Wednesday, September 23, 2015

কে আমি ? (পর্বঃ- ১-২)

কে আমি ? (পর্বঃ- ১)
লালনের আমি ভালোই ভক্ত। “লালন শাহ” কে আমার এই এই জন্য আরও বেশী ভাল লাগে কারন আমি “শিল্প ও সাহিত্য” বলতে যা বুঝি, লালন শাহ তা পূর্ণ করে অনেক উপরে গেছেন। “শিল্প ও সাহিত্য” তৈরি হয় মানুষের সবচেয়ে বড় কারখানা “মন” থেকে। আর মানুষ যখন মন থেকে কিছু বলে, তখন তা একটা উদ্দেশ্য আর বিধেয় নিয়েই বলেন। তবে তা সকলের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় না। যা হোক, যেটা বলছিলাম সেই লালনের কথাই ফেরত আসা যাক। লালনের একটা গান আমি প্রায়ই গেয়ে থাকি। গানটা হল, “তোমার ঘরে বাস করে কয়জনা?/ও মন জাননা”। আসাধারন লাগে গানটা। কিন্তু গানটার অর্থ কি আমারা আসলেই বুঝি? বুঝলেই কি আমারা চিন্তা করি? আমার মতে, গানটা দ্বারা বুঝানো হয়াছে যে আমি বা আপনি আসলে কোন একক মানুষ না।আপনার বা আমার ভিতরে বাস করছে আনেক গুলো মানুষ। একটু অদ্ভুৎ লাগতে পারে কথাগুলো। বলতে পারেন আমি কি উন্মাদ কিনা? না, আমি ঠান্ডা মাথায় কথাগুলো বলছি। আমার মতে আপনি মানুষ এক এবং আপনার দেহ একটি। কিন্তু আপনার ভিতরে বাস করছে হাজারো মানুষ। আপনি এক জায়গায় ছাত্র, কোথাও শিক্ষক, কোথাও মা, কোথাও বাবা, কোথাও সন্তান, কোথাও ভালো বা মন্দ। অর্থাৎ, আমার দেহ একটি হলেও আমি ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন সত্তা নিয়ে বিরাজ করি। এত সত্তার ভিতরে মাঝে মাঝে কি আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি? তাহলে আসলে আমি কে?
প্রবন্ধের নাম আমি লিখেছি, “কে আমি?” স্বভাবতই প্রশ্ন আস্তে পারে কেন এসব উল্টো পাল্টা কথার শুরুতে কেন এই নাম? আমার মতে, আজ আমরা আমাদের চারপাশে যা কিছু দেখি, যত ঘটনা, যত পরিক্রমা আমাদের চারপাশে ঘটে তা আমই বা আপনি অথবা আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা বা অপচেষ্টার প্রয়াশ। আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা আজ ঘুনে ধরে গেছে। তাহলে আমরা যদি তা পরিবর্তন করতে চাই তবে আগে আমাদের নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। (এতক্ষণ পর্যন্ত আমই জা লিখেছি তা যদি সথিক মনে করে থাকেন তবে প্লীজ লেখাটা পরে জান। অন্যথায় এটা বাদ দিয়ে অন্য কিছু করুন। কারন আপনাদের সময়েরও অনেক দাম আছে।) তো যা বলছিলাম, আমাদের সমাজ পরিবর্তনের কথা। এটা যদি করতে চাই তবে আগে আমাদের জানতে হবে সমাজ কি? সমাজ কে ? এটা কিভাবে তৈরী হয়? সমাজ হল, আমি, আপনি আর আমাদের সমষ্টি। আমরাই সমাজ, আমরাই পাড়া, আমরাই থানা, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, দেশ, তথা বিশ্ব। তাই সমাজের পরিবর্তন আর জাতি হিশেবে আমাদের উন্নত করতে হলে আমাদের আগে বুজতে হবে যে, আমি কি?
লালনের কথায় ফিরে আসি, তার মতে আমার ভিতরে হাজার সত্তা বিদ্যমান। তবে আমি এত সত্তা নিয়ে চিন্তা করবো না। প্রমথ চৌধুরী তার কোন এক প্রবন্ধে বলেছিলেন, মানুষের ভিতরে দুই সত্তা থাকে। একটি হোল “মানবসত্তা” আর অন্যটি হল “পশুসত্তা”। এই দুই সত্তা কি তা আমরা সকলেই জানি। শুধুমাত্র দুই নম্বার সত্তা থাকলে তাকে জীব বলা চলে। মানুষ বলা চলে না। তাহলে মানুষ হতে হলে আগে আমদের মধ্যে এই “মানবসত্তা” নিয়ে আসতে হবে। “মানবসত্তা” কি তা সকলেই জানেন আশা করি। আগেই বলেছি, আজ সমাজে যে পরিমানে অন্যায় বেড়েছে তা থামাতে হলে প্রয়োজন আমাদের নিজেদের চেনা। তাই আমার মতে এটাই শেষ্ঠ সময়, নিজেকে জিজ্ঞাসা করার “কে আমি?”

