গাঁজা একটি গাছের নাম যার বৈজ্ঞানিক নাম Cannabis indica. বহু আগে থেকে গাঁজা আমাদের পৃথিবীতে একটি বহুল ব্যবহৃত মাদক। কম মূল্য এবং সহজলভ্যতা নিম্ন আয়ের নেশাখোরদের মাঝে এর আগ্রাসনে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। গাজা গাছের নির্জাসই মূলত নেশার বস্তু হিসেবে কার্যকর যার নাম ক্যানাবিনল। ক্যানাবিডিয়ল এবং ক্যানাবিনলিক এসিড ও এর কার্যকর উপাদান।
ভিন্ন ভিন্ন নামে বিভিন্ন দেশে এর বিস্তার। গাঁজা গাছের শীর্ষ পাতা এবং ডাল যা এই উপমহাদেশে গাঁজা নামে পরিচিত একই জিনিস পশ্চিমা দেশ গুলোতে মারিজুয়ানা বা মারিহুয়ানা নামে পরিচিত। গাছের পাতা বা ডালের আঠালো কষ দিয়ে তৈরী এ অঞ্চলের চরস নামের জিনিসটিই পশ্চিমা দেশের হাশিশ। ভাং, সিদ্ধি, পাট্টি, সব্জি, গ্রাস, মাজুন নানা নামে ডাকা হয় এই বিষাক্ত বস্তুটিকে।
এই মাদকটি গ্রহনে দৃষ্টিভ্রম, বাচালতা, মাংশপেশীর অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয় সংকোচন, দিকভ্রান্ত হওয়া, মাথা ঘুরা, ক্ষুধা লাগা, গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে যাওয়া,সময়জ্ঞান হারানো থেকে শুরু করে প্রলাপ বকা, বিকার আসা এমনকি মানুষকে হত্যাকরার ইচ্ছাও জাগ্রত হতে পারে। মাত্রা বেশী হয়ে গেলে অনেক সময় হাত পা এর নড়াচড়ার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলা, হাতে পায়ে ঝি ঝি ধরা এবং অবশ হয়ে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে যাওয়া থেকে শ্বাস কষ্ট হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
নিয়মিত এবং বেশী মাত্রায় গাঁজা জাতীয় দ্রব্য সেবনে গাঁজা সাইকোসিস (Ganja-psychosis) নামে একধরনের লক্ষণ হয়। এতে চোখে রক্তজমে চোখ লাল হয়ে যায়, ক্ষুধামন্দা, নির্জিবতা, শরীরের মাংস-পেশী শুকিয়ে যাওয়া, অত্যাধিক দুর্বলতা, হাত-পা অনবরত কাঁপতে থাকা, পুরুষত্বহীনতা থেকে শুরু করে পুরোপুরি মানসিক রোগী হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে।
রানিং এমোক (Running amok) নামক আরেক ধরনের মানসিক বিপর্যয় ও গাঁজা সেবীদের পরিণতি হয়ে আসতে পারে। অবিরত গাঁজা সেবনের কারনে অনেক সময় এদের দৃষ্টিভ্রম (Hallucination), নির্যাতিত-বঞ্চিত হবার কল্পনা থেকে এরা হিংসাত্মক, আগ্রাসি সন্ত্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ন হতে পারে। রানিং এমক হলে লোকটি চোখের সামনে যাকে পায় তাকে তার কল্পিত শত্রু মনে করে অস্ত্র নিয়ে হত্যা করতে পারে এবং এই মানসিক অবস্থা কেটে যাবার আগ পর্যন্ত যাকে সামনে পায় ক্রমান্বয়ে তাকেই হত্যা করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। এই আবেশ কেটে গেলে একসময় সে আত্মহত্যা করতে যেতে পারে অথবা আত্মসমর্পনও করতে পারে।
