Friday, October 2, 2015

চরম আতংকে কাটছে মুসলমান পরিবারগুলোর দিনরাত্রী !



বাড়িতে গরু জবাই করে মাংস খেয়েছেন, এমন গুজবে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি গ্রামে এক মুসলমানকে হত্যার পর ওই গ্রামের মুসলমানদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়েও কাটছে না গ্রামবাসীর শঙ্কা। এদিকে রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে দশ লাখ রুপি করে ক্ষতিপুরণ এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যয় বহনের ঘোষণা দিয়েছে।

উত্তর প্রদেশের বিসরা গ্রামে সোমবার এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর তীব্র আতঙ্কর মধ্যে মুসলমান গ্রামবাসী গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হয়। তবে প্রশাসনের আশ্বাসে শেষ মুহুর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তারা। ৫৮ বছর বয়সী আখলাককে হত্যার দায়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেয় প্রশাসন। অখলাকের পরিবারও গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে চায়।


প্রায় চৌদ্দ হাজার জনগোষ্ঠির এ গ্রামে প্রায় ৫০ টি মুসলিম পরিবারের বাস।

আখলাকের ৭০ বছর কয়সী মা তীব্র উৎকন্ঠা নিয়ে বলেন, ‘ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। পুলিশ আপাতত আমাদের সুরক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু তারা তো আর সারাক্ষণ গ্রামে থাকবে না। আমাধের উপর এ ধরণের হামলা আরো ঘটতে পারে। আমরা আমাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে নিরাপদ কোন স্থানে চলে যেতে চাই। এখানে আমরা কেউ নিরাপদ নই। ওই হামলায় আখলাকের মা নিজেও অহত হন।’

আখলাকের অন্য একজন আত্নীয়ও তাদেরকে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এ আত্নীয় বলছেন, আমাদের পরিবারের সদস্য এবং তাদের ঘর বাড়ির জন্য এখন সেখানে থাকাটা নিরাপদ নয়। তাই তাদেরকে সেখান থেকে অন্যত্র সরে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। গ্রামের অন্যন্য মুসলমানরাও বলছেন, স্থায়ীভাবে এ গ্রাম ছেড়ে যাওয়াটাই তাদের জন্য মঙ্গলজনক।

ইলিয়াস নামের একজন গ্রামবাসী বলেন, ‘এ গ্রামেই আমসাদেতর বসতি। কিন্তু এখানে এত আতঙ্ক আর ভয়ের মধ্যে বাস করা যায় না। বুধবার সকালে মুসলমান গ্রামবাসীরা এ গ্রাম ছেড়ে স্থায়ীভাবে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম। ভবিষ্যতে এ গ্রামে শান্তি ফিরে আসার তেমন সম্ভাবনা নেই। ’

তারপরও আপাতত মুসলমানরা গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন। জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ট্রেট রাজেশ যাদভ নিহতের পরিবারের সাথে আলোচনা করে শান্তি ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছেন। একই সাথে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করারও আশ্বাস দিয়েছেন যাদভ।

যাদভ টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্থের পরিবারের প্রতি রাজ্য সরকারের সদয় দৃষ্টি রয়েছে । মুসলমানদেরকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এমনকি মুসলমানদের ও তাদের ঘরবাড়ির নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে এবং যেকেতান সমস্যার জন্য আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগের জন্য আমার মোবাইল নম্বরও দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে দশ লাখ রুপি করে ক্ষতিপুরণ এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যায় বহনের ঘোষণা দিয়েছে। রাজেশ যাদভের সাথে বৈঠকের পর গ্রামের মুসলমানরা বলছেন, তারা কিছুটা আশ্বস্ত হতে পেরেছেন। গ্রামের সকল জনগোষ্ঠিার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে চান বলেও জানিয়েছেন তারা।