ইসলাম বোঝার সহজ তরিকা , পর্ব -৩
আগের পর্বগুলোতে ইসলামের প্রকারভেদ ও কুরানের বানী কিভাবে আল্লাহ পরিবর্তন করে ফেলেছে যখন তখন তার বর্ণনা করা হয়েছে। এ পর্বে থাকবে কিভাবে কুরান নাজিল ও তা সংকলিত হয়েছে। আমরা শত শত বছর ধরে শুনে আসছি কুরান এমনই এক গ্রন্থ যা গত ১৪০০ বছর ধরে অবিকৃত আছে ও যা ১০০% বিশুদ্ধ। কিন্তু যেটা আমরা তেমন জানিনা যে কেমন করে কুরানের আয়াত নাজিল হয়েছিল ও তা অত:পর কুরানের বর্তমান আকার ধারন করল। তবে কুরান ১০০% বিশুদ্ধ বলে প্রচার যারা করে তাদের কথা বার্তা শুনলে মনে হয় আল্লাহ সুন্দর প্রিন্ট করা একটা সম্পূর্ন কুরান জিব্রাইল ফিরিস্তার মাধ্যমে নবির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল।
তাহলে প্রথমেই কুরানের আয়াত কিভাবে নাজিল হয়েছিল সে সম্পর্কে একটা হাদিস দেখা যাক:
আয়শা বর্ণিত- হুজুরে পাক এর নিকট প্রথমে যে ওহী আসত তা ছিল নিদ্রার মাঝে তার সত্য স্বপ্ন হিসাবে আসত, অত:পর তা দিবালোকের মত প্রকাশ পেত। এভাবে কিছুদিন চলবার পর তাঁর নিকট নির্জন যায়গা প্রিয় হয়ে উঠল, তাই তিনি হেরা গুহায় নির্জনে বসবাস করতে লাগলেন। তিনি তাঁর সাথে কিছু খাবার নিয়ে যেতেন, তা ফুরিয়ে গেলে আবার খাদিজার নিকট ফিরে আসতেন আবার খাবার নিতে, এবং এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন তাঁর নিকট সত্য প্রকাশিত হলো যখন তিনি হেরা গুহায় ছিলেন। ফিরিস্তা তার নিকট আসল, তাকে পড়তে বলল। নবী উত্তর দিলেন- আমি পড়তে পারি না। নবী আরও বললেন- ফেরেস্তা আমাকে সজোরে আলিঙ্গন করলেন তাতে আমার ভীষণ কষ্ট বোধ হচ্ছিল। সে তখন আমাকে ছেড়ে দিল এবং আবার আমাকে পড়তে বলল, আমি আবার উত্তর দিলাম- আমি তো পড়তে পারি না। আবার সে আমাকে দ্বিতীয়বারের মত চেপে ধরল যা ভীষণ কষ্টদায়ক ছিল, তারপর ছেড়ে দিল এবং বলল- পড়, তোমার প্রভুর নামে যিনি মহিমাময় (তখন সূরা-৯৬: আলাক, ০১-০৩ নাজিল হলো)। হুজুরে পাক উক্ত আয়াতসমূহ হৃদয়ঙ্গম করত: বাড়ী ফিরে আসলেন ও তাঁর প্রচন্ড হৃদ কম্পন হচ্ছিল। তারপর তিনি খাদিজার নিকট গমন করলেন ও বললেন- আমাকে আবৃত কর, আবৃত কর। তাঁরা তাঁকে ততক্ষন পর্যন্ত আবৃত করে রাখলেন যতক্ষন পর্যন্ত না তাঁর ভয় দুর হলো এবং এর পর তিনি সমস্ত বিষয় বিবৃত করলেন যা ঘটেছিল এবং বললেন- আমার আশংকা আমার উপর কিছু ভর করেছে।
খাদিজা উত্তর দিলেন- কখনো নয়, আল্লাহর কসম, আল্লাহ কখনো আপনাকে অমর্যাদা করবেন না। আপনি বরং দুস্থ লোকজন ও গরীব আত্মীয় স্বজনদের সেবা যত্ন করুন। অত:পর খাদিজা মোহাম্মদকে সাথে নিয়ে তার পিতৃব্য পূত্র অরাকা ইবনে নওফেলের নিকট নিয়ে গেলেন। তিনি অন্ধকার যুগের সময় খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইব্রানী ভাষায় ইঞ্জিল লিখতেন। তিনি এত বৃদ্ধ ছিলেন যে তিনি ঠিকমতো দেখতে পেতেন না। খাদিজা তাকে বললেন- হে পিতৃব্যপূত্র! তোমার ভ্রাতুষ্পূত্রের কথা শোনো। অরাকা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন- হে ভ্রাতুষ্পূত্র কি দেখেছ? হুজুর সমস্ত ঘটনা তার নিকট বর্ণনা করলেন। তিনি সব শুনে তাঁকে বললেন, ইনি সেই রহস্যময় জিব্রাইল ফিরিস্তা যাকে আল্লাহ হযরত মূসার নিকট পাঠিয়েছিলেন। ...কিছুদিন পর অরাকা মারা গেলেন ও ওহী আসাও কিছুদিন বন্দ রইল। ইবনে শেহাব যহরী বলেন, আবু সালমাহ ইবনে আবদুর রহমান বলেছেন যে, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ ওহী বন্দ থাককালীন অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, হুযুরে পাক এরশাদ করেছেন, একদা আমি পথ চলবার কালে উর্ধ্ব দিকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন আমি উর্ধ্ব দিকে তাকিয়ে দেখলাম, হেরা গুহায় যিনি আমার নিকট এসছিলেন, সেই ফিরিস্তা আসমান ও যমিনের মাঝখানে এক কুরসীতে বসে আছেন। এতে আমি ভীত হয়ে বাড়ী ফিরে গেলাম এবং বললাম আমাকে চাদর দিয়ে ঢাক, আমাকে চাদর দিয়ে ঢাক। তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলেন- হে চাদরাবৃত ব্যাক্তি! ওঠ আর তুমি সতর্ক কর, আর তোমা প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর, তোমার কাপড় পবিত্র কর, অপবিত্রতা পরিহার কর। (৭৪:০১-০৫ আয়াত নাজিল হয়)। (বুখারী, বই-১, হাদিস-৩)
উপরের হাদিস থেকে দেখা যাচ্ছে- জিব্রাইল ফিরিস্তার সাথে নবির দেখা হওয়ার পর শুধু প্রচন্ড ভয়ই পান নি, পরন্তু তার মনে হয়েছিল যে তাকে অশুভ কিছু তার ওপর ভর করেছে। এমন কি তার গায় অত:পর জ্বর পর্যন্ত চলে এসেছে। কিন্তু উক্ত হাদিসে কোথাও জিব্রাইল কিন্তু বলে নি যে সে আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে ও সে একজন বেহেস্তের ফেরেস্তা। এমনকি এটাও জিব্রাইল বলে নি যে মুহাম্মদ একজন নবি। বিষয়টা খাদিজার চাচাত ভাই নওফেলের সাথে আলোচনা করার পরই সেই নওফেলই সর্বপ্রথম ধারনা দেয় মুহাম্মদ একজন নবি।
এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো - জিব্রাইল কেন বলল না সে কে? এটাও কেন বলল না যে মুহাম্মদ নবি আর তাই সে তার কাছে এসেছে আল্লাহর বানী নিয়ে? জিব্রাইল মুহাম্মদকে বলছে -পড়, তো পড়তে বললে তো সামনে কোন লেখা তুলে ধরতে হয়, সেরকম কিছু কি জিব্রাইল তুলে ধরেছিল? অবশ্য - বল - বললে কোন সমস্যা ছিল না, কিন্তু বলা হচ্ছে পড়। সবচাইতে বড় বিষয় হলো দেখা যাচ্ছে জিব্রাইলকে দেখে নবি ভীষণ ভয় পেয়েছেন, স্বর্গীয় কোন জীবের সাথে দেখা হলে তো স্বর্গীয় আনন্দই হওয়ার কথা, তাহলে ভয় পাবেন কেন ? ধরা যাক প্রথম দর্শন বলে ভয় পেয়েছেন কিন্তু পরবর্তীবার যখন তিনি জিব্রাইলকে আকাশে দেখলেন তখনও তো ভয় পেলেন অথচ তার আগেই তো তিনি নওফেলের কাছ থেকে জেনেছিলেন যে সেই জীবটা কি, কেন তার কাছে এসেছিল, তাহলে তারপরেও কেন ভয় পাবেন? এছাড়া আরও একটা ব্যাপার, তৌরাত কিতাবের কোথাও নাই যে মুসা নবীর সাথে কোন ফিরিস্তা দেখা করত, বরং আল্লাহ অদৃশ্য থেকে সরাসরি তার সাথে কথা বলত ও আদেশ - নির্দেশ দিত। তুর পাহাড়ে মুসা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতও করে। কিন্তু উক্ত হাদিসে বলছে উক্ত জিব্রাইল নাকি মুসা নবীর সাথেও দেখা করত। কোনটা সত্য?
এবার আর একটা হাদিস (বুখারী, বই-১, হাদিস-২) দেখা যাক:
আয়শা থেকে বর্ণিত, আল হারিথ বিন হিসাম আল্লাহর নবীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে নবী! কিভাবে আল্লাহর ওহী আপনার নিকট আসত? তিনি উত্তর দিলেন- মাঝে মাঝে ঘণ্টা ধ্বনির মত শব্দ শুনতে পেতাম, এরপর ওহী নাজিল হতো এবং এটা ছিল সবচেয়ে কঠিন কষ্টদায়ক, এরকম অবস্থা পার হলে যা আমার কাছে নাজিল হতো আমি তা আত্মস্থ করে নিতাম। মাঝে মাঝে ফিরিস্তা আমার কাছে মানুষ রূপে আসত, আমার সাথে কথা বলত, এবং আমি আত্মস্ত করে নিতাম যা আমার নিকট বলা হতো।
আয়শা বলেন, আমি নবীকে দারুণ শীতের দিনেও দেখতাম ওহী আসার পর তাঁর কপাল দিয়ে ঘাম নির্গত হতো।
বলা হচ্ছে জিব্রাইল সরাসরি নবির সাথে সাক্ষাত করত, তাহলে ঘন্টা ধ্বনি হতো কেমনে? এরপর যদি তার কাছে ওহী এসে থাকত তাহলে কঠিন কষ্টই বা হতো কেন? স্বর্গীয় জীবের সাথে দেখা হলে কি প্রচন্ড কষ্ট হয়? ঘামই বা হবে কেন? তাহলে কি ফিরিস্তা তার শরিরের ওপর অদৃশ্যভাবে ভর করত? কিন্তু বলা হচ্চে সশরীরেই নাকি ফিরিস্তা তার কাছে আসতে। আমরা তো দেখি বরং মৃগী রোগীদের যখন রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় অনেক সময় আবোল তাবোল বলে আর প্রচন্ড কষ্ট বোধ হয় ও শরীর দিয়ে ঘাম বের হয়। কিন্তু নবির কাছে আসত এক স্বর্গীয় জীব, তার সাথে মোলাকাত করলে ঘাম কেন আসবে, কেনই বা প্রচন্ড কষ্ট হবে?
এ সম্পর্কিত আরও একটা হাদিস দেখা যেতে পারে (সহি বুখারী, বই-৬১, হাদিস-৫১২):
আল বারা বর্ণিত- এ আয়াত টি নাযিল হলো, “যে সব বিশ্বাসী ঘরে বসে থাকে তাদের মর্যাদা যারা জান মাল দিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে তাদের সমান নয়” (কোরাণ ৪:৯৫)। নবী বললেন, যায়েদকে আমার কাছে ডাক আর তাকে একটা বোর্ড বা হাড়ের টুকরা ও কালি আনতে বল। তারপর তিনি বললেন- “লেখ, সে সব বিশ্বাসী ঘরে বসে থাকে…” এবং এমন সময় আমর বিন উম মাখতুম যে ছিল একজন অন্ধ মানুষ সে সেখানে নবীর পিছনে বসেছিল, নবীকে বলল, “হে আল্লাহর নবী! আমি তো একজন অন্ধ মানুষ, আমার জন্য তোমার কি হুকুম?” সুতরাং সাথে সাথেই আগের আয়াতের পরিবর্তে এ আয়াত নাযিল হলো- “যারা অক্ষম তারা ছাড়া যে সব বিশ্বাসী ঘরে বসে থাকে তাদের মর্যাদা যারা জান মাল দিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে তাদের সমান নয়” (৪:৯৫)।
উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে প্রথমে যে আয়াত নাজিল হয়েছিল তা অসম্পূর্ন। তাহলে জিব্রাইল কি প্রথমে অসম্পূর্ন আয়াত নাজিল করেছিল? তা কি করে হয়? আল্লাহ তো সর্বজ্ঞানী, সে তো কোন অসম্পূর্ণ আয়াত নবির কাছে পাঠাতে পারে না। যাহোক অসম্পূর্ন আয়াত নাজিল করে জিব্রাইল কি চলে গেছিল? চলে গেলে অত:পর অত দ্রুত কিভাবে আবার ফেরত এসে সাথে সাথে সম্পূর্ন আয়াত নাজিল করল? এক্ষেত্রে জিব্রাইল কি আল্লাহর কাছ থেকে ওহি নিয়ে নবির কাছে দিল নাকি নিজেই বানিয়ে সেটা নবির কাছে দিল? কিছুই তো বোঝা যাচ্ছে না। কারন ঘটনা তো মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটেছে যা দেখা যাচ্ছে হাদিসের ঘটনা পরিক্রমায়। আয়াত নাজিলের যে সমস্ত কাহিনী আমরা জানি তাতে দেখা যায়, সাহাবিরা কোন বিষয়ে ফয়সালা চাইলে নবি তাদের কাছ থেকে সময় নিতেন। তারপর দুতিন দিন পর বা আরও দেরী করে তার কাছে আয়াত নাজিল হলে তিনি সে বিষয়ে সমাধান দিতেন। কিন্তু উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সমাধান হাজির। তাহলে অন্য ক্ষেত্রেও কেন দ্রুত আয়াত নাজিল হতো না? সবচাইতে বড় প্রশ্ন - যে বিষয়টা আমর বিন মাখতুম নামের অন্ধ লোকটি বুঝতে পারল, সেটা প্রথমেই আল্লাহ কিভাবে বুঝতে পারল না যে প্রথমে আয়াতটি আংশিক নাজিল হয়েছে?
