সেক্যুলার নারীবাদিদের মত অনেক ইসলামপন্থী মেয়েরাও যখন ছেলেদের উপর প্রায় পুরোটা দায় চাপিয়ে দেন, তখন অবাক না হয়ে পারি না। আচ্ছা, বলেন তো ধর্ষকের কি এমন ঠেকা পড়েছে যে সে চোখের/মনের পর্দা করতে যাবে!? ধর্ষনে ভুক্তভোগী কে? মেয়েরা। ক্ষতিগ্রস্থ কে? মেয়েরা। তাহলে ধর্ষন প্রতিরোধ করার দায়টা কার বেশি? নিশ্চয়ই মেয়েদের?
আপনি হয়তো বলবেন, মেয়েরা পোশাকের পর্দা করবে আর ছেলেরা চোখের পর্দা করবে- দুটোই কুরআনের বিধান। আর এই বিধান অমান্য করলে পরকালে উভয়কেই শাস্তি পেতে হবে। মানলাম চোখের পর্দা না করলে ছেলেরা পরকালে ভুক্তভোগী হবে, সেটা হল বাকির খাতা। কিন্তু মেয়েরা তো নগদে ভুক্তভোগী। পোশাকের পর্দা না করে দুনিয়া এবং আখিরাত দুই জায়গাতেই তারা ধরা খাচ্ছে। তাহলে ঠেকাটা কার বেশি?
কথা এখানেই শেষ নয়, কথা আরো আছে। ধর্ষন কারা করে? তারা কি খুব ধার্মিক? তারা কি মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র? কুরআনের হাফেজ? তারা কি জামাত-শিবির-হেফাজত? কোনটাই না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষক হল ছাত্রলীগ, নাস্তিক অথবা হিন্দু। এরা তো কোন ধর্মই নাই, সৃষ্টিকর্তাই মানে না ঠিকমত, তাহলে পরকালের ভয়ে তারা ধর্ষন থেকে বিরত থাকবে এমনটা আশা করা বোকামি নয় কি?
ধরুন আমি একজন ছাত্রলীগ কর্মী, আমি যদি একটা মেয়েকে ধর্ষন করি, আমার কোন ক্ষতি আছে? যেহেতু আমি ধার্মিক নই, তাই পরকালের ভয় আমার না করলেও চলবে। ধর্ষন করার পর "জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু" শ্লোগান দিলেই চলবে- পুলিশ আমাকে বাপ বাপ করবে। আমি ধর্ষনে সেঞ্চুরী হাকানোর পর পার্টি দিয়ে সেটা উদযাপন করবো। কে আমার কি করবে শুনি? বড়জোর প্রধানমন্ত্রী আমাকে জাহাঙ্গীনগর ভার্সিটির মানিকের মত "দুষ্টু ছেলে" উপাধি দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেবে! এইতো! অন্যদিকে যাদেরকে আমি ধর্ষন করলাম তাদের অবস্থাটা কি? তারা হয় লজ্জায় আর ক্ষোভে আত্মহত্যা করবে আর নয়তো কলঙ্কের দাগ মাথায় নিয়ে বাকিটা জীবন কাটাবে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, সবদিক দিয়ে আমিই লাভবান, ক্ষতিগ্রস্থ কেবল মেয়েরাই। তাহলে আপনিই বলুন- আমি কোন দুঃখ্যে ধর্ষন প্রতিরোধ করতে যাবো? আমার কি ঠেকা পড়েছে ধর্ষন প্রতিরোধ করার? ঠেকাটা তো মেয়েদের। যা করার তাদেরকেই করতে হবে, ধর্ষন কিভাবে প্রতিরোধ করবা সেই চিন্তা তোমাদের মেয়েদেরকেই করতে হবে। তোমরা যদি সাহায্য চাও তখন তোমাকে ইসলামপন্থীরা সাহায্য করতে পারে, কারন এটা তাদের ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু আমি সেটাও করবো না, কারন আমি তো ছাত্রলীগ, আমি ধর্ষক! আমি বরং চাইবো কিভাবে তোমাদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে ঘরের বাইরে নিয়ে আসা যায়। এখন তুমি নিজেই যদি ইসলামের বিধান না মানো, অশালীন পোশাক পরে যেখানে সেখানে চলাফেরা কর, তাহলে তোমাকে ঐ ইসলামপন্থীরাও আর সাহায্য করবে না। তুমি নিজেই যেখানে নিজেকে সাহায্য করছো না- তাদের কি ঠেকা পড়েছে তোমাকে সাহায্য করার?
