Sunday, October 11, 2015

কর্পোরেট ভালবাসা!


- জরুরী O+ (ve) রক্ত লাগবে দুই ব্যাগ। তাড়াতাড়ি ব্যাবস্থা করুন। অপারেশন করতে হবে। রোগীর অবস্থা বেশ ক্রিটিক্যাল।
- আপনি আমার থেকেই রক্ত নিন। আমার ব্লাড গ্রুপ O+
- কিন্তু আপনার থেকে মাত্র একব্যাগ নেয়া যাবে। দু ব্যাগ রিস্কি।
- ঐ মেয়েটাকে বাঁচাতে যদি লাইফটা রিস্কে ফেলতে হয় আমি রাজি।
- তবে আপনি এখনি রিসেপশনে যান, নার্স একটা ফর্ম দিবে আপনি সেটা ফিলাপ করে আসুন।
******
- জ্বী আপনার নাম??
- রুদ্র।
- পেসেন্টের সাথে আপনার রিলেশন??
- এক্স গার্লফ্রেন্ড।
- মানে??? (নার্সের মুখে হাসি)
- কিছুনা। আমি চিনিনা ওকে। জাস্ট মানবতা লিখে দিন। ওকে আপনি ICU তে চলে যান।
‪#‎অপারেশনের_পরঃ‬
→ রুদ্রর পাশের বেডেই শুয়ে আছে মেয়েটি। মাথায়, হাতে ব্যান্ডেজ। মায়াবী সেই মুখটাকে এত বছর পর চোখের সামনে এভাবে দেখে চোখের কোনে NaCl এর পানি ভীড় জমালো। আখি বুঝে এল।
→ পাচ বছর আগে কলেজ ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারছিল রুদ্র। শীতের ঝাপটা বাতাস যেমন শরীরে শিহরন জাগায়, ঠিক আচমকা একটি মেয়েকে দেখে রুদ্রর মনে শিহরন জাগে। লম্বা চুল, টানা দুটি চোখ, নাকটা যদিও একটু মোটা তবুও ঠোট দুটোর কারুকার্যতা মিলে অভিনব মায়াবী দেখতে সেই মেয়েটি।
তখন যদি হানি সিং এর লাভ ডোজ সংটা রিলিজ হয়ে থাকত তবে শিউর রুদ্র ঐ মেয়েটিকে ঘিরে এই গান গেত
- কিরে রুদ্র, কথা বলছিস না কেন??
- (বন্ধুর ডাকে সম্মহতি ফিরে রুদ্রর) ও হ্যা, আচ্ছা কাল বলি। ক্লাশে যাচ্ছি বাই।
মেয়েটির পিছু নিল রুদ্র,, মনে মনে নিজেকে গালি দিচ্ছে সে, "কেন যে কলেজে আসিনা। আসলে এতদিনে পরিচিত হয়ে যাওয়া যেত। "
হঠাত সে দেখল মেয়েটি তার ক্লাশেরই,, ক্লাশের লাফাংগা ছেলে পিন্টু পাশে বসার আগেই চট করে মেয়েটির পাশে বসে গেল রুদ্র।
- হাই, আম রুদ্র। আপনি??
- (বেশ বিরক্ত আর গুরুগম্ভীর গলায়) আমি রাতোশি।
- তো আপনি কি এই কলেজে নতুন??
- আপনার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে আপনি নতুন। কয় বছরপর কলেজে এসেছেন??
__এমন উত্তরে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল রুদ্র। সেদিন হালকা ফাইটিং হলেও রুদ্রর চেষ্টায় বন্ধুত্বটা হয়েই যায় ওদের।
তারপর দিন গেল,, মাস গেল ফ্রেন্ড থেকে বেষ্ট ফ্রেন্ড, রাতভর বাংলালিংকের ৪টাকায় মেসেজ বান্ডিলে চ্যাটিং। এভাবেই ভাললাগা থেকে ভালবাসা। কিন্তু কাওওকেই বলে হয়ে উঠা হয়নি।
- এই রুদ্র তুই কই??
- চাঁদের দেশে শুয়ে তরমুজ খাই, খাবি??
- তরমুজ রাখ,, আর আক্কাস (AKS) ক্যাফে তে চলে আয়।
→ তাড়াতাড়ি ক্যাফেতে গিয়ে হাজির রুদ্র। নীল রংয়ের জামাটায় রাতোশিকে বেশ অপরুপ লাগছে। রাতোশিও দেখল তাড়াহুড়ায় ছাগলটায় থ্রী-কোয়ার্টার পড়ে আসছে। তবে লাল কালোর ছোপ মেশানো শার্টটায় ওকে দারুন মানিয়েছে।
- বস এখানে,, (মুচকি হাসি হেসে রাতোশি বলল)
- হুম বল কি বলবি??
- ক্যান আরো কারো সাথে ডেইটে যাবি নাকি??
