Wednesday, August 3, 2016

মক্কাবাসীরা কি সত্যিই মুহাম্মদকে হত্যা করতে চেয়েছিল ?



মক্কাবাসীরা কি সত্যিই মুহাম্মদকে হত্যা করতে চেয়েছিল ?- পর্ব-১ (ইতিহাসের ভিত্তিতে)

যখনই ইসলাম গ্রহন না করার জন্যে অমুসিলমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বা তাদেরকে হত্যা করার বিধান কোরান ও হাদিস থেকে তুলে ধরা হয় , তখনই মুমিনরা বলে , মক্কাবাসীরা যেহেতু মুহাম্মদকে হত্যা করতে চেয়েছিল , তাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও তাদেরকে হত্যা করার কথাই কোরান হাদিসে বলেছেযা আত্মরক্ষা বা প্রতিশোধের নামান্তর ও তাই তা বৈধকিন্তু প্রশ্ন হলো - যে মুহাম্মদকে মক্কাবাসীরা দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মক্কাতে কিছুই বলল না , তাকে কেন হঠাৎ করে তারা হত্যা করতে চাইবে ? একই সাথে মদিনাবাসীদের মনও বা কিভাবে মুহাম্মদ জয় করতে পারেন ? বিষয়টা নিয়ে অনেক গবেষনা করেছি, আর সেটাই এখানে বলা হবে

কোন ব্যাক্তির প্রকৃত পরিচয় জানতে , জানতে হয় সেই ব্যাক্তির ইতিহাস যদি তা সংরক্ষিত থাকে বা তার সম্পর্কে কিছু সাক্ষী থাকে তার বা তাদের মাধ্যমে মুহাম্মদের জীবন ও তার কাজকর্ম জানতে তাই আমাদের জানতে হবে তার ইতিহাস কোরান ও হাদিস এসব কোন ইতিহাসের কিতাব না , আর তাই সেসব পড়ে মুহাম্মদ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানা যাবে নামুহাম্মদের জীবন নিয়ে সর্বপ্রথম যিনি কিতাব রচনা করেন তার নাম ইবনে ইসহাকতিনি সিরাত রাসুলাল্লাহ নামে মুহাম্মদের জীবনী রচনা করেনএই ইবনে ইসহাক জন্মেছিলেন মদিনাতে আনুমানিক ৭০৪ খৃষ্টাব্দে আর মারা যান বাগদাদে ৭৬১-৭৭০ এর মধ্যেমুহাম্মদ মারা যান ৬৩২ খৃষ্টাব্দেতার মানে তার মারা যাওয়ার ৭০ বছর পর ইবনে ইসহাকের জন্ম , অর্থাৎ মুহাম্মদ মৃত্যুর প্রায় ১০০ থেকে ১২০ বছরের মধ্যেই মুহাম্মদের এই জীবনী তিনি রচনা শুরু করেন
কেন ইবনে ইসহাকের বর্ননা অন্য যে কোন বর্ননা থেকে অধিক যুক্তিযুক্ত ও সত্য সেটা বুঝতে গেলে জানতে হবে , আমরা যেগুলোকে সহি সিত্তা বলি সেই হাদিস কিতাবগুলো - বুখারি , মুসলিম , আবু দাউদ , তিরমিজি ইত্যাদি এগুলোর রচনাকাল সিরাত রাসুলুল্লাহ- এরও প্রায় একশত বছর পর সেটা বুঝতে , আমাদেরকে উক্ত ব্যাক্তিগুলোর জীবনকাল জানা দরকার
ইবনে ইসহাক : জন্ম - ৭০৪ খৃষ্টাব্দ, মৃত্যু- ৭৬৭ খৃষ্টাব্দ জন্মস্থান- মদিনা, মাতৃভাষা- আরবীমুহাম্মদের মৃত্যুর - ৭০ বছর পর তার জন্ম
বুখারি: জন্ম-৮১০ খৃষ্টাব্দ, মৃত্যু- ৮৭০ খৃষ্টাব্দজন্মস্থান -উজবেকিস্তানের বুখারা, মাতৃভাষা - পারসিমুহাম্মদের মৃত্যুর ১৮০ বছর পর তার জন্ম
মুসলিম: জন্ম ৮১৭ খৃষ্টাব্দ, মৃত্যু- ৮৭৫ খৃষ্টাব্দজন্মস্থান- ইরানের নিশাপুরমাতৃভাষা- পারসিমুহাম্মদের মৃত্যুর ১৯০ বছর পর তার জন্ম
আবু দাউদ: জন্ম- ৮১৮ খৃষ্টাব্দ, মৃত্যু- ৮৮৯ খষ্টাব্দ জন্মস্থান- ইরানের সিস্তানমাতৃভাষা - পারসিমুহাম্মদের মৃত্যুর ১৯০ বছর পর তার জন্ম
তিরমিজি: জন্ম- ৮২৮ খৃষ্টাব্দ- মৃত্যু- ৮৯২ খৃষ্টাব্দ জন্মস্থান- উজবেকিস্তানমাতৃভাষা- আরবিমুহাম্মদের জন্মের ২০০ বছর পর তার জন্ম
সূত্র: https://en.wikipedia.org/wiki/Ibn_Ishaq
সূত্র: https://en.wikipedia.org/wiki/Muhammad_al-Bukhari
সূত্র: https://en.wikipedia.org/wiki/Muslim_ibn_al-Hajjaj
সূত্র: https://en.wikipedia.org/wiki/Abu_Dawood
সূত্র: https://en.wikipedia.org/wiki/Al-Tirmidhi
মুহাম্মদের জীবনি সম্পর্কে জানতে ইসলামী আলেমরা এই চারজন্য হাদিস বেত্তার উপরে বেশী নির্ভর করেন , কারন তারাই মুহাম্মদের কর্মকান্ড ও আদেশ উপদেশের বিস্তারিত বিবরন দিয়ে গেছেনবলতে গেলে , গোটা ইসলামটাই প্রতিষ্ঠিত তাদের লিখিত হাদিসের ওপরকারন , কোরানে নানা বিষয়ের যে বিধি বিধানের উল্লেখ আছে তা বিস্তারিতভাবে বর্নিত না থাকায়, এইসব হাদিস বেত্তারা সেসবের বিস্তারিত বিবরন দিয়ে গেছেন, যার ভিত্তিতেই মূলত: মুসলমানরা ইসলাম পালন করে থাকে
