কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা অধ্যায় - গোপন প্রচারের তিন বছর (পর্ব ০১)
লিখেছেনঃ নরসুন্দর মানুষ!
[বর্তমানে যে কোরআন আমরা পাঠ করি, তাকে বলা হয় “উসমানী কোরআন”; খলিফা উসমানের শাসন আমলে এ সংকলন করা হয়; সংকলন করার সময় আয়াত প্রকাশ হবার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি; এর কারণে নবী মুহাম্মদের প্রথম প্রকাশ করা সূরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াত সংকলিত হয়েছে কোরআনের ৯৬ নং অবস্থানে; মিনায় অবতীর্ণ হওয়া শেষ হজ্জের সময়কার আয়াত চলে এসেছে সূরা বাকারায়; ৪৩ তম বারে প্রকাশ হওয়া সূরা ফাতিহা আছে কোরআনের ১ নং অবস্থানে!
যেহেতু কোরআনে নবী মুহাম্মদের জীবনের প্রতিরূপ ক্রমশ প্রকাশিত হয়েছে, তাই কোরআন ও নবী মুহাম্মদের মানসপট বোঝার সহজ উপায় হচ্ছে, আয়াত প্রকাশ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে কোরআন অধ্যায়ন করা; কিন্তু দুঃখের বিষয়, ১৪০০ বছরের ইতিহাসে এ বিষয়ে কাজ হয়েছে খুব সামান্য।
২০০৮ ইং সাল থেকে বিষয়টি নিয়ে আমি মাথা ঘামানো শুরু করি; প্রায় শতাধিক নবী জীবনী, ১৫ টি হাদিস সংকলন, কোরআনের ৫০ টির বেশি বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ, ২০ টির মত তাফসীর এবং ১৫ টি শানেনুযুল গ্রন্থ অনুসারে আমি আপাত অসাধ্য কাজটিতে হাত দিই; আজ ৮ বছর পর, আমি প্রায় বেশির ভাগ কাজ গুছিয়ে আনতে পেরেছি; ধর্মকারীর বন্ধুদের জন্য কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশ করা শুরু করলাম; প্রতি পর্বে থাকবে ধারাবহিকভাবে ছয় অংশ। অনুবাদের ভাষা ৫০ টির বেশি বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।]
নবী মুহাম্মদ দ্বারা প্রথম প্রকাশ; সূরা আলাক (৯৬) (জমাট রক্তপিণ্ড) ৫ আয়াত:
১ .পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন,
২. সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।
৩. পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু,
৪. যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন,
৫. শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা দ্বিতীয় প্রকাশ; সূরা আল মুদ্দাসসির (৭৪) (কম্বল আচ্ছাদিত ব্যক্তি) ৭ আয়াত:
১. হে চাদরাবৃত!
২. উঠুন, সতর্ক করুন,
৩. আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করুন,
৪. আপন পোশাক পবিত্র করুন,
৫. এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন।
৬. অধিক প্রতিদানের আশায় অন্যকে কিছু দেবেন না;
৭. এবং আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে সবর করুন ।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা তৃতীয় প্রকাশ; সূরা আছর (১০৩) (মহাকাল/সময়) ২ আয়াত:
১. কসম যুগের (সময়ের),
২. নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত;
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৪র্থ প্রকাশ; সূরা আয-যারিয়াত (৫১) (বিক্ষিপ্তকারী বায়ুরাশি) ৬ আয়াত:
১. কসম ঝঞ্ঝাবায়ুর।
২. অতঃপর বোঝা বহনকারী বায়ুর কসম।
৩. অতঃপর মৃদু চলমান জলযানের,
৪. অতঃপর কার্য-বিভাগকারী বায়ুর কসম,
৫. তোমাদেরকে প্রদত্ত ওয়াদা অবশ্যই সত্য।
৬. এবং বিচার অবশ্যম্ভাবী।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৫ম প্রকাশ; সূরা আত্ব তাকাসূর (১০২) (প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা) ২ আয়াত:
১. প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে মুগ্ধ রাখে,
২. এমনকি, তোমরা কবরস্থানে পৌছে যাও।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৬ষ্ঠ প্রকাশ; সূরা আত্ব-তূর (৫২) (তূর পাহাড়) ৮ আয়াত:
১. কসম তূর পর্বতের,
২. এবং লিখিত কিতাবের,
৩. উন্মুক্ত পত্রে,
৪. কসম বায়তুল-মামুর তথা কাবা গৃহের,
৫. এবং সমুন্নত ছাদের,
৬. এবং উত্তাল সমুদ্রের,
৭. আপনার পালনকর্তার শাস্তি অবশ্যম্ভাবী,
৮. তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারবে না।
কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা অধ্যায় - গোপন প্রচারের তিন বছর (পর্ব ০২)
লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
আগের পর্ব
{মুহাম্মদের জীবন ইতিহাস থেকে জানা যায়, তার দাদা আব্দুল মুত্তালিবসহ তার সকল চাচা ও ফুফুরা কবি ছিলেন; মুহাম্মদের মাতা আমিনাও ছিলেন একজন কবি; এবং তাদের কবিতার সূত্র আজও খুঁজে পাওয়া যায়। পিতা আব্দুল্লাহ আকালপ্রয়াত হওয়ায় তাঁর কাব্য প্রতিভার কথা জানা যায় না, তবে তাঁরও কাব্য প্রতিভা ছিল নিশ্চিত বলা যায়। মুহাম্মদেরও চার লাইনের একটি কবিতার খোঁজ পাওয়া যায় এখনও; এই ধারাবাহিকের কোনো এক পর্বে সে চার লাইন কবিতাও প্রকাশ করা হবে।
মুহাম্মদের কাব্য প্রতিভা, যা তার বয়স চল্লিশ পেরুনোর আগে সুপ্ত ছিল; তাই নতুন ভাষা এবং নতুন ধারায় মুহাম্মদের দ্বিতীয় সত্তা (জিব্রাইল ও আল্লাহ্) কতৃক প্রকাশিত হতে থাকে কোরআন নামে। মুহাম্মদের প্রকাশিত প্রতিটি আয়াতের ভাষা এবং ছান্দিক কাব্যসুর একটি নতুন ধারার সৃষ্টি করে; যা তৎকালীন আরবের কবিতাপ্রিয় মানুষদের সামনে নতুন মোহগ্রস্ততার পথ খুলে দেয়। মুহাম্মদ নিজেও তার এই অসাধারণ গুনের কথা উল্লেখ করেছেন; (অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমাকে পাঠানো হয়েছে)।
"Narrated Abu Huraira: Allah's Messenger (pbuh) said, "I have been sent with the shortest expressions bearing the widest meanings, and I have been made victorious with terror (cast in the hearts of the enemy), and while I was sleeping, the keys of the treasures of the world were brought to me and put in my hand." Abu Huraira added: Allah's Messenger (pbuh) has left the world and now you, people, are bringing out those treasures (i.e. the Prophet did not benefit by them). (Sahih al-Bukhari, Vol. 4, Book 52, Hadith 220)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন: আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমাকে পাঠানো হয়েছে এবং শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি নিদ্রায় ছিলাম, তখন পৃথিবীর ধনভাণ্ডার সমূহের চাবি আমার হাতে দেয়া হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো চলে গেছেন আর তোমরা ওগুলো বাহির করছ। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৯৭৭, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস, তাওহীদ পাবলিকেশন্স)
ধর্মকারীর বন্ধুদের জন্য কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২য় পর্ব; এই পর্বেও থাকছে ধারাবহিকভাবে ছয় অংশ। অনুবাদের ভাষা ৫০ টির বেশি বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৭ম প্রকাশ; সূরা এখলাস (১১২) (নিখাদ) ৪ আয়াত:
১. বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,
২. আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
৩. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি,
৪. এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৮ম প্রকাশ; সূরা আল গাশিয়াহ (৮৮) (কেয়ামত) ১৬ আয়াত:
১. আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি?
২. অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে লাঞ্ছিত,
৩. ক্লিষ্ট, ক্লান্ত।
৪. তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে।
৫. তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে।
৬. কন্টকপূর্ণ ঝাড় ব্যতীত তাদের জন্যে কোনো খাদ্য নেই।
৭. এটা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধায়ও উপকার করবে না।
৮. অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে, সজীব,
৯. তাদের কর্মের কারণে সন্তুষ্ট।
১০. তারা থাকবে, সুউচ্চ জান্নাতে।
১১. তথায় শুনবে না কোনো অসার কথাবার্তা ।
১২. তথায় থাকবে প্রবাহিত ঝরণা।
১৩. তথায় থাকবে উন্নত সুসজ্জিত আসন।
১৪. এবং সংরক্ষিত পানপাত্র
১৫. এবং সারি সারি গালিচা
১৬. এবং বিস্তৃত বিছানো কার্পেট।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯ম প্রকাশ; সূরা আত তারিক (৮৬) (রাত্রিতে যে উপস্থিত হয়) শেষ ৭ আয়াত:
১১. শপথ চক্রশীল আকাশের
১২. এবং বিদারনশীল পৃথিবীর শপথ
১৩. নিশ্চয় কোরআন সত্য-মিথ্যার ফয়সালা।
১৪. এবং এটা উপহাস নয়।
১৫. তারা ভীষণ চক্রান্ত করে,
১৬. আর আমিও কৌশল করি।
১৭. অতএব, কাফেরদেরকে অবকাশ দিন, তাদেরকে অবকাশ দিন, কিছু দিনের জন্যে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১০ম প্রকাশ; সূরা আল ইনফিতার (৮২) (বিদীর্ণ হওয়া) ৫ আয়াত:
১. যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে,
২. যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে,
৩. যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে,
৪. এবং যখন কবরসমূহ উন্মোচিত হবে,
৫. তখন প্রত্যেকে জেনে নেবে সে কী অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কী পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১১তম প্রকাশ; সূরা আশ-শামস (৯১) (সূর্য) ১০ আয়াত:
১. শপথ সূর্যের ও তার কিরণের,
২. শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে,
৩. শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে,
৪. শপথ রাত্রির যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে,
৫. শপথ আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন, তাঁর।
৬. শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর,
৭. শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন, তাঁর,
৮. অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন,
৯. যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সে-ই সফলকাম হয়।
১০. এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১২তম প্রকাশ; সূরা আল আ’লা (৮৭) (মহীয়ান) ৭ আয়াত:
১. তুমি তোমার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা কর
২. যিনি সৃষ্টি করেন ও সুবিন্যস্ত করেন।
৩. এবং যিনি সুপরিমিত করেন ও পথ প্রদর্শন করেন
৪. এবং যিনি তৃণাদি উৎপন্ন করেন,
৫. অতঃপর তাকে কাল খড়-কুটায় পরিণত করেন ।
৬. আমি তোমাকে পাঠ করাতে থাকব, ফলে তুমি বিস্মৃত হবে না
৭. আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়।
কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা অধ্যায় - গোপন প্রচারের তিন বছর (পর্ব ০৩)
লিখেছেন নরসুন্দর
মানুষ
{সূরা আলাকের (৯৬)
প্রথম ৫ আয়াত প্রকাশের পর; একটানা প্রায় দুইমাস আয়াত প্রকাশকালীন
বিরতি ছিল, একাধারে ফুফু এবং স্ত্রী খাদিজা, সাথে খাদিজার
ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফলের মানসিক সহযোগীতায় মুহাম্মদ কবির বদলে নবীতে বদলে যান;
এরপর
থেকে নিয়মিত বিরতিতে নবী মুহাম্মদ আয়াত প্রকাশ করতে থাকেন। বিভিন্ন পরিবেশ এবং পরিস্থিতি মুহাম্মদের ভেতর ভিন্ন ভিন্ন ধরণের
মনোবৃত্তির জন্ম দেয়; এবং
তার পরিপ্রেক্ষিতে ক্রমাগত আয়াত প্রকাশ হতে থাকে।
একজন কবি
যেভাবে পথ চলতে চলতে অবচেতনে তার সৃষ্ট কবিতার লাইন খুঁজে পান; অথবা
প্রকৃতি বা প্রেমিকা যেভাবে তাঁকে লেখার ইন্ধন দেয়, মুহাম্মদও
তার ব্যতিক্রম ছিলেন না; কেবলমাত্র
প্রেমিকার স্থলে তার নবদীক্ষিত অনুসারীদের প্রশ্ন
এবং আল্লাহ্ ও কেয়ামত সম্পর্কে মুহাম্মদের দৃষ্টিভঙ্গী জ্রিবাইল নামক কল্পনার বার্তাবাহকের সাহায্যে আয়াত হিসাবে অবচেতনে জমা
হতে থাকে। একজন কবি যেভাবে
মাথার ভেতর চলতে থাকা কবিতার লাইন কাগজ কলমে প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত যন্ত্রণায় ভোগেন, মুহাম্মদও তার বাইরে ছিলেন না; এর সাথে যুক্ত হয় পাঁচ বছর বয়স
থেকে ফিট হওয়া বা জ্ঞান হারানোর রোগের সংমিশ্রণ।
হাদিসওে ওপরের বক্তব্যের প্রমাণ মেলে:
উম্মুল
মু’মিনীন
‘আয়িশা
(রাঃ) বর্ণনা করেছেন: হারিস ইব্নু
হিশাম (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর
রসূল! আপনার নিকট ওয়াহী কিরূপে আসে?’
আল্লাহর
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ [কোন কোন সময় তা ঘন্টা বাজার মত আমার নিকট আসে। আর এটি-ই আমার উপর সবচেয়ে বেদনাদায়ক হয় এবং তা শেষ হতেই মালাক (ফেরেশতা) যা বলেন তা আমি মুখস্ত করে
নিই, আবার কখনো মালাক
মানুষের রূপ ধারণ করে আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্ত করে নিই।] ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তীব্র শীতের সময় ওয়াহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওয়াহী শেষ হলেই তাঁর ললাট হতে ঘাম ঝরে পড়ত। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২, হাদিসের
মান: সহিহ হাদিস, তাওহীদ পাবলিকেশন্স।)
উম্মুল
মু’মিনীন
‘আয়িশা
(রাঃ) বর্ণনা করেছেন: তিনি বলেন,
আল্লাহর
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সর্বপ্রথম
যে ওয়াহী আসে, তা ছিল নিদ্রাবস্থায় বাস্তব স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে প্রভাতের আলোর ন্যায়
প্রকাশিত হতো। অতঃপর তাঁর
নিকট নির্জনতা পছন্দনীয় হয়ে দাঁড়ায় এবং তিনি ‘হেরা’র
গুহায় নির্জনে অবস্থান করতেন। আপন
পরিবারের নিকট ফিরে এসে কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে
নিয়ে যাওয়ার পূর্বে- এভাবে সেখানে তিনি এক নাগাড়ে বেশ কয়েক দিন ‘ইবাদাতে মগ্ন থাকতেন। অতঃপর খাদীজা (রাঃ)-এর নিকট ফিরে এসে আবার একই সময়ের
জন্য কিছু খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যেতেন। এভাবে ‘হেরা’
গুহায়
অবস্থানকালে তাঁর নিকট ওয়াহী আসলো। তাঁর
নিকট ফেরেশতা এসে বললো, ‘পাঠ করুন।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেনঃ [“আমি বললাম, ‘আমি পড়তে জানি
না।] তিনি
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অতঃপর সে আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলো যে, আমার খুব
কষ্ট হলো। অতঃপর
সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ‘পাঠ
করুন।’
আমি
বললামঃ আমি তো পড়তে জানি না।’ সে দ্বিতীয় বার
আমাকে
জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলো যে, আমার খুব কষ্ট হলো। অতঃপর সে
আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
‘পাঠ
করুন।’
আমি
উত্তর দিলাম, ‘আমি তো পড়তে জানি না।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন, অতঃপর তৃতীয়বারে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। তারপর ছেড়ে
দিয়ে বললেন, “পাঠ করুন আপনার রবের
নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত পিন্ড থেকে, পাঠ করুন, আর আপনার রব
অতিশয় দয়ালু”- (সূরা আলাক্ব ৯৬/১-৩); অতঃপর এ আয়াত
নিয়ে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- প্রত্যাবর্তন করলেন। তাঁর হৃদয় তখন কাঁপছিল। তিনি
খাদীজা বিন্তু খুওয়ায়লিদের
নিকট এসে বললেন, ‘আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর’, ‘আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর।’ তাঁরা তাঁকে চাদর দ্বারা আবৃত করলেন। এমনকি
তাঁর শংকা দূর হলো। তখন তিনি
খাদীজা (রাঃ) এর নিকট ঘটনাবৃত্তান্ত জানিয়ে তাঁকে বললেন, আমি আমার
নিজেকে নিয়ে শংকা বোধ করছি। খাদীজা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, কখনই নয়। আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়–স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন,
অসহায়
দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন,
নিঃস্বকে
সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্থকে
সাহায্য করেন। অতঃপর তাঁকে নিয়ে
খাদীজা (রাঃ) তাঁর চাচাত ভাই ওয়ারাকাহ ইব্নু নাওফাল ইব্নু ‘আবদুল আসাদ ইব্নু ‘আবদুল ‘উযযাহ’র নিকট গেলেন, যিনি অন্ধকার যুগে ‘ঈসায়ী ধর্ম গ্রহন করেছিলেন। যিনি ইবরানী ভাষায় লিখতে পারতেন এবং আল্লাহর তাওফীক অনুযায়ী
ইবরানী ভাষায় ইনজীল হতে ভাষান্তর করতেন। তিনি ছিলেন অতি বৃদ্ধ এবং
অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বললেন, ‘হে চাচাত ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন।’ ওয়ারাকাহ তাঁকে
জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাতিজা! তুমি কী দেখ?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা দেখেছিলেন, সবই বর্ণনা করলেন। তখন ওয়ারাকাহ তাঁকে বললেন,
এটা সেই বার্তাবাহক যাকে আল্লাহ মূসা (‘আঃ)- এর নিকট
পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! আমি
যদি সেদিন যুবক থাকতাম। আফসোস
! আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার কওম তোমাকে বহিষ্কার করবে।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বললেন, [‘তারা কি আমাকে বের করে দেবে?’] তিনি
বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যা নিয়ে এসেছো অনুরূপ (ওয়াহী) কিছু যিনিই নিয়ে এসেছেন তাঁর সঙ্গেই
বৈরিতাপূর্ণ আচরণ করা হয়েছে। সেদিন
যদি আমি থাকি, তবে তোমাকে জোরালোভাবে সাহায্য করব। এর কিছুদিন পর ওয়ারাকাহ (‘আঃ) ইন্তিকাল করেন। আর
ওয়াহীর বিরতি ঘটে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩, হাদিসের
মান: সহিহ হাদিস, তাওহীদ পাবলিকেশন্স।)
নবদীক্ষিত অনুসারী ও মক্কাবাসীদের আগ্রহ প্রকাশের সাথে সাথে আয়াতের
দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে এবং কোরআনের
আয়াত মক্কার দ্বিতীয় অধ্যায়ে প্রশ্ন-উত্তর খেলায় পরিণত হয়; মুহাম্মদের
আয়াত প্রকাশের এই ধারাবাহিকতার আসল মজা শুরু হয় গোপন প্রচারের তিন বছরের শেষে ১১১ নং সূরা আল লাহাব (আল মাসদ) প্রকাশের সময়
থেকে। বিস্তারিত জানতে এই ধারাবাহিকের সঙ্গেই থাকুন।
ধর্মকারীর
বন্ধুদের জন্য, কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ৩য় পর্ব;
এই
পর্বেও থাকছে ধারাবহিক ভাবে ছয় অংশ। অনুবাদের ভাষা ৫০ টির বেশি বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১৩ম প্রকাশ; সূরা আল বুরুজ (৮৫) (নক্ষত্রপুঞ্জ) ২২ আয়াত:
১. শপথ গ্রহ-নক্ষত্র
শোভিত আকাশের,
২. এবং
প্রতিশ্রুত দিবসের,
৩. এবং সেই
দিবসের, যে উপস্থিত হয় ও যাতে উপস্থিত হয়
৪. অভিশপ্ত
হয়েছে গর্ত ওয়ালারা অর্থাৎ,
৫. অনেক
ইন্ধনের অগ্নিসংযোগকারীরা;
৬. যখন তারা
তার কিনারায় বসেছিল।
৭. এবং তারা
বিশ্বাসীদের সাথে যা করেছিল, তা নিরীক্ষণ করছিল।
৮. তারা
তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিল শুধু এ কারণে যে, তারা
প্রশংসিত, পরাক্রান্ত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল,
৯. যিনি
নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের ক্ষমতার মালিক, আল্লাহর সামনে রয়েছে সবকিছু।
১০. যারা
মুমিন পুরুষ ও নারীকে নিপীড়ন করেছে, অতঃপর তওবা করেনি, তাদের
জন্যে আছে জাহান্নামের শাস্তি, আর আছে দহন যন্ত্রণা,
১১. যারা
ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্যে আছে জান্নাত, যার তলদেশে
প্রবাহিত হয় নির্ঝরিণীসমূহ। এটাই মহাসাফল্য।
১২. নিশ্চয়
তোমার পালনকর্তার আক্রমণ অত্যন্ত কঠিন।
১৩. তিনিই
প্রথমবার অস্তিত্ব দান করেন এবং পুনরায় জীবিত করেন।
১৪. তিনি
ক্ষমাশীল বন্ধু;
১৫. মহান
আরশের অধিকারী।
১৬. তিনি যা
চান, তাই করেন।
১৭. তোমর
কাছে (হে মুহাম্মদ) সৈন্যবাহিনীর ইতিবৃত্ত পৌঁছেছে কি?
