খোলা চিঠি -১
মাননীয় নবী,
আমার শ্রদ্ধা
ও ভালোবাসা জানবেন। মুসলিম পিতামাতার ঘরে মুসলমান হয়ে জন্মে আমি বর্তমানে একজন নাস্তিক। আমি জানি,
আপনার
অভিশাপ এবং আপনার সাঙ্গপাঙ্গদের
নাঙ্গা তলোয়ারের নিচে আমাকে আমৃত্যু বাস করতে হবে। তবুও আমি আমাকে শ্রদ্ধা জানাই, কারণ আপনি
আমার চাইতে প্রায় পনেরশ বছরের সিনিয়র এবং গুরুজনকে
মান্য করা আমাদের এ অঞ্চলের রীতি। তাছাড়াও আপনি একজন মানুষ এবং দোষে-গুণে মিলিয়ে একজন মানুষ। আপনার
নব্যুয়তির উদ্ভব ছিল সময়ের দাবি।
হাসবানে না,
শ্রদ্ধেয়
নবী, আমি আপনাকে সত্যিকারে ভালোবাসি; টিটকারি
মারছি না। আপনার জীবনী
পড়ে এবং আপনার চালু করা কোরআন পড়ে আমার কেবলই মনে হত, আপনার জীবনে
ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া, মমতার বড়ই
অভাব ছিলো।
আরবের
নীরস মরুভূমির চাইতেও শুষ্ক ছিলো আপনার জীবন। দুঃখের
তরবারিতে হৃদয় আপনার ফালাফালা। আমি
আপনাকে ভালোবাসি, নবী, কোনো খাদ নেই তাতে। শুধু আমি নই,
আমার মত অসংখ নাস্তিক আপনাকে ভালোবাসে, কারণ আমাদের
কাছে ভালোবাসা সব চাইতে বড় ধর্ম। আপনার
উম্মতদের চাপাতির কোপে আমাদের ধড় আলাদা হয়, তাজা রক্তের
স্রোতে পথঘাট ভাসে, তবু মানুষের
জন্য আমাদের ভালোবাসা ফুরায় না।
পদার্থবিজ্ঞান
সম্পর্কে আমার খুব সামান্য ধারণা আছে, আপনার, বোধহয়,
তাও নেই। এই বিজ্ঞান বলে, পৃথিবীর
প্রতিটি বস্তুর একে অপরের ওপর একটি টান কাজ করে। আমার
কী মনে হয়, জানেন? এর নাম ভালোবাসা। না না,
সিনেমার
নাম নয় - বাস্তবে এর নাম ভালোবাসা। এই
ভালোবাসা আপনার জন্যেও আছে।
ভূমিকাতেই
পত্র আমার দীর্ঘ হয়ে গেল। আসলে আমার বক্তব্য খুব সরল-সোজা এবং সংক্ষিপ্ত। আপনার উম্মতদের ওপর আপনার কোনো
নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা আপনাকে ইচ্ছেমত ভাঙে,
গড়ে। সৌদি
প্রেসের নাম - লাওহে মাহফুজ। ইসলাম নামের যে-চারা গাছটি আপনি রোপণ করেছিলেন, তা এখন ফলবান
বিশাল মহীরুহ। এর ফল ভক্ষণ করে কোটি
কোটি মানুষ এখন বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত। আপনার কিছু করার নেই এখন। একজন মৃত মানুষের কিছু করার ক্ষমতা থাকে না। এই
বিষাক্রান্তরা যতই আমাদের আঘাত করুক,
আমাদের
রক্ত পান করুক, আমরা তাদের রোগমুক্তির জন্য চেষ্টা করে যাবো। আমরা
তাদের বোঝাবো, মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসাকে যে-ধর্ম খাটো করে, তা কখনো মানুষের ধর্ম হতে পারে না।
খোলা চিঠি - ২
লিখেছেন পুতুল হক
মাননীয় নবী,
শুভেচ্ছা ও
ভালোবাসা জানবেন। আজকে আপনার সাথে কোনো কুতর্ক করার ইচ্ছে আমার নেই। একান্ত ভগ্ন মনে মনের কিছু কথা আপনার
সাথে শেয়ার করছি। আমি জানি, যে-কথাগুলো আমি আপনার সাথে শেয়ার করবো,
তা
আপনাকে আনন্দে পুলকিত করবে। আমি এবং
আমার মত আরো অসংখ্য মানুষ, যারা স্বপ্নতাড়িত হয়ে একটি ধর্মহীন
আনন্দময় সমাজের জন্য সংগ্রাম করে যাই,
আপনি
হয়তো ভাবতে বসবেন যে, আমাদের পরাজয় নিশ্চিত। জয়-পরাজয়ের
কথাতে পরে আসছি। আগে আমি কিছু কথা আপনার সাথে শেয়ার করি।
নবী ভাই
(প্রায়ই আপনার সাথে আমার বাতচিত হয়, তাই ‘ভাই’ বলে
সম্বোধন করলে আলাপ করতে সুবিধা হয়), আপনি
কি আমাকে পরিষ্কার করে বলতে পারবেন, ‘ইসলাম’ আসলে কী?