সুতরাং একটা বিষয় দেখা যাচ্ছে , এইসব হাদিস বেত্তাদের একজনও মক্কা বা মদিনা বা্ এমনকি আরবে জন্মগ্রহন করেন নি , তাদের মাতৃভাষাও আরবী নাআর তারা প্রত্যেকেই মুহাম্মদের কর্মকান্ড সম্পর্কে লিখে গেছেন মুহাম্মদ মারা যাবারও প্রায় ২৪০-২৫০ বছর পরআর তারা মুহাম্মদের জীবনি লেখেন নি , লিখেছেন শুধুমাত্র ইসলামের বিধিবিধান তাও সেই সব মানুষের কাছ থেকে শুনে , যাদের অন্তত: ৫/৬ পুরুষ পর্যন্ত বাস্তবে মুহাম্মদকে দেখে নিপক্ষান্তরে ইবনে ইসহাকের জন্মস্থান মদিনায়, যেখানে মুহাম্মদ আসলে তার ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করেন ,তার মাতৃভাষা আরবী , আর তিনি মুহাম্মদ মারা যাবার পর মাত্রই ১০০ থেকে ১২০ বছর পর থেকে মুহাম্মদের জীবনি লেখা শুরু করেন আর তিনি তথ্য সংগ্রহ করেন মদিনারই লোকদেরকে কাছ থেকে যারা ছিল অন্তত: ২য় প্রজন্মের মুসলমান ও ৩য় প্রজন্মের মুসলমান
এই যখন প্রকৃত অবস্থা , তখন আমরা কার বিবরনকে সর্বাপেক্ষা গ্রহনযোগ্য মনে করব ? অবশ্যই ইবনে ইসহাকের বক্তব্যই হবে সর্বাপেক্ষা বস্তুনিষ্ঠ ও সত্যপক্ষান্তরে বুখারি , মুসলিম ইত্যাদিদের বিবরনের মধ্যে অনেক অসত্য বা অতিরঞ্জিত তথ্য থাকার সম্ভাবনাসুতরাং মুহাম্মদ সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য জানতে আমাদেরকে ইবনে ইসহাকের ওপরেই বেশী নির্ভর করতে হবে কারন তার আগে মুহাম্মদ সম্পর্কে আরব বা আরবের বাইরের কেউ কিছুই লিখে যায় নি
দেখা যাক , মুহাম্মদ কিভাবে মদিনাবাসীদের মন জয় করেছিলেন, সে সম্পর্কে ইবনে ইসহাক কি বলেছেনতবে তার আগে একটা সামাজিক তত্ত্ব আমাদের জানা দরকার, কারন মুহাম্মদের ক্ষেত্রে সেটা সবচেয়ে বেশী কাজ করেছিলএকটা প্রবাদ আছে - পীর তার নিজ গ্রামে সম্মান পায় না কথাটা বাস্তবে যে কতটা সত্য সেটা বুঝতে গেলে আপনাকে আটরশি বা শর্ষিনা বা চরমোনাই ইত্যাদি পীরদের গ্রামে যেতে হবেআশ্চর্য হলেও সত্য সেসব গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখনও এইসব পীরের মুরিদ নাবস্তুত: এই সব গ্রামের মানুষ এইসব কথিত পীরদেরকে শৈশব থেকেই দেখে আসছে, তাদের মধ্যে কোনরকম অতিপ্রাকৃত কিছুই তারা কখনও দেখেনি যাতে করে তাদেরকে পীর মানা যায়তাই তারা সেসব পীরের মুরিদ হয় নি কিন্তু যে কোন ভাবে হোক , পীরদের কিছু ভাড়াতে চ্যালা দুর দুরান্তে তাদের ওস্তাদ সম্পর্কে অতিরঞ্জিত নানা কিচ্ছা কাহিনী প্রচার করেছে , দুরের দুর্বল চরিত্রের মানুষ সেসব বিশ্বাস করেছেকারন তাদেরও একটা মানসিক আশ্রয় দরকার নানা বিপদে আপদেতাদের কাছে প্রচার করা হয়েছে ওমুক পীরের কাছে গেলে নানা রকম রোগ ব্যাধি, বালা মুসিবত সহ সকল রকম সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়শুনে শুনে দুর্বল চিত্তের মানুষগুলো তাদের নানা সমস্যা সমাধানের জন্যে সেসব পীরের কাছে ধন্না দিয়েছেএভাবেই এসব পীরদের প্রচার প্রসার বেড়েছেএমনকি বর্তমান যুগেও হঠাৎ হঠাৎ করে কত পীর ফকিরের আবির্ভাব ঘটে , যাদের সম্পর্কে প্রচার করা হয়, তারা খোড়া , অন্ধ , পাগল ইত্যাদিদেরকে সুস্থ করে তোলে, হাজার হাজার লাখ লাখ লোক তাদের কাছে ধর্না দেয়কিন্তু কিছুদিন পরই দেখা যায় তাদের জারিজুরি শেষঅর্থাৎ দুর্বল চিত্তের মানুষের দুর্বলতার সুযোগে কিছু ধান্ধাবাজ চতুর লোক এভাবেই আসলে ব্যবসা বানিজ্য করে একেবারেই বিনা পুঁজিতে
ঠিক এই তত্ত্বটাই মুহাম্মদের ক্ষেত্রে বিপুলভাবে কাজে লেগেছিলসেটা কিভাবে কাজ করেছে সেটার বর্ননা আছে ইবনে ইসহাকের সিরাত রাসুলাল্লায়-------
