মোহাম্মদ ও ইসলাম, পর্ব-৩
আমি শপথ করি যেসব নক্ষত্রগুলো পশ্চাতে সরে যায়।চলমান হয় ও অদৃশ্য হয়, শপথ নিশাবসান ও প্রভাত আগমন কালের, নিশ্চয় কোরআন সম্মানিত রসূলের আনীত বাণী, সূরা-আত-তাকভীর-৮১:১৫-১৯ মক্কায় অবতীর্ণ।
শপথ সূর্যের ও তার কিরণের, শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে, শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে, শপথ রাত্রির যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে, শপথ আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন, তাঁর। শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর, সূরা-আস-সামস্-৯১:০১-০৬, মক্কায় অবতীর্ণ।
চন্দ্রের শপথ, শপথ রাত্রির যখন তার অবসান হয়, শপথ প্রভাতকালের যখন তা আলোকোদ্ভাসিত হয়, সূরা-আল মুদ্দাসসির-৭৪:৩২-৩৩, মক্কায় অবতীর্ণ।
আনাস বিন মালিক বর্ণিত, আমি আল্লাহর নবীকে বলতে শুনেছি, আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে সিজদা কর ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন কর, কারন, আল্লাহর কসম যার হাতে আমার প্রাণ, যখন তোমরা তা কর আমি আমার পিছনের সবকিছু দেখতে পাই। সহী বুখারী, বই-৭৮, হাদিস-৬৩৯
আবু বকর ইবনে আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন- আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাহ বলেন, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, তোমরা দেব দেবীর নামে ও তোমাদের বাপ-দাদাদের নামে শপথ করিও না। সহী মুসলিম, বই-১৫, হাদিস-৪০৪৩
উবায়দুল্লাহ ইবনে মুয়ায বর্ণনা করেছেন- আদী ইবনে হাতেম বলেন, রাসুলুল্লাহ বলেছেন যে ব্যক্তি কসম করার পর তার বিপরীত বস্তুকে উত্তম মনে করে তখন যেন সে সেই উত্তম বস্তকেই গ্রহণ করে ও কসম বর্জন করে।সহী মুসলিম, বই-১৫,হাদিস-৪০৫৭
সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে। সূরা- আত তাওবাহ, ০৯:০১
************************************************************************
ইসলামকে বুঝতে হলে মোহাম্মদকে বোঝা দরকার সর্ব প্রথমে। একই সাথে
বোঝা দরকার তৎকালীন
আরবদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা। ইসলামিক সব রকম কিতাবে মোহাম্মদকে বর্ণনা করা
হয় একজন মহামানব হিসাবে যার চরিত্রে কোন রকম দোষ ত্রুটি নেই, নেই কোন
কলুষতা। তিনি
সচ্চরিত্রবান, ন্যায়পরায়ন, দয়ালু, সৎ মোট কথা সব
রকম সদ্
গুণাবলীর সমাহার মোহাম্মদের চরিত্রে সমাবেশ করেছে আল্লা।প্রতিটি মুসলিম শিশুই
বড় হয়ে ওঠে মোহাম্মদ সম্পর্কে এরকম ধ্যান ধারণা মাথায় ও স্মরণে রেখে।একই সাথে
মোহাম্মদ সম্পর্কিত কোন নিরপেক্ষ সূত্র পাওয়াও যায় না যা থেকে
জানা যেতে পারে যে তিনি কেমন লোক ছিলেন। যারা মোহাম্মদের জীবনী রচনা করেছেন
যেমন- ইবনে ইসহাক, আল তাবারী, হিসাম এরা প্রত্যেকেই ছিলেন নিবেদিত
প্রাণ মুসলমান, যারা নানা রকম উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য দ্বারা মোহাম্মদের
জীবনী রচণা করেছেন। বলা
বাহুল্য, তারা
কখনই মোহাম্মদ সম্পর্কে এমন কোন তথ্য তাদের রচণাতে লিপিবদ্ধ করবেন না যাতে মোহাম্মদের
চরিত্র সম্পর্কে
সামান্যতম দ্বন্দ্ব বা সন্দেহ সৃষ্টি হয় আর এখানে এ বিষয়টাই সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ন। কোন
শিষ্য কখনো তার গুরুর চরিত্রে কোন দোষ খুজে পায় না। সুতরাং
আমাদেরকে মূলত: তাদের রচনার ওপর নির্ভর করেই মোহাম্মদকে চিনতে হবে। অন্য কোন
উপায় আমাদের সামনে খোলা নেই। কিন্তু তার পরেও সে সব সূত্র থেকে কিছু না কিছু তথ্য পাওয়া
যাবে যা থেকে মোহাম্মদের সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।কিন্তু কেন সে ধরনের তথ্য
মোহাম্মদের নিবেদিত প্রান শিষ্যরা লিখে রেখে গেছেন?সেগুলো কি উদ্দেশ্যমূলকভাবে লেখা
যাতে একসময় মোহাম্মদের
চরিত্রকে কলুষিত করা যায় ও ইসলাম ধ্বংস হয়ে যায়? ইদানিং
বিভিন্ন
হাদিস ও মোহাম্মদের জীবনী পড়ে অনেক ইসলামী পন্ডিতরা এরকম একটা ধারণা দেয়া
চেষ্টা করে থাকে কিন্তু বিষয়টি মোটেই তা নয়।আসলে সেটা একারনে ঘটেছে যে –
কোন
কাজ বা ঐতিহ্য সেই ১৪০০ বছর আগের সমাজে খারাপ বা নীতিগর্হিত বলে বিবেচিত হতো না,
বরং তা
বিবেচিত হতো সমাজ সিদ্ধ রূপে, আর সে কারনেই এসব নিবেদিত প্রান ব্যাক্তিবর্গ সম্পূর্ন দ্বিধাহীন
চিত্তে তা লিপিবদ্ধ
করে গেছেন।
একটা
উদাহরন দেয়া যেতে পারে; যেমন- মোহাম্মদ ৫১ বছর বয়েসে ৬ বছরের আয়শাকে বিয়ে করেছিলেন
আর আয়শার ৯ বছর বয়েসে মোহাম্মদ তার সাথে স্বামী স্ত্রীর মত সংসার করা
শুরু করেছিলেন। সেই
তখনকার আরব সমাজে শিশুকন্যা বিয়ে করা কোন গর্হিত কাজ ছিল না, বরং তা ছিল
নিতান্ত স্বাভাবিক ঘটনা। এছাড়াও বহুবিবাহও ছিল খুব স্বাভাবিক ঘটনা। যে কারনে
মোহাম্মদ এধরনের
কাজ করে যাওয়ার পরেও তার জীবনী রচনাকারীগণ বা তৎকালীন আরব
সমাজের সাধারণ
মানুষজন মোহাম্মদের এ বিষয়টিকে কোন রকম খারাপ দৃষ্টি দিয়ে দেখে নি। যে কারনে
আমরা দেখি মোহাম্মদের শিশু বিবাহ বা বহু বিবাহ নিয়ে মক্কার আরবরা কোনরকম
শোরগোল তোলেনি।আর
তাই এসব তথ্য তার জীবনীতে লিখতে তাদের কোনরকম সমস্যা হয় নি। শুধু তাই নয়
এসম্পর্কিত ঘটনা বা কাজ খোদ কোরান বা হাদিসের মধ্যেও লিপিবদ্ধ করতেও তাদের
কোনরকম সমস্যা হয় নি। তার
মধ্যে আরও যে
সমস্যা সেটা হলো- মোহাম্মদের নবুয়ত্ব পাওয়ার আগের জীবনের পূর্ণাঙ্গ কোন তথ্য নেই,
আছে
কিছু ভাসা ভাসা তথ্য। তারপরেও
হাদিসএর মাধ্যমে যেটুকু জানা যায় তাতে দেখা যায় মদিনাবাসীরা কিছুটা শোরগোল তুলেছিল
মোহাম্মদের পালিত
পূত্র জায়েদের স্ত্রী জয়নাবকে বিয়ে করার ব্যপারে কারন সেটা সেই আরব সমাজেও
বিরাট গর্হিত বা অনৈতিক কাজ ছিল। তবে অত্যন্ত বুদ্ধিমান মোহাম্মদ একাজটি মক্কাতে করেন নি,
বা
করার সুযোগ পান নি।এটা
তিনি করেছিলেন মদিনাতে যেখানে এ বিষয়ে সামান্য টু শব্দ করার মত কেউ ছিল না। কিন্তু
তারপরেও
দেখা যায় এ ধরণের একটা অনৈতিক কাজের জন্য সেই মদিণার লোকজনও কিছুটা
সমালোচনামূখর হয়েছিল, যা মোহাম্মদকে অতি সত্ত্বর আল্লাহর কাছ থেকে আয়াত
নাজিলের মাধ্যমে সমালোচকদের মূখ স্তব্ধ করতে হয়।
মোহাম্মদের সময়কালে মক্কায় ও তার আশপাশে বাস করত আরব
পৌত্তলিকরা, ইহুদি
ও খৃষ্টানরা, তবে
পৌত্তলিকরা সংখ্যায় বেশী ছিল। আরব পৌত্তলিকরা বেশ কতকগুলি গোত্রে বিভক্ত ছিল। তার মধ্যে
কুরাইশ গোত্র
ছিল সবচাইতে সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাবান। আগের অধ্যায়ে যেমন বলা হয়েছে-
মোহাম্মদেরও আগে মক্কার কাবা ঘর ছিল মূলত: পৌত্তলিককের একটা পবিত্র উপসণালয়। আরবের
বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সেখানে পৌত্তলিকরা আসত সে উপাসণালয়ে তাদের দেব
দেবীদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে।এদের আগমনের কারনে মক্কা একটা ছোটখাট
ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়। আর এই ব্যবসার মূল নিয়ন্ত্রন ছিল কুরাইশদের
হাতে। আরব দেশ
বিশেষ করে মক্কা ছিল একটা প্রচন্ড রুক্ষ শুস্ক মরুভূমি, যেখানে দিনে
প্রচন্ড গরম আর রাতে তীব্র শীত পড়ত। মানুষগুলোও ছিল মরুভূমির মত রুক্ষ শুস্ক, কঠিন
প্রকৃতির আর তারা নানরকম গোষ্ঠিতে বিভক্ত ছিল।শুধুমাত্র কুরাইশরা কাবা ঘর
কেন্দ্রিক ব্যবসার কারনে একটু ধণাড্য ছিল আর বাকী সবার পেশা ছিল মুলত: পশুপালন।এখানে কোন
বিশেষ সভ্যতা গড়ে ওঠেনি, তাই সঞ্চিত হয়নি কোন সম্পদের ভান্ডার। সেই ৬ষ্ট ৭ম শতাব্দীতে
রোম কেন্দ্রিক
রোমান সাম্রাজ্য ও সভ্যতার যখন অন্তিম লগ্ন প্রায়, তখন কনসটান্টিনোপল
কেন্দ্রিক বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য তার প্রভাব ও প্রতিপত্তি ক্রমশ
বাড়িয়ে চলছিল যার মূল ধর্মীয় ভিত্তি ছিল খৃষ্টান ধর্ম। আসলে বাইজান্টাইন
সাম্রাজ্যকে পৌত্তলিক রোমান সাম্রাজ্রের খৃষ্টীয় সংস্করন বললেও তেমন
ভূল বলা হবে না। বাইজেন্টাইন
সাম্রাজ্য তখন ক্রমশ: ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রসারিত হচ্ছিল, কিন্তু কখনই মক্কা মদিনা বা এর
আশপাশের কোন যায়গা
এ সাম্রাজ্যকে আকৃষ্ট করেনি। কারন কিছু ছাগল আর ভেড়ার জন্য কখনই কোন সৈন্যদল
এত কষ্ট করে কঠিন মরুভূমি পাড়ি দেয়ার তাগিদ দেখায় নি। যে কারনে আরব
উপসাগরীয় দেশগুলো অনেকটাই নিরুপদ্রব জীবন কাটিয়েছে। অন্য সভ্যতার সাথে
সংশ্রব না ঘটায় এখানে পৌত্তলিক ধর্ম শক্ত আসন গেড়ে বসে। কাল পাথরকে পূজা
করা, কাবা
শরিফকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিন করা, শয়তানকে পাথর মারা,
পৌত্তলিকদের
প্রধান দেবতা আল্লাহকে মোহাম্মদ আল্লাহ হিসাবে মানা ছাড়াও আরও
একটি কাজ করেছেন যা থেকে পরিস্কার বোঝা যায় যে তার ইসলাম পৌত্তলিকতা
দোষে দুষ্ট অথবা পৌত্তলিকদের ধ্যাণ ধারনা ইসলামে ঢুকানো হয়েছে। তার উদাহরণ
হলো- কোরানে বার বার জড় বস্তুর নামে কসম কাটা হয়েছে।আর এসব জড়বস্তু
সমূহ বলা বাহুল্যই আরব কোরাইশদের নানা দেব দেবীর প্রতিনিধিও।যেমন নীচের আয়াত-
কসম
ঐ ঝঞ্ঝা বায়ূর।অতঃপর বোঝা বহনকারী মেঘের। অতঃপর মৃদু
চলমান জলযানের।অতঃপর কর্ম বন্টনকারী ফেরেশতাগণের। সূরা- আস
যারিয়াত-৫১:
০১-০৪, মক্কায় অবতীর্ণ।আমি শপথ করি যেসব নক্ষত্রগুলো পশ্চাতে সরে যায়।চলমান হয় ও অদৃশ্য হয়, শপথ নিশাবসান ও প্রভাত আগমন কালের, নিশ্চয় কোরআন সম্মানিত রসূলের আনীত বাণী, সূরা-আত-তাকভীর-৮১:১৫-১৯ মক্কায় অবতীর্ণ।
শপথ সূর্যের ও তার কিরণের, শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে, শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে, শপথ রাত্রির যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে, শপথ আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন, তাঁর। শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর, সূরা-আস-সামস্-৯১:০১-০৬, মক্কায় অবতীর্ণ।
চন্দ্রের শপথ, শপথ রাত্রির যখন তার অবসান হয়, শপথ প্রভাতকালের যখন তা আলোকোদ্ভাসিত হয়, সূরা-আল মুদ্দাসসির-৭৪:৩২-৩৩, মক্কায় অবতীর্ণ।
এখানে আল্লাহ বায়ূ, মেঘ, জলযান, নক্ষত্র,
সূর্য,
চাঁদ এ
সমস্ত জড়বস্তু ও ফেরেস্তাদের নামে কসম কাটছে।কি আজব কারবার!