জন্মের
পর থেকে শুনে আসছি, ইসলাম একটি ধর্মের নাম, যা
থেকে কেবল শান্তি আর শান্তি নির্গত হয়। এর
প্রতিটি নিয়মকানুন থেকে শুধু শান্তি বুদবুদ আকারে
ফেটে বের হয়। যেমন, মেয়েরা সারা শরীর কালো বোরকায় ঢেকে
রাখবে, তাতে শান্তি। মাথার
চুল দেখতে দেবে না, তাতে শান্তি। জায়গায়-অজায়গায়
মসজিদ বানাবে, তাতে শান্তি। মসজিদ
থেকে মাইকিং করবে 'হিন্দুর ঘরবাড়ি পোড়াও', তাতে শান্তি। বিধর্মীকে ঘৃণা কর, তাতে
শান্তি। নাস্তিকের
কল্লা কাটো, তাতে শান্তি। মতের
মিল না হলে মুসলমানেরও কল্লা কাটো, তাতে শান্তি। মেয়েদের
ধরে ধরে বাজারে বিক্রি কর, তাতে
শান্তি। স্কুলে
বোমা মেরে শত শত শিশুর লাশ ফেলো,
তাতে
শান্তি। আরো
এতো অসংখ্য পদ্ধতিতে এহেন ইসলামী শান্তির জন্ম হয় যে,
বলে
শেষ করা যাবে না।
তাহলে,
নবী
ভাই, ইসলাম অনুসরণ করলে আমাদের শান্তির অভাব হবে না, তাই
তো? এখন আমাদের অনেক মসজিদ, মসজিদে অনেক
মাইক, অনেক বোরকা-হিজাব-জোব্বা-টুপি। আমরাও
এখন নাস্তিকদের কল্লা ফেলি, হিন্দুর মেয়েকে পিতার সামনে ধর্ষণ করি। দেশকে
১০০% মুসলমানের দেশে পরিণত করতে আমরা অনেকটাই সফলকাম। আমাদের ঘরে,
বাইরে,
পথে,
ঘাটে,
টেলিভিশনে,
রেডিওতে,
সিনেমায়,
কবিতায়,
আলোচনায়,
সম্ভাবনায়
এখন কেবল ইসলাম আর ইসলাম। চারদিকে ইসলামের ছড়াছড়ি। স্বীকার
করতে দ্বিধা নেই, চারিদিকে ‘ইসলামী
শান্তির’ ছড়াছড়ি। যত ইসলাম, তত শান্তি। সত্য বটে!
আপনি আপনার
উম্মতদের শিখিয়েছেন আপনার কথায় বিশ্বাস রাখতে। আমরা
বিশ্বাস করলাম, আমরা
শান্তিতে আছি। নবী, আপনি কি শান্তিতে ছিলেন, যখন
বেঁচে ছিলেন? যখন আপনি মারা গেলেন, আপনার দাফন
হয়নি দুই দিনেও, তখন কি আপনি শান্তিতে ছিলেন?
আপনার
প্রিয় সখা আলী, প্রিয় কন্যা ফাতিমা, প্রিয় নাতি
হাসান-হুসেন কি শান্তিতে ছিলেন? কোথায়
কীভাবে হারিয়ে গেলেন প্রিয় বিবি আয়েশা? আপনার মত একজন পুত্রকে জন্ম দিয়ে পিতামাতার মনে কতটুকু গর্ব আর শান্তি
অনুভূত হতে পারে, জিজ্ঞেস
করেছেন কখনো নিজেকে?