১৮. ফেরাউনের
এবং সামুদের?
১৯. বরং যারা
কাফের, তারা মিথ্যারোপে রত আছে।
২০. আল্লাহ
তাদেরকে পশ্চাৎদেশ থেকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন।
২১. বরং এটা
মহান কোরআন,
২২. লওহে
মাহফুযে লিপিবদ্ধ।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১৪ম প্রকাশ; সূরা আত তাকভীর (৮১) (গুটিয়ে নেওয়া) ২৯ আয়াত:
১. যখন সূর্য
আলোহীন হয়ে যাবে,
২. যখন
নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে,
৩. যখন
পর্বতমালা অপসারিত হবে,
৪. যখন দশ
মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রীসমূহ উপেক্ষিত হবে;
৫. যখন বন্য
পশুরা একত্রিত হয়ে যাবে,
৬. যখন
সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে,
৭. যখন
আত্মাসমূহকে যুগল করা হবে,
৮. যখন জীবন্ত
প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে,
৯. কী অপরাধে
তাকে হত্য করা হল?
১০. যখন
আমলনামা খোলা হবে,
১১. যখন
আকাশের আবরণ অপসারিত হবে,
১২. যখন
জাহান্নামের অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করা হবে
১৩. এবং যখন
জান্নাত সন্নিকটবর্তী হবে,
১৪. তখন
প্রত্যেকেই জেনে নেবে সে কী উপস্থিত করেছে।
১৫. আমি শপথ
করি যেসব নক্ষত্রগুলো পশ্চাতে সরে যায়।
১৬. চলমান হয়
ও অদৃশ্য হয়,
১৭. শপথ
নিশাবসান ও
১৮. প্রভাত
আগমন কালের,
১৯. নিশ্চয়
কোরআন সম্মানিত রসূলের আনীত বাণী,
২০. যিনি
শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাশালী,
২১. সবার
মান্যবর, সেখানকার বিশ্বাসভাজন।
২২. এবং
তোমাদের সাথী ক্ষিপ্ত নন।
২৩. তিনি সেই
ফেরেশতাকে প্রকাশ্য দিগন্তে দেখেছেন।
২৪. তিনি
অদৃশ্য বিষয় বলতে কৃপণতা করেন না।
২৫. এটা
বিতাড়িত শয়তানের উক্তি নয়।
২৬. অতএব,
তোমরা
কোথায় যাচ্ছ?
২৭. এটা তো
কেবল বিশ্বাবাসীদের জন্যে উপদেশ,
২৮. তার
জন্যে, যে তোমাদের মধ্যে সোজা চলতে চায়।
২৯. তোমরা
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১৫ম প্রকাশ; সূরা আল ইনশিরাহ (৯৪) (প্রশস্তকরণ) ৮ আয়াত:
১. আমি কি
আপনার বক্ষ উম্মুক্ত করে দিইনি?
২. আমি লাঘব
করেছি আপনার বোঝা,
৩. যা ছিল
আপনার জন্যে অতিশয় দুঃসহ।
৪. আমি আপনার
আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি।
৫. নিশ্চয়
কষ্টের সাথে সুখ রয়েছে।
৬. নিশ্চয়
কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।
৭. অতএব,
যখন
অবসর পান, পরিশ্রম করুন।
৮. এবং আপনার
পালনকর্তার প্রতি মনোনিবেশ করুন।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১৬ম প্রকাশ; সূরা আদ দুহা (৯৩) (মধ্যাহ্ন) ১১ আয়াত:
১. শপথ
পূর্বাহ্নের,
২. শপথ
রাত্রির যখন তা গভীর হয়,
৩. আপনার
পালনকর্তা আপনাকে ত্যাগ করেনি এবং আপনাকে শত্রু স্থির করেনি।
৪. আপনার
জন্যে পরকাল ইহকাল অপেক্ষা শ্রেয়।
৫. আপনার
পালনকর্তা সত্বরই আপনাকে দান করবেন, অতঃপর আপনি সন্তুষ্ট হবেন।
৬. তিনি কি
আপনাকে এতিমরূপে পাননি ? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন।
৭. তিনি
আপনাকে পেয়েছেন বিপথগামী, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন।
৮. তিনি
আপনাকে পেয়েছেন নির্ধন, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন।
৯. সুতরাং আপনি
এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না;
১০. প্রার্থীকে
ধমক দেবেন না।
১১. এবং
আপনার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১৭তম প্রকাশ;
সূরা আন নাস (১১৪) (মানবজাতি) ৬ আয়াত:
১. বলুন,
আমি
আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার,
২. মানুষের
অধিপতির,
৩. মানুষের
মা’বুদের
৪. তার
অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে,
৫. যে
কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে
৬. জ্বিনের
মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১৮তম প্রকাশ;
সূরা আন নাযিয়াত (৭৯) (আকর্ষণকারী) ২৬ আয়াত:
১. শপথ সেই
ফেরেশতাগণের, যারা ডুব দিয়ে আত্মা উৎপাটন করে,
২. শপথ তাদের,
যারা
আত্মার বাঁধন খুলে দেয় মৃদুভাবে;
৩. শপথ তাদের,
যারা
সন্তরণ করে দ্রুতগতিতে,
৪. শপথ তাদের,
যারা
দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয় এবং
৫. শপথ তাদের,
যারা
সকল কর্মনির্বাহ করে, কেয়ামত অবশ্যই হবে।
৬. যেদিন
প্রকম্পিত করবে প্রকম্পিতকারী,
৭. অতঃপর
পশ্চাতে আসবে পশ্চাদগামী;
৮. সেদিন
অনেক হৃদয় ভীত-বিহবল হবে।
৯. তাদের
দৃষ্টি নত হবে।
১০. তারা বলে:
আমরা কি উলটো পায়ে প্রত্যাবর্তিত হবই
১১. গলিত
অস্থি হয়ে যাওয়ার পরও?
১২. তবে তো
এ প্রত্যাবর্তন সর্বনাশা হবে!
১৩. অতএব,
এটা
তো কেবল এক মহা চিৎকার,
১৪. তখনই
তারা ময়দানে আবির্ভূত হবে।
১৫. মূসার
বৃত্তান্ত আপনার কাছে
পৌঁছেছে কি?
১৬. যখন তার
পালনকর্তা তাকে পবিত্র তুয়া উপত্যকায় আহবান করেছিলেন,
১৭. ফেরাউনের
কাছে যাও, নিশ্চয় সে সীমালংঘন করেছে।
১৮. অতঃপর বল:
তোমার পবিত্র হওয়ার আগ্রহ আছে কি?
১৯. আমি
তোমাকে তোমার পালনকর্তার দিকে পথ দেখাব, যাতে তুমি
তাকে ভয় কর।
২০. অতঃপর সে
তাকে মহা-নিদর্শন দেখাল।
২১. কিন্তু
সে মিথ্যারোপ করল এবং অমান্য করল।
২২. অতঃপর সে
প্রতিকার চেষ্টায় প্রস্থান করল।
২৩. সে সকলকে
সমবেত করল এবং সজোরে আহবান করল,
২৪. এবং বলল:
আমিই তোমাদের সেরা পালনকর্তা।
২৫. অতঃপর
আল্লাহ তাকে পরকালের ও ইহকালের শাস্তি দিলেন।
২৬. যে ভয়
করে তার জন্যে অবশ্যই এতে শিক্ষা রয়েছে।
কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা অধ্যায় - গোপন প্রচারের তিন বছর (পর্ব ০৪)
লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
{প্রশ্ন জাগতে পারে, অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে কোরআন পাঠে লাভ কী? আর নবী মুহাম্মদের জীবন জানার জন্য এর কী ভূমিকা আছে? আজ তার উত্তর দেবার পালা; এটাকে আত্মপ্রচারও বলা যেতে পারে!
