Wednesday, August 3, 2016

কুরআন কি বলে- সূর্য পৃথিবীর চার দিকে ঘুরে নাকি পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে?

কুরআন কি বলে- সূর্য পৃথিবীর চার দিকে ঘুরে নাকি পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে?

 



আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার সময়কালকে দুই-আড়াইশো বছরের বেশি সময় পর্যন্ত ধরা যাবে না এই আধুনিকতার মূলে হচ্ছে যখন থেকে বিজ্ঞান যন্ত্র আবিষ্কার করে তার মাধ্যমে গ্রহ-নক্ষত্রগুলো পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেগ্যালিলিও দূরবীন আবিষ্কার করে গ্রহ-নক্ষত্রগুলোকে প্রথম তাদের আকৃতি ও বিন্যাস অনুযায়ী চাক্ষুস করতে সক্ষম হনএর আগ পর্যন্ত পৃথিবীতে চার হাজার বছর পর্যন্ত পৃথিবী ও আমাদের সৌর জগত মায় মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিল অনুমান ও দার্শনিক ভাবালুতার সংমিশ্রনএরিস্টল একদিকে যেমন চাঁদের গায়ে পৃথিবীর ছায়া দেখে নিশ্চিত হন পৃথিবীর আকার গোলাকৃতি, তেমনি বিশ্বজগত নিয়ে তিনি তার ভাববাদ সংমিশ্রন করে একে ব্যাখ্যা করেনওরিস্টল ও টলেমিদের সময় উনারা মত দিয়েছিলেন, পৃথিবী স্থীরএই পৃথিবীই হচ্ছে মহাবিশ্বের কেন্দ্রএকে কেন্দ্র করেই সূর্য চক্রাকারে ঘুরছে অবিরামকুপার্নিকাস ও গ্যালিলিও চার হাজার বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক থিউরীকেবাতিল করে দিয়ে বললেন, পৃথিবী ভন ভন করে ঘুরে চলেছে সূর্যের চারপাশেএই সৌরজগতের অধিপতি আসলে সূর্য, পৃথিবী তাকে অনুসরণ করে মাত্রবিজ্ঞানের বেলায় এরকম আকাশ ভেঙ্গে পড়া আবিষ্কার আনন্দের ঘটনাই বৈকিবিজ্ঞান কোন ধারণা বা সন্দেহের উপর প্রতিষ্ঠত না, বিজ্ঞানকে প্রমাণ করতে হয়কাজেই যা প্রমাণিত তার জন্য অপ্রমাণিতকে জায়গা ছেড়ে দিতে হয়কিন্তু মুশকিল হচ্ছে ততদিনে এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে এরিস্টল ও টলেমির যে চিন্তা সেটা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলো তাদের বিশ্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা গ্রহণ করে বসে আছেযুগে যুগে তাই দেখা গেছে বিজ্ঞান এই বিশ্ব ও জীবের সূচনা সম্পর্কে কিছু বলতে গেলেই ধর্ম আহত-নিহিত হয়ে গেছেযেমন খ্রিস্টান ও ইহুদী ধর্ম সেসময় আহত হয়ে গ্যালিলিও উপর চড়াও হয়েছিলব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিলতাওরাত দাবী করছে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে এবং এই পৃথিবী স্থীরআসলে তাওরাতকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, প্রতিদিন আকাশে পূর্ব থেকে সূর্যকে উঠতে ও পশ্চিমে ঢলে পড়তে দেখে মানুষের এমনটাই মনে হবে যে, সূর্য পৃথিবীর চারপাশে রোজ একবার করে ছুটে চলেছেআর একটা ঘূর্ণমান পৃথিবীর মধ্যে থেকে কিছুতে তাকে মনে হবে না এটি ভন ভন করে ঘুরছে, স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ভেবেছে পৃথিবী যদি ঘুরত তাহলে আমরাও মাথা ঘুরে পড়ে যেতাম! আমাদের বাসতবাড়ি আর মাটির উপর খাড়া করে রাখা যেত না মজা হচ্ছে ইহুদী-খ্রিস্টানদের কিতাবে কোন ভূল পাওয়া গেলে মুসলমানরা উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েঅথচ তাওরাতকে কুরআন তার সিকুয়েল বলে দাবী করেতাওরাতে যদি কোন ভুল থেকে থাকে বিশ্বজগত নিয়ে তাহলে সেই ভুলের দায় তো কুরআনের লেখক আল্লাহকেই নিতে হবে- তাই না? এবার আসুন দেখি খোদ কুরআনেই এই বিষয়ে কি বলা আছেএতকাল ধরে ইসলামী পন্ডিতরা এই বিশ্বজগত সম্পর্কে কুরআনকে কিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন সেটাই দেখি