আল্লাহ তার কথা যে সত্য তা প্রমান করার জন্য ওসব জড় বস্তুর কসম দিচ্ছে,
তার
সৃষ্ট ফেরেস্তাদের কসম দিচ্ছে। আর সে কসম দিচ্ছে তার কথা মানুষকে বিশ্বাস করানোর জন্য।তাহলে
আল্লাহকেও কসম কাটতে হয় ঠগ বা প্রতারক বা মিথ্যাবাদী মানুষের মত যারা কথায়
কথায় আল্লা খোদার কসম কাটে, যেন তাদের কথা মানুষ বিশ্বাস করে, যদিও খুব কম মানুষই এ ধরণের
কসমকাটা মানুষদেরকে
বিশ্বাস করে।আমরা
যদি ইসলামকে এর পূর্ববর্তী ধর্ম তথা ইহুদি, খৃষ্টান এর ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ধর্ম
বলে ধরে নেই, তাহলে
দেখব ইহুদী বা খৃষ্টানদের ঈশ্বর কখনই কোন কসম কাটে নি। সর্বশক্তিমান
ঈশ্বরের কখনো কসম কাটার দরকার পড়ে না।কারন তার উর্ধ্বতন কেউ নেই যার নামে কসম
কাটা যায়।অধ:স্তনরাই
তার উর্ধ্বতনের নামে কসম কাটে। যেমন সন্তানরা তার মা বাবার নামে কসম কাটে, মা বাবা কসম
কাটে আল্লাহর নামে। আল্লাহর
কোন উর্ধ্বতন নেই, তাই তার কসম কাটারও কেউ নেই।সুতরাং উপরোক্ত আয়াত সমূহের কসমকাটার
ঘটনাগুলো
যৌক্তিকভাবেই সর্বশক্তিমান আল্লাহর হতে পারে না। আরবের
পৌত্তলিকরা তাদের
দেব দেবীদের নামে কসম কাটত। কারণ তাদের কাছে তাদের দেবদেবী গুলো ছিল উর্ধ্বতন বা
উচ্চ মর্যাদার ও স্বর্গীয়।যেমন- হিন্দুরা কসম কাটে তাদের দেব
দেবীর নামে, বলে- মা কালীর দিব্বি, মা দূর্গার
দিব্বি, ভগবানের কিরে এরকম। দিব্বি বা
কিরে মানে হলো কসম। সুতরাং এ ধরনের কসম কাটার ঘটনা দৃষ্টে এটাই প্রতীয়মান হয়
যে মোহাম্মদই মূলত: আল্লাহর বানীর নামে আরব পৌত্তলিক দেব দেবীর নামে কসম
কাটছেন। চন্দ্র,
সূর্য,
বায়ূ
এসবই ছিল
পৌত্তলিকদের দেব দেবীর নাম বা এদের এক একজন দেবতা বা দেবী ছিল।এটা অনেকটাই
হিন্দুদের দেব দেবীর অনুরূপ। হিন্দুদের কাছেও সূর্য, চন্দ্র, বায়ূ এসবের একজন
করে দেবতা বা দেবী আছে। যেমন-
সূর্য দেবতা হলো বিষ্ণু, চন্দ্র দেবতা হলো সোম, বায়ূর দেবতা হলো পবন ইত্যাদি। এটা পৌত্তলিক
কুরাইশদেরকে তার
দলে টানার একটা প্রচেষ্টা ছিল মোহাম্মদের। তার ধারণা ছিল এভাবে পৌত্তলিকদের
দেব দেবীর নামে কসম কাটলে হয়তবা কুরাইশরা তার কথা বা নবূয়ত্বের
দাবী মেনে নেবে। কিন্তু
এতেও কুরাইশদেরেকে দলে টানা যায়নি। এখানেই কিন্তু বেশ আশ্চর্য হতে
হয় যে এর পরেও কুরাইশরা কেন মোহাম্মদের দলে ভেড়েনি। আর উপোরক্ত
আয়াতসমূহ যে কুরাইশদেরকেই লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে তার প্রমান হলো
সূরাগুলো মক্কাতে অবতীর্ণ।কোরান ভালমতো পড়লে দেখা যাবে, মদিনায় অবতীর্ণ কোন আয়াতে
এভাবে এসব জড় বস্তুতে কসম করে আল্লাহ তথা মোহাম্মদ কোন আয়াতের কথা বলেননি। কেন বলেন নি?
কারন
অতি স্পষ্ট।নানা
কায়দায়
ও কৌশলে মদিনার লোকদের আনুগত্য মোহাম্মদ মদিনাতে যাওয়ার আগেই অর্জন
করেছিলেন। তিনি যখন
মক্কা ছেড়ে মদিনাতে ঘাটি গাড়েন প্রায় সাথে সাথেই মদিনার অধিকাংশ লোক
মোহাম্মদের আনুগত্য প্রকাশ করে।ফলে সেখানকার মানুষদের মন যুগিয়ে কোন আয়াত নাজিলের
কোন দরকার ছিল না, যে কারনে কোন জড় বস্তু বা দেব দেবীর নামে কসম কাটারও
দরকার পড়েনি।তিনি
আল্লাহর ওহীর নামে যাই বলতেন সবাই তা বিশ্বাস করত, এ ব্যপারে
কারো কোন প্রশ্ন থাকত না। প্রশ্ন করার দরকারও মনে করত না। কারণ তারা ইতোমধ্যেই মোহাম্মদের কথায়
ঐক্যবদ্ধ হয়ে
মদিনার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া বানিজ্য পথের নিরীহ বানিজ্য কাফেলার ওপর আতর্কিতে
আক্রমনের মাধ্যমে পাওয়া গণিমতের মালের ভাগ পেতে শুরু করেছে যার ফলে তাদের
দারিদ্র কিছুটা হলেও ঘুচেছে, তাহলে খামোখা মোহাম্মদের সাথে তর্ক বিতর্ক করা
কেন? এ
ছাড়া মোহাম্মদ বলেছেন- কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হলে সে গাজী
তো হবেই পরন্তু যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত দ্রব্য সামগ্রী গণিমতের ভাগ
হিসাবে পাওয়া যাবে, পাওয়া যাবে তাদের তরুণী স্ত্রী ও মা-বোনদেরকে
যাদের সাথে অবাধে যৌন ফুর্তি করা যাবে, আর যদি মারা যায় তাহলেও ক্ষতি
নেই- সোজা বেহেস্ত যেখানে অপেক্ষায় আছে ৭২ টা আয়তলোচণা চিরযৌবনা হুর
যাদের সাথে বেহেস্তে প্রবেশ করা মাত্রই অবাধে যৌনানন্দ করা যাবে যার কোন
শেষ নেই। তৎকালীন আধা
সভ্য আরবদের কাছে এর চাইতে বড় প্রাপ্তি আর কি থাকতে পারে। সুতরাং
মোহাম্মদের কথায় চললে বা মোহাম্মদকে বিশ্বাস করলে ইহজগত ও পরজগত উভয় জগতেই
লাভ। সুতরাং তার
বিরুদ্ধে যাওয়ার কি দরকার?
