Thursday, August 4, 2016

খয়বর কথা বলো…

খয়বর কথা বলো


বনু ছাহামে গোত্র ছিল নিতান্তই হাভাতে, ঠিক মত তাদের খাবার জোটে না হযরত মুহাম্মদ তার অনুসারীদের দিকে চেয়ে দেখেন আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়েনএই দীর্ঘশ্বাসটা গিয়ে পড়ে ইহুদীদের বাড়বাড়ন্ত গ্রামগুলির দিকেতাদের গোলা ভরা শস্য দানাখোয়ারে ভর্তি গবাদি পশুতাদের ছেলেমেয়েরা কি রুষ্টপুষ্ট আর স্বাস্থ্যবান! ইসলাম ঘোষণা হয়েছে ১৩ বছরএই ১৩ বছরে তো একদিনও না খেয়ে থাকা যায়নিবাঁচতে হলে খেতে হবে সে তুমি ইহুদী হও আর মুসলমানই হওশুধু তো খাওয়া নয়, বাঁচার মত বাঁচতে না পারলে মানুষ হিসেবে নিজের আত্ম সম্মানটা আর অবশিষ্ট থাকে নাকিন্তু উপায় কি? খাবার তো আকাশ থেকে আসে নামুহাম্মদের সঙ্গে আছেন একজন আল্লাহ যিনি তাকে এক ফেরেস্তার মাধ্যমে কবিতার মত কিছু পঙক্তি পাঠান যা মুহাম্মদ তার অনুসারীদের আবৃত্তি করে শোনানকিন্তু পেটের খিদে কি কাব্য শুনে মিটবে? যে ফেরেস্তা মুহাম্মদের কাছে কবিতা নিয়ে আসেন সে কি আল্লাহর কাছে গিয়ে তাদের অনাহারের কথা বলতে পারে না? মুহাম্মদ জানে তার আল্লার কোন জমি নেইতিনি ফসল ফলান নাএকটা শষ্য দানাও বাজার থেকে তার কিনে দেয়ার স্বাধ্য নেইসলাম গোত্রের শাখা বনু ছাহামের লোকজন যখন নিজেদের অভাবের কথা মুহাম্মদের কাছে পেশ করল তখন মুহাম্মদ তাদের সামনে তার আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগল, “হে আল্লাহ, তুমি ওদের অবস্থা জানোতুমি জানো যে, ওদের মধ্যে শক্তি নেই, আর আমার কাছে এমন কিছু নেই যে ওদের দেবো হে আল্লাহ, ইহুদীদের এমন দুর্গ জয় করিয়ে আমাদের সাহায্য করো যে দুর্গ জয় আমাদের জন্যে সর্বাধিক ফলপ্রসূ হয়, যে দুর্গে সবচেয়ে বেশী খাদ্য-সামগ্রী ও চর্বি পাওয়া যায়“-[ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৩২]

ইসলামের নবী তার অনুসারীদের তারপর খয়বরের ছাব ইবনে মায়ায দুর্গ আক্রমনের হুকুম দেনঅস্তিত্বেব সংকট যেখানে সেখানে মড়িয়া লুটেরাদের সামনে দাঁড়ায় এমন কে আছে! ইহুদীরা মূলত কৃষিজীবীএরা যুদ্ধে পটু নয়ছাব ইবনে মায়ায দুর্গ মুসলমানের দখলে চলে আসেএ দুর্গের চেয়ে অধিক খাদ্যদ্রব্য এবং চর্বি খয়বরের অন্য কোন দুর্গে ছিলো না।-[ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৩২]
ছাব ইবনে মায়ায দুর্গ দখলের পর মুসলমানদের নজর পড়ে যোবায়ের দূর্গের দিকেএটি ছিল খুবই সুরক্ষিত একটি দূর্গপাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই দূর্গে উঠার পথ ছিল খুবই কষ্টকরহযরত মুহাম্মদ এই দূর্গকে তিন দিন পর্যন্ত অবরোধ করে রাখার ঘোষণা দেনসব যুদ্ধ, দুর্যোগ আর খারাপ সময়েই নিজেদের মধ্যের লোকজনই বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকেতেমনই একজন ইহুদী দূর্গের সমস্ত ইহুদীদের সর্বনাশ করতে এগিয়ে আসেইবনে হিশাম এই ইহুদীকে হৃদয়বানহিসেবে বর্ণনা করলেও সে ছিল আসলে একটা রাজাকার”! সে মুহাম্মদকে যেচে গোপনে এসে বলে, “হে আবুল কাশেম, আপনি যদি একমাস যাবত দুর্গ অবরোধ করে রাখেন তবুও ইহুদীরা পরোয়া করবে নাতবে তাদের পানিয় ঝর্ণা নীচে রয়েছেরাতের বেলা তারা এসে পানি পান করে এবং সারাদিনের প্রয়োজনীয় পানি তুলে নিয়ে যায়আপনি যদি ওদের পানি বন্ধ করে দিতে পারেন, তবে তারা নত হবে[দৃষ্টাব্দ: ঐ]

