Tuesday, September 22, 2015

যখন টেষ্ট টিউবে শিশুকে জন্মানো হয় (IVF)। ১৯ তম পর্ব। ফিজিওলজী অথবা মেডিসিনে ২০১০ এর নোবেল বিজয়ী।

যখন টেষ্ট টিউবে শিশুকে জন্মানো হয় (IVF)। ১৯ তম পর্ব। ফিজিওলজী অথবা মেডিসিনে ২০১০ এর নোবেল বিজয়ী।

Robert G. Edwards
জন্ম: ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯২৫, Batley, United Kingdom
মৃত্যু: ১০ এপ্রিল ২০১৩, Cambridge, United Kingdom
Robert G. Edwards ২০১০ সালে মেডিসিন এর উপর নোবেল বিজয়ী হন, টেস্ট টিউব এর মধ্যে শিশুর জন্ম পদ্ধতি আবিস্কারের উপর।
এই পদ্ধতিকে IVF (IN-VITRO FERTILIZATION) বলে। এর অর্থ শরীর (জরায়ু) এর বাইরে ডিম্ব নিষিক্ত করন।
জী হা, বর্তমানে একটি বিরাট সংখ্যক শিশু টেষ্ট টিউবে জন্ম নিয়ে থাকে। কিন্তু টেষ্ট টিউবে শিশুর জন্ম বুঝতে হলে আগে শিশুর প্রাকৃতিক জন্ম পদ্ধতিটা একটু জানার দরকার আছে।
এজন্য নীচের চিত্রটি একটু দেখলে সহজেই বুঝতে পারবেন, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কী ভাবে একটি শিশু জন্ম ।লচ্ছে।

চিত্র-১,
উপরের ১নং চিত্রে দেখানো হয়েছে কী ভাবে স্বাভাবিক প্রদ্ধতিতে জরায়ূতে একটি পুরুষ প্রজনন কোষ (SPERMATOZOA) একটি স্ত্রী প্রজনন কোষকে (OOCYTE) জরায়ুর (UTERUS) এর FALLOPIAN TUBE এর FUNDUS নামক প্রশস্ত স্থানে, নিষিক্ত (FERTILIZED) করিয়া ,শিশুর সর্ব প্রথম ZYGOTE নামক কোষটি জন্ম দিচ্ছে। এরপর এই ZYGOTE টি বিভাজিত হতে হতে FALLOPIAN TUBE এর মধ্য দিয়ে জরায়ুতে পৌছে যায়। তারপর জরায়ু গাত্রে শিকড় গেড়ে, ক্রমান্বয়ে শিশুটি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরপর ৯ মাস ১০ দিন পর শিশুটি জন্ম লয়।
এটা একটু বিস্তারিত জানতে ১৪ তম পর্বটি আর একবার পড়ে লউন।

