লেখাটা লেখার সময় কিছুটা দ্বিধা এবং সঙ্কোচ আমাকে পেয়ে বসে। কারন আমাদের সমাজের পাঠকসমাজ এখনো পরিপূর্ণ ভাবে কোনো খবর বা বল্গ মূল্যায়ন করতে পারেন না। তারা সব কিছুকেই সহজে সরলীকরণ ও সমীকরণ করে ফেলে। তারা মনে করে লেখক যা কিছু লেখে তার সবই বোধ হয় নিজস্ব অভিজ্ঞতা,স্বার্থ,বোধ এবং বেদনা থেকে লেখা। কাজেই শিরোনামের প্রসঙ্গ লিখতে গেলে একশ্রেণীর পাঠক হয়তো ভেবে বসবেন লেখক হয়তো হররোজ পরকিয়া প্রেমের মধুর স্বাদ আস্বাদন করেন। লেখার প্রতিবন্ধকতার আরোও কিছু কারন আছে। আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে যে দুই-একটা বিচ্ছিন্ন পরকীয়া প্রেমের কথা শুনেছি বা দেখেছি তার স্বপক্ষে প্রমানের অভাব ছিল। একটা মাত্র ঘটনা বাদে। কিন্তু বিগত পাঁচ-ছয় বছরে কাছের বা দুরের বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য সংবলিত গল্প বা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা,ফেসবুক,ভাইবার, টুইটার বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান এই প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করার সাহস যুগিয়েছে।
সৃষ্টিকর্তার অনিপুন হাতে গড়া এই মানুষজাতি। বলা হয়ে থাকে স্বর্গ থেকে প্রেম আসে। আর এই প্রেম ভালোবাসার উপর ভিত্তি করে মানুষ বিভিন্ন সম্পর্কের বাঁধনে আবধহ হয়। পৃথিবীর কিছু মধুর বা বিশ্বাসের বা সন্মানের সম্পর্কের মধ্য অন্যতম স্বামী-স্ত্রী, দেবর-ভাবি,শালী-দুলাভাই বা ফুপাতো,চাচাতো,মামাতো,খালাতো ভাই- বোন, বা স্বামী অথবা স্ত্রীর বন্ধু অথবা বান্ধবীদের সাথে সম্পর্ক ইত্যাদি। এই সকল মধুর বা বিশ্বাসের সম্পর্কের মধ্য খলনায়ক হয়ে আবির্ভাব “পরকীয়া প্রেমের” । পরকীয়া প্রেমের ইতিহাস বাহমান বাংলার সম্পর্কের মতোই পুরানো। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসে এই পরকীয়া এক প্রকট আকার ধারন করেছে। এমনই অবস্থা যে পরকীয়া প্রেম সগর্বে তার ডাল-পালা ছড়াচ্ছে এই সমাজে দুর্দান্ত গতিতে।
আজকের সমাজে স্বামী অথবা স্ত্রীরা তাদের প্রিয়তম বা প্রিয়তমার চুম্বনের মাঝে জুডাসের চুম্বনকে খুঁজে পাই। কিছুদিন আগে চীন এবং আমেরিকার একদল বিশেষজ্ঞ একটা তথ্য দিয়েছিলো যে ১৬ থেকে ২১ বছরের যুবকদের সব চেয়ে বেশি পছন্দ মধ্য বয়সি নারীদের। আর মধ্য বয়সী নারীদেরও পছন্দ তাদের অপেক্ষাই কম বয়সী ছেলেদের। আর এ যুগের আধুনিক মেয়েরাতো চরম আশ্রয় হীনতায় ভোগে। যার ফলে বিয়ের পরেও চলছে অবাধে এই অবৈধ সম্পর্কের। প্রবাদতো একটা আছেই ভালোবাসার দেবতা কখন যে কার বুকে থাবা বসায় কে জানে। বিশ্বায়নের এই যুগে বিয়ের পর অন্য একটা সম্পর্ক না থাকা মানে আপনি খ্যাত বা লুজার Be Adventurist Man. ২০১২ সালের Financial Express এর তথ্য মতে বাংলাদেশে ১১ হাজার ২শত ৫৬টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। তার মধ্য প্রায় ৮ হাজারই বিচ্ছেদ ঘটে স্বামী অথবা স্ত্রী পরকীয়া প্রেমে জড়িত থাকার কারনে। আর ২০১৪ সালের তথ্য মতে ১৮৬৫৩টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্য প্রায় ১৭ হাজারই পরকীয়া প্রেমের কারনে।
প্রতিদিন খবরের কাগজের একটা অংশতো বাঁধা ধরা এই রগরগে পরকীয়া প্রেমের খবরের জন্য। খবরের পাতা খুললেই দেখা যায় স্বামীর হাতে স্ত্রি খুন বা স্ত্রীর হাতে স্বামী, মা বা বাবার হাতে সন্তান, ভাইয়ের হাতে ভাই, বোনের হাতে বোন, বন্ধুর হাতে বন্ধু ইত্যাদি। ২০১৪ সালে শুধুমাত্র পরকীয়া প্রেমের কারনে বাংলাদেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে ১২৪টি। এ গুলোতো খাতা কলমের হিসাব আর মানবিক হিসাবের কথা নাহয় নাইবা বললাম। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে রাষ্ট্রতো পরকীয়া প্রেমকে স্বীকৃতি দিয়েছে আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অধিবাসীতো। আর আমরাও মানুষিক দিক থেকে ধিরে ধিরে এটা মেনে নিতে শুরু করেছি এটা হতেই পারে এ আর নতুন কি। তাহলে আর সামাজিক দিক থেকে স্বীকৃতি দিতে বাঁধা কোথায়। তবে স্বীকৃতি দেবার আগে নিজের পিছনের দিকে একবার তাকিয়ে দেখবেন কি?
★
বিঃদ্রঃ আমার এই লেখাতে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তবে বলি আমি কারোর কাছে ক্ষমা চাইতে পারবো না। যে সমাজের সবাই সবার পিছনে কাঠি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সেখানে ক্ষমা আবার কি?