গরুর আই ডি কার্ড
কয়েকদিন আগে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং হিন্দু মৌলবাদী দল বিজেপির নেতা রাজনাথ সিং বলেছেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে যাতে বাংলাদেশের মানুষ গরুর মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় । ব্যাপারটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে ।
তো যাই হোক তোদের গরু তোরা দিবিনা তাতে আমাদের কি ? আমরা কি আর গরু খাওয়া বন্ধ করে দিব ? কক্ষনোই না ! কিন্তু তাই বলে এই গরু পাচার রোধে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গরুদেরও নাকি ছবি সম্বলিত আই ডি কার্ড দেয়া হচ্ছে, এর মানেটা কি শুনি ? ।
আমি বলি কি, গরুদের যখন আই ডি কার্ড দিচ্ছই, পাসপোর্টটাও দিয়ে দাওনা, অন্তত ভিসা টা নিয়ে বাংলাদেশটাতো একটু ঘুরে যেতে পারত ? নাকি ? আফটার অল গরুরাও মানুষ !!
খাদ্য ও পানি ছাড়া সত্তুর বছর
এই খাদ্য ও পানীয় ছাড়া কি আমাদের চলে ? চলে না । তাহলে ভারতের আহ্মেদাবাদ শহরের আটাত্তুর বয়স্ক প্রহলদ যানি (Prahlad Jani)গত সত্তুর বছর ধরে কোন খাদ্য গ্রহণ এমনকি পানি পান না করেই বেঁচে আছেন কিভাবে ? তিনি অবশ্য দাবী করেছেন তার আট বছর বয়সে এক দেবীর আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ার মাধ্যমেই তিনি এত দীর্ঘদিন কোন প্রকার খাদ্য ও পানীয় ছাড়াই সুস্থ ভাবে বেঁচে আছেন । তার প্রাত্যহিক কাজকর্মের মধ্যে তিনি দুটি কাজ নিয়মিত করে থাকেন, একটি হচ্ছে ধ্যান ও অন্যটি সূর্যস্নান । চার পাঁচ দিন পরপর তিনি পানি দিয়ে গোসল করেন । আমার কি মনে হয় জানেন ? উনার শরীরে সালোক সংশ্লেষণ পদ্ধতিটি কোন ভাবে তৈরি হয়ে গেছে হয়ত । এখন শুধু দেখার অপেক্ষা কবে আবার উনার শেকড় বের হয় !
স্যুপের প্রচলন
খাদ্যের মধ্যে আবার আমার গরুর গোস্তের পরে স্যুপটাই প্রিয় । জানেন এই স্যুপের প্রচলনই কিন্তু হয়েছিল জলহস্তির গোস্ত দিয়ে, তাও যীশু খৃষ্টের জন্মেরও প্রায় ছয় হাজার বছর আগে ! ভাবা যায় ?
জাপানে মোটা হওয়া বেআইনি
আমার গোস্ত প্রীতি দেখে অনেকে হয়ত মনে করবেন আমি আবার ভীষণ মোটা, তাই না ? মোটেই না । আর মোটা হলেই বা সমস্যা কি ? আমি কি আর জাপানে থাকি নাকি যে মোটা হওয়া যাবে না । কি বললেন ? জাপানের সাথে মোটা হওয়ার কি সম্পর্ক ? তবে শুনুন, জাপানে সুমো কুস্তিগির ছাড়া মোটা হওয়া নাকি রীতিমত বেআইনি । ওখানে চল্লিশ বছর বয়স্ক একজন পুরুষের কোমরের মাপ থাকতে পারবে সর্বোচ্চ আশি সেন্টিমিটার এবং মহিলাদের সর্বোচ্চ নব্বই সেন্টিমিটার ।
আচ্ছা, দেখেনতো ওখানে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে দশ সেন্টিমিটার বেশী সুবিধা পাবে কেন ? বলি, আইনটা কোন মহিলা করেছিল নাকি ?
মুরগীও ফাষ্ট ফুড খায় নাকি ?
আর গরুর গোস্ত খেয়ে মোটা ! কেন মুরগিরা এখন কম যায় নাকি ? চল্লিশ বছর আগেকার মুরগীদের শরীরে নাকি যে পরিমাণ চর্বি থাকত, এখনকার মুরগীদের শরীরে তার চেয়ে দুইশত ছিষট্টি ভাগ বেশী চর্বি থাকে ! কেন বাবা ? ওরাও কি এখন ফাষ্ট ফুড খায় ?
মাছের আঁশ
আবার তারপর আছে মাছ, মাছে অবশ্য মোটা হবার সম্ভাবনা নেই । তবে মাছের ঝামেলার মধ্যে ঐ কাঁটাটাই একটু সমস্যা করে আরকি । ও আচ্ছা, মাছ কাটাওতো ঝামেলা, বিশেষ করে আঁশ ছাড়ানো, ঠিক না ? তবে বলি কি, মাছের আঁশ ছাড়ানোর আগে মাছটিতে একটু ভিনেগার মাখিয়ে নিন । আঁশ ছাড়ানো সহজ হবে ।
মাছ ভাজার সময় সমস্যা ?
আবার কি হল ? ও, মাছ ভাজার সময় তেল ছিটকে আসে ? কত সমস্যারে বাবা, এর পর তো মাছের কাঁটাটাও বেছে দিয়ে আসতে বলবেন । আচ্ছা ঠিক আছে কাঁটাও বেছে দিয়ে আসব, তবে যদি ওটা বড় সাইজের ইলিশ মাছ হয়, আর আমার কপালে একটু আধটু দাওয়াত জোটে । তাহলে, ঠিক আছে ? দাওয়াত পাওনা থাকল ! ও আচ্ছা, আসল কথাইতো বলতে ভুলে গেলাম, মাছ ভাজুন আর যাই ভাজুন, তেল গরম হয়ে এলে তেলে এক চিমটে লবন অথবা ময়দা দিয়ে দিন, ব্যস্, এবার নিশ্চিন্তে ভাজাভাজি করুন । তেল অনেক কম ছিটকে আসবে ।
আবার কি বললেন ? এটা আগেই জানা ছিল ? এখন তো জানা থাকবেই, থাকবে না ? বলি, যদি আগেই জানা থাকত তবে লেখাটা তো না পড়লেই পারতেন, পারতেন না ?
আলু ভর্তা
তো এই ইলিশ মাছ ভাজার সাথে একটু শুকনা মরিচ ভাজা, পেঁয়াজ আর আলু ভর্তা হলে অনেক ভালো লাগে, তাইনা ? তবে আলু ভর্তাটা যে সাদা ধবধবে হওয়াটা একটা আর্ট, এটা জানেন তো ? অনেকের হাতে আলু ভর্তা লালচে হয়ে যায়, অনেকটা গাজরের কাচাকাছি ।
আলু ভর্তা সাদা হবে কিভাবে ? তাহলে শুনুন, আলু সেদ্ধ হয়ে গেলে আলু পানি থেকে নামানোর আগে পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস বা ভিনেগার দিয়ে দিন, তারপর ভর্তা করুন, দেখবেন ভর্তা কি সুন্দর সাদা হয়েছে !
ওফ্, পেঁয়াজ ? অসহ্য
কি ভাই ? পেঁয়াজের কথা বললাম, ওখানেও সমস্যা ? কি সমস্যা শুনি ? ও পেঁয়াজ কাঁটার সময় চোখ দিয়ে কান্না বের হয় ? ঠিক আছে, কান্না বের হবার সময় আমি পাশে টিস্যু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব, আপনি কাঁদতে থাকবেন আর আমি মুছতে থাকব, ঠিক আছে ? বলি সব কিছু নিয়ে এত সমস্যা হলে চলবে কিভাবে ? বলি, আমি আর কয়দিন লিখব ? আমার লিখা বন্ধ হয়ে যাবার পর কি করবেন তখন ?
আচ্ছা তখন কি করবেন এটা তখন দেখা যাবে, এখন যেটা করবেন, সেটা হচ্ছে পেঁয়াজ কাঁটার আগে কিছুক্ষন রেফ্রিজারেটরে রেখে ঠান্ডা করে নিন, এবার কেঁটে দেখুনতো, চোখ দিয়ে পানি বের হয় কিনা ?