চিত্র-২, এখানে দেখানো হয়েছে, কীভাবে স্ত্রী প্রজনন কোষকে একটি টেষ্ট টিউব এর মধ্যে পুরুষ প্রজনন কোষ দ্বারা নিষিক্ত (FERTILIZED) করা হচ্ছে ও তারপর ZYGOTE টি বিভাজিত হওয়ার পর সিরিঞ্জ দ্বারা কোষগুলী জরায়ুতে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পদ্ধতি
উপরে চিত্র দেখুন-
১. ডিম্বাশয়ের (OVARY) ডিম্বকে FSH হরমোন ইনজেকশন করে উত্তেজিত করে একাধিক ডিম্বকোষ উৎপাদন করা হয়। (২)
২. একটি টেষ্টটিউবে (বা পেট্রিডিসে) NUTRITION BROTH (এক ধরনের কালচার মেডিয়া) পূর্ব হতে তৈরী করে রাখা হয়। সিরিঞ্জ দ্বারা ডিম্বাশয় হতে ডিম্ব সংগ্রহ করিয়া এই টেস্ট টিউবের মধ্যে ঢুকানো হয়।
৩. এবার এই টেষ্টটিউবে পূর্ব হতে সংগৃহিত ও সংরক্ষিত পুরুষ প্রজনন কোষ (SPERM) সিরিঞ্জ দ্বারা ঢুকিয়ে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
৪. টেষ্ট টিউবে স্ত্রী প্রজনন কোষ SPERM দ্বারা নিষিক্ত ( FERTILIZED) হয়ে একট এক কোষী ZYGOTE এ পরিণত হয়ে যায়।
৫. এবার এই এক কোষী ZYGOTE নামক ভ্রুণটি MITOTIC পদ্ধতি তে বিভাজন হতে থাকে। (MITOTIC কী ৭ম পর্ব দেখুন)।
৬. এই ভ্রুণ কোষ গুলী সংখ্যায় ৮ টায় পৌছে গেলে, তখন এগুলীকে সিরিঞ্জ দ্বারা জরায়ূর মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।(২)
এরপর এই টেষ্ট টিউবে জন্ম লওয়া ভ্রুনটি জরায়ুতে স্বাভাবিক ভাবে বর্ধিত হতে থাকে ও ভুমিষ্ঠ হয়।
এই শিশুটাকেই বলা হয় টেষ্ট টিউব শিশু।(২)
IVF এর প্রয়োজনীয়তা কী?
বন্ধা যুগলদের সন্তান প্রদান করাই এর উদ্যেশ্য। ১০% যুগলদের বন্ধা হতে দেখা যায়। এরা জরায়ুর অভ্যন্তরে স্ত্রী প্রজনন কোষকে নিষিক্ত করতে সক্ষম হননা। তাদের জন্য IVF পদ্ধতি পূর্ণ মাত্রায় সফল পদ্ধতি।
IVF কখন হতে আরম্ভ হয়েছে?
Edwards ১৯৫০ সন হতে IVF এর উপর কাজ আরম্ভ করেন। তিনি ১৯৭৮ সালের ২৫ শে জুলাই বিশ্বে সর্ব প্রথম , Louise Brown, নামে টেষ্ট টিউব শিশুটিকে উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করেন।
এর পর Edwards বিশ্বে তার অন্যান্য সহকর্মীদেরকে সংগে লয়ে পদ্ধতির আরো উন্নতি সাধন করে একত্রে কাজ চালাতে থাকেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৪ মিলিয়নের মত টেষ্ট টিউব শিশু জন্মানো হয়েছে।
এর মাধ্যমে তিনি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির উপর একটা বড় ধরনের অবদান রাখেন।
আজ বিশ্বে সর্বত্র IVF পদ্ধতির চিকিৎসা পূর্ণ মাত্রায় চালু রয়েছে।
বেশ কিছু প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে তাকে এগুতে হয়েছিল।
১৯৫০ সনে যখন তিনি এই গবেষনা আরম্ভ করলেন, তখন মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল তার গবেষনার ফান্ড বন্দ করে দিলেন।
তখন একটা প্রাইভেট অর্গানাইজেশন তার এই গবেষর কাজে ফান্ড প্রদান করতে এগিয়ে এসেছিল।
ধর্মীয় , সামাজিক ও আইন সংস্থা গুলী তার এ কাজের কঠোর বিরোধিতা মুলক সমালোচনা আরম্ভ করেছিল। তারা এ পদ্ধতিকে অনৈতিক বলে দাবী করতে থাকলেন।
কিন্তু তিনি এর মধ্য দিয়ে কাজ চালিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলেন।
কাজের পদ্ধতির দিক দিয়েও পথম দিকে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এজন্য তিনি gynecologist Patrick Steptoe, এর সংগে যোগাযোগ করে সহযোগিতা গ্রহন করেন।তিনি সার্জারীর মাধ্যমে ডিম্বাশয় হতে ডিম্বকোষ সংগ্রহ করতে সহযোগিতা করেন।
বর্তমানে এই পদ্ধতিকে অনেক উন্নত করা হয়েছে। এখন ULTRA SOUND দ্বারা পরিপক্ক ডিম্বকোষকে OVARY তে সনাক্ত করা হয় এবং মাইক্রোসিরিঞ্জ দ্বারা সেটাকে সংগ্রহ করা হয়।
এবং মাইক্রোসিরিঞ্জ দ্বারা শুক্রানুকে টেষ্ট টিউব (বা পেট্রি ডিস)এর ডিম্বকোষে সরাসরি ইনজেক্ট করিয়া FERTILIZE ও করা হয়।
এই পদ্ধতিতে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে কী?
দুই একটা ক্ষেত্রে পূর্ব-প্রসব হওয়া ছাড়া আর কোনই ক্ষতি এ পর্যন্ত পাওয়া যায় নাই। এই পদ্ধতিতে যারা জন্ম লয়েছে তারা অনেকেই আজ পূর্ণ বয়স্ক ও সন্তান সন্ততির পিতা মাতা হয়ে সচ্ছন্দ জীবন যাপন করিতেছেন। (১,২)
DNA সম্পর্কিত পরবর্তি কিছু কিছু পরীক্ষা নীরিক্ষা বুঝতে হলে এই পদ্ধতিটা আগে জানা দরকার। একারণে এখন এটা বর্নণা করা হল।

পূর্বের পর্ব সমূহ-
১৯ তম পর্বের সূত্র সমুহ-
১. NOBEL PRIZE
http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2010/
২. WEB MD
http://www.webmd.com/infertility-and-reproduction/guide/in-vitro-fertilization