নবী আপনি
ইসলামের নামে শান্তির কোনো তরিকা বাতলে যাননি। আমরা সেটা
বুঝতে পেরেছি। শত শত মসজিদ
আপনার ভণ্ডামির মুখোশকে আড়াল রাখতে পারছে না। লক্ষ কোটি মাইক আপনার হিংসার ধ্বনিকে ঢেকে রাখতে পারছে না। আপনি
নিজেই আপনার কাপড় খুলে ফেলেছেন সেই আমলেই। আমরা
শুধু বলছি, আপনি ন্যাংটা, তবে ন্যাংটা কিন্তু আপনি নিজেই হয়েছেন। আমাদের বিজিত
হবার আসলে কোনো সুযোগ নেই। তাই আমরা
জয়ের জন্য মরিয়া নই। আমরা শুধু সত্যের বর্ণনাকারী। একখানা পোশাক
জোগাড় করতে পারলে আপাতত আপনার ইজ্জত বাঁচে,
হয়তো
তাই আপনি জয়ের জন্য হিংস্র।
খোলা চিঠি - ৩
লিখেছেন পুতুল হক
মাননীয় নবী,
শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানবেন। ভাই, আজকে আমি সরাসরি মূল কথাতে আসছি। আমার মন
ভীষণ খারাপ এবং উত্তপ্ত। আমরা সমগ্র মানব জাতি কি আপনার শত্রু? প্রজন্মের
পর প্রজন্ম, হাজার হাজার বছর ধরে আপনি আমাদের সাথে শত্রুতা করছেন, কিন্তু
কেন? কত রাগ, কত দুঃখ, কত লোভ ছিল আপনার ভেতর, যার কারনে আপনি এমন একটি
মতবাদের জন্ম দিয়ে গেলেন? ৬১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৬, মধ্যপ্রাচ্য থেকে
আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়া সব জায়গাতে আপনার লোভ আর হিংস্রতার নখর বিস্তারিত।
আপনার উম্মতরা, বুঝে হোক কিংবা না বুঝে হোক, জেনে হোক কিংবা না জেনে হোক,
পৃথিবীতে ইসলামী শাসন চায়। কোনো অঞ্চল নয়, কোনো নির্দিষ্ট দেশ নয়, তারা
গোটা পৃথিবীর ওপর তাদের রাজত্ব তথা আপনার এবং আপনার আল্লাহর রাজত্ব চায়।
মানব সভ্যতার ইতিহাস থেকে জানি আমরা, রাজা যাবে রাজা আসবে, ক্ষমতার পালাবদল
হবে, মানচিত্র পাল্টাবে, কিন্তু আপনাদের মুসলমানদের এক রাজা, সে হচ্ছেন
আপনি। পৃথিবীর একটাই মানচিত্র, আর তা হচ্ছে ‘গোটা পৃথিবী।’ অনন্তকাল ধরে,
সমগ্র বিশ্ব জুড়ে আপনি ভূত হয়ে থাকবেন রাজ সিংহাসনে।
আপনার উম্মতরা দুনিয়াতে মুসলমান ছাড়া আর কারো অস্তিত্ব মেনে নেবে না। কারণ
আপনি সেরকম বলেছেন। বিধর্মী মাত্রই নিকৃষ্ট, উপহাস এবং অভিশাপের পাত্র।
তাদের খুন করা যাবে, তাদের সম্পদ লুট করা যাবে, তাদের মেয়েদের ধর্ষণ করা
যাবে। তাদের উঠতে বললে তারা উঠবে, বসতে বললে তারা বসবে। তারা মাথা হেট করে
চলবে। তাদের জান-মালের মালিক মুসলমান। তারা কখনোই মুসলমানের সমকক্ষ হতে
পারবে না, কারণ তারা আপনাতে এবং আপনার আল্লাহতে বিশ্বাস রাখে না। এই অবস্থা
চলবে দুনিয়া ধ্বংসের আগ পর্যন্ত। একেই বলে ‘দারুল ইসলাম’।
আচ্ছা, আপনার আল্লাহর জন্য বেহেস্তে ‘কুরসী’ আছে। তার পাশেই নাকি আপনার
জন্য একখানা চেয়ার আছে, যদিও তার নাম আমার জানা নেই। পরকালে যাদের বিশ্বাস,