মক্কার কিছু লোক মদিনায় গিয়ে মদিনাবাসীদের কাছে প্রচার করেছে মুহাম্মদ সম্পর্কে সব অতিরঞ্জিত কিচ্ছা কাহিনীমূর্খ মদিনাবাসীদের কিছু লোক সেটা বিশ্বাস করেছেতারপর ইহুদিদের একটা বিষয়ও সেই সাথে কাজ করেছে মদিনা ও তার আশপাশে বসবাসরত ইহুদিরা মদিনায় প্রচার করত , তাদের তৌরাত কিতাবে লেখা আছে তাদের জন্যে একজন নবী আসবে যে নাকি তাদের সকল সমস্যা দুর করে দেবেমক্কা থেকে মদিনায় যাওয়া সেই মুসলমানরা মদিনাবাসীদের মধ্যে প্রচার করে , ইহুদিদের সেই কথিত নবী হলো মুহাম্মদমদিনাবাসীরা তো আগ থেকেই ইহুদিদের কাছ থেকে সেই ভবিষ্যৎ নবীর কথা শুনেছিল , কিন্তু তারা জানত না , তৌরাত কিতাবে কোন বংশে কোথায় কিভাবে সেই নবী আগমন করবে, কারন তারা তো তৌরাত কিতাব পড়ে নিমক্কার লোকদের প্ররোচনায় , মদিনাবাসীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ইহুদিদের সেই ভবিষ্যতের নবী হিসাবে মুহাম্মদকে বিশ্বাস করে ও মক্কাবাসীদেরকে আশ্রয় দেয়, এবং তারাও বলতে থাকে ,যদি মুহাম্মদ মক্কায় টিকতে না পারে , তাহলে তিনি মদিনায় চলে আসতে পারেন
সূত্র: পৃষ্ঠা- ১৯৭-১৯৮, সিরাত রাসুলুল্লাহ- ইবনে ইসহাক
(https://archive.org/details/TheLifeOfMohammedGuillaume)
মক্কা থেকে কিছু মুসলমান মদিনায় হিজরত করেকারন মক্কাতে কুরাইশরা তাদের সাথে সমস্ত রকম সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল তারা ইসলাম গ্রহন করার কারনেসেই যুগে , প্রায় আদিম প্রকৃতির অার্থ সামাজিক ব্যবস্থায় এভাবে মক্কাতে টিকে থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল নাএছাড়া তারা ছিল হত দরিদ্র ও দাস শ্রেনীর মুহাম্মদ তাদেরকে বেহেস্তের লোভ দেখিয়ে নিজের দলে ভিড়িয়েছিলেনগরীব মানুষের কাছে বেহেস্তের লোভ সবচাইতে বড় লোভএই জগতে তো খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটছে ,ইসলাম অনুসরন করে যদি বেহেস্তে গিয়ে হুর পরী সহ সকল রকম লোভনীয় খাবার পাওয়া যায় , তাহলে মুহাম্মদকে অনুসরন করাই বুদ্ধিমানের কাজবস্তুত: মুহাম্মদই তাদেরকে মদিনায় পাঠান ,তার সম্পর্কে অতিরঞ্জিক কিচ্ছা কাহিনী বলে মদিনাবাসীদেরকে আকৃষ্ট করার জন্যেকারন দীর্ঘ দিন পার হয়ে গেল, মক্কাবাসীরা কোনভাবেই মুহাম্মদকে গ্রহন করছে না , তার ইসলামকেও গ্রহন করছে নাবরং তাকে তারা পাগল উন্মাদ ইত্যাদি হিসাবে উপহাস করছেঠিক আজকের দিনে নানা রকম ধান্ধাবাজ ,প্রতারক কথিত পীররা যেভাবে তাদের ভাড়াটে চ্যালাদেরকে বিভিন্ন যায়গায় পাঠায় তাদের পীর সম্পর্কে অতিরঞ্জিত কিচ্ছা কাহিনী প্রচারের জন্যে, এমন পদ্ধতিই মুহাম্মদ গ্রহন করেন ,তার চ্যালাদেরকে মদিনায় পাঠিয়ে


মক্কাবাসীরা কি সত্যিই মুহাম্মদকে হত্যা করতে চেয়েছিল ?- পর্ব-১(ইতিহাসের ভিত্তিতে)


যখনই ইসলাম গ্রহন না করার জন্যে অমুসিলমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বা তাদেরকে হত্যা করার বিধান কোরান ও হাদিস থেকে তুলে ধরা হয় , তখনই মুমিনরা বলে , মক্কাবাসীরা যেহেতু মুহাম্মদকে হত্যা করতে চেয়েছিল , তাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও তাদেরকে হত্যা করার কথাই কোরান হাদিসে বলেছে। যা আত্মরক্ষা বা প্রতিশোধের নামান্তর ও তাই তা বৈধ। কিন্তু প্রশ্ন হলো - যে মুহাম্মদকে মক্কাবাসীরা দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মক্কাতে কিছুই বলল না , তাকে কেন হঠাৎ করে তারা হত্যা করতে চাইবে ? একই সাথে মদিনাবাসীদের মনও বা কিভাবে মুহাম্মদ জয় করতে পারেন ? বিষয়টা নিয়ে অনেক গবেষনা করেছি, আর সেটাই এখানে বলা হবে।

