সবার প্রথম কথা বইলা নিই । এইখানে যেই মা এর কথা বলা হইছে, তারা হইলো প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগে যারা একাধিক পুরুষের সাথে যৌন সংগম করছে তারা । বিবাহে সৎ অথবা শুধু একজন যৌন সংগী যাদের, তারা খুব ভালোভাবেই জানে তাদের সন্তানের জনক কে ।
দরিদ্র দেশে লোকজনের মধ্যে মিস্টিক জিনিসে বিশ্বাস করার প্রবণতা বেশি । বাস্তবতার ** মারা হয়ত সবসময় খাইতে হয় বইলা মিস্টিক, রহস্যময় জিনিসে বিশ্বাস কইরা বোধহয় লোকজন একটু বাস্তবতা থাইকা মুক্তি চায় । গত কয়েকদিনের পুস্টের পইড়া দেখলাম ধার্মিকদের পাশাপাশি বেশিরভাগ যুক্তিবাদি নাস্তিকও দেখা যায় এইটা স্বীকার কইরাই নিছেন যে, বাচ্চার আসল বাপ কে এইটা কোন এক রহস্যময় কারণে মা নিশ্চিত ভাবে জানেন । অন্য কেউ জানে না ।
কথা হইলো, যেই মা একাধিক যৌন সংগীর সাথে নিয়মিত সংগম করে প্রেগন্যান্ট হইলেন, তার নিজের পক্ষেও কোনভাবে জানা সম্ভব না বাচ্চার বায়োলজিক্যাল বাপ কে । এইখানে কোন মিস্টিক ফিস্টিক নাই । সিম্পল প্রোবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন । ব্যাখা করার আগে কিছু প্রাথমিক জিনিস জাইনা নিই আসেন,
গর্ভধারণ কিভাবে হয় > এর জন্য আসেন আগে নারী প্রজননতন্ত্রের ছবি দেখি ।
প্রতিবারের ঋতুচক্রে ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম্বক (ওভাম) বের হয়ে ফেলোপিয়ান নালীতে আসে । সংগমের মাধ্যমে পুরুষের সিমেন (ধাতু, হাহাপগে) যোনীপথে জমা হয় । যোনীপথ থেকে শুক্রাণুরা সাঁতার কাটতে থাকে উপরের দিকে । বেশীরভাগই বেঘোরে মারা যায়, সারভিক্স এবং যোনীপথের চাপে, এসিডিটিতে । মাত্র ২০০ টার মত ফেলোপিয়ান নালীতে পৌঁছাইতে পারে । ফেলোপিয়ান নালীতে পৌঁছাইলে এরা সেন্সরের মত ডিম্বাণু খুঁজতে থাকে । পাওয়া গেলে সবাই ডিম্বাণুর চারদিক ঘিরে ফেলে । শেষ পর্যন্ত ভিতরে ঢুকার টিকেট পায় একজন । বাকীগুলা ইন্নালিল্লাহ । ভিতরে শুক্রাণু ঢুকার পরে ডিম্বাণু এক্টিভেটেড হয় , জাইগোট তৈরী হয়, এবং এই জাইগোট নীচে নেমে জরায়ুর ভিতরের দিকের পেশীর গায়ে লাগে । জরায়ুর ভিতরের দিকের পেশী আগে থাইকাই প্রস্তুত থাকে । আঠালো, নরম হয়ে । এরপর থেকে এই জাইগোট বড় হইতে হইতে একটা শিশু হয় ।
মোটামুটি এইটা হইলো ফার্টিলাইযেশন বা নিষেকের কিচ্ছা । এই নিষেকের সফলতা কিছু জিনিসের উপর নির্ভর করে । তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হৈলো, ডিম্বাণুটা ঠিক কোনদিন কোনসময়ে ডিম্বাশয় থাইকা বাইর হৈয়া ফেলোপিয়ান নালীতে আসলো ।
গড়পড়তা সুস্থ্য যুবতীর ঋতুচক্র ২৮ দিন । এইটা গোণা হয়, এইবারের রজঃস্রাব শুরু হওয়ার দিন থেকে পরেরবার শুরু হওয়ার দিন পর্যন্ত । এই হিসাবে, ইম্পিরিকাল স্টাডিগুলাতে পাওয়া গেলো, মোটামুটি ঋতুচক্রের ১৩-১৫ দিন হচ্ছে ডিম্বায়নের (ওভুলুশন) সবচে সম্ভাব্য সময় । আরো ব্রডলি , মোটামুটি ১০-১৬ এই ৭ দিন হৈলো ওভুলুশন (ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের হয়ে আসে) এর সম্ভাব্য সময় । কিন্তু ঠিক কখন কোনক্ষণে হৈলো, এইটা জানা খুব কঠিন । এখন নিষেকের সফলতার জন্য আরো কয়েকটা তথ্য গুরুত্বপূর্ণ
১. একবার বের হওয়ার পরে একটা ডিম্বাণু বাঁচে সর্বোচ্চ ১ দিন ।
২. নারীদেহের ভিতরে একটা শুক্রাণু বাঁচতে পারে সর্বোচ্চ ৫-৬ দিন (গড়পড়তা ৩-৪দিন)
৩. শুক্রাণু মোটামুটি ঘন্টায় ৮ ইন্চি বেগে সাঁতার কাটে । যোনীপথ, জরায়ু, ফেলোপিয়ান নালী মিলে মোটামুটি ১০-১২ ইন্চির মত জায়গা । তারমানে বীর্যপাতের পর ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছাইতে ১-২ ঘন্টার বেশী লাগে না ।