তারা মানে - এক সময় মানুষের মৃত্যু হবে, দুনিয়াদারীর খেলা শেষ হবে, তখন
অনন্ত জীবন শুরু হবে, যখন দুনিয়ার কোনো বিষয়ে ভাববার কোনো অবকাশ থাকবে না।
আপনি, ভাই, মরেও তো মরলেন না।
আপনার উম্মতরা, পাছা বের হওয়া মুসলমানরা, টুপি আর হিজাব দিয়ে মাথা ঢেকে
চলে। আপনার কলিজা শীতল করার জন্য চাপাতিতে শান দেয়। আপনি তাদের পরম। আপনি
তাদের মিতা। আপনার জন্য তারা সব কিছু করতে পারে। তারা জানে ‘শান্তি’ অর্থ -
আপনার আদেশ পালন করা। তারা সেটাই করে যাচ্ছে।
খোলা চিঠি - ৪
লিখেছেন পুতুল হক
মাননীয় নবী,
ভালোবাসা
জানবেন। আমি
মাঝে মাঝে আপনার কথা ভেবে অবাক হই। আপনার পেশায় আপনি প্রচণ্ডভাবে সফল, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর
কারণ আমার কাছে যা মনে হয়, তা হল - আপনি আপনার সময়ে একজন আধুনিক
মানুষ। আপনার
সে সময়কার উম্মতদের আপনি কখনো
পেছনে ফিরে যেতে বলেননি। তাদের বলেননি কাপড় ছেড়ে আল্লাহর দেয়া গাছের ছাল পরো। যুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন সে সময়কার
আধুনিক অস্ত্র। জবের রুটি খেয়েছেন,
কাঁচা
জব চিবিয়ে খাননি। তখনকার সময়ে মানুষের অর্জিত জ্ঞানের আপনি
পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করেছেন।
নবী, আপনি
কোনোকিছুর জন্য আল্লাহর মুখাপেক্ষী ছিলেন না। আপনি
নির্ভরশীল ছিলেন খাদিজার সম্পদ, অনুসারীদের
বাহুবল আর আপনার বুদ্ধির ওপর। প্রাথমিকভাবে
এই তিন শক্তি আপনার সফলতার সূত্রপাত ঘটিয়েছিল। আল্লাহকে
আপনি সৃষ্টি করেছেন অপরদের জন্য। অনুসারীরা
তাদের অর্জিত সফলতার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া
আদায় করবে।
ব্যর্থতাকে
আল্লাহর ইচ্ছা বলে মেনে নেবে। তাদের মন, তাদের শরীর
আপনি আল্লাহ নামের কাল্পনিক রশি দিয়ে বেধে ফেলেছেন। এ সব কিছু আপনি করেছেন আপনার স্বার্থে।
যিশু যদি
ঈশ্বরের স্রষ্টা না হতেন, তবে তিনি যীশু হতেন না। আপনি
যদি আল্লাহর স্রষ্টা না হতেন, তবে
আপনি কি হতেন? সৃষ্টিকর্তারা সব সময় আপনাদের ওপর
নির্ভর করেছেন, আপনারা তাদের ওপর নির্ভরশীল নন।
বেহেশতে আপনি
সেরা খাবার খাবেন, তাতে দুনিয়াতে আপনার ভালোমন্দ খাওয়া আটকে ছিল না। বেহেস্তে আপনি যৌনতার জন্য সেরা হুর
পাবেন, তাতে দুনিয়াতে একের পর এক
বিবি ও দাসী গ্রহণ বন্ধ ছিল না। আপনি জানতেন না, মৃত্যুর
পর কী আছে। কাজেই জীবনকে উপভোগ করা আপনি থামিয়ে রাখেননি। যখন,
যেভাবে,
যতটুকু
সম্ভব, আপনি জীবন উপভোগ করেছেন চুমুকে চুমুকে।
আপনি কি
জানতেন, আপনার মৃত্যুর কয়েক মাসের মধ্যে আপনার প্রিয় কন্যা নিদারুণ মনের কষ্টে মারা যাবেন? আপনি কি
জানতেন, আপনার প্রিয় হাসান-হোসেন এমন করুণ মৃত্যুর
শিকার হবেন? আপনি জানতেন না, নবী। তারা হয়তো
