Friday, September 11, 2015

নিষ্কৃতি ---

এক :
আকাশে হালকা সাদাকালো মেঘ এদিক ওদিক দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে। তার ফাঁকে ফাঁকে চাঁদের আলো ভূলোকে এসে পড়ছে।সাদাকালো মেঘের নির্মম খেলায় চাঁদের আলোরা একধরনের বিশ্রি রঙ ধারন করেছে। এই রংটা অর্ণবের খুব অপছন্দের। যে রাতে জোসনার রং এই রূপ ধারন করে সাধারণত সেই রাতে তিনি জোসনা দেখেন না। আজ রাতেও তিনি জোসনা দেখছেন না কিন্তু এই ম্রীয়মান জোসনা মধ্যে ডুবে আছে সেল ফোনের কথোপকথনে।
-হ্যাঁ, আমি তোমার সাথে যেটা করছি সেটা তো অন্যায়।
-অন্যায়, তা করছেন কেন?
-কেন করছি? তার উত্তর হতে পারে এ রকম-“10 বছরের সুখি দাম্পত্য জীবনের একাকিত্ত্বের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।
-সেটা কেমন?
-আচ্ছা তোমার একটা প্রিয় ফিল্ম-এর নাম বল।
-উম…12 Years in a Slave.
-উফ—বোরিং ছবিটা, ইতোমধ্যেই আমি 7 বার দেখেছি। ১ম বার তো ছবিটা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছিল।
-বুঝলাম।
-কি বুঝলে?
-আমিও ১0 বছর পরে বোরিং হয়ে যাব।
-সে সুযোগ নেই।
-কেন?
-তোমার সাথে 10 বছর ধরে জার্নি করতে পারব না।
-কেন?
-কারণ আমার কাঁধে চেপে বসে আছে বিশ্বস্ততার বোঝা। আমার স্ত্রীর বিশ্বস্ততার বোঝা। এই বোঝা নিয়ে বেশিদিন বায়োলজিক্যাল সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
-তাহলে তো আমার সাথে সম্পর্কের কারণটা মোটেও ভাল নয়।
-সত্যিই তাই।
-আপনার বলা মতে আপনি আমার সাথে যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তা করতে আপনি সময় ব্যয় করছেন মাত্র ২ ঘন্টা 30 মিনিট।সম্পর্কের বয়স হলো আজ 15 দিন। আপনি আমার সাথে এখন সেল ফোনে কথা বলছেন প্রায় 15 মিনিট এই 15 মিনিটে আপনি মনের কথাটা বলে ফেলেছেন। আমার তো মনে হয়না আপনার সাথে সম্পর্কটা আর কন্টিনিউ করবে।
-আমার কিন্তু তা মনে হয় না।
-মনে হয়না কেন? আপনার সাথে যে সম্পর্কটা সৃষ্টি হয়েছে তা আমি আর টিকিয়ে রাখব না। আপনি মাত্র আড়াই ঘন্টার কথার যাদুতে ফেলে যে সম্পর্কটা গড়ে তুলেছেন আর আমি আড়াই মিনিটও টিকিয়ে রাখতে রাজি নই।
-পারবে না বিন্দু, চাইলেও পারবে না।
-কেন পারব না।
-তুমি ঐ যে বললে না কথার যাদুতে, না কথাটা সত্যি নয়।
-তাহলে সত্যি কোনটা।
-কথার যাদুর জালে আমি তোমাকে আটকাবো অত সুন্দর কথা আমি বলতে পারিনা, আমি তোমাকে সত্যি কথার জালে আটকিয়েছি। আমি তোমার সাথে যে সম্পর্কটা তৈরী করেছি, মানে সম্পর্কটা তৈরী করার আগে কেন তোমার সাথে সম্পর্কটা তৈরী করতে চাই সে ব্যাপারে তোমার কাছে আমি পুরোটাই সত্যি কথা বলেছি।আমি আগেই বলেছি তোমার-আমার সম্পর্কটা হবে anatomical affairs. তুমি আমার এই সত্যি কথার সহজাত প্রলুব্ধতার জালে আটকে গেছো, কথার যাদুতে নয়।
-তার মানে আপনি আমাকে খারাপ মেয়ে বলতে চাইছেন?