গাঁজা এই সমাজে অশিক্ষিত, সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠির মধ্যেই বেশী প্রচলিত। সহজলভ্যতা এবং সস্তা হওয়ায় এর প্রচলন ধীরে ধীরে বেড়ে চলতে পারে। সঠিক সময়ে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে গাজার বিষাক্ত শ্বাস এই সমাজের অনেক তাজা প্রাণের বিনাশ ঘটাতে পারে।
গাঁজার ইতিহাসঃ-
গাঁজা এক ধরনের উদ্দীপক মাদক । মাদক হিসাবে গাঁজার ব্যাবহার খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল থেকে হয়ে আসছে । সনাতন ধর্মগ্রন্থ অথর্ব বেদে এবং পুরাণেও গাঁজার কথা উল্লেখ আছে । পুরাণে উল্লেখ আছে যে, দেবতারা গাঁজা গাছের জন্ম দিয়েছেন এবং সমুদ্র মন্থনকালে অমৃত থেকে গাঁজা গাছের উৎপত্তি হয়েছে ।
ইউরোপে গাঁজা ব্যাবহারের তথ্য পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ সালে গ্রিক দার্শনিক হেরোডোটাসের লেখায় ।
নামের উৎপত্তিঃ
গাঁজা গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Canabis sativa Linn . গোত্র Urticaceae . এই গোত্রের অন্য কোন গাছের কোন মাদক গুন নেই ।
ল্যাটিন ' ক্যানাবিস ' শব্দটি এসেছে আদি গ্রিক শব্দ ' কন্নাবিস ' হতে ।
গাঁজা গাছের স্ত্রী-পুরুষ আছে । এবং দুই গাছেই ফুল বা মঞ্জুরি হয় । কিন্তু শুধু স্ত্রী গাছ থেকেই গাঁজা , ভাং বা চরস দেয় । মজার ব্যাপার হচ্ছে যে , পুরুষ গাছের কোন মদক ক্ষমতা নেই ।
এছাড়া বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে এই মাদকটি পরিচিত । গাঁজা সেবনে ইন্দ্রিয় উত্তেজিত হয় বলে এর আরেক নাম ' হরষিনী ' এছাড়া গাঁজার আরও ডাক নাম হচ্ছে , চার্জ , ড্যাগো ( দঃ আফ্রিকা ) ; গ্রাস , হাস , হেম্প , কিয়েফ ( উঃ আফ্রিকা) ; পট , টি , উইড ( উঃ ও দঃ আমেরিকা ) ; গাজে , গাঞ্জো ( ওয়েস্ট ইন্ডিস )
গাঁজার বিভিন্ন প্রকারকে একত্রে মারিজুয়ানা বলা হয় । ধারনা করা হয় যে, মারিয়া ও জুয়ানার নামানুসারে গাঁজার প্রথম এই নামটি দেয় মেক্সিকানরা ।
স্ত্রী গাছের শুকনা পাতাকে বলা হয় ভাং । ভাং এর শরবত পুরানো ঢাকায় খুব বিখ্যাত । হিন্দুদের কালি পূজায় ভাং এর সরবত তৈরি করা হয় । এছাড়া গাঁজাকে সিদ্ধি নামেও ডাকা হয় ।
ঔষধ হিসাবে গাঁজার ব্যাবহারঃ
চিকিৎসাশাস্ত্রে গাঁজা পরিচিত উত্তেজক,বেদনানাশক, নিদ্রাকারক হিসাবে ।