পেঁয়াজ কাঁটা শেষ, এবার হাত ধুয়ে ফেলুন তাহলে । আবার কি হোল ? হাত থেকে পেঁয়াজের গন্ধ যাচ্ছে না ? মাগো, কি কুক্ষণেই না এসব লিখতে বসেছিলাম ? হাত থেকে পেঁয়াজের গন্ধ যাচ্ছেনা সেটাও আমাকে দেখতে হবে ? বলি - একটু লেবু ঘষে ফেলুন না হাতে, এবার গন্ধ শুঁকে দেখুন তো, গন্ধ আছে কিনা ?
চালে চালে লেগে যায় ?
আচ্ছা ! ওদিকে আবার ভাত বা পোলাও রান্না করার সময় চাল একটার গায়ে আরেকটা লেগে যায় না তো ? যদি এই সমস্যা থাকে তাহলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে দিন, আর একটার গায়ে আরেকটা লাগবে না ।
[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/plaban2003/plaban2003-1437085202-6d9d598_xlarge.jpg
সব্জি সেদ্ধ
আর এর সাথে যদি সব্জি রান্না করেন তাহলে কিন্তু যে সমস্ত সব্জি মাটির ওপরে জন্মায়, সেগুলো সেদ্ধ করার সময় ঢাকনি দিয়ে ঢাকবেন না । কি ? কেন ঢাকবেন না ? আরে বাবা যেটাকে জন্মানোর সময় মাটিই ঢাকনি দেয় নি, সেটাকে সেদ্ধ করার সময় আপনি ঢাকনি দেবেন কোন হিসেবে শুনি ? নাহ্, ওই মজা করলাম একটু । যদি সত্যি সত্যিই জানতে চান তাহলে নেটটা চেক করে দেখুন না একবার । সব কিছু কি আমিই লিখে দিব ? কেন, আমার আঙুল কি ব্যথা করে না ?
দাওয়াতের কোন খবর নেই, ওদিকে সবকিছুই শিখে নিচ্ছে !
অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করবেন ?
ঠিক আছে, অলিভ অয়েল দিয়েই রান্না করুন । এই অলিভ অয়েলের অনেক গুণ, রান্না থেকে শুরু করে নিজের গায়ে কিংবা বাচ্চার গায়ে অনেকেই অলিভ অয়েল মেখে থাকেন । ঠিক না ? তাহলে জেনে রাখুন, বাজারে অলিভ অয়েল নামে যে সমস্ত অয়েল বিক্রী হয়, তাঁর মধ্যে সত্তুর ভাগই খাঁটি অলিভ অয়েল না । কি ? খাঁটি অলিভ অয়েল চিনবেন কিভাবে ? তা বাবা আমি বলতে পারবনা । আমি অলিভ অয়েল খাইওনা, গায়েও মাখিনা । আমার গাঁয়ে মাখি খাঁটি সরিষার তেল । কিছু রসুন দিয়ে গরম করে রাখি আর রাতে গাঁয়ে মেখে নেই, উপকার কি হয় জানিনা, তবে মশা কামড়ায় না ।
ডেজার্ট
রান্না শেষ হয়ে গেলে, খাওয়া দাওয়া গরম থাকতে থাকতেই খেয়ে নেবেন কিন্তু ! রান্না শেষ করবার পর খেতে যত দেরী করবেন, খাওয়াতে ততই জীবাণু সংক্রমণ বাড়তে থাকবে । অযথা জীবাণু সক্রমণ কেন ঘটাবেন ? ও, আরেকটা কথা, মুল খাওয়া দাওয়ার পর একটু ডেজার্ট খেয়ে নেবেন কিন্তু, এটা শরীরের জন্য অনেক ভালো । কি ডেজার্ট ভালো হয় ? এই যেমন কলা খেতে পারেন, কলাতে আবার বিষন্নতা কাটে, মেজাজটা হবে ফুরফুরে । বিশেষ করে খাওয়া দাওয়া শেষ করার পর প্লেট গ্লাস ধোয়ার সময় যে বিষন্নতা ভাবটা হয়, সেটা আর হবে না ।
হায়রে খাদ্য
আর খাওয়া দাওয়া অপচয় করবেন না কিন্তু, জানেন তো সমগ্র পৃথিবীতে যখন একদিকে প্রতি নয়জনে একজন মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে, অন্যদিকে সমগ্র পৃথিবীতে মোট উৎপাদিত খাদ্যের অর্ধেকই ফেলে দেওয় হয় !
এ জন্য কিন্তু আমেরিকার সিয়াটলে ২০১৫ইং শুরু থেকে খাদ্যদ্রব্য ফেলে দেয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।
এ ব্যপারে আমার আর কোন বক্তব্য রাখার ইচ্ছে হোল না । আপনার বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিলাম ।
ফ্রিজে দূর্গন্ধ !যা খাবার বেঁচে যাবে ফ্রিজে রেখে দেবেন, পরে গরম করে খাবেন ! কি ফ্রিজে দূর্গন্ধ হয়ে যায় ? খুব সহজ একটি সমাধান দিচ্ছি । একটি পরিষ্কার মোজায় কিছু কফি দানা রেখে দিন ফ্রিজে, দেখবেন গন্ধ উধাও ।
হাদিস
শেষ করার আগে একটা হাদীসঃ
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) নাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ “ইবনু উমর (রাঃ) ততক্ষন পর্যন্ত আহার করতেন না যতক্ষন পর্যন্ত তার সাথে খাওয়ার জন্য একজন মিসকীনকে ডেকে না আনা হতো। একদা আমি তার সঙ্গে বসে আহার করার জন্য জনৈক ব্যাক্তিকে নিয়ে আসলাম। লোকটি খুব বেশী আহার করলো” । ইবনু উমর (রাঃ) বললেনঃ “নাফি! এ ধরনের লোককে আমার কাছে নিসে আসবে না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, মুমিন ব্যাক্তি এক পেটে খায়। আর কাফির ব্যাক্তি সাত পেটে খায়” ।
নারীদের স্লিম হবার উপকারিতা
স্লিম হবার অনেক উপকারিতা, আপনার নিজের এমনকি আপনার চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানেরও । কি ? চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের আবার কি লাভ ? তাহলে শুনুন – ভারতের “গো এয়ার (Go Air)” নামক এয়ার লাইন্স প্রতিষ্ঠানটি তাদের এয়ারলাইন্স গুলোতে শুধুমাত্র মেয়ে এটেনডেন্টদের নিয়োগ দিচ্ছে । কারণ মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় ওজনে হালকা । আর শুধুমাত্র হালকা ওজনের মেয়ে এটেনডেন্ট নিয়োগ দেবার ফলে তারা বছরে পাঁচ লাখ ডলার মূল্যের ফুয়েল সাশ্রয় করে থাকে ।
বলি, এভাবে চলতে থাকলে হয়ত দেখা যাবে একদিন এয়ারলাইন্সগুলো মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের টিকেটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে । কারণ ? ছেলেদের জন্য বেশী ফুয়েল খরচ হয় যে ভাই !
জাপানী বানর বলে কথা !
অনেক উন্নত দেশ জাপান । জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, আবিষ্কারে, শিক্ষায়, নম্রতায়, ভদ্রতায়, সোজা কথা সবদিক দিয়ে । তো তোমাদের ঐ ম্যাকাক বানরগুলোকে (Macaque monkey) অন্য শিক্ষা তো দিলে । একটু নম্রতা, ভদ্রতা শিক্ষা দিতে পারলে না ? কি বললেন? এরকম কথা কেন বললাম ? তাহলে বলি, শুনেন – ঐ ম্যাকাক বানরগুলো এমন বদমাশ যে, আপনি যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবেন, আপনার ওয়ালেট বা পার্স কিভাবে চুরি বা ছিনতাই করতে হয় তা ওরা ঠিকই জানে । শুধু জানে বললে ভুল হবে, ওটার মধ্যে রাখা কয়েনগুলো ওরা ঠিকই বের করে নিতে পারে (খেয়াল রাখবেন, শুধু কয়েনগুলো), এবং কয়েনগুলো বের করেই শুধু ক্ষান্ত হবে না, ওগুলো নিয়ে ভেন্ডিং মেশিনে যাবে, আর সেখানে কয়েনগুলো প্রবেশ করিয়ে স্ন্যাক্স কিনে খাবে । এবার আপনিই বলেন, এসব সহ্য করা যায় ?