কোন ব্যাক্তির প্রকৃত পরিচয় জানতে , জানতে হয় সেই ব্যাক্তির ইতিহাস যদি তা সংরক্ষিত থাকে বা তার সম্পর্কে কিছু সাক্ষী থাকে তার বা তাদের মাধ্যমে। মুহাম্মদের জীবন ও তার কাজকর্ম জানতে তাই আমাদের জানতে হবে তার ইতিহাস। কোরান ও হাদিস এসব কোন ইতিহাসের কিতাব না , আর তাই সেসব পড়ে মুহাম্মদ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানা যাবে না। মুহাম্মদের জীবন নিয়ে সর্বপ্রথম যিনি কিতাব রচনা করেন তার নাম ইবনে ইসহাক। তিনি সিরাত রাসুলাল্লাহ নামে মুহাম্মদের জীবনী রচনা করেন। এই ইবনে ইসহাক জন্মেছিলেন মদিনাতে আনুমানিক ৭০৪ খৃষ্টাব্দে আর মারা যান বাগদাদে ৭৬১-৭৭০ এর মধ্যে। মুহাম্মদ মারা যান ৬৩২ খৃষ্টাব্দে। তার মানে তার মারা যাওয়ার ৭০ বছর পর ইবনে ইসহাকের জন্ম , অর্থাৎ মুহাম্মদ মৃত্যুর প্রায় ১০০ থেকে ১২০ বছরের মধ্যেই মুহাম্মদের এই জীবনী তিনি রচনা শুরু করেন।
কেন ইবনে ইসহাকের বর্ননা অন্য যে কোন বর্ননা থেকে অধিক যুক্তিযুক্ত ও সত্য সেটা বুঝতে গেলে জানতে হবে , আমরা যেগুলোকে সহি সিত্তা বলি সেই হাদিস কিতাবগুলো - বুখারি , মুসলিম , আবু দাউদ , তিরমিজি ইত্যাদি এগুলোর রচনাকাল সিরাত রাসুলুল্লাহ- এরও প্রায় একশত বছর পর । সেটা বুঝতে , আমাদেরকে উক্ত ব্যাক্তিগুলোর জীবনকাল জানা দরকার।
ইবনে ইসহাক : জন্ম - ৭০৪ খৃষ্টাব্দ, মৃত্যু- ৭৬৭ খৃষ্টাব্দ। জন্মস্থান- মদিনা, মাতৃভাষা- আরবী। মুহাম্মদের মৃত্যুর - ৭০ বছর পর তার জন্ম।
বুখারি: জন্ম-৮১০ খৃষ্টাব্দ, মৃত্যু- ৮৭০ খৃষ্টাব্দ। জন্মস্থান -উজবেকিস্তানের বুখারা, মাতৃভাষা - পারসি। মুহাম্মদের মৃত্যুর ১৮০ বছর পর তার জন্ম।
মুসলিম: জন্ম ৮১৭ খৃষ্টাব্দ, মৃত্যু- ৮৭৫ খৃষ্টাব্দ। জন্মস্থান- ইরানের নিশাপুর। মাতৃভাষা- পারসি। মুহাম্মদের মৃত্যুর ১৯০ বছর পর তার জন্ম।
আবু দাউদ: জন্ম- ৮১৮ খৃষ্টাব্দ, মৃত্যু- ৮৮৯ খষ্টাব্দ। জন্মস্থান- ইরানের সিস্তান। মাতৃভাষা - পারসি। মুহাম্মদের মৃত্যুর ১৯০ বছর পর তার জন্ম।
তিরমিজি: জন্ম- ৮২৮ খৃষ্টাব্দ- মৃত্যু- ৮৯২ খৃষ্টাব্দ। জন্মস্থান- উজবেকিস্তান। মাতৃভাষা- আরবি। মুহাম্মদের জন্মের ২০০ বছর পর তার জন্ম।
সূত্র: https://en.wikipedia.org/wiki/Ibn_Ishaq
সূত্র: https://en.wikipedia.org/wiki/Muhammad_al-Bukhari
সূত্র: https://en.wikipedia.org/wiki/Muslim_ibn_al-Hajjaj
সূত্র: https://en.wikipedia.org/wiki/Abu_Dawood
সূত্র: https://en.wikipedia.org/wiki/Al-Tirmidhi
মুহাম্মদের জীবনি সম্পর্কে জানতে ইসলামী আলেমরা এই চারজন্য হাদিস বেত্তার উপরে বেশী নির্ভর করেন , কারন তারাই মুহাম্মদের কর্মকান্ড ও আদেশ উপদেশের বিস্তারিত বিবরন দিয়ে গেছেন। বলতে গেলে , গোটা ইসলামটাই প্রতিষ্ঠিত তাদের লিখিত হাদিসের ওপর। কারন , কোরানে নানা বিষয়ের যে বিধি বিধানের উল্লেখ আছে তা বিস্তারিতভাবে বর্নিত না থাকায়, এইসব হাদিস বেত্তারা সেসবের বিস্তারিত বিবরন দিয়ে গেছেন, যার ভিত্তিতেই মূলত: মুসলমানরা ইসলাম পালন করে থাকে।
সুতরাং একটা বিষয় দেখা যাচ্ছে , এইসব হাদিস বেত্তাদের একজনও মক্কা বা মদিনা বা্ এমনকি আরবে জন্মগ্রহন করেন নি , তাদের মাতৃভাষাও আরবী না। আর তারা প্রত্যেকেই মুহাম্মদের কর্মকান্ড সম্পর্কে লিখে গেছেন মুহাম্মদ মারা যাবারও প্রায় ২৪০-২৫০ বছর পর। আর তারা মুহাম্মদের জীবনি লেখেন নি , লিখেছেন শুধুমাত্র ইসলামের বিধিবিধান তাও সেই সব মানুষের কাছ থেকে শুনে , যাদের অন্তত: ৫/৬ পুরুষ পর্যন্ত বাস্তবে মুহাম্মদকে দেখে নি। পক্ষান্তরে ইবনে ইসহাকের জন্মস্থান মদিনায়, যেখানে মুহাম্মদ আসলে তার ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করেন ,তার মাতৃভাষা আরবী , আর তিনি মুহাম্মদ মারা যাবার পর মাত্রই ১০০ থেকে ১২০ বছর পর থেকে মুহাম্মদের জীবনি লেখা শুরু করেন আর তিনি তথ্য সংগ্রহ করেন মদিনারই লোকদেরকে কাছ থেকে যারা ছিল অন্তত: ২য় প্রজন্মের মুসলমান ও ৩য় প্রজন্মের মুসলমান।