১ ) গাঁজা পাতার গুরা ডায়রিয়া বা উদরাময় নিরাময় করে । এবং এর রস ১৫-২০ ফোটা দিনে তিন বার খেলে রক্ত আমাশয়ে নিরাময় হয় ।
২) ভাং শিশুদের ধনুষ্টংকার রোগেও বিশেষ ফল দেয় ।
৩) প্রাচীনকালে গনোরিয়াতে গাঁজার ব্যাবহার হত । দুধের সঙ্গে বেটে ক্ষত স্থানে লাগানো হত ।
৪) বর্তমানে ইউরোপে ক্যান্সার এ আক্রান্ত রোগীদের বেথা কমানোর জন্য গাঁজার ধোঁয়া পান করতে দেওয়া হয় ।
৫) হাঁপানিতে গাঁজা দারুন কার্যকর ।
৬) হ্রদযন্ত্রের সমস্যায়ও এর ব্যাবহার আছে
পরিশেষে বলা যায় যে , গাঁজার যতই ঔষধি গুনাগুনই থাকুক না কেন , এর থেকে ১০০ হাত দুরে থাকাই ভাল ।
গাঁজা সেবনে নেশার অনুভূতিঃ
গাঁজার নেশার অনুভূতি কেমন হবে তা অনেকটাই নির্ভর করবে যে , সেবনকারী কি পদ্ধতিতে এবং কি পরিমাণ খাবে । সাধারণত গাঁজা একা একা খাওয়া হয় না । কয়েকজন মিলে একত্রে দলবেঁধে এটা খাওয়া হয় ।
সাধারণত গাঁজা সেবনের পর মনে এক ধরনের আনন্দ দেখা দেয় । গাঁজা সেবনের আগে যদি কারোও মনে আনন্দ বা বিষন্নতা থাকে তাহলে গ্রহনের পরে তা অনেকটাই প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে । গাঁজা সেবনের পর অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায় অর্থাৎ খুলে যায় এক কল্পনার রাজ্য । কল্পিত বস্তু , কল্পনার রং আরও প্রখর হয়ে দেখা দেয় । গাঁজা সেবনের ফলে মায়া বিভ্রমও দেখা দেয় । গাঁজা টানার পর কোন স্থান , কাল , পাত্রের কোন খেয়াল থাকে না । কথা বলার প্রবনতা বেড়ে যায় । চোখ লাল হয়ে যায় । এছাড়া শরীরের রক্তচাপ কমে যেতে পারে । ঘন ঘন শুকনা কাশি হতে থাকে । এই অবস্থার দুই থেকে চার ঘন্টা চলার পর আস্তে আস্তে শিথিলতা আসে,ঘুম আসে ।
গাঁজা সেবনে ক্ষয়ক্ষতিঃ
১ ) রক্তকোষে পরিবর্তন ও প্রতিরোধী ক্ষমতা হ্রাস ।
২ ) জিনের গঠন পরিবর্তন হয়ে যায় ।
৩ ) ক্যান্সারের সম্ভাবনা দেখা দেয় ।
৪ ) যৌন অক্ষমতা ।
৫ ) এনজাইনা পেক্টোরিস ( যাদের এনজাইনার ব্যাথা আছে তাদের জন্য গাঁজা খাওয়া মারাত্মক হতে পারে )
৬ ) ফুসফুসের ব্যাধি ।
৭ ) স্নায়ুতন্ত্রে পরিবর্তন ।
৮ ) ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন বা আরগ্যানিক ব্রেন-সিন্ড্রোম ।
কিছু বিখ্যাত গাঁজাখোরঃ
গ্রিক দার্শনিক ও পন্ডিত পিথাগোরাস , বিখ্যাত ফরাসী সাহিত্যিক ভিক্টর উগো , ফরাসী কবি স্টিফেন মালারমে , ফরাসী কবি চার্লস বোদলার , ৩৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ( ১৯১৭-১৯৬৩ ) মারিজুয়ানার ভালবাসতেন ।
এছাড়া শিক্ষাবিদ প্যারীচরণ সরকার ( ১৮২৩-১৮৭৫ ) এতই গাঁজার ভক্ত ছিল যে দৈনিক গাঁজা ছাড়া তাঁর চলতই না ।