ভেন্ডিং মেশিনে শুধু বাঁদরই না কিছু মানুষ বাঁদরও যায়
তো ভেন্ডিং মেশিনে শুধু বাঁদর গুলোই যায়, তা না কিন্তু ! ভেন্ডিং মেশিনে কিছু মানুষ রুপি বাঁদরও যায় । আরে বাবা, আমি স্ন্যাক্স এর ভেন্ডিং মেশিনের কথা বলছি না, ওখানেতো আমিও যাই । অন্য ধরণের কিছু ভেন্ডিং মেশিন আছে, যেগুলোতে বিভিন্ন মেয়েদের ছবি আর মোবাইল নাম্বার দেয়া থাকে, সেখানে কয়েন ফেলো আর পেয়ে যাও তোমার কাঙ্ক্ষিত রমণির ছবি আর নাম্বার, আর শুরু করে দাও বাঁদরামি ।
চিন্তা করে দেখুন, ওখানকার বাঁদরই যদি এত বাঁদরামি করতে পারে, তখন কিছু মানুষ কেন পারবে না ?
কি? জাপানে যাবেন?
কি? তাহলে জাপান ঘুরে আসবেন ভাবছেন ? ঠিক আছে ঘুরে আসুন, ফ্যামিলি নিয়ে যান, কমপক্ষে ওরা আপনাকে বাঁদরামোর ভেন্ডিং মেশিন থেকে দূরে রাখবে । আর ওখান থেকে কিন্তু আইসক্রিম খেয়ে আসবেন । ওখানে অনেক ধরণের আইসক্রিম পাওয়া যায়, এই ধরেন – ঘোড়ার কাঁচা গোস্তের আইসক্রিম, স্কুইডের কালো রঙের আইসক্রিম, সয়া সসের আইসক্রিম, ভাজা শামুকের আইসক্রিম, হাঙরের পাখনার আইসক্রিম, সামুদ্রিক শজারুর আইসক্রিম, বিয়ার আইসক্রিম, শুকরের গোস্তের আইসক্রিম, ভাজা চিংড়ির আইসক্রিম, সেদ্ধ ডিমের আইসক্রিম, গরুর জিহ্বার আইসক্রিম, সালাদ আইসক্রিম, বাইন মাছের আইসক্রিম, চিকেন উইংস আইসক্রিম, কাঁকড়ার আইসক্রিম ইত্যাদি ।
কি জিভে পানি এসে যাচ্ছে ? তাহলে গিলে ফেলুন । ব্যাটারা জানতে পারলে হয়ত জিহ্বার জলের আইসক্রিমও বানিয়ে ফেলবে ।
চায়নিজরাও কি কম যায় নাকি?
জাপানিজরা যদি এত কিছু খেতে পারে, চায়নিজরাও কি কম যাবে?
তাহলে শুনুন, চায়নিজরা প্রতিবছর প্রায় চল্লিশ লাখ বিড়াল খেয়ে ফেলে । কেন জানেন? শুধুমাত্র আভিজাত্যের প্রতীক হিসাবে !
ভ্যানিলা ফ্লেভার
কাষ্টোরিয়াম (Castoreum), যা বিভিন্ন ক্যান্ডি এবং বেকারি আইটেমে ভ্যানিলা ফ্লেভারিং এর কাজে ব্যবহার করা হয়, তা আসলে কি ? জানেন ? বীবরের মূত্রথলি হতে উৎপন্ন এক ধরণের মূত্র বিশেষ, যা এরা নিজেদের এলাকা চিহ্নিত করণের জন্য নির্গত করে থাকে ।
এল-সিস্টিন
কিছু কিছু পাউরুটি নরম রাখার জন্য এল-সিস্টিন (L-cysteine) ব্যবহার করা হয় । এই এল-সিস্টিন তৈরি করা হয় মানুষের চুল এবং হাঁসের পালক হতে ।
পটকা মাছ
প্রায়ই দৈনিক পত্রিকায় বিভিন্ন জায়গায় পটকা মাছ খেয়ে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর খবর দেখা যায় । এই মাছ খেয়ে মৃত্যু হওয়ার মূল কারণ মাছটি সঠিক উপায়ে রান্না না করা । ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে কিছু কিছু পটকা মাছের বিষ সায়নাইডের চেয়েও বারশত গুণ বেশী বিষাক্ত !
বলি, এত মাছ থাকতে ঐ পটকা মাছ খাওয়ার দরকারটা কি শুনি ?
ফ্রুট ফ্লেভারড স্ন্যাক্স
জানেন, গাড়ি চকচকে করার জন্য যে ওয়্যাক্স (Car Wax) ব্যবহার করা হয়, বিভিন্ন ফলের ফ্লেভার সমৃদ্ধ স্ন্যাক্সেও সেই একই ওয়্যাক্স ব্যবহার করা হয় ।
বলি, এই স্ন্যাক্সে লিভারও কি চকচকে হবে ?
হায়রে মধু
এর আগের পোষ্টে মধু নিয়ে লেখার পর একদিন দেখি আমার ছোট বোন খুশী মনে দুই কেজি মধু কিনে নিয়ে আসল । আজকের লেখার ড্রাফট দেখার পর ও সাফ সাফ জানিয়ে দিল ও আর মধু খেতে পারবে না । এদিকে আমিও মধু খাইনা । ওকে বললাম, যত্ন করে রেখে দে, তোর নাতি পুতি খেতে পারবে ।
ও আচ্ছা, কি ড্রাফট, জানতে চাইছেন ? তাহলে শুনুন – মৌমাছি নাকি ফুল থেকে নেকটার (মধুর মূল উপাদান) তার মৌচাকে নিয়ে আসার পর সেটার সাথে তার বমি মিশিয়ে মধুতে রুপান্তরিত করে, এই আর কি । আপনার কি তাতে কোন সমস্যা হবে ? মানে মধু খেতে পারবেন তো ?
আনারসের এ কি গুন ?
আনারসের অনেক গুন, কিছু কিছু ডাক্তারতো জ্বর আসলে রিতীমত আনারস খেতে বলেন । কিন্তু আনারসের ব্রোমেলাইন (bromelain)নামক এনজাইম নাকি আমাদের জিহ্বার টেষ্টবাড গুলোকে (যা বিভিন্ন খাদ্যের স্বাদ বুঝতে সাহায্য করে, এর আগের পোষ্টে টেষ্টবাড সম্পর্কে লিখেছি) নষ্ট করে দেয় । নিন এবার, এখন আনারসকে কি বলবেন ? আমি ভাই এক কথায় বলব – বিশ্বাসঘাতক !
মরিচ খেয়ে জিহ্বা পোড়াঝাল মরিচ খেয়ে তো কতবারই জিহ্বা পুড়েছেন, পুড়েছেন না ? সত্যি ? ঠিক আছে, তবে যারা ঝাল মরিচ খেয়ে জিহ্বা পুড়েছেন তারা আমাকে জিহ্বার পোড়া অংশ দেখাতে পারবেন ? আসলে ঝাল খেলে জিহ্বা পোড়ে না, মরিচে ক্যাপসাইসিন (capsaicin) এক ধরণের যৌগ রাসায়নিক উপাদান আছে, ক্যাপসাইসিন সরাসরি মানুষের স্নায়বিক নার্ভ-এর ওপর কাজ করে মস্তিষ্কে ভুল সিগনাল পাঠায় যে আমাদের জিহ্বা পুড়ে গেছে ।
গাজরের আসল রঙ
গাজর দেখেছেন তো ? আচ্ছা চোখ বন্ধ করে বলুন তো গাজরের রঙ কি ? কমলা ? একদম ঠিক । আচ্ছা এবার চোখ বন্ধ করে বলতে পারবেন আগে গাজরের রঙ কি ছিল ? মানে এই সতেরশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত, কি পারছেন না ? ঠিক আছে নিন আমি চোখ বন্ধ করে বলছি – সতেরশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত গাজরের রঙ ছিল “বেগুনি” ।
পনির সাবধানে রাখুন
বিশ্ব কোন খাদ্য টি চুরি হয় সবচাইতে বেশী জানেন ? পনির (Cheese) । সুতরাং, পনির সাবধানে রাখুন ।
এরোপ্লেনের খাওয়া মোটেই ভালো লাগেনা
অনেকি বলেন যে, এ্যারোপ্লেনে ওরা যা খাওয়া দেয় তার স্বাদ নাকি মোটেই ভাল থাকে না । আর আমি কি বলি জানেন ? ভাইজান, ওরা যত সুস্বাদু খাবারই দিক না কেন, আপনার কাছে ভালো লাগবে না । কারণ আপনি যখন এ্যারোপ্লেনে ভ্রমণ করে থাকেন তখন আপনার স্বাদ ও গন্ধ নেবার ক্ষমতা এমনিতেই বিশ থেকে পঞ্চাশ ভাগ কমে যায় । আর গত কয়েক মাস যেভাবে এ্যারোপ্লেন অ্যাকসিডেন্ট করছে তাতে খাবারের স্বাদ নেয়ার কথা মনে হয় কিভাবে, এ্যাঁ ?