আপনার প্রতিটি কথা বিশ্বাস করতো। আপনি
আপনার একান্ত প্রিয় মানুষদের মিথ্যা বলেছিলেন। আপনার ধূর্ততার শাস্তি পেয়েছে আপনার বংশধরেরা।
আপনার সময়
থেকে আমার সময়ের ব্যবধান প্রায় পনেরশ বছর। মহাকালের কাছে এ সময় কিছুই নয়। আমি বুঝতে পারি, আপনার
বয়ান করা কল্পকাহিনী কতটা বানোয়াট আর ভুলে ভরা। আগামীর
মানুষগুলো আরো বেশি করে বুঝতে পারবে।
আপনি সেকালে
একজন আধুনিক মানুষ হয়েও যে-ভুল করেছিলেন, তা হল - আপনি
বুঝতে পারেননি যে, আধুনিকতা
গতিশীল, তা এক জায়গায় থেমে থাকে না। গত পনেরশ
বছরে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। মুসলমানদের
উন্মাদনার কারণ - তারা বর্তমানের সাথে আপনার
সময়ের সুতো ধরে রাখে। তারা বর্তমানকে অস্বীকার করে পেছনে যায় না, আবার
পেছনটাকেও ছাড়ে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তারা হয় পৃথিবীকে ধ্বংস করবে, নয়তো নিজেরা ধ্বংস হবে। মানুষের
জীবনের মূল্য আপনার কাছে কখনো ছিল না। তবুও
আপনার কাছে জানতে ইচ্ছে করে, আপনি কি চাইবেন কোটি কোটি
খোলা চিঠি -৫
লিখেছেন পুতুল হক
মাননীয় নবী,
আমার প্রতিটি
চিঠিতে আমি আপনার প্রতি ভালোবাসা জানাই। আমি মনে করি, ভালোবাসা
পারে মানুষকে বদলাতে। কিন্তু আপনি বদলাবেন কীভাবে? আপনি যে মৃত! খুশি হতাম, আপনার শিক্ষাও যদি আপনার মত মৃত হত। এই
পৃথিবীর, পৃথিবীর শত কোটি মানুষের
তাহলে খুব উপকার হত।
দেড় হাজার
বছর আগে আপনার প্রচারিত মতবাদের কারণে আমার ছোট্ট গরীব দেশ সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য একটি ত্রাসের জায়গা হয়ে উঠলো। কয়েকজন
তরুণ কতগুলো নিরপরাধ মানুষকে গলা কেটে খুন
করলো। যাদের
খুন করলো, তাদের সাথে তরুণদের কোনো
শত্রুতা ছিল না, এমনকি পরিচয়ও ছিল না। বেশির ভাগই ছিল ভিনদেশী। কেন ওরা রক্তপিপাসু হয়ে ওঠে?
নবী, আমি
নির্দ্বিধায় বলতে পারি - আপনি অধর্ম প্রচার করেছিলেন। পৃথিবীর জন্য, পৃথিবীর মানুষের জন্য আপনার
অনুসারীদের হুমকি হিসেবে তৈরি করেছেন। বিধর্মী
কাকে বলে, নবী? যে আপনাকে বিশ্বাস করে না, তাকে,
নাকি
যার মধ্যে মানবধর্ম নেই, তাকে?
আপনার
ধর্ম কী, নবী?
আপনি
চেয়েছিলেন পৃথিবীতে কেবল আপনার মতবাদ টিকে থাকবে, কেবল আপনার অনুসারীরা টিকে থাকবে। এটা কেমন চাওয়া, নবী?
পৃথিবী
কি আমাদের সবার জন্য নয়? গাছ,
পশু,
কীটপতঙ্গের
জন্যেও এই পৃথিবী। আর মানুষ বাঁচতে পারবে না, যদি না সে আপনার অনুসারী হয়? সারা পৃথিবী
আপনার বাপের তালুক নয়, নবী।
অমুসলিমদের
ওপরে জিহাদীরা একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা করে, মানুষ খুন
করে, লুট করে, ধর্ষণ করে। অমুসলিমরা
মুসলিম হবার কারণে তাদের ওপর কি প্রতিশোধ নেয়?