বিশিষ্ট নাট্যকার ও নাট্য পরিচালক গিরিশ চন্দ্র ঘোষ ( ১৮৪৪-১৯১২ ) মদ-গাঁজা এই দুটি মাদকেই আসক্ত ছিল । তিনি গাঁজার মহিমায় মুগ্ধ হয়ে রচনা করেছিলেন ,
'' সুখদা ধ্যানদা গাঁজা গাঁজৈব পরমা গতি ''
ভিন্ন ভিন্ন নামে বিভিন্ন দেশে এর বিস্তার। গাঁজা গাছের শীর্ষ পাতা এবং ডাল যা এই উপমহাদেশে গাঁজা নামে পরিচিত একই জিনিস পশ্চিমা দেশ গুলোতে মারিজুয়ানা বা মারিহুয়ানা নামে পরিচিত। গাছের পাতা বা ডালের আঠালো কষ দিয়ে তৈরী এ অঞ্চলের চরস নামের জিনিসটিই পশ্চিমা দেশের হাশিশ। ভাং, সিদ্ধি, পাট্টি, সব্জি, গ্রাস, মাজুন নানা নামে ডাকা হয় এই বিষাক্ত বস্তুটিকে।
এই মাদকটি গ্রহনে দৃষ্টিভ্রম, বাচালতা, মাংশপেশীর অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয় সংকোচন, দিকভ্রান্ত হওয়া, মাথা ঘুরা, ক্ষুধা লাগা, গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে যাওয়া,সময়জ্ঞান হারানো থেকে শুরু করে প্রলাপ বকা, বিকার আসা এমনকি মানুষকে হত্যাকরার ইচ্ছাও জাগ্রত হতে পারে। মাত্রা বেশী হয়ে গেলে অনেক সময় হাত পা এর নড়াচড়ার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলা, হাতে পায়ে ঝি ঝি ধরা এবং অবশ হয়ে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে যাওয়া থেকে শ্বাস কষ্ট হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
নিয়মিত এবং বেশী মাত্রায় গাঁজা জাতীয় দ্রব্য সেবনে গাঁজা সাইকোসিস (Ganja-psychosis) নামে একধরনের লক্ষণ হয়। এতে চোখে রক্তজমে চোখ লাল হয়ে যায়, ক্ষুধামন্দা, নির্জিবতা, শরীরের মাংস-পেশী শুকিয়ে যাওয়া, অত্যাধিক দুর্বলতা, হাত-পা অনবরত কাঁপতে থাকা, পুরুষত্বহীনতা থেকে শুরু করে পুরোপুরি মানসিক রোগী হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে।
রানিং এমোক (Running amok) নামক আরেক ধরনের মানসিক বিপর্যয় ও গাঁজা সেবীদের পরিণতি হয়ে আসতে পারে। অবিরত গাঁজা সেবনের কারনে অনেক সময় এদের দৃষ্টিভ্রম (Hallucination), নির্যাতিত-বঞ্চিত হবার কল্পনা থেকে এরা হিংসাত্মক, আগ্রাসি সন্ত্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ন হতে পারে। রানিং এমক হলে লোকটি চোখের সামনে যাকে পায় তাকে তার কল্পিত শত্রু মনে করে অস্ত্র নিয়ে হত্যা করতে পারে এবং এই মানসিক অবস্থা কেটে যাবার আগ পর্যন্ত যাকে সামনে পায় ক্রমান্বয়ে তাকেই হত্যা করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। এই আবেশ কেটে গেলে একসময় সে আত্মহত্যা করতে যেতে পারে অথবা আত্মসমর্পনও করতে পারে।