এই যখন প্রকৃত অবস্থা , তখন আমরা কার বিবরনকে সর্বাপেক্ষা গ্রহনযোগ্য মনে করব ? অবশ্যই ইবনে ইসহাকের বক্তব্যই হবে সর্বাপেক্ষা বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য। পক্ষান্তরে বুখারি , মুসলিম ইত্যাদিদের বিবরনের মধ্যে অনেক অসত্য বা অতিরঞ্জিত তথ্য থাকার সম্ভাবনা। সুতরাং মুহাম্মদ সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য জানতে আমাদেরকে ইবনে ইসহাকের ওপরেই বেশী নির্ভর করতে হবে । কারন তার আগে মুহাম্মদ সম্পর্কে আরব বা আরবের বাইরের কেউ কিছুই লিখে যায় নি।
দেখা যাক , মুহাম্মদ কিভাবে মদিনাবাসীদের মন জয় করেছিলেন, সে সম্পর্কে ইবনে ইসহাক কি বলেছেন। তবে তার আগে একটা সামাজিক তত্ত্ব আমাদের জানা দরকার, কারন মুহাম্মদের ক্ষেত্রে সেটা সবচেয়ে বেশী কাজ করেছিল। একটা প্রবাদ আছে - পীর তার নিজ গ্রামে সম্মান পায় না। কথাটা বাস্তবে যে কতটা সত্য সেটা বুঝতে গেলে আপনাকে আটরশি বা শর্ষিনা বা চরমোনাই ইত্যাদি পীরদের গ্রামে যেতে হবে। আশ্চর্য হলেও সত্য সেসব গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখনও এইসব পীরের মুরিদ না। বস্তুত: এই সব গ্রামের মানুষ এইসব কথিত পীরদেরকে শৈশব থেকেই দেখে আসছে, তাদের মধ্যে কোনরকম অতিপ্রাকৃত কিছুই তারা কখনও দেখেনি যাতে করে তাদেরকে পীর মানা যায়। তাই তারা সেসব পীরের মুরিদ হয় নি। কিন্তু যে কোন ভাবে হোক , পীরদের কিছু ভাড়াতে চ্যালা দুর দুরান্তে তাদের ওস্তাদ সম্পর্কে অতিরঞ্জিত নানা কিচ্ছা কাহিনী প্রচার করেছে , দুরের দুর্বল চরিত্রের মানুষ সেসব বিশ্বাস করেছে। কারন তাদেরও একটা মানসিক আশ্রয় দরকার নানা বিপদে আপদে। তাদের কাছে প্রচার করা হয়েছে ওমুক পীরের কাছে গেলে নানা রকম রোগ ব্যাধি, বালা মুসিবত সহ সকল রকম সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। শুনে শুনে দুর্বল চিত্তের মানুষগুলো তাদের নানা সমস্যা সমাধানের জন্যে সেসব পীরের কাছে ধন্না দিয়েছে। এভাবেই এসব পীরদের প্রচার প্রসার বেড়েছে। এমনকি বর্তমান যুগেও হঠাৎ হঠাৎ করে কত পীর ফকিরের আবির্ভাব ঘটে , যাদের সম্পর্কে প্রচার করা হয়, তারা খোড়া , অন্ধ , পাগল ইত্যাদিদেরকে সুস্থ করে তোলে, হাজার হাজার লাখ লাখ লোক তাদের কাছে ধর্না দেয়। কিন্তু কিছুদিন পরই দেখা যায় তাদের জারিজুরি শেষ। অর্থাৎ দুর্বল চিত্তের মানুষের দুর্বলতার সুযোগে কিছু ধান্ধাবাজ চতুর লোক এভাবেই আসলে ব্যবসা বানিজ্য করে একেবারেই বিনা পুঁজিতে।
ঠিক এই তত্ত্বটাই মুহাম্মদের ক্ষেত্রে বিপুলভাবে কাজে লেগেছিল। সেটা কিভাবে কাজ করেছে সেটার বর্ননা আছে ইবনে ইসহাকের সিরাত রাসুলাল্লায়-------
মক্কার কিছু লোক মদিনায় গিয়ে মদিনাবাসীদের কাছে প্রচার করেছে মুহাম্মদ সম্পর্কে সব অতিরঞ্জিত কিচ্ছা কাহিনী। মূর্খ মদিনাবাসীদের কিছু লোক সেটা বিশ্বাস করেছে। তারপর ইহুদিদের একটা বিষয়ও সেই সাথে কাজ করেছে। মদিনা ও তার আশপাশে বসবাসরত ইহুদিরা মদিনায় প্রচার করত , তাদের তৌরাত কিতাবে লেখা আছে তাদের জন্যে একজন নবী আসবে যে নাকি তাদের সকল সমস্যা দুর করে দেবে। মক্কা থেকে মদিনায় যাওয়া সেই মুসলমানরা মদিনাবাসীদের মধ্যে প্রচার করে , ইহুদিদের সেই কথিত নবী হলো মুহাম্মদ। মদিনাবাসীরা তো আগ থেকেই ইহুদিদের কাছ থেকে সেই ভবিষ্যৎ নবীর কথা শুনেছিল , কিন্তু তারা জানত না , তৌরাত কিতাবে কোন বংশে কোথায় কিভাবে সেই নবী আগমন করবে, কারন তারা তো তৌরাত কিতাব পড়ে নি। মক্কার লোকদের প্ররোচনায় , মদিনাবাসীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ইহুদিদের সেই ভবিষ্যতের নবী হিসাবে মুহাম্মদকে বিশ্বাস করে ও মক্কাবাসীদেরকে আশ্রয় দেয়, এবং তারাও বলতে থাকে ,যদি মুহাম্মদ মক্কায় টিকতে না পারে , তাহলে তিনি মদিনায় চলে আসতে পারেন।
সূত্র: পৃষ্ঠা- ১৯৭-১৯৮, সিরাত রাসুলুল্লাহ- ইবনে ইসহাক
(https://archive.org/details/TheLifeOfMohammedGuillaume)