নুডলস্ সেদ্ধ হয়ে গেছে ?
নুডলস্, স্প্যাগেটি বা চওমিন, যাই বলেন না কেন, রান্না করার সবচেয়ে ঝামেলার অংশটি হচ্ছে তা সিদ্ধ হয়েছে কিনা বুঝতে পারা । ঠিক কি না ? যদি আপনি এই ঝামেলায় পড়েন আর সিদ্ধ হয়েছে কিনা বুঝতে না পারেন তাহলে পানি থেকে একটি নিয়ে দেয়ালে ছুঁড়ে মারুন, যদি সেটি দেয়ালে লেগে যায় তাহলে বুঝবেন সিদ্ধ হয়ে গেছে ।
রেফ্রিজারেটর লাগবেই
এই এত সব খাবার দাবার সংরক্ষণ করার জন্য রেফ্রিজেরেটরতো লাগবেই, ঠিক না? কত ভাল হত যদি আমরা সাইবেরিয়ায় থাকতাম! ওখানকার ঠান্ডায় অন্তত খাদ্য সংরক্ষণ করার জন্য রেফ্রিজারেটরতো দরকার হোত না, ঠিক না?
যদি ঠিক মনে হয়, তাহলে শুনুন এই ধারণা একেবারেই ঠিক না । এস্কিমোরাও (পূর্ব সাইবেরিয়ার অধিবাসী) রেফ্রিজারেটর কেনে। কেন কেনে, জানতে চাচ্ছেন ? এস্কিমোরা রেফ্রিজারেটর কেনে অতিরিক্ত ঠান্ডায় খাওয়া দাওয়া জমে শক্ত হবার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য । হোলত এবার ? একেই বলে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল না ।
এবার খাদ্য সম্পর্কিত একটি হাদিস-
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পাঠককে যদি বলা হয় যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে বেশী জীবাণূপূর্ণ নোংরা স্থান আর নোংরা জিনিসটি হচ্ছে আমাদের টয়লেট আর সেখানকার কমোড, তাহলে কেউ কি অস্বীকার করবেন? আমারতো মনে হয়না কেউ চিন্তা ভাবনা করার পর অস্বীকার করবেন। আমিও অস্বীকার করতাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না নীচের কথা গুলো জানতে পারলাম -
আমাদের টয়লেট
পাঠক কি জানেন যে, আমাদের বাসা বাড়ির টয়লেটের কমোডটির প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে কয়টি ব্যাক্টেরিরা থাকে? যদি না জানেন তাহলে বলি- গড়পড়তা প্রায় ৫০ (পঞ্চাশ) টি।
অন্য দিকে -
বরফ
জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভীষণ সচেতন খোদ আমেরিকাতেই এক সার্ভে তে পাওয়া গেছে যে, সেখানকার রেস্টুরেন্ট গুলোতে খাদ্য বা পানীয়ের সাথে যে বরফ খেতে দেয়া হয় তাতে নাকি টয়লেটের পানির চাইতে শতকরা সত্তুর ভাগ বেশী ব্যাকটেরিয়া থাকে। সেখানেই যদি এ অবস্থা হয়, আমাদের দেশে কি অবস্থা হতে পারে কল্পনা করুন তো?
বাসার লাইট ফ্যানের সুইচ
আমাদের বাসা বাড়িতে যে সুইচ ব্যবহার করি তাতে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে প্রায় ২১৭ টি ব্যাক্টেরিয়া থাকে। বলি ওরা কি ওখানে সুইচ টেপাটেপি করার জন্য থাকে নাকি?
মোবাইল ফোন
যা বাবা, দিলাম নাকি মেজাজ খারাপ করে? মোবাইলেও? জ্বী। আপনার কমোডের সিটের চেয়েও আপনার মোবাইলে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১০ গুণ বেশী ব্যাক্টেরিয়া থাকে। কি বিশ্বাস হয়? হয় না, তাই না? তা হবে কিভাবে? সারাক্ষণ তো মোবাইল গালের সাথে লাগিয়ে রাখেন, কমোডের সিটে কি পারবেন এভাবে গাল ছোঁয়াতে?
কি বোর্ড
আপনার কম্পিউটারের কি বোর্ডে থাকে কমোডের সিটের চেয়ে ২০০ গুণ বেশী ব্যাক্টেরিয়া। বলি, ওরা নিশ্চয়ই কাজ করে ওখানে।
অফিস ডেস্ক
এবার তো যাবেন স্যারেরা ক্ষেপে, তার পরেও বলি- স্যার, আপনি অফিসে যে ডেস্কে বসে কাজ করেন সেখানে আপনার টয়লেটের চেয়ে প্রায় ৪০০ গুণ বেশী জীবাণু থাকে । আমি বলি কি? এর চেয়েতো টয়লেটে বসেই কাজ করা ভালো, অন্তত জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা তো কম থাকবে তাই না? সাথে বারবার উঠে টয়লেটেও যেতে হবে না, ওখানে বসেই কাজটা সেরে ফেলতে পারলেন! এক ঢিলে দুই পাখি!
রেস্টুরেন্টের মেন্যু বই
শতকরা ৯৯ জনেরও বেশী মানুষ নাকি রেস্টুরেন্টে ঢুকে আগে সাবান দিয়ে হাত ভালো করে হাত ধুয়ে নেয়। তারপর ধীরে সুস্থে তার আসনে এসে আরাম করে বসে রেস্টুরেন্টের মেন্যু বই টা দেখে খাবারের অর্ডার দেয়।
জানি, আপনারা বলবেন যে, তাতে সমস্যা কি? আরে ভাই সমস্যা তো ওখানেই! আপনি তো রেস্টুরেন্টে ঢুকেই হাত একেবারে জীবাণু মুক্ত করে ফেললেন, কিন্তু তারপর যে ঐ মেন্যু বইটা ধরলেন! ঐ বইটাতে তো আপনার কমোডের সিটের চেয়েও ১০০ গুণ বেশী জীবাণু বিদ্যমান! পারবেন নাকি ওটার চেয়েও অনেক কম জীবাণু সমৃদ্ধ আপনার কমোডটিতে হাত ঘষে তারপর খাওয়া খেতে? জানি পারবেন না। যত দোষ ঐ কমোডটারই, তাই না?
ও, একথা আবার ভুলেও রেস্টুরেন্ট মালিকদের বলতে যাবেন না যেন, বলেছেন তো মরেছেন। ব্যাটারা খাওয়ার বিলের সাথে সাথে ঐ জীবাণু গুলোর বিলও হাতে ধরিয়ে দেবে, আফটার অল খেয়েছেন তো ?
কার্পেট
আপনার বাসার কার্পেটে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে থাকে প্রায় দুই লক্ষ ব্যাক্টেরিয়া। আপনার কমোডের সিটের চেয়েও প্রায় ৪০০০ গুণ বেশী।
টাকাটাকারও একই অবস্থা, কার্পেটের মতই। এ জন্যই বোধ হয় বলা হয় যে, টাকা হচ্ছে হাতের ময়লা। সুতরাং টাকা ধরলেই হাত ধুয়ে ফেলুন।
কিচেন স্পঞ্জ
বাক্টেরিয়া ও জীবাণূর আরেক আখড়া। প্রতি স্কয়ার ইঞ্চিতে এক কোটিরও বেশী ব্যাকটেরিয়া থাকে এ বস্তুটিতে। আবার এ ছাড়া আমাদের চলেই না। সমাধান? আছে, কয়েকদিন পরপরই বদলে ফেলুন আপনার কিচেন স্পঞ্জটি।
পাবলিক রেস্টরুমের ফ্লোর
সারপ্রাইজের কিছুই নেই। প্রতি স্কয়ার ইঞ্চিতে ২০ লক্ষ ব্যাক্টেরিয়া! অবশ্য আমরা তো জুতা পড়েই যাই, তাই না?