মূলত নবী মুহাম্মদের মৃত্যুর দশ বছরের মধ্যে ইসলাম ধর্ম সিরিয়া, মিশর,
ইরাক, ইরান পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে, অ-আরবীয় মুসলমানের সংখ্যা বাড়তে থাকে
হু হু করে; ইচ্ছা অথবা অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবার মনে নবী মুহাম্মদ এবং
আল্লাহকে জানার প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়; আর এই আগ্রহই শেষ পর্যন্ত কোরআন
সংকলন, নবী-জীবনী রচনা আর হাদিস চর্চার জন্য মূল নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়।
খোলা চোখে দেখলে বোঝা যায়, কোরআন ছাড়া মুহাম্মদের যত প্রাচীন জীবনী এবং
হাদিস সংকলন আমরা দেখি, তার রচয়িতার ৯৯ ভাগই বংশসুত্রে হিজাজ-এর (তাবুক
থেকে মদিনা, মক্কা হয়ে তাইফ পর্যন্ত) নাগরিক নন; এবং সবার দৃষ্টিভঙ্গির
আত্মপ্রকাশ শুরুই হয়েছে বিস্ময়ের চোখে মুহাম্মদকে দেখা থেকে; আর এ কারণেই
হয়ত ১৪০০ বছরের ইতিহাসে একটি পূর্ণাঙ্গ নিরপেক্ষ নবী মুহাম্মদের জীবনীর
জন্ম দিতে পারেননি; ইবনে ইসাহাক, মামর ইবনে রশিদ, আল ওয়াকেদী, ইবনে সাদ,
তাবারী সহ কোনও মুসলমানই! ক্রমশ সবাই সত্যের নামে মিথের জন্ম ও চর্চা করে
গেছেন বিশ্বাস আর ভালবাসা থেকে। হাদিস সংকলনের ক্ষেত্রে মিথ্যা আর মিথের
চর্চা হয়েছে সবচেয়ে বেশি (সবচেয়ে প্রথম সংকলিত হাদিস সংকলনে প্রায় ১৫০০ জাল
এবং যইফ হাদিস আছে); সত্যিকার অর্থে কোরআনের ব্যাখ্যা তাফসীর-কে চিন্তার
আওতায় না নিলে, কোরআন সংকলন সবচেয়ে কম মিথ আর মিথ্যার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে!
নবী মুহাম্মদ-এর বদলে একজন মানুষ মুহাম্মদ-এর
জীবন বোঝার ক্ষেত্রে তাই কোরআনকে প্রকাশ করার ধারাবাহিকতা অনুসারে বন্টন
না করে কাজ এগুতে পারে না মোটেই; কিন্তু প্রশ্ন জাগে: তা কেন?
একটি চতুমার্ত্রিক মানুষ মুহাম্মদ-এর জীবনী লেখার জন্য। কারণ বর্তমানে প্রাপ্ত সকল জীবনী মুহাম্মদের কেবলমাত্র ২৫ ভাগ প্রকাশ করে!
এ কারণেই
প্রথমত: প্রকাশ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে কোরআনকে বন্টন করা দরকার।
দ্বিতীয়ত: সকল হাদিসের একটি সময়ক্রমিক ধারাবাহিক সারাংশ সংকলন করা উচিত।
তৃতীয়ত:
নবী মুহাম্মদকে বেষ্টন করে থাকা পরিবার-পরিজন, শত্রু-মিত্র, সাহাবী,
দাস-দাসী, পরিবেশ-পরিস্থিতি ও বিশ্বাসকে সময় অনুসারে ব্যাখ্যা এবং বন্টনের
সংকলন করা দরকার।
এই তিনটি বিষয় একত্রিত করতে পারলেই সত্যিকার অর্থে একটি পূর্ণাঙ্গ মানুষ মুহাম্মদ-এর জীবনী লেখা সম্ভব হতে পারে।
এই সিরিজটিতে ধারাবাহিকতা অনুসারে কোরআনকে বন্টন করার চেষ্টা মানুষ মুহাম্মদ
নামে মুহাম্মদের জীবনী সংকলন-এর প্রথম পর্বের কাজ শেষ করার প্রকাশ মাত্র।
এই ধারাবাহিকটি শেষ হবার পর বিছিন্ন ভাবে প্রাপ্ত প্রায় ৪১ হাজার হাদিসকে
একত্রিত করে সময়ক্রমিক হাদিস সংকলন সংক্ষেপ প্রকাশ শুরু করা হবে (৬০ ভাগ
কাজ হয়ে আছে); মনে রাখা উচিত, মৌলিক হাদিসের সংখ্যা ৩ থেকে ৪ হাজারের মধ্যে।
তৃতীয় অংশের সময়ক্রমিক ব্যাখ্যা ও বন্টনের জন্য আপাতত হাতে নিতে হয়েছে
প্রায় ১০০ টি আলাদা আলাদা লেবেল চিহ্নিত স্পাইরাল ফাইল (কাজ চলছে - দুটি ছবি সংযুক্ত করে দিচ্ছি)!
নবী মুহাম্মদের জীবনের যত অলৌকিক ঘটনার বর্ণনা, তার বেশির ভাগই কোরআন-হাদিস দিয়েই অকার্যকর প্রমাণ করা সম্ভব। (এই ধারাবাহিকে চাঁদ দিখণ্ডিত হবার আয়াত প্রকাশের পর্বে তার একটি উদাহরণ দেওয়া থাকবে।)
যদিও তৃতীয় অংশের কাজ সরাসরি প্রকাশ করা হবে না; তবে সর্বশেষ কাজটি হবে একটি চতুমার্ত্রিক মানুষ মুহাম্মদ নামে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নবী মুহাম্মদের পূর্ণাঙ্গ নিরপেক্ষ জীবনী লেখা; যা ১৪০০ বছরের এই অপূর্ণতাকে পূর্ণ করতে পারে।
এই মানুষ মুহাম্মদ-এর প্রতি অধ্যায়ে কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ
সিরিজের প্রতিটি অংশ প্রকাশের কারণ এবং পরিস্থিতির বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া
যাবে; যতদিন সেটা না হচ্ছে, এই সিরিজটিও কোরআনের অনুবাদ পড়ার মতই রসকসহীন
মনে হওয়া স্বাভাবিক! তারপরেও মক্কা দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছর - পর্ব ০৭ থেকে প্রতি প্রকাশের সংক্ষিপ্ত কারণ তুলে দেবার চেষ্টা থাকবে।
এই কাজ করার আগ্রহ পাবার ক্ষেত্রে দু'জন মানুষের নাম আমি প্রাতঃস্মরণীয় হিসেবে উল্লেখ করতে চাই: প্রথম জন ইরানী স্কলার আলী দস্তি এবং দ্বিতীয় জন এই ধর্মকারীর কোরানে বিগ্যান সিরিজের লেখক গোলাপ মাহমুদ।
আর এক যুগ আয়ু পেলে এই কাজের পরিসমাপ্তি টানা সম্ভব হবে, আশা করি!