মক্কা থেকে কিছু মুসলমান মদিনায় হিজরত করে। কারন মক্কাতে কুরাইশরা তাদের সাথে সমস্ত রকম সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল তারা ইসলাম গ্রহন করার কারনে। সেই যুগে , প্রায় আদিম প্রকৃতির অার্থ সামাজিক ব্যবস্থায় এভাবে মক্কাতে টিকে থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এছাড়া তারা ছিল হত দরিদ্র ও দাস শ্রেনীর। মুহাম্মদ তাদেরকে বেহেস্তের লোভ দেখিয়ে নিজের দলে ভিড়িয়েছিলেন। গরীব মানুষের কাছে বেহেস্তের লোভ সবচাইতে বড় লোভ। এই জগতে তো খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটছে ,ইসলাম অনুসরন করে যদি বেহেস্তে গিয়ে হুর পরী সহ সকল রকম লোভনীয় খাবার পাওয়া যায় , তাহলে মুহাম্মদকে অনুসরন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। বস্তুত: মুহাম্মদই তাদেরকে মদিনায় পাঠান ,তার সম্পর্কে অতিরঞ্জিক কিচ্ছা কাহিনী বলে মদিনাবাসীদেরকে আকৃষ্ট করার জন্যে। কারন দীর্ঘ দিন পার হয়ে গেল, মক্কাবাসীরা কোনভাবেই মুহাম্মদকে গ্রহন করছে না , তার ইসলামকেও গ্রহন করছে না। বরং তাকে তারা পাগল উন্মাদ ইত্যাদি হিসাবে উপহাস করছে। ঠিক আজকের দিনে নানা রকম ধান্ধাবাজ ,প্রতারক কথিত পীররা যেভাবে তাদের ভাড়াটে চ্যালাদেরকে বিভিন্ন যায়গায় পাঠায় তাদের পীর সম্পর্কে অতিরঞ্জিত কিচ্ছা কাহিনী প্রচারের জন্যে, এমন পদ্ধতিই মুহাম্মদ গ্রহন করেন ,তার চ্যালাদেরকে মদিনায় পাঠিয়ে।
- See more at: http://istishon.com/?q=node%2F21778#sthash.Td1LBQnH.7nowEV9o.dpuf
পর্ব-২ (ইতিহাসের আলোকে)
লিখেছেন: কাঠমোল্লা —
আগের পর্বে বলা হয়েছে , কেন মুহাম্মদকে জানতে হলে হাদিস বা কোরান নয়, তার সম্পর্কিত ইতিহাস জানা উচিত। এটাও বলা হয়েছে ইবনে ইসহাকই সর্বপ্রথম মুহাম্মদের জীবনি লেখেন, পরবর্তীতে গত ১২০০/১৩০০ বছর ধরে মুহাম্মদ সম্পর্কে যত জীবনি লেখা হয়েছে, তার সূত্র এই ইবনে ইসহাকের সিরাত রাসুলুল্লাহ। এটাও বলা হয়েছে - মক্কায় মুহাম্মদ সুবিধা করতে না পেরে তার কতিপয় সাহাবি মদিনায় প্রেরন করেন , যাতে তারা সেখানে মদিনাবাসীদের কাছে মুহাম্মদ সম্পর্কে অতিরঞ্জিত কিচ্ছা বলে তাদেরকে দলে ভিড়াতে পারে। এবার দেখা যাক , মুহাম্মদকে সত্যি সত্যিই মক্কাবাসীরা হত্যা করতে চেয়েছিল কি না।
এই ব্লগ পাতায় সরাসরি কোন পিডিএফ ফাইল পোষ্ট করা যায় না বিধায় , ইবনে ইসহাকের কিতাব থেকে সংক্ষেপে অনুবাদ করে সেটা উল্লেখ করা হবে। সেটা এখন বলা হচ্ছে ------------------
----------------------------------------------------------------------------------
মদিনায় হিজরত করা মক্কাবাসীদের প্রচারনায় মদিনার কিছু লোক বিশ্বাস করে ও ইসলাম গ্রহন করে, তাদের মধ্যে কিছু সর্দার গোছের লোকও ছিল। তখন মক্কাবাসীরা তাদের কাছে আবেদন জানায় , মদিনাবাসীরা মুহাম্মদকে মক্কায় আশ্রয় দেবে কি না এবং যদি মক্কা দখল করার জন্যে প্রয়োজনে মক্কাবাসীদের সাথে যুদ্ধ করতে হয়, তাহলে মদিনাবাসীরা মুহাম্মদকে সাহায্য করবে কি না। মক্কা দখল করা একারনে দরকার ছিল কারন , ইসলামের প্রধান ঘর(মুহাম্মদের দাবী অনুযায়ী) কাবা মক্কাতে ছিল। প্রাথমিকভাবে তারা সাহায্য করতে রাজী হয় কিন্তু তারা দাবী জানায় , এ ব্যপারে তারা সরাসরি মুহাম্মদের সাথে কথা বলতে চায়। তখন সিদ্ধান্ত হয়, সামনের হজ্জ মৌসুমে, মদিনা থেকে কিছু লোক যাবে মক্কাতে , সেখানে মুহাম্মদের সাথে তাদের সরাসরি আলাপ হবে। সেই মোতাবেক মদিনাবাসীরা হজ্জ করার সময় মুহাম্মদের সাথে সাক্ষাত করে , কথা বলে , সিদ্ধান্ত হয় যে , আল আকাবা নামক স্থানে এক রাতে পুরা বিষয়টা নিয়ে মদিনাবাসীদের সাথে বিস্তারিত কথা হবে ও সিদ্ধান্ত হবে।
