Sunday, September 13, 2015

ডায়েটিং আর জীম ছাড়া ওজন কমানোর কিছু অব্যর্থ পদ্ধতি!

 ভুড়ি তুই কোথায় পালাবি? B-) B-)

সৃষ্টির আদি থেকেই মানুষ খাইতে পছন্দ করে! আর যুক্তির খাতিরে বলা যায়, এই খাওয়ার কারণেই বেহেশত থেকে দুনিয়াতে আসা এই মানব সমাজের! এ যেন ‘এলাম খেলাম আর ধ্বংস হইলাম’। মানুষের এই খাম খাম স্বভাবের জন্যই সুকুমার বড়ুয়া বলেছিলেন,
“এত খেয়ে তবু যদি নাহি উঠে মনটি খাও তবে আলু পোড়া, খাও তবে ঘন্টা” :#)

খেয়ে মারা যাওয়ার চাইতে কম খেয়ে ভালভাবে বেঁচে থাকা অনেক অনেক ভাল। আপনি উদরপূর্তি করে খেয়ে বিভিন্ন অসুখ বিসুখ বাধিয়ে যে বিপত্তি ডেকে আনবেন এর চাইতে একটু পরিমিত খেয়ে, একটু নিয়ম করে চলাফেরা করলে কমপক্ষে ১০ বছর বেশি ভালভাবে বাঁচতে পারবেন। হায়াত মউত আল্লাহ’র হাতে, কিন্তু আপনি যতদিন বাঁচবেন ততদিন সুস্বাস্থ্য নিয়ে বাঁচাটা আপনার নৈতিক দায়িত্ব!

মনে রাখবেন, আপনার শরীরের মধ্যেই আপনি বাস করেন যতদিন বেঁচে থাকেন। এই শরীর টা ই যদি ঠিক না থাকে তাইলে ক্যাম্নে কি! লজ্জা করেনা একটা ভোটকা মানব/মানবী হয়ে বেঁচে থাকতে ? (মনে হয় শরীরের সাথে কেউ যেনো আলাদা একটা ‘পুটলা’ নিয়ে ঘুরতেছে । যাউজ্ঞা, আসেন এইবার কাজের কথায়। আপ্নে উপরের সব কথা ই মাঞ্ছেন, কিন্তু আপ্নে ‘ডায়েট’ করতে পারবেন না, তাইনা? জিম এ গিয়ে ক্যালরি ও বার্ণ করতে পারবেন না নানাবিধ কারণে? আসেন দেখি কিছু নিয়ম কানুন যা আপনাকে সো কলড ডায়েট বা জীম না করেও আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে, আপনাকে রাখবে সুস্থ্য-স্বাভাবিক !

সময় নিয়ে খানঃ
আপনি কি গপাগপ খাবার গিলেন? খাওয়ার সময় কি আপনার পশ্চাতদেশে আগুন লাগে বলে মনে হয়? খাইতে বসলেই কি মনে হয় আপনি অনেক ব্যস্ত মানুষ? খেয়ে সময় নষ্ট করার মতো সময় আপনার নাই? ভুল ভাবছেন ভাই-ভগ্নিগণ! তাড়াহুড়ো করে খাওয়া আপনার দেহ কে বেশি আনন্দিত করে, আপনি পরিমাণে বেশি খান আর এতে আপনার দেহে মোটা হওয়ার যে হরমোন তা বেশি উত্তেজিত হয়। অতএব ‘ধীরে বৎস ধীরে’। খাবার জন্য একটা টাইম সেট করেন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এই সময়ের মধ্যে আপনি একটা নির্দিষ্ট পরিমান খাবার অত্যন্ত যত্ন সহকারে তৃপ্তির সাথে খান। খাবারের প্রত্যেকটা বাইট উপভোগ করুন। পেট কে খাবার টা হজম করার টাইম দেন। তাড়াতাড়ি খেলে খাবার মোটামুটি একই অবস্থায় সরাসরি পেট চলে যায় এবং পরবর্তিতে পরিপাক হতে তার এক্সটা প্রেসার নিতে হয়। এতে করে বিভিন্ন শারিরীক সমস্যা ও দেখা দেয়।

নিয়ম করে ঘুমান, সুস্থ থাকুনঃ
কমপক্ষে সাত ঘন্টা ঘুমান নিয়ম করে। ঠিকমতো না ঘুমাইলে আপনার শারিরীক প্রবলেম বাড়বে, মন মেজাজ খারাপ করে এক্সটা খাবারও খায়া ফেলতে পারেন অথবা রাত বিরাতে বাড়তি কিছু নাশতা খাইতেও ইচ্ছে করতে পারে। সঠিক সময়ে ঘুমিয়ে গেলে আপনার রাতের খাবারের পর আবার বাড়তি কিছু খাওয়া পড়বেনা। ওজন ও বাড়বেনা। সিম্পল!

প্রচুর ফল ও সব্জি খানঃ
প্রচুর ফল আর সব্জি খান। বিভিন্ন ধরণের ফল ও সবজি খান যাতে বিরক্তি না এসে যায়! ফল ও সবজি তে প্রচুর ফাইবার এবং পানি থাকে যেগুলো তে ক্যালরি কম কিন্তু আপনার উদর সবসময় পূর্ণ করে রাখে। ভাইয়েরা আমার, বইনেরা আমার, সব্জি খাইবেন ঠিক আছে, কিন্তু তেল আর মসলা দিয়া ভইরা রাইখেন না। যত কম সম্ভব তেল মসলা ব্যবহার করেন।
 
স্যুপ খানঃ
রেস্টুরেন্টে খাইতে গেছেন! যাইতে ই পারেন। অসুবিধা নাই। মাঝে মধ্যে রেস্টুরেন্টে ত খাওয়া লাগে ই । প্রথমেই একটা ভেজিটেবল স্যুপের অর্ডার করে ফেলেন। স্যুপ টা আগে খায়া নিলে দেখবেন, আপ্নের খাওয়ার স্বাদ অর্ধেক কমে গেছে। সো, মাস্ট রিমেম্বার- চাইনিজ/থাই রেস্টুরেন্ট এ যাওয়া মানে আগে ভেজিটেবল স্যুপের অর্ডার দেওয়া। আপ্নারে যে খাওয়াইবো সে অর্ডার দিতে না চাইতে সালাম দিয়া বের হয়ে আসেন। এমন বন্ধুবান্ধব এর দরকার নাই যে একটা স্যুপ খাওয়াইতে কৃপণতা করে । X(

১ বছর আগের কাপড় চোপর বের করার সময় হইছেঃ
গত বছর জিন্সের প্যান্টের মাপ ছিলো ৩৩ আর এখন পড়েন ৩৫। মোটা হয়ে যাওয়ার জন্য সাধের জামা টা পড়তে পারছেন না? আলমারি বা স্যুটকেস থেকে বের করে আপনার চেয়ার বা আলনার উপর রাখুন। প্রতি সপ্তাহেই একবার করে চেক করুন আর কতটুকু ওজন কমলে আপনি ঐ নির্দিষ্ট কাপড় টি পরতে পারবেন।

চিনি-গুড় খাওয়া ছাড়ুনঃ
চিনি না খায়া আজ পর্যন্ত কেউ অসুস্থ হয় নাই বরং চিনি/মিষ্টি খাইয়া অনেকেই স্বাস্থ্য নষ্ট করছে, তাই চিনি ছাড়েন ভাই। প্রথমে একবারে ছাড়তে না পারলে কম খান। দরকার পরলে জিরো ক্যাল ইউজ করেন। কোমল পানীয় খাওয়া ত্যাগ করুন এটা কিডনি ড্যামেজের অন্যতম কারণ। অবশ্যই কোন এনার্জি ড্রিংক্স খাবেন না আপনার কিডনীগুলা বাচাইতে চাইলে! মোটা মগ বা গ্লাস ব্যবহার না করে চিকন ও লম্বা গ্লাস এ জুস খান তাইলে কম খাওয়া হবে। ‘মাল’ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করুন। গ্রীন টি খাওয়ার প্র্যাক্টিস করতে পারেন। এইটা নরমাল চা’র চাইতে অনেক ভালো এবং রিফ্রেশিং পানীয়।