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ৪র্থ পর্ব; এই পর্বেও থাকছে ধারাবহিকভাবে ছয় অংশ। অনুবাদের ভাষা ৫০ টির বেশি বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১৯ তম প্রকাশ; সূরা আল মুদ্দাসসির (৭৪) (কম্বল আচ্ছাদিত ব্যাক্তি) ৮ থেকে ১০ আয়াত:
৮. যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে;
৯. সেদিন হবে কঠিন দিন,
১০. কাফেরদের জন্যে এটা সহজ নয়।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২০ তম প্রকাশ; সূরা আল লাইল (৯২) (রাত্রি) ২১ আয়াত:
১. শপথ রাত্রির, যখন সে আচ্ছন্ন করে,
২. শপথ দিনের, যখন সে আলোকিত হয়
৩. এবং তাঁর, যিনি নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন,
৪. নিশ্চয় তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা বিভিন্ন ধরনের।
৫. অতএব, যে দান করে এবং খোদাভীরু হয়,
৬. এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে,
৭. আমি তাকে সুখের বিষয়ের জন্যে সহজ পথ দান করব।
৮. আর যে কৃপণতা করে ও বেপরোয়া হয়
৯. এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে,
১০. আমি তাকে কষ্টের বিষয়ের জন্যে সহজ পথ দান করব।
১১. যখন সে অধঃপতিত হবে, তখন তার সম্পদ তার কোনোই কাজে আসবে না।
১২. আমার দায়িত্ব - পথ প্রদর্শন করা।
১৩. আর আমি মালিক ইহকালের ও পরকালের।
১৪. অতএব, আমি তোমাদেরকে প্রজ্বলিত অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি।
১৫. এতে নিতান্ত হতভাগ্য ব্যক্তিই প্রবেশ করবে,
১৬. যে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।
১৭. এ থেকে দূরে রাখা হবে খোদাভীরু ব্যক্তিকে,
১৮. যে আত্মশুদ্ধির জন্যে তার ধন-সম্পদ দান করে।
১৯. এবং তার ওপর কারও কোনো প্রতিদানযোগ্য অনুগ্রহ থাকে না।
২০. তার মহান পালনকর্তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ ব্যতীত।
২১. সে সত্বরই সন্তুষ্টি লাভ করবে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২১ তম প্রকাশ; সূরা আল মাআরিজ (৭০) (সোপানশ্রেণী), ৫ থেকে ১৮ আয়াত:
৫. অতএব, আপনি উত্তম সবর করুন।
৬. তারা এই আযাবকে সুদূরপরাহত মনে করে,
৭. আর আমি একে আসন্ন দেখছি।
৮. সেদিন আকাশ হবে গলিত তামার মত।
৯. এবং পর্বতসমূহ হবে রঙিন পশমের মত,
১০. বন্ধু বন্ধুর খবর নেবে না।
১১. যদিও একে অপরকে দেখতে পাবে। সেদিন গোনাহগার ব্যক্তি পনস্বরূপ দিতে চাইবে তার সন্তান-সন্ততিকে,
১২. তার স্ত্রীকে, তার ভ্রাতাকে,
১৩. তার গোষ্ঠীকে, যারা তাকে আশ্রয় দিত।
১৪. এবং পৃথিবীর সবকিছুকে, অতঃপর নিজেকে রক্ষা করতে চাইবে।
১৫. কখনোই নয়। নিশ্চয় এটা লেলিহান অগ্নি।
১৬. যা চামড়া তুলে দেবে।
১৭. সে সেই ব্যক্তিকে ডাকবে, যে সত্যের প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিল ও বিমুখ হয়েছিল।
১৮. সম্পদ পুঞ্জীভূত করেছিল, অতঃপর আগলিয়ে রেখেছিল।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২২ তম প্রকাশ; সূরা আশ-শামস (৯১) (সূর্য) ১১ থেকে ১৫ আয়াত:
১১. সামুদ সম্প্রদায় অবাধ্যতা বশতঃ মিথ্যারোপ করেছিল।
১২. যখন তাদের সর্বাধিক হতভাগ্য ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠেছিল।
১৩. অতঃপর আল্লাহর রসূল তাদেরকে বলেছিলেন: আল্লাহর উষ্ট্রী ও তাকে পানি পান করানোর ব্যাপারে সতর্ক থাক।
১৪. অতঃপর ওরা তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল এবং উষ্ট্রীর পা কর্তন করেছিল।
তাদের পাপের কারণে তাদের পালনকর্তা তাদের ওপর ধ্বংস নাযিল করে একাকার করে
দিলেন।
১৫. আল্লাহ তা’আলা এই ধ্বংসের কোনো বিরূপ পরিণতির আশংকা করেন না।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২৩ তম প্রকাশ; সূরা কুরাইশ (১০৬) (কুরাইশ গোত্র), ৪ আয়াত:
১. কোরাইশের আসক্তির কারণে,
২. আসক্তির কারণে তাদের শীত ও গ্রীষ্মকালীন সফরের।
৩. অতএব তারা যেন এবাদত করে এই ঘরের পালনকর্তার
৪. যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং ভয় থেকে তাদেরকে নিরাপদ করেছেন।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২৪ তম প্রকাশ; সূরা আল ফাজর (৮৯) (ভোরবেলা), ৩০ আয়াত:
১. শপথ ভোরবেলার,
২. শপথ দশ রাত্রির, শপথ তার,
৩. যা জোড় ও যা বিজোড়
৪. এবং শপথ রাত্রির, যখন তা গত হতে থাকে
৫. এর মধ্যে আছে জ্ঞানী ব্যক্তির জন্যে শপথ।
৬. আপনি কি লক্ষ্য করেননি, আপনার পালনকর্তা আদ বংশের ইরাম গোত্রের সাথে কী আচরণ করেছিলেন,
৭. যাদের দৈহিক গঠন স্তম্ভ ও খুঁটির ন্যায় দীর্ঘ ছিল এবং
৮. যাদের সমান শক্তি ও বলবীর্যে সারা বিশ্বের শহরসমূহে কোনো লোক সৃজিত হয়নি
৯. এবং সামুদ গোত্রের সাথে, যারা উপত্যকায় পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল।
১০. এবং বহু সৈন্য শিবিরের অধিপতি ফেরাউনের সাথে
১১. যারা দেশে সীমালঙ্ঘন করেছিল।
১২. অতঃপর সেখানে বিস্তর অশান্তি সৃষ্টি করেছিল।
১৩. অতঃপর আপনার পালনকর্তা তাদেরকে শাস্তির কশাঘাত করলেন।
১৪. নিশ্চয় আপনার পালকর্তা সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।
১৫. মানুষ এরূপ যে, যখন তার পালনকর্তা তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর সম্মান ও
অনুগ্রহ দান করেন, তখন বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে সম্মান দান করেছেন।
১৬. এবং যখন তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর রিযিক সংকুচিত করে দেন, তখন বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে হেয় করেছেন।
১৭. এটা অমূলক, বরং তোমরা এতিমকে সম্মান কর না।
১৮. এবং মিসকীনকে অন্নদানে পরস্পরকে উৎসাহিত কর না।
১৯. এবং তোমরা মৃতের ত্যাজ্য সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে কুক্ষিগত করে ফেল
২০. এবং তোমরা ধন-সম্পদকে প্রাণভরে ভালবাস।
২১. এটা অনুচিত। যখন পৃথিবী চুর্ণ-বিচুর্ণ হবে
২২. এবং আপনার পালনকর্তা ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে উপস্থিত হবেন,
২৩. এবং সেদিন জাহান্নামকে আনা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু এই স্মরণ তার কি কাজে আসবে?
২৪. সে বলবে, হায়, এ জীবনের জন্যে আমি যদি কিছু অগ্রে প্রেরণ করতাম!
২৫. সেদিন তার শাস্তির মত শাস্তি কেউ দেবে না।
২৬. এবং তার বন্ধনের মত বন্ধন কেউ দেবে না।
২৭. হে প্রশান্ত চিত্ত,
২৮. তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।
২৯. অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।
৩০. এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।
কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা অধ্যায় - গোপন প্রচারের তিন বছর (পর্ব ০৫)
লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
{পাঁচ ফুট সাত/আট ইঞ্চি উচ্চতার
ভুঁড়িহীন মোটাসোটা শরীর, চওড়া ঘাড় আর গোলাকার মুখমণ্ডলে একটু লম্বা বাঁকানো
নাক, জোড়া ভ্রূ, স্বল্প দৈর্ঘ্যের দাড়ি-গোফ আর কাঁধ পর্যন্ত লম্বা কালো
চুল; সেইসাথে গায়ের ত্বকে লালচে ফর্সা মানুষ মুহাম্মদ, প্রথম দর্শনে ভয় কাজ
করে; কিন্তু সময় দিলে স্বাভাবিক লাগে সবকিছুই; খুব কম হাসেন, দাঁত দেখান
না মোটেই; সময়ের সাথে সাথে মানুষ পড়তে পারার অসামান্য দক্ষতা আর নিয়ন্ত্রণ
করার ক্ষমতা তৈরি হয়েছে তাঁর; যে কোনো বিষয়বস্তুকে অল্প কথায় সহজে প্রকাশ
করতে পারেন!
বিশ্বাসহীন কথা বলেন না; আল্লাহ, ফেরেশতা, ইহকাল, পরকাল, বিচার, বেহেস্ত ও
দোযখে আস্থা তাঁর; বিশ্বাস করেন, তিনি আল্লাহ কর্তৃক নিয়োজিত একজন
পথপ্রর্দশক; নামাজ পড়তে পড়তে পা ফুলিয়ে ফেলেন; আকাশে মেঘ দেখলে কেয়ামত আসার
ভয়ে ভীতু হয়ে পড়েন!
মানুষ মুহাম্মদের সামান্য দিক এটুকু; কিন্তু এই মানুষটি তৈরি হয়েছেন কী
নিদারুণ সময়ের পরীক্ষায়, তা বুঝতে না পারলে কোরআন ও ইসলাম বুঝতে পারাও
অপূর্ণ থেকে যায়।
জন্মের আগেই হয়েছেন এতিম; প্রথম যাকে মা বলে চিনতে শিখেছেন, পাঁচ বছরে বয়সে
বুঝলেন, তিনি তাঁর নিজের মা নন; যখন আসল মা খুঁজে পেলেন; সেই সঙ্গ বছর
পেরুলো না; দাদা আর চাচার বাসায় পরাশ্রয়ীর মত বড় হতে থাকেন মুখচোরা
স্বল্পভাষী আত্মকেন্দ্রিক প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ হিসেবে। প্রতি বছর হজ্জ আর
ওকাজ মেলার সময় হাজার মানুষের আনাগোনা, গরীব-ধনীর বিভেদ; মরুভূমির কঠিন
জীবন, ১০ বছর পর পর কাবা ডুবিয়ে দেওয়া বন্যা; গোত্রে গোত্রে বিভেদ, অপূর্ণ
প্রথম প্রেম; প্রথম স্ত্রীর বাড়িতে ঘরজামাই জীবন; ছয়/সাত বছর বয়সের প্রথম
ছেলে সন্তানকে নিজের হাতে মাটিতে দাফন করার কষ্ট আর অতিরিক্ত মানসিক চাপের
সময় জ্ঞান হারানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে উনচল্লিশ বছর বয়সে এসে নিজেকে নবী হিসাবে আবিষ্কার করেন মুহাম্মদ। তারপরেই ক্রমশ পাল্টাতে থাকেন তিনি। ৬২ বছর
বয়সে যখন মারা যান, তখন তাঁর অনুগামীরা আল্লাহ আর মুহাম্মদের নামে পুরো
পৃথিবী জয় করার সাহসের সাথে সাথে বিনা দ্বিধায় মানুষের মুণ্ডু কাটার মত
মনোবলে বলীয়ান হয়ে ওঠে! কী ছিলো মুহাম্মদের মতবাদে? কেমন ছিলো তাঁর বেঁচে
থাকার প্রতিটি দিন? কেন তার মতবাদে বর্তমানেও সাধু আর জঙ্গি একসাথে তৈরি হয়? এসবের উত্তর জানতে প্রথমেই আমাদের নিতে হবে দর্শকের ভূমিকা; আমরা শুধু দেখতে থাকবো, কীভাবে একজন মানুষের ভেতর ডক্টর জেকিল এন্ড মিষ্টার হাইড (Strange Case of Dr Jekyll and Mr Hyde -1886, by Robert Louis Stevenson) একসাথে বেড়ে ওঠে!