আরেকটা ব্যাপার কি জানো আপু, তোমাদের পক্ষে অশালীন পোশাক ত্যাগ করাটা যতটা কঠিন, একটা ছেলের পক্ষে তোমার লোভনীয় শরীরের দিকে দৃষ্টি পড়ার পরও চোখ সরিয়ে নেয়াটা তারচেয়ে শতগুন বেশি কঠিন। তোমরা নিজেদের স্বার্থেই যদি অল্প কঠিন কাজটা করতে না পারো, তাহলে ছেলেরা এরচেয়ে শতগুন কঠিন কাজটা কিভাবে করবে তোমরাই বল? তারপরও যারা প্রকৃত ঈমানদার তারা ঠিকই নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখছে, অন্তত তারা নারী নির্যাতনে জড়াচ্ছে না। কিন্তু এদের সংখ্যা তো খুব অল্প। কাজেই দেখা যাচ্ছে ছেলেদের চোখের/মনের পর্দা তোমাদেরকে রক্ষা করার জন্য যথেস্ট নয়, বরং এক্ষেত্রে তোমাদের ভূমিকাই বেশি গুরুত্বপুর্ন। তাই পরিপুর্ন হিজাব যদি নাও কর, অন্ততপক্ষে ন্যুনতম শালীনতাটুকু বজায় রাখো। জিন্স, টি শার্ট, লেগিংস, জেগিংস, মিনি স্কার্ট এগুলো তো আমাদের দেশীয় পোশাক নয়। এগুলো না পরলে যে একটা মেয়ের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে এমনটাও তো নয়। প্লিজ এগুলো বর্জন কর।
অনেকে হয়তো বলবে- পহেলা বৈশাখে তো মেয়েরা এসব পোশাক পরে না, ঐদিন তারা বাঙালী মেয়েদের চিরায়ত পোশাক শাড়ী পরেছিল। তাহলে ঐ দিন কেন তাদের উপর নিপীড়ন চালানো হল? টিএসসিতে যা ঘটেছে সেটার পেছনে অবশ্যই পোশাক দায়ী নয়। এখানে মনে রাখতে হবে, অশালীন পোশাক নারী নির্যাতনের একমাত্র কারন নয়, বরং এটা হল অনেকগুলো বড় কারনের মধ্যে একটা। পোশাক ছাড়াও আরো নানা কারনে নারীর উপর নির্যাতন হতে পারে। ভুল সময়ে ভুল জায়গায় উপস্থিত হলেও নারীর শ্লীলতাহানির সম্ভাবনা থাকে। টিএসসি হল সেক্যুলারদের ঘাঁটি, আর পহেলা বৈশাখ হল সেক্যুলারদের উৎসব। এটা জেনেও যদি কোন মেয়ে ওরকম একটা জায়গায় ওরকম সময়ে উপস্থিত থাকে- তাহলে তো সেটা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারারই শামিল। সিসিটিভি ক্যামেরা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি কোনকিছুই আপনাকে জানোয়ারদের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না, একমাত্র আপনার সচেতনতাই পারে আপনাকে রক্ষা করতে। এই ব্যাপারটা যত তাড়াতাড়ি অনুধাবন করতে পারবেন ততই মঙ্গল।
বি.দ্র. সর্বপ্রথম লেখকের ফেসবুক আইডিতে প্রকাশিত, যার লিংক- এখানে বিষয়: বিবিধ