অ্যাপ্লায়েন্স রিমোট কন্ট্রোল
টিভি, এসি কিংবা অন্যান্য অ্যাপ্লায়েন্স গুলোর রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করেন না? ওটাও বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া আর জীবানূর আখড়া, আর অবশ্যই তা আপনার টয়লেটের চেয়ে অনেক বেশী।
দরজার হাতল
আপনার কমোডের ভেতরকার চেয়েও নোংরা এই জিনিসটি আপনি প্রতিদিন ধরছেন, তাও দরজা খোলার সময় আর বন্ধ করার সময়।
কিচেন সিঙ্ক
টয়লেটের কথা ভুলে যান, আপনার সমস্ত টয়লেটের যে কোন স্থানের চেয়েও অনেক অনেক বেশী নোংরা হচ্ছে আপনার এই কিচেন সিঙ্ক।
চপিং বোর্ড
এটি এমন একটি জিনিস যা দেখতে আপাত নিরীহ মনে হলেও তা সবসময়েই নিয়োজিত থাকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া আর রোগজীবাণু উৎপাদনে, বিশেষ করে এতে গোস্ত কাটার পর। আর এটি এ কাজে খুব সহজেই হারিয়ে দেয় আপনার কমোডটিকেও ।
টুথ ব্রাশ
বেশীর ভাগ মানুষেরাই তাদের টুথ ব্রাশ রেখে দেন টয়লেটে, আর এ ছাড়া রাখবেনই বা কোথায়? এ তো আর ডাইনিঙয়ে বা রিডিং টেবিলে রাখার জিনিস না, ঠিক না? বলি, যেখানেই রাখুন না কেন, অন্ততঃ আপনার টয়লেটের কমোড থেকে ছয় ফিট দূরে রাখুন। কেন? আপনার কমোড যখন ফ্লাশ করেন তখন কমোডের ব্যাক্টেরিয়া গুলো নাকি বাতাসে উড়ে যায়। এভাবে উড়ে সেগুলো ছয়ফিট পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে আর বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে দুই ঘন্টা পর্যন্ত। আর জানেন এ সময়ে তাদের সবচেয়ে পছন্দের আশ্রয়স্থল কোনটা?। জ্বী, আপনার টুথব্রাশ।
বালিশ
আপনার শরীরের মৃত কোষ গুলো যে ব্যাক্টেরিয়া গুলো এবং অন্যান্য সকল মাইটস্ কে আকর্ষণ করে সেগুলোর অতি পছন্দের আবাসস্থল গুলির মধ্যে একটি হচ্ছে আপনার বালিশ । সেগুলো জানে যে, রাত হলেই আপনার মাথা এখানে রাখতে হবে । আর এগুলো সংখ্যায় কত? আপনার কমোডের চেয়ে কয়েক লক্ষ গুণ বেশী।
তোষক
গড়পরতা প্রায় দশ বছরে আমাদের খাটের তোষক গুলি ওজনে দ্বিগুন হয়ে যায়। কেন জানেন? ঐ বিভিন্ন ধরণের মাইটস্ আর তাদের বর্জ্যের কারণে।
শাওয়ার হেড
অনেকে ঝর্ণাও বলেন। এটি কিন্তু কোন ব্যাক্টেরিয়ার আবাসস্থল না, কি শান্তি লাগছে, না? হ্যা শান্তিরই কথা। এটি হচ্ছে ব্যাক্টেরিয়াদের ম্যাটার্নিটি। মানে ওদের বংশ বৃদ্ধির যায়গা আরকি। বলি, শাওয়ার হেড গুলোকে একটু যত্নে রাখবেন, ছোট ছোট বাচ্চা ব্যাক্টেরিয়া গুলি, আহ্, চিন্তা করেই আমার চোখে জল এস যাচ্ছে।
আপু মনিদের হ্যান্ডব্যাগ
আপু মনিদের বলছি, মনে করতে পারবেন শেষ কবে আপনার হ্যান্ড ব্যাগটি ধুয়েছেন? মনে করতে পারছেন না, তাই না? ঠিক আছে, শুধু এটুকু মনে রাখলেই চলবে যে, আপনার কমোডের চেয়ে কয়েক লক্ষ গুণ বেশী নোংরা ও জীবাণূ পরিপূর্ণ হচ্ছে আপনার এই হ্যান্ডব্যাগ।
বারবার ব্যবহার উপোযোগী বাজারের ব্যাগ
আচ্ছা আমরা পুরুষেরা যে আন্ডারওয়্যার পড়ি, সেটা কি নিয়মিতই ধোয়া হয়না? জানি সবাই বলবেন, হ্যা হয়। আচ্ছা তাহলে বলি- ধরেন, আপনার পরনের আন্ডারওয়্যারটি ধোয়া হয় না, মানে নিয়মিত ধোয়া হয় না তা বলছি না, বলছি কখনোই ধোয়া হয় না। তো এমন একটি আন্ডারওয়্যারে করে যদি আপনি বাজার করে নিয়ে আসেন তাহলে আপনার গিন্নি কি খুশী হবেন? নাকি আপনার মাথায় এই বাজার ছুঁড়ে মারবেন? আমিতো বলি খুশীই হবেন, কারণ সবসময়ইতো হচ্ছেন। আপনি ঐ যে নিয়মিত না ধোয়া বাজারের ব্যাগে বাজার করছেন, তা নিয়মিত না ধোয়া আন্ডারওয়্যারে করে বাজার নিয়ে আসারই সমতুল্য। বরং কিছু দিক দিয়ে না ধোয়া এই বাজারের ব্যাগ ওটার চেয়েও নোংরা অবস্থানে পড়ে।
তাহলে কি কারণে কমোড এত স্বাস্থ্যসম্মত ?
তাহলে কি আমি বলতে চাচ্ছি উপরের সবকটির চেয়ে আমাদের বাসার কমোডই সবচেয়ে বেশী স্বাস্থ্যসম্মত? না, মোটেই না। বরং আমরা নিজেরাই এই সব জিনিসগুলির চেয়ে আমাদের টয়লেটের কমোডটিকে অনেক বেশী স্বাস্থ্যসম্মত করে রাখি। আপনার কমোডটিকে আপনি যেভাবে প্রতিদিন বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে এতভাবে জীবানূমুক্ত করছেন, আপনার মোবাইল ফোন, হ্যান্ডব্যাগ, দরজার নব বা উপরে লেখা জিনিসপত্র গুলোর দিকে সেভাবে কি কোনদিন কোন গুরুত্ব দিয়েছেন? যদি না দিয়ে থাকেন তাহলে ওপরের সবকটি বিষয়ই আপনার জন্য প্রযোজ্য।
সবশেষে একটি হাদিস-
আচ্ছা আপনি কি সুন্দরী নারীদের দেখলে কোন কারণে ভয় পান? যদি ভয় পান তাহলে জেনে রাখুন আপনি Caligynephobia নামক অসুখটিতে ভুগছেন । এটি এক ধরণের ফোবিয়া ।
ফোবিয়া
ফোবিয়া (Phobia) একটি ইংরেজী শব্দ, বাংলায় যার মানে দাঁড়ায় “ভীতি”। আমরা যখন কোন কিছুতে অতিরিক্ত বা অযথাই ভয় পাই সেটাই ফোবিয়া । এখন আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আর একদল ছিনতাইকারি নানান অস্ত্র নিয়ে আপনাকে ঘিরে ধরল, তাহলে কি আপনি ভয় পাবেন না? জ্বী, অবশ্যই পাবেন। অথবা, ধরেন আমার এই লেখা আপনি কমোডে বসে পড়ছেন (আমার আগের পোষ্টটা পড়ার পর অনেকেই নাকি এখন কমোডে বসেই পড়ার কাজটা চালিয়ে যাচ্ছেন। হায়রে! এ দুঃখ রাখি কোথায়!) তখন হঠাৎ করেই দেখলেন আপনার কমোডের ভেতর থেকে একটা কালো সাপ বেরিয়ে আসছে, তখনও কি আপনি ভয় পাবেন না? হ্যাঁ, তাও পাবেন । এ ধরণের ঘটনায় ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক ।
যে বিষয় গুলোতে গড়পরতা সবাই ভয় পায়, সেটা কোন ফোবিয়ার মধ্যে পড়ে না। এখন ধরেন, আপনি দাওয়াতে যেতে ভয় পান । আর ভয়টা কেন পান, তার যুক্তিসঙ্গত কোন কারণও দেখাতে পারেন না কাউকে । কিন্তু ভয় পান । এদিকে আপনার এ ভয় পাওয়া নিয়ে আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর সংসারে অশান্তি লেগে যাচ্ছে, কিন্তু আপনি ভয় তাড়াতে পারছেন না।
অথবা, ধরেন আপনার সন্তানটি স্কুলে যেতে ভয় পায়, আর সেটা কোন সাধারণ ভয় না। স্কুলেতো আমরাও যেতে চাইতাম না, নানা ধরণের অজুহাত বের করতাম। কিন্তু দেখা গেল আপনার সন্তানটি স্কুলে গেলেই জ্বর এসে যাচ্ছে, তখন কি করবেন?