নিচের ছবিটি ভালভাবে দেখে রাখুন; আগামী পর্বে এই ছবিটির ব্যাখ্যা আমাদের অনেক ধাঁধার জবাব দিয়ে দেবে; কারণ আমরা ক্রমশ মুহাম্মদের জীবনে প্রবেশ করতে শুরু করছি।
হাই রেজলুশনের মূল ছবিটির ডাউনলোড লিংক (১.৮৯ মেগাবাইট)
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ৫ম পর্ব; এই পর্বেও থাকছে ধারাবহিক ভাবে ছয় অংশ। অনুবাদের ভাষা ৫০ টির বেশি বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২৫ তম প্রকাশ; সূরা আল হুমাযাহ (১০৪) (পরনিন্দাকারী) ৯ আয়াত:
১. প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ,
২. যে অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে
৩. সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে!
৪. কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে।
৫. আপনি কি জানেন, পিষ্টকারী কী?
৬. এটা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত অগ্নি,
৭. যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে।
৮. এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে,
৯. লম্বা লম্বা খুঁটিতে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২৬ তম প্রকাশ; সূরা আল গাশিয়াহ (৮৮) (কেয়ামত) ১৭ থেকে ২৬ আয়াত:
১৭. তারা কি উষ্ট্রের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কীভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে?
১৮. এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কীভাবে উচ্চ করা হয়েছে?
১৯. এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কীভাবে স্থাপন করা হয়েছে?
২০. এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কীভাবে সমতল বিছানো হয়েছে?
২১. অতএব, আপনি উপদেশ দিন, আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা,
২২. আপনি তাদের শাসক নন,
২৩. কিন্তু যে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও কাফের হয়ে যায়,
২৪. আল্লাহ তাকে মহা আযাব দেবেন।
২৫. নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট,
২৬. অতঃপর তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্ব।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২৭ তম প্রকাশ; সূরা আত ত্বীন (৯৫) (ডুমুর) ৮ আয়াত
১. শপথ আঞ্জীর (ডুমুর) ও যয়তুনের,
২. এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তূর পর্বতের,
৩. এবং এই নিরাপদ নগরীর।
৪. আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।
৫. অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নিচ থেকে নিচে।
৬. কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে অশেষ পুরস্কার।
৭. অতঃপর কেন তুমি অবিশ্বাস করছ কেয়ামতকে ?
৮. আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক নন?
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২৮ তম প্রকাশ; সূরা আল ক্বিয়ামাহ্ (৭৫) (পুনরত্থান দিবস) ১৯ আয়াত
১. আমি শপথ করি কেয়ামত দিবসের,
২. আরও শপথ করি সেই মনের, যে নিজেকে ধিক্কার দেয়-
৩. মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করব না?
৪. পরন্ত আমি তার অঙ্গুলিগুলো পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম।
৫. বরং মানুষ তার ভবিষ্যৎ জীবনেও ধৃষ্টতা করতে চায়
৬. সে প্রশ্ন করে - কেয়ামত দিবস কবে?
৭. যখন দৃষ্টি চমকে যাবে,
৮. চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে।
৯. এবং সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে-
১০. সে দিন মানুষ বলবে: পলায়নের জায়গা কোথায়?
১১. না, কোথাও আশ্রয়স্থল নেই।
১২. আপনার পালনকর্তার কাছেই সেদিন ঠাঁই হবে।
১৩. সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে, সে যা সামনে প্রেরণ করেছে ও পশ্চাতে ছেড়ে দিয়েছে।
১৪. বরং মানুষ নিজেই তার নিজের সম্পর্কে চক্ষুষ্মান।
১৫. যদিও সে তার অজুহাত পেশ করতে চাইবে।
১৬. তাড়াতাড়ি শিখে নেয়ার জন্যে আপনি দ্রুত ওহী আবৃত্তি করবেন না।
১৭. এর সংরক্ষণ ও পাঠ আমারই দায়িত্ব।
১৮. অতঃপর আমি যখন তা পাঠ করি, তখন আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন।
১৯. এরপর বিশদ বর্ণনা আমারই দায়িত্ব।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২৯ তম প্রকাশ; সূরা আর রাহমান (৫৫) (পরম করুণাময়), ৮ আয়াত
১. করুণাময় আল্লাহ।
২. শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন,
৩. সৃষ্টি করেছেন মানুষ,
৪. তাকে শিখিয়েছেন বর্ণনা।
৫. সূর্য ও চন্দ্র হিসাবমত চলে।
৬. এবং তৃণলতা ও বৃক্ষাদি সেজদারত আছে।
৭. তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদণ্ড।
৮. যাতে তোমরা সীমালংঘন না কর তুলাদণ্ডে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৩০ তম প্রকাশ; সূরা আল আলা (৮৭) (মহীয়ান) ৮ থেকে ১৯ আয়াত
৮. আমি আপনার জন্যে সহজ শরীয়ত সহজতর করে দেবো।
৯. উপদেশ ফলপ্রসূ হলে উপদেশ দান করুন,
১০. যে ভয় করে, সে উপদেশ গ্রহণ করবে,
১১. আর যে, হতভাগা, সে তা উপেক্ষা করবে,
১২. সে মহা-অগ্নিতে প্রবেশ করবে।
১৩. অতঃপর সেখানে সে মরবেও না, জীবিতও থাকবে না।
১৪. নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়
১৫. এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামায আদায় করে।
১৬. বস্তুতঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,
১৭. অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী।
১৮. এটা লিখিত রয়েছে পূর্ববতী কিতাবসমূহে;
১৯. ইব্রাহীম ও মূসার কিতাবসমূহে।কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা অধ্যায় - গোপন প্রচারের তিন বছর (পর্ব ০৬)
লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
{মানুষের জীবনযাপন বোঝার সহজ উপায় হচ্ছে তার শহরের প্রাকৃতিক ও সামাজিক
পরিবেশ নিরীক্ষণ করা; মক্কার চারপাশটা যদি ঘুরে দেখা সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে
নবী জীবনের অনেক ঘটনার লৌকিক ব্যাখ্যা করা সম্ভব; সেই সুযোগ আমার হয়েছে,
মক্কা লাইব্রেরীর কিউরেটর আমার গাইড ছিলেন!
আসুন, সংক্ষেপে আজ মক্কা চেনা শুরু করি; গত পর্বের ছবিটির সাথে এই পর্বের ছবিটি ডাউনলোড করে জুম করে সিরিয়াল অনুসারে দেখতে থাকুন।
৫৫৫০ x ২৮১০ রেজলুশনের মূল ছবিটির ডাউনলোড লিংক (৩ মেগাবাইট)
১: এটি
মুহাম্মদের জন্মস্থান; ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত মুহাম্মদ এখানেই ছিলেন; বড় হলুদ
বৃত্তটি মুহাম্মদের বানু হাশিম গোত্রের এলাকা; বানু হাশিম গোত্রের ১০ টি
উপগোত্র ছিল; এটি মক্কা শহরের পূর্বের সীমা।
২: এই অংশে
ছিল খাদিজার বাসা, মুহাম্মদ ২৫ থেকে ৫৩ বছর বয়স পর্যন্ত এই বাড়িতেই ছিলেন;
মুহাম্মদের চাচা আবু লাহাব (আব্দুল উজ্জা) ছিলেন খাদিজার প্রতিবেশী; তাদের
দুজনের বাড়ির দেওয়াল একসাথে সংযুক্ত ছিল।
৩: এটি সাফা
পাহাড়ের চূড়া (উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট); এর ওপর থেকেই মুহাম্মদ জনসমুক্ষে
ইসলাম প্রচার শুরু করেন। সাফা কাবা থেকে ৩৩০ ফুট দূরত্বে অবস্থিত।
৪: এটি মারওয়া
পাহাড়ের চূড়া (মারওয়া-কে পাহাড় না বলে উঁচু টিলা বলা যুক্তিযুক্ত); এর
পাশেই ছিল জাবির নামে এক কর্মকারের দোকান; মুহাম্মদ এখানে সময় কাটাতেন মাঝে
মধ্যেই। ৩ এবং ৪ এর মাঝের দূরত্ব প্রায় ১২০০ ফুট। মারওয়া কাবা থেকে ১১০০
ফুট দূরত্বে অবস্থিত।
৫: এই অংশে
বাস করতেন মুহাম্মদের পারিবারিক চাচা আবু জেহেল (উমার ইবনে হিশাম/ আবু
হাকাম); মুহাম্মদ বদর যুদ্ধের সময় তাঁকে মুসলমানদের ফেরাউন বলেছিলেন।
৬: সাফা
পাহাড়ের পাদদেশের এই অংশে ছিল আরকাম-এর বাসা, এই বাসাকে মুহাম্মদ তাঁর
অনুসারীদের নিয়ে আলোচনা আর ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করেছিলেন
৬১৪ সাল থেকে।
৭: মুহাম্মদের চাচা আব্বাস ঠিক এই অংশে বাস করতেন।
৮: এটি জমজম কুপের অবস্থান এলাকা।
৯: এটি নবী মুহাম্মদের প্রথম প্রেম এবং মেরাজ নামক গল্প তৈরির স্থান - মানে উম্মে হানির বসবাসের স্থান।
১০: এটি নবী
মুহাম্মদের একমাত্র বন্ধু, পরামর্শক, শ্বশুর আবু বকর-এর বাসস্থানের এলাকা;
মুহাম্মদ প্রতিদিন একবার অবশ্যই এখানে আসতেন; এটি মক্কা শহরের পশ্চিম সীমার
শেষ অংশ বলতে পারেন; ১ থেকে ১০ এর দূরত্ব এক মাইলের একটু বেশি; বলতে পারেন
দেড় কিলোমিটার।
১১: এটি
জান্নাতুল মালা কবরস্থান; মক্কা থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান;
এখানে মুহাম্মদদের দাদা, চাচা, সন্তান এবং খাদিজার কবর আছে। হেঁটে হেঁটে
হেরা গুহায় যেতে হলে জান্নাতুল মালা কবরস্থানের পাশ দিয়েই যেতে হয়।
১২: এটি হেরা গুহার পাহাড় (জবলে নূর); হেরা-কে গুহা বলা আর বেড়ালকে বাঘ বলা একই কথা। এর আকার (১২ বাই ৫১/৪ বাই ৭) বর্গফুট মাত্র;
এখান থেকে মক্কা শহরকে দেখা যায়। এর অবস্থান মক্কা থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তর
পূর্বে। মুহাম্মদ তার প্রথম সন্তানের মৃত্যু; মক্কা ডুবিয়ে-দেওয়া বন্যা,
আলীকে প্রতিপালনের জন্য নিয়ে আসা আর কাবা পুননির্মাণের সময় থেকে হেরায়
নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন। এ সময় মুহাম্মদের বয়স ছিল ৩৫।
১৩: এটি মিনা
এলাকা; এর অবস্থান মক্কা থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বে। এখানে শয়তানকে পাথর
মারার প্রথা পালন করা হয়। চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার মিথ জন্ম নেয় এখান থেকেই।
মক্কা, মাত্র দেড় কিলোমিটারে ঘুরপাক খাওয়া একটি শহর; জনসংখ্যা ১৫০০ থেকে ২০০০ জনের মধ্যে;
পানির সহজলভ্যতা এই শহরকে লম্বা মরুভূমি যাত্রার বিশ্রামস্থল হিসেবে বাড়তে
সাহায্য করেছে; তার সাথে বেদুঈন আর হিজাজের শতাধিক গোত্রের বিনোদন ও ধর্ম
পালনের স্থান হিসেবে গড়ে ওঠে মক্কা। মুহাম্মদের ইসলাম প্রচার ৬১০ থেকে ৬২০
খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই দেড় কিলোমিটারেই বৃত্তবন্দী থেকেছে; কুরাইশদের ভুল
সিদ্ধান্ত আর মুহাম্মদের দূরদর্শিতা ৬২০ সালের পর থেকে ইসলামকে খোলা ময়দানে
নিয়ে আসে; যার সুফল আজও ভোগ করছে সামান্য কয়েকজন, আর তার কুফলের যন্ত্রণা
ভোগ করছে পুরো পৃথিবী!