এইবার নিষেকের সময়ের অনিশ্চয়তার দিক দেখা যাক । ওভুলুশনের অনিশ্চয়তা উপরে দেখলাম ৭ দিন । এখন ডিম্বাণু যেহেতু ১ দিন বাঁচে, তাইলে ৭+১ = ৮ দিন হৈলো ওভুলুশনের দিক থেকে দেখা নিষেকের সম্ভাব্য সময় ।
এখন আবার শুক্রাণু নারীদেহের ভিতরে সর্বোচ্চ ৬ দিন বাঁচতে পারে । এর মানে কি । এর মানে হৈলো, ওভুলুশনের ৬ দিন আগেও যদি সর্বশেষ যৌন-মিলন হয় তাইলেও গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাব্যতা থাইকা যায় ।
এই দুইটা মিলাইয়া দেখা গেলো, নিষেকের সম্ভাব্য রেন্জ হৈলো ৮+৬ = ১৪ দিন । অর্থাৎ পরের ঋতুচক্রে যদি দেখা গেলো একজন গর্ভবতী, তার সন্তানের জনক হৈতে পারে উপরে দেখানো ১৪ দিনের মধ্যে যতজনের সাথে যৌনমিলন হৈছে তাদের যেকোন একজন । কখন কোনদিন কে, এইটা বুঝার কোন উপায় নাই ।
তবে ওভুলুশন কখন হৈছে এইটা বুঝার একটা উপায় আছে । এইটা হৈলো ঋতুচক্রের প্রতিদিনের জন্য শরীরে তাপমাত্রার চার্ট তৈরী করা । চার্ট মোটামুটি এইরকম হয় ।
চার্ট থেকে দেখা যায়, ওভুলুশনের দিন শরীরের তাপমাত্রার একটা লাফ দেখা যায় । এবং ওভুলুশনের আগে ও পরে , তাপমাত্রার দিক থেকে দুইটা আলাদা তাপমাত্রার রেন্জ দেখা যায় । অর্থাৎ প্রতিদিন সকালে শরীরের তাপমাত্রা মেপে মেপে চার্ট করলে ওভুলুশনের সময় মোটামুটি সফলতার সাথেই বের করা যায় ।
কিন্তু চার্টখানা ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে এইখানে যেই কেস দেখানো হৈছে সেইটার জন্য তাপমাত্রার লাফের পরিমান ১.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট । তবে গড়পড়তা এই লাফের পরিমাণ ০.২-০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট । অর্থাৎ নিজের অনুভুতি দিয়া বুঝার কোন উপায় নাই । এমনকি সাধারণ ব্যবহারের থার্মোমিটারের মার্জিন অফ এররের মধ্যেও পড়ে যেতে পারে । এইধরণের চার্ট ব্যবহার করে যারা খুব ডেসপারেটলি গর্ভবতী হৈতে চায়, কিন্তু পারতেছে না তারাই ।
এখন ওভুলুশনের টাইম পিনপয়েন্ট করা গেলেও, শরীরের ভিতরে শুক্রাণুর আয়ুস্কাল পিনপয়েন্ট করার কোন উপায় নাই । এইকারণে ওভুলুশনের টাইম পিনপয়েন্ট কৈরা ওভুলুশন সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা ৮ দিন বাদ দেয়া গেলেও, শুক্রাণুর আয়ুষ্কাল সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা ৬ দিন দূর করার কোন উপায় নাই । অর্থাৎ এই ছয়দিনের মধ্যে যতজনের সাথে যৌনমিলন হৈছে তাদের যে কেউ-ই সন্তানের জনক হৈতে পারে ।
মজার কথা হৈলো, কেউ যদি স্যাবোটাজও করতে চায় , (তসলিমার শোধ উপন্যাসের মত) অর্থাৎ, এই অনিশ্চিত ১৪ দিনে অন্য কারো সাথে যৌনমিলন করে , বাচ্চার জনক বৈলা অন্য কাউরে চালাইয়া দিতে চাইলে, খুব সহজেই মেমোরী ঘাটলে বাইর করা সম্ভব যে এই সন্তানের জনক সে ছাড়া অন্য কেউ ।
এইগুলা ছাড়াও আরো বেশ কিছু ব্যতিক্রম আছে । কারো ঋতুচক্র ৩২ দিন পর্যন্ত হয় । অনেকের ওভুলুশন ছাড়াও রজঃস্রাব হয়, অনেকের গর্ভধারণ ছাড়াও রজঃস্রাব বন্ধ হৈয়া যায় । এইরকম হাজারটা সমস্যা আছে ।
মাগার সকল কথার শেষ কথা হৈলো , পিতা একটা বায়োলজিক্যাল সম্পর্কের চাইতে বরং সামাজিক সম্পর্ক । যে লোক আমাকে কষ্ট করে পালন করলো, শিক্ষা দিলো, বিপদ থেকে রক্ষা করলো, সে আমার জনক না হৈলেও তারে পিতা, বাবা ডাকতে আমার কোন সমস্যা নাই । সে আমার জনক না এইটা জানলেও তার প্রতি আমার ভালোবাসা বা সম্মানে বিন্দুমাত্র ঘাটতি হবে না ।
*এই পোস্টের সব কথা কনডম বা অন্য কোনরকম জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছাড়া যৌনমিলনের জন্য প্রযোজ্য ।*