মুহাম্মদ সঙ্গে সঙ্গে ইহুদীদের পানির উৎস বন্ধ করে দেনইহুদীদের এরপর দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়যোবায়ের দূর্গও মুসলিমদের দখলে আসলো অতি সহজে
এরপর একে একে উবাই দূর্গও মুসলিমরা আক্রমন চালিয়েয়ে ইহুদীদের বন্দি করে তাদের সম্পত্তি গণিমতের মাল হিসেবে ডিক্রি জারি করেনপতন হতে থাকে খয়বরের একের পর এক ইহুদীদের বসতিকিন্তু নেজার দূর্গ নিয়ে ইহুদীদের বিশ্বাস ছিল এটা মুসলমানদের পক্ষে দথল করা নাও সম্ভব হতে পারেএ কারণে তাদের সমস্ত নারী ও শিশুদের তারা নেজার দূর্গে সমবেত করে রেখেছিলযথারীতি হযরত মুহাম্মদ এই দূর্গকেও অবরোধ করে রাখলেনঅবশেষে দূর্গের দেয়াল গোলা নিক্ষেপ (পাথরের চাড়) করে দেয়াল ভেঙ্গে দূর্গে মুসলিম হানাদার বাহিনী প্রবেশ করতে সক্ষম হয়এই দূর্গ জয় ছিল আসলে খয়বরের অর্ধেক জয়ের সামিলএই মজবুত ও সুরক্ষ দূর্গের পতনের সংবাদে অন্যান্য দূর্গের ইহুদীদের মনোবল ধ্বংস হয়ে যায়তারা রক্তপাত ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে স্বেচ্ছায় নিজেদের আত্মসমর্পনের ঘোষণা দেয়।- [ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৩১, ৩৩৬, ৩৩৭]

কোতায়বায় এসে মুহাম্মদ ১৪ দিনের অবরোধ জারি রাখেনশেষ পর্যন্ত ইহুদীরা আত্মসমর্পনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়ইহুদীদের নেতা ইবনে আবুল হাকিক হযরত মুহাম্মদের কাছে সন্ধির প্রস্তাব পাঠানসন্ধির আলোচনা ইবনে আবুল হাকিক মুহাম্মদের কাছে পয়গাম পাঠায় যে, “আমি কি আপনার কাছে এসে কথা বলতে পারি? মুহাম্মদ বললেন, হ্যাঁঅনুমতি পাওয়ার পর আবুল হাকিক এই শর্তে সন্ধি প্রস্তাব পেশ করে যে, দুর্গে যেসকল সৈন্য রয়েছে তাদের প্রাণ ভিক্ষা দেয়া হবে এবং তাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যাও তাদের কাছেই থাকবেঅর্থাৎ তারা মুসলমানদের দাস-দাসী হিসেবে বন্দী থাকবে নাতারা নিজেদের অর্থ-সম্পদ সোনা-রূপা, জায়গা-জমি, ঘোড়া, বর্ম ইত্যাদি সব কিছু আল্লাহর রসূলের কাছে অর্পণ করবে, শুধু পরিধানের পোশাক নিয়ে বেরিয়ে যাবে[আবু দাউদ, ২য় খণ্ড, খয়বর প্রসঙ্গপৃ. ৭৬]

