সম্রাট শাহ জাহানের ভালোবাসার তাজমহল-এর কথা ছোট বলা থেকে শুনে আসছি। তবে মমতাজ শাহ জাহানের একমাত্র স্ত্রী ছিলেন না। মমতাজ মারা যাওয়ার পর শাহজাহান আবারো বিয়ে করেন। যাই হোক মমতাজের জন্য শাহ জাহান নির্মাণ করেন তাজমহল। তাজমহল বানানোর খরচ দেওয়া হয় রাজকোষ থেকে যা মূলত জনগণের পয়সা। জনগণের পয়সায় সম্রাট শাহ জাহানের হুকুমে নির্মাণ হয় তাজমহল। এতো বিশাল এই তাজমহলকে যদি ভারতের বিহার রাজ্যের গেহলর গ্রামের দশরথ মাঝির নির্মাণ করা পাহাড়ের রাস্তার সামনে দাঁড় করানো হয় তখন একে ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ-ই মনে হবে। ত্যাগ, ভালোবাসা, শ্রমে সম্রাট প্রতিবার হেরে যাবে গ্রামের দশরথ মাঝির কাছে।
আজকাল পত্রিকা পড়া হয় না। হিন্দি সিনেমার শীৎকারের যন্ত্রণায় হিন্দি সিনেমাও দেখা হয় না। ফেসবুকের কল্যাণে জানতে পারলাম নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিক Manjhi: The Mountain Man (2015) সিনেমায় অভিনয় করেছেন। নওয়াজউদ্দিন এর সিনেমা হওয়ায় আগ্রহ নিয়ে সিনেমাটা দেখতে বসি।
বাঙলায় ‘পাহাড় ঠেলা’ নামক একটা শব্দ আছে যার অর্থ-যে কাজে কোন লাভ নেই। তবে আমাদের মাঝি পাহাড় ঠেলেন নি, তিনি একা পাহাড় কেটে দেখিয়ে দিয়েছেন। ঘটনার শুরু-সন্তান সম্ভবা স্ত্রী ফাল্গুনী দেবীর মারা মারা যাওয়ার মধ্য দিয়ে। ১৯৫০ দশকের শেষের দিকে দশরথের স্ত্রী ফাগুনিয়া পাহাড় থেকে পরে গিয়ে আহত হন। সময় মতন হাসপাতালে নেওয়া যেতে পারলে ফাল্গুনী দেবীকে বাঁচানো সম্ভব হতো। অদূরে হাসপাতাল থাকলেও পাহাড় ডিঙিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। আর এই পাহাড়ের জন্য অদূরে ওয়াজ়িরগঞ্জের হাসপাতালটিতে যেতে অন্তত ৭০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হতো। অবশেষে আহত স্ত্রী চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু বরণ করেন। তবে গর্ভে থাকা কন্যা সন্তানটি বেঁচে যায়। স্ত্রী’র মৃত্যু দশরথকে নাড়া দেয়। খাদে পরা দৃশ্য সে ভুলতে পারে না। শোক সইতে না পেরে স্ত্রী’র মৃত্যুর কারণ যে পাহাড় সেই পাহাড়ে রাস্তা নির্মাণের জন্য একা একা রাত দিন একটি হামার নিয়ে রাস্তা বানানোর কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে সবাই তাঁকে পাগল, তাঁর কাজকে পাগলের পাগলামি হিসেবে ধরে নেয়। ক্ষুদ্র একটি গ্রামের অসহায় দরিদ্র একটা মানুষের পক্ষে পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো অসম্ভব ভাবাই স্বাভাবিক ছিল। অসহযোগিতায়, পরিবার কর্তৃক ত্যাগ কোনটাই দশরথকে দমাতে পারে নি। পৌরাণিক যুগে রাজা দশরথের করুণ কাহিনী লিপিবদ্ধ থাকলেও এমন বীরত্বের ঘটনার কোন বর্ণনা আমরা পাই না। কিন্তু কলি যুগের দশরথ বিনা স্বার্থে যে কাজটি করে দেখাল তা পৌরাণিক রাজাকেও লজ্জা দেয়।