কুরাইশরা কেন মোহাম্মদের দলে ভেড়েনি তার বিশ্লেষণ করা
কঠিন নয়। তৎকালীন মক্কার
কোরাইশদের সমাজব্যবস্থা, ঐতিহ্য, আচার আচরন, স্বভাব চরিত্র এসব বিশ্লেষণ করলেই সহজে
তা বোঝা যায়।কোরাইশ
বংশের
মানুষ হলেও মোহাম্মদ ছিলেন এতিম ও হতদরিদ্র একজন মানুষ যিনি পরবর্তী জীবনে ধণী
বিধবা বিবি খাদিজাকে বিয়ে করে স্বচ্ছল হন। স্বচ্ছল অর্থাৎ
মোহাম্মদ
তার স্ত্রীর সম্পদের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকেন। স্ত্রীর ওপর
নির্ভর
করে বেঁচে থাকা মানুষকে সেই সময়কার আরব সমাজে মোটেও সম্মান ও মর্যাদার
দৃষ্টিতে দেখা হতো না।বর্তমান
সমাজেও এ ধরণের মানুষকে কেউ সম্মান ও মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখে না।সে সময়ে আরব
সমাজে পৌরুষত্ব ও বীরত্বকে মর্যাদার প্রধান বৈশিষ্ট্য বলে মনে করা হতো। যারা
যুদ্ধক্ষেত্রে পৌরুষত্ব ও বীরত্ব প্রদর্শন করতে পারত তাদের নামে তখনকার সময়ের কবিরা
কবিতা রচনা করত যা মানুষের মুখে মুখে ফিরত। চাচা আবু
তালিবের পোষ্য হিসাবে কিশোর ও যুবক মোহাম্মদ দুম্বা, উট ও মেষ
চরাতেন। কুরাইশদের
কখনো কোন যুদ্ধে অথবা কোন ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় মোহাম্মদ তার রণকৌশল বা শৌর্য বীর্যের
পরিচয় দিতে পারেন
নি। এমনকি তিনি
যখন রাজশক্তির অধিকারী হন, বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন ও নেতৃত্ব দেন, তখনও দেখা
যায় মোহাম্মদ তেমন কোন শৌর্য বীর্যের পরিচয় দিতে পারেন নি। এমন কোন নজির
হাদিস বা তাঁর জীবনীতে নেই যে তিনি যুদ্ধ ক্ষেত্রে কোন শত্রুকে কখনো পরাজিত
করে হত্যা করতে পেরেছেন। সেই তখনকার সময়ে সৈন্যবাহিনীর নেতাও সামনে থেকে শত্রুদের সাথে
যুদ্ধ করত ও শত্রু
সৈন্যকে পরাজিত করে তাদেরকে হত্যা করত। মোহাম্মদ অনেকগুলো যুদ্ধেই সরাসরি
অংশগ্রহন করেছেন ও নেতৃত্ব দিয়েছেন কিন্তু দেখা যায় তিনি কখনই সামনের
কাতারে দাড়িয়ে যুদ্ধ করেন নি, বরং শক্ত লৌহবর্ম পরে পিছনের কাতারে
থাকতেন। তা সত্ত্বেও
বিভিন্ন কায়দায় বিভিন্ন হাদিসে মোহাম্মদের শৌর্য বীর্যের পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা
করা হলেও একটু ভাল করে সেগুলো পড়লে বোঝা যাবে যে তা আদৌ শৌর্য বীর্যের পরিচায়ক
কোন ঘটনা ছিল না। তারপরেও
হাদিস লেখকেরা
তার শৌর্যের বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করেছেন কারন তারা তাদের ওস্তাদের এ ধরণের গুণ
যে নেই তা মেনে নিতে পারেন নি। যাহোক, এ ধরণের একজন হত দরিদ্র, শৌর্য-বীর্যবিহীন, স্ত্রীর ওপর
নির্ভরশীল মানুষকে অহংকারী, দাম্ভিক ও শৌর্যবীর্যের পুজারী কুরাইশরা তাদের ধর্মিয় বা রাজনৈতিক
নেতা- কোনভাবেই মেনে নিতে রাজী ছিল না। একারনেই মোহাম্মদ এতবার কুরাইশদের দেব
দেবীর নামে কসম
কাটার পরেও তারা মোহাম্মদকে তাদের ধর্মগুরু বা রাজনৈতিক নেতা -কোনভাবেই মেনে নেয় নি।
এ গেল আল্লাহর জড় বস্তকে কসম কাটার কথা। অথচ মোহাম্মদ
অন্যকে জড় বস্তু তো বটেই, এমনকি তাদের পিতার নামেও কসম কাটতে নিষেধ করছেন। যেমন নিচের
হাদিস-
ইবনে
উমর বর্নিত, ওমর ইবনে খাত্তাব যখন একদল উট আরোহীদের
সাথে কোথাও যাচ্ছিলেন তার সাথে আল্লার রসুলের সাথে দেখা হলো। ওমর তার পিতার
নামে কসম কাটলেন কোন একটা ব্যপারে। তখন নবী তাকে
বললেন- ওহে, আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের পিতার নামে কসম কাটতে নিষেধ করেছেন,
তাই
যে কেউ কখনো কোন কসম কাটতে চায় সে যেন আল্লাহর নামে কসম কাটে অথবা
চুপ থাকে। সহী বুখারী,
বই-৭৮,
হাদিস-৬৪১
তার মানে কেউ কসম কাটলেও সে যেন আল্লাহর নামে কসম কাটে। যেমন
মোহাম্মদ বার বার আল্লাহর নামে কসম কাটতেন, তার কিছু নমুনা-
আনাস
বিন মালিক বর্ণিত, একজন আনসার মহিলা তার কতকগুলো
বাচ্চাসহ নবীর নিকট আসল এবং নবী তাকে বললেন, আল্লাহর কসম
যার হাতে আমার প্রাণ, তুমি হলে আমার সবচাইতে পছন্দের
মানুষদের একজন, এবং তিনি এ কথাগুলো
তিনবার উচ্চারণ করলেন। সহী বুখারী, বই-৭৮,
হাদিস-৬৪০আনাস বিন মালিক বর্ণিত, আমি আল্লাহর নবীকে বলতে শুনেছি, আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে সিজদা কর ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন কর, কারন, আল্লাহর কসম যার হাতে আমার প্রাণ, যখন তোমরা তা কর আমি আমার পিছনের সবকিছু দেখতে পাই। সহী বুখারী, বই-৭৮, হাদিস-৬৩৯
আবু বকর ইবনে আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন- আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাহ বলেন, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, তোমরা দেব দেবীর নামে ও তোমাদের বাপ-দাদাদের নামে শপথ করিও না। সহী মুসলিম, বই-১৫, হাদিস-৪০৪৩
সবগুলো হাদিস কিতাব থেকে দেখা যাবে মোহাম্মদ
বহুবার, বার
বার এভাবে আল্লাহর নামে কসম কাটছেন।তার এভাবে কসম কাটার অভ্যাসটা দেখা যাচ্ছে আল্লাহর
চরিত্রেও আছে। যেখানে
মোহাম্মদ তাঁর উম্মতদেরকে তাদের বাপের নামে কসম কাটতে নিষেধ, দেব দেবী বা
বাপ-দাদাদের নামে
কসম কাটতে নিষেধ করে তার পরিবর্তে আল্লাহর নামে কসম কাটতে উপদেশ দিচ্ছেন এবং
নিজে বার বার আল্লাহর নামে কসম কাটছেন সেখানে আল্লাহ নিজে স্বয়ং কসম
কাটছেন কতিপয় জড়বস্তুর নামে। যেন চন্দ্র, সূর্য, তারকা, বায়ূ,
ফেরেস্তা
আল্লাহর প্রভু, কি তাজ্জব কারবার! এটা আসলে আল্লাহর দোষ না। প্রাক
ইসলামিক যুগে আরব প্যগানরা তাদের দেব দেবীদের নামে কসম কাটত। তাদের দেব
দেবীগুলোও ছিল চন্দ্র, সূর্য, তারকা ইত্যাদির নামে। মোহাম্মদ সেই পৌত্তলিকদের
ঐতিহ্য মোতাবেকই বার বার কসম কাটতেন যার প্রভাব তার কল্পিত আল্লাহর ওপর
পড়েছে। কোরানের
আল্লাহ যেহেতু মোহাম্মদের মতই বার বার কসম কাটছে, তাও আবার জড় বস্তুর নামে,
সেক্ষেত্রে
কোরানে বর্ণিত মোহাম্মদের আল্লাহ প্রকৃতই সর্বশক্তিমান স্রষ্টা কি না সে ব্যপারে ঘোরতর
সন্দেহ থেকেই যায়।কারণ আল্লাহর
এ ধরনের জড় বস্তুর নামে করা কসমের সোজা অর্থ দাড়ায় যে আল্লাহর কাছে
চাঁদ, সূর্য,
বায়ূ,
ফেরেস্তা
এরা সবাই তার চেয়ে বেশী স্বর্গীয় ও ক্ষমতাশালী।
শুধু এখানেই শেষ নয়। মোহাম্মদ কোন প্রতিজ্ঞা
করলেও তা যে কোন সময় ভংগ করতে পারতেন, মোহাম্মদের আল্লাহ এতটাই মোহাম্মদকে
পক্ষপাতীত্ব করেছেন যে, মোহাম্মদ কোন ব্যাপারে কারো কাছে প্রতিজ্ঞা
করলেও তা রক্ষা বা পালন করার দায় তার ছিল না। আর তিনি তার
উম্মতদেরকেও
প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। যেমন-
আবু
হুরায়রা হতে বর্ণিত- তিনি রাসুলুল্লাহর কাছ থেকে বলতে
শুনেছেন, যে কোন শপথ গ্রহণ করে অথচ পরে অন্য বস্তুকে উত্তম মনে করে, তবে সে যেন
সেই উত্তম বস্তকেই গ্রহণ করে।সহী মুসলিম,
বই-১৫,
হাদিস-৪০৫৩উবায়দুল্লাহ ইবনে মুয়ায বর্ণনা করেছেন- আদী ইবনে হাতেম বলেন, রাসুলুল্লাহ বলেছেন যে ব্যক্তি কসম করার পর তার বিপরীত বস্তুকে উত্তম মনে করে তখন যেন সে সেই উত্তম বস্তকেই গ্রহণ করে ও কসম বর্জন করে।সহী মুসলিম, বই-১৫,হাদিস-৪০৫৭
সমাজে কোন ব্যক্তি যদি বার বার প্রতিজ্ঞা করে তা ভঙ্গ
করে তাকে লোকজন আর বিশ্বাস করে না বা তাকে লোকজন ঠক বা প্রতারক বলেই গণ্য
করে। আমাদের
মহানবী সেটা নিজে যেমন করেছেন তেমনি তিনি তাঁর সাহাবীদেরকেও করতে নির্দেশ
করেছেন। এখানে বলা
হচ্ছে- যে ব্যাক্তি কসম করার পর তার বিপরীত বস্তুকে উত্তম মনে করে তখন সে যেন সেই উত্তম বস্তকেই
গ্রহণ করে।তার মানে কেউ
কোন কিছুর কসম কাটার পরে তার মনের পরিবর্তন ঘটলে সে সাথে সাথেই সেটা
পরিবর্তন করতে পারবে। কসম
কাটার বিষয়টি আসলে কি? কসম কাটা হলো কোন বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করা। যেমন- এক
ব্যক্তি প্রতিজ্ঞা করল সে কিছু মানুষকে দান খয়রাত করবে। পরে চিন্তা
করে দেখল এভাবে দান খয়রাত করলে তার সম্পদ কমে যাবে এবং এটাকেই সে উত্তম মনে করল। তখন
মোহাম্মদের বিধাণ অনুযায়ী সে এ প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে বাধ্য নয়,
আর এটা
না করাটা তার জন্য কোন অনৈতিক ব্যপারও নয়। আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা নানা বিষয়ে জনগণের কাছে প্রতিজ্ঞা
করে থাকে।পরে দেখা
যায় ক্ষমতায় যাওয়ার পর সে সব প্রতিজ্ঞা তারা ভুলে যায়। মহানবীর
বিধাণ মোতাবেক এটা কেন অনৈতিক কাজ নয়। কারন প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতেই হবে তেমন
কোন বাধ্যবাধকতা আল্লাহর বিধাণে নেই। আর যেটা আল্লাহর বিধাণে নেই বলে মানুষ জানে তা রক্ষা পালন করার
কোন আবশ্যকতাও থাকতে পারে না। বিষয়টা ধর্মভীরু নেতারা বোধ হয় ভালমতোই জানে সে কারনে
দেখা
যায় প্রতিজ্ঞা পূরন না করার পরেও তাদের মধ্যে কোন অন্যায়বোধ কাজ করে না। আমাদের
মহানবীর প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের একটা বড় উদাহরণ হলো মক্কা বিজয়ের পর মক্কা
