'সুরা আল-ফাতাহ' রচনা করে তাঁর ঐ অনুসারীদের যে "লুটের মাল-এর ওয়াদা করেছিলেন (বিস্তারিত: পর্ব- ১২৪)”, তারই পূর্ণতা প্রদানের প্রয়োজনে খায়বারের এই নিরপরাধ সম্পদশালী ইহুদি জনগণের ওপর মুহাম্মদের এই আগ্রাসী আক্রমণ! 
উন্মুক্ত শক্তি প্রয়োগে অবিশ্বাসী জনপদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাঁদের খুন, জখম, দাস ও যৌন দাসী-করণ, সম্পদ লুণ্ঠন, নিরীহ বাণিজ্য ফেরত বনিকদের কাফেলায় রাহাজানি, খুন, তাঁদের ধরে নিয়ে এসে মুক্তিপণ দাবি - ইত্যাদি সমস্তই ইসলামী বিধানে 'জিহাদ' নামের সর্বশ্রেষ্ঠ সৎকর্মের অংশ।
মৃত মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা 'জিহাদ' নামের এই অত্যন্ত অমানবিক ও বীভৎস কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করার কারণে পুরস্কৃত হয়ে এখন তাঁর বর্ণিত জান্নাত নামের অনন্ত সুখের লীলাভূমিতে অতি মনোরম নহরের পাশের আঙ্গুরের বাগানে বসে মদ্যপান ও আঙুর খেতে খেতে অনন্য সুন্দরী অগণিত হুরিদের সাথে যৌনকর্ম সম্পন্ন করছেন, নাকি অসংখ্য নিরপরাধ মানুষদের ওপর বীভৎস অত্যাচার, নিপীড়নের ও হত্যা করার কারণে তাঁর বর্ণিত জাহান্নাম নামের অনন্ত আযাবের কারাগারে দাহ্য আলকাতরার জামা পরিধান ও মুখমণ্ডল আগুনে আচ্ছন্ন অবস্থায় (কুরান:১৪:৫০) ঢোঁক গিলে পুঁজ-মেশানো পানি পানসহ (কুরান:১৪:১৬-১৭ ১৮:২৯) যাবতীয় বীভৎস শাস্তি (পর্ব: ২৬) ভোগ করছেন, তা জানা কখনোই সম্ভব নয়।
কিন্তু, যা আমরা নিশ্চিতরূপে জানি, তা হলো:
১. যে-মুহাম্মদ সহায় সম্বলহীন অবস্থায় (পর্ব: ৪২) রাতের অন্ধকারে চুপিচুপি মদিনায় পালিয়ে এসেছিলেন, তাঁর আবিষ্কৃত এই 'জিহাদ-এর কল্যাণে’ মাত্র দশ বছরে (৬২২-৬৩২ সাল) তিনি নিজেকে তৎকালীন আরবের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন!
২. যে-মুহাম্মদ সহায় সম্বলহীন অবস্থায় প্রায় এক বস্ত্রে মদিনায় পালিয়ে এসেছিলেন, সামান্য বাসস্থান ও ভরণপোষণের জন্য যাকে প্রতিনিয়ত নির্ভর করতে হয়েছিলো মদিনাবাসী স্বল্প আয়ের অনুসারীদের ওপর, সেই নিঃসম্বল মুহাম্মদ তাঁর আবিষ্কৃত এই 'জিহাদ'-এর কল্যাণে মাত্র দশ বছরে আরবের সবচেয়ে সচ্ছল ও সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদের একজন হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন! এক নিঃসম্বল মানুষের অবস্থান থেকে মুহাম্মদ এই দশ বছরে এতটাই সচ্ছল ও সমৃদ্ধশালী হয়েছিলেন যে, তিনি এই সময়ের মধ্যে একুশ জন মহিলাকে বিবাহ করে তাঁদেরকে পত্নীর মর্যাদা দিয়ে তাঁদের প্রত্যেককে সচ্ছল অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানসহ যাবতীয় ভরণপোষণের জোগান দিতে পারতেন; মৃত্যুকালে যিনি নয় জন পত্নী জীবিত রেখে গিয়েছিলেন (পর্ব:১০৮)
জগতের প্রায় সকল মুহাম্মদ-অনুসারী ও বহু অমুসলিম দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, মুহাম্মদ ছিলেন এক অসচ্ছল দরিদ্র পার্থিব ক্ষমতা-লোভ-লালসাহীন ব্যক্তি, যার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই বর্ণনায় অত্যন্ত স্পষ্ট!
"Poor Muhammad is a myth!"