যোগ ব্যায়ামঃ
মেডিটেশন করেন। মেডিটেশন আপনার শারিরীক এবং মানসিক শান্তির জন্য অত্যন্ত উপদেয় ব্যাপার। যদিও পারসোনালি আমি মনে করি, আপনি যে ধর্মের ই হোন, ঠিকমত ধর্ম কর্ম পালন করলে আলাদা যোগ ব্যায়াম করার প্রয়োজন পরবেনা। আপনি ভাল থাকবেন।

বাসায় খাদ্য গ্রহণ করুনঃ
বাইরে খাওয়া এখন একটা ট্রেন্ড এ পরিণত হইছে। বাইরে আপনি যা খাচ্ছেন এর বেশিরভাগ ই স্বাস্থ্যকর না!!! ফ্যাটি এবং ভেজালের ভিতর ডাবল ভেজালের খাবার খাইতেছেন। বাসায় খান সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচদিন । রান্না করা যতটা কষ্টদায়ক মনে করেন আসলে এত কষ্ট না। দরকার পড়লে কিছু রেডি ফুড কিনে রাখুন।

খেয়াল রাখুন ‘খাদ্য বিরতী’ তেঃ
খাওয়ার সময় আমরা বেশিরভাগ মানুষ ই একবারের জন্য হইলেও বিরতি দেই! হয়তো এবসেন্ট মাইন্ডেড হয়েও অনেকে বিরতি দেয় কিন্তু ফ্যাক্ট হচ্ছে দেহ যখন মনে করে তার আর খাবারের প্রয়োজন নেই, তখন সে বিরতি তে যায়। এই ব্যাপার টা খেয়াল রাইখেন। বিরতি তে যাওয়ার পর আবার নব উদ্যমে খাইতে লাগার কোন দরকার নাই। এইগুলা রে বলে ‘ চউক্ষের ভুখ’। :||

চুইংগাম চাবানোঃ
সকালে খাওয়ার পর ১২ টার দিকে ক্ষিদা লাগে? দুপুরের খাবারের পর বিকেল হওয়ার আগেই আবার ক্ষিদা লাগে? রাতে খাওয়ার পর ইন্টারনেট সার্ফিং করতে করতে আবারো ক্ষিদে পায়? সুগার ফ্রি চুইংগাম এনে রাখেন বিভিন্ন ফ্ল্যাভারের! এর শক্তিশালী ফ্ল্যাভার আপনার ক্ষুধা দূর করবে।

ছোট প্লেট ব্যবহার করুনঃ
১২ ইঞ্চি প্লেট এ না খেয়ে ১০ ইঞ্চি প্লেট এ খান। ডেইলি একটু হইলেও কম খাওয়া হবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্লেটের সাইজ ছোট হওয়ার কারণে আপনি ডেইলী ১০০ থেকে ২০০ ক্যালরী খাদ্য কম গ্রহণ করবেন এবং বছর শেষে আপনি শুধু এই থিওরী ফলো করার কারণে ১০ থেকে ২০ পাউন্ড ওজন কমাইতে পারেন! ইন্টারেস্টিং না!!! ইন্টারেস্টিং আরেক টা ব্যাপার আছে। আপনি যদি খাদ্য চাহিদা বেশি থাকে, আর আপনি যদি কম খাইতে চান, তাইলে ‘নীল’ কালারের টেবিল ক্লথে বসে নীল প্লেটে খেয়ে দেখতে পারেন। গবেষনায় দেখা গেছে নীল কালারের পরিবেশ আপনার ক্ষুধা কমিয়ে দেয়! বাচ্চালোগো, তোমরা আবার ল্যাপ্পু তে ‘নীল’ ছাইড়া খাইতে বইসোনা । বেখেয়ালে বেশি খায়া ফেল্বা! B-) :-B

রেস্টুরেন্টে খেতে চাইলেঃ
এতক্ষনে ধরে নিচ্ছি আপনি স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য নিজে একা একা রেস্টুরেন্টে যেয়ে আর খাবেন না! কেউ যদি তার পকেটের টাকা খরচ করে খুব জোড়াজোড়ি করে খাওয়াইতে চায় তাইলে ত কিছু করার থাকেনা! গিয়া সালাদ অর্ডার কইরা দেন। হাফ প্লেট গুলাতে খাবার নিয়া বসেন। আর অর্ডার করার আগেই বলেন অর্ধেক খাবার প্যাক কইরা দিতে। পার্সেল । B-))