সব শুনে মুহাম্মদ জানালেন যদি তারা কিছু লুকায় (সোনাদানা) তবে সে জন্য তার আল্লাহ ও রসূল দায়ী হবেন নাঅর্থ্যাৎ যদি তারা যাওয়ার সময় লুকিয়ে সঙ্গে কিছু নেয় তো তাদের কপালে খারাপি আছে! নিজের সয়সম্পত্তিকে কেউ চুরি করে না আত্মসাৎও করে নাতবে কথিত সন্ধিরশর্ত লঙ্ঘন হয়আবুল হাকিকের উপর অভিযোগ উঠে সে তাদের সোনাদানা কোথাও মাটিতে পুঁতে গোপন করে রেখেছে মুসলমানদের সর্দার মুহাম্মদের কাছে আবুল হাকিকে আনা হয়জানতে চাওয়া হয় সোনাদানা সব কোথায়? অবিকল যেন ৭১ সালের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কোন মেজর একটা অসহায় বাঙালী পরিবারকে দোনাদানা কোথায় লুকিয়ে রেখেছে জানতে চাইছেআবুল হাকিক খুবই বজ্জাতআল্লার রসূলের মুখের সামনে মিথ্যা কথা বলে আল্লার নবী তার সাহাবীদের হুকুম দিলেন, যতক্ষণ সে স্বীকার না করবে ততক্ষণ তার বুকে চকমকি পাথর ঘষতে থাকবে!- [দেখুন: ইবনে হিশাম]

এখানেও এক ইহুদী রাজাকারছিলসে এসে জানালো আবুল হাকিক কোথায় মাটিতে সোনাদানা রেখেছে সে দেখেছেসঙ্গে সঙ্গে মুহাম্মদ হুকুম দিলেন খনন করতে পাওয়া গেলো গচ্ছিত সম্পদআবুল হাকিককে আরো বেশি নির্যাতন বাড়ানো হলো যাতে সে অবিশিষ্ট সম্পত্তির কথা জানায়কিন্তু পাষন্ড ইহুদীটা দুনিয়াবী সম্পত্তির প্রতি এতটাই লোভী ছিল যে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলল নাঅগত্যা আল্লাহর নবীর আর কি করার থাকে? তাকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করা হয়আবুল হাকিক দুই পুত্রকেও সম্পত্তি গোপন করায় হত্যা করা হয়

খয়বর বিখ্যাত আরো একটি কারণেসে সাফিয়াদূর্গ দখলের পর ইহুদী নারী ও শিশুদের নিয়তি ছিল গণিমতের মাল হয়ে উঠাতাদেরকে ভাগটোগ করার পর শেষে দাস হিসেবে বাজারে বিক্রি করে দেয়া হবেকিন্তু সাফিয়া ছিলেন অনন্য সুন্দরী মুহাম্মদ তাকে বিয়ে করেন সেদিনইইবনে হিশামে উল্লেখ আছে, তাদের বাসরঘরের বাইরে একজন সাহাবী সারারাত জেগে তাঁবু পাহাড়া দিচ্ছিলেন কারণ সাফিয়া যাতে তার বাবা-স্বামীর হত্যাকারী মুহাম্মদকে আক্রোশ বশত হত্যা না করে বসে [সাফিয়ার বিয়ে সম্পর্কে দেখুন: সহীহ বোখারী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৪ যাদুল মায়াদ ২য় খণ্ড, পৃ. ১৩৭]
খয়বর থেকে মুহাম্মদ সমস্ত ইহুদীদের উচ্ছেদ করতেই চেয়েছিলেনকিন্তু ইহুদের একটা প্রস্তাবে সে ইচ্ছা থেকে সাময়িক সরে আসেনআরবরা কৃষিকাজ করেনি কোন কালেইখয়বরে উর্বর জমি থেকে ইহুদীরা ফসল ফলায়মুসলিমরা যদি বসে বসে তার অর্ধেক ভাগ পায় তো সোনায় সোহাগা! ইহুদীদের নিজ দেশ থেকে বের করে দেয়ার খবর শুনে ইহুদীরা মুহাম্মদের কাছে প্রস্তাব দেয়- হে মোহাম্মদ আপনি আমাদের এই যমিনেই থাকতে দিন আমরা এর তত্ত্বাবধান করবোএই ভূখণ্ড সম্পর্কে আমরা আপনাদের চেয়ে বেশী অবগতমুহাম্মদ একদম লুফে নেন প্রস্তাবইহুদীদের জমি ইহুদীদের কাছেই বর্গা দেয়া হলো! ইহুদীরা ফসল ফলাবে যার অর্ধেক মুসলিমরা ভোগ করবে! তবে এটা যতদিন মুহাম্মদ চাইবেন ততদিনই চলবেযদি মুহাম্মদ চান ইহুদীদের বহিস্কার করবেন তো যখন খুশি তখনই করতে পারবেনহযরত আবদুল্লাহ ইবনে রওয়াহাকে খয়বরের জমির তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করা হয়খয়বরের মোট জমির ৩৬ ভাগে ভাগ করা হয়।-[যাদুল মায়দ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৩৭-১৩৮]

