Wednesday, September 23, 2015

আমাকে সে আজও সেজদা করেনি

ধর্মের দোহাই দিয়ে ধর্মগ্রন্থগুলোকে বগলদাবা ক’রে নিয়ে বিকৃত ব্যাখ্যার মাধ্যমে কৌশলে পেঁচিয়ে শান্তির বাণীকেও সন্ত্রাসের সমান গণ্য করানোর চেষ্টা চালায় যারা, তাদের কাছ থেকে ধর্মের বাণী শুনলে ধার্মিকেরাও বিভ্রান্ত হয়ে নিজেদের অন্তরের দাবিয়ে রাখা সন্ত্রাসী আবেগকে ভালোবাসতে শুরু করে। এমনও দেখা যায়, কেউ আবেগাক্রান্ত হলে পরে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হ’তে না-পারলেও, স্বগোত্রের সন্ত্রাসীদেরকে সে প্রকাশ্যে সমর্থন এবং প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। যাদের কাছ থেকে ধর্মগ্রন্থের কোনো অংশের ব্যাখ্যা শুনলে, কোনো মানবসন্তান ধৈর্যধারী সহ্যশীল শান্ত সভ্য বিবেকবান না-হয়ে বরং তেজোদীপ্ত আক্রমণকারী আত্মঘাতী হয়ে ওঠে, নিশ্চয়ই ঐ চটুল ব্যাখ্যাকারীরা অশান্তিধর্মী, মানুষের চিরশত্রু জ্বলন্ত আগ্নেয় শয়তানের ক্রীতদাস, তারা প্রকাশ্য শয়তানিতে লিপ্ত।
অভিশপ্ত শয়তান তো আমার নাগালের বাইরে নয়, বরং অতি নিকটেই থাকে। চূড়ান্ত জ্ঞানী, তবে মিথ্যে অহংকারে অহংকারী অক্ষম দাম্ভিক সে, কুর্নিশে যদিও কিছুটা নত, আজও আমার প্রতি পূর্ণাবনত হয়নি। সত্যে মিথ্যায় সংমিশ্রিত ভুলে নির্ভুলে সমন্বিত এই অ-নির্ভুল আমাকে সে আজও সেজদা করেনি।
###############################################################
ধার্মিকের পোশাকের আড়ালে
------------------------------------------
মাদকাসক্তি, অর্থলিপ্সা, খ্যাতিলিপ্সা, আধিপত্যকামিতা ইত্যাদি নেশাজাতীয় রোগের মতো হত্যাপ্রবণতাও একটি মনোবিকৃতির রোগ।
হত্যাকর্মাসক্তরা শুধুই যে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে, তা’ নয়, সামাজিক প্রশান্তিদায়ক বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক ধর্মগুলোকেও এরা বিকৃত ব্যাখ্যায় নিজেদের মতো সাজিয়ে নিয়ে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
কারো গলায় ধর্মগ্রন্থের মতো কিছু একটা ঝুলন্ত দেখে কিম্বা ধার্মিকের বেশে সজ্জিত কাউকে মালা জপতে দেখে কখনোই বলা সম্ভব নয়,- সেই ব্যক্তিটি স্বেচ্ছাচারী না-কি ধার্মিক। একজন ব্যক্তি ধার্মিক কি-না, তা’ যদি আপনি যাচাই করতে চান তো নিজেকে আড়ালে রেখে, তার আচরণ কর্মকাণ্ড পছন্দ অপছন্দের দিকে এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের কীর্তিকলাপের দিকে আপনাকে সেভাবেই মনোযোগ দিতে হবে, যেভাবে আপনার প্রতি আপনার প্রতিবেশীরা দিয়ে যাচ্ছে।