গাঁজা এই সমাজে অশিক্ষিত, সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠির মধ্যেই বেশী প্রচলিত। সহজলভ্যতা এবং সস্তা হওয়ায় এর প্রচলন ধীরে ধীরে বেড়ে চলতে পারে। সঠিক সময়ে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে গাজার বিষাক্ত শ্বাস এই সমাজের অনেক তাজা প্রাণের বিনাশ ঘটাতে পারে।
গাঁজার ইতিহাসঃ-
গাঁজা এক ধরনের উদ্দীপক মাদক । মাদক হিসাবে গাঁজার ব্যাবহার খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল থেকে হয়ে আসছে । সনাতন ধর্মগ্রন্থ অথর্ব বেদে এবং পুরাণেও গাঁজার কথা উল্লেখ আছে । পুরাণে উল্লেখ আছে যে, দেবতারা গাঁজা গাছের জন্ম দিয়েছেন এবং সমুদ্র মন্থনকালে অমৃত থেকে গাঁজা গাছের উৎপত্তি হয়েছে ।
ইউরোপে গাঁজা ব্যাবহারের তথ্য পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ সালে গ্রিক দার্শনিক হেরোডোটাসের লেখায় ।
নামের উৎপত্তিঃ
গাঁজা গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Canabis sativa Linn . গোত্র Urticaceae . এই গোত্রের অন্য কোন গাছের কোন মাদক গুন নেই ।
ল্যাটিন ' ক্যানাবিস ' শব্দটি এসেছে আদি গ্রিক শব্দ ' কন্নাবিস ' হতে ।
গাঁজা গাছের স্ত্রী-পুরুষ আছে । এবং দুই গাছেই ফুল বা মঞ্জুরি হয় । কিন্তু শুধু স্ত্রী গাছ থেকেই গাঁজা , ভাং বা চরস দেয় । মজার ব্যাপার হচ্ছে যে , পুরুষ গাছের কোন মদক ক্ষমতা নেই ।
এছাড়া বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে এই মাদকটি পরিচিত । গাঁজা সেবনে ইন্দ্রিয় উত্তেজিত হয় বলে এর আরেক নাম ' হরষিনী ' এছাড়া গাঁজার আরও ডাক নাম হচ্ছে , চার্জ , ড্যাগো ( দঃ আফ্রিকা ) ; গ্রাস , হাস , হেম্প , কিয়েফ ( উঃ আফ্রিকা) ; পট , টি , উইড ( উঃ ও দঃ আমেরিকা ) ; গাজে , গাঞ্জো ( ওয়েস্ট ইন্ডিস )
গাঁজার বিভিন্ন প্রকারকে একত্রে মারিজুয়ানা বলা হয় । ধারনা করা হয় যে, মারিয়া ও জুয়ানার নামানুসারে গাঁজার প্রথম এই নামটি দেয় মেক্সিকানরা ।
স্ত্রী গাছের শুকনা পাতাকে বলা হয় ভাং । ভাং এর শরবত পুরানো ঢাকায় খুব বিখ্যাত । হিন্দুদের কালি পূজায় ভাং এর সরবত তৈরি করা হয় । এছাড়া গাঁজাকে সিদ্ধি নামেও ডাকা হয় ।
ঔষধ হিসাবে গাঁজার ব্যাবহারঃ
চিকিৎসাশাস্ত্রে গাঁজা পরিচিত উত্তেজক,বেদনানাশক, নিদ্রাকারক হিসাবে ।
১ ) গাঁজা পাতার গুরা ডায়রিয়া বা উদরাময় নিরাময় করে । এবং এর রস ১৫-২০ ফোটা দিনে তিন বার খেলে রক্ত আমাশয়ে নিরাময় হয় ।
২) ভাং শিশুদের ধনুষ্টংকার রোগেও বিশেষ ফল দেয় ।
৩) প্রাচীনকালে গনোরিয়াতে গাঁজার ব্যাবহার হত । দুধের সঙ্গে বেটে ক্ষত স্থানে লাগানো হত ।