খয়বর দখল করার পূর্বে মুসলমানরা পেট ভরে খেতেও পারত নাআল্লাহ মেহেরবান! ইহুদীদের সম্পদ, তাদের বাগান, শষ্য, ঘরের বউ-ঝিদেরকে দিয়ে মুসলমানদের বুভুক্ষু উদর ভরিয়ে দিয়েছেনহযরত আয়শা (রা) বলেন, খয়বর বিজয়ের পর আমরা বলাবলি করলাম যে, এখন থেকে আমরা পেটভরে খেজুর খেতে পারবো[সহীহ বোখারী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৬০৯]

কিন্তু খয়বর মুসলমানদের পেট ভরে খেতে দিলেও মুহাম্মদের জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে এনেছি খয়বর বিজয় শেষেসালাম ইবনে মুশকিম এর স্ত্রী যয়নব বিনতে হারেছ মুহাম্মদের কাছে একটি বকরির ভুনা মাংস উপঢৌকন হিসেবে পাঠানযয়নব বিনতে হারেছ নামের এই ইহুদী বৃদ্ধা নারী আসলে তার পুত্র ও স্বামী হত্যাকারী হযরত মুহাম্মদকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেনমনে মনে আরো ভেবেছিলেন যদি এই লোক রাজা হয়ে থাকে তো এর হাত থেকে আমরা মুক্তি পাবোআর যদি সত্যিই সে নবী হয় তো খাওয়ার আগেই সে জেনে যাবে মাংসে বিষ মাখানো রয়েছেযয়নব বিনতে হারেছ মুহাম্মদের প্রিয় বকরির ভুনা মাংসে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলেনমুহাম্মদ মাংস নিয়ে মুখে দিলেনখেতে খেতে বুঝতে পারলেন মাংসে বিষ মাখানো আছে! বিষ তখন খানিকটা পাকস্থালিতে পৌছে গেছেতার সঙ্গে খেতে বসা সাহাবী হযরত বাশার ইবনে বারা ইবনে মারুর পেটে মাংস যেতেই সে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েমুহাম্মদ থু থু করে মুখ থেকে মাংস ফেলে দেনযয়নব বিনতে হারেছকে ডেকে আনা হলে সে সব স্বীকার করেমুহাম্মদ তার নির্জলা স্বীকারক্তি শুনে ক্ষমা করে দেনকিন্তু অন্য একটা বর্ণনায় পাওয়া যায় যয়নব বিনতে হারেছ পরে হত্যা করা হয়েছিল বাশার ইবনের মৃত্যুর কারণে।- [ যাদুল মায়াদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৩৯, ফতহুল বারী, সপ্তম খণ্ড, পৃ. ৪৯৭ ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৩৭]

খয়বরের এই বিষ মাখানো মাংস খেয়েই হযরত মুহাম্মদ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চার বছর পর মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় মারা যান (সহি বুখারী, খন্ড-৭, অধ্যায়-৭১, হাদিস- ৬৬৯)