এখানে লক্ষণীয় এবং আপনিও দেখবেন যে, ধার্মিকেরা নিজেদের দায়িত্ব পালন আর নিজেদের ভুলের সংশোধনে ততখানি ব্যস্ত,- যতখানি ব্যস্ততা থাকলে পরে অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানোর জন্যে যথেষ্ট বেকার সময়টা তারা জোটাতেই পাচ্ছে না।
ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকারীরা সাধারণত ধার্মিকের বেশ ধারণ করে এবং এরা এদের স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ড চালায় পোশাকের আড়ালে থেকে সম্ভবত এজন্যেই যে, ধাতব বর্ম না-হলেও ধার্মিকের ঢিলেঢালা পোশাক শক্তভাবে যেকোনো হত্যাকর্মীকে সুরক্ষা দিতে দুর্ভেদ্য ঢালের চেয়েও অধিকতর সক্ষম।
###############################################################
ধার্মিকদের ধারণার নাগালের বাইরে
-----------------------------------------------
--‘অবৈধ উপার্জনে পুষ্ট দেহের জন্যে জান্নাত হারাম’- এই ধরণের কোনো বাক্য যদি পবিত্র ক্বূরআনে বা হাদিসে পাওয়া যায়!! তাহলে জেনে বুঝেও যারা হজ্জ্ব বা ওমরা পালন করতে যায় অবৈধ উপার্জনের অর্থব্যয়ে,-- তারা কি তবে সেখানে যাচ্ছে জ্বালাময় জাহান্নামে প্রবেশের উদ্দেশ্যে? না-কি অপচয়কারী হিসেবে কোনো সনদ বা খেতাব অর্জনের লক্ষ্যে? এ ছাড়া অন্য কোনো লাভজনক বাণিজ্যিক কারণ যদি থেকে থাকে,- থাকতেও পারে, তবে তা’ ধার্মিকদের ধারণার নাগালের বাইরে।
প্রতারকেরা মিথ্যাচারপ্রবণ, মিথ্যাকে সত্যের আবরণে জড়াতে পারঙ্গম, তাই তারা শয়তানের চেয়েও জঘন্য। মুনাফিকদের অনুকরণে অতিধার্মিকতা প্রদর্শন, প্রতারকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠা কখনোই ধার্মিকদের জন্যে শোভনীয় তো নয়-ই,- উচিতও নয়।
নিশ্চয়ই, মুনাফিকেরা লোকদেখানো ধোঁকাবাজিতে লিপ্ত। তাদের মুখ থেকে কোনো ধর্মের বুলি না-শুনে, বরং তাদের-ই হৃষ্ট-পুষ্ট দেহগুলোর জন্যে জান্নাত হারাম কি-না, তাদেরকেই জিজ্ঞেস ক’রে বুঝে নিয়ে, তাদেরকে ভদ্রভাবে ধর্মের দিকে ডাক দেওয়া সকল ধার্মিকের ধর্মীয় কর্তব্য।
###############################################################
ব্রাহ্মণ প্রসঙ্গে
-------------------------------
তফসিলীদের মধ্য থেকে কেউ জ্ঞানার্জন ক’রে জ্ঞানী হ’য়ে উঠুক কিম্বা ব্রাহ্মণ হিসেবে পরিচিতি লাভ করুক, জ্ঞাতিহিংসাপরায়ণ তফসিলী (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী) পরিচয়ধারীরাই তা’ চায় না জন্যেই হ’তে দেয় না। তাদের নিজেদের ভিতর থেকেই কেউ সৃষ্টিশীল জগতের তাত্ত্বিক জ্ঞানে বিজ্ঞানে সমতালে বাস্তব প্রয়োগে জ্ঞানী হ’য়ে উঠলেও তাকে তফসিলীরা ব্রাহ্মণের মর্যাদা দিচ্ছে না।