একজন
পুরোহিত খুনের কারনে একজন ইমাম কি খুন হয়েছে? ইতালীয়রা এ
দেশে প্রাণ দিল কেন? ইতালিতে
তো মুসলমান আছে। এখন তাদেরকে খুন করা কি যুক্তিযুক্ত
হয়? নবী, আপনি ও আপনার অনুসারীরা মানসিক রোগী,
খুনি।
এখন যদি মুসলিমদের ধরনে অমুসলিমরা যেখানে মুসলমান পায়, খুন করে, গর্দানের পেছনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে, মুসলিমদের রক্ত দিয়ে উৎসব করে, মুসলিমদের মা-বোনকে ধর্ষণ করে, সেটা কি উচিত হবে? হবে না। মানুষ সবার ওপরে। কোনো ধর্ম, কোনো মতবাদ মানুষের চেয়েতে বড় নয়। আমার "ধর্ম" আমাকে তাই বলে। এজন্যই আমি অমুসলিম।
নবী, আপনি
মানুষ, আপনার যারা অনুসারী, তারা মানুষ। যারা
বিধর্মী, নাস্তিক - তারাও মানুষ। মানুষের
যত জ্ঞান, তা মানুষের জন্য। আমরা বেচে থাকি মানুষের জন্য মমতায়। মানুষের চাইতে বড় কিছু নয়। আপনি
বা আপনার ইসলাম মানুষের জীবনের চাইতে বড় নয়। মুসলমানরা
একদিন হয়তো সে কথা বুঝতে পারবে। এর আগ পর্যন্ত তারা
অপরকে কাঁদাবে, নিজেরাও কাঁদবে। এজন্য দায়ী আপনি।
খোলা চিঠি -৬
লিখেছেন পুতুল হক
মাননীয় নবী,
ভালো
আছেন নিশ্চয়ই। আপনি, বোধহয়, আজকাল খুব
ব্যস্ত সময় কাটান। যে হারে দলে দলে মুমিন এখন আপনার
সাক্ষাৎপ্রার্থী, তাতে আপনার সময় পাওয়া মুশকিল। একটা
কথা জিজ্ঞেস করি আপনাকে। আপনার কেন নবী হতে ইচ্ছে হয়েছিল?
নেতা
হবার বাসনায়, নাকি খাদিজার প্রতি গোপন ক্ষোভে?
আপনার
যে-দিকটি আমাকে সব চাইতে অবাক করে, তা হল - আপনার অকৃতজ্ঞতা। আপনি আপনার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ না। ধরলাম,
তার
পেছনে কারণ ছিল। আপনি যে পালনকর্তার
প্রতিও কৃতজ্ঞ থাকেননি। থাকেননি খাদিজার প্রতিও। আপনার বন্ধু সাথীদের
প্রতি, যারা আপনার জীবন কেড়ে নেয়নি। যাদের প্রতি
আপনার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত ছিল,
তাদের
আপনি বরং সীমাহীন অপমান করেছেন।
আপনার এই
বৈশিষ্ট্য মুমিনের মধ্যে পুরোপুরি আছে। এমন অকৃতজ্ঞ আপনার অনুসারীরা! মানুষের হাজার বছরের কষ্টকর অর্জন এই সভ্যতার
সবকিছুকে "কোরানের অবদান"
বলে এক কথায় কথা শেষ করে দেয়।
নবী, আপনি
কি গুলশানে এসেছিলেন কখনো? যেখানে আপনাকে খুশি করার জন্য আপনার প্রেতাত্মারা মানুষ মেরে ফেললো? গুলশানের
নিরাপত্তার জন্য আমাদের সরকার আজকাল
উঠে-পড়ে লেগেছে। সারা পৃথিবীটাই আসলে গুলশান, যেখানে আপনার প্রেতাত্মাদের হাত থেকে নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। মানুষ
আর প্রেতের লড়াই চলছে।
সভ্যতা
মানুষকে প্রেতের সাথে লড়াই থেকে মুক্তি দিতে পারেনি। তাই মনে হয়,
এতো
অগ্রগতির পরেও আমাদের সভ্যতা, জ্ঞান অপূর্ণ। আমরা
ইতিহাসের সব সময়ই কোনো না কোনো
প্রেতের সাথে লড়াই করেছি এবং বিজয়ী হয়েছি। আপনার প্রেতকেও
আমরা
হার মানাবো।
আমরা বিজয়ী
হব এবং আপনি হবেন পরাজিত। কেন, জানেন?
কারণ
প্রেতকেও মানুষ সৃষ্টি করে। এবং
প্রেতকে মানুষই শেষ করবে। একটা সময়ে পুরনো প্রেত-কাহিনী কোরান ঠাঁই নেবে।