বর্তমান মক্কা শহরটা চেনা হলো আজ; কিন্তু মুহাম্মদের সময় কেমন ছিলো মক্কার
চেহারা; এই ধারাবাহিকের ৮ম পর্ব থেকেই মুহাম্মদ সাফা পাহাড়ে উঠে
মক্কাবাসীদের সাবধান করা শুরু করবেন; আমরাও ঠিক সাফা চূড়ায় উঠে দেখবো,
মুহাম্মদ কেমন দেখেছিলেন তাঁর সময়ের শহরটিকে!
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ৬ষ্ঠ পর্ব; এই পর্বে থাকছে গোপন প্রচারের তিন বছরের শেষ পাঁচ অংশ। অনুবাদের ভাষা ৫০ টির বেশি বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৩১ তম প্রকাশ; সূরা আল ফাতিহা (১) (সূচনা) ৭ আয়াত:
১. শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
২. যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি সকল সৃষ্টিজগতের পালনকর্তা।
৩. যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
৪. যিনি বিচার দিনের মালিক।
৫. আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
৬. আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,
৭. সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৩২ তম প্রকাশ; সূরা আল আদিয়াত (১০০) (অভিযানকারী) ১১ আয়াত:
১. শপথ ঊর্ধ্বশ্বাসে চলমান অশ্বসমূহের,
২. অতঃপর ক্ষুরাঘাতে অগ্নিবিচ্ছুরক অশ্বসমূহের
৩. অতঃপর প্রভাতকালে আক্রমণকারী অশ্বসমূহের
৪. ও যারা সে সময়ে ধুলি উৎক্ষিপ্ত করে
৫. অতঃপর যারা শক্রদলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে -
৬. নিশ্চয় মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ।
৭. এবং সে অবশ্য এ বিষয়ে অবহিত
৮. এবং সে নিশ্চিতই ধন-সম্পদের ভালবাসায় মত্ত।
৯. সে কি জানে না, যখন কবরে যা আছে, তা উত্থিত হবে
১০. এবং অন্তরে যা আছে, তা অর্জন করা হবে?
১১. সেদিন তাদের কী হবে, সে সম্পর্কে তাদের পালনকর্তা সবিশেষ জ্ঞাত।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৩৩ তম প্রকাশ; সূরা আল হাক্কাহ (৬৯) (নিশ্চিত সত্য) ৩৭ আয়াত:
১. সুনিশ্চিত বিষয়।
২. সুনিশ্চিত বিষয় কী?
৩. আপনি কি কিছু জানেন, সেই সুনিশ্চিত বিষয় কী?
৪. আদ ও সামুদ গোত্র মহাপ্রলয়কে মিথ্যা বলেছিল।
৫. অতঃপর সমুদ গোত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রলয়ংকর বিপর্যয় দ্বারা।
৬. এবং আদ গোত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচণ্ড ঝঞ্জাবায়ূ,
৭. যা তিনি প্রবাহিত করেছিলেন তাদের ওপর সাত রাত্রি ও আট দিবস পর্যন্ত
অবিরাম। আপনি তাদেরকে দেখতেন যে, তারা অসার খর্জুর কাণ্ডের ন্যায় ভূপাতিত
হয়ে রয়েছে।
৮. আপনি তাদের কোনো অস্তিত্ব দেখতে পান কি?
৯. ফেরাউন, তাঁর পূর্ববর্তীরা এবং উল্টে যাওয়া বস্তিবাসীরা গুরুতর পাপ করেছিল।
১০. তারা তাদের পালনকর্তার রসূলকে অমান্য করেছিল। ফলে তিনি তাদেরকে কঠোরহস্তে পাকড়াও করলেন।
১১. যখন জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল, তখন আমি তোমাদেরকে চলন্ত নৌযানে আরোহণ করিয়েছিলাম।
১২. যাতে এ ঘটনা তোমাদের জন্যে স্মৃতির বিষয় এবং কান এটাকে উপদেশ গ্রহণের উপযোগী রূপে গ্রহণ করে।
১৩. যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে-একটি মাত্র ফুৎকার
১৪. এবং পৃথিবী ও পর্বতমালা উত্তোলিত হবে ও চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দেয়া হবে,
১৫. সেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে।
১৬. সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও বিক্ষিপ্ত হবে।
১৭. এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আট জন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের উর্ধ্বে বহন করবে।
১৮. সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোনোকিছু গোপন থাকবে না।
১৯. অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবে: নাও, তোমরাও আমলনামা পড়ে দেখ।
২০. আমি জানতাম যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে।
২১. অতঃপর সে সুখী জীবন যাপন করবে,
২২. সুউচ্চ জান্নাতে।
২৩. তার ফলসমূহ অবনমিত থাকবে।
২৪. বিগত দিনে তোমরা যা প্রেরণ করেছিলে, তার প্রতিদানে তোমরা খাও এবং পান কর তৃপ্তি সহকারে।
২৫. যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবে: হায় আমায় যদি আমার আমল নামা না দেয়া হতো।
২৬. আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব!
২৭. হায়, আমার মৃত্যুই যদি শেষ হত।
২৮. আমার ধন-সম্পদ আমার কোনো উপকারে এলো না।
২৯. আমার ক্ষমতাও বরবাদ হয়ে গেল।
৩০. ফেরেশতাদেরকে বলা হবে: ধর, একে গলায় বেড়ি পড়িয়ে দাও,
৩১. অতঃপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে।
৩২. অতঃপর তাকে শৃঙ্খলিত কর সত্তর গজ দীর্ঘ এক শিকলে।
৩৩. নিশ্চয় সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না।
৩৪. এবং মিসকীনকে আহার্য দিতে উৎসাহিত করত না।
৩৫. অতএব, আজকের দিন এখানে তার কোনো সুহৃদ নাই।
৩৬. এবং কোনো খাদ্য নাই, ক্ষত-নিঃসৃত পুঁজ ব্যতীত।
৩৭. গোনাহগার ব্যতীত কেউ এটা খাবে না।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৩৪ তম প্রকাশ; সূরা আন নাযিয়াত (৭৯) (প্রচেষ্টাকারী) ২৭ থেকে ৪৬ আয়াত:
২৭. তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন?
২৮. তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন।
২৯. তিনি এর রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং এর সূর্যোলোক প্রকাশ করেছেন।
৩০. পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।
৩১. তিনি এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন,
৩২. পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন,
৩৩. তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের উপকারার্থে।
৩৪. অতঃপর যখন মহাসংকট এসে যাবে।
৩৫. অর্থাৎ যেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম স্মরণ করবে
৩৬. এবং দর্শকদের জন্যে জাহান্নাম প্রকাশ করা হবে,
৩৭. তখন যে ব্যক্তি সীমালংঘন করেছে;
৩৮. এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে,
৩৯. তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
৪০. পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশি থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে,
৪১. তার ঠিকানা হবে জান্নাত।
৪২. তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, কেয়ামত কখন হবে?
