Saturday, August 6, 2016

আলৌকিকতাঃ বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের জবানবন্দধী---


১৯৮৪-৮৫ সালের কথা । প্রাথমিকের গণ্ডি পেরুইনি তখনও । আলৌকিকতার ব্যাপারে বদ্ধ পাগল বললেও ভুল হবেনা, পারিবারিক পরিবেশ ইসলামী আনুগত্য এবং ভাবধারার হওয়ায়-আমাদের ছেলেবেলায় পারিবারিকভাবে শোনা অধিকাংশ গল্প-কিচ্ছার সিংহভাগ জুড়ে নবী-রাসুলদের জীবনী এবং তাদের আলৌকিকতার ছড়াছড়ি । ইউনুছ নবীর মাছের পেটের কথা, নুহ নবীর মহাপ্লাবনের কথা, ঈশা নবীর মৃত্যুকে জীবিত করার কথা, মোহাম্মদের চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করার কথা প্রায়ই আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের মুখে মুখে ফিরে । আমি আলৌকিকতায় বিশ্বাস রাখি, নিজের মাঝে আলৌকিকতার শক্তি অর্জনে উম্মুখ হয়ে পড়ি । আমার কাছে সকল শক্তির সেরা শক্তি হিসেবে আলৌকিকতাই প্রাধান্য পায় ।

বাবার কাছে থেকে শোনা, সুরা জ্বীন ১০০ বার পড়ে শেষরাতে নামাজশেষে জিকিরে বসলে জ্বীনের দেখা মিলে । কতোশতবার পড়েছি মনে নেই আর কিন্তু জ্বীনের দেখা মিলেনি । বারবার নিজেকে শুধাতাম, হয়তো ঠিকভাবে পড়া হয়নি । শুনেছি কতজনে-ই তো জ্বীন-পরীর সাক্ষাৎ পেয়েছে, আমার হয়তো সেভাবে হয় নি, কিন্তু আমাকে জ্বীনের দেখা পেতেই হবে ।