বাসীদের দেয়া নিরাপত্তার আশ্বাস। কথিত আছে মক্কা বিজয়ের পর তিনি একটি
জমায়েতে এই বলে সবাইকে নির্দেশ দেন যে – কাউকে বিনা কারনে খুন করা যাবে না,
কারও
সম্পদ লুঠ করা যাবে না , কারও বাড়ীঘর বাগান ধ্বংস করা যাবে না। মোহাম্মদের এ
ধরণের ঘোষণাকে ইসলামী পন্ডিতরা খুব উচ্চকন্ঠে এই বলে প্রশংসা করে
থাকে যে হাতে পাওয়ার পরেও তিনি কারও ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ করেন নি বরং তিনি
সবাইকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন।কারও প্রতি জুলুম অত্যাচার করেন নি। অথচ এটা যে
মোহাম্মদের একটা স্রেফ রাজনৈতিক কূট চাল ছিল তা তারা উল্লেখ করতে
ভুলে যান। মাত্র
ছয়মাসও যায়নি – এর পরেই মোহাম্মদ তার আসল চেহারায় আবির্ভূত হন। আল্লাহর ওহীর
নামে মোহাম্মদ কি বলছেন তা দেখা যাক-
সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে। সূরা- আত তাওবাহ, ০৯:০১
অর্থাৎ মোহাম্মদ এখন শক্তিশালী, অমুসলিমদের
সাথে পূর্বে সম্পাদিত শান্তিচুক্তি তার আর দরকার নেই অতএব তা এখন এক তরফা
ভাবে বাতিল। যে
কোন ধরণের চুক্তির অর্থ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া, আর এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে
(অবশ্যই নিজের অনুকুলে) এ ধরণের প্রতিজ্ঞা পালনের কোন দায়ও তাই নেই মোহাম্মদের।এটা যে
অনৈতিক কোন কাজ নয় তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এটাকে আল্লাহর ওহীর নামে বিধিবদ্ধ করা
হচ্ছে। কোরানের
আল্লাহ
তাই কোন নৈতিকতার ধার ধারে না। এ আল্লাহ কোন রকম নৈতিকতার ধার তো ধারেই না,
পরন্তু
প্রচন্ড ক্রুদ্ধ, নিষ্ঠূর ও রক্তলোলুপ এক আল্লাহ যার হুংকার শোনা
যাচ্ছে এর পরের আয়াতগুলোতেই-
তবে
যে মুশরিকদের সাথে তোমরা চুক্তি বদ্ধ, অতপরঃ
যারা
তোমাদের ব্যাপারে কোন ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও
করেনি, তাদের সাথে কৃত চুক্তিকে তাদের দেয়া মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ
কর। অবশ্যই
আল্লাহ সাবধানীদের পছন্দ করেন। সূরা- আত
তাওবাহ, ০৯:০৪
উপরোক্ত আয়াত পড়লে মনে হবে আল্লাহ খুব ন্যায়
পরায়ণ, প্রতিজ্ঞা
ভঙ্গ করতে তিনি অনিচ্ছুক। চুক্তির মেয়াদ পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু আসলে
বিষয়টি মোটেই তা নয় তা কিন্তু পূর্বোক্ত ০৯:০১ আয়াতেই পরিষ্কার। সেখানে
পরিষ্কার বলা হচ্ছে- সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ ও তাঁর
রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে
তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে। আল্লাহ চুক্তি বাতিল করে দিলেন কিন্তু পরের আয়াতেই বললেন- তাদের সাথে
কৃত চুক্তিকে তাদের দেয়া মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ কর। কিন্তু আসলে
এটা যে একটা ভাওতাবাজি তা বোঝা যাচ্ছে নীচের আয়াতে-
অতঃপর
নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের
পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক
ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে
থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম
করে,
যাকাত
আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয়
আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা- আত
তাওবাহ, ০৯:০৫
অর্থাৎ আর কোন চুক্তির ধার ধারতে আল্লাহ
তথা
মোহাম্মদ অনিচ্ছুক। উপরোক্ত
আয়াতগুলো পড়লে বোঝা যাচ্ছে মোহাম্মদ খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সিদ্ধান্ত
নিতে তাড়াহুড়া করেছেন যে কারনে আয়াতগুলোর বক্তব্য দারুনরকম গোলমেলে ও
স্ববিরোধী।
প্রথমে
আল্লাহ বলছে- সম্পর্কচ্ছেদ করা হল, এর পরেই
বলছে- চুক্তিকে তাদের দেয়া
মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ কর। আবার এর পর পরই বলছে- অতঃপর
নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও,
তাদের
বন্দী কর এবং অবরোধ কর। সম্পর্কচ্ছেদ
করার পর চুক্তির মেয়াদ পূরণ করতে বলা অর্থহীন। আবার তার
পরেই যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই মুশরিকদের হত্যা করতে আদেশ করার
অর্থই হলো পূর্বোক্ত সম্পর্কচ্ছেদ করাকে সমর্থন করা। সুতরাং পুরো
বিষয়টিই
স্ববিরোধী , গোলমেলে। এর কারনও
আছে- তখন দৃশ্যপট এতদ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছিল যে তখন মোহাম্মদ আসলে কোন্ টা করবেন এ
ব্যপারে দোটানার মধ্যে ছিলেন। মাত্র আড়াই বছর আগে মোহাম্মদ মক্কাবাসীদের সাথে শান্তি
চুক্তি
করেছেন যাকে হুদায়বিয়ার সন্ধি বলা হয়, এর পরেই তিনি এতটাই শক্তিশালী
হয়ে গেছেন যে মক্কা বিজয়ের মত ক্ষমতা তার হাতে।ওদিকে তার বয়স বেড়ে যাচ্ছে,
তখন
বয়স ষাট পেরিয়ে গেছে, আরব রাজ্য প্রতিষ্ঠার তা যে স্বপ্ন তা অপূরণ রয়ে গেছে। তাই তার
দরকার অতি সত্ত্বর মক্কা দখল করা।আর তাই সামান্য একটা অজুহাতকে কেন্দ্র করে তিনি দশ বছর মেয়াদের
করা চুক্তির মাত্র
আড়াই বছর পর তার বাহিনী সহ মক্কায় অভিযান পরিচালনা করেন। আর এ অভিযানের
প্রেক্ষাপটেই এসব আল্লাহর বানী ও তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার কাহিনী।
শুধু তাই নয়, যে মোহাম্মদ মক্কা বিজয়ের পর শান্তির কথা বলেছিলেন তার কন্ঠ থেকে ঝরে পড়ে হুংকার-
আমি
আরব ভূমি থেকে ইহুদি ও খৃষ্টানদেরকে উচ্ছেদ করব, মুসলিম ছাড়া
এখানে আর কেউ থাকবে না। সহী মুসলিম, হাদিস-৪৩৬৬শুধু তাই নয়, যে মোহাম্মদ মক্কা বিজয়ের পর শান্তির কথা বলেছিলেন তার কন্ঠ থেকে ঝরে পড়ে হুংকার-
এ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ থেকে যে বিষয়টি প্রনিধাণযোগ্য
তা হলো- ইসলামে সভ্য সমাজে প্রচলিত রীতি নীতির কোন মূল্য নেই, একই সাথে
মুসলমানদের সাথে কোন রকম চুক্তি করা বিপজ্জনক ও তারা বিশ্বাসঘাতক,
কারন
তারা যে কোন সময়েই সে চুক্তি ভঙ্গ করার অজুহাত খুজে নিয়ে তা
ভঙ্গ করতে পারে ও বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে এবং এর জন্য তারা কোন অনুতাপ তো
করবেই না বরং এ ভেবে উল্লসিত হবে যে এটা তো আল্লাহ ও তার রসুলই তাদেরকে
শিখিয়ে গেছেন। বর্তমানে
পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশে আমেরিকা নাকি অত্যাচার, নির্যাতন,
দখলদারিত্ব
কায়েম করেছে। এতে
মুমিন বান্দারা কেন যে এত শোরগোল করে তা বোঝা মুশকিল। তাদের তো বরং
উল্লসিত হওয়া উচিত এ ভেবে যে এসব নাসারা ইহুদীরা আল্লাহ ও তার রসুলের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে
এসব করছে। ইসলাম
শিক্ষা দিয়েছে-বিশ্বাসঘাতকতা করতে , আমেরিকানরা সেটারই চর্চা করছে, এতে তো
প্রকারান্তরে ইসলামের শিক্ষাকেই সম্প্রসারিত করা হচ্ছে, এতে কি
মুসলমানদের
উল্লাস প্রকাশ করা উচিত নয়? মুসলমানদের মনের মধ্যে যে গোপণ দুরভিসন্ধি আছে, কোরান হাদিস
পড়ে অমুসলিমরা সেসব জেনে যদি এখন সবাই একজোট হয়ে, গোটা দুনিয়া
থেকে মোহাম্মদের দেখানো পথে মুসলমানদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য উঠে
পড়ে লাগে তাহলে তাদেরকে কি দোষ দেয়া যায়?
মক্কার কুরাইশদের পালন করা আরও একটি প্রথা মোহাম্মদ
প্রাক ইসলামী যুগে পালন করতেন। তা হলো- আশুরার দিন অর্থাৎ মহররম
মাসের
দশ তারিখে তিনি রোজা রাখতেন। যেমন -
আয়শা
বর্নিত-আশুরার দিন (মহররম মাসের দশ তারিখে) ইসলাম পূর্ব
অন্ধকার যুগের কুরাইশরা রোজা রাখত। মোহাম্মদ
নিজেও এদিন রোজা রাখতেন। যখন তিনি
মদিনায় হিযরত করলেন, তিনি তখনও এ দিনে রোজা রাখতেন ও সকল
মুসলমানকে
তা রাখতে নির্দেশ দিলেন। যখন রমজান মাসের রোজা চালু হলো
তখন তিনি এ দিনের রোজাকে ঐচ্ছিক করে দিলেন-তারা ইচ্ছে করলে রোজা
থাকতে পারত, না হলে দরকার নাই। সহী বুখারী,
বই-৫৮,
হাদিস-১৭২
এখানে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে-কুরাইশরা কাকে
সন্তুষ্ট করতে রোজা রাখত? নিশ্চয়ই তাদের নিজেদের আল্লাহ যাকে তারা প্রধান দেবতা
মনে করত, ইসলামের আল্লাহ কে। মোহাম্মদ ইসলাম পূর্ব যুগে ঠিক একই রকম ভাবে এ রোজা রাখতেন ও বলা
বাহুল্য তিনি সেটা করতেন কুরাইশদের আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য।কারন এ রোজা উপলক্ষ্যে
তিনি কুরইশদের দেব দেবীর মূর্তি ভর্তি কাবা ঘরে গিয়েই তার মুনাজাত করতেন। তিনি তার
নিজস্ব ইসলামের আল্লাহকে আবিষ্কার করেন যখন ৪০ বছর বয়েসে নবুয়ত্ব পান তখন। আর এ আল্লাহকে
আবিষ্কার করার পরও তিনি কুরাইশদের প্রথা দশ বছরেরও বেশী কাল ধরে বাধ্যতামূলক রাখেন,
কারন নবুয়ত্ব পাওয়ার দশ বছর পরেই তিনি মদিণাতে হিজরত করেন। নবুয়ত্ব পাওয়ার পরও দশ
বছরের অধিক কাল ধরে তিনি মূর্তি বা পুতুল ভর্তি কাবা ঘরে গিয়েই উপাসণা করতেন। এতে করে কি
তিনি কুরাইশদের আল্লাহকেই উপাসণা করতেন না ?