নির্দিষ্ট দিনে গভীর রাতে ,মক্কার অদুরে আল আকাবা নামক স্থানে ৭২ জন মদিনাবাসী মুহাম্মদের সাথে সভা করার জন্যে অপেক্ষা করছিল। মুহাম্মদের সাথে তার চাচা আব্বাসও ছিল। আব্বাসই প্রথম বলে - "হে খাজরাজ গোত্রের লোক সকল, আমরা মুহাম্মদকে আমাদের গোত্রের মধ্যে সব রকম বিপদ থেকে রক্ষা করি। সে আমাদের মধ্যে সম্মান ও নিরাপত্তার সাথে বাস করে যদিও গোত্রের কিছু লোক তার বিরোধীতা করে। যদি তোমরা মনে কর, তোমরা মুহাম্মদকে তার বিরোধীতাকারীদের থেকে রক্ষা করতে পারবে,তাহলে তার সমস্ত দায় দায়ীত্ব তোমরা মাথা পেতে নাও। আর যদি তার দায় দায়ীত্ব না বহন করতে পার , তাহলে তাকে ছেড়ে দাও , সে আমাদের মধ্যে নিরাপত্তার সাথেই বসবাস করছে।"
তখন উপস্থিৎ মদিনাবাসীদের নেতারা মুহাম্মদের সাথে থাকার প্রতিজ্ঞা করল, এবং বলল- তারা মক্কাবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুহাম্মদের সাথে থাকবে। এমন সময় মদিনাবাসীদের এক নেতা আবুল হেতাম বিন তাইহাম দাড়িয়ে বলল- "আমরা তো মদিনায় ইহুদিদের সাথে শান্তিপূর্নভাবে বাস করি, যদি আমরা তাদেরকে বাদ দিয়ে আপনারা সাথে যোগ দেই ও যখন আপনি মক্কা দখল করবেন , তখন কি আপনি আমাদেরকে ত্যাগ করে চলে যাবেন ?" তখন মুহাম্মদ বললেন -" না আমি তোমাদেরকে ছেড়ে যাব না, তোমরা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে , আমিও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব , আর তোমরা যাদের সাথে শান্তিতে থাক , আমিও তাদের সাথে শান্তিতে থাকব।"
অত:পর সেখানে খাজরাজ গোত্র থেকে নয়জন ও আউস গোত্র থেকে তিনজন নেতা নির্বাচন করা হলো যারা মদিনাবাসীদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেবে।
সভার শেষ দিকে , সলিম বিন আউফ বলল-" তোমরা কি বুঝতে পারছ, যদি তোমরা মুহাম্মদের পক্ষ নিয়ে মক্কাবাসীদের বিপক্ষে যুদ্ধ কর ও যুদ্ধে হেরে যাও , তাহলে তোমাদের জান ও মালের কোন নিরাপত্তা থাকবে না ?" সবাই জানাল , সেটা তারা বুঝতে পারছে আর তাতেই তারা রাজী। কিন্তু সেই সাথে তারা জিজ্ঞেস করল - মুহাম্মদের প্রতি তাদের এই আনুগত্যের পুরস্কার হিসাবে কি পাবে ? মুহাম্মদ বললেন - "তোমাদেরকে বেহেস্ত দেয়া হবে যেখানে আছে অফুরন্ত সুখ ও শান্তি।"
কিন্তু এই খবর দ্রুতই মক্কার কুরাইশরা ভোর বেলা জেনে ফেলল, তারা জানতে পারল মুহাম্মদ মদিনাবাসীদের সাথে পরিকল্পনা করেছে মক্কা আক্রমনের , তখন সাথে সাথেই তারা আল আকাবার দিকে ছুটে গেল আর দুইজনকে তারা ধরে ফেলল, বাকীরা সবাই পালিয়ে গেল। এই ঘটনার পর পরই মক্কার কুরাইশ সর্দাররা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহন করল, মুহাম্মদের এই প্রচন্ড বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি দিতে হবে , আর তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করতে হবে।
সূত্র: পৃষ্ঠা- ২০০- ২০৫, সিরাত রাসুলুল্লাহ- ইবনে ইসহাক(https://archive.org/details/TheLifeOfMohammedGuillaume)
-------------------------------------------------------------------------------------
উপরের বর্ননায় পরিস্কার মুহাম্মদের চাচা আব্বাস বলছে - মুহাম্মদ তাদের মধ্যে কিছু লোকের বিরোধিতা সত্ত্বেও সম্মান ও নিরাপত্তার সাথে বাস করছিলেন। কিছু লোক যে বিরোধীতা করত , সেটা আর কিছু না , সেটা হলো তিনি কুরাইশদের ধর্মকে অবমাননা করতেন, তাদের মন্দির কাবা ঘরে জোর করে ঢুকে তাদের ধর্মের অবমাননা করতেন , আর তার সৃষ্ট ইসলাম প্রচার করতেন- কিন্তু কুরাইশরা সেটা করতে তাকে নিষেধ করত, এটাই ছিল মূল বিরোধিতা। অত:পর কুরাইশদের বিরুদ্ধে এখন মুহাম্মদ মদিনাবাসীদের সাথে ষড়যন্ত্র করছেন মক্কা আক্রমনের , কিন্তু কি কারনে ? কারন তারা ইসলাম গ্রহন করে নি। উক্ত সভায় কিন্তু কোথাও কেউ বা মুহাম্মদ নিজেও বলেন নি যে, মক্কাবাসীরা মুহাম্মদকে অত্যাচার করত , বা তার লোকদের অত্যাচার করত , একারনে মুহাম্মদ মদিনাবাসীদের সাথে ষড়যন্ত্র করছেন, বরং তার চাচা আব্বাস নিজেই বলছেন ,মুহাম্মদ তাদের মধ্যে সম্মান ও নিরাপত্তার সাথেই বাস করত। আর এভাবেই মুহাম্মদ বিগত তেরটা বছর বাস করেছেন , যদিও কুরাইশরা তার ধর্মকে গ্রহন করে নি ,কিন্তু তাই বলে , তারা মুহাম্মদকে অত্যাচার করে নি।তাকে হত্যা করার কথা তো তারা কল্পনাও করে নি।
