Monday, October 12, 2015

তুমি আমার রাজকন্যা !!!


পুরো লেখাটাতে হয়ত খুব একটা রঙ চং মেশাতে পারিনি, সত্যি বলতে বাস্তবতা খুব একটা রংগিন হয়ও না। বাস্তবতার রঙ ধূসর, ঝাপসা। ছেলে হিসেবে আমি যাই হই, রাজপুত্র না। অন্তত সে বিশ্বাসটা করাইতে পারিনি আজো নিজেকে। তাই খুব অপরাধবোধ হচ্ছে আজ … রাজপুত্রটি না হয়েও আজ আমার “রাজকন্যা” কে নিয়ে লিখছি বলে। ফেসবুক ছেড়ে আসার অনেক দিন পর আজ কিছু জিনিসকে আক্ষরিক অর্থেই অনেক মিস করছি। তার বেশির ভাগই রাজকন্যাটাকে কেন্দ্র করে। ব্লগ কতৃপক্ষ আমাকে লেখার একখানা প্লাটফর্ম দেয়, আর লেখাগুলোও আমার মানষিক অবস্থার সাথে সামঞ্চস্য পূর্ণ হয়। তাই কিছুটা পড়াশুনো করা থাকলেও আজ মার্ক্সবাদ কিংবা ’৬৮ এর দশকে ভারতের কমিউনিষ্ট দের ভুল ভ্রান্তি গুলো নিয়ে লিখতে পারব না। আজকে রাজকন্যাকে নিয়েই লিখব।

মেয়েটা একটু পিচ্চি … মেয়েদের আকারের সাথে তুলনা করলে হয়ত ও যথেষ্ঠ লম্বা। কিন্তু আমার কেন জানি ওকে পিচ্চি ভাবতেই ভাল লাগে বেশি। আব্বু-আম্মুর অনেক আদরের মেয়ে। চুলগুলো খুব একটা লম্বা নয়, সবসময় স্ট্রেইট থাকত। ঝুকলে হয়ত সামনের কিছু চুল চোখের সামনের দিকে চলে আসত। খুব একটা মেক আপ নিত না, বোধহয় ও জানত মেক আপ বাদেও সে রাজকন্যাই থাকবে, তবে বাইরে বেরুলে বোধহয় খানিকটা ফেস পাউডার আর গাড় একটা লিপস্টিক- এই সর্বোচ্চ। বাংগালী মেয়েদের শাড়িতে আশ্চর্য রকমের সুন্দর দেখায়, কিন্তু ও শাড়ি পরলে সৌন্দর্য নামক ব্যাপার খানিক টা অসংগায়িতের পথে চলে যায়। খুব ভয় পেতাম ওর শাড়ি পরা কোন ছবি টাইমলাইনে আসলে। যখন অভিমান করে কথা বলত তখন এক-তৃতীয়াংশ কথা নাক আর বাকিটুকু মুখ দিয়ে বেরুত। কাদলে খুব একটা শব্দ হতোনা, হয়ত একা একা কেদে অভ্যাস হয়ে গেছিল ওর। তবে হাসি … হাসি মেয়েটা একদম কন্ট্রোল করতে পারত না। পরিস্থিতি না বুঝেই হিহিহি করে হেসে দিত, তবে সবচে অদ্ভুত হাসিটা শুনেছিলাম একদিন যখন ও কাদো কাদো গলায় হেসে ফেলেছিল। দূরের জিনিসগুলো বড্ড কম দেখত প্রিন্সেস, বেশ ভাল রকমের শর্ট সাইটেড ছিল। তাই চোখে একটা কালো ফ্রেমের চশমা, পাওয়ার -৩.০০ থেকে খানিকটা বেশি। একদিন আমি সবচে বেশি আকৃষ্ট হয়েছিলাম একটা ব্যাপার জেনে। ওকে “কমিউনিজম” নিয়ে একটা প্রশ্ন করেছিলাম একটা উত্তরটা শুনে খবই অবাক হয়েছিলাম। চিন্তা করতে পারেন একটা মেয়ে আপনাকে সাম্যবাদের মত হাই থটের জিনিসের সংগা দিচ্ছি ?? আমি ভাই মফস্বলে মানুষ, এ ব্যাপারটা চিন্তা ও করতে পারিনা।

আমার লাইফে ও কখনো নিজেকে জড়ায় নাই, কিন্তু আমি ওর সব কিছুতে আষ্টে-পিষ্টে জড়িয়ে গেছিলাম। মেয়েটা আক্ষরিক অর্থেই রাজকন্যা ছিল কারন ওর আশে পাশের সবাই অনেক স্নেহ করত ওকে। কিন্তু একজন বাদে !!! সেটা হল ওর প্রিন্স, যাকে ও রাজপুত্রের জায়গাটা দিছিল। একটা সম্পর্কের মধ্যে ঝামেলা হতেই পারে, আমি চেষ্টা করেছিলাম ওদের সম্পর্ক্টাকে জোড়া লাগাতে। কারন মেয়েটা অনেক কষ্ট পাইত, আর আমার কেন জানি মনে হয়েছিল মেয়েটার কষ্ট পাওয়াটা উচিৎ নয়। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওর পাশে থাকব … যেদিন ও আবার হ্যাপি হয়ে যাবে সেদিন আমি পাশ থেকে চলে যাব স্বেচ্ছায়। আর ঠিক এভাবেই একজন “থার্ড পার্সন সিংগুলার নম্বর” হিসেবে আমি জড়িয়ে পড়ি। মেয়েদের সাথে খুব কম যোগাযোগ ছিল আমার, সত্যি বলতে একটা বয়সে ইন্টারেস্টটা কম ছিল। আমার লাইফে প্রিন্সেসই একমাত্র মেয়ে যাকে সবচে বেশি জেনেছি। ফেসবুকে মেসেজ সংখ্যা হয়ত ৩১,০০০ + । একটা সময় এসে আমি বুঝতে পারলাম ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারতেছি না, ও দিন দিন আমার অভ্যসে পরিনত হয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে মেয়েটাকে অনেক ডিস্টার্ব করে ফেলতাম। আর ওর অদ্ভুত সহ্য ক্ষমতা ছিল, শেষদিন পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেনিও এটা জেনেও যে আমি ওকে প্রিন্সেস বলে ডাকি। অনেক কিছু নিয়ে পড়াশুনো করেছি কিন্তু ভালোবাসাটা নিয়ে তেমন করা হয়নি, আমি তেমন জানিনা ভালোবাসা কি !!! তবে এটুকু জানি ও খারাপ থাকলে আমি মানষিক ভাবে ভালো থাকতে পারতাম না কিংবা পারিনা। মাত্রাতিরিক্ত মিস করি, ভয় পায় ওকে অনেক। যদিও আমার থেকে বয়সে বেশ ছোট। কখনো তেমন ইগো দেখায়নি ওকে, আর মোটেও বকা দিতে পারতাম না । বকা দেবার অনেক কারন ছিল কিন্তু যেই মেয়েটাকে তার বাবা মা এর আদরের সাথে আগলে রেখেছিল তাকে আমি কোন অধিকারে আমি বকা দিতাম ? ওর জন্য বোধহয় আমি অনেক কিছু করতে পারি ... প্রয়োজনে নিজের থেকেও নিজেকে আলাদা করে ফেলতে পারি।

তারপর অনেক কিছু হইছে, একটা সময় আমার উপলব্ধি হল যে দিন শেষে আমি একজন থার্ড পার্সনই। আমার সর্বোচ্চ পরিচয় ওটায়। আমি ওর পাশে থাকতে চায় ও কখনো মেনে নিবে না এইটা, আর তাছাড়া আমার কিছু আচরনে ও অনেক পরাধীন হয়ে পড়েছিল। দিন শেষে আমার নিজেকে নিজেরই সামলাতে হয়, প্রিন্সেস কথা বলার সময় কখনো ভাবত না তার ছোট ছোট কথা গুলো আমাকে কতটা কষ্ট দিত। আজকাল অনেক খারাপ লাগে, একজন চেইন স্মোকার স্মোকিং ছাড়ার জন্য যেমন নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে আর আমার সেই দশা দাড়িয়েছে। শেষ করব একটা কথা দিয়ে, একদিন প্রিন্সেস আমাকে শরৎচন্দ্রের একটা লাইন শুনিয়েছিল এমন যে, যে কাউকে নাকি ভালোবাসাই যায়, শুধু প্রেম না করলেই হল। আমি সেদিন জিজ্ঞসা করেছিলাম “আমার কাছে সে ভালোবাসার মানুষটি যদি তুমি হও মেনে নিতে পারবা তাহলে ” ? প্রিন্সেস উত্তর করেছিল “কারো ইমোশন কন্ট্রোল করবার ক্ষমতা আমার নেই” । আসলে রাজকন্যারা রাজকন্যাই … আমার মত দশটা পাচটা নিচু শ্রেণীর মানুষ রাজকন্যাদের নিয়ে সপ্ন দেখবে এটাই স্বাভাবিক। অপরাধবোধ হলে ও আস্তে আস্তে কিবোর্ড চেপে লিখবে “তুমি আমার রাজকন্যা” !!!