এ ধরণের ঘটনা গুলো হচ্ছে ফোবিয়ার লক্ষণ । ফোবিয়া শুধু একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনকেই ধ্বংস করে না, তার আশেপাশের প্রিয়জনদের জীবনটাকেও অতিষ্ট করে তোলে । ক্যান্সারের চেয়ে ভয়াবহ এ অসুখটার সম্পর্কে কতটুকু জানি আমরা ? বরং কারো কোন ফোবিয়া থাকলে তা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে তাকে সহযোগিতা করা দূরে থাক, তাকে আরেকটা ফোবিয়ার দিকে ঠেলে দেই আমরা।
ফোবিয়ার জন্য দরকার বিশেষ চিকিৎসা । দুঃখজনক হলেও আমি এ পর্যন্ত শুনিনি যে, ডাক্তারের কাছে গিয়ে কারও ফোবিয়া ভালো হয়েছে । বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এতে হীতে বিপরীত হবার কথা শুনেছি । তাহলে? কি করবেন আপনার প্রিয়জনটিকে নিয়ে, যদি তার কোন ফোবিয়া থাকে?
প্রতিটা ফোবিয়ারই একটা ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে আর এই ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে পারলেই তার চিকিৎসার অর্ধেক আপনিই করে ফেলতে পারবেন। বাকী টুকু হচ্ছে বিশেষ কিছু নিয়মে আপনার সহযোগিতা । মজার ব্যপার হচ্ছে আপনার প্রিয়জনের ফোবিয়ার চিকিৎসা আপনি নিজেই করতে পারেন (যদি তা কোন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে না যায়), এর জন্য কোন টাকা খরচ করতে হয় না, ঘন্টার পর ঘন্টা তার পেছনে সময় দিতে হয় না বা তার জন্য কোন কষ্টও করতে হয় না। শুধু দরকার তার প্রতি আপনার সহযোগিতা আর ভালোবাসা।
তাহলে আসুন জেনে নেই কিছু ফোবিয়া সম্পর্কে, জেনে নেই ফোবিয়া কত ধরণের হতে পারে ।
হাঁস কি আপনার পিছু ছাড়ে না ?
এ রোগীরা মনে করে কোন হাঁস তাকে সব জায়গায় ফলো করে ।
চিন্তা করুনতো কি অবস্থা? আপনাকে একটি হাঁস সবসময় ফলো করছে, আপনার বিছানার নীচে, আপনার অফিসে, আপনার টয়লেটে, আপনার ভ্রমণে, সব জায়গায়ই লুকিয়ে লুকিয়ে আপনাকে দেখছে! ভালো লাগবে ব্যপারটা?
এ ফোবিয়ার নাম Anatidaephobia
আপনার মধ্যে কি বিশাল এক ক্ষমতা আছে ?
আপনার মধ্যে আছে বিশাল এক ক্ষমতা। পৃথিবী এখনও তা টের পায়নি। যেদিন টের পাবে সেদিন এক মহা প্রলয় ঘটে যাবে, মানবজাতির আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না সেদিন ।
আপনার যদি এমন মনে হয়, তাহলে আপনার Mephobia হয়েছে । সাধারণত যারা বিভিন্ন সোস্যাল নেটওয়ার্কিং এর সাথে জড়িত থাকে তাদের মধ্যে এ রোগটি বেশী দেখা যায় ।
প্রেম তো করতেই চাই, কিন্তু ভয় লাগে যে?
যদি প্রেম করতে ভয় পান তাহলে আপনার Philophobia হয়েছে ।
বেশী খুশী হইস না, কপালে খারাবী আসতাছে !
মনে পড়ে, ছোট বেলায় যখনই কোন খুশীর খবরে সব সমবয়সীরা মিলে আনন্দে বা হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠতাম ঠিক তখনই নানী-দাদি গোছের কেউ একজন হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠত-“বেশী খুশী হইস না, কপালে খারাবী আসতাছে”। ব্যস্ অমনি সব আনন্দ উধাও! কচি মনে বুঝতাম না- কপালে কি খারাবী আসতাছে?
আপনার চেনা জানা মানুষদের মধ্যে কি এমন মানুষ আছে ? যে কিনা, কোন খুশীর খবর শোনা মাত্রই এরকম বিষন্ন হয়ে উঠে? আর সে বিষন্নতা প্রসারিত করার চেষ্ট করে অন্যের মাঝেও? যদি এমন কেউ থাকে তাহলে তাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, তার Cherophobia আছে।
খবরদার ঘরে বিড়াল আনবি না!
তেলাপোকা কিংবা মাকড়সা ভীতি কি আছে কারও? যদি থাকে তাহলে তা খুব কমন ফোবিয়া। কিন্তু যদি বিড়াল ভীতি থাকে ? এ ফোবিয়াটির নাম ailurophobia ।
আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, নেপোলিয়ন, মুসোলিনি আর হিটলারের মত বিখ্যাত মানুষদেরও এই বিড়াল ভীতি ছিল ।
বিশ্বাস করিব কেমনে ?
অতীতের বিভিন্ন তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্য অনেকে আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না। এর জন্য কিন্তু অতীত তিক্ত অভিজ্ঞতা টি দায়ী না । দায়ী Pistanthrophobia নামক রোগটি, যে রোগটিতে সে ভুগছে ।
আমি নাইতে নারি
শুধু বাচ্চা না, অনেক বয়স্কদের মধ্যেও এ রোগটি হতে পারে। রোগটির নাম Ablutophobia । এ রোগীরা গোসল করতে চান না । গোসল করাকে এরা রীতিমত ভয় পায় ।
হায়রে মোবাইল !
Nomophobia তে আক্রান্ত রোগীরা সারাক্ষণ মোবাইল বা মোবাইলের নেটওয়ার্ক হারিয়ে ফেলার আতংকে থাকে ।
দিনের আলোয় দেখব তোমায়
উহু, কোন লাভ নেই। এরা কখনই দিনের আলোয় বের হবে না (আমি কিন্তু ভালো মানুষদের কথা বলছি)। কারণ এদের Heliophobia আছে। এরা সূর্যকে ভয় পায়।
থাকার ভয়, হারাবার ভয়
চিন্তা করুনতো ! এরা চুল হারাবার ভয়ে অস্থির থাকে, আবার চুলের ভয়েও অস্থির থাকে। একেই বলে উভয় সংকট। স্যরি, Chaetophobia ।
বাঘে ছুলে আঠার ঘা, আর এদের ছুলে আঠারশ ঘা
যা কিছুই করেন না কেন ? Haphephobia রোগীদের কিন্তু ছুঁতে যাবেন না, মানে গায়ে হাত দিতে যাবেন না । এরা গায়ে হাতাহাতি অসম্ভব রকমের ভয় পায় ।
আমার কি মনে হয় জানেন ? আমাদের এই আধুনিক যুগের প্রেমিক প্রেমিকাদের মধ্যে কিন্তু এই রোগ একেবারেই নেই ! যেরকম ছুঁয়াছুঁয়ির মধ্যে থাকে !
কি যে করি, ওফ্ কি যে করি ?
আপনার জানাশোনার মধ্যে এমন কেউ কি আছেন, যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না ? এমন কেউ থেকে থাকলে তার রোগটির নাম Decidophobia । তার এই রোগটি যদি খুব বেশি সমস্যা করে তবে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান । উনাকে কিন্তু শুধু বললে লাভ হবে না । ডাক্তারের কাছে আদৌ যাবেন কিনা এ সিদ্ধান্তও উনি নিতে পারবেন না !