নিজেদের জ্ঞাতিহিংসাকে ভালোবেসে প্রাধান্য দিয়ে লালন করার লক্ষ্যেই, তফসিলীরা ব্রাহ্মণ (ব্রহ্মজ্ঞানধারী)-এর আদলে ধার্মিকের বহিরাবরণে যে-ই অজ্ঞটিকে মর্যাদা দিয়ে সমাজে ‘ব্রাহ্মণ’ সাজিয়ে জ্ঞানীর আসনটি পেতে দেয়, তার আচরণ চিন্তা-চেতনা কখনোই একজন সভ্য ভদ্র মানবসন্তানের মতো হ’তে পারে না।
পরিবার শর্তে ব্রাহ্মণ ঐ অজ্ঞগুলোর সাথে ধর্মগ্রন্থের কোনোই সম্পর্ক নেই। এরা ব্রাহ্মণ (ব্রহ্মজ্ঞানধারী) সেজে শুধু যে নিজেদের বানানো ব্রাহ্মণ্যবাদীতা চালায়, তাতেই শেষ নয়,- সুযোগপ্রাপ্ত ব্রাহ্মণ পদবীধারীরা নিজ পরিবারের অজ্ঞ নির্বোধ, এমনকী, নোংরা চরিত্রের সন্তানটিকেও উত্তরাধিকার সূত্রে ব্রাহ্মণ সাজিয়ে ব্রহ্মজ্ঞানধারীর প্রাপ্য মর্যাদার আসনটি পাইয়ে দেবার জন্যে নিজেদের মনগড়া প্রথা বানিয়ে চালু রেখেছে।
ব্রাহ্মণ্যবাদীরা ধর্মগ্রন্থগুলোকে দখলে নিয়ে বগলদাবা ক’রে সাধারণের অস্পৃশ্যতার মধ্যে রাখতে বাধ্য হয়েছে নিজেদের উগ্র অস্তিত্বের স্বার্থেই।
ধর্মে, কোনো ধরণের কর্মজীবীকে, উচ্চ বা বড় রূপে মর্যাদাও যেমন দেওয়া হয়নি, তেমনি ছোট বা তুচ্ছ হিসেবে অসম্মানও করা হয়নি।
প্রচলিত মনগড়া প্রথাতেও ব্রাহ্মণ্যবাদীতার লালনকারী পরিবারগুলোতে এমনও অনেক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়, যারা নিজ চেষ্টায় জ্ঞানার্জন করেছে এবং ব্রাহ্মণ হ’তে পেরেছে। তারা যেকোনো নৃ-গোষ্ঠী (মানবগোষ্ঠী) থেকে গ’ড়ে ওঠা কোনো ব্রাহ্মণকে ব্রাহ্মণের মর্যাদা দিতে গিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে না, বরং নিজেদের ব্রহ্মত্বের দৃঢ়তাই তাতে বাড়ছে ভেবে তারা তৃপ্তি পায়। শাশ্বতিক বিবেচনার বিচারে দেখা যাচ্ছে, মানব সমাজে যোগ্যতায় এবং আচরণে এরাই সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত ব্রাহ্মণ।
###############################################################
ধর্মে পরমতসহিষ্ণুতা
*****
সর্বকালেই ধার্মিকদের অবস্থান বিশৃঙ্খলতার বিপরীতে।
স্বেচ্ছায় নিজেকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে পারাটাই ধার্মিক ব্যক্তির ধর্ম ধারণ।
যেকোনো ধরণের বিশৃঙ্খলতাকে অপছন্দ করতে পারাটুকুই ধর্মের লালন-পালন।
যেকোনোভাবে বিশৃঙ্খলকে শৃঙ্খলায় বেঁধে ফেলার চেষ্টাটুকুই ধার্মিকের কর্তব্য।
শান্তিটাই মনুষ্যের লক্ষ্য তথা লক্ষ্যের ধর্ম।
সকল ধার্মিকদের জন্যে আরব্য ক্বূরআনেও পবিত্র পরম শান্তির অন্যতম অভিন্ন মতবাদটি হচ্ছে- পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা চালিয়ে যাওয়া, তথা নিজেদের ধর্মমতকে সুরক্ষার লক্ষ্যে নিজেদের কর্মে আচরণে ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত ক’রে দেখানোর সাথে সাথে অন্যদের ধর্মমতগুলোকে শ্রদ্ধাভরে সমর্থন ক’রে যাওয়া এবং কলহমুক্ত সার্বজনীন শান্তিকে সমুন্নত রেখে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানকে মানবসমাজে প্রতিষ্ঠা করা।