************************************************************************
পর্ব-৪---মোহাম্মদ ও ইসলাম,
মানুষ মোহাম্মদ কেমন ছিলেন, তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন ছিল সেটা জানা গেলে ইসলামের চরিত্র
বোঝা সহজ হবে। আব্দুল্লাহর পূত্র মোহাম্মদ তাঁর জন্মের ছয়মাস
আগেই তাঁর পিতাকে হারান অর্থাৎ এতিম হিসাবে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর জন্মের কিছু পরেই হালিমা নামের এক ধাত্রী তাঁকে নিয়ে যায় দুধমাতা হিসাবে
লালন পালনের জন্য। তার বয়স যখন ৬ তখন তাঁর মা আমেনা মারা যায়
এবং এতিম মোহাম্মদকে তাঁর পিতামহ মুত্তালিব লালন পালন করতে থাকেন কিন্তু কিছুদিন যেতে
না যেতেই মুত্তালিবও মারা যায় তখন এতিম ও অসহায় মোহাম্মদ তাঁর চাচা আবু তালিবের কাছে
লালিত পালিত হতে থাকেন। তৎকালীন আরব ঐতিহ্য অনুযায়ী এতিম মোহাম্মদ উত্তরাধিকার সূত্রে
কোন সম্পদের অধিকারী ছিলেন না, ফলত: একজন দীন হীন
হত দরিদ্র এতিম বালক হিসাবে তিনি চাচা আবু তালিবের কাছে থাকতেন ও তার উট দুম্বা চরাতেন
যার মাধ্যমে তার অন্ন বস্ত্র ও বাসস্থানের সংস্থান হতো। সহজেই বোঝা যায় যে মোহাম্মদ প্রকৃত পক্ষে কখনোই স্বাভাবিক কোন শিশুর মত আদর ভালবাসাপূর্ন
পরিবেশে লালিত পালিত হন নি। আবু তালিব তাঁর চাচা
কুরাইশ বংশের সম্ভ্রান্ত বংশের একজন গণ্যমান্য ব্যাক্তি হলেও ছিলেন গরীব ও তার অনেকগুলো
বাচ্চা কাচ্চা ছিল, এ ধরনের জনবহুল গরীব পরিবারে একজন এতিম বালক
কিভাবে নিতান্ত অবহেলায় মানুষ হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। সুতরাং খুব ছোট বেলা থেকে অনাদর অবহেলায় লালিত পালিত মোহাম্মদের মনের মধ্যে এক
ধরনের হীনমন্যতাবোধ জন্ম নেয় যা তাকে পরে পরিণত করে প্রচন্ড একগুয়ে, এক রোখা ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মানুষে । একই সাথে জন্মগতভাবে মোহাম্মদ ছিলেন ভীষণ বুদ্ধিমান ও মেধাবী। ইতিহাসের পাতা খুললেই দেখা যায়, এ ধরনের মানুষগুলো
জীবনের এক পর্যায়ে দারুন সফলতা পায় তবে তাদের সফলতার কারনে প্রায়ই সমাজকে অনেক ভুগতে
হয়।
এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো- জার্মানীর এডলফ হিটলার। হিটলারের জীবনী থেকে জানা যায়, অষ্ট্রিয়ার
এক গ্রামে খুব গরীব ঘরে তার জন্ম যদিও তাদের পরিবারের অবস্থা পরে একটু ভাল হয়।তবে তার পিতা ছিল ভীষণ রাগী মানুষ যে কিনা হিটলারকে সামান্য কারনে প্রহার করত। দেখা যায়, হিটলারের বাল্য জীবন খুব সুখকর ছিল না যা
তাকে বেশ একগুয়ে করে তোলে। স্কুলে পড়াকালীন সময়ে
তার এ একগুয়েমীর কারনে তার তেমন কোন ব্ন্ধু ছিল না। পরবর্তী জীবনে তার এ একগুয়েমীর কারনেই সারা দুনিয়ার মানব জাতিকে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির
শিকার হতে হয়। এক গুয়েমীর কারনেই তার মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদী
চিন্তা ভাবনার উদ্রেক ঘটে।তারপরেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
আমাদেরকে কিছুটা হলেও উপকার করেছে তা হলো - তখন যুদ্ধের প্রয়োজনেই নানা রকম প্রযুক্তির
খুব দ্রুত আবিষ্কার হয় যার ফল আমরা আজকে ভোগ করছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ না হলে আজকে যে প্রযুক্তির যুগে আমরা বাস করি তা করতে পারতাম
কিনা সন্দেহ। মোহাম্মদের জীবনী অনেকটা হিটলারের মতই। তার বাল্য ও যৌবনে খুব বেশী বন্ধুবান্ধব তার ছিল না। একা একা নির্জনে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। তখনই তার মনে জাগ্রত হয় আরব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার। এ চিন্তা থেকেই তার ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা। কারন তখন আধুনিক যুগের মত জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশের পরিবেশ ছিল না। বিংশ শতাব্দীর পরিবেশ যদি হিটলার না পেত, তার যদি জন্ম হতো মধ্যযুগে তাহলে তার যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আমরা দেখতে পাই তাতে
করে তার পক্ষে একজন নবী হওয়া মোটেও কষ্টকর ছিল না। মোহাম্মদ যদি মধ্যযুগে আবির্ভুত না হয়ে বিংশ শতাব্দীতে আবির্ভূত হতেন তাহলে তাকে
একজন সফল আরব জাতীয়তাবাদী নেতা হিসাবে দেখতে পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। ইসলাম থেকে শুধুমাত্র ধর্মীয় বিষয়টা যদি বাদ দেয়া যায় তাহলে এটা একটা উগ্র
আরব জাতীয়তাবাদী মতবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়।
শৈশব কৈশোরে তিনি যে কতটা অসহায় ছিলেন তার
দীর্ঘশ্বাস কিন্তু কোরানেও পাওয়া যায়। যেমন, আল্লাহর বানীর নামে তিনি বলছেন-
তিনি কি আপনাকে এতীমরূপে পাননি? অতঃপর তিনি
আশ্রয় দিয়েছেন।তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন।তিনি আপনাকে পেয়েছেন
নিঃস্ব, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন।সুতরাং আপনি এতীমের প্রতি কঠোর হবেন না। (সূরা আদ দোহা,৯৩: ০৬-১০)
এখানে দেখা যায়, পরিনত বয়েসে তাঁর মনের দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসছে। পিতা মাতা হারা গরীব এতিম বালকের কোন সামাজিক মর্যাদা ছিল না সেই সময়ের আরব ভূমিতে। এসব এতিমরা ছিল মানুষের করুণার পাত্র। সামাজিক এ অবস্থাই
কিশোর মোহাম্মদের মনে বিরাট প্রভাব ফেলে। অবচেতন মনে তার মারাত্মক
জেদ জমতে থাকে। জন্মের আগেই পিতা হারা, জন্মের পর থেকে ৫ বছর কেটেছে এক দুধমাতার কাছে, তার পর মায়ের সান্নিদ্ধে আসতে না আসতেই তারও মৃত্যু ঘটেছে। বাবা-মা এর স্নেহ আদর বঞ্চিত মোহাম্মদের হৃদয় সেই কৈশোর বয়েস থেকেই কঠোর হতে
কঠোরতর হতে থাকে, যার ওপর প্রভাব পড়ে আবার মরুময় আরবের কঠোরতার। সব মিলে কৈশোর থেকেই মোহাম্মদ একটা পারমাণবিক বোমার মত বেড়ে উঠতে থাকেন ভবিষ্যতে
বিস্ফোরণের অপেক্ষায়, ঠিক যেমন ঘটেছিল জার্মানীর
হিটলারের বেলাতে। তিনি যা কিছু স্নেহ মমতা পান তাঁর পিতামহ
আব্দুল মুত্তালিবের কাছ থেকে কিন্তু তিনিও অতি দ্রুত তাকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমান।যখন তার বোঝার মত বয়েস হয়েছে তখন স্নেহ-মমতার কাঙাল মোহাম্মদ বুঝতে পারেন যে
তার বিধবা মাতা ইচ্ছা করলে তাকে দুধমাতার কাছে না দিলেও পারত কারন তিনিই ছিলেন তার
একমাত্র সন্তান। অথচ তাকে কোন রকম স্নেহ মমতা না দিয়েই সে
হঠাৎ মরে যায় যা
তার কাছে ছিল একটা বিরাট আঘাত যা তিনি পরিনত বয়েসে বুঝতে পারেন। আর তখন থেকেই তার অবচেতন মনে তাঁর মায়ে প্রতি বিদ্বেষ বাড়তে থাকে যা একটা পূরোপূরি
সাইকোলজিক্যাল ব্যপার যার তেমন কোন বহি:প্রকাশ থাকে না। মায়ের প্রতি তার এ বিদ্বেষ অবচেতন মনে এতটাই শিকড় গেড়েছিল যার প্রমান পাওয়া
যাবে একটি হাদিসে। এ হাদিসটি বলা হয়েছিল মোহাম্মদের মক্কা বিজয়ের
পর। মক্কা বিজয়ের পর পরই তিনি তাঁর মায়ের কবর জিয়ারত করতে যান
আর তখনই এ হাদিসটির সূত্রপাত ঘটে-
আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, আমি নবীকে বলতে শুনেছি-
আমি আমার মায়ের জন্য ক্ষমা ভিক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম কিন্তু তিনি
তা মঞ্জুর করেন নি। আমি তার কবর জিয়ারত করার অনুমতি চেয়েছিলাম
এবং তিনি তা মঞ্জুর করেছেন। (সহি মুসলিম,
বই-৪, হাদিস-২১২৯)
কি এমন অন্যায় তাঁর মা তার সাথে করেছিল যে
এমন কি আল্লাহর কাছে স্বয়ং নবীর প্রার্থনাও কাজে আসে নি? লক্ষ্যনীয়, ইসলাম আবির্ভাবের অন্তত ৩৪ বছর আগে আমেনা
মারা গেছে, যে কারনে তার পক্ষে ইসলাম কবুল করা সম্ভবও
ছিল না আর তার জন্য আমেনা দায়ীও নয়। সেক্ষেত্রে আল্লাহর
তো এমনিতেই তাকে ক্ষমা করে দেয়া উচিত, কেননা সে দ্বীনের
দাওয়াতই পায় নি। তাই নয় কি? অথচ নবীদের নবী, আল্লাহর দোস্ত যাকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ
দুনিয়াই সৃষ্টি করতেন না, তিনি স্বয়ং তাঁর মা
আমেনার জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করছেন অথচ আল্লাহ তা মঞ্জুর করলেন না, এটা কি অদ্ভুত শোনায় না ? এ থেকে এরকম ধারণা করা কি অমূলক হবে যে -আসলে আল্লাহ নয়, স্বয়ং দ্বীনের নবী নিজেই তাঁর মাকে ক্ষমা করেন নি। কারন? ঐ যে তাঁর অবচেতন মনে তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে
অভিযোগ যে সে ইচ্ছা করলে তাকে দুধমাতার কাছে পাঠিয়ে না দিলেও পারত, তাহলে তিনি স্নেহ ভালবাসার পরিবেশে সুন্দর মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে
পারতেন। আর সে কারনেই তার কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসে- আপনি এতীমের প্রতি
কঠোর হবেন না। কারন এতিম হওয়ার যে যন্ত্রনা তা তাঁর চাইতে
কেই বা বেশী বোঝে? ইসলামে যে এতিমদের নিয়ে এত বেশী কথা বার্তা
আছে তার কারন এটাই। মাঝে মাঝে তো মনে হয় মোহাম্মদ বোধ হয় মূলত:
এতিমদের জন্যই দুনিয়াতে ইসলামের প্রবর্তন করেছেন। উক্ত হাদিস থেকে আরও একটি প্রশ্ন করা যেতে পারে যে – তিনি তাঁর উম্মতের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থণা জানালে তাও মঞ্জুর হবে কি না?