→ রুদ্র ভাবল আজি রাতোশিকে মনের কথাটা বলে দেয়া যাক। তবে সেতো ফুল আনেনি। ফুল ছাড়া কি প্রোপজ মানায়?? আশেপাশে তাকিয়ে দেখল এক টেবিলের ফুলদানিতে প্লাস্টিকের ফুল। চট করে উঠে ফুল গুলো এনে সে হাজির রাতোশির সামনে। আশে পাশের টেবিলের চোখও এখন ওদের টেবিলে।
- রুদ্র কি করছিস?? সবাই দেখছে। (নিচুস্বরে রাতোশি)
- দেখতে দে,, আজ ওরাও দেখে নিক (বুক কাঁপছে রুদ্রর)
- কি বলবি?? বলে দে ( উতলা হয়ে উঠছে রাতোশি। সেও অধীর হয়ে আছে শোনার জন্য)
- (হাটু গেড়ে ফুল এগিয়ে) আই লাভ ইউ রাতোশি। আমি তোকে অনেক ভালবাসি। এই প্লাস্টিকের ফুলগুলো যেমন শুকিয়ে যাবেনা। আমার ভালবাসাও কখনো তোর জন্য কমে যাবেনা। আমি তোকে আজীবন বুকে আগলে রাখব।
(কথাগুলো শুনে কেদে ফেলে রাতোশি। হাত ধরে টেনে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে কাদে সে।)
- আগে কেন বলিসনি?? এত লেট করে?? আমিও তোকে ভালবাসি পাগল।
→ পাশের টেবিলের শিস বাজানো শব্দে ওদের মনে পড়ে ওরা যে এখন একটি রেস্টুরেন্টে। নিজেদের ছেড়ে নিয়ে টেবিলে বসে লজ্জামাখা মুচকি হাসছে ওরা। আর পাশের টেবিলের কাপলগুলো ঈর্ষান্বিত চোখে একে অপরকে দেখাচ্ছে ওদের।
সেফিন থেকেই ভালবাসার মাধ্যমে এক নতুন অধ্যয় শুরু ওদের। মাঝে মাঝে ঝগড়া,, রাত জেগে একে অপরের দুষ্টামি, খুনসুটি, এভাবেই সব ভালোই যাচ্ছিল। তবে রাতোশি একবার বলেছিল তার ফ্যামিলি যদি তাকে মেনে না নেয় তবে সে রুদ্রর হাত ধরবেনা। রাতোশির কাছে ফ্যামিলি আগে। রুদ্রও রাতোশির এই কথার সম্মান দেয়।
কারন রুদ্র জানত ও দেখতে ভালই। সবি আছে। না মানার প্রশ্ন নেই।
→ কলেজ লাইফ শেষ,, ভার্সিটি লাইফ শুরু। রাতোশি পাবলিক ইউনিতে চান্স পেলেও রুদ্রর জোটে ন্যাশনাল।।
কিছুদিন যেতেই রুদ্র হঠাত এক্সিডেন্ট করে,,
তার একপা হঠাত পংগু হয়ে যায়। রাতোশি প্রথমে ওর অনেক খেয়াল নিত। আগের মতই ক্লাশ শেষে করে কোন উদ্যানের কাপল
বেঞ্চে চুটিয়েপ্রেম করত। পার্থক্য শুধু এখন হাতে হ্যান্ডস্টিক্টাও যায়। সময়তে রাতোশি বদলে যায়। ও ভাবতে শুরু করে, রুদ্রকে ওর ফ্যামিলি কখনোইই এখন আর মেনে নিবেনা। রুদ্র পরে অনেক কষ্ট পাবে তাই এখন ওকে ছেড়ে দেয়া ভাল।
রুদ্রকে সে অনেক ভালবাসে,, কিন্তু রাতোশির কাছে ফ্যামিলির পছন্দ আগে।
হুমায়ন আহমেদ বলেছিলেন "একমাত্র মেয়েরাই নিষ্ঠুর হবার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়"
তাই ভালবাসার আবেগকে ঝেরে ফেলে শুরু হয় এবয়েড খেলা। মেসেজের রিপ্লে নেই, সারাদিন কল নেই,, দেখা নেই। রুদ্রও বুঝে নে সম্পর্কটার এবার ইতি আসতে শুরু করেছে।
কিন্তু রুদ্র মেনে নিতে পারেনি,, নিজের বেচে থাকার কেন্দ্রবিন্দুটাই যে এখন রাতোশি। তার এই মুহুর্তে যদি তাকে ছেড়ে সে চলে যায় সে হয়ত সুইসাইডই করে ফেলবে।
- আমাকে এবয়েড করছ??
- হুমম
- কেন??