মাংসহীন থাকুন বেশিরভাগ দিনঃ
সব্জি খান, ফল খান, আল্লাহর দুনিয়া তে বহুত রকম মাছ পাওয়া যায়। মাছ খান। মাংসের উপর চাপ কমান। দেখবেন ভাল থাকবেন। গ্যারান্টি দিচ্ছি।

বাড়তি ১০০ ক্যালরি কমান প্রতিদিনঃ
• প্রতিদিন হাঁটুন ২০ মিনিট মাত্র। রিকশায় উঠা বন করে দেন। দেখবেন কোন ফাকে ২০ মিনিট হেটে ফেলছেন বুঝবেন ই না।
• দুইটা ফুল গাছ লাগান বারান্দায় নাইলে ছাদে। প্রতিদিন সময় করে ১৫ মিনিট দেন তাদের কে! ভাইলোগো, ছাদে বা বারান্দায় ক্যালরিও ঝড়াইলেন, আবার চক্ষু তৃষ্ণাও মিটাইলেন ।
• ডেইলী ২৫/৩০ মিনিট সময় নিয়া নিজের ঘর টা পরিস্কার করেন, চাইলে বাথ্রুম ও পরিস্কার করতে পারেন।
• ১০ মিনিট জগিং করেন। (অবিবাহিতদের জন্য প্রযোজ্য ) :P

প্রতিবার খাবারের পর ব্রাশ করুনঃ
বুঝছি আপনি দুইবার ব্রাশ করেন! এইটা ই করে আসছেন দীর্ঘদিন যাবত। খাওয়া কমাইতে চাইলে তিনবার ই খাওয়ার পর ব্রাশ করেন। এতে হবে কি, আপনার খাবার গ্রহণের মাঝামাঝি সময়ে স্ন্যাকস খাওয়ার প্রবনতা টা কমবে। আর বাড়তি সুফল হইলো, উজ্জ্বল দাত, মুখ ভর্তি সুগন্ধ। কি ভাইজান! রোমান্টিক ফিল হইতেছে না? :``>>

প্রচুর পানি খানঃ
পানি খান। যত বেশি সম্ভব। পানি আপনার ক্ষুধা নষ্ট করার সাথে সাথে আপনার শরীর থেকে রোগজীবানু বের করে নিয়ে আসে। আপনার স্কিন কে করবে মসৃণ । (এইবার কিছু লোক সত্যি সত্যি ডেইলী ৮ গ্লাস পানি খাওয়া শুরু করবে।) ;)

খাওয়ার ব্যাপারে ইসলাম কি বলেঃ
খাওয়ার ব্যাপারে ইসলামেও বলা আছে খুব ভালভাবে। আমাদের মহানবী (সঃ) স্বল্পাহারি ছিলেন। হাদিসে আছে, ‘তোমরা স্বল্প আহার করো, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে’। সূরা আল আ’রাফ এ বলা আছে, হে মানব সন্তানেরা, তোমরা আহারে সংযত হও এবং খাবার নষ্ট করোনা।

অনেক লিখে ফেলছি। বুঝতে পারছি শেষ দিকে এসে খুব তাড়াহুড়ো করে ফেলেছি। তবে উপরের নোটগুলোর মধ্য থেকে কেউ যদি ৫/৬ টি নিয়মও ফলো করে তাহলে বছরে অন্ততঃ ৮/১০ কেজি ওজন কমানো সম্ভব। আর সবগুলা করতে পারলে আপনি হবেন সিংহ পুরুষ/সিংহী মহিলা। সুস্থ্য থাকুন এ প্রত্যাশায় । :D

ফুটনোটঃ 
আমি ডাক্তার না! পুরা লেখা টাই ইন্টারনেট থেকে ঘেটেঘুটে বের করছি । আসলে করছি নিজের জন্য, সাথে সাথে ব্লগে অনেক দিন আসা হয়না, কিছু একটা লিখি এই মনোবাসনা থেকেই এই প্রয়াস। :) :)