***********************************************************************************
ইসলাম বোঝার সহজ তরিকা , পর্ব -৪ ( কুরান সংকলনের ইতিবৃত্ত)
দাবী করা হয় গত ১৪০০ বছর ধরে কুরান অবিকৃত ও বিশুদ্ধ। দাবীটা ঠিক আছে। ফাকটা হলো কিভাবে কুরান সংকলিত হয়েছিল সেটা তেমন কেউ বলতে চায় না। বরং এরকমই ভাব করা হয় যেন আল্লাহ একটা কুরান প্রিন্ট করে জিব্রাইলের মাধ্যমে নবীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল। আর তাই আল্লাহ যা নবীর কাছে আয়াত হিসাবে নাজিল করেছিল তার সবটাই অবিকৃত ও বিশুদ্ধ অবস্থায় কুরানে আছে। দাবীটা যে কতটা হাস্যকর ও ভিত্তিহীন সেটা এ পর্বে দেখানো হবে।
এটা সবাই জানে যে নবী নিজেও কুরানকে পূর্ণ আকারে সংকলিত করে যান নি যদিও তার ইচ্ছা থাকলে সেটা খুব ভাল করেই করে যেতে পারতেন। কিন্তু কেন সেটা করেন নি? এর উত্তর আছে কিন্তু কুরানেই। দেখুন:
আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। (সূরা-আল হিজর ১৫:৯, মক্কায় অবতীর্ণ)
যেহেতু আল্লাহ নিজেই তার কুরান সংরক্ষণ করার ঘোষণা দিয়েছে তাই নবী নিজে আল্লাহর সাথে পাল্লা দিয়ে সেটা সংরক্ষণ করার দু:সাহস দেখান নি। তাই নবী নিজে যেটা করেন নি ,সেটা অন্যের করাটা শুধু নবীকে অমান্য করাই নয় , বরং একই সাথে আল্লাকেও অমান্য করা। মনে হয় না কেউ বিষয়টাকে সেভাবে দেখে। অনেকে যুক্তি দেয় যে, যখন আয়াত নাজিল হতো তখন নবী তার সাহাবীকে সেগুলো লিখে রাখতে বলতেন। এ থেকে বোঝা যায় তিনি কুরান সংকলন করতেন। কিন্তু সেটা কেন আমরা বুঝব যখন দেখলাম যে তিনি নিজেই সময় সুযোগ থাকতেও নিজে সেটা সংকলন করেন নি? আমরা তো বরং সেটাই বুঝব যে কিছু লোক মুখস্ত করার আগ পর্যন্ত তিনি সেটা লিখে রাখতে বলতেন। মুখস্ত করার পর সেটা আল্লাহ সংরক্ষন করবে এ বিষয়ে নবীর দৃঢ় আস্থা ছিল। আর তা্ই তিনি সম্পূর্ন কুরানকে সংকলন করেন নি। যাহোক, এত কিছুর পর যেভাবে কুরান সংরক্ষন হয় সেটা সম্পর্কে একটা হাদিস দেখা যাক:
যায়েদ বিন তাবিত (যিনি আল্লাহর বাণী লেখায় নিয়োজিত ছিলেন) বর্ণিত – ইয়ামামা যুদ্ধে (যে যুদ্ধে বহু সংখ্যক কোরানে হাফেজ মারা যায়) বহু সংখ্যক সাহাবী হতাহত হওয়ার পর পর আবু বকর আমাকে ডেকে পাঠালেন যেখানে ওমরও উপস্থিত ছিলেন, বললেন, ওমর আমার কাছে এসে বললেন, “ইয়ামামার যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক মানুষ (যাদের মধ্যে অনেক কোরানে হাফেজও আছে) হতাহত হয়েছে এবং আমার আশংকা হয় অন্যান্য যুদ্ধক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে যাদের মধ্যে অনেক কোরানে হাফেজও থাকবে, আর এভাবে কোরানে হাফেজ মারা যেতে থাকলে কোরানের একটা বিরাট অংশই হারিয়ে যাবে যদি তুমি তা সংগ্রহ না কর।আর আমারও অভিমত যে তুমি কোরান সংগ্রহ কর”। আবু বকর আরও বললেন, “কিভাবে আমি সেটা করতে পারি যা আল্লাহর নবী নিজেই করেন নাই?” ওমর বললেন, “আল্লাহর শপথ, এটা নিশ্চয়ই একটা ভাল কাজ”। “তাই ওমর আমাকে এ ব্যপারে চাপ দিয়ে যেতে লাগল, আমাকে তার প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য বুঝাতে লাগল, অবশেষে আল্লাহ আমার হৃদয় খুলে দিলেন এবং এখন আমারও ওমরের সাথে একই মত”। (যায়েদ বিন তাবিত আরও বললেন) ওমর আবু বকরের সাথে বসে ছিলেন ও আমার সাথে কথা বলছিলেন না। আবু বকর আরও বললেন, “তুমি একজন জ্ঞানী যুবক এবং আমরা তোমাকে সন্দেহ করি না: এবং তুমি আল্লাহর রাসুলের ওহী লেখার কাজে নিয়োজিত ছিলে। অতএব এখন খোজাখুজি করে কোরান সংগ্রহ কর”। আমি (যায়েদ বিন তাবিত) বললাম- “আল্লাহর কসম, কোরান সংগ্রহের মত এরকম কাজ করার চেয়ে যদি আবু বকর আমাকে একটা পাহাড়ও স্থানান্তর করতে বলত সেটাও আমার কাছে অপেক্ষাকৃত সহজ মনে হতো”। আমি তাদের উভয়কে বললাম- “আপনারা কিভাবে সে কাজ করতে সাহস করেন যা আল্লাহর নবী নিজেই করেন নি?” আবু বকর বললেন, “আল্লাহর কসম, এটা প্রকৃতই একটা ভাল কাজ। তাই আমি ওমরের সাথে এটা নিয়ে অনেক তর্ক করেছি যে পর্যন্ত না আল্লাহ আমার অন্তর খুলে দিলেন যা তিনি আমাদের উভয়ের জন্যই খুলে দিয়েছিলেন”। অত:পর আমি কোরান সম্পর্কিত বস্তু অনুসন্ধান করতে লাগলাম, আর আমি পার্চমেন্ট, খেজুর পাতা, হাড় ইত্যাদিতে লেখা এবং এ ছাড়াও যাদের কোরান মুখস্ত ছিল তাদের কাছ থেকে আয়াত সমূহ সংগ্রহ করতে লাগলাম। আমি সূরা আত-তাওবা এর শেষ আয়াতটি খুজাইমার কাছ থেকে সংগ্রহ করলাম যা আমি অন্য কারও কাছ থেকে পাই নি (সে আয়াতগুলো ছিল- তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁর পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। কোরান,০৯:১২৮)