৪) বর্তমানে ইউরোপে ক্যান্সার এ আক্রান্ত রোগীদের বেথা কমানোর জন্য গাঁজার ধোঁয়া পান করতে দেওয়া হয় ।
৫) হাঁপানিতে গাঁজা দারুন কার্যকর ।
৬) হ্রদযন্ত্রের সমস্যায়ও এর ব্যাবহার আছে
পরিশেষে বলা যায় যে , গাঁজার যতই ঔষধি গুনাগুনই থাকুক না কেন , এর থেকে ১০০ হাত দুরে থাকাই ভাল ।
গাঁজা সেবনে নেশার অনুভূতিঃ
গাঁজার নেশার অনুভূতি কেমন হবে তা অনেকটাই নির্ভর করবে যে , সেবনকারী কি পদ্ধতিতে এবং কি পরিমাণ খাবে । সাধারণত গাঁজা একা একা খাওয়া হয় না । কয়েকজন মিলে একত্রে দলবেঁধে এটা খাওয়া হয় ।
সাধারণত গাঁজা সেবনের পর মনে এক ধরনের আনন্দ দেখা দেয় । গাঁজা সেবনের আগে যদি কারোও মনে আনন্দ বা বিষন্নতা থাকে তাহলে গ্রহনের পরে তা অনেকটাই প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে । গাঁজা সেবনের পর অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায় অর্থাৎ খুলে যায় এক কল্পনার রাজ্য । কল্পিত বস্তু , কল্পনার রং আরও প্রখর হয়ে দেখা দেয় । গাঁজা সেবনের ফলে মায়া বিভ্রমও দেখা দেয় । গাঁজা টানার পর কোন স্থান , কাল , পাত্রের কোন খেয়াল থাকে না । কথা বলার প্রবনতা বেড়ে যায় । চোখ লাল হয়ে যায় । এছাড়া শরীরের রক্তচাপ কমে যেতে পারে । ঘন ঘন শুকনা কাশি হতে থাকে । এই অবস্থার দুই থেকে চার ঘন্টা চলার পর আস্তে আস্তে শিথিলতা আসে,ঘুম আসে ।
গাঁজা সেবনে ক্ষয়ক্ষতিঃ
১ ) রক্তকোষে পরিবর্তন ও প্রতিরোধী ক্ষমতা হ্রাস ।
২ ) জিনের গঠন পরিবর্তন হয়ে যায় ।
৩ ) ক্যান্সারের সম্ভাবনা দেখা দেয় ।
৪ ) যৌন অক্ষমতা ।
৫ ) এনজাইনা পেক্টোরিস ( যাদের এনজাইনার ব্যাথা আছে তাদের জন্য গাঁজা খাওয়া মারাত্মক হতে পারে )
৬ ) ফুসফুসের ব্যাধি ।
৭ ) স্নায়ুতন্ত্রে পরিবর্তন ।
৮ ) ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন বা আরগ্যানিক ব্রেন-সিন্ড্রোম ।
কিছু বিখ্যাত গাঁজাখোরঃ
গ্রিক দার্শনিক ও পন্ডিত পিথাগোরাস , বিখ্যাত ফরাসী সাহিত্যিক ভিক্টর উগো , ফরাসী কবি স্টিফেন মালারমে , ফরাসী কবি চার্লস বোদলার , ৩৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ( ১৯১৭-১৯৬৩ ) মারিজুয়ানার ভালবাসতেন ।
এছাড়া শিক্ষাবিদ প্যারীচরণ সরকার ( ১৮২৩-১৮৭৫ ) এতই গাঁজার ভক্ত ছিল যে দৈনিক গাঁজা ছাড়া তাঁর চলতই না ।
বিশিষ্ট নাট্যকার ও নাট্য পরিচালক গিরিশ চন্দ্র ঘোষ ( ১৮৪৪-১৯১২ ) মদ-গাঁজা এই দুটি মাদকেই আসক্ত ছিল । তিনি গাঁজার মহিমায় মুগ্ধ হয়ে রচনা করেছিলেন ,
'' সুখদা ধ্যানদা গাঁজা গাঁজৈব পরমা গতি ''