কে কাকে কেন্দ্র করে ঘুরে সূর্য না পৃথিবী এই প্রশ্নে ইসলামী স্কলার, মাশায়াখ, আল্লামারা পরিষ্কার করে বলেছেন, কুরআন মতে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘুরেএই ঘুরার কারণেই পৃথিবীতে দিবা-রাত্রী ঘটে থাকেউনারা জোর দিয়ে বলেছেন, আমাদের হাতে যে দলিলগুলো রয়েছে তার মাধ্যমে পৃথিবীর সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরার কোন প্রমাণ নেই…(ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম-আল্লামা উসাইমীন রাহ)
এবার আমরা বিশিষ্ট আলেম ও স্কলারা যে দলিল দেখিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন পৃথিবী স্থীর ও সূর্য তার চারপাশে ঘুরে তা উপস্থাপন করবএ ক্ষেত্রে পন্ডিতবর্গরা সুরা বাকারার ২৫৮ নম্বর আয়াতকে দেখিয়ে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে বলে বুঝতে সক্ষম হনসুরা বাকারায় বলা আছে- فَإِنَّ اللَّهَ يَأْتِي بِالشَّمْسِ مِنْ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنْ الْمَغْرِبِআল্লাহ তাআলা সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেনতুমি পারলে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর” (সূরা বাকারাঃ ২৫৮)আলেম ও পন্ডিতরা বলেন, সূর্য পূর্ব দিক থেকে উঠার মাধ্যমে প্রকাশ্য দলিল পাওয়া যায় সূর্য পৃথিবীর চারপাশে পরিভ্রমণ করছেশুরুতে বলে রাখি, এ ধরণের ব্যাখ্যা ইসলামে ১৪০০ বছর পর্যন্ত চলে আসছে অত্যন্ত সদরে ও উচ্চস্বরেআধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার সূচনার আগে কুরআনে বর্ণিত বিশ্বজগত সম্পর্কে তখনকার বৈজ্ঞানিক থিউরীর সঙ্গে মিল পেয়ে এটাকে মুসলমানরা আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে দেখেছেইসলাম যে বিজ্ঞানময় তাই নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলকিন্তু কুপারনিকাস ও গ্যালিলিও যুগের পরে ধর্মগুলো শত্রু হয়ে উঠে বিজ্ঞানেরইসলাম এসবকে তার উপর বিজ্ঞানের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখেমুসলিম পন্ডিতরা বিজ্ঞানকে প্রত্যাখ্যান করে তাকে কুফরি বলে দাবী করেতাই অর্ধ শতাব্দীকাল পর্যন্ত (আজকের যুগেও লক্ষ্য করা যায়) মুসলিমরা বিজ্ঞানকে শত্রু জ্ঞান করে তার বিরুদ্ধচারণ করে থাকেকিন্তু সূর্য কেন্দ্রিক সৌর জগত ও এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে আজকের বিজ্ঞানের জ্ঞান এতটাই প্রমাণিত যে তাকে অস্বীকার করা মানে নিজের হাতের তালুকেই অস্বীকার করাসূর্যের আলোতে নিজের ছায়াকেই নিজের নয় বলে অস্বীকার করার মত বোকামী জাকির নায়েক ও হারুন ইয়াহিয়াদের মত ননইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত লোকরা এটি বুঝতে পেরেছিলেন বিজ্ঞানকে শত্রু নয়, বরং আধুনিক বিজ্ঞানকে কুরআনের মধ্যে আবিষ্কারই হবে আজকের যুগের জন্য হবে সঠিক সিদ্ধান্তজাকির ও হারুন ইয়াহিয়ারা এই শিক্ষাটা নিয়েছিলেন খ্রিস্টান চার্চ থেকেচার্চ এখন বিবর্তনবাদকেও বাইবেল সম্মত হবে দাবী করে! যাই হোক, আসুন কুরআনে পৃথিবী কেন্দ্রিক যে গ্রহ-নক্ষত্র ব্যাখ্যা তার আরো কিছু প্রমাণ হাজির করি
সূরা আনআম এর ৭৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- فَلَمَّا رَأَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هَذَا رَبِّي هَذَا أَكْبَرُ فَلَمَّا أَفَلَتْ قَالَ يَاقَوْمِ إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ -অতঃপর যখন সূর্যকে চকচকে অব্সথায় উঠতে দেখলেন তখন বললেনঃ এটি আমার পালনকর্তা, এটি বৃহত্তরঅতপর যখন তা ডুবে গেল, তখন বলল হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যেসব বিষয়ে শরীক কর আমি ওসব থেকে মুক্ত…”(সূরা আনআমঃ ৭৮)আলেমরা ও পন্ডিতরা এর ব্যাখ্যা করে বলেন, এর মাধ্যেমে প্রমাণ হয় পৃথিবী ঘুরছে নাপৃথিবী স্থীরযদি পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরত তাহলে কুরআনে বলা হতো, সূর্য থেকে পৃথিবী ডুবে গেলো বার বার বলা হচ্ছে সূর্য ডুবে, সূর্য উঠেতাই প্রমাণ হাজির সূর্য ঘুরছে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে!
