Saturday, August 6, 2016

মুহাম্মদের অস্তিত্ব বলে কি আদৌ কিছু ছিলো?


–রোদেলা প্রকাশনীর বাংলাবাজারের অফিসে হামলা চালিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে এদেশের শান্তিপ্রিয় মুসলমানরা। এটা পুরান খবর। (সামান্য একটা সহিহ হাদিস কপিপেস্ট করে দিলেই যেখানে মমিনরা বেইজ্জতী রাখার জায়গা পায় না, সেখানে মুহাম্মদ তার ২৩ বছরের নবি জীবনে কী কী করেছে, সেগুলো পড়ে তারা আর বেইজ্জতী হতে চায় না।) নতুন খবর হলো বাংলা একাডেমিও বই মেলায় রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দিয়েছে এই একই অজুহাতে। অজুহাতটা হলো ইরানের বিখ্যাত লেখক আলি দস্তির ‘নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর’ বইটির বাংলা অনুবাদ করেছেন আবুল কাশেম ও সৈকত চৌধুরী এবং বই আকারে প্রকাশ করেছে রোদেলা প্রকাশনী।
–আলি দস্তির মূল বইটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিষিদ্ধ নয়, নিষিদ্ধ নয় বাংলাদেশেও। যে কেউ এর ইংলিশ ভার্সন কিনে পড়তে পারেন। তাহলে বাংলা অনুবাদে সমস্যা কোথায়? অনুবাদে ভুল আছে? তসলিমা নাসরিন কিংবা হুমায়ুন আজাদের বই মমিনরা না পড়েই নিষিদ্ধের দাবি করে, কারণ এনারা ধর্মকর্ম করেন না। তাদের বইয়ে ভুলটা কোথায়, সেটা কোনো মমিন আজ পর্যন্ত বলতে পারল না! ‘নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর’ বইটির অনুবাদও কোনো মমিন পড়ে দেখে নাই, পড়ে দেখাতে পারে নাই যে কোথায় অনুবাদে ভুল আছে। তারপরেও এত ক্যাচাল…কারণ বইটির অনুবাদক দুজনের কেউও ধর্মকর্ম করেন না। চুলকানিটা এখানেই! আর চুলকানি হবেই বা না কেন! ২/৩ ইঞ্চি বাঁকানো আগা মোটা গোড়া চিকন ঈমানদণ্ডে চুলকানি বেশি—সে আর নতুন করে কী বলব!
–একটা মজার বিষয়—কোরানের বাংলা অনুবাদ করেছে মমিনরা। কেউ সেই অনুবাদ কপিপেস্ট করলে আবার মমিনরাই বলে—অনুবাদে ভুল আছে! ইসলামের ইতিহাস মুসলমানদেরই লেখা। নাস্তিকরা নতুন করে কোনো কিছু বানিয়ে বলে না। তারা শুধু দেখায় মুসলমানদের নিজেদের বানানো কাহিনীতেই অসংগতি এবং তথ্যে গরমিল। এরকম হয় কেননা একটা মিথ্যাকে সত্য প্রতিষ্ঠা করতে সেই মিথ্যাকে আগে ঢাকতে হবে। একটা মিথ্যাকে ঢাকতে আরো হাজারটা মিথ্যার দরকার হয়। এভাবে শেষ পর্যন্ত পুরা জিনিসটাই তাসের ঘরের মত পুরা মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর একটা মিথ্যাকে টান দিলে যা হয়…পুরা কাহিনীটাই প্রশ্নবিদ্ধ!
–কয়েকদিন আগে ইসলামের ইতিহাস থেকে হামযা আর নবির জন্ম কাহিনীর দুইটা লাইন তুলে দিয়ে নাস্তিকরা দেখিয়েছে তথ্যে গরমিল আছে। সেটা মেকআপ দিতে মমিনরা আরো হাজারটা অযৌক্তিক তথ্যের আমদানি করেছে। কেউ কেউ বলেছে নবি নাকি তার মায়ের গর্ভে ৪ বছর ছিল! ঈশা নবির মত নবিও যে আল্যার মাল, সেইটা কইতেই শুধু বাকি রেখেছে! আরেকটু চেপে ধরলে তারা এটাও বলবে একদিন… আমি নিশ্চিত!
–যা হোক, আলি দস্তির ‘নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর’ বইটিতে লেখক কোথাও নিজ থেকে আগ বাড়িয়ে নবিকে কোনো বিশেষণে ভূষিত করেন নাই। তিনি শুধু ইসলামিক ইতিহাস থেকে তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। ঈমানদণ্ডে কী পরিমান চুলকানি থাকলে এতেই মমিনরা এত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারে, একটু ভেবে দেখেন!
–কিন্তু বাংলায় আরেকটা আসল চুলকানি কামিং সুন। উহু, নবিকে কেউ নতুন করে গালাগালি করবে না। হামযা আর নবির জন্ম কাহিনীতে মমিনদের সূত্রানুসারেই নবি যে জারজ হয়ে যায়—এমন কথাও নাস্তিকরা বলবে না। ইসলামের ইতিহাস আর মমিনদের দেয়া তথ্যতে হাজারো অসংগতি দেখে দ্যা আলটিমেট প্রশ্ন—মুহাম্মদের অস্তিত্ব বলে কি আদৌ কিছু ছিলো?