সপ্তাহে গ্রাম্য হাট বসে দুই কিলোমিটার দূরে, সেই ছোট্ট ছোকরাটা গ্রাম্য হাটে চলে যেতাম শুধু হাটের "জাদুকরের মজমা" দেখার জন্য । মুহুর্মুহু করতালি, চারিদিকে গোল হয়ে দাড়ানো-বসা মানুষের ভীর ঠেলে পুঁচকে খোকাটা সামনে কোনরকম মাথা তুলে উঁকি দিয়ে দেখতাম, কী এক অজানা আতংক ভয়, এই যেন কী হয় ! কী হয় ! কখনও জাদুকরের হাতের ছোট্ট হাড়ের টুক্রোর(কথিত জাউর‍্যা/বেওয়ারিশ লাশের হাড়) স্পর্শে হাতের একটি ডিম দুটি হয়ে যাচ্ছে, তাস বাক্সে পোরার পরে টাকা হয়ে বেরুচ্ছে(তাহলে জাদু দেখিয়ে পয়সা কামানোর কী দরকার? ), ছেড়া কাগজ খেয়ে লম্বা লাল-নীল ফিতে বেরুচ্ছে মুখ থেকে, হাতের রুমালে মুখের ফুঁ দিয়ে আগুন ধরাচ্ছে । আমি যাদুকরকে বিশ্বাস করি-তার আলৌকিকতায় বিশ্বাস করি । সবশেষে আস্ত একটা মানুষকে টাঙ্গানো কালো কাপড়ের মধ্যে শুইয়ে দিয়ে ধারালো তলোয়ার মেরে দিলো কী যেন বিড়বিড় করে একটা মন্ত্রের মতো পড়ে, তার পীর-মুরশিদের নাম নিয়েই- এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে সেটা বেরিয়ে গেলো-সেই সাথে ফিনকী দেয়া রক্ত, ভিতরে ছেলেটার গগনবিদারী চিৎকার, সাথে আরো একটা ছুরি ঢুকিয়ে দেয়া হলো; অবশেষে আস্ত কল্লাটাকেই যখন ঘাড় থেকে আলাদা করে নেয়া হলো, তখন ঘোঁত ঘোঁত করতে করতে ছেলেটা একসময় নিস্তেজ হয়ে পড়লো তখন আমার মতো দুর্বল চিত্তের অনেকেই মজমা ছেড়ে একপা দুপা করে বেরিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু যাদুকরের মাটিতে হাত রেখে সকলের প্রতি অনুনয়-আপনারা নড়াচড়া করলে আমার ছেলেটাকে হয়তো আর বাচাতে পারবো না, দোহাই আপনাদের আল্লা-রসুল-পীর-পয়গম্বর-অলী-আওলিয়া-গাউস-কুতুব-জগত জননী মায়ের কসম একপা নড়বেন না কেউ । কিন্তু আমাকেতো আগে বাচতে হবে-আমি বেরুতে যাবো, এবার আর যাদুকরের অনুনয় নয় বরং রীতিমত হুমকি, কেউ আমার এই ছেলেটার দুধ খাওয়ার জন্য আর আমার ওস্তাদের(বাবা ...নখশবন্দধী...কুতুবে রাব্বানী..হেকমতপুরী.বুকে কাঁধে ফু দিয়ে ), বাবার বার্ষিক ঔরসের জন্য টাকা পয়সা না দিয়ে এক পা এগুলে কোন আসমানী ক্ষতি হয়ে গেলে আমার কিছু করার নেই । মা কালীর দোহাই-একপা নড়াচড়া করলেই... এরই মধ্যে দু'একজন ভিমরি খেয়ে পড়েও গেলো, তাদেরকে জাদুকর ১ লক্ষ ২৪ হাজার পয়গম্বরের নাম নিয়ে ফু দেয়া পানি খাইয়ে সুস্থ করা হলো-তারা তাদের পকেটে থাকা সব জাদুকরকে দিয়ে অনুনয়-কাতর হয়ে একপাশে বসে রইলো । নিরুপায় ভবঘুরে তার ছোট্ট পকেটে থাকা একমাত্র সম্বল ৩ টি টাকা দিয়ে তবেই না নিস্তার পেলো । জাদুকর আবার বেশি টাকা দেয়াদের মধ্য থেকে বেছে বেছে কয়েকজনকে বসিয়ে রাখলেন আলাদাভাবে হাদিয়ার বিনিময়ে তদবির দেয়ার জন্য । আমার তদবিরের প্রয়োজন নেী-আমি মজমা শেষে তবেই বাড়িমুখী হই । কিন্তু তারপরেও জাদুর মজমা আমায় টানে-হাটে মাঠে ঘাটে ঔরসে মাহফিলে পুজোয় যেখানেই উম্মুক্ত জাদু প্রদর্শনী সেখানেই পুঁচকে ভবঘুরে হাজির জনাব ।


সপ্তাহান্তে কোন এক হাটবার কোন জাদুর মজমা-ই বসেনি, একটা ছোট মাইক শুধু চিৎকার করে কৃমির ঔষুধ বিক্রি করছে সেই মজমাস্থলে কিন্তু আমার সেদিকে আকর্ষণ নেই । আমি এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে অবশেষে উম্মুক্তভাবে ছড়িয়ে রাখা বই বিক্রেতার সামনে দাড়ালাম । যে বইটাই পছন্দ হয় সেটাই হাতে নিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখছি । আধুনিক-সিনেমার গানের বই, লালনগীতির বই, সোলেমানি খোয়াবনামা, ছড়া-কবিতা আরো কতো কী ! বাড়িতে-তো আরবী ফার্সি উর্দু ছাড়া তেমন সংগ্রহ না-ই বললেই চলে । বাংলা বানান পড়তে পারার পরেই কিতাব নয় বিভিন্ন বই-ই আমায় টানে, ছবি-ছড়ার বই, ছোট গল্পের বই যা যেখানে পাই পড়ে ফেলি । সেই ছড়ানো ছিটানো বইয়ের মধ্য থেকেই পেয়ে গেলাম, "সহজ জাদু শিক্ষা" নামে একটি চটি বই ।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যতোটুকু পড়ছি ততোই কৌতুহলী হচ্ছি, ও যেন আমার কাঙ্ক্ষিত রঙ্গিন স্বপ্নের সাদাকালো মঞ্চায়ন ! কিন্তু বেয়াড়া দোকানী আমাকে সেই সুযোগ বেশিক্ষণ দিলেন না, "এই ছেলে, বই কিনবি ? নইলে ভাগ ।" বললাম-দাম কত ? বললো, দশ টাকা আছে ? বললাম না, পাঁচ টাকা আছে, দেয়া যাইবো ? না, দোকানির মন গললোনা, বিফল মনোরথে ক্ষুদে ভবঘুরে মনঃক্ষুণ্ণ হয়েই বাড়ি ফিরে আসলো-কবে দশ টাকা জমা হবে এই আশায় বুক বেঁধে । কিন্তু বইটা আমার আর কেনা-ই হয়নি, তার পরের দুই হাটে গিয়েই সুযোগ বুঝে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বইটা আমার পড়া শেষ ।

