দেশের গরীব অশিক্ষিত ধর্মান্ধরা চিকিৎসার বেলায় ডাক্তারের কাছে যাওয়ার
বদলে পীর-মুর্শিদ-মোল্লা-হুজুরদের দেয়া তাবিজ-কবজ-তদবীর-দোয়া-দরুদ-ঝাড়ফুঁক
ইত্যাদির উপরই বেশী নির্ভর করে। শুধু দেশের কেন, সারা বিশ্বের অনেক
শিক্ষিত মানুষও এসবের উপর বিশ্বাস রাখে। বিশেষ করে মানুষ যখন জ্বীন-পরীতে
বিশ্বাস করে তখন এইসব জ্বীন-পরীর আছর বা যাদুটোনা ও বাণের আছরের মত জিনিসেও
বিশ্বাস করে। স্বাভাবিক ভাবেই এগুলোর কোন ডাক্তার নাই বলে মানুষ
ঝাড়-ফুঁক-তাজিবের উপর বিশ্বাস রাখে। এছাড়া দোয়া বিষয়ে নবী নিজেই বলে গেছেন,
যখন দোয়া করবে, তখন সর্বপ্রথম আল্লার প্রশংসা করবে, তার পর আমার উপর দুরূদ
শরীফ পাঠ করবে। ইহার পর স্বীয় গুনাহের কথা স্বীকার করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে
কাকুতি-মিনতি সহকারে আল্লার নিকট মাফ চাইবে এবং দোয়া কবুলের বাসনা অন্তরে
রাখিবে। আল্লার রহমতে দোয়া কবুল হবে…ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাপ-দাদারা এসব সিরিয়াসলি করলেও বাপের আমল থেকে ভাটা পড়তে শুরু করে। বংশের ধারা বলে নিজেও ছোটবেলায় তাদের কাছ থেকে অনেক শিখেছি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আরো নতুন নতুন পদ্ধতিও আবিষ্কার করেছিলাম। কিন্তু একটা পর্যায়ে বাদ দিয়ে দিয়েছি। লোকজন এলে তাদের সমস্যার কথা শুনি। যখন বুঝি সিরিয়াস কিছু, তখন রিস্ক না নিয়ে তাদেরকে বলে-কয়ে ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দেই। অবশ্য ছোট-খাটো ব্যাপার হলে তাদের ইচ্ছা পূরণ করি।
যা হোক, ভূমিকাটা অনেকে বড় হয়ে গেল। যে কথা বলতে চাইছিলাম- অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই পদ্ধতিতে মৃত্যুবাদে আর সকল প্রকার রোগ-শোক-দুঃখ-কষ্টের ব্যবস্থা ইসলামে আছে। যার মধ্যে ঐ মধু আর কালিজিরা বাদে আর কোন কিছুর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই। সবই কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। মাঝে মাঝে ফান করে দু-একটা তদবীরের ভিতরের ব্যাপার-স্যাপার, নিয়ম-কানুন স্ট্যাটাস হিসাবে দেই। যেমন এক ধরনের পানি পড়ার সময় শুধু একটা আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া হয়। ব্যাপারটা জানার পর যে কোন যুক্তিবাদী মানুষ বুঝবেন, তাতে পানির গুণগত মানের কোন পরিবর্তন হয় না। ফলে সেই পানির কার্যক্ষমতা বাড়েও না, কমেও না। তো এসব স্ট্যাটাস দেখে অনেকেই মজা পান।
আবার অনেকে ধর্ম বাঁচাতে সেসবের রেফারেন্স চান, গালাগালি করেন। তাদের কাছে এগুলো মিথ্যা বলে মনে হয়। এই দিকটা ভালোই লাগে। বিশ্বাসী হলেও অনেক মানুষের যে এসব কুসংস্কারের উপর বিশ্বাস নাই, তারা এসবকে চ্যালেঞ্জ করেন- ব্যাপারটা কিছুটা হলেও আমাকে আশার আলো দেখায় যে অন্তুত কিছু মানুষ তো সচেতন হচ্ছে। অথচ কিছুদিন আগেও সবাই এসবই বিশ্বাস করত। বিশ্বাস মানেই কুসংস্কার, আর দিন দিন কিছু কিছু মানুষের কিছুটা হলেও এসব অযৌক্তিক বিশ্বাস দূর হচ্ছে। এভাবে আশা করি একদিন আর সব অযৌক্তিক বিশ্বাসগুলোও দূর হয়ে যাবে।