৩. আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনা ও 'ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ' এর গত এক শত আটটি পর্বের আলোচনায় বিভিন্ন সময়ে আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে, "জিহাদের এই ফজিলত" মুহাম্মদ শুধু একই ভোগ করেননি! তিনি তাঁর অনুসারীদের 'চাহিদার প্রতি' সর্বদাই লক্ষ্য রাখতেন। এক বিশেষ নিয়মে জিহাদে অংশগ্রহণকারী মুহাম্মদের সকল অনুসারী জিহাদের এই ফজিলত উপভোগ করতেন। কী সেই বিশেষ নিয়ম, তার আলোচনা 'সন্ত্রাসী নবযাত্রা (পর্ব: ২৮)' পর্বে করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাই, যেসব মুহাম্মদ-অনুসারী মুহাম্মদের আদেশে সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় মদিনায় হিজরত করেছিলেন, কোনোরূপ সৎ-উপার্জনক্ষম পেশায় নিযুক্ত না থেকেও মাত্র দশ বছরে তারা চূড়ান্ত ক্ষমতা ও সচ্ছলতায় উন্নীত হতে পেরেছিলেন এই 'জিহাদ'-এরই কল্যাণে।
মুহাম্মদের মৃত্যুর পর একদা নিঃসম্বল এই মুহাজির মুহাম্মদ অনুসারীরা 'জিহাদের ফজিলতে' শাসকের মর্যাদায় উন্নীত হতে পেরেছিলেন; অতঃপর তারা মুহাম্মদের এই বিশেষ ফর্মুলাটি ব্যবহার করে দিগ্বিদিকের অবিশ্বাসী জনগণদের অমানুষিক নৃশংসতায় পরাস্ত করে আরব সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা ও জীবিকার সুদূরপ্রসারী ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এগার শত বছরেরও বেশি সময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার পরেও মুহাম্মদের মতবাদে বিশ্বাসী মুসলমান সম্প্রদায়ের বর্তমান সামগ্রিক অবস্থান কোথায়, তার আলোচনা 'কুরানের ফজিলত(পর্ব-১৫)!' পর্বে করা হয়েছে।
>> খাদিজাকে বিবাহ করার পর থেকে মৃত্যুকাল অবধি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ জীবিকার প্রয়োজনে কখনো কোনো উপার্জনক্ষম পেশায় লিপ্ত ছিলেন, এমন ইতিহাস কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। খাদিজাকে বিয়ের পর তাঁর ভরণপোষণ চলতো খাদিজার সম্পদ ও অনুগ্রহে। চল্লিশ বছর বয়সের পর তাঁর পেশা ছিল, "ধর্মপ্রচার!" জগতের সকল পীর-ফকির-কামেল-গুরু-বাবাজীদের পেশার মতই! এই সকল পীর-ফকির-কামেল-গুরু-বাবাজীদের সাথে মুহাম্মদের পেশার বিশেষ পার্থক্য এই যে, তাঁদের তুলনায় মুহাম্মদ অনেক অনেক বেশি সফল (পর্ব: ১৪)! কুরান, সিরাত ও হাদিসের বর্ণনায় যা আমরা নিশ্চিতরূপে জানি, তা হলো, মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ তাঁর ভক্তদের 'বিশ্বাস-কে' পুরোপুরি ব্যবহার করে মাত্র দশ বছরে আরবের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদের একজন হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। মুহাম্মদ "তাঁর পেশায়" জগতের সবচেয়ে সফলকাম (Successful) ব্যক্তিদের একজন। শুধু 'ধর্মপ্রচার' পেশায় কোনো সচ্চরিত্র ও ন্যায়বান প্রচারকের জীবিকার ব্যবস্থা হয় না, যদি না সেই প্রচারক ‘তাঁর ভক্তদের ব্যবহার করে' তাঁর নিজের জীবিকার একটা ব্যবস্থা করতে পারেন।
মুহাম্মদ তা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন।
ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে আল-তাবারী ও আল-ওয়াকিদির মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। ইবনে ইশাকের মূল ইংরেজি অনুবাদ ইন্টারনেটে বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক: তথ্যসূত্র [2]
The narrative of Al-Tabari: [1]
‘According to Ibn Humayd < Salamah <Muhammad ibn Ishaq <Abdullah b Abi Bakr – a member of the Aslam: The Banu Sahm, who were a part of Aslam came to the Messenger of God and said, “Messenger of God, by God we have been struck by drought and possses nothing.” But they found that the Messenger of God had nothing to give them. So the Prophet said: “O God, Though Knowest their condition – that they have no strength and I have nothing to give them. Open to them [for conquest] the greatest of the fortresses of Khaybar, the one most abounding in food and fat meat.” The next morning God opened the fortress of Al-Sab b Muadh for them [to conquer]. There was no fortress in Khaybar more abounding in food and fat meat than it.’      
The detailed narrative of Al-Waqidi: [3]
‘The fortress of al-Sab b Muadh was in al-Nata. Within the fortress of the Jew were food, fat, cattle and utensils. There were five hundred soldiers in it. The people (Muslims) had stayed for days fighting, but the only food they ate was al-Alaf [4]. Muattib al-Aslami said: We were a people of the Aslam, destitute when we arrived in Khaybar. We stayed ten days at the fortress of Nata and we did not eat any food. The Aslam sent for Asma b Haritha and said, “Go to Muhammad, the Messenger of God, and say that the Aslam extend to you greetings, and inform him that we are exhausted from hunger and weakness.” Burayda b al-Husayb said, “By God, I have never saw such an affair as today, and Arabs doing this!” Hind binte Haritha said, “By God, we hoped that a mission to the Messenger of God would be a key for the better.”  So Asma bt Haritha came to him and said, “O Messnger of God the Aslam say: Surely we are exhausted from hunger and weakness, so ask God for us.” The Messnger of God prayed for them and said, “By God, there is nothing in my hands that I can hand them.” Then he shouted with the people and said, “O God, open for them the greatest fortress containing more food and more fat.” Then he handed the flag to al-Hubab b al-Mundhir b al-Jamuh, and he charged the people, and we did not return until God conquered the fortress of al-Sa’b b Muadh for us. Umm Muta al-Aslamiyya, who said that she had witnessed Khaybar with the Messenger of God and other women, said: Indeed I saw the Aslam when they complained to the Messenger of God of the misfortune of their situation. The Messenger of God charged the people and the people rose. I saw the Aslam were the first to reach the fortress of al-Sab b Muadh in which were five hundred soldiers. The sun did not set on that day until God conquered it.’