Wednesday, October 7, 2015

সাম্প্রতিক সময়ে সমাজের অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে বিবাহ বিচ্ছেদ বা ডিভোর্স।


বিশেষ করে, যুবক সম্প্রদায়, যারা সদ্য বিয়ে করছে তাদের মধ্যে এই ডিভোর্সের হারটা যেন ভয়াবহ রকম বেশি। দেখা যাচ্ছে, ৫ বছর প্রেম করে বিয়ে করছে, কিন্তু ১ বছর সংসার করে বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। কিংবা বিয়ের এক বছর পর বউ আগের বিএফ’র সাথে সম্পর্ক করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। সংসারে ঘটছে ঝামেলা, শেষ পরিণতি ডিভোর্স। অথবা বিয়ের পর জামাই-বউ বনিবনা হচ্ছে না, অথচ দু’জনেই ডিজুজ কোয়ালিটির। ফলে হয়ে যাচ্ছে ডিভোর্স।
ডিভোর্স নামক শব্দটির সৃষ্টি কিন্তু ‘অবিশ্বাস’ নামক আরেকটা শব্দ থেকে। আগের প্রজন্মগুলোতে বিবাহ বিচ্ছেদ যত দেখা গিয়েছে, এখন তার থেকে কয়েকগুনহারে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার মূল কারণ- বর্তমান তরুণ প্রজন্ম একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ছেলেরা শিক্ষা জীবনে দেখছে অধিকাংশ মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে, অনেকের আছে অবৈধ সম্পর্ক। আমার মেয়েরাও দেখছে পুরুষরা অনেক মেয়ের সাথে বন্ধুত্বের নাম দিয়ে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলছে। এই প্রভাবটা থাকছে বিয়ের পরেও। স্বামী ভাবছে তার স্ত্রীর নিশ্চয়ই অনেকগুলো বিএফ ছিলো এবং এখনও সম্পর্ক আছে। আবার স্ত্রী ভাবছে তার স্বামীর নিশ্চয়ই অনেকগুলো জিএফ ছিলো এবং এখনও তাদের সাথে সম্পর্ক জিয়িয়ে রেখেছে। ঘটনা সত্যও হতে পারে, আবার কল্পনাও হতে পারে। কিন্তু অবিশ্বাস নিয়ে তো আর সংসার করা যায় না, তাই আলটিমেট রেজাল্ট ডিভোর্স। উল্লেখ্য, আমাদের আগের প্রজন্মের মধ্যেও কিন্তু বন্ধু-বান্ধবী মানে সিস্টেম ছিলো। কিন্তু এখন জিএফ-বিএফ’র নতুন অর্থ গজিয়েছে, অনেকটা মৌমাছির ঘুরে ঘুরে মধু খাওয়ার মত। এর প্রভাবটা আপনি পাচ্ছেন, বিয়ের পর, মানে ডিভোর্স।
সত্যিই বলতে, সমাজ কিন্তু পরিবেশ এরই একটা অংশ। পরিবেশ যেমন তার ভারসাম্য রক্ষা করে চলে, একটা উপাদান নষ্ট হলে, আরেকটা উপাদানে প্রভাব পড়ে। ঠিক তেমনি সমাজও একই রকম। সমাজও ভারসাম্য রক্ষা করে চলে। আপনি সমাজে এক স্থানে বাধা দেবেন, তার প্রভাব গিয়ে পড়বে অন্য স্থানে।
আজকাল সমাজ এমন হয়ে দাড়িয়েছে, ছেলে-মেয়েরা মাঝ বয়সী না হলে তাদের বিয়ে দিতে চায় না। একটা মেয়ের শারীরিক চাহিদা হচ্ছে ১৩ বছর বয়সে, তাকে আটকে রাখা হচ্ছে ২৬ বছর পর্যন্ত। আজকাল অনেক ছেলের মুখেই তাই শোনা যায়- “আচ্ছা আমার বউটা ভার্জিন পাবো তো ? ”। নারীদের ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই তার বিপরীত ঘটছে। পুরুষের শারীরিক চাহিদা হচ্ছে ১৫ বছর বয়সে। তাকে আটকে রাখা হচ্ছে ৩০-৩২ বছর বয়স পর্যন্ত। ক্লাস সিক্সের ছেলেরা ঝুকে যাচ্ছে পর্নোগ্রাফীর দিকে, বাকি যৌবনের পথ তো পরেই আছে। ব্যাপারটা এমন হয়ে দাড়িয়েছে, বর্তমান সমাজ আমাদের অনৈতিকতার সাইলেন্ট অনুমোদন দিয়েছে, কিন্তু নৈতিক বিয়ের প্রকাশ্য অনুমোদন দেয়নি। আপনি পর্নোগ্রাফি দেখেন, জিএফ-বিএফ ডেট করেন, নো প্রব, সমস্যা শুধু বৈধ বিয়ে নিয়ে।
আমি বলবো, তরুণ সমাজকে এ বাধন ভাঙ্গতে হবে। বিয়ের কোন বয়স রাখা যাবে না, যার যখন প্রয়োজন তখনই সে বৈধ বিয়ে করবে। আমাদের পূর্ব পুরুষদের মধ্যে এ কালচারটা ছিলো বলেই আমাদের বাবা-মা’র সংসার টিকেছিলো, ডিভোর্স হয়নি। আমরা যদি সেই কালচার ফিরিয়ে না আনতে পারি, তবে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম কিন্তু কখনই তার বাবা-মাকে একত্র দেখতে পারবে না, কখনই না।