এই রাস্তা নির্মাণ করার সময় প্রাকৃতিক ও রাষ্ট্রীয় অনেক বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় দশরথ মাঝিকে। প্রচণ্ড তাপ-দাহে যখন গ্রামবাসী যখন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেল তখনও এই প্রচণ্ড তাপদাহে দশরথ পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছিলেন। এছাড়া পাহাড় যেহেতু বন বিভাগের অধীনে সেহেতু বনবিভাগের লোক, ক্ষমতাবানদের হুকুম মতন পুলিশ দশরথ মাঝিকে বিভিন্ন সমস্যায় ফেলার চেষ্টা করে। এভাবেই প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে পাহাড় কেটে যায় দশরথ মাঝি। সরকারী স্বীকৃতি, সম্মান কিছুর চান নি দশরথ মাঝি। গ্রামের মানুষের উপকারের জন্য তিনি নিজে একটা হাতুড়ি নিয়ে পাথরের পাহাড় ভাঙার জন্য কাজে নেমে পড়েন। রাস্তা বানানোর জন্য সরকারীভাবে যেন সাহায্য আসে সেই চেষ্টাও করেছিলেন দশরথ। ঘটনাচক্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দশরথের ছবি পত্রিকায় প্রকাশ হয়। তারপরও সরকারী কোন সাহায্য জোটে নি। তাই নিজেই শেষ করেন রাস্তার কাজ। ১৯৮২ সালে দীর্ঘ ২২ বছর কাজ করার পরে অবশেষে অসম্ভব হলো সম্ভব, পাহাড়ের পাথর কেটে ৩৬০ ফুট দীর্ঘ আর ৩০ ফুট চওড়া একটা পথ তৈরি করতে পারলেন দশরথ মাঝি। ৭০ কিলোমিটারের রাস্তা কমে দাঁড়ালো মাত্র ৫ কেউ বলে ৭ কিলোমিটার আরেকটা জায়গা ১৫ কিলোমিটারের কথা উল্লেখ করা আছে। একসময় যারা দশরথকে ঠাট্টা করেছে, পাগল বলে কটাক্ষ করেছে, তাদের কাছেই দশরথ আজ নায়ক। দশরথের তৈরি করা রাস্তার নাম করণ করা হয়-‘দশরথ মাঝি রোড’।
২০০৭ সালে ব্লাড ক্যান্সারে কলি যুগের দশরথের মৃত্যু ঘটে। রাস্তা নির্মাণের সম্মানী স্বরূপ দশরথ মাঝি পেয়েছিলেন ৫ একর জমি। নিজের গ্রামে সেই জমিটুকুও তিনি দিয়ে গিয়েছেন হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পে। তাই গ্রামের বাচ্চারা শহরের ভালো স্কুলে লেখাপড়া করতে পারছে, পাচ্ছে ভালো চিকিৎসাসেবা। আগে পাহাড় কাটার জন্য যাকে সবাই পাগল বলে ডাকত, এখন তাকেই ডাকছে ‘মাউন্টেন ম্যান বা পাহাড় মানব’নামে। সিনেমায় দশরথ মাঝির একটি অসাধারণ উক্তি আছে- “ভগবানের ভরসায় বসে থাকবেন না। ভগবান হয়তো আমাদের ভরসায় বসে আছেন!”
আজকাল পত্রিকা পড়া হয় না। হিন্দি সিনেমার শীৎকারের যন্ত্রণায় হিন্দি সিনেমাও দেখা হয় না। ফেসবুকের কল্যাণে জানতে পারলাম নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিক Manjhi: The Mountain Man (2015) সিনেমায় অভিনয় করেছেন। নওয়াজউদ্দিন এর সিনেমা হওয়ায় আগ্রহ নিয়ে সিনেমাটা দেখতে বসি।
বাঙলায় ‘পাহাড় ঠেলা’ নামক একটা শব্দ আছে যার অর্থ-যে কাজে কোন লাভ নেই। তবে আমাদের মাঝি পাহাড় ঠেলেন নি, তিনি একা পাহাড় কেটে দেখিয়ে দিয়েছেন। ঘটনার শুরু-সন্তান সম্ভবা স্ত্রী ফাল্গুনী দেবীর মারা মারা যাওয়ার মধ্য দিয়ে। ১৯৫০ দশকের শেষের দিকে দশরথের স্ত্রী ফাগুনিয়া পাহাড় থেকে পরে গিয়ে আহত হন। সময় মতন হাসপাতালে নেওয়া যেতে পারলে ফাল্গুনী দেবীকে বাঁচানো সম্ভব হতো। অদূরে হাসপাতাল থাকলেও পাহাড় ডিঙিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। আর এই পাহাড়ের জন্য অদূরে ওয়াজ়িরগঞ্জের হাসপাতালটিতে যেতে অন্তত ৭০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হতো। অবশেষে আহত স্ত্রী চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু বরণ করেন। তবে গর্ভে থাকা