যে পান্ডুলিপিতে কোরানের আয়াত সমূহ সংগৃহীত হয়েছিল, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা আবু বকর তা নিজের কাছেই রেখেছিলেন, অত:পর তা ওমর তাঁর কাছে রেখেছিলেন তাঁর মৃত্যুর পর, এবং অবশেষে তা ওমরের কন্যা হাফসার নিকট ছিল। (সহি বুখারি, বই-৬০, হাদিস-২০)
উক্ত হদিসেই দেখা যাচ্ছে- আবু বকর কুরান সংকলন করতে চান নি, নবীর পদাংক অনুসরন করে, বস্তুত তিনি সেটা করেন ওমরের চাপা চাপিতে। ওমর বলছেন- এভাবে কোরানে হাফেজ মারা যেতে থাকলে কোরানের একটা বিরাট অংশই হারিয়ে যাবে যদি তুমি তা সংগ্রহ না কর। এর অর্থ কি? যেটা আল্লাহ নিজেই সংরক্ষন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সেটা হারিয়ে যায় কেমনে? তার মানে কি ওমর আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না? তারপর বলা হচ্ছে- আল্লাহ তার হৃদয় খুলে দিলেন এটার অর্থ কি? আল্লাহ কি তার কাছে ওহী পাঠাল নাকি কুরান সংরক্ষনের জন্য? কিন্তু সেটা তো অসম্ভব। সে রাস্তা নবী নিজেই বন্দ করে দিয়ে গেছেন। তাছাড়া আল্লাহই বা সেটা করতে যাবে কেন যেখানে সে নিজেই ঘোষণা দিয়েছে কুরান নিজেই সংরক্ষন করবে? সেটা আরও দেখা যাচ্ছে যায়েদ বিন তাবিতের দৃঢ় বক্তব্যে। সে বলছে- “আপনারা কিভাবে সে কাজ করতে সাহস করেন যা আল্লাহর নবী নিজেই করেন নি?” এর অর্থ কি এটাই যে আল্লাহ বুঝতে পারল যে সে আর কুরান সংরক্ষন করতে পারছে না তাই আবু বকরের হৃদয় খুলে দিল? সেটাও তো অসম্ভব। কারন আল্লাহর অসাধ্য কিছু নেই। উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে মাত্র একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে ৯:১২৮ নং আয়াতটি কুরানে সংকলিত হয়। অথচ প্রচার করা হয় কুরানের যে সব আয়াতগুলো কোন কিছুতে লেখা ছিল না, কমপক্ষে দুইজন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে সেগুলো সংকলন করা হয়েছে। এখানে আরও একটা ব্যপার উল্লেখ্য, প্রচার করা হয় সেই সময় বহু কুরানে হাফেজ ছিল। কুরানে হাফেজ অর্থ সম্পূর্ন কুরান যার মুখস্ত। অথচ বাস্তব অবস্থা দৃষ্টে সেটা সেই সময় ছিল অসম্ভব। আজকের মত একটা সম্পূর্ন কুরান তখন কারও কাছে ছিল না। তাই কারও পক্ষে নিয়মিত দৈনিক দুই চার ঘন্টা করে বসে বসে সেগুলো পড়ে মুখস্ত করাও সম্ভব ছিল না। তার অর্থ বহু মানুষ ছিল যাদের হয়ত শুধুমাত্র দুই তিনটি সূরা বা আয়াত মুখস্ত ছিল, তাদের কাছ থেকে শুনে শুনে মুখস্ত করতে হতো। এভাবে জনা জনার কাছ থেকে শুনে শুনে পুরো কুরান মুখস্ত করা যে নিতান্তই অসম্ভব একটা কাজ তা যে কেউই বুঝতে পারে। কারন সেই সময়ে মানুষের জীবন ছিল অত্যন্ত কষ্টকর, জীবিকার তাড়নায় নানা কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। মদিনার জীবনে কিছু মানুষ বসে বসে কুরান চর্চার সুযোগ পায় ঠিকই কিন্তু ১১৪ আয়াতের ৮৬ টি আয়াতই নাজিল হয় মক্কাতে আর সেখানে দাস দাসি শ্রেনীর কিছু মানুষ ছাড়া কেউ ইসলাম গ্রহন করে নি। তাদের কারও পক্ষে মালিকের কাজ ফাকি দিয়ে পুরো ৮৬ আয়াত মুখস্ত করা কি ভাবে সম্ভব তা বোঝা মুস্কিল। তাছাড়াও তাদের কাছে সম্পূর্ন এক খন্ড কুরান ছিল না বসে বসে মুখস্ত করার জন্য। সুতরাং এরকম অবস্থায় ইয়ামামার যুদ্ধে যে বহু মুসলমান মারা যায়, সে সময় শুধুমাত্র দু চারটি আয়াত যাদের মুখস্ত ছিল তারা মারা যাওয়াতে সেসব আয়াত যে চিরতরে হারিয়ে যায় নি - তার নিশ্চয়তা কি? যখন আমরা দেখছি ৯:১২৮ আয়াত শুধুই মাত্র একজনের মুখস্ত ছিল? এছাড়াও দেখা যায় বহু আয়াতই কুরানে সংকলিত হয় নি, যেমন নিচের হাদিস:
আয়শা বর্ণিত-পাথর মারা ও প্রাপ্ত বয়স্কদেরকে স্তন্য পান করানোর বিষয়ে যে আয়াত নাযিল হয়েছিল, তা একটা পাতায় লিখে আমার বিছানার নিচে রাখা হয়েছিল।যখন নবী মারা গেলেন আর আমরা তার দাফন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, তখন একটা ছাগল ঘরে ঢুকে আয়াত লেখা পাতা খেয়ে ফেলে। (ইবনে মাজা, হাদিস ১৯৩৪)