###############################################################
শয়তানের সরল সত্যভাষণের দুর্বোধ্য বঙ্গানুবাদ
-----------------------------------------
আমি এখানে আসার আগে
পরিবেশটা ভালোই ছিল
যত নষ্টের মূলে আমার দলবদ্ধ শয়তানি
কেউ যেন তা’ বুঝতে না-পারে
যত্রতত্র এমনভাবেই ছুড়ে বেড়াই
দলোগণের প্রতারণাময় চালে গণকল্যাণের বাণী
আমাদের প্রহরায় ওরা ওদের সম্পদগুলো রেখে
নিজেদের মধ্যে চালায় আত্মঘাতি হানাহানি
ঐ সুযোগটাকেই আমরা কাজে লাগাই
আমার সাঙ্গপাঙ্গ সহ যেখানে যা’ পাই
কৌশলে সব লুটেপুটে নিজেরাই খাই আর ঝুলিতে ভরাই
ওরা যেন বুঝতে না-পারে কত কিছু ছিল ওদের ভূখণ্ডে
আর আমাদের লুটপাটের পরেও তাদের জমা আছে কতখানি..
এভাবেই ওদের সম্পদ আমরা নিজেদের দিকে টানি
পরিবেশটা ভালোই ছিল যখন আমরা ছিলাম না
পরিবেশটা ভালোই থাকবে যখন আমরা থাকবো না
সুযোগমতো আমরা সসম্মানে স’রে পড়তে পারলেও
এমন সুযোগদাতা পরিবেশটাকে ঝুলিতে ভরিয়ে
সাথে নিয়ে পালাতে তো পারি না ..
অন্য কোনো সুযোগ সন্ধানী দল যেন খুঁজতেও না-আসে
এমন ঝুঁকিমুক্ত সুযোগের খনিকে শত্রুরা যেন চিনতে না-পারে
নিত্য অশান্তিতে পূর্ণ নোংরা বর্জনীয় হিসেবে ভেবে নিয়ে দূরে থাকে
আমাদের প্রতিপক্ষের কাছে যেন পরিত্যাজ্য মনে হয়
যোগ্যরা কেউ এসে যেন আমাদের মতো সুযোগ না-পায়
যেকোনোভাবে ছেড়ে যাওয়া আমাদের সুযোগদাতা পরিবেশটাকে
ঢেকে রাখাটাই সতর্ক আমাদের কর্তব্য হ’য়ে যায়
আর যোগ্যদের প্রতিহিংসায় আমরা তা’ পালনও করি
গণমালিকের কিছু কুলাঙ্গার সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে
সুন্দর পরিবেশটাকে লুকিয়ে রেখে যাওয়াটাই কর্তব্য
যেন আমাদের কোনো প্রতিপক্ষ সহজে খুঁজে না-পায়
সেই লক্ষ্যেই স্বর্গীয় পরিবেশকেই অশান্তির আবরণে লুকিয়ে
মানুষের অ-বাসযোগ্য রূপে সাজিয়ে শয়তানি চালে
ঘৃণ্য ভিখারির নোংরা চাদরে সযত্নে কৌশলে
ঢেকে রেখে যেতে বাধ্য আমরা সাময়িকভাবে
আমাদের পাততাড়ি গুটানোর কালে ......
আনাড়ি অনুবাদক : আখতার২৩৯
###############################################################
ধর্ম বিষয়ক গণপরামর্শ
-------------------------------
ওহে ধার্মিক, তোমার অতিধার্মিক সন্তানটি থেকে সাবধানে থেকো। ওটাকে সামলানো তোমার-ই কর্তব্য। ওটাকে ওর বোধগম্য ভাষায় ধর্মের বাণী শুনিয়ে দাও। নইলে ওটা তোমাকে নিয়েই আগুনে প্রবেশ করবে।