- আমাকে আর ডিষ্টার্ব করবেনা। আমি আর এই সম্পর্ক চাইনা। (কান্না গিলে নিয়ে)
- ঠিক আছে মুক্ত তুমি। চলে যাচ্ছি।
- রাতোশি দেখছে চলে যাচ্ছে ছেলেটা, সপ্ন ভাংগা খোঁড়া পায়ে। অঝোরে কাঁদছে সে। কারন তার ফ্যামিলি তাকে মানেনি। আর তাই আজ সে নিষ্ঠুর নিরুপায়।
→ সেদিনের পর আর তাদের কথা হয়নি, যোগাযোগ হয়নি। তবে নিয়তি ৪ বছর পর আবার রাতোশিকে সামনে এনেছে রুদ্রর।
- ড্রাইভার গাড়ি থামালে কেন??
- স্যার সামনে কে যেন এক্সিডেন্ট করল মাত্র।
- রুদ্র দেখল সামনে ভীড় জমেছে। হ্যান্ডস্টিক নিয়ে নেমে পড়ল সে। ভীড় ঠেলে আহত ব্যাক্তিকে দেখতে চাইল সে,, রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে কোন এক গাড়ির ধাক্কায়, পাশের খাম্বার সাথে বারি খেয়ে মাথা ফেটে গেছে তরুনীর। রক্তে আর চুলের মাখামাখি মুখে থাকায় চেনা যাচ্ছেনা। গাড়িতে উঠাল রুদ্র। গাড়ি ছুটালো হসপিটালের উদ্দ্যেশে।
পথিমধ্যে টিস্যু দিয়ে মুছতেছে সে মেয়েটির রক্ত মাখা মুখ।
- একি?? এ যে রাতোশি.??? রাতোশি কি হয়েছে তোমার কথা বলল??? ডেম সে সামথিং টু মি। রাতোশি কথা বল। ড্রাইভার ফাস্ট চালাও।
*******
- স্যার স্যার। উঠুন, দু ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন এই জুস আর এই মেডিসিন ডক্টর আপনাকে নিতে বলেছে।
- (নার্সের ডাকে চোখ মেলে রুদ্র) জ্বী রাখুন আমি নিচ্ছি।
→ নার্স চলে গেলে আবার চোখে পড়ল পাশের বেডে শুয়ে থাকা চিরচেনা মুখটিতে। ৫ বছর আগে রাত যেগে ঘুমিয়ে থাকা একে অন্যের যে বর্ননা দিত, আজ তা হুবহু মেলানো যাচ্ছে।
পাশে রাখা রাতোশির পার্স থেকে মোবাইলে ফ্যামিলি নম্বর বের করে কল দে রুদ্র।
- হ্যালো আমি ডক্টর বলছি, ল্যাব এইড হসপিটাল থেকে। জ্বী রাতোশির আংগুল মুচড়ে গেছে। আপনারা কাইন্ডলি একটু আসুন। বলেই কেটে দেয় রুদ্র।
ড্রাইভার কে নিজের ফোন থেকে কল করে ডেকে জুসটা খেয়ে ড্রাইভারের কাধে ভর করে চলে যায় রুদ্র।
→ রাতোশির ফ্যামিলি আসে,, কয়েকঘন্টা পর রাতোশির জ্ঞান ফিরে। নার্সের মাধ্যমে জানতে পারে, রক্ত আর হসপিটাল বিল রুদ্র নামের একটি ছেলের দেয়া।।
রাতোশির বুকে আবারো পুরোনো সেই মোচর জাগে,, রিসিপশনের নার্সের কাছে ফরমে করা সাইন আর নার্সের সাথে মজা করে এক্স গার্লফ্রেন্ড বলা শুনে ও শিউর হয় এটা রাতোশির রুদ্রই ছিল। কিন্তু যোগাযোগের কোন ইস্যু ছাড়েনি রুদ্র।
→ রুদ্র এখন বাসার ছাদে,, হুইস্কির গ্লাসে হাল্কা সিপ নিয়ে রাতের আকাশ দেখতে ব্যাস্ত সে। জীবন কত তাড়াতাড়ি বদলে। সাথে বদলে যায় চিরচেনা মানুষ গুলো। রাতের আকাশে একটুও মেঘ নেই। আকাশের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে একটা নৌকা ভাসছে। অর্ধ চাদ! বিষন্নতায় ঘেরা কালো আরেকটি রাত। তবে রুদ্র অভ্যস্ত। কারন সে জানে এমন আরো হাজারো রাত তাকে পাড়ি দিতে হবে রাতোশিকে ছাড়াই।। রাতের নিশ্চুপতা আর হিংস্রতার সাথে চিয়ারজ করে সিপ নিল রুদ্র।
→→ কিছু কিছু ভালবাসা এমনি অসমাপ্ত রয়ে যায়। আর কিছু কিছু ছেলে ভালবেসে এমনি সব সপ্ন আর দিক বেদিক হারিয়ে রুদ্রর ন্যায় খোঁড়া হয়ে যায় ←←