ইবনে আব্বাস বর্ণিত- ওমর বললেন, আমার ভয় হয় অনেক দিন পার হয়ে গেলে লোকজন বলাবলি করতে পারে -“ আমরা কোরানে রজম(পাথর মেরে হত্যা) সম্পর্কে কোন আয়াত পাচ্ছি না এবং অত:পর তারা আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম ভূলে বিপথগামী হয়ে যেতে পারে।দেখ, আমি নিশ্চিত করে বলছি, যেই ব্যভিচার করবে তার ওপর পাথর মেরে হত্যার শাস্তি কার্যকর করা হোক এমনকি যদি সে বিবাহিত হয়, অথচ তার অপরাধ যদি সাক্ষী বা গর্ভধারণ বা স্বীকারোক্তি দ্বারা প্রমানিত হয়, তাহলেও”। সুফিয়ান যোগ করল, “আমি বিবৃতিটি এভাবেই শুনেছিলাম যা আমি স্মরণ করি এভাবে যে ওমর আরও বলল-আল্লার নবী নিজেও পাথর মেরে হত্যার শাস্তি কার্যকর করেছিলেন এবং আমরাও তাঁর পর এটা কার্যকর করেছিলাম”। (সহি বুখারী, বই-৮২, হাদিস-৮১৬)
উক্ত হাদিস থেকে দেখা যাচ্ছে বয়স্কদের দুধ পান করানো ও ব্যভিচারের শাস্তি পাথর ছুড়ে মারার জন্য আয়াত নাজিল হয়েছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা বর্তমান কুরানে নেই। কেন নেই? এমনকি কুরানের আয়াত ছাগলে পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে। এভাবে আরও যে কত আয়াত ছাগল বা দুম্বায় খায় নি তার প্রমান কি? উল্লেখ্য, দুধ পান করানোর বিষয়টা হলো - কোন পর পুরুষ যদি কোন নারীর স্তনের দুধ ৫ বার খায় তাহলে সেই লোকের সাথে উক্ত নারীর (মা-ছেলের সম্পর্ক) স্থাপিত হবে।এ ব্যপারে বিস্তারিত জানা যাবে এখানে - পরপুরুষকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ফতোয়াঃ।
এবার আমরা নিচের হাদিসটি দেখি:
মাসরুক বর্ণিত- আমরা আব্দুল্লাহ বিন আমর এর নিকট গমন করতাম ও কথা বার্তা বলতাম। একদা ইবনে নুমাইর তার নিকট আব্দুল্লাহ বিন মাসুদের নাম উল্লেখ করল। তখন তিনি(আমর)বললেন-তোমরা এমন একজন ব্যাক্তির নাম বললে যাকে আমি অন্য যে কোন মানুষের চেয়ে বেশী ভালবাসি। আমি আল্লাহর রসুলকে বলতে শুনেছি- চারজন ব্যাক্তির কাছ থেকে কোরান শিক্ষা কর, অত:পর তিনি ইবনে উম আবদ্ (আব্দুল্লাহ মাসুদ) এর নাম থেকে শুরু করে মুয়াদ বিন জাবাল, উবাই বিন কাব ও শেষে আবু হুদায়ফিয়ার নাম উল্লেখ করলেন। (সহি মুসলিম, বই-৩১, হাদিস-৬০২৪)
এ হাদিসটি থেকে জানা যাচ্ছে- নবী নিজের জীবদ্দশায় চারজন সাহাবীকে প্রত্যয়ন করেন এ মর্মে যে তারাই কুরান সবচাইতে ভাল জানত ও যারা ছিল তার কথায় কুরানে হাফেজ। যদি খেয়াল করা হয় আবু বকর যখন কুরান সংকলন করার উদ্যোগ নিলেন তখন উক্ত চারজন সবাই বেঁচে ছিল। কিন্তু তাদের কাউকেই তিনি কুরান সংকলনের দায়িত্ব দেন নি। সুতরাং প্রশ্ন করা যেতেই পারে কেন তিনি দেন নি? কারন নবী কর্তৃক সত্যায়িত এ চারজনের যে কেউই তো কুরান সবচাইতে ভাল সংকলন করতে পারতেন।
আবু বকর, মৃত্যু: ৬৩৪ সালে।
ওমর, মৃত্যু: ৬৪৪ সালে।
ওসমান মৃত্যু: ৬৫৬ সালে।
আব্দুল্লাহ মাসুদ, জন্মঃ মক্কা, মৃত্যু: ৬৫০ সালে।
উবাই ইবনে কাব, জন্ম: মদিনা, মৃত্যু:৬৪৯ সালে।
মুয়াদ বিন জাবাল, জন্ম: মদিনা- কখন মারা যায় সঠিক রেকর্ড নাই, তবে ওমরের আমলে বেঁচেছিল কারন ওমর তাকে বাইজান্টাইনের বিরুদ্ধে এক সেনাদলের প্রধান করে পাঠায়।
আবু হুদায়ফিয়ার, জন্ম: মক্কা- আবু বকরের আমলে বেচে ছিল। (সূত্র: wikipedia.org)
উক্ত তালিকা থেকে দেখা যায় নবী কর্তৃক সত্যায়িত চারজনই আবু বকরের আমলে বেঁচে ছিল।
আনাস বিন মালিক বর্ণিত- হুদায়ফিয়া বিন আল ইয়ামান ওসমানের কাছে আসল যখন কিছু শাম ও ইরাকি দেশীয় লোক তাঁর কাছে উপস্থিত ছিল। হুদায়ফিয়া শাম ও ইরাক দেশীয় লোকদের ভিন্ন উচ্চারণে কোরাণ পাঠ নিয়ে ভীত ছিলেন, তাই তিনি বললেন- হে বিশ্বাসীদের প্রধাণ, ইহুদী ও খৃষ্টানরা যেমন তাদের কিতাব বিকৃত করেছিল তেমনটি থেকে কোরাণকে রক্ষা করার জন্য আপনি কিছু করুন। সুতরাং ওসমান হাফসা (নবীর স্ত্রী ও ওমরের কন্যা) এর নিকট এক বার্তা পাঠালেন- দয়া করে আপনার নিকট রক্ষিত কোরাণের কপিটা আমাদের কাছে পাঠান যাতে করে আমরা তার একটা বিশুদ্ধ কপি করতে পারি ও তারপর সেটা আপনার নিকট ফিরিয়ে দেয়া হবে। হাফসা সেটা ওসমানের নিকট পাঠালেন। ওসমান তখন যায়েদ বিন তাবিত, আব্দুল্লাহ বিন আয যোবায়ের, সাদ বিন আল আস ও আব্দুর রহমান বিন হারিথ বিন হিসাম এদেরকে কোরাণের পান্ডুলিপি পূন: লিখতে আদেশ করলেন। ওসমান তিনজন কুরাইশ ব্যাক্তিকে বললেন- যদি তোমরা কোন বিষয়ে যায়েদ বিন তাবিত এর সাথে কোরাণের কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ কর, তাহলে তা কুরাইশ উচ্চারণে লিখবে, কারণ কোরাণ সে উচ্চারণেই নাজিল হয়েছিল। তারা সেরকমই করলেন আর যখন অনেকগুলো কপি লেখা হলো তখন ওসমান আসল কপিটা হাফসার নিকট ফেরত দিলেন। অত:পর ওসমান একটি করে কপি প্রতিটি প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন এবং একই সাথে বাকী সব পান্ডুলিপি যা সম্পূর্ণ বা আংশিক ছিল সেসব পুড়িয়ে ফেলার হুকুম করলেন। যায়েদ বিন তাবিথ আরও বলেন- আল আহযাব সূরার একটি আয়াত আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম যখন আমরা কোরাণ সংকলন করছিলাম ও আমি তা আল্লাহর নবীকে তেলাওয়াত করতে শুনেছি। তাই এটা আমরা খুজতে শুরু করলাম ও খুজাইমা বিন তাবিথ আল আনসারি এর নিকট তা পেলাম। আয়াতটা ছিল ৩৩:২৩। (সহী বুখারী, বই-৬১, হাদিস-৫১০)