কন্যা সন্তানটি বেঁচে যায়। স্ত্রী’র মৃত্যু দশরথকে নাড়া দেয়। খাদে পরা দৃশ্য সে ভুলতে পারে না। শোক সইতে না পেরে স্ত্রী’র মৃত্যুর কারণ যে পাহাড় সেই পাহাড়ে রাস্তা নির্মাণের জন্য একা একা রাত দিন একটি হামার নিয়ে রাস্তা বানানোর কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে সবাই তাঁকে পাগল, তাঁর কাজকে পাগলের পাগলামি হিসেবে ধরে নেয়। ক্ষুদ্র একটি গ্রামের অসহায় দরিদ্র একটা মানুষের পক্ষে পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো অসম্ভব ভাবাই স্বাভাবিক ছিল। অসহযোগিতায়, পরিবার কর্তৃক ত্যাগ কোনটাই দশরথকে দমাতে পারে নি। পৌরাণিক যুগে রাজা দশরথের করুণ কাহিনী লিপিবদ্ধ থাকলেও এমন বীরত্বের ঘটনার কোন বর্ণনা আমরা পাই না। কিন্তু কলি যুগের দশরথ বিনা স্বার্থে যে কাজটি করে দেখাল তা পৌরাণিক রাজাকেও লজ্জা দেয়।
এই রাস্তা নির্মাণ করার সময় প্রাকৃতিক ও রাষ্ট্রীয় অনেক বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় দশরথ মাঝিকে। প্রচণ্ড তাপ-দাহে যখন গ্রামবাসী যখন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেল তখনও এই প্রচণ্ড তাপদাহে দশরথ পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছিলেন। এছাড়া পাহাড় যেহেতু বন বিভাগের অধীনে সেহেতু বনবিভাগের লোক, ক্ষমতাবানদের হুকুম মতন পুলিশ দশরথ মাঝিকে বিভিন্ন সমস্যায় ফেলার চেষ্টা করে। এভাবেই প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে পাহাড় কেটে যায় দশরথ মাঝি। সরকারী স্বীকৃতি, সম্মান কিছুর চান নি দশরথ মাঝি। গ্রামের মানুষের উপকারের জন্য তিনি নিজে একটা হাতুড়ি নিয়ে পাথরের পাহাড় ভাঙার জন্য কাজে নেমে পড়েন। রাস্তা বানানোর জন্য সরকারীভাবে যেন সাহায্য আসে সেই চেষ্টাও করেছিলেন দশরথ। ঘটনাচক্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দশরথের ছবি পত্রিকায় প্রকাশ হয়। তারপরও সরকারী কোন সাহায্য জোটে নি। তাই নিজেই শেষ করেন রাস্তার কাজ। ১৯৮২ সালে দীর্ঘ ২২ বছর কাজ করার পরে অবশেষে অসম্ভব হলো সম্ভব, পাহাড়ের পাথর কেটে ৩৬০ ফুট দীর্ঘ আর ৩০ ফুট চওড়া একটা পথ তৈরি করতে পারলেন দশরথ মাঝি। ৭০ কিলোমিটারের রাস্তা কমে দাঁড়ালো মাত্র ৫ কেউ বলে ৭ কিলোমিটার আরেকটা জায়গা ১৫ কিলোমিটারের কথা উল্লেখ করা আছে। একসময় যারা দশরথকে ঠাট্টা করেছে, পাগল বলে কটাক্ষ করেছে, তাদের কাছেই দশরথ আজ নায়ক। দশরথের তৈরি করা রাস্তার নাম করণ করা হয়-‘দশরথ মাঝি রোড’।
২০০৭ সালে ব্লাড ক্যান্সারে কলি যুগের দশরথের মৃত্যু ঘটে। রাস্তা নির্মাণের সম্মানী স্বরূপ দশরথ মাঝি পেয়েছিলেন ৫ একর জমি। নিজের গ্রামে সেই জমিটুকুও তিনি দিয়ে গিয়েছেন হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পে। তাই গ্রামের বাচ্চারা শহরের ভালো স্কুলে লেখাপড়া করতে পারছে, পাচ্ছে ভালো চিকিৎসাসেবা। আগে পাহাড় কাটার জন্য যাকে সবাই পাগল বলে ডাকত, এখন তাকেই ডাকছে ‘মাউন্টেন ম্যান বা পাহাড় মানব’নামে। সিনেমায় দশরথ মাঝির একটি অসাধারণ উক্তি আছে- “ভগবানের ভরসায় বসে থাকবেন না। ভগবান হয়তো আমাদের ভরসায় বসে আছেন!”