সূর্যের পৃথিবীর চারপাশে ঘুরার আরো একটি প্রমাণ রয়েছে সুরা কাহাফে এখানে বলা হয়েছে- وَتَرَى الشَّمْسَ إِذَا طَلَعَتْ تَتَزَاوَرُ عَنْ كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَتْ تَقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِতুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস- যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বাম দিকে চলে যায়” (সূরা কাহাফঃ ১৭)আলেম ও পন্ডিতরা এ বিষয়ে বলেছেন, পাশ কেটে ডান থেকে বামে চলে যাওয়ার কথা থেকে প্রমাণ হয় নড়াচড়া সূর্য থেকেই হয়ে থাকেপৃথিবী যদি নড়াচড়া করত তাহলে অবশ্যই বলত গুহা পাশ কেটে যায় সূর্য থেকেএকবারও বলা হয়নি পৃথিবী উদয় ও অস্ত যাচ্ছে, সূর্যকে বলা হয়েছেকাজেই প্রমাণিত সূর্য ঘুরছে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে!
স্থীর পৃথিবীরচারপাশে সূর্যের ঘুরার আরো একটি মোক্ষম প্রমাণ হাজির করা হয় সুরা যুমার থেকেএখানে বলা হয়েছে- خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّار - “তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবেতিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেনপ্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল” (সূরা যুমারঃ ৫)ইসলামী পন্ডিত বলেন, এখানে চন্দ্র ও সূর্য যে চলমান আছে তার পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছেএকবারও পৃথিবীকে দিবা-রাত্রী উপর ঘুরানোর কথা বলা হয়নিবলা হয়েছে দিন-রাত্রীর কাজে সূর্য নিয়োজিত আছেযদি সূর্য স্থীর থাকত তাহলে পৃথিবীতে সব সময় দিনের আলো ফুটে থাকতযেহেতু স্থীর পৃথিবীর ধারণা আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত (পৃথিবী ঘুরার প্রশ্নই আসে না কারণ তাহলে আমরা মাথা ঘুরে পড়ে যেতাম!!) তাই এক্ষেত্রে সূর্য না ঘুরলে রাত-দিন কিভাবে হবে?
সব শেষে হাদিস থেকে সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরার প্রমাণ হাজির করে লেখাটা শেষ করছিএই হাদিস পরিস্কার করে বলছে সূর্য উদিত হয় ও অস্ত যায়”! এই বিশ্বজগতে কোন নক্ষত্র কিভাবে উদয় ও অস্ত যায় তা আজকের যুগের মানুষকে বুঝানো খুব কঠিনকারণ তারা সৌর জগতের ছবি জ্ঞান হবার পর থেকে দেখে আসছে কিন্তু হাজার বছর আগের মানুষজন রোজ সূর্যকে সন্ধ্যায় পশ্চিমের ঝোপঝারে বা পাহাড়ের পিছনে ডুবতেদেখে আর প্রত্যহ সকালে পূর্বে উদিত হতে দেখে নিচের হাদিসটির মত সরল চিন্তা করা ছাড়া তাদের কোন উপায় ছিল না
أَتَدْرِي أَيْنَ تَذْهَبُ قُلْتُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ فَإِنَّهَا تَذْهَبُ حَتَّى تَسْجُدَ تَحْتَ الْعَرْشِ فَتَسْتَأْذِنَ فَيُؤْذَنُ لَهَا وَيُوشِكُ أَنْ تَسْجُدَ فَلَا يُقْبَلَ مِنْهَا وَتَسْتَأْذِنَ فَلَا يُؤْذَنَ لَهَا يُقَالُ لَهَا ارْجِعِي مِنْ حَيْثُ جِئْتِ فَتَطْلُعُ مِنْ مَغْرِبِهَا
হে আবু যর! তুমি কি জান সূর্য যখন অস- যায় তখন কোথায় যায়? আবু যার বললেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেনরাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সূর্য অস- যাওয়ার সময় আরশের নীচে গিয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং পুনরায় উদিত হওয়ার অনুমতি চায়অতঃপর তাকে অনুমতি দেয়া হয়সে দিন বেশী দূরে নয়, যে দিন অনুমতি চাবে কিনতাকে অনুমতি দেয়া হবে নাতাকে বলা হবে যেখান থেকে এসেছ, সেখানে ফেরত যাওঅতঃপর সূর্য পশ্চিম দিক থেকেই উদিত হবে” (সহি বুখারি, বই-৫৪, হাদিস-৪২১)