উক্ত হাদিস মোতাবেক জানা যাচ্চে যে ওসমান পূনরায় আর একটি কুরান সংকলন করেন, যা অবশ্য আবু বকরের কুরানের দ্বারাও সত্যায়িত ছিল। কিন্তু যেহেতু এবারও পূর্ববর্তী যায়েদ বিন তাবিত সহ আরও দুইজন কে দায়িত্ব দেয়া হয় ও বলা হয় কুরান লিখতে হবে কুরাইশ আঞ্চলিক আরবী ভাষায় তা থেকে বোঝা যাচ্ছে আবু বকর কৃত কুরান সম্পূর্ণ ছিল না। তবে ওসমান যে কুরান সংকলন করেন তা যদি তিনি বহু কপি করে সংরক্ষন ও বিতরন করতে পারেন, তাহলে তার কুরান যে পূর্ববর্তী হাফসার কাছে রক্ষিত কুরান থেকে হুবহু কপি করা হয়েছিল সেই মূল কপি কেন তিনি সংরক্ষন করলেন না? বা পরবর্তী খলিফারা কেন সেই মূল পান্ডুলিপি সংরক্ষন করলেন না? সেটা করা তো তাদের জন্য খুব সহজ ছিল। তাহলে আমরা কিভাবে বলতে পারি যে হযরত ওসমান কৃত পরবর্তী কুরানের সংকলন হুবহু আগের সংকলনের অনুরূপ বা আগের সংকলনের সব সূরা বা আয়াত বর্তমান সংকলনে কপি করা হয়েছে? অথচ এ ধরনের এক অভিযোগ তুলে কিন্তু ইসলামী স্কলাররা বাইবেলের সংরক্ষনকে প্রশ্ন বিদ্ধ করে দাবী করে যে বর্তমানে বাইবেলের যে কপি পাওয়া যায় তা মূল বাইবেলের অনুরূপ নয় বা বিকৃত। তারা বলতে চায় মূল হিব্রু বা এরামাইক ভাষার পান্ডুলিপি যেহেতু নাই তাই বর্তমান বাইবেল বিকৃত। কিন্তু সেই একই যুক্তি কেন কুরানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে না? এবার আর একটা হাদিস দেখতে পারি -
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস বর্ণিত- আল্লাহর নবী বলেছিলেন, জিব্রাইল আমার কাছে কোরাণকে এক রীতিতে উচ্চারণ করত। অত:পর আমি তাকে বলতাম তা অন্য রীতিতে উচ্চারণ করতে এবং সে বিভিন্ন রীতিতে তা উচ্চারণ করত এবং এভাবে সে সাতটি রীতিতে উচ্চারণ করে আমাকে শিখাত। (সহী বুখারী, বই-৬১, হাদিস-৫১৩)
দেখা যাচ্ছে সাতটি ভিন্ন উচ্চারনে কুরান নাজিল হয়েছিল। তাই যদি হয় বর্তমানে শুধুমাত্র একটি উচ্চারনের কুরান কেন দেখি? আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে কুরান যদি সংকলিত করতেই হয় তাহলে সেই সাতটি উচ্চারনের কুরানকেই সংকলন করার দরকার ছিল তাহলেই সেটা হতো বিশুদ্ধ সংকলন। এখন সব আয়াত সম্বলিত কাঠ, খেজুরপাতা, চামড়া ওসমান পুড়িয়ে ফেলার পর আমরা বুঝব কেমনে যে সত্যি সত্যি তিনি যথাযথ কুরান সংকলন করেছেন? বর্তমানে যে কুরানের কপি দেখি, উক্ত কুরানের সূরা ও আয়াত সম্বলিত একটা করে সেই কাঠ, খেজুরপাতা বা চামড়া লিখিত পান্ডুলিপি সংগ্রহ করে রাখলেই আমরা বুঝতে পারতাম যে হযরত ওসমান যথাযথভাবে কুরান সংকলন করেছেন, অন্তত: পক্ষে আমরা সেটা পরীক্ষা করে দেখতে পারতাম। সহি হাদিস থেকেই যেখানে আমরা দেখছি অনেক আয়াতই কুরানে সংকলিত হয় নি সেখানে ওসমান যে সত্যি সত্যি উক্ত আদি পান্ডুলিপি থেকে সকল আয়াতই তার কুরানে সংকলিত করেছেন তার গ্যরান্টি কি? সাতটা ভিন্ন উচ্চারনের কুরান যে সাত রকম অর্থযুক্ত ছিল না তার প্রমান কি?
ইউসূফ বিন মাহক বর্ণিত- যখন আমি আয়শা, সমস্ত বিশ্বাসীদের জননী এর নিকট বসে ছিলাম , ইরাক থেকে এক লোক এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “কোন ধরনের আচ্ছাদন সর্বোত্তম?” আয়শা বললেন- তোমার ওপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন। কিন্তু বিষয় কি? সে বলল- হে জননী, আমাকে আপনার কোরান থেকে দেখান। তিনি জিজ্ঞেস করলেন- কেন? সে বলল-কোরাণকে সেটার অনুযায়ী অনুলিপি করতে চাই কারণ লোকজন এর সূরা সমূহ সঠিকভাবে উচ্চারণ করছে না। ……অত:পর আয়শা তার কোরাণটা বের করলেন আর লোকটাকে কোরাণের সূরা কিভাবে সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে হবে তা শিখিয়ে দিলেন। (সহী বুখারী, বই-৬১, হাদিস-৫১৫)
উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে আয়শার কাছেও একটা কুরান ছিল, কিন্তু সেটা এখন কোথায়? কুরান সংকলনের সময় এ কুরান থেকে কোন সাহায্য নেয়া হয়েছে সেটা তো দেখা যাচ্ছে না। সেই কুরান এখন কোথায়?