অত্যন্ত দু:খের বিষয় নবী শ্রেষ্ট মোহাম্মদ সত্যি সত্যি জানেন
না যে তা মঞ্জুর হবে কি না, এমনই আমাদের দ্বীনের
নবীর মাহাত্ম। এমন কি তিনি নিজেও জানেন না যে তাঁর সাথে
আল্লাহ কি রকম আচরণ করবেন। শুনলে আশ্চর্য হতে
হয়, তাই না? কিন্তু আশ্চর্য হওয়ার
কিছু নেই, দেখা যাক নীচের আয়াত-
বলুন, আমি তো কোন নতুন রসূল নই। আমি জানি না, আমার ও তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে। আমি কেবল তারই অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি ওহী
করা হয়। আমি স্পষ্ট সতর্ক কারী বৈ নই। (সূরা-আল আহক্বাফ, ৪৬:০৯)
আল্লাহর সর্বশেষ নবী যার জন্য সারা জাহান
তৈরী হয়েছে, যিনি আল্লাহর প্রিয় দোস্ত, যাকে আল্লাহ নিজেই স্বয়ং পাঠিয়েছে দুনিয়াতে দ্বীনের শিক্ষা
দিতে সেই তিনি নিজেই জানেন না তাঁর সাথে আল্লাহ কি ব্যবহার করবে। অর্থাৎ তিনি নিশ্চিত
নন যে তাঁকেও বেহেস্তে যেতে দেয়া হবে কি না। হয়ত তাকেও দোজখে যেতে হতে পারে। আর আল্লাহ তাকে সেকথা
জানাতেও ভুলে গেছে। বড়ই ভুলোমনা দেখা যাচ্ছে আল্লাহকে। তো আল্লাহ প্ররিত পুরুষই যদি না জানেন তাঁর সাথে আল্লাহ কিরকম আচরণ করবে তাহলে
তাঁর উম্মতদের তো কোন কথাই নেই। এসব কিছু জানার পর
যদি দুনিয়ার সব মুসলমানকে কেয়ামতের মাঠে বিচারের পর আল্লাহ সোজা দোজখের আগুনে পাঠিয়ে
দেয়, তাহলে কিন্তু তারা মোহাম্মদকে দোষ দিতে পারবে
না। কারন উনি আগেই বলে খালাস যে তিনি কার সাথে আল্লাহ কি ব্যবহার
করবেন তা জানেন না, এমনকি নিজেও যে বেহেস্তে যাবেন সে ব্যপারেও
নিশ্চিত নন, কারন আল্লাহ সেটাও তাকে জানাতে ভুলে গেছেন।
তো তাঁর দ্বীনি শিক্ষার মাধ্যমে যে বেহেস্তের
টিকেট পাওয়া যাবে তার নিশ্চয়তা কোথায় সেখানে স্বয়ং শিক্ষকই পরীক্ষায় পাশ করার
ব্যপারে নিশ্চিত নন? অযোগ্য শিক্ষক তো তার ছাত্রদেরকে ভূল শিক্ষাই
দেবে নিশ্চিত। তাহলে ছাত্রদের কপালে যে নিশ্চিত ফেল নির্ধারিত
এটা কি বলার অপেক্ষা রাখে? যে শিক্ষক নিজের শিক্ষার
মান ও যোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত নয় তার শিক্ষা গ্রহণ করে পরীক্ষায় পাশ করাটাও নিশ্চিত
নয়। এ ধরণের অনিশ্চিত শিক্ষকের অনিশ্চিত শিক্ষা গ্রহণ করাটা বুদ্ধিমানের
কাজ কি না তা ভাবাটা বিশেষ জরুরী এই একবিংশ শতাব্দীতে। এমতাবস্থায়, মোহাম্মদসহ তাঁর কোটি কোটি উম্মত তথা ছাত্রকে
যদি আল্লাহ দোজখে পাঠিয়ে দেয় তখন একটা দেখার মত দৃশ্য হবে নির্ঘাত।এটা অনেকটা লিবিয়ায় গাদ্দাফির তার সৈন্যদেরকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে ফেলে রেখে পালিয়ে
যাওয়ার ঘটনার মত হতে পারে। আর এভাবে পালাতে গেলে
কি রকম অপমানকর মৃত্যূবরন করতে হয় তাতো গাদ্দাফি দেখিয়ে গেছে।আমরা জানি মোহাম্মদ নিজের ইচ্ছাতে কিছু করেন না, আল্লাহই তাকে দিকে সব কিছু করান, অথচ আল্লাহ
তাঁকে বলতে ভুলে গেছে যে তাঁর সাথে সে কি আচরণ করবে। অথচ একথা বলতে ভোলেনি যে গণিমতের মাল হিসাবে পাওয়া বন্দী নারীদের সাথে কিভাবে
সেক্স করতে হবে- বীর্য বাইরে ফেলতে হবে নাকি ভিতরে ফেলতে হবে, একথাও বলতে ভোলেনি যে যুদ্ধে প্রাপ্ত গণিমতের মালামাল থেকে এক
পঞ্চমাংশ পরিমান নবী ও তার স্ত্রীদের খোরপোশের জন্য রাখতে হবে।
খেয়াল করতে হবে উনি বলছেন- উনি শুধুই মাত্র
একজন সতর্ককারী। তো শুধু সতর্ককারী হলে তাকে যুদ্ধ করে ইসলাম
প্রচার করতে হয় কেন?কেন সাহাবীদেরকে বলতে হয়- যারা আল্লাহ ও
তার নবীকে বিশ্বাস করবে না তাদেরকে মেরে কেটে সাফ করে দিতে? তাদের স্ত্রীদেরকে বন্দী করে তাদের সাথে সেক্স করতে? শিশুদেরকে ধরে দাস হিসাবে ব্যবহার করতে? কেন তাঁকে অভিশাপ দিতে হয় অমুসলিমদেরকে? কেন তাঁকে একের পর এক বিয়ে করে যেতে হয়? তার অর্থ আল্লাহ নিজেই তার কথা পরিবর্তন করে ফেলেছে। তাহলে আল্লাহকেও হর হামেশা কথা পরিবর্তন করতে হয়? কি তাজ্জব কারবার। অথচ বলা হচ্ছে এই কোরান জগত সৃষ্টির ঠিক পরেই
লিখে লাওহে মাহফুজে সংরক্ষন করা আছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা
যাচ্ছে- হয় আল্লাহ না হয় জিব্রাইল না হয় খোদ মোহাম্মদ অবিরত লেখাগুলো মুছে ফেলে
নতুন করে লিখছে। ফাক তালে শয়তানও লিখে রেখে যাচ্ছে যা নাকি
আল্লাহ টের পাচ্ছে না।এর চাইতে উদ্ভট কথা কি আর হতে পারে? এর চাইতেও আজব খবর হলো- মনে হয় এ ধরণের অনেক আয়াত যে নাজিল হয়েছিল তা তিনি ভুলে
গেছিলেন এক সময়, আর মনে রাখাও কি সম্ভব যখন তাকে অহরহ যুদ্ধে
যেতে হয়, ১৩ টি স্ত্রীর মন যুগিয়ে চলতে হয়?
একজন পুরুষ একটা স্ত্রীকেই ঠিকমতো সামলাতে পারে না সেখানে ১৩
টি বউ তো বটেই তাছাড়াও ডজনখানে যৌন-দাসী। এতগুলো সামলানো কি
চাট্টিখানি কথা? আর সেকারনেই কিছুদিন পর আবার তিনি কে বা কারা
বেহেস্তে যাবে তা নিশ্চিত করে বলে দিয়েছিলেন, আর সেটা যে তিনি সেসব লোকদেরকে প্রলুব্ধ করার জন্য বলেছিলেন সেটা কি আর বলার অপেক্ষা
রাখে? দেখা যাক নীচের হাদিস-
সাইদ ইবনে যায়েদ বর্ণিত-আব্দুর রহমান ইবনে আল আখনাস বলেন যে তিনি যখন মসজিদে
ছিলেন তখন একজন লোক আলীর নাম উল্লেখ করল। তখন সাইদ ইবনে যায়েদ
উঠে দাড়ালেন এবং বললেন- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহর রসুল বলেছেন – দশ জন লোক বেহেস্তে যাবে, তাঁরা হলেন- নবী, আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী, তালহা, যুবায়ের, সা’দ ইবনে মালিক ও আব্দুর রহমান। যদি আমি বাদে দশম জনের
নাম বলতে পারতাম। লোকেরা তাকে জিজ্ঞেস করল- সেই ব্যাক্তি কে?
তিনি চুপ রইলেন। তারা আবার জিজ্ঞেস
করল। তিনি উত্তর দিলেন- সেই ব্যক্তি সাইদ ইবনে যায়েদ। (সুনান আবু দাউদ, বই -৪০,
হাদিস-৪৬৩২)
আব্দুল রহমান বিন আওফ বলেন, নবী বলেছিলেন- আবু
বকর, ওমর , ওসমান, আলী, তালহা, আল যুবায়ের, আব্দুল রহমান
বিন আওফ, সাদ, সাইদ বিন যায়েদ ও ওবায়দা বিন যাররা বেহেস্তে যাবে। (তিরমিযী, হাদিস-৩৭৪৭)
স্নেহ ভালবাসা বঞ্চিত মোহাম্মদ স্নেহ ও ভালবাসার
কাঙাল ছিলেন। কিন্তু তা না পাওয়াতে তার হৃদয় হয়ে রুক্ষ
কঠিন। তার হৃদয় যে এত কঠিন ও নির্মম হয়ে উঠেছিল ভিতরে ভিতরে তা যতক্ষন
না তিনি ক্ষমতা হাতে পেয়েছেন ততক্ষন বোঝা যায় নি। তিনি তৎকালীন আরব প্রথা
অনুযায়ী কোন বীর পুরুষ ছিলেন না। কোন রকম অস্ত্র বিদ্যায়
তার পারদর্শীতা ছিল না। ফলে তখন যুদ্ধ বিদ্যা সংক্রান্ত বা অন্য কোন
রকম ক্রীড়া প্রতিযোগীতার মাধ্যমেও তার পক্ষে যৌবনে কারও মন পাওয়া হয়ে ওঠেনি। অথচ যুবক মোহাম্মদ নারীর প্রতি দারুন আকর্ষণ অনুভব করতেন যা ছিল অন্য যে কোন আরব
যুবকের চাইতে বেশী। মোহাম্মদ যখন তার মিশনে সফলতা অর্জন করেন
তখন তার এ নারী প্রীতির বহু নমূনা দেখা গেছে ব্যপকভাবে। বিভিন্ন সূত্র মতে তার বিবাহিত স্ত্রীর সংখ্যা ১৩ এবং এ ছাড়াও অনেক দাসী ছিল। হাদিস কোরানের কোন সূত্র ছাড়াই যে কেউ এটা সহজে বুঝতে সক্ষম। তবে যারা ইসলামী পন্ডিত তাদের অবশ্য নানা যুক্তি আছে মোহাম্মদের এ নারী প্রীতির
ব্যপারে, যেমন-আল্লাহর নির্দেশে বা গোষ্ঠিগত সম্প্রীতি
স্থাপন এসব কারনে এসব বিয়ে হয়েছিল। খাদিজার মৃত্যুর পর
সওদাকে বিয়ে করাটাতে অন্যায় কিছু ছিল না। কিন্তু ৬ বছরের আয়শা
বা পালিত পূত্র বধূ জয়নাব ছাড়াও আরও অনেককে বিয়ে করার কি কারন ছিল?
আল্লাহর দোস্ত ও সর্বশেষ নবী হিসাবে যে ধরণের
ব্যাক্তির কল্পনা আমরা করে থাকি, এত সংখ্যক বিবাহ ও
দাসী সমৃদ্ধ মোহাম্মদের ব্যক্তিত্ব ঠিক তার সাথে মানান সই নয়। উদাহরণ হিসাবে তার পূর্ববর্তী নবী যীশু খৃষ্টের কথা বলা যেতে পারে যিনি জীবনে কোন
নারীকে স্পর্শ করেন নি। এমন কি তার পূর্ববর্তী উল্লেখযোগ্য নবীগণেরও
২/৩টির বেশী স্ত্রী ছিল না। যেমন ইব্রাহিমের ২টি,
মূসার ২ টি এরকম। একমাত্র ব্যতিক্রম
নবী সোলেমান তার নাকি ৭০০ পত্নী বা উপ-পত্নী ছিল। বোঝাই যাচ্ছে আমাদের মহানবী মোহাম্মদ নবী সোলেমানের পদাংক অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন
কিন্তু সময়ের অভাবে তা পারেন নি। বলাবাহুল্য,
আরবদেশের মানুষদের নারীপ্রীতি সর্বজন বিদিত। নারীদের প্রতি তাদের তীব্র আকর্ষণের এ অভ্যাস আজিও আরবরা ধরে রেখেছে। পেট্রো ডলারের কল্যাণে ধণী আরবরা প্রায়শ:ই তাদের দেশের বাইরে বিশেষ করে থাইল্যান্ড,
হংকং, পশ্চিমাদেশ সমূহতে
যায় যথেচ্ছ যৌনাচার করতে। আমাদের মহানবী যে কতটা
নারী আসক্ত ছিলেন তার কিছু নমুনা বিভিন্ন সূত্র থেকে উল্লেখ করা যেতে পারে-
আয়শা থেকে বর্ণিত- রোজা রাখা অবস্থায় নবী তার স্ত্রীদেরকে আলিঙ্গন ও চুমু
খেতেন এবং তাঁর অন্য যে কোন মানুষের চাইতে বেশী রিপু দমন করার ক্ষমতা ছিল। সহী বুখারী, বই-৩১, হাদিস-১৪৯
আয়শা বর্ণিত- রোজা রাখা অবস্থায় নবী আমাকে চুম্বন করতেন ও আমার জিহ্বা লেহন
করতেন। সুনান আবু দাউদ, বই-১৩,
হাদিস-২৩৮০
উক্ত হাদিস দুটি থেকে দেখা যাচ্ছে যখন তিনি
রোজা রাখতেন তখনও তিনি নারীর প্রতি আসক্তি অনুভব করতেন অথচ ইসলামে রোজার অর্থ হলো সিয়াম
সাধনা বা সংযম সাধনা। সকল রকম রিপুর তাড়না থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রন
করার জন্যই রোজার প্রচলন করা হয় আর বলা বাহুল্য নারীর প্রতি আসক্তিও সেই সংযম সাধনার
মধ্যে পড়ে, শুধুমাত্র খাবার ও পানীয় গ্রহণ থেকেই বিরত
থাকা নয়। নবী নিজে ইসলামের নামে তার উম্মতদেরকে সংযম সাধনার কথা বলছেন
অথচ নিজে কিন্তু তা পালন করতে ব্যর্থ। অর্থাৎ যখনই তিনি তার স্ত্রীদের
কাছে আসতেন তখনই তিনি অধৈর্য হয়ে পড়তেন ও যাকে সামনে পেতেন তাকেই জড়িয়ে ধরতেন,
গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে চুমু খেতেন, তাদের জিহ্বা চুষতেন। এর পরও যে আরও অগ্রসর
হতেন না সেটা কি আর জোর করে বলা যায় ?
কোন পুরুষ মানুষ তার উদ্ভিন্ন যৌবনা স্ত্রীকে
আলিঙ্গন করে গভীর চুম্বনে লিপ্ত হলে তাদের উভয়ে দেহের মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া ঘটে ও
ফলে কি ঘটে সেটা তো প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ সবাই জানে, আর এও জানে যে এর পর তারা কি কর্মে লিপ্ত হয়। তখন আর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না তাদের মধ্যে। সুতরাং হাদিসে যে বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে তাতে করে মোহাম্মদও যে নিয়ন্ত্রণ করতে
পারতেন সে ব্যপারে কি নিশ্চয়তা দেয়া যায় ? অথচ কি অদ্ভুত ব্যপার , একটা হাদিসে আয়শা
বলছে- মোহাম্মদের রিপু দমন করার ক্ষমতা অন্য যে কোন মানুষের চাইতে বেশী। এটা কি অনেকটা- ঠাকুর ঘরে কে, আমি কলা খাইনি- এর
মত একটা ঘটনা নয় ? যে ব্যাক্তি রোজা রাখা অবস্থায় স্ত্রীকে
কাছে পেলেই চুমাচাটি ও জিহ্বা লেহনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন
না, সেই ব্যাক্তি সম্পর্কে বলা হচ্ছে তার রিপু দমন ক্ষমতা ছিল অন্য
যে কোন মানুষের চাইতে বেশী। এটা যে আসলেই মোহাম্মদের
আসল স্বভাবকে গোপণ করার অপচেষ্টা মাত্র তা কি কারও বুঝতে বাকী থাকে? এখানে বোঝা যাচ্ছে- আয়শা সম্ভবত: আসল কথাই বলেছিল আর তা হলো
তখন মোহাম্মদ বাকী কাজও করতেন, সেটা করলে কিন্তু কোন
অন্যায়ও হতো না, স্রেফ আল্লাহর তরফ থেকে একটা আয়াত নাজিল
করে নিলেই হতো, এটা তো বিদিত যে আল্লাহ তার পেয়ারা নবীকে
অনেক অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়েছে যা সে সাধারন মানুষের জন্য দেয় নি, যেমন- নিজের জন্য যথেচ্ছ বিয়ে ও দাসী বাদি কিন্তু সাধারনের
জন্য মাত্র ৪টি, তার নিজের জন্য তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে যাকে
তাকে যখন তখন কাছে দুরে রাখতে পারেন কিন্তু সাধারন মানুষদের জন্য সব স্ত্রীদের সাথে
সমান ব্যবহার করতে হবে।
যাহোক, মনে হয় পরবর্তীতে হাদিস সংকলনকারীরা উক্ত হাদিসের সম্ভাব্য পরিণতির কথা বুঝতে
পেরে আসল বাক্যটাকে বাদ দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত একটা মনোমত বাক্য বসিয়ে দিয়েছে
কিন্তু তাতে মাছ ঢাকা পড়েনি , বরং কাঁচা হাতের কাজ
করতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেছে। শুধু এটাই নয় নিজের
রিপু দমন করতে না পেরেই অগত্যা তিনি আল্লাহর বানীর মাধ্যমে রমজান মাসে রোজার সময় রাতের
বেলাতে স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের নির্দেশ দিয়েছেন । কেন ? কারন আগেই যেমন বলা হয়েছে আরবের লোকরা এই
যৌন ব্যপারে অতি মাত্রায় সক্রিয়, মোহাম্মদও তার ব্যাতিক্রম
নন ও তিনি নিজেই রিপু দমন করতে পারতেন না। এখন যা তিনি নিজেই
দমন করতে পারতেন না সেখানে অন্য লোকদেরকে যদি বলা হয় রমজান মাসে সংযমের মাধ্যমে যৌন
কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে- তাহলে কেউ মোহাম্মদের ইসলাম গ্রহণ করত না।
দেখা যায়, শুধুমাত্র রিপু দমন করতে পারেন নি বলেই মোহাম্মদ তার পালিত পূত্র বধূ জয়নাবকে
বিয়ে করেন। এ সম্পর্কে বিখ্যাত ইসলামি পন্ডিত আল তাবারীর
বর্ননা(The History of al-Tabari, vol. 8, p. 4) থেকে জানা যায়-একদা মোহাম্মদ তাঁর পালিত পূত্র জায়েদের বাসায় যান, তখন জায়েদ বাড়ীতে ছিল না। ঘরের মধ্যে জয়নাব একটা চামড়া রং করছিল তখন তার পোষাক আলগা হয়ে গেছিল। মোহাম্মদের দৃষ্টি সেদিকে পতিত হলে তিনি মৃদু হাস্য করেন ও বলেন-আল্লাহ কার মন
কখন পরিবর্তন করে দেয়। পালিত পূত্র হোক আর নিজের পূত্র হোক সে ত
পূত্রই আর তার স্ত্রী হবে পূত্রবধূ। আরবের লোকরা জায়েদকে
জানত মুহাম্মদের পূত্র বলে। এ পূত্রের স্ত্রীর
অর্ধ নগ্ন শরীর দেখে যদি কোন শ্বশুর চোখ না ফিরিয়ে বরং মৃদু হাস্য করে, তার অর্থ কি হতে পারে ? আর এ ধরণের শ্বশুরকে কি ধরণের মানুষ বলা যাবে? এর পরের কাহিনী তো সবার জানা যে- পরে জায়েদকে দিয়ে তালাক দিয়ে মোহাম্মদ অত:পর
জয়নব কে বধূ হিসাবে ঘরে তুলে নেন আর তা করতে তাঁকে আল্লাহর কাছ থেকে বানী ( কোরান,৩৩:০৪, ৩৩:৩৬-৪০) পর্যন্ত
আমদানী করতে হয়। এটা করতে গিয়ে সন্তান দত্তক নিয়ে লালন পালন
করার মত একটা মহৎ কাজকে নিষেধ করে দেয়া হলো। এটাকে কি আমরা বলতে পারি না যে- শুধু মাত্র মোহাম্মদের অনিয়ন্ত্রিত রিপুর কারনে
এহেন সভ্য সমাজ বিবর্জিত, গর্হিত, লজ্জাকর, অমানবিক একটা ঘটনার
উদ্ভব ঘটল? এ ব্যপারে মুমিন ভাইদের প্রশ্ন করলে তারা
বিজ্ঞের মত উত্তর দেন- পশ্চিমা সমাজে তো অনেক পিতা তার সৎ কন্যাকে ধর্ষণ করে,
ভাই তার বোনকে ধর্ষণ করে, তার চেয়ে এটা তো অনেক ভাল কাজ। কিন্তু তারা একবারও
ভাবেন না যে, শুধু পশ্চিম না এই আমাদের মত দেশেও এ ধরনের
ঘটনা বিরল নয় এবং এটা কোথাও ধর্ম বা রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা বৈধ নয়, সাধারন সভ্য মানুষ একে গর্হিত, জঘন্য, বর্বর আচরণ আর রাষ্ট্র এটাকে জঘন্য অপরাধ
হিসাবেই গণ্য করে।
সবচাইতে মজার যে যুক্তি আমরা শুনি তা হলো-
পালক পিতার যদি কোন আসল সন্তান থাকে তাহলে তাদের পিতার সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা
হবে বলেই নাকি মোহাম্মদ তার পূত্রবধূকে বিয়ে করে নিদর্শন স্থাপন করেন যে এরকম কাজ
অবৈধ নয়, বরং এটাই করা উচিত। কিন্তু যদি কেউ একটা এতিম বাচ্চাকে দত্তক নিয়ে লালন পালন করে, বড় হওয়ার পর তাকে সম্পত্তিতে অংশীদারীত্ব দেয়াটাই তো ছিল
সব চাইতে মহৎ কাজ। কিন্তু মোহাম্মদের কাছে সেটা মহৎ নয়। কেন নয় ? কারন জয়নাব কে তাঁর মনে ধরেছে, তাকে বিয়ে করতে হবে অথচ সে তাঁর পালিত পূত্রবধূ। সুতরাং সেটাকে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সবকিছু করা যেতে পারে, প্রয়োজনে রদ করে দেয়া যেতে পারে সমাজে প্রচলিত ভাল প্রথাও,
এমন কি নিজের করা ওয়াদাও খেলাপ করা যেতে পারে। জায়েদ মোহাম্মদের কেমন পূত্র ছিলেন সেটা ভাল করে একটু জানা যাক। জায়েদ মূলত বিবি খাদিজার একজন দাস ছিল একেবারে শৈশব থেকেই। সে শৈশবেই তার পিতা মাতার কাছ থেকে ছিনতাই হয়ে যায়, তারপর খাদিজা ক্রয় সূত্রে তার মালিক হয়। কিন্তু খাদিজা শিশু জায়েদকে নিজের সন্তানের মত লালন পালন করতে থাকে। খাদিজাকে বিয়ে করার সূত্রে জায়েদ মোহাম্মদকে পিতা হিসাবে সম্বোধন করতে থাকে এবং
এক পর্যায়ে মোহাম্মদ নিজেই সর্ব সমক্ষে একটা জমায়েতে জায়েদকে নিজের পূত্র হিসাবে
ঘোষণা দেন, যেমন-
হে লোকসকল, আমি জায়েদকে আমার পূত্র হিসাবে সর্ব সমক্ষে স্বীকার করে নিচ্ছি, আর তোমরা সবাই তার সাক্ষী থাক। আজ থেকে আমি তার উত্তরাধিকারী আর সে আমার উত্তরাধিকারী। মিশকাত, ভলুম-৩, পৃ-৩৪০
সুতরাং এর পর মোহাম্মদ যদি জায়েদের স্ত্রীর
প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাকে বিয়ে করার জন্য তাঁর সর্ব সমক্ষে দেয়া এ ঘোষণা তথা ওয়াদা
বরখেলাপ করেন তাহলে তাকে কি বলা যেতে পারে? রিপু তাড়িত হয়ে সমাজে মানুষ অনেক খারাপ কাজ করে, অনেকের সংসার ভেঙ্গে যায়, পরিবার উচ্ছন্নে যায়। কিন্তু মোহাম্মদের সে সমস্যা ছিল না, কারন তিনি তখন
মদিনার রাজা, তাঁর বিরুদ্ধে টু শব্দ করারও কেউ নেই। তা ছাড়া উক্ত ঘোষণা তিনি দিয়েছিলেন মক্কাতে, মদিনাতে নয়। অর্থাৎ স্থান ও অবস্থানের
পরিবর্তনের সাথে সাথে মোহাম্মদের নীতিবোধ ও আচরণ বিধির পরিবর্তন ঘটে গেছে। মহানবী বলে কথা! তার সব কাজের হদিস তুচ্ছ সাধারন মানুষ পাবে কেমনে? সেটা শুধু আল্লাহই জানেন।
কিন্তু মোহাম্মদের জীবনে এতকিছুর কোনটাই ঘটত
না যদি শুধুমাত্র একটা ঘটনা তাঁর জীবনে ঘটত। অসহায় এতিম দরিদ্র
মোহাম্মদ তার চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে থাকার সময় চাচাত বোন উম্মে হানি এর প্রেমে
পড়েন তিনি। তিনি চাচার কাছে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাবও
দেন। কিন্তু চাচা এতিম,চাল চুলোহীন
মোহাম্মদের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিতে রাজী হয় নি। কারনটাও সহজে বোধগম্য। সেই সময়কার আরব সমাজে
কোন পিতাই চাইত না তার কন্যার বিয়ে কোন চালচুলোহীন এতিম গরিবের সাথে হোক, বর্তমান কালেও কেউ চায় না। সমাজে অনেকটা অপাংক্তেয় মোহাম্মদের মনে এটা একটা বিরাট দাগ কাটে। বিষয়টা তাকে আরও জেদী করে তোলে। উম্মে হানিকে বিয়ে
করতে পারলে হয়ত যুবক মোহাম্মদ শৈশব ও কৈশোরে না পাওয়া স্নেহ মমতার অভাব অনেকটাই ভুলে
যেতেন। এর ফলে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়, যার ফলশ্রুতিতে মানব ইতিহাসেরও এক বিরাট দিক পরিবর্তন হয়, যার জের চলছে গত ১৪০০ বছরের বেশী কাল।
খুব অল্প বয়েস থেকেই যে মোহাম্মদ অত্যন্ত
জেদী ও একগুয়ে হয়ে ওঠেন তার পরিচয় পাওয়া যায় একটি ঘটনায়। তাঁর চাচা আবু তালেব মক্কা ও সিরিয়ার মধ্যে বানিজ্য কাফেলা পরিচালনা করত। একবার আবু তালেব বানিজ্য কাফেলা তৈরী করে উটের পিঠে চড়ে বসেন রওনা দেওয়ার জন্য। এমন সময় ১২ বছরের কিশোর মোহাম্মদ এসে উটের দড়ি ধরে বায়না ধরেন তাঁকে সাথে নিয়ে
যেতে হবে। বিষয়টা মামাবাড়ী যাওয়ার মত ঘটনা ছিল না। মক্কা থেকে সিরিয়ার দুরত্ব প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার। কঠিন মরুভূমির মধ্য দিয়ে উটের পিঠে চড়ে সে পথ চলা ছিল শুধু অতি কঠিনই নয়,
ছিল প্রাণঘাতীও। কিশোর মোহাম্মদও তা
ভালমতো জানতেন কারণ তিনি দেখেছেন যারা আগে এরকম বানিজ্য করতে গেছে তাদের ফিরে আসতে
মাসের পর মাস পার হয়ে গেছে। নাছোড়বান্ধা ভাতিজাকে
নিরস্ত করতে না পেরে অগত্যা তাঁকে সাথে নিতে বাধ্য হয় তাঁর চাচা। (সূত্র: মূইর, পৃ: ৩৩) তিনি
কোনরকম সমস্যা ছাড়াই সিরিয়াতে পৌছে যান ও ফিরে আসেন। এ অভিযাত্রার ফলে বুদ্ধিমান ও চতুর মোহাম্মদের জীবনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়।তিনি বহির্জগতের সাথে পরিচিত হন, দেখতে পান তৎকালীন সিরিয়ার উন্নত
সমাজব্যবস্থা, চাকচিক্য ও শান শওকত এবং বুঝতে পারেন তার
মক্কার মানুষের সমাজ সিরিয়ার তুলনায় কতটা পিছিয়ে আছে। কৌতুহলী বালকের মধ্যে একটা স্বপ্নের জন্ম তখনই শুরু হয়ে যায়।১২ বছরের একটা বালকের জন্য এটা ঘটা খুবই সহজ যদি সে অত্যন্ত বুদ্ধিমান হয়।
এছাড়াও মোহাম্মদের মানসিক অবস্থার একটা অস্বাভাবিকত্ব
সেই শৈশবেই ধরা পড়ে যার প্রমান পাওয়া যায় তাঁর দুধমাতার বর্ণনা হ’তে-
হালিমার স্বামী আমেনাকে বলল- আমি আশংকা করছিলাম যে এ শিশুটির কোন মারাত্মক মানসিক
দুর্ঘটনা ঘটেছে আর তাই কোন কিছু ঘটার আগেই আমরা তাকে তার পরিবারের কাছে ফেরত দিতে এসেছি।—আমেনা জিজ্ঞেস করল তার কি ঘটেছিল এবং যে পর্যন্ত না আমি সব কিছু খুলে বললাম ততক্ষন
আমি স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। যখন সে আরও জিজ্ঞেস
করল- আমি শিশুটিকে কোন অশুভ আত্মায় পেয়েছে কি না আমি তখন বললাম- হ্যা। (Guillaume’s
translation of Ibn Ishaq, page 72)
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, অতি শৈশবেই মোহাম্মদের মানসিক সমস্যা ছিল যে কারনে তাঁর মানসিক
বৈকল্য দেখা যেত মাঝে মাঝে। তবে সেটা এত প্রকট
ছিল না যে তা সাধারন জীবনযাত্রাকে ব্যহত করত। এ ধরনের মানসিক সমস্যা সমাজে অনেক মানুষেরই থাকে আর তারা প্রায় সারা জীবন সেটা
নিয়েই স্বাভাবিক জীবন কাটিয়ে দেয়। এ ধরণের সমস্যা যাদের
হয় আমাদের সমাজে তাদেরকে প্রায়ই বলতে শোনা যায় – তারা জ্বীন বা পরী দেখেছে, নানা রকম বর্ণনাও দেয়
তারা, এমনও দাবী করে যে তাদের সাথে জ্বীন বা পরী
কথাও বলে। এটা গ্রাম গঞ্জে যারা থাকেন তারা এরকম অনেক ঘটনাই অতীতে এবং
এখনও শুনে থাকতে পারেন। বর্তমানকালে মনোবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে একে
এক ধরণের মনরোগ হিসাবে চিহ্ণিত করা হয় এবং এর চিকিৎসাও আছে।
এসব ঘটনাকেই মুমিন বান্দারা এ বলে বিশ্বাস
করে যে, সেই অতি শৈশবেই মোহাম্মদের সাথে জিব্রাইল
ফিরিস্তা দেখা সাক্ষাত করত, তার তত্ত্বাবধান করত। সেটা সত্যি হলে- এখনও গ্রাম বাংলায় হাজার হাজার নারী পুরুষ যারা এ ধরণের মানসিক
সমস্যায় ভোগে তাদেরকে নিশ্চয়ই জিব্রাইল ফিরিস্তা না হোক অন্য কোন ফিরিস্তা বা হুর
দেখা শোনা করছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বর্তমানে এ ধরণের সমস্যায় আমরা রোগীতে অতি সত্ত্বর মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই,
রোগের প্রকোপ বেশী হলে পাবনার হেমায়েতপুর পাগলা গারদে ভর্তি
করে দেই। কাউকে আল্লাহর তরফ থেকে কোন ওহী নাজিলের অপেক্ষা করতে দেয়া
হয় না। হয়ত এটা একারনে যে, মহানবী মোহাম্মদ বলে গেছেন যে তাঁর পর আর কেউ আল্লাহর তরফ থেকে কোন ওহী পাবে না।আমাদের রক্ষা যে, ওহী আসার এ নিষেধাজ্ঞাটি জারী না করে গেলে
হয়তবা আমাদেরকে নিত্য নৈমিত্তিক অনেক নবী পয়গম্বরদের পাল্লায় পড়তে হতো আর তাতে
নাভিশ্বাস উঠত। এত কিছুর পরেও যে হারে আমাদের দেশে আনাচে
কানাচে পীর ফকিররা মহানবীকে স্বপ্নে দেখছে তার ধাক্কাতেই আমরা অস্থির।
হিন্দুদের ধর্মের গীতাতে বলা আছে- যখন দুনিয়াতে
সাধু মানুষদের ওপর অত্যাচার হয়, তখন নাকি স্বয়ং ভগবান
ধরাধামে আবির্ভূত হয়ে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করে থাকে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে নির্দিষ্ট সংখ্যক কোন অবতার নেই। আর এক শ্রেনীর টাউট বাটপার শ্রেনীর লোক সেটাকেই মোক্ষম উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছে
ভারতে। যে কারনে এই একবিংশ শতাব্দীতেও ভারতে প্রতি বছর দু চারটি অবতারের
উপদ্রব ঘটে। আর এসব ভন্ড অবতারের ভক্ত জুটতেও তেমন সময়
লাগে না। লক্ষ লক্ষ ভক্ত জুটে যায় অনেকের। এই একবিংশ শতাব্দীর মানুষদেরই যদি এ অবস্থা হয়, ১৪০০ বছর আগেকার আধা সভ্য আরবদের মধ্যে আল্লাহ প্রেরিত নবী হওয়া কি খুব কঠিন কাজ
নাকি এর চাইতে?
যে রোগে মানুষ জ্বীন পরীর দেখা পায় সে রোগকে
সাধারণত: মৃগীরোগ বলা হয়। এটা একটা সাধারন নাম।মৃগী রোগের বিভিন্ন রকম ফের আছে। কোন ক্ষেত্রে রোগী
অজ্ঞান হয়ে গো গো শব্দ করতে থাকে, কোন ক্ষেত্রে রোগী
থমকে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে নানা রকম অলীক দৃশ্য দেখতে থাকে, এমন কি সেসব দৃশ্যাবলীর কাল্পনিক চরিত্রের সাথে কথাও বলে,
তখন তার শরীর ঘামতে থাকে, চোখ মুখ লাল হয়ে যায়-মনে হয় অশরিরী কোন আত্মা তাকে ভর করেছে। আমাদের মহানবীর কাছে জিব্রাইল ফিরিস্তা আল্লাহর ওহী নিয়ে আসতেন তখন তার শরীরেও
ঠিক এরকমই লক্ষন প্রস্ফুটিত হতো। এখন আমাদের দেখতে হবে
মোহাম্মদেরও এ ধরণের কোন রোগ ছিল কি না।----