 খায়বর যুদ্ধের কাহিনী সংখেপে--
হোদায়বিয়ার সন্ধির পর কোরাইশদের দিক থেকে মহানবী (সাঃ) নিশ্চিত হলেনকিন্তু বিপদ ছুটে এল ইহুদীদের দিক থেকেযড়যন্ত্রকারী ও চির মুসলিম-বিদ্বয়ী ইহুদীরা যখন বুঝলো মক্কার কুরাইশদের আর শক্তি নেই মুসলমানদের ধ্বংস করার, তখন কায়বরের ইহুদী গোত্রগুলো পার্শ্ববর্তী শক্তিশালী গাতফান ও অন্যান্য পৌত্তলিক গোত্রকে নানা প্রকার আশা ও প্রলোভন দেখিয়ে তাদের মদীনা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত করলো
তারা মুসলমানদের উত্যক্ত ও দুর্বল করার জন্য মুসলমানদের একটা বাণিজ্য কাফেলা আক্রমণ করে অনেককে হতাহত করল এবং সবকিছু লুণ্ঠন করে নিয়ে গেলএর কিছুদিন পর আরও দুঃসাহসী হয়ে তার কদীনার উপকণ্ঠে জ-ফারাদ প্রান্তরে মহানবী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাদের পশুপালে আক্রমণ চালিয়ে প্রহরী এক মুসলমানকে হত্যা করে লোকটির স্ত্রীসহ গোটা পশুপালকে লুট করে নিয়ে গেল
মহানবী (সা) গুপ্তচর পাঠিয়ে খবর নিয়ে জানলেন, ইহুদী ও গাতফানীরা মদীনা আক্রমণের জন্যে প্রস্তুত
যে কোন সময় তারা মদীনার উপর আপতিত হতে পারেমহানবী (সা) ১৪শপদাতিক ও দুশ সওয়ারী নিয়ে খায়বর যাত্রা করলেনতিনি এমনভাবে তাঁর বাহিনী পরিচালনা করলেন যাতে গাতফানীদের থেকে খায়বরের ইহুদীদের বিচ্ছিন্ন করা যায়
তাই হলোগাতফানীরা মনে করল মুসলমানরা তাদের ফাঁদে আটকাবার চেষ্টা করছে
তারা ভয়ে দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে তাদের এলাকায় দুর্গে আশ্রয় নিল
ইহুদীরাও সম্মুখ যুদ্ধ এড়িয়ে খায়বরে তাদের সুরক্ষিত দুর্গে গিয়ে প্রবেশ করল এবং মিত্র গাতফানীদের আগমনের অপেক্ষা করতে লাগলতারা আরও ভাবল, দুর্গ অবরোধ করে মুসলমানরা তাদের কাবু করতে পারবে না
বেশীদিন দুর্গ অবরোধ করে বসে থাকার মত রসদ মুসলমানদের নেইইহুদীদের এই হিসাব সত্যমুসলমানদের তখন খুবই আর্থিক দুর্দিনমুসলমানরা মাত্র কিছু ছাতু সম্বল করে খায়বর অভিযানে এসেছিল
সে ছাতু কদিনেই নিঃশেষ হয়ে গেলঅনাহার-অর্ধাহারের কালছায়া নেমে এল মুসলিম শিবিরে
অবরোধের সময় যত বাড়ল, মুসলমানদের দুঃখ দুর্দশা ততই বৃদ্ধি পেতে লাগল
তার উপর দুর্গ প্রকার থেকে ইহুদীরা মাঝে মাঝেই তীর, বর্ষা, পাথর ইত্যাদি নিক্ষেপ কওে মুসলমানদের হতাহত করতে লাগলইহুদীদের ধারণা হলো, অনাহার-অর্ধাহারে মুসলমানরা বিপর্যস্ত হয়ে অচিরেই অবরোধ উঠিয়ে পালিয়ে বাঁচবে
এদিকে মহানবী (সাঃ) যখন দেখলেন যে, ইহুদীরা কোন মতেই আত্মসমর্পণ বা সন্ধি করবে না, তখন একদিন তিনি সাথীদেরকে দুর্গ দখলের নির্দেশ দিলেনএই নির্দেশ অমৃত হয়ে দেখা দিল মুসলমানদের জন্য
ক্ষুধা-তৃষ্ণার জ্বালা তারা ভুলে গেলমুহূর্তেই দুর্বল শরীর তাদের সবল হয়ে উঠল
শুরু হলো ঘোরতর যুদ্ধএকের পর এক ইহুদী দুর্গে ইসলামের পতাকা উড্ডীন হতে লাগলইহুদীদের সর্ব বৃহৎ দুর্গ কামুছ
তিনদিন যুদ্ধ চালাবার পর মুসলমানরা এ দুর্গ দখল করে নিলকামুছ দুর্গের পতনের পর এক সপ্তাহের মধ্যে খায়বরের সকল ইহুদী দুর্গের পতন ঘটলযুদ্ধে মুসলমানরা যে কতটা দক্ষতা ও বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন, যুদ্ধের ফলাফল থেকেই তা আঁচ করা যায়
৪ সপ্তাহের যুদ্ধে শহীদ হয়েছেলেন ১৫ জন মুসলিম, আর অন্যপক্ষ মার গিয়েছিলেন ৯৩ জন ইহুদী
অনাহার, অর্ধাহার আর সংখ্যা স্বল্পতা মুসলমানদের বিজয় ঠেকাতে পারেনি
আর প্রাচুর্য, সংখ্যাধিক্য এবং সুরক্ষিত দুর্গ পারেনি ইহুদীদের বিজয় দিতে
-----------------------------------------------------------------------------------------
তারা মুখের ফুতকার দিয়ে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তার নূরের পুর্ণতা দান করবেন; ওদের নিকট তা যতই অপ্রীতিকর হোক না কেন ( আল-কোরান)