Friday, August 5, 2016

জীব হত্যায় পুণ্য কি?

 
(প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি থাকলেই কাউকেই শিক্ষিত বলা কি উচিত, যদি সে মুক্তচিন্তা করতে না পারে? কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক পড়ে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করাটাই কি শিক্ষিত হবার পরিচায়ক? বিশ্বাস ভেঙে যাবে বলে প্রশ্ন করতে ভীত হলে শিক্ষিত ব্যক্তিকে সুশিক্ষিত বলা যাবে? 

আরজ আলী মাতুব্বর। জন্ম ১৯০১, মৃত্যু ১৯৮৬ সালে। গ্রাম্য কৃষক। স্কুল-কলেজের ডিগ্রি তাঁর ছিলো না। পড়েছেন (তাঁর ভাষায়) "সেকালের পাঠশালার দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত।" কৃষিকাজের অবসরে নিজ উৎসাহে ও উদ্যোগে পড়াশোনা করেছেন দূর শহরের লাইব্রেরিতে পায়ে হেঁটে গিয়ে। তিনি স্ব-শিক্ষিত এবং সুশিক্ষিতও। তিনি কুসংস্কারমুক্ত ছিলেন বলে মুক্তচিন্তা করতে পারতেন। ধর্মীয় রীতিনীতি ও কুসংস্কার বিষয়ে যতো প্রশ্ন এসেছে তাঁর যুক্তিমনস্ক মস্তিষ্কে, তিনি সেসবের উত্তর খুঁজেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন, প্রচ্ছন্ন সরস কটাক্ষ করেছেন। ডিগ্রিধারী ক'জন শিক্ষিত লোক তা করে থাকে? 

তিনি তাঁর লব্ধ জ্ঞান ও নিজস্ব অনুসন্ধিৎসু বুদ্ধিবৃত্তির অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়ে কয়েকটি বই রচনা করেন। 'আরজ আলী মাতুব্বর রচনা সমগ্র ১'-এ কোরবানি প্রসঙ্গে তিনি যে-প্রশ্নগুলো করেছেন এবং যেসব যুক্তির অবতারণা করেছেন, সেগুলো খণ্ডনযোগ্য নয় বলেই চিরন্তন ও অমলিন। বারবার পড়া যায়।)
কোন ধর্ম বলে, “জীবহত্যা মহাপাপ।” আবার কোন ধর্ম বলে,“জীবহত্যায় পুণ্য হয়।” জীবহত্যায় পাপ বা পুণ্য যাহাই হউক না কেন, জীবহত্যা আমরা অহরহই করিতেছি। তার কারণ¬ জগতে জীবের খাদ্যই জীব। নির্জীব পদার্থ যথা-সোনা, রূপা, লোহা, তামা বা মাটি-পাথর খাইয়া কোন জীব বাঁচে না। পশু-পাখী যেমন জীব, লাউ বা কুমড়া, কলা-কচুও তেমন জীব। উদ্ভিদগণ মৃত্তিকা হইতে যে রস আহরণ করে, তাহাতেও জৈব পদার্থ বিদ্যমান থাকে। কেঁচো মৃত্তিকা ভক্ষণ করিলেও উহার দ্বারা সে জৈবিক পদার্থ-ই আহরণ করে এবং মৃত্তিকা মল রূপে ত্যাগ করে। 
জীব-হত্যা ব্যাপারে কতগুলি উদ্ভট ব্যবস্থা আছে। যথা-ভগবানের নামে জীব হত্যা করিলে পুণ্য হয়, অখাদ্য জীব হত্যা করিলে পাপ হয়, শত্রু শ্রেণীর জীব হত্যা করিলে পাপ নাই এবং খাদ্য জীব হত্যা করিলে পাপ-পুণ্য কিছুই নাই ইত্যাদি। 
সে যাহা হউক, ভগবানের নামে জীব হত্যা করিলে পুণ্য হইবে কেন? কালীর নামে পাঁঠা বলি দিয়া উহা যজমান ও পুরোহিত ঠাকুরই খায়। কালীদেবী পায় কি? পদপ্রান্তে জীবহত্যা দেখিয়া পায় শুধু দুঃখ আর পাঁঠার অভিশাপ। কেননা কালীদেবীর ভক্তগণ যাহাই মনে করুন, পাঁঠায় কামনা করে কালীদেবীর মৃত্যু। যেহেতু কালীদেবী মরিলেই সে বাঁচিত। 
জীবমাত্রেই বলির পাত্র নহে। আবার ধর্মে ধর্মে বলির জীব পার্থক্য অনেক। মুসলমানদের কোরবানির (বলির) পশু-গরু, বকরী, উট, দুম্বা ইত্যাদি। কিন্তু হিন্দুদের বলির পাত্র-ছাগল, ভেড়া, হরিণ, মহিষ, শূকর, গণ্ডার, শশক, গোসাপ এবং কাছিম। 
ইসলামের বিধান মতে “কোরবানি” একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান। শোনা যায় যে, হজরত ইব্রাহিম (আঃ) স্বপ্নাদেশ মতে তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করিয়া খোদাতা’লার প্রিয়-পাত্র হইয়াছিলেন। তাই মুসলমানগণ গরু, ছাগল, উট, দুম্বা ইত্যাদি কোরবানি দিয়া খোদাতা’লার প্রিয়-পাত্র হ’ন। 
কোরবানি প্রথার মূল উৎস সন্ধান করিলে মনে কয়েকটি প্রশ্ন উদয় হয়। প্রশ্নগুলি এমন-