-আমি যদি তোমাকে খারাপ মেয়ে বলি, জগত-পতির মহান আনুতোষিকের প্রতি মহা অশ্রদ্ধা করা হবে।
-আচ্ছা, আমাকে নিয়ে আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার সমস্যা হচ্ছে না।
-না
-কেন?
-সেটা তোমাকে পরে বলব।
-আপনার স্ত্রী কি আপনার-আমার সর্ম্পর্কের ব্যাপারটা জানে?
-মনে হয় জানে।
-তারপরও সমস্যা করছে না। কেন করছে না।
-বল্লাম, সেটা পরে বলব।শোন, আগামী হলিডেতে তুমি-আমি বেড়াতে যাচ্ছি।
-কোথায়?
-তুমি যেখানে যেতে চাও।
-আমাদের সাথে আর কেও থাকবে?
-বোধ হয় না।
-শোন তুমি ভেবো না তোমার সাথে বেড়াতে গিয়ে তোমাকে ফুলদানিতে সাজিয়ে সেই ফুলদানি যত্নসহকারে দু’হাত দিয়ে তুলে গন্ধ শুকে আবার জায়গায় রেখে দেবো।
-কি করবেন আপনি?
-কথা সত্যি প্রথমে ফুলদানিটা দু’হতে তুলে নেব। তারপর যত্নসহকারে ফুলদানি থেকে ফুল বের করে নেব।তারপর-
-তারপর কি?
-থাক এখন আর কিছু বলছিনা, ওটা তুমি তখনই বুঝতে পারবে। আর আমার সাথে বেড়াতে যাবার ওটাই বোধ হয় তোমার উপজীব্য। শোন স্মার্ট ফোনের আন-স্মার্ট সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি। ও তোমার সাথে আর বেশিক্ষণ কথা বলতে দিতে চাইছে না। আজকারে মত রাখি।
-আচ্ছা।
-আ্চছা আর-একটা ব্যাপার বলতো
-আমি ফোন রাখতে বললেই তুমি সব সময় হ্যাঁ বল, কখন তো বলনা আরএকটু কথা বলুন।
-আপনি কথা বলতে নাই চাইলে রেখে দিবেন এতে আমার বলার কি আছে।
-আচ্ছা রাখি।
দুই:
রুমের মধ্যে চারিদিকে কাপড়গুলো এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে। ল্যাপটপটি পড়ার টেবিলে, তার উপরে Khushwant Singh-এর Malicious Gossip বইটি পড়ে আছে।টেবিলের উপর রাখা বইগুলো এদিক ওদিক ছড়ানো ছিটানো। খাটের উপর বিছানার চাদরটিও এলেমেলো।শিশুদের খেলনাগুলো কিছু বিছানায় পড়ে রয়েছে।অর্ণবের স্ত্রীর ধারনা যে কারণে রুমটার জিনিষপত্রগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে ঠিক সেই কারণেই সংসারটা অনেক বেশি গোছানো। এলোমেলো রুমের গোছানো সংসারের পেছনে যার মূখ্য ভূমিকা রয়েছে সে আর কেও নয় সংসারে দৃষ্টিকোণে পৃথীবির সবচেয়ে দামী জিনিষি, তাদের 3 বছরের সন্তান।বাচ্চাটা খেলা করছে মা তাকে সামলাচ্ছে। এমন সময় অর্নবের সেল ফোনে “জানি জানি তুমি এসেছো এই পথে মনেরও ভুলে… গানটি বেজে উঠল। অর্নবের স্ত্রীর বুঝুতে একটু সময় লাগল ওটা রিং টোন।
-তুমি ফোনটা ধরলে না কেন? আর তুমিতো কখনও রিংটোন হিসাবে গান সেট করনা।
অর্ণবেরও বুঝতেও বেশ কষ্ট হলো এটা তার স্ত্রীর কৈফয়ত চাওয়া, প্রশ্ন না মন্তব্য।
-কে ফোন করেছে?
-নাম্বারটা সেভ করা নাই।
- নাম্বারটা সেভ করা নাই। এটা কি আমার প্রশ্নের উত্তর হলো?
-কেন হবে না? আচ্ছা রাত হয়ে গেছে, ঘুমাতে চল।
-চল।
তাদের একমাত্র মেয়েটা মাঝখানে শুয়ে আছে এবং দু’জন খাটের দুই পাশে শুয়ে তবে জেগে আছে, মেয়েটি ঘুমাচ্ছে। অর্ণবের মনে হচ্ছে তার স্ত্রী একজন সাধারণ বুদ্ধির অসাধারণ মানুষ। অর্ণবে বিরুদ্ধে তিনি কখনও কোন অভিযোগ করেন না শুধু তুমি এখন আর আমাকে আগের মত ভালবাসনা। তিনি মনে করেন তার স্বামী অর্ণব একজন অসাধারণ মানুষ। এবং অর্ণব কখনও কোন প্রকার অন্যায় তার সাথে করতে পারবে না।
-আচ্ছা আমাকে যদি কোন মেয়ে ভালবাসে তাহলে তোমার কেমন লাগবে?
-ভাল লাগবে। অর্ণবের স্ত্রীর তড়িৎ উত্তর।
-কেন? ভাল লাগবে কেন?
-কারণ আমার স্বামীকে একজন মানুষ ভাল বাসবে আর আমার ভাল লাগবে না?
-আর আমি যদি তাকে ভালবাসি?
-ভাল লাগবে।
-কেন?
-শোন, তোমাকে আমি ছাড়া এই পৃথীবিতে আর কেউ ভালবাসবে এটা আমি বিশ্বাস করিনা।
-কেন, বিশ্বাস করনা?
-কেন জানি না, তবে বিশ্বাস করিনা।
-আমি দেখতে সুন্দর নই, তাই।
-আমার কাছে তো কখনও মনে হয়নি তুমি দেখতে অসুন্দর।
-তাহলে ভাল বাসবেনা কেন?
-তুমি কি সিরিয়াসলি জানতে চাইছো?
-হুম!
-তাহলে শোন, তোমাকে কেউ ভাল বাসলেও বাসতে পারে কিন্তু তুমি পারবে না কারণ এই পৃথীবিতে শুধু আমার জন্যই তুমি এসেছো।
-এটা খুব ছেলে মানুষী উত্তর হলো না?
-হোক, তুমি ঘুমাও।
তিন;
মাঝ রাতে তারা-আঁধারের মিতালি নশ্বরে অবিনশ্বর, তুমি সেই মিতালির
পদধ্বনি গুনো আর আমাকে অবসর দিও তোমাকে ভালবাসার।
-তোমার জন্য কবিতার লাইন দু’টি লিখলাম। কেমন হয়েছে বলতো?
-খুবই সুন্দর হয়েছে।
-কিন্তু আমার মোটেই পছন্দ হয়নি।
-না ভাল হয়েছে। আপনিতো বেশ ভাল কবিতা লেখেন।
-না আমার লেখা আমার কখনই পছন্দ হয়না।
-ওটাইতো আপনার সমস্যা। আপনার নিজের জিনিষ আপনার কখনও পছন্দ হয়না। অন্যেরটা পছন্দ হয়।
-কি বলতে চাইছো।
-কিছু না থাক।
-আচ্ছা এখন কি তুমি আমার প্রেমে ঠিকঠাক ভাবে পড়েছো?
-কই নাতো?
-তাহলে তুমি আমার সাথে ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বল কেন?
-ভাল লাগে তাই।
-এমনিই ভাল লাগে? সেই ভাললাগারে পিছনে ভালবাসার কোন ভূমিকা নেই?
-আমার কিন্তু তা মনে হয়না।
-সেটা যদি ঠিক না হয়ে থাকে; তুমি আমার সাথে দু’টি অন্যায়ের যে কোন একটি করছ। হয় তুমি মিথ্যা বলছ অথবা তুমি আমার সাথে প্রেম প্রেম খেলার অভিনয় করছ। দু’টি ঘটনার যেটিই করনা কেন সেটিই অন্যায়।
-কেন প্রেমে নাকি বিউটি লাইয়ে সুযোগ রয়েছে। ধরে নিন সেটা করছি।
-প্রেমে বিউটি লাইয়ের সুযোগ থাকলেও প্রেম নিয়ে বিউটি লাইয়ের সুযোগ নাই। আর তাছাড়া মিথ্যা আমার কাছে মিথ্যাই। সেটা প্রেমে হোক বা যুদ্ধ ক্ষেত্রে হোক বা অন্য কোন ক্ষেত্রে হোক।
-আপনি নিশ্চিত থাকুন যে আমি আপনার সাথে প্রেম করছি না।
-তুমি মুখে বলছ তুমি আমার সাথে প্রেম করছ না কিন্তু তোমার চোখ সে কথা বলছে না।
-চোখ কি বলছে?
-তুমি আমার চোখের দিকে যে ভাবে নিসংকচে তাকাও তাতে আমি নিশ্চিত যে তুমি আমার প্রেমে পড়েছো। চোখ কখনও মিথ্যা বলেনা।
-আচ্ছা ধরুন সত্যিই আমি আপনার প্রেমে পড়েছি, আপনার স্ত্রী, সন্তান থাকা সত্ত্বেও আমি আপনার সাথে বিয়ে করতে চাই, আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে পারবেন?
-না।
-তাহলে আপনি আমার সাথে প্রেম করছেন কেন?
-একটি বার শুধু মাত্র তোমার ঠোটে চুম্বন দেব বলে।
-আর কোন কারণ নেই।
-আছে।
-কি কারণ?
-চুম্বন এর পরে যা ঘটতে পারে সেই ঘটনার জন্য।
-আপনি আপাদ-মস্তক একটা অসভ্য লোক।
চার;
এখন রাত বারোটার মত বাজে, অর্ণব ছাদের উপরে তারাদের দিকে তাকিয়ে এদিক ওদিক হাটা-হাটি করছে। অর্ণবের স্ত্রী ও সন্তান ঘুমাচ্ছে।অর্ণবের খুব কাঁদতে ইচ্ছা করছে। অর্ণবের একটা অভ্যাস আছে মাঝে মাঝে সন্ধ্যার দিকে ঘুমিয়ে পড়ে এবং রাত বারোটার দিকে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এসময় তাকে কেন জানি কাঁদতে ইচ্ছা করে। কেন কাঁদতে ইচ্ছা করে অর্ণব বুঝতে পারে না। তবে সে এইটুকু বুঝে এই কান্না তার অনেক হাসির চেয়ে ভাল লাগে। কিন্তু আজকের কান্না তার কেন জানি ভাল লাগছে না।ইচ্ছা করছে মেয়েটাকে বিছানা থেকে তুলে এনে বুকে জড়িয়ে বাবা ও মেয়ে মিলে একসাথে তারা দেখবে আর কাঁদবে।আর বলতে ইচ্ছা করছে মা তুই আমাকে ক্ষমা করিস।কিন্তু মেয়েটা এই সময় এত ভাল করে ঘুমায় যে মেয়েটার মুখের তাকালেই মন ভাল হয়ে যায়।
লোকের মুখ থেকে অর্ণব তার নিজের ব্যাপারে যে প্রশংসাগুলো সাধারণত শুনে থাকে তা হলো তার বিচার বিশ্লেষণগুলো যথেষ্ঠ যৌক্তিক। কিন্তু তার প্রতি লোকেদের এই প্রশংসার সাথে অনেক ক্ষেত্রেই একমত হতে পারেনি। যেমনটি সে এখন পারছে না। বিন্দুর সাথে জড়িয়ে পড়ার এই আবেগিক ইচ্ছাকে অবদমন করতে গিয়ে বারবার সে পরাজিত হচ্ছে। অবদমিত ইচ্ছাগুলো বাঁধা দেওয়া স্রোতের মত ফুলে ফেঁপে উঠে আরও শক্তি সঞ্চার করে। সেই শক্তি নিমিষেই ওর যুক্তি-বুদ্ধিগুলোকে তছনছ করে দেয়। অর্ণব যতবার ভাবে বিন্দুর কাছ থেকে দূরে সরে আসবে তত বার তার যেন কি একটা কষ্ট হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই দমন-পীড়নের মাঝ খানে তার স্ত্রী তাকে এখনও পর্যন্ত অভিযোগ করেনি; যে তুমি আমাকে আমাকে সময় দিচ্ছনা বা ভালবাসছ না, বা তোমার কি হয়েছে? অবশ্যই এর পিছনে অর্ণব তার অভিনয় শিল্প সত্ত্বাকেই বেশি কৃতিত্ত্ব দিচ্ছে। অর্ণব প্রায়শই মজা করে বলে থাকে-প্রত্যেক ভাল স্বামী মাত্রই একজন ভাল অভিনেতা। অর্ণব এখনও পর্যন্ত সেই অভিনয়টা ভালমতই চালিয়ে যাচ্ছে।
ছাদে রাখা সেল ফোনটা অর্ণব হাতে তুলে নিল। মুখস্ত হয়ে যাওয়া একটি নাম্বারে অর্ণব 0171—–00 কিগুলো চেপে ডায়াল করল।
-হ্যালো, তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?