মুহাম্মদের অস্তিত্ব নিয়ে যে বিষয়গুলো একাট্টা করা হয়েছে তার একটা আউট লাইন (অনুবাদ করেছেন অনুসন্ধানী আবাহন)—
১) বর্ণিত মৃত্যুর প্রায় ১০০ বছর পার হবার আগে কোথাও কখনো ৬৩২ সালে মোহাম্মদের মৃত্যু হয়েছে, এমন প্রসঙ্গের কোন রেকর্ড পাওয়া যায় না।
২) খুব সম্ভব ৬৩৪ সালে নথিভুক্ত একজন খ্রিষ্টানের জবানীতে তলোয়ারধারী একজন আরব নবীর বর্ণনা পাওয়া যায়, যে তখনো জীবিত ছিলো।
৩) প্রথম দিকে যে সমস্ত গোষ্ঠী আরবদের কাছে পরাজিত হয়, তাদের রেকর্ডে কোথাও ইসলাম, মোহাম্মদ বা কুরানের উল্লেখ নেই। তারা তাদের পরাভুতকারীদেরকে “ইসমাইলী”, “সারাসেন”, “মুজাহিরুন”, “হাগারিয়ান” এসমস্ত বলে উল্লেখ করেছে, কিন্তু “মুসলিম” নয়।
৪) আরব দখলদারেরা অন্তত প্রথম ৬ দশক তাদের মুদ্রা বা দলিলের কোথাও ইসলাম বা কুরান শব্দদ্বয় উল্লেখ করনি। অন্তত দু’টো ক্ষেত্রে “ক্রুশ” চিহ্ন পাওয়া গেছে।
৫) এমনকি গোঁড়া মুসলিম উৎস মতেও কুরানের বর্তমান রূপ ৬৫০ সালের আগে ছিলো না। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, অষ্টম শতাব্দির আগে ঐ এলাকার আরব, খ্রিস্টান বা ইহুদী কেউই কুরানের কোন উল্লেখ করেনি।
৬) খলিফা মুয়াবিয়ার (৬৬১-৬৮০) শাষনামলে আরবরা অন্তত একটা পাবলিক বিল্ডিং নির্মাণ করেছিলো যার চুড়া ক্রুশাঙ্কিত ছিলো।
৭) মুহাম্মদ, ইসলামের নবী এমনকি খোদ ইসলাম শব্দটারই প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ৬৯০ সালে খলিফা আবদ আল মালিকের শাসনামলে। মুদ্রা বা দলীলে ইসলামের নামও তার সমসাময়িক।
৮) ঠিক এই সময় হতেই আরব শাসিত অঞ্চলের লেখ্য ভাষা হিসেবে সিরিয়াক বা গ্রীকের পরিবর্তে আরবীর প্রচলন ঘটে।
৯) অনেক হাদিসে এই উল্লেখ আছে যে, আবদ আল-মালিকের সময়কার ইরাকী গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কুরান সংকলন ও বিতরণ করে, যা উসমান কর্তৃক সংকলনের প্রচলিত ধারণার পরিপন্থী।
১০) এমনকি কিছু ইসলামী মতবাদ অনুসারে, এই হাজ্জাজ বিন ইউসুফের আদেশেই নামাজের মাঝে সুরাপাঠ প্রচলিত হয়, যার প্রচলন আগে ছিলো না।
১১) অষ্টম শতকের মাঝামাঝি সময়ে আব্বাসীয় বংশ উমাইয়া বংশ থেকে খিলাফত দখল করে নেয়, এবং উমাইয়াদেরকে সাংঘাতিক রকমের অধার্মিকতার দায়ে অভিযুক্ত করে। এই আব্বাসীয় খিলাফতের আমল থেকেই মুহাম্মদের জীবনীভিত্তিক তথ্য গজিয়ে উঠতে থাকে এবং পরিশেষে মুহাম্মদের কথিত মৃত্যুর ১২৫ বছর পরে মুহাম্মদের পূর্ণাঙ্গ জীবনী লিপিবদ্ধ করা হয়।
এসমস্ত তথ্যের ভিত্তিতে ইসলামের উত্থানকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে আরব সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্মাচরণকেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক ধর্মমত হিসেবে। তাঁ্র ভাষায়, আরবেরা তাদের বিজিত অঞ্চলগুলোর সংস্কৃতি যাচাই করে দেখেছিলো, রোমানরা তাদের গোটা সাম্রাজ্যকে এক সুতোয় গেঁথে রাখতে ব্যবহার করেছিলো একটি রাজনৈতিক ধর্মতত্ব, ক্রিশ্চিয়ানিটি। রোমানদের দেখাদেখি আরবরাও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে আঞ্চলিক আব্রাহামিক বিশ্বাসকে একত্রিত করে একটা ধর্মমত গড়ে তুলতে থাকে যা পরিপূর্ণতা পায় ৬৯১ সাল নাগাদ।
জেরুজালেম দখলের পরে “ডোম অফ রকস”-এ খোদাইকৃত প্রশংশিত জন হিসেবে জিসাসকে বিযুক্ত করে আরব নিজস্বতা প্রদর্শন জরুরী হয়ে দাঁড়ায় এবং সেখান থেকেই মুহাম্মদ নামক চরিত্রের সৃষ্টি। এমনকি মুহাম্মদের অস্তিত্ব যদি আদৌ নাও থেকে থাকে, মুহাম্মদ ব প্রশংশিত নামটা রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। কেননা, রাজনৈতিক ক্রিশ্চিয়ানিজমক টেক্কা দিতে আরবী ঐশী গ্রন্থসমেত একজন আরব নবী, রাজনৈতিকভাবে আরবদের খুবই দরকার হয়ে পড়েছিলো।
(পুরা বাংলা অনুবাদ না আসা অবধি বাকি চুলকানি তোলা রইল।)