পাড়ার গুডি গুডি বড় ভাই
আপনার পাড়ায় কি গুডি (ম্যাড়ম্যাড়ে টাইপের ভালো) টাইপের কোন বড় ভাই আছেন? ঐ যে শুধু ক্লাশ আর বাসা, এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা ? নো আড্ডা, নো হাসি ঠাট্টা? তবে জেনে রাখুন উনি খুব গুডি তাই উনি এরকম, তা কিন্তু না ! ঐ ভাইকে গিয়ে বলুন- আপনার Scopophobia আছে।
ইনারা নিজেকে শুধু লুকিয়ে রাখতেই পছন্দ করেন । আর সব কিছুই কিন্তু আপনার মতই !
যে রোগ আমাদের কারও নেই
হ্যাঁ যে রোগটি আমাদের কারও নেই, সেটি হচ্ছে Chrometophobia । ইনারা টাকা পয়সা ভয় পায় । আর যদি কারও থেকেই থাকে, তাহলে আমাকে একটু ঠিকানাটা দেবেন ? মানে উনাকে সাহায্য করতাম আরকি ! উনাকে এত ভয় সহ্য করে টাকা পয়সা রাখার কষ্ট থেকে মুক্ত করে দিয়ে আসতাম !
ন্যাড়াতংক
ইনারা আবার ন্যাড়া মাথার মানুষদের ভয় পায়।
মনে পড়ে, ফ্যাশন এর চালে পড়ে আমি একবার কিছু দিন ন্যাড়া হয়ে ছিলাম, তখন এদের আতংকটা ভালোভাবেই টের পেয়েছি । তবে আমার মনে হয় কি জানেন ? বেশিরভাগ স্ত্রীদের এবং প্রেমিকাদের মধ্যেই বোধহয় এই রোগটি থাকে । বিশ্বাস হয় না? ঠিক আছে, তাহলে একবার ন্যাড়া হয়ে দেখুন কেমন সাহসী তারা ?
রোগটির নাম কিন্তু Peladophobia।
এখন টয়লেট করি কিভাবে?
Cathisophobia য় আক্রান্তরা নাকি বসতে ভয় পায় । আর শুধু ভয় না ! বসলে এদের নিঃশ্বাসও নাকি রীতিমত বন্ধ হয়ে আসতে থাকে । চিন্তা করুনতো এরা তাহলে টয়লেট করবে কিভাবে ? দাঁড়িয়ে?
হাসি আসছে তাই না। হাসার কিছুই নেই। সাধারণতঃ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কাউকে বন্দুকের নলের সামনে জিম্মি করে এভাবে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখার দরুন কারও কারও মধ্যে এ রোগটির আবির্ভাব হয় । বিষয়টি কিন্তু দুঃখজনক ।
হায়রে আমার সোনাচাদ বাবুরে ! তোর এ কি অবস্থা রে ?
আমার মনে হয়, মায়েদের মধ্যে এ রোগটি বেশী দেখা যায় । তাদের ছেলে সন্তানেরা যদি অল্প বয়সেই মুখে উদ্ভট মত দাড়ি রাখে তখন তাদের মায়েদের চোখে যে কষ্ট ফুটে উঠে তা আসলে ভোলার মত না ।
মায়েদের কথা বললাম তো এমনি এমনি, আসল কথা হচ্ছে Pogonophobia য় আক্রান্তরা মানুষের দাঁড়ি ভয় পায়।
তোমরা যে বল, আনলাকি থারটিন !
হ্যাঁ, অনেকেই বলে ১৩ সংখ্যাটি নাকি অশুভ। কিন্তু এটা যখন মাত্রাতিরিক্ত ভীতির পর্যায়ে চলে যায় তখন সে রোগটিকে Triskaidekaphobia বলে ।
সদা ভয় কাজ করে, দাওয়াতে না জানি কি করে ?
ইনারা দাওয়াতে যেতে ভয় পায়। কেন ভয় পায়, জানেন? Triskaidekaphobia রোগে আক্রান্ত কোন রোগীকে পেলে জিজ্ঞেস করে দেখবেন ? ইনি দাওয়াতে যান না কেন ? দেখবেন কত আজব আজব গল্প বের হতে থাকবে তার মুখ থেকে !
হাঁটুর বাটিতে স্যুপ !
Genuphobia রোগীরা নাকি হাঁটু দেখাতে ভয় পায় ! কেন বাপু ? তোমার হাটুর বাটি খুলে নিয়ে তাতে স্যুপ ঢেলে খাব, তাই?
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে
একটু বেশি বয়স হবার পরও যদি কারও বিয়ে না হয় তবে বিয়ে আর হবে না এরকম একটা ভীতি তার মধ্যে কাজ করতে থাকে । কিন্তু ভীতি টা একটু বেশি মাত্রায় হয়ে গেলে সেটাকে Anuptaphobia বলে ।
আরও জঘন্য ব্যপার হচ্ছে এই অসুখটা হওয়াতেই কিন্তু তার বিয়ে হবার সম্ভাবনাটা আরও কমতে থাকে ।
ড্রাকুলা'র উত্তর পুরুষ
এদেরকে আমার মাঝে মাঝে ড্রাকুলা এর উত্তর পুরুষ মনে হয়। ড্রাকুলা চেনেন তো? যদি না চিনেন তাহলে চিনে নেন । সব কিছু কি আমিই চেনাব নাকি ? যাই হোক, যা বলছিলাম- এরা নাকি রসূন ভয় পায়।
বলি ড্রাকুলারও কি Alliumphobia নামক রোগটি ছিল নাকি? তা না হলে সে রসূন ভয় পেত কেন?
যাহ্ এটা আবার কোন অসুখ নাকি ? আমরা তো সবাই এরকম !
আমার কি মনে হয় জানেন? আমাদের দেশের বর্তমান ইয়ং সম্প্রদায়ের সবারই এ রোগটি আছে। পুরো জেনারেশনটারই এর চিকিৎসা করানো দরকার। মহামারী আকারে বিস্তারিত এ রোগটির নাম Bibliophobia ।
ও হ্যাঁ, এ রোগীরা কি ভয় পায় জানেন? – বই !!
আমি তো মামলাবাজ !
মামলা বাজ মানুষদের এ রোগটি হয় না । হলে তারা আর মামলা করতে পারত না । কারণ এ রোগীরা উকিলের চেম্বারে যেতে ভয় পায় । রোগটির নাম Liticaphobia।
আচ্ছা, উকিলদের যদি এ রোগ হয়? তখন কি হবে ?
কাব্যভীতি
জ্বী, কাব্য খুব ভয় পায় এরা । রোগটির নাম Metrophobia ।
ছোট বেলায় বোধ হয় “রাম গরুরের ছানা” ছড়াটি পড়েছিল! এখনও রাম গরুরের ছানা তো ছানাই আছে ! কিন্তু এদের ভয়ের ছানা আর ছানা নেই, রীতিমত পূর্ণ বয়স্ক গরুর সমান হয়ে গেছে ।
ছায়াভীতিএক প্রেমিক তার প্রেমিকাকে কাব্য ঝেড়েছিল -“আমি সারাজীবন ছায়া হইয়া থাকিব তোমার সনে”। প্রেমিকা ছিল আবার Sciaphobia রোগে আক্রান্ত। ব্যস্ সম্পর্ক শেষ !
এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা ছায়া ভয় পায় । এখন চিন্তা করুনতো প্রেমিকার অবস্থা ? যে জিনিসটাকে সে এত ভয় পায় তার প্রেমিক সে জিনিসটাই হয়ে যাবে ! তাও সারাজীবনের জন্যে ? বলি, তার প্রেমিকের কি অভাব আছে নাকি ? এখনও ফেইসবুক খুললে হালি তিনেক অফার দেখতে পাবা !
এ তো গেল প্রেমিকার অবস্থা । আর প্রেমিকের অবস্থা? সে তো এর আগেই বললাম ! “রাম গরুরের ছানা” ছড়াটি পড়া ছাড়াই বড় গরুর সমান কাব্যভীতি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ! বলি, আমার লেখাগুলি না পড়ে প্রেম করতে গেলেতো এমনই হবে, তাই না ?
