আমরা বর্তমান সেই সভ্যতাটায় আছি তার একটা অত্যন্ত গুরুত্ত্ব পূর্ন বৈশিষ্ট হচ্ছে প্রতিস্থাপন নীতি। একটা সেকেন্ড পেরুলেই সেটা অতীত হয়ে যাচ্ছে, বর্তমানটাকে বুঝে ওঠার আগেই আমরা পেয়ে যাচ্ছি একটা নিরেট অতীত। সময় প্রতিস্থাপিত হচ্ছে , মানষিকতকা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে, প্রতিস্থাপিত হচ্ছে প্রযুক্তি । এটা স্বীকার করতে তো আমাদের সমস্যা নাই যে প্রতি মূহুর্তে কিছু একটা হারাচ্ছি আমরা, যেমনঃ একটা সেকেন্ড । কিন্তু সেই হারানোর বিনিময়ে পাচ্ছি অনেক কিছু, যেমনঃ প্রযুক্তি। প্রযুক্তির আশীর্বাদ টা পরিমেয়, সেটাকে অনুভব করা যায়, ভোগ করা যায় ব্লা ব্লা । কিন্তু এটা কেন আমরা ভুলে যায় আমরা কিছু একটা হারাচ্ছি !! এজন্যই ভুলে যায় কারন এই ইট পাথরের জেলখানায় আমরা যেটা হারিয়ে চলেছি সেটা প্রাপ্তির মত ওতটা দৃশ্যমান না। আর আমরাও যান্ত্রিকতার ছোয়া পেয়ে বেমালুম ভুলে যাচ্ছি আমাদের শেকড় টাকে । বলা হয়ে থাকে প্রতিটা জিনিসের দুটা দিক থাকে; পজিটিভ আর নেগেটিভ দিক। ডিনামাইট, টেলিভিশন, ডিস এন্টেনা রচনা গুলাতেআমরা এদের উপকারী ও অপকারী দিক পড়ে স্কুল কলেজের গন্ডি পার করেছি। এক একটা অন্য দিকে আলো ফেলার ইচ্ছা আছে। যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা সোস্যাল সাইট গুলার কল্যানে হয়ত অনেক স্বঘোষিত অসামাজিকই সামাজিকতার অভিনয় করছে। খুব সল্পে দায় সেরে ফেলতে পারছি আমরা, কিছু ইংরেজি-বাংলা শব্দের সমষ্টি রোজ একটা অজানা মাধ্যমের সাহায্যে একটা গন্তব্যে পাঠিয়ে দিচ্ছি। বিনিময়ে কিছু শব্দগুচ্ছ আমাদের কাছেও আসছে। আচ্ছা, সন্তুষ্ট থাকছি কি আমরা ?? কিছু একটার কমতি আছে না ?? মানুষভেদে হয়ত আলাদা আলাদা উত্তর পাব, বাট লেট মি এক্সপ্লেইন। একটা সময় ছিল ফেসবুক ছিল না, ছিল না সহজে যোগাযোগের কোন মাধ্যম। প্রিয়জনের কাছে একটা চিঠি লেখা হবে, হয়ত সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই একটা দিন , কিংবা তার কিছু সময় চলে যেত। চিঠি পোষ্ট করা , গন্তব্যে পৌছুনো এসব মিলে আরো কিছু দিন। কিন্তু একটা সপ্তাহ পরে যখন কোন প্রাপক পোস্টম্যানের কাছ থেকে তার চিঠিটা নিয়ে “প্রেরক” অংশ টার দিকে তাকাতো এবং আবিষ্কার করত সেখানে সেই নামটা লেখা যার জন্য সে একটা সপ্তাহ লেটার বক্সের দিকে তাকিয়ে থাকত; আপনার আমার প্রযুক্তি কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কি ফিরিয়ে দিতে পারবে সেই মূহুর্তটা ? সেই কৌতুহল গুলা কিংবা তিক্ত-মধুর ঐ অপেক্ষার সময় গুলা ?? উত্তর হবে ‘না’ । আজ যখন আপনি আমি চ্যাটে বসি আমরা কি জানি আমাদের অপর পাশের স্ক্রিনে যে মানুষটি বসে আছে তার সামনে কয়টা চ্যাটিং উইন্ডো খোলা আছে ?? আমরা কি জানি তার মনোযোগ টা কতগুলা উপাংশে বিভক্ত হচ্ছে, আর কতটুকুই বা আমাদের ভাগ্যে এসে পড়ছে ? চিঠির যুগটাতে এই বিড়ম্বনা টা হয়ত ছিল না। তারমানে এটা যে আমি বলছি চিঠির যুগে ফেরত যাওয়া উচিত, আমি শুধু হিসেব করছি ক্ত টুকু আমরা হারিয়েছি। দ্যাটস অল। আজকের দিনগুলাতে আমরা একটা জিনিস ব্যাবহার করি “ইমো” নামে, আমাদের হাসি-কান্না, রাগ-অভিমান দেখাতে রোজ ইউজ করি। আচ্ছা এরা কি সত্যিই সামর্থ হয় আপনাকে আমাকে এক্সপ্রেস করতে ? এমন অনেক অনুভব আছে আপনার ভিতরে যেটাকে আপনি ইমো লিস্টের মধ্যে পাবেন না। যখন আপনার ফুপিয়ে কান্না আসে পারবেন না কোন ইমো দিয়ে স্ক্রিনের ওপাশের মানুষ টাকে বোঝাতে। যখন একটা মানুষকে অবৈধ ভাবে অনেক মিস করেন, তখন যেই অপরাধ বোধ হয় পারবেন সেটাকে কোন ইমো দিয়ে প্রকাশ করতে। সম্ভবত এখানেই বাস্তব আর কৃত্তিমতার পার্থক্য। আরেকটু আধুনিক ভাবে বলতে গেলে “ভার্চুয়ালিটি বনাম ভিজ্যুয়ালিটি “ ।
যদি লেখাটুকু পড়ে কারো মনে হয় আমি প্রযুক্তি আর তার অগ্রগতির বিপক্ষে তাহলে আমি এটাই বলব যে আমি ঠিক বোঝাতে সামর্থ হয়নি। আমি কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র, সকাল থেকে রাত, পড়াশুনো থেকে বিনোদন আমাদের এই প্রযুক্তি নিয়েই থাকতে হয়। আমি নিজেও এই সস্তা সামাজিক ব্যাবস্থার একজন প্রতিনিধি, সহজ জীবন ধারার একজন ভোক্তা। তবে মাঝে মাঝেই ফিল হয় কিছু একটা হারিয়ে চলেছি। সেই পিছুটানেই মাঝে মাঝে কিছু একটা খুজে চলি। আসলে আমি সন্দিহান যে “যান্ত্রিকতা” এবং “অনুভূতি” দুটা সমান্তরাল ভাবে চলতে পারে কি না। তবে এটুকু নিশ্চিত আমরা প্রথমটা বেছে নিয়েছি, আর দ্বিতীয় টাকে “বস্তাপচা সেন্টিমেন্ট” উপাধি দিয়ে রেখে দিয়েছি রিসাইকেল বিনে। প্রয়োজন বোধে আমার মত কিছু পিছুটান ওয়ালারা সেগুলাকে রিস্টোর করে, কাজ সেরে আবার সেখানে রেখে আসে। হোকই না ,,, অনুভূতি গুলা না হয় অবশ হয়ে যাক। আশা করি সেটা জিডিপি গ্রোথ রেটে কোন প্রভাব ফেলবে না !!!