কে আমি ? (পর্বঃ- ২)
“একক/ অদ্বিতীয়” শব্দটির সাথে আমরা খুবই পরিচিত। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ আর খেলার মাঠ সব জায়গায় আমরা এই শব্দটা শুনে থাকি। সবচেয়ে বেশী শুনি, এই শব্দের ইংরেজীটি। আর তা হল, unique. এখন আসি “একক/ অদ্বিতীয়” শব্দটি দ্বারা আমরা কি বুঝে থাকি? আমরা এই একক/ অদ্বিতীয় শব্দটির দ্বারা এমন কোন কাজ বা এমন কোন জিনিস/বস্তুকে বুঝে থাকি যা শুধুমাত্র ওই ব্যাক্তি বা বস্তু ব্যাতিত অন্য কোথাও সহজে পাওয়া যায় না। আমার লেখা “কে আমি?” প্রবন্ধের যদি প্রথম পর্ব আপনি পড়ে থাকেন এবং আমার কথা যদি আপনার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়, তবে আমার ধারনা আপনি নিজেকে এর মধ্যে প্রশ্ন করে থাকবেন যে আপনি আসলে কে? আপনার যদি মনে হয়ে থাকে যে মানুষ হিসেবে আপনার কিছু মানবিক দায়িত্ব আছে, তবে তা পুরণ করার আগে আমি আপনাকে আরও একটি বিষয়ে চিন্তা করতে অনুরোধ করব। (আমি আপনাকে ছোট বা তাছিল্য করার জন্য কোন কিছু লিখছি না। যদি আপনার এরকম মনে হয়, তবে আমায় ক্ষমা করে আর বাকিটুকু পরবেন না প্লীজ।)যা লিখছিলাম সেই কথায় ফিরে যাই।
আমি এখন যা বলব, তার সাথে ৬০% মানুষ সহমত প্রকাশ করবেন না। তবু বলি। আমার মতে আমি, আপনি বা আমরা সবাই “একক/ অদ্বিতীয়”। আপনার মনে প্রশ্ন জন্মাচ্ছে যে, আমি এটা কি বললাম? আমি কি সজ্ঞানে এই কথাটি বললাম কিনা? উত্তরটি হল- হ্যাঁ, আমি জেনেবুঝেই এই কথা বলেছি। তাহলে কিভাবে আমরা “একক/অদ্বিতীয়?” ভাল প্রশ্ন। বিজ্ঞানীরা একটি জরিপ করে দেখেছেন যে, প্রায় ১,০০,০০০ মানুষের মধ্যে দুই জন মানুষের হাতের রেখায়(fingerprint) মিল পাওয়া যায়(সম্ভাবনা যদিও খুব কম)। তাহলে দেখা যাচ্ছে একজন থেকে আর একজন মানুষ ভালোই আলাদা। তবে এই বিষয়টি শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। আগের লেখায় বলেছিলাম যে, মানুষের সবচেয়ে বড় কারখানা হচ্ছে তার “মন”। এই “মন” জিনিসটি হল- কিছু চিন্তা চেতনার সমষ্টি। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এই “মনের” দিক থেকে একজন মানুষের সাথে আর একজন মানুষের আকাশ পাতাল ব্যাবধান। আরও মজার বিষয় হল যে, প্রতিটি মানুষ একি ঘটনা- এক একজন একেকভাবে দেখেন। এর আরও বাস্তব উদাহরন পাবেন আপনার বন্ধু বান্ধবের মধ্য। তারপরও আপনি বলতে পারেন, “আমার চিন্তার সাথে তো অনেকের চিন্তা মিলে যায়, তবে আমি কিভাবে একক হলাম?” তবু আমি বলব, আপনি/আমি একক! কিভাবে তাই তো? আপনার মাঝে এমন কোন গুণ (ভাল) লুকিয়ে আছে যা একক। কি অবাক লাগছে? না, আসলেই আছে। আপনাকে তৈরী করা হয়েছে এইভাবেই। আপনি হয়ত ভাল গান গাইতে পারেন/ নাচতে পারেন/ লিখতে পারেন/ খেলতে পারেন। কিন্তু আপনি হয়ত খুজে পাচ্ছেন না যে আপনার একক গুনটি(ভাল) কি? কেন পাচ্ছেন না? তারও নিশ্চই একটি কারন আছে। হ্যাঁ, এর মধ্যে সামাজিক বাধাও জড়িত আছে। তবে সবচেয়ে বড় যে বাধা তা হল, আপনি এভাবে চিন্তা করছেন না। একটু অন্য কথায় আসি। এক বড় ভাইয়ের সাথে কিছুদিন আগে কথা বলছিলাম। বিষয় ছিল, “বিজ্ঞানী আইনস্টান/নিউটন কিভাবে এত কিছু আবিষ্কার করেছিলেন?” তার সবচেয়ে সহজ উত্তর হল, তারা এটা নিয়ে ভাবতেন তাই। মানুষের মস্তিক এমন একটি জিনিস যাকে আপনি যত কাজ করাবেন তার ক্ষমতা তত বাড়বে। কিন্তু আমরা কি তাই করি? করি না। আসুন ভাবি, “আমাদের একক গুণটি(ভাল) কী?” এবং তা নিয়ে কাজ করি। কারন, আমার আপনার সবার এইসব একক গুনের সমারহ যখন ঘটবে তখন এই দেশের তথা বিশ্বের চেহারা/ছবি বদলে যাবে এবং ধরীত্রী হবে মর্তের স্বর্গ।