৪৩. এর বর্ণনার সাথে আপনার কী সম্পর্ক ?
৪৪. এর চরম জ্ঞান আপনার পালনকর্তার কাছে।
৪৫. যে একে ভয় করে, আপনি তো কেবল তাকেই সতর্ক করবেন।
৪৬. যেদিন তারা একে দেখবে, সেদিন মনে হবে, যেন তারা দুনিয়াতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক সকাল অবস্থান করেছে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৩৫ তম প্রকাশ; সূরা আল ওয়াক্বিয়াহ্ (৫৬) (নিশ্চিত ঘটনা) ৮১, ৮২ বাদে ৯৬ পর্যন্ত আয়াত:
১. যখন কিয়ামতের ঘটনা ঘটবে,
২. যার বাস্তবতায় কোনো সংশয় নেই।
৩. এটা নিচু করে দেবে, সমুন্নত করে দেবে।
৪. যখন প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে পৃথিবী।
৫. এবং পর্বতমালা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে।
৬. অতঃপর তা হয়ে যাবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণা।
৭. এবং তোমরা তিনভাবে বিভক্ত হয়ে পড়বে।
৮. যারা ডান দিকে, কত ভাগ্যবান তারা।
৯. এবং যারা বামদিকে, কত হতভাগা তারা।
১০. অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই।
১১. তারাই নৈকট্যশীল,
১২. অবদানের উদ্যানসমূহে,
১৩. তারা একদল পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে।
১৪. এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্যে থেকে।
১৫. স্বর্ণখচিত সিংহাসন।
১৬. তারা তাতে হেলান দিয়ে বসবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে।
১৭. তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চিরকিশোরেরা।
১৮. পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে,
১৯. যা পান করলে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং তারা বিকারগ্রস্তও হবে না।
২০. আর তাদের পছন্দমত ফলমুল নিয়ে,
২১. এবং রুচিমত পাখির মাংস নিয়ে।
২২. তথায় থাকবে আনতনয়না হুরগণ,
২৩. আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়,
২৪. তারা যা কিছু করত, তার পুরস্কারস্বরূপ।
২৫. তারা তথায় অবান্তর ও কোনো খারাপ কথা শুনবে না।
২৬. কিন্তু শুনবে সালাম আর সালাম।
২৭. যারা ডান দিকে থাকবে, তারা কত ভাগ্যবান।
২৮. তারা থাকবে কাঁটাবিহীন বদরিকা বৃক্ষে।
২৯. এবং কাঁদি কাঁদি কলায়,
৩০. এবং দীর্ঘ ছায়ায়।
৩১. এবং প্রবাহিত পানিতে,
৩২. ও প্রচুর ফলমূলে,
৩৩. যা শেষ হবার নয় এবং নিষিদ্ধও নয়,
৩৪. আর থাকবে সমুন্নত শয্যায়।
৩৫. আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি।
৩৬. অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী।
৩৭. কামিনী, সমবয়স্কা।
৩৮. ডান দিকের লোকদের জন্যে।
৩৯. তাদের একদল হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে।
৪০. এবং একদল পরবর্তীদের মধ্য থেকে।
৪১. বামপার্শ্বস্থ লোক, কত না হতভাগা তারা।
৪২. তারা থাকবে প্রখর বাষ্পে এবং উত্তপ্ত পানিতে,
৪৩. এবং ধুম্রকুঞ্জের ছায়ায়।
৪৪. যা শীতল নয় এবং আরামদায়কও নয়।
৪৫. তারা ইতিপূর্বে স্বাচ্ছন্দ্যশীল ছিল।
৪৬. তারা সদাসর্বদা ঘোরতর পাপকর্মে ডুবে থাকত।
৪৭. তারা বলত: আমরা যখন মরে অস্থি ও মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে যাব, তখনও কি পুনরুত্থিত হব?
৪৮. এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণও!
৪৯. বলুন: পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণ,
৫০. সবাই একত্রিত হবে এক নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে।
৫১, অতঃপর হে পথভ্রষ্ট, মিথ্যারোপকারীগণ।
৫২. তোমরা অবশ্যই ভক্ষণ করবে যাক্কুম বৃক্ষ থেকে,
৫৩. অতঃপর তা দ্বারা উদর পূর্ণ করবে,
৫৪. অতঃপর তার ওপর পান করবে উত্তপ্ত পানি।
৫৫. পান করবে পিপাসিত উটের ন্যায়।
৫৬. কেয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন।
৫৭. আমি সৃষ্টি করেছি তোমাদেরকে। অতঃপর কেন তোমরা তা সত্য বলে বিশ্বাস কর না।
৫৮. তোমরা কি ভেবে দেখেছ, তোমাদের বীর্যপাত সম্পর্কে।
৫৯. তোমরা তাকে সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি?
৬০. আমি তোমাদের মৃত্যুকাল নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই।
৬১. এ ব্যাপারে যে, তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের মত লোককে নিয়ে আসি এবং তোমাদেরকে এমন করে দিই, যা তোমরা জান না।
৬২. তোমরা অবগত হয়েছ প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে, তবে তোমরা অনুধাবন কর না কেন?
৬৩. তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি?
৬৪. তোমরা তাকে উৎপন্ন কর, না আমি উৎপন্নকারী?
৬৫. আমি ইচ্ছা করলে তাকে খড়কুটো করে দিতে পারি, অতঃপর হয়ে যাবে তোমরা বিস্ময়াবিষ্ট।
৬৬. বলবে: আমরা তো ঋণের চাপে পড়ে গেলাম;
৬৭. বরং আমরা হৃতসর্বস্ব হয়ে পড়লাম।
৬৮. তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি?
৬৯. তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন, না আমি বর্ষণ করি?
৭০. আমি ইচ্ছা করলে তাকে লোনা করে দিতে পারি, অতঃপর তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না?
৭১. তোমরা যে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি?
৭২. তোমরা কি এর বৃক্ষ সৃষ্টি করেছ, না আমি সৃষ্টি করেছি?
৭৩. আমি সেই বৃক্ষকে করেছি স্মরণিকা এবং মরুবাসীদের জন্য সামগ্রী।
৭৪. অতএব, আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামে পবিত্রতা ঘোষণা করুন।
৭৫. অতএব, আমি তারকারাজির অস্তাচলের শপথ করছি,
৭৬. নিশ্চয় এটা এক মহা শপথ - যদি তোমরা জানতে।
৭৭. নিশ্চয় এটা সম্মানিত কোরআন,
৭৮. যা আছে এক গোপন কিতাবে,
৭৯. যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না।
৮০. এটা বিশ্ব-পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।
৮৩. অতঃপর যখন কারও প্রাণ কন্ঠাগত হয়।
৮৪. এবং তোমরা তাকিয়ে থাক,
৮৫. তখন আমি তোমাদের অপেক্ষা তার অধিক নিকটে থাকি; কিন্তু তোমরা দেখ না।
৮৬. যদি তোমাদের হিসাব-কিতাব না হওয়াই ঠিক হয়,
৮৭. তবে তোমরা এই আত্মাকে ফেরাও না কেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?
৮৮. যদি সে নৈকট্যশীলদের একজন হয়;
৮৯. তবে তার জন্যে আছে সুখ, উত্তম রিযিক এবং নেয়ামতে ভরা উদ্যান।
৯০. আর যদি সে ডান পার্শ্বস্থদের একজন হয়,
৯১. তবে তাকে বলা হবে: তোমার জন্যে ডানপার্শ্বস্থদের পক্ষ থেকে সালাম।
৯২. আর যদি সে পথভ্রষ্ট মিথ্যারোপকারীদের একজন হয়,
৯৩. তবে তার আপ্যায়ন হবে উত্তপ্ত পানি দ্বারা।
৯৪. এবং সে নিক্ষিপ্ত হবে অগ্নিতে।
৯৫. এটা ধ্রুব সত্য।
৯৬. অতএব, আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামে পবিত্রতা ঘোষণা করুন।
আয়াত প্রকাশের মনোজগত: গোপন
প্রচারের প্রায় তিন বছর সময়ে মুহাম্মদ আয়াত প্রকাশে স্বাভাবিক গতিশীলতা লাভ
করেন; আর নিয়মিত বিরতিতে আয়াত প্রকাশের চর্চা, সাথে একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন
ভাবে প্রকাশ ও পাঠ, ভাষার জড়তা কমাতে থাকে; আয়াতের আকার বাড়তে থাকাটাই তার
এই জড়তাহীনতার প্রকাশ।
মুহাম্মদ এই সময়ে আল্লাহ, বিশ্বাস, সমর্পন (ইসলাম), বেহেস্ত, দোযখ আর
মানুষের ধন-সম্পদের বিভেদ নিয়ে আয়াতের মাধ্যেমে একটি পরিষ্কার ধারণা তাঁর
সল্প সংখ্যাক সাহাবীদের (অনুসারী) দিতে সমর্থ হন। সাহাবীদের অনুরোধ আর
মুহাম্মদের জনসমক্ষে ইসলাম প্রচারের ইচ্ছা তাঁকে মানসিকভাবে অস্থির করে
তোলে! এই অস্থিরতাই হচ্ছে এই সময়ের সবচেয়ে বড় সূরার অংশ হিসেবে (প্রায় ১৭০
লাইনের) ৩৬/৩৭/৩৮ তম প্রকাশ; যেখানে মুহাম্মদের অবচেতন (আল্লাহ/জ্রিবাইল), মুহাম্মদকেই বিভিন্ন উদাহরন দিয়ে মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে চেষ্টা করতে থাকে।
তার তা দিয়েই শুরু হবে আমাদের আগামী পর্ব!