কিন্তু তার পরিবর্তে মুহাম্মদ কি ষড়যন্ত্র করছেন ? তিনি মদিনাবাসীদেরকে বেহেস্তের লোভ দেখিয়ে মক্কাবাসীদেরকে আক্রমন করার পায়তারা করছেন , আর যখন সেটা মক্কাবাসীরা জেনে ফেলে বিশ্বাসঘাতক মুহাম্মদকে হত্যা করার জন্যে পরিকল্পনা করল , তখন সব দোষ হয়ে গেল কুরাইশদের। সেই গত বার/তেরশ বছর ধরে , আমরা শুনে আসছি , কুরাইশরা মুহাম্মদকে এমন অত্যাচার করত যার কোন সীমা ছিল না , তারপর তাকে তারা হত্যা করতে গেছিল কিন্তু আল্লাহর কুদরতে তিনি বেঁচে গেছেন। ইসলামের কোন কিতাবে আজ পর্যন্ত কোথাও লেখা নেই যে , মুহাম্মদ আসলে ছিলেন সীমাহীন বিশ্বাসঘাতক। কুরাইশরা তাকে সম্মান ও নিরাপত্তা দিয়েছিল যদিও মুহাম্মদ তাদের ধর্মকে অপমান করতেন ,কিন্তু তার প্রতিদান স্বরূপ মুহাম্মদ বিশ্বাসঘাতকতা করে বাইরের লোকদের সাথে আঁতাত করে সেই কুরাইশদেরকে আক্রমন করে হত্যা করে , মক্কা দখলের পায়তারা করেন।
এই যখন অবস্থা , তখন কুরাইশরা কি মুহাম্মদকে ধরে মাথায় তুলে নাচবে ? বিশ্বাসঘাতকের শাস্তি কি হওয়া উচিত?
এখানে আর একটা বিষয় খেয়াল করতে হবে। মদিনাবাসীদেরকে যখন বলা হয়, যদি মুহাম্মদ হেরে যায় , তাহলে তাদের জান মালের কোন নিরাপত্তা থাকবে না। তাতেও কেন মদিনাবাসীরা রাজী হয় ? খুবই সোজা। আসলে মদিনাবাসীরা মক্কা আক্রমন করে হেরে গেলেও তাতে তাদের জান মালের কোনই অসুবিধা হবে না এটা তারা জানত। কিভাবে ? যদি কেউ মক্কা মদিনার ভৌগলিক অবস্থান দেখেন , তাহলে সহজেই সেটা বুঝতে পারার কথা। মক্কার লোকদের জীবন তখন নির্ভর করত সিরিয়ার সাথে যে বানিজ্য ছিল তার ওপর। তো মক্কা থেকে সিরিয়া যেতে গেলে মদিনার পাশ দিয়েই যেতে হতো। কারন মদিনার অবস্থান হলো মক্কা ও সিরিয়ার মাঝখানে। আর কোন সহজ বানিজ্য পথ তখন ছিল না। তাই মক্কাবাসীদেরকে টিকে থাকতে গেলে সর্বদাই মদিনাবাসীদের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হতো। না হলে মদিনাবাসীরা ইচ্ছা করলেই মক্কাবাসীদের বানিজ্য বন্দ করে দিতে পারত। মুহাম্মদ যখন প্রান বাঁচানোর জন্যে মদিনায় পালিয়ে যান, তখন এই কৌশলটাই অবলম্বন করে মক্কাবাসীদেরকে কাবু করে ফেলেন। তিনি একটা দল গঠন করে , প্রায় নিয়মিত মক্কার বানিজ্য কাফেলার ওপর আক্রমন করতেন ,বনিকদেরকে হত্যা করতেন , তাদের মালামাল কেড়ে নিতেন । এটা ছিল আসলে স্রেফ ডাকাতি। যদিও কোরান ও হাদিসে বলা হয়েছে এটা হলো জিহাদ , যুদ্ধ ইত্যাদি। কিন্তু আতর্কিতে বানিজ্য কাফেলায় আক্রমন করে বনিকদেরকে হত্যা করা ও তাদের মালামাল লুটপাট করাকে কি যুদ্ধ বা জিহাদ বলে ?
যখন মুমিনদেরকে এই ডাকাতির কথা জিজ্ঞেস করা হয়, আচ্ছা নবী মুহাম্মদ কিভাবে ডাকাতি করতে পারেন ? তখন মুমিনেরা কিছুামাত্র চিন্তাভাবনা না করেই উত্তর দেয়- মক্কাবাসীরা মুহাম্মদ ও তার দলবলকে মক্কা থেকে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিল , মুহাম্মদকে হত্যা করতে চেয়েছিল , তারই প্রতিশোধ স্বরূপ , মুহাম্মদের এই ডাকাতি বৈধ। কিন্তু এখন সার্বিক ইতিহাস জানা গেল। সেখানে কি মক্কাবাসীরা মুহাম্মদকে মক্কা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল ? অথবা তারা কি আসলেই মুহাম্মদকে হত্যা করতে চেয়েছিল ? নাকি মুহাম্মদই তার বিশ্বাসঘাতকতার কারনে নিজের বিপদ ডেকে এনেছিলেন ? আর অত:পর গত বার তেরশ বছর ধরে , মুহাম্মদের সেই বিশ্বাসঘাতকতাকে গোপন করে , সব দোষ কুরাইশদের ওপর চাপান হয়।
তাহলে কি দেখা যাচ্ছে ? ইসলাম কি ১০০%ই মিথ্যাচারের ওপর দাড়িয়ে আছে ?
মক্কাবাসীরা কি সত্যিই মুহাম্মদকে হত্যা করতে চেয়েছিল ?