শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর উম্মত হওয়া সত্ত্বেও কিয়ামতের মাঠে ১৩ ধরণের মুসলমানের উপর মহান আল্লাহ তায়ালার সুদৃষ্টি কখনোই পড়বে না। অর্থ্যাৎ ওই ১৩ ধরণের ব্যক্তি যতই আমল করুক না কেন আল্লাহ তায়ালার কাছে তাদের সেই আমলের কোনই মূল্য নেই। যে ১৩ ধরণের ব্যক্তির উপর আল্লাহ তায়ালার সুদৃষ্টি পড়বে না তারা হলেন-
১। যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার ও শপথকে সামান্য বিনিময়ে বিক্রয় করেঃ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, এরা আখেরাতের কোন অংশই পাবে না এবং আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না, বস্তুতঃ তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” [আল্ ইমরান/৭৭] এই আয়াতে মিথ্যা কসম করা হারাম এর প্রমাণ রয়েছে, যা মানুষ সামান্য পর্থিব লাভের জন্যে করে থাকে। উলামাগণ এই কসম কে আল্ ইয়ামীন আল্ গামূস বা ডুবানোর কসম আখ্যা দিয়েছেন কারণ; তা এই কসমকারীকে পাপে ডুবায় অতঃপর জাহান্নামে। [আল্লাহই আশ্রয়দাতা]
২। গিঁটের (টাখনুর) নিচে বস্ত্র পরিধানকারী।
৩। মিথ্যা কসম দিয়ে পণ্য বিক্রয়কারী।
৪। কারো উপকার করে তাকে উপকারের খোটা দাতা।
গিঁটের নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরিধানকারী হচ্ছে, সেই ব্যক্তি যে তার লুঙ্গি ও কাপড় এত ঝুলিয়ে পরে যে তার দুই গিঁটের নিচে চলে যায়। যদি সে অহংকার স্বরূপ এমন করে, তাহলে তার জন্য উপরোক্ত শাস্তির ঘোষণা কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না যে, তার লুঙ্গি অহংকার স্বরূপ ঝুলিয়ে পরে”। [বুখারী, নং৫৭৮৩/ মুসলিম] আর যে অহংকার স্বরূপ নয় বরং এমনি ঝুলিয়ে পরে, তাহলে তার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই বাণী প্রযোজ্যঃ “লুঙ্গির যতটা গিঁটের নিচে থাকবে, ততটা জাহান্নামে যাবে”। [বুখারী,নং৫৭৮৭ ]
পর্দার উদ্দেশ্যে মহিলাদের এক গজ ঝুলিয়ে পরা বৈধ কিন্তু এর বেশী করবে না।
আর মিথ্যা শপথ করে সামগ্রী বিক্রয়কারী হচ্ছে, এমন ব্যক্তি যে মহান আল্লাহকে তুচ্ছকারী। তাই সে (আল্লাহার কসম দিয়ে) মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে লোকদের নিকট পণ্য বিক্রি করে।
আর খোটাদাতা হচ্ছে, যে দান করার পর খোটা দেয়।
৫। যে মুসাফিরকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি থেকে বাধা দেয়।
৬। যে পার্থিব লাভের আশায় কোন মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বায়আত (অঙ্গীকার) করে।
আবু হুরাইরা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন প্রকারের লোকের সাথে মহান আল্লাহ কিয়ামত দিবসে কথা বলবেন না, না তাদের দিকে তাকাবেন আর না তাদের পবিত্র করবেন; বরং তাদের জন্য রয়েছে শক্ত আযাব। ঐ ব্যক্তি যার নিকট র্নিজন প্রান্তরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি থাকা সত্ত্বেও মুসাফিরকে তা ব্যবহার করা থেকে নিষেধ করে। আল্লাহ তাকে বলবেনঃ আজ আমি তোমাকে আমার অতিরিক্ত (রহমত) থেকে বঞ্ছিত করবো, যেমন তুমি তোমার বিনা পরিশ্রমে অর্জিত অতিরিক্ত পানি থেকে বঞ্ছিত কেরেছ এবং সেই ব্যক্তি যে আসরের পর কোন ব্যক্তিকে তার সামগ্রী বিক্রয় করে। আল্লাহর কসম খেয়ে বলে আমি এটা এই এই দামে ক্রয় করেছি। ক্রেতা তার কথা সত্য মনে করে তার কাছ থেকে পণ্য খরিদ করে অথচ সে সত্য নয়। আর সেই ব্যক্তি যে কোন মুসলিম ইমামের (রাষ্ট্রপরিচালকের) হাতে কেবল পার্থিব উদ্দেশ্যেই বাইআত (অঙ্গীকার) করলো; সে যা চায় যদি তাকে তা দেওয়া হয় তো অঙ্গীকার পূরণ করে, আর না দিলে ভঙ্গ করে। [বুখারী, নং ৭২১২/ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, নং২৯৭]
৭। বৃদ্ধ ব্যভিচারী।
৮। মিথ্যুক বাদশাহ।
৯। অহংকারী দরিদ্র।
আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আল্লাহ তাআ’লা কেয়ামত দিবসে তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, আর না তাদের পবিত্র করবেন, না তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টি দিবেন, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তিঃ বৃদ্ধ যেনাকারী, মিথ্যুক রাজা এবং অহংকারী দরিদ্র”। [মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, নং২৯৬]
১০। পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান।
১১। নারী হয়ে পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বণকারীনি।
১২। দাইযূস।
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “ তিন প্রকার লোকের দিকে আল্লাহ তাআ’লা কিয়ামতের দিনে দৃষ্টিপাত করবেন নাঃ পিতা-মাতার অবাধ্য, পুরুষের সদৃশ অবলম্বনকারীনি মহিলা এবং দাইয়ূস। আর তিন প্রকার লোক জান্নাতে যাবে নাঃ পিতা-মাতার অবাধ্য, মদ পানে আসক্ত এবং অনুদানের পর খোটাদাতা” [মুসনাদ আহমদ, নং ৬১১/নাসাঈ]
পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের বিষয়টি স্পষ্ট, কারণ আল্লাহ তাআ’লা পিতা-মাতার অধিকারকে মর্যাদা দিয়েছেন, তিনি নিজ অধিকারকে তাদের অধিকারের সাথে সংযুক্ত করেছেন এবং তাদের উভয়ের সাথে সদ্ব্যবহার করার আদেশ করেছেন; যদিও তারা কাফের হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “ পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি”। [তিরমিযী, নং ১৯৬২, আলবানী সহীহ বলেছেন]
পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বণকারীনি বলতে সেই মহিলাকে বুঝায় যে, পোষাক-পরিধানে, চাল-চলনে, কাজে-কর্মে এবং কথার শুরে পুরূষের অনুকরণ করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বণকারী পুরূষ এবং পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বণকারীনি মহিলাদের প্রতি অভিষাপ করেছেন”। [বুখারী]
১৩। যে তার স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করেঃ
ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআ’লা সেই ব্যক্তির দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না যে, পুরুষের সাথে সঙ্গম করে কিংবা স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করে”। [তিরিমিযী, নং১১৭৬।