আজি জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে
জ্বী, এরকম যদি জোছনা রাতে সঙ্গীকে নিয়ে বনে যাবার ইচ্ছা থাকে তাহলে বিয়ের আগেই চেক করে নেবেন আপনার সঙ্গীর Nyctohylophobia নামক রোগটি আছে কিনা । কারণ এরা রাতে গাছ পালা দেখলেই ভয় পায়, আর বন? তা আর নাই বললাম । আপনার জীবন থেকেই ঐ জোছনা টোছনা একদম উধাও করে দিবে ।
পরে সারা জীবন ইট পাথরের দেয়াল ধরে গান গাইবেন – বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে, আসি আসি বলে জোছনা ফাঁকি দিয়েছে। গেছে মাথায় ব্যপারটা ?
বলেন কি ভাইজান? আমি তো সবকিছুই ভয় পাই !
এ আবার কি বলে ? ইনি নাকি সব কিছুতেই ভয় পায় ! তাহলে আপনার তো Panophobia নামক ফোবিয়া আছে ! এতে আপনি সবকিছুই ভয় পাবেন, সবকিছুই ।
- আচ্ছ ভাই বলেন তো আপনি কেন সবকিছুই ভয় পান ?
- "এমনি এমনিই ভয় পাই ভাই । কেন পাই, আমি জানি না ।
- ঠিক আছে, আর বলতে হবে না । এ পর্যন্ত সেন্সলেস হয়েছেন ক’বার ?
নাহ্ ভাই, আমার কোন ফোবিয়া নাই, কিন্তু পরে যদি হয়?
এ যে আরেক ঝামেলা ! মানুষ খাল কেটে কুমির আনে, আর এ আনতে চায় হাঙ্গর মাছ ? বলি, সারাক্ষণ যদি এ আতঙ্কে থাকেন যে আপনার কোন ফোবিয়া হয়েছে কিনা, তাহলে নিশ্চিত হয়ে যান আপনার ফোবিয়া হয়ে গেছে । এ ফোবিয়ার নাম Phobophobia ।
এবার ফোবিয়ার ছোট্ট কিন্তু ভয়ঙ্কর ঘটনা দিয়ে শেষ করছি-
-আপা ? আপনার সোণামনি নাকি স্কুলে যেতে চায় না ?
-“না ভাই, একদম স্কুলে যেতে চায় না”।
-কেন যেতে চায় না ?
-“আরে ভাই, কি যে বলেন না! ও স্কুলে গেলে সারাদিন বাসায় বাঁদরামি করবে কে শুনি”?
-কিছু বলেন না ?
-“বলি মানে? কত করে বুঝাই! কিন্তু কিসে কি? স্কুলে যাবার কথা বললেই যদি ওর চেহারাটা একবার দেখতেন ? একেবার বাবার মত হয়েছে জানেন ? অভিনয়ের বাদশাহ্”!
-কিন্তু এভাবে চললে ওর পড়াশুনা ?
-“ভাই, আর বোলেন না ! মাঝে মাঝে তো মনে হয় এক্কেবারে মেরে ফেলি ! এত টাকা স্কুলের ফিস, তার ওপর প্রতিমাসে এত্তগুলো জরিমানার টাকা ! কি পাপে যে এই ছেলে জন্ম দিয়েছিলাম ? আমি আর পারি না ভাই, ওকে দূরে কোথাও রেখে আসতে পারবেন ভাই ? খুব উপকার হোত”।
-ওর বাবা সব জানে?
-“ভাই, সে কথা আর বলবেন না। সে জন্যেই তো বাচ্চাটাকে দূরে রেখে আসতে বলছি । আচ্ছা, বলেনতো ? ও তো বাবা ! ছেলেকে একটু বুঝাবে না ? তা না, এমন করে ছেলেটাকে মারে ! আমি মা, কিভাবে সহ্য করি বলেন”?
-কিন্তু এভাবে মারলেই ছেলে স্কুলে যায়?
-“যায় না মানে? এমন বাঁদরের বাঁদর ! মার ছাড়া এই বাঁদর স্কুলে যায় ভেবেছেন ? ভাই, একটা কথা বলি ? আপনার তো সন্তান নেই, তাই সন্তানের জ্বালাও বোঝেন না । এর জন্মই হয়েছে আমাকে জ্বালানোর জন্য । আবার জানেন ? এর বাবা কি বলে ? বলে, আমি নাকি কম লেখাপড়া করেছি তাই এমন সন্তান পেটে ধরেছি । তখন কি যে কষ্ট হয় ভাই, মনে হয় সব কিছু ছেঁড়ে ছুঁড়ে চলে যাই কোথাও । আর ভাল্লাগে না এ যন্ত্রণা”!
-কিন্তু আপনার বাচ্চা তো প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকে শুনেছি, এটা কি মারের জন্য?
-“ভাই বলবেন না । আমি কি জন্য বললাম একে দূরে কোথাও রেখে আসতে ? এই বয়সে এত্ত মার খেয়েছে ! আপনার কি মনে হয় ওর আর মার খেলে সমস্যা হয় ? বাঁদরটা যেদিন স্কুলে যায় সেদিনই জ্বর নিয়ে আসে বাসায়”।
-ডাক্তার দেখিয়েছেন ?
-হ্যাঁ ভাই, নিয়মিতই দেখাই । ওষুধ দেয়, জ্বর চলে যায় । তারপর আবার যেই কার সেই ! বাঁদরামি শুরু !
-না না, আমি জ্বরের ডাক্তারের কথা বলছি না, সাইকিয়াট্রিষ্ট এর কথা বলছি । মানে ও যে স্কুলে যেতে চায়না এজন্যে কোন সাইকিয়াট্রিষ্ট দেখিয়েছেন?
-“ভাই, একটা কথা বলি ? কিছু মনে কোরেন না । আমার মনে হয়, আপনারই একজন সাইকিয়াট্রিষ্ট দেখানো দরকার । বাচ্চা স্কুলে যায়না এ জন্য আবার সাইকিয়াট্রিষ্ট ? ভালোই বলেছেন । মারের ওপর কোন ওষুধ আছে ? বলেন ? ওর বাঁদরামির অসুখ হয়েছে । ভালোভাবে একদিন মার পড়লে দেখবেন ঠিক হয়ে যাবে ।
ছল ছল চোখে এতক্ষণ বসে দাঁড়িয়ে মায়ের কথা শুনছিল বাচ্চাটি, আর হয়ত বুঝার চেষ্টা করছিল নেক্সট মারটা ওর ওপর কখন পড়তে যাচ্ছে । ওর চোখের দিকে ভালো করে লক্ষ করলাম, আরে ! এ তো কোন সাধারণ বাচ্চা না !!!
এ বাচ্চা কষ্ট পেয়ে মরে যাবে তবুও কাউকে কষ্টের কথাটা শেয়ার করবেনা ! বাচ্চাটার না বলা ব্যথাগুলো খুব কষ্ট দিচ্ছিল আমাকে । তবুও ওকে স্বাভাবিক করার জন্য বললাম- “বাবু আসতো তোমার একটা ছবি তুলি”? সাথে সাথেই কোনমতে চোখের পানি মুছে পোজ দিল ছবি তোলার জন্যে।
বের হবার আগে ওর মাকে বললাম আপনার বাচ্চার Didaskaleinophobia নামক রোগটি হয়েছে। আপনারা বাবা-মা মিলে ওর যা অবস্থা করছেন ! তাতে ও খুব তাড়াতাড়িই চিকিৎসার বাইরে চলে যাবে। এক্ষুনি ওর চিকিৎসা শুরু করান ।
আর যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয়, তাহলে দয়া করে মেরে ফেলুন ওকে । এটা ওর জন্যে বরং ভালোই হবে, অন্ততঃ প্রতিদিন মরার চাইতে।
পুনশ্চঃ এটা তিন বছর আগের ঘটনা। বাচ্চাটির এখন আট বছর বয়স। ওর চিকিৎসা করানো হয়েছিল। এর পর আর কোন সমস্যা হয়নি । ও এখন নিয়মিত স্কুলে যায়, খেলাধূলা করে । আর বাচ্চার বাবার অনুরোধে ও আমাকে পাপা বলে ডাকে । আমি নাকি উনার বাচ্চাকে দ্বিতীয়বার জন্ম দিয়েছি । এ আনন্দ রাখি কোথায় ........... !