কুরানের দিকপাল ও সর্বমান্য স্কলার ইবনে কাথির বিভিন্ন হাদিস, সিরাত এসব পর্যালোচনা করে নিচে যে তাফসির করেছেন তা একটু দেখা যাক:
মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে যে, হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রা) হযরত যির (রা) কে জিজ্ঞেস করলেন- সূরায়ে আহযাবে কতটি আয়াত গণনা করা হয়? তিনি উত্তর দিলেন- তিয়াত্তরটি।তখন হযরত উবাই ইবনে কা'ব বললেন- না না, আমি তো দেখেছি সূরাটি সূরা বাকারার প্রায় সমান ছিল। এই সূরার মধ্যে আমরা নিম্নোক্ত আয়াতটিও পাঠ করতাম -
বুড়ো বুড়ি যদি ব্যাভিচার করে তাহলে তাদেরকে পাথর ছুড়ে হত্যা করে ফেল, এটা হলো আল্লাহর পক্ষ হতে শাস্তি। আল্লাহ মহা পরাক্রমশালি ও বিজ্ঞানময়।- এর দ্বারা জানা যায় যে - এ সূরার কতকগুলি আয়াত আল্লাহর নির্দেশ ক্রমে বাতিল হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী।
(পৃষ্ঠা ৭৩৩, খন্ড ১৫, তাফসির ইবনে কাসির, অনুবাদ : ড, মুজিবুর রহমান, প্রাক্তন অধ্যাপক ও সভাপতি, আরবি ও ইসলামিক ষ্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়।)
অনলাইনে এ বাংলা তাফসির পাওয়া যাবে এখানে, http://www.quraneralo.com/tafsir
উক্ত বর্ণনা মতে দেখা যায় শুধুমাত্র সূরা আহযাব থেকেই প্রায় ২০০ এর মত আয়াত বাদ পড়েছে। কারন সূরা বাকারাতে মোট আয়াত সংখ্যা ২৮৬ কিন্তু আহযাবে মাত্র ৭৩ টা।
কুরান আসলে কিভাবে সংকলিত হয়েছে এ সম্পর্কিত আরও বহু দলিল দেখানো যেতে পারে। এ বিষয়ে কিছু আলেমকে প্রশ্ন করলে তারা বলে - শুধু হাদিস বা তাফসির থেকে কুরানের সংকলন বোঝা যাবে না বা ইসলাম বোঝা যাবে না। কুরান সংকলন বুঝতে গেলে কোথা থেকে বুঝতে হবে সেটাও তো বোধগম্য নয়। তারা তখন কুরানের উক্ত আয়াত বর্ণনা করে যেখানে বলা হয়েছে আল্লাহ বলছে - আমিই কুরানের সংরক্ষনকারী,এটা তারা এমন ভাবে বলে যেন আল্লাহ একটা ছাপান কুরান সুন্দর বাধাই করে জিব্রাইলের মাধ্যমে তা নবীর কাছে পাঠিয়েছে, না হয় আল্লাহ নিজেই এসে কুরানকে বর্তমান আকারে সংকলন করে গেছে। তারা বুঝতেই পারে না, কুরানের নিজের বানী কুরানকে ডিফেন্ড করে না, কুরান যার কাছে নাজিল হয়েছিল বা নাজিল হওয়ার পর যারা তার সংরক্ষন করেছিল তাদের সাক্ষীই একমাত্র কুরানের বানীকে ডিফেন্ড করতে পারে। যার কাছে নাজিল হয়েছিল বা যারা নাজিলের পর সেসব সংরক্ষন করেছিল, তাদের ঘটনার ইতিবৃত্ত আমরা কুরানে পাই না, পাই হাদিস, সিরাত ও পরিশেষে তাফসির থেকে। আর উক্ত কিতাবগুলোই বলছে কুরান কিভাবে সংরক্ষিত হয়েছিল। সেটাই এখানে বিবৃত করা হলো মাত্র। তবে এতসব প্রশ্নের একটা সহজ উত্তরও আছে তা হলো কুরানই একমাত্র সত্য বাকি সব মিথ্যা। সেক্ষেত্রেও প্রশ্ন থাকে বাকী সব মিথ্যা হলে কুরানের অস্তিত্ব থাকে কেমনে?
আগের পর্বগুলোতে ইসলামের প্রকারভেদ ও কুরানের বানী কিভাবে আল্লাহ পরিবর্তন করে ফেলেছে যখন তখন তার বর্ণনা করা হয়েছে। এ পর্বে থাকবে কিভাবে কুরান নাজিল ও তা সংকলিত হয়েছে। আমরা শত শত বছর ধরে শুনে আসছি কুরান এমনই এক গ্রন্থ যা গত ১৪০০ বছর ধরে অবিকৃত আছে ও যা ১০০% বিশুদ্ধ। কিন্তু যেটা আমরা তেমন জানিনা যে কেমন করে কুরানের আয়াত নাজিল হয়েছিল ও তা অত:পর কুরানের বর্তমান আকার ধারন করল। তবে কুরান ১০০% বিশুদ্ধ বলে প্রচার যারা করে তাদের কথা বার্তা শুনলে মনে হয় আল্লাহ সুন্দর প্রিন্ট করা একটা সম্পূর্ন কুরান জিব্রাইল ফিরিস্তার মাধ্যমে নবির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল।
তাহলে প্রথমেই কুরানের আয়াত কিভাবে নাজিল হয়েছিল সে সম্পর্কে একটা হাদিস দেখা যাক:
আয়শা বর্ণিত- হুজুরে পাক এর নিকট প্রথমে যে ওহী আসত তা ছিল নিদ্রার মাঝে তার সত্য স্বপ্ন হিসাবে আসত, অত:পর তা দিবালোকের মত প্রকাশ পেত। এভাবে কিছুদিন চলবার পর তাঁর নিকট নির্জন যায়গা প্রিয় হয়ে উঠল, তাই তিনি হেরা গুহায় নির্জনে বসবাস করতে লাগলেন। তিনি তাঁর সাথে কিছু খাবার নিয়ে যেতেন, তা ফুরিয়ে গেলে আবার খাদিজার নিকট ফিরে আসতেন আবার খাবার নিতে, এবং এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন তাঁর নিকট সত্য প্রকাশিত হলো যখন তিনি হেরা গুহায় ছিলেন। ফিরিস্তা তার নিকট আসল, তাকে পড়তে বলল। নবী উত্তর দিলেন- আমি পড়তে পারি না। নবী আরও বললেন- ফেরেস্তা আমাকে সজোরে আলিঙ্গন করলেন তাতে আমার ভীষণ কষ্ট বোধ হচ্ছিল। সে তখন আমাকে ছেড়ে দিল এবং আবার আমাকে পড়তে বলল, আমি আবার উত্তর দিলাম- আমি তো পড়তে পারি না। আবার সে আমাকে দ্বিতীয়বারের মত চেপে ধরল যা ভীষণ কষ্টদায়ক ছিল, তারপর ছেড়ে দিল এবং বলল- পড়, তোমার প্রভুর নামে যিনি মহিমাময় (তখন সূরা-৯৬: আলাক, ০১-০৩ নাজিল হলো)। হুজুরে পাক উক্ত আয়াতসমূহ হৃদয়ঙ্গম করত: বাড়ী ফিরে আসলেন ও তাঁর প্রচন্ড হৃদ কম্পন হচ্ছিল। তারপর তিনি খাদিজার নিকট গমন করলেন ও বললেন- আমাকে আবৃত কর, আবৃত কর। তাঁরা তাঁকে ততক্ষন পর্যন্ত আবৃত করে রাখলেন যতক্ষন পর্যন্ত না তাঁর ভয় দুর হলো এবং এর পর তিনি সমস্ত বিষয় বিবৃত করলেন যা ঘটেছিল এবং বললেন- আমার আশংকা আমার উপর কিছু ভর করেছে।