-হুম, এত রাতে ফোন দিলেন কেন?
-তোমার সাথে গল্প করব বলে।
-আপনি তো আমার সাথে গল্প করার জন্য প্রেম করেননি। অন্য কিছু করার জন্য প্রেম করেছেন।
-তাহলে শেষ পর্যন্ত তুমি স্বীকার করলে তুমি আমার সাথে প্রেম করছো।
-কি বলবেন বলেন।
-ঐ বল্লাম গল্প করব।
-তাহলে আজকের গল্পটা আমিই করি। আপনি শুধু শোনেন।
-তাহলে তো খুব ভাল হয়।
-আপনার জন্য সেটা মোটেও ভাল হবার কথা নয়।
-তুমি যা বলবে তাই আমার ভাল লাগবে। বল না।
-কাল আমার বিয়ে। কথা বলে বিন্দু বেশ কিছুক্ষণ থেমে রইলো।
প্রচন্ড গরমে অর্ণব ঘেমে যাচ্ছিল, হঠাৎ করে জোরে ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করেছে। অর্ণবের মনের ভেতরে একটা প্রচন্ড ভাল লাগা কাজ করছে। আকাশের তারাগুলো খুব সুন্দর লাগছে। টুকরো টুকরো মেঘ তারাগুলোকে কিছুক্ষণের জন্য ঢেকে দিচ্ছে আবার কিছুক্ষণের জন্য আলগা করে দিচ্ছে। অর্ণবের সাথে মেঘ আর তারারা মিলে যে লুকোচুরি খেলা করছে অর্ণবের দেখতে তা খুব ভাল লাগছে। অর্ণবের হঠাৎ করে মনে হলো তার মেয়ে তার হাত ধরে নাচছে আর আনন্দ করছে। অর্নবের ইচ্ছা করছে এখনই সে মেয়েটাকে নিয়ে হাঁটতে বেরোই, কয়েকটি শিউলি ফুল ছিড়ে মেয়ের ছোট্ট বেণীতে গুজে দিবে এবং দুই কানে আরও দুইটি ফুল গুজে দিবে। যেটা অর্ণব প্রায় প্রতিদিন সকালেই করে থাকে।
-হ্যালো শুনতে পাচ্ছো।
অর্ণব খেয়াল করল কখন সে তার হাতে রাখা স্মার্ট সেল ফোনটি ছাদে রেখে দিয়েছে। সেখান থেকে খুবই হালকা সাউন্ডে বিন্দুর হ্যালো শব্দ শোনা যাচ্ছে।
-হ্যাঁ বিন্দু বল।
-আমার বিয়ের কথা শুনে খুব খারাপ লাগছে?
-বিন্দু তুমি খুব খুব সুখে থেকো। তোমার বিয়ের কথা শুনে আমার খুব ভাল লাগছে। আমি তোমার জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করি তুমি সুখে থেকো।
সাত দিন পর।
অর্ণব তার সংসারের সাথে আবার ওতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে পড়েছে। যদিও দুইটা খন্ড সময়ের অর্ণবের আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য তার স্ত্রী চোখে ধরা পড়ে নি। কিন্তু অর্ণব এই দুইটা খন্ড সময়ের পার্থক্য খুব ভাল করেই জানে কারণ সেটা অর্ণবের কাছে আবেগীক দমন-পীড়নের একটা উপাখ্যান বলে মনে হয়।অর্ণবের ফোনে রিংটোন বেজে উঠল।
-ফোনটা কে করেছে দেখতো? অর্ণব চেঁচিয়ে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন।
-অপরিচিত নাম্বার।
-এখানে আন।
-হ্যাঁলো কে বলছেন?
-আমি কে সেটা বড় কথা নয়। আপনি যতই ভাবুন আমি আপনার কাছ থেকে দূরে সরে গেছি, সেটা ঠিক নয়।আমি আপনার সাথে ছিলাম, আপনার সাথে আছি, আপনার সাথে থাকব।
-বিন্দু তুমি, মানে আপনি?
-এখন রাখি, বিবাহোত্তর ঝামেলা নিয়ে ব্যাস্ত আছি।
সমাপ্ত।