এখনও জাদুর মজমা আমায় টানে-হাটে মাঠে ঘাটে ঔরসে মাহফিলে পুজোয় যখন যেখানেই পাই, তবে উম্মুক্তের উম্মুখ দর্শক হিসেবে নয় । যেখানেই উম্মুক্ত জাদুপ্রদরশনী, আগেভাগে সেখানেই পৌছে যাচ্ছে পুঁচকে ভবঘুরে, উদ্দেশ্য প্রদরশনীর আগেই জাদুকরের সাথে দেখাসাক্ষাৎ-কথায় কথায় ঘনিষ্ট হয়ে আলাপ-কী কী জাদু আজ এখানে দেখানো হবে, তাজ্জব হয়ে উৎসাহে সে গুলো শুনে যাওয়া; আসলে আলাপ তো নয় রীতিমত ব্লাক্মেইল-আমি এই দশটি জাদুর মধ্যে ৭ টি-ই জানি-এই... এই...এই..., এখন আমাকে বিনেপয়াসায় বাকি ৩ টি জাদু শেখাতে হবে, শিখে মনপুত না হলে আমি খেলা দেখানোর সময় সকলকে তোমার খেলা দেখানোর গোমর ফাঁস করে দেবো । বেচারা জাদুকরেরা যেখানে উপস্থিত সকলকে ব্লাক্মেইল করে, সেখানে পুঁচকে ভবঘুরে তাদের জিম্মি করে এই বলে যে, জাদু একটা শিল্প-তোমরা সেটাকে মানুষের মধ্যে আতংক তৈরি করে হুমকি দিয়ে পকেটকেটে টাকা-পয়সা নিয়ে নাও, যেখানে মানুষ জাদুর কৌশল দেখে খুশি হয়ে টাকা-পয়সা দেয়ার কথা । কিন্তু তাদের অসহায় কথাবার্তা- মানুষকে জিম্মি না করলে কেউ এক টাকা-ও দেয়না, তাই পুঁচকে ভবঘুরেকে পাত্তা দেয়া, ভবঘুরে কথা দেয় সে মজমা করবেনা । দিনদিন ভবঘুরের জাদুজ্ঞানের পাল্লা ভারী হতে থাকে সেই ছোট বেলা থেকেই ; যে-ই বয়সী অনেকের তখন জাদু দেখে রক্ত হিম হয়ে যায়, হাত-পা আড়ষ্ট।

সবাই যে ভবঘুরেকে পাত্তা দেয় এমন নয়, একবার বাড়ির কাছেই এলেন এক জাদুকর, রীতিমত মজমা শুরু করেছেন স্থানীয় হোমরা চোমরাদের ম্যানেজ করেই । ভবঘুরে যাদুকরের সাথে কথা বলেও কিছু লাভ হয়নি, উলটো অন্যকোন জাদুকর হিসেবে উপস্থিত থাকার পরেও আলাদাভাবে কোন ছালাম-কালাম বা সম্মানটুকুও দেখায়নি । এটা ভবঘুরের জন্য অপমানজনক, সে আর যা-ই হউক চুপ থাকতে পারেনা । শুরু করলাম আরেক কাছের বন্দধুসহ বিরক্তি করা, বারবার প্রশ্ন করা যা-তে সাধারণ মানুষের পকেটমার জাদুকর মেজাজ হারায় । এক পর্যায়ে জাদুকর সত্যি মেজাজ হারালেন-আমাদের দুই বন্দধুকে যা-তা বলে হঠাত বকা দিয়ে,পাগলা আর যায় কোথায় ? তখন গলা কেটে মাথা আলাদা করার কাজ চলছে, ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ যার পকেটে যা আছে ফেলতে শুরু করেছে যাদুকরের হুমকিতে, যার মুখের ফুঁতে কিছুক্ষন আগেই আগুন জ্বলে উঠেছে; তার হুমকি বলে কথা । কিন্তু সকলকে হতবিহবল করে হঠাত ভবঘুরে আর তার বন্দধু দুইজন মিলে উপরে টাঙ্গানো কাপর টেনে ফেলে দিয়েছে, না মাথা আলাদা হয়নি, ছেলেটা হতচকিত হয়ে উঠে দাড়িয়েছে, সে কোনদিকে দৌড় দিবে সেটা বুঝে উঠার আগেই বাকি সব ফাঁস হয়ে গেছে সাধারন মানুষের কাছে, উম্মত্ত জনতা তারপরে...। কিন্তু রেহাই পেলাম না জাদুকরের আগে থেকেই মানেজ করা এলাকার হোম্রা-চোমরাদের কাছে থেকে, জাদুকরের নিজের মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে,নিজের নগদ টাকাকড়িও খোয়া গেছে, জামাকাপড় ছিড়ে গেছে । মা-নানী কতোটাকা গোপনে ভর্তুকি দিয়ে যেন এ যাত্রায় হোমরা-চোমরাদের রোষানল থেকে উদ্ধার করেছে, কিন্তু বাবা শুনে চৌদ্ধগুষ্ঠি উদ্ধার করেছে-"তর জন্য শেষ পরযন্ত এলাকায় মুখ দেখাতে পারবোনা মনে হয় ।" মনে মনে জাদুকরকে গালি দিতে থাকি, শালা কেন এসেছিলো,...কিন্তু বেচারা যাবার সময় আমার সাথে দেখা করে ভুল স্বীকার করে গেছে, আমি তাকে একচোট ভরতসনা করে পরে বলেছি, যান ক্ষমা করে দিলাম-আপনার নিজের ভুলের জন্য আজ আমাকে এতো সুন্দর একটা জাদু উম্মুক্ত করতে হলো । বেচারা পারলে কেঁদে ফেলে যেন, কিন্তু এলাকার সকলে জানলো, বড় এক জাদুকর ভবঘুরের কাছে কুপোকাত, তারমানে ভবঘুরে কতো বড়
জাদুকর ! সেটাই রাষ্ট্র হলো সকলের মুখে মুখে-ছোটখাট দু একটা মাঝে মাঝে দেখিয়েও

তাক লাগাই-কিন্তু আমাকে বন্দধুরা আর যাই হউক তন্ত্র-মন্ত্রের হাড়দেখানো জাদুকর ভাবেনা ! আরও অনেকেই সময়ে কুপোকাত হয়েছে---বেদে মহিলা, জ্যোতিষ, ফকির যারা নিজেরা কাম্রুপ-কামাক্ষার ১২ বছরের দীক্ষার গল্প, পিসি সরকারের গল্প বলে বেড়াতো ।

তারপরেও জাদুর প্রতি আমার আগ্রহ শেষ হয়না, হয়তো জাদুবিদ্যার অন্যকোন শাখায় বা অন্যকোনখানে আলৌকিকতা লুকিয়ে আছে । যেভাবেই হউক আমাকে আলৌকিকতার বা মিরাকেলের শক্তি অর্জন করতেই হবে । কিন্তু আমাকে হতাশ করে দিয়ে ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত কলম পত্রিকায় প্রকাশ, জাদুকর জুয়েল আইচের একটি চ্যালেঞ্জ আমার আজন্মলালিত সেই বিশ্বাস অনেখানিই ভেঙ্গে দেয়-কেউ যদি আলৌকিকতার নামমাত্র প্রমান আমাকে দেখাতে পারে তাহলে তাকে সম্মানের সাথে ১ লক্ষ টাকা পুরষ্কার দেয়া হবে । আমি অপেক্ষায় থাকি কবে জুয়েল আইচের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কে পুরস্কারটা জিতে নেয়, আমি তার মুরিদ হয়ে যাই, আমি তার শিষ্য হয়ে যাই । না কোন জাদুকর,ফকির, জ্যোতিষ, পীর, পাদ্রী, পুরোহিত কেউ পুরস্কারটা নেয়ার ধৃষ্টতা আজও দেখায়নি । অনুসন্দধান অব্যাহত থাকলেও উলটো আমার মাঝে আলৌকিকতা অবিশ্বাসের ধৃষ্টতা বেড়ে গেছে । জুয়েল আইচই প্রথম ব্যক্তি যে আমার অবিশ্বাসের প্রথম ভিত গড়ে দেয়, আমৃত্যু স্যালুট সেই বিখ্যাত জাদুকর জুয়েল আইচকে-যে আমায় অন্দধকার তাড়াতে প্রথম আলোকমুখী করেছে-আলোককে অন্দধকার বুঝিয়ে দূরে সরিয়ে রাখেননি ।

তারপরে একে একে বিশ্ববিখ্যাত অনেক জাদুকৌশল আয়ত্ত্ব করেছি বিভিন্ন সময়, আস্ত ট্রেন গায়েব করা, মানুষের উড়ন্ত জাদু, হাত-পা বেঁধে তালাবদ্ধ করে চৌবাচ্চায় ডুবিয়ে দেয়া, বাক্সবন্দধি ঋষির উদাও হয়ে যাওয়া, মঞ্চ থেকে যন্ত্রীদল উধাও, চাল-ডাল-পানি ডাবল করা আরও কতো কী, সকল যন্ত্রপাতি বা জাদুসরঞ্জাম না থাকায় বড় কোন প্রদর্শনীর দিকে যাইনি, তাছাড়া আমি জাদুকর হিসেবে কখনই নিজেকে পরিচিত করাতে-ও চাইনি । যতোই জাদুর আধুনিক সংস্করণগুলোর রহস্য বা টেকনিক পর্যায়ক্রমে জেনেছি, ততোই বিজ্ঞানের প্রতি দিনেদিনে আকৃষ্ট হয়েছি । যে-ই বিজ্ঞানীরা এতোসব আবিস্কার করেও আলৌকিকতার এতোটুকু দাবী করেনি, নিজেদের দেবদেবী নবীরসুল দাবী করেনি অথচ তাদেরই আবিস্কারের কাহিনী গোপন রেখে বিজ্ঞানের বিস্ময়কে কৌশলীভাবে উপস্থাপন করে আমজনতার মাঝে আলৌকিকতার নামে পকেট্মারদের বিস্তার, এটাই কী জাদুশিল্পের অপব্যবহার, শিল্পের অপপ্রচার ।

আমার সেই শিশু বয়সী অনুসন্দধিতসু মন প্রাথমিকের গন্ডি পেরুনোর আগেই জেনে গিয়েছিলো,
"যে জানে তার কাছে শিল্প-আর যে না জানে তার কাছে জাদু । আমি জানি এই লেখার পাঠকদেরও ৯০ শতাংশ অন্তত আলৌকিকতায় বিশ্বাসী কিন্তু আমার ক্ষেত্রে "আলৌকিকতায় বিশ্বাস হারানো"র সেই শুরু-তারপর একে একে কতোকিছুই-তো অবিশ্বাসের তালিকায় যুক্ত হয়ে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হলো ।