খাদিজা উত্তর দিলেন- কখনো নয়, আল্লাহর কসম, আল্লাহ কখনো আপনাকে অমর্যাদা করবেন না। আপনি বরং দুস্থ লোকজন ও গরীব আত্মীয় স্বজনদের সেবা যত্ন করুন। অত:পর খাদিজা মোহাম্মদকে সাথে নিয়ে তার পিতৃব্য পূত্র অরাকা ইবনে নওফেলের নিকট নিয়ে গেলেন। তিনি অন্ধকার যুগের সময় খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইব্রানী ভাষায় ইঞ্জিল লিখতেন। তিনি এত বৃদ্ধ ছিলেন যে তিনি ঠিকমতো দেখতে পেতেন না। খাদিজা তাকে বললেন- হে পিতৃব্যপূত্র! তোমার ভ্রাতুষ্পূত্রের কথা শোনো। অরাকা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন- হে ভ্রাতুষ্পূত্র কি দেখেছ? হুজুর সমস্ত ঘটনা তার নিকট বর্ণনা করলেন। তিনি সব শুনে তাঁকে বললেন, ইনি সেই রহস্যময় জিব্রাইল ফিরিস্তা যাকে আল্লাহ হযরত মূসার নিকট পাঠিয়েছিলেন। ...কিছুদিন পর অরাকা মারা গেলেন ও ওহী আসাও কিছুদিন বন্দ রইল। ইবনে শেহাব যহরী বলেন, আবু সালমাহ ইবনে আবদুর রহমান বলেছেন যে, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ ওহী বন্দ থাককালীন অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, হুযুরে পাক এরশাদ করেছেন, একদা আমি পথ চলবার কালে উর্ধ্ব দিকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন আমি উর্ধ্ব দিকে তাকিয়ে দেখলাম, হেরা গুহায় যিনি আমার নিকট এসছিলেন, সেই ফিরিস্তা আসমান ও যমিনের মাঝখানে এক কুরসীতে বসে আছেন। এতে আমি ভীত হয়ে বাড়ী ফিরে গেলাম এবং বললাম আমাকে চাদর দিয়ে ঢাক, আমাকে চাদর দিয়ে ঢাক। তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলেন- হে চাদরাবৃত ব্যাক্তি! ওঠ আর তুমি সতর্ক কর, আর তোমা প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর, তোমার কাপড় পবিত্র কর, অপবিত্রতা পরিহার কর। (৭৪:০১-০৫ আয়াত নাজিল হয়)। (বুখারী, বই-১, হাদিস-৩)
উপরের হাদিস থেকে দেখা যাচ্ছে- জিব্রাইল ফিরিস্তার সাথে নবির দেখা হওয়ার পর শুধু প্রচন্ড ভয়ই পান নি, পরন্তু তার মনে হয়েছিল যে তাকে অশুভ কিছু তার ওপর ভর করেছে। এমন কি তার গায় অত:পর জ্বর পর্যন্ত চলে এসেছে। কিন্তু উক্ত হাদিসে কোথাও জিব্রাইল কিন্তু বলে নি যে সে আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে ও সে একজন বেহেস্তের ফেরেস্তা। এমনকি এটাও জিব্রাইল বলে নি যে মুহাম্মদ একজন নবি। বিষয়টা খাদিজার চাচাত ভাই নওফেলের সাথে আলোচনা করার পরই সেই নওফেলই সর্বপ্রথম ধারনা দেয় মুহাম্মদ একজন নবি।
এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো - জিব্রাইল কেন বলল না সে কে? এটাও কেন বলল না যে মুহাম্মদ নবি আর তাই সে তার কাছে এসেছে আল্লাহর বানী নিয়ে? জিব্রাইল মুহাম্মদকে বলছে -পড়, তো পড়তে বললে তো সামনে কোন লেখা তুলে ধরতে হয়, সেরকম কিছু কি জিব্রাইল তুলে ধরেছিল? অবশ্য - বল - বললে কোন সমস্যা ছিল না, কিন্তু বলা হচ্ছে পড়। সবচাইতে বড় বিষয় হলো দেখা যাচ্ছে জিব্রাইলকে দেখে নবি ভীষণ ভয় পেয়েছেন, স্বর্গীয় কোন জীবের সাথে দেখা হলে তো স্বর্গীয় আনন্দই হওয়ার কথা, তাহলে ভয় পাবেন কেন ? ধরা যাক প্রথম দর্শন বলে ভয় পেয়েছেন কিন্তু পরবর্তীবার যখন তিনি জিব্রাইলকে আকাশে দেখলেন তখনও তো ভয় পেলেন অথচ তার আগেই তো তিনি নওফেলের কাছ থেকে জেনেছিলেন যে সেই জীবটা কি, কেন তার কাছে এসেছিল, তাহলে তারপরেও কেন ভয় পাবেন? এছাড়া আরও একটা ব্যাপার, তৌরাত কিতাবের কোথাও নাই যে মুসা নবীর সাথে কোন ফিরিস্তা দেখা করত, বরং আল্লাহ অদৃশ্য থেকে সরাসরি তার সাথে কথা বলত ও আদেশ - নির্দেশ দিত। তুর পাহাড়ে মুসা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতও করে। কিন্তু উক্ত হাদিসে বলছে উক্ত জিব্রাইল নাকি মুসা নবীর সাথেও দেখা করত। কোনটা সত্য?
এবার আর একটা হাদিস (বুখারী, বই-১, হাদিস-২) দেখা যাক:
আয়শা থেকে বর্ণিত, আল হারিথ বিন হিসাম আল্লাহর নবীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে নবী! কিভাবে আল্লাহর ওহী আপনার নিকট আসত? তিনি উত্তর দিলেন- মাঝে মাঝে ঘণ্টা ধ্বনির মত শব্দ শুনতে পেতাম, এরপর ওহী নাজিল হতো এবং এটা ছিল সবচেয়ে কঠিন কষ্টদায়ক, এরকম অবস্থা পার হলে যা আমার কাছে নাজিল হতো আমি তা আত্মস্থ করে নিতাম। মাঝে মাঝে ফিরিস্তা আমার কাছে মানুষ রূপে আসত, আমার সাথে কথা বলত, এবং আমি আত্মস্ত করে নিতাম যা আমার নিকট বলা হতো।
আয়শা বলেন, আমি নবীকে দারুণ শীতের দিনেও দেখতাম ওহী আসার পর তাঁর কপাল দিয়ে ঘাম নির্গত হতো।
বলা হচ্ছে জিব্রাইল সরাসরি নবির সাথে সাক্ষাত করত, তাহলে ঘন্টা ধ্বনি হতো কেমনে? এরপর যদি তার কাছে ওহী এসে থাকত তাহলে কঠিন কষ্টই বা হতো কেন? স্বর্গীয় জীবের সাথে দেখা হলে কি প্রচন্ড কষ্ট হয়? ঘামই বা হবে কেন? তাহলে কি ফিরিস্তা তার শরিরের ওপর অদৃশ্যভাবে ভর করