Wednesday, October 21, 2015

ভালোবাসার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণঃ ভালোবাসা বলতে কিছু নেই, সবই হরমোনের খেলা---


 একটি অনুভূতির কথা বলি, যে অনুভূতি সবাইকে প্রায় সমান ভাসবই নাড়া দেয়। এড়িয়ে যাবার উপায় নেই কারও। নাম তার ভালোবাসা। কেউ বৃক্ষ ভালোবাসে,কেউ জীব-জন্তু,কেউবা প্রকৃতি। জাগতিক সব ভালোবাসার উর্দ্ধে মা বাবার প্রতি ভালোবাসা। ভালোবাসার ব্যাপ্তি এতই বিশাল যে সারা জীবন ব্যয় করেও এর সীমা পরিসীমা নির্ধারণ করা কঠিন। তাই আমার লেখাতে মানব- মানবীর ভালবাসাকেই প্রাধন্য দিলাম।
ভালোবাসার সংজ্ঞা কি?এটা এক একজনের কাছে এক এক রকম। কেউবা এটাকে একজনের সাথে অন্য জনের মনের মিল বা টান বা অনুভূতি তেই সীমাবদ্ধ করেছে, কেউবা আবার এটাকে এক কাপ চায়ের সাথে তুলনা করেছে। কেউবা এটাকে গিভ অর টেকেন হিসাবে নিয়েছে। কেউবা এটাকে আত্মার টান বলে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত কেউ ভালোবাসার চিরন্তন সংজ্ঞা দাড় করাতে পারেননি। কিন্তু বিজ্ঞান ? না বিজ্ঞানও ভালোবাসার কনো সংজ্ঞা দাড় করাতে পারেনি, কিন্তু দেখিয়েছে আসলে এটা একটা হরমোনের খেলা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ইন্সিটিউট অফ হার্টম্যাথ টানা ২০ বছর ধরে গবেষণা করে দেখিয়েছে যে মানুষের হৃদয় থেকে একধরনের ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড নিগৃত হয়। কখনো কখনো মানুষের শরীরের চতুর্দিকে কয়েক ফুট পর্যন্ত এই তড়িৎ চিহ্নের রেশ পাওয়া যায়। এর সীমানা নির্ভর করে আবেগের ধরনের উপর। স্বাভাবিক ভাবে দেখা যায় যে প্রেমে পড়লে মানুষের গাল লাল হয়ে যায়,হাতের তালু ঘামতে থাকে,হৃদ পন্দনের গতি বেড়ে যায় এইসব দৃশ্যমান লক্ষণ।কিন্তু বিজ্ঞানীদের নজর আরও গভীরে। তাতে দেখা গেছে এমন অবস্তাতে মানুষের শরীরের গভীরে বেশ কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন আসে । আর এতে কলকাঠি নাড়ে কয়েক ধরনের হরমোন।
প্রেমের প্রথম ধাপ হচ্ছে লালসা । প্রেমে পড়ার সাথে সাথে টেক্সঅরেন আর অক্সসফরেন নামের দুইটি হরমোন সামনা সামনি চলে আসে।আর এই দুইটি হরমোন মানুষকে এমন ভাবে তাড়িত করে যাকে এক কথায় লালসা বলা যায়। এর প্রভাবে মানুষ মরিয়া আচারন করতে পারে। এটা মহানুভাবিতা হতে পারে আবার হিংস্রতাও হতে পারে।
প্রেমের দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে আকর্ষণ। এ পর্যায়ে সামনে চলে আসে মনোমায়িন নামের একগুচ্ছ স্নায়ু কোষ। এর একটি ডপামিয়ন। অবাক ব্যাপার হলো কোকেন বা নিকোটিন নিলে এই হরমোন যেমন সাড়া দেয় তেমন প্রেমে পরলেও একই ভাবে সাড়া দেয়। এরপর বলায় যেতে পারে যে প্রেমে পড়াটা একধরণের নেশায় আসক্ত হয়ে যাবার মতো। এডরানালিনেরও ভূমিকা আছে তবে সেরটারিনেরও কথা বলতে হবে। এই হরমোনের প্রভাবে মানুষ সাময়িক ভাবে প্রকৃত অর্থে পাগলও হয়ে যেতে পারে।
প্রেমের তৃতীয় ধাপ সম্পৃক্ততা। বিশেষজ্ঞরা বলেন যে,মানুষ কখনো আকর্ষণ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না । এই ধাপে এসে মানুষ বিয়ে থেকে সংসার পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে। তবে এই স্বপ্নের স্থায়িত্ব হবার জন্য দুটি হরমোনের কৃতিত্ব দিতেই হয়। এর একটা হপক্সিডিন আর অন্যটি অক্সডিটিন। যার ফলে মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক বা বাঁধন তৈরি হয়। প্রেমের ক্ষেত্রে মানুষ জীন ধারাও প্রভাবিত হয় । তবে একটা কথা না বললেই নয় ,এক গবেষণায় দেখা গেছে যে অসুস্থতায় মানুষের ব্রেন যেমন কাজ করে,প্রেমে পড়ার ফলে মানুষের ব্রেন একই ভাবে কাজ করে।
বিজ্ঞান উৎকর্ষতার এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে জীনের তথ্য বিশ্লেষণ করে নাকি বলা যায় করোর সাথে কারোর সম্পর্ক স্থায়ী হবে কি হবে না। প্রেমের ফলে ট্রয় নগরী ধ্বংস থেকে শুরু করে মানব সভ্যতা সৃষ্টির নিদর্শনও কম নয়। পরিশেষে বলতে চাই হরমোনের এই খেলায় বোধ করি মানুষের আনন্দটুকুও কম নয়। তাই বেঁচে থাক প্রেম বেঁচে থাক ভালোবাসা।