বিকৃত যৌনতার সংস্কৃতির অপরিহার্য বাস্তবতা পতিতালয়। হাজার হাজার বছরের পুরোনে বৃত্তি এটি। পতিতালয় এবং সেখানকার যৌনকর্মীদের ব্যবহার করে পুরুষ। আড়ালে যে পুরুষ নিয়মিত যাতায়াত করে যৌনপল্লীতে, সামনাসামনি সেও খারাপভাবে দেখে সেখানকার কর্মীদের। শুধুমাত্র যাতায়াতই না সেখানে গিয়ে পুরুষরা বাহানা ধরে নানা রকম ইচ্ছা পূরণের। আর সেরকমই কিছু বিকৃতমনা পুরুষের বিকৃত ইচ্ছার কথা এক লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন ভারতের নারীবাদী চিনকি সিনহা। সম্প্রতি মতামতভিত্তিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি ও’ নামক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তার ওই লেখাটি।
একবার চিনকি সিনহা যৌনপল্লীর কর্মীদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন তারা এখানে কি ধরণের ঘটনার সম্মুখীন হন। সে প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, অনেক পুরুষই নানান ধরনের বাহানা ধরে। কেউ হয়তো যৌনকর্মীদের উৎসবের পোশাকে দেখতে চান, কেউ আবার নিজেই পরতে চান যৌনকর্মীদের পোশাক, কেউ আবার যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত হতে চান বিভিন্ন ভঙ্গিমায়। তবে এসব বিষয়কে যৌনকর্মীরা খারাপভাবে নেন না বলেই জানান লেখক চিনকি সিনহা।
পতিতালয়ের যৌনকর্মীদের সঙ্গে বিনিময় করা অভিজ্ঞতার আলোকে লেখক জানান, কিছু পুরুষ যৌনকর্মীদের উলঙ্গ করে তাদের পোশাক পরেন, অনেকে আবার ইচ্ছা পোষণ করেন পিরিয়ড হওয়া নারীদের পোশাক ধোয়ার। তবে এসব বিষয়কে যৌনকর্মীরা খারাপভাবে নেননা কারণ তারা এর বিনিময়ে টাকা পান।
তবে আরও ভয়াবহ বিকৃতিরও নজির তুলে ধরেন লেখক। এক যৌনকর্মী লেখককে জানান, বিকৃতমনা এক পুরুষের বিকৃত ইচ্ছার কথা। যিনি ইচ্ছা পোষণ করেন এক যৌনকর্মীকে পেটানোর। তিনি ওই কর্মীকে পাখার সাথে বাঁধেন এবং তাকে মারধর করেন। তবে যৌনকর্মীটিকে তখন চুপই থাকতে হয়েছে কারণ তার প্রয়োজন ছিল টাকার এবং সে জন্যই এসব সহ্য করে যান তিনি।
অনেক আগে একই ওই লেখক চিনকি সিনহা অন্য আরেক লেখায় তুলে ধরেন পুরুষদের সম্পর্কে যৌনকর্মীদের ভাবনাকে। সেখানে যৌনকর্মীরা পুরুষদের সম্পর্কে তাদের ধারণা বিনিময় করতে গিয়ে বলেন, পুরুষরা আসলে উন্মাদ। রাস্তা থেকে মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে ঘরে আবদ্ধ করেন তারা, যা আসলে মানবিকতা বিবর্জিত।
তবে এসব কাজ তারা এজন্যই করতেন কারণ এর জন্য তাদের কখনোই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না। নৈতিক বোধও নরাড়া দেয় না তাদের, তারা মনেই করে যৌনকর্মীর সাথে যা খুশি করা যায়। যেহেতু তারা তাদেরকে পারিশ্রমিক দেয় সুতরাং তারা তাদের গায়ে হাত তুলতেই পারে।
যৌনকর্মীদের অনেক বুদ্ধিমান হতে হয়। তারা পুরুষের নিচু মানসিকতাটাকে বুঝতে পারে। পুরুষকে সুযোগ দিলে তারা আরো বেশি পেয়ে বসতে চান এবং যৌনকর্মীরা যদি এ বিষয়ে সচেতন না থাকতেন তবে তারা বড় ধরণের কোন দুর্ঘটনার মধ্যে পড়ে যেতেন। এজন্য তারা অনেক সচেতন থাকতে বাধ্য হন।
তারপরও সবসময় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তেমনই এক ঘটনার কথা লিখেছেন চিনকি সিনহা।
কামাঠিপুরায় এক সমবায় সমিতিতে টাকা রাখতে আসা এরকমই এক নারীর সাথে কথা বলেন ওই লেখক। ওই নারী তাকে জানান, তিনি ওই এলাকার এক যুবককে বিয়ে করেন। তিনি আশা করেছিলেন ওই হোটেলকর্মী হয়তো তাকে ভালোবাসবে। কিন্তু তিনিও তাকে যৌনব্যবসাই করতে বলেন। কথা অনুযায়ী তিনিও চালিয়ে যান ব্যবসা। কিন্তু একসময় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। তবে তিনি এ ও জানতেন যে দিন শেষে তিনি শুধু কিছু ভালোবাসার শব্দই শুনতে চান। তার গল্পটা খুবই মর্মান্তিক হলেও এখানকার বেশিরভাগ নারীর জীবনের গল্পই এরকম।
সবমিলে লেখকের বক্তব্য: আমরা নারীবাদীরা শুধুমাত্র কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমরা খুবই নিচের দিকে অবস্থান করছি। আমরা নিজেদেরকে সার্থক প্রমান করি। অধিকার বঞ্চিত নারীর কষ্ট উপলব্ধি করার ক্ষমতা আসলে আমাদের নেই। আমরা আসলে পছন্দ করি বেশি চিন্তা করতে, কম দেখতে এবং তার চাইতেও কম করতে। ভার্জিনিয়া উলফের লেখাকে বাইবেল মনে করে অতিরিক্ত চিন্তা করেই সম্ভব না নারীর অধিকার রক্ষার।
নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বরাতে লেখকের মত, নারীদের পাচারের হাত থেকে রক্ষা এবং তাদেরকে রক্ষার জন্য অনুমোদন দেয়া যৌনপল্লীগুলোতে এর অন্তরালে যা হয়ে আসছে তা আসলে পুরুষের বিকৃত রুচির ইচ্ছা পূরণ। এখান সকল গল্পই আসলে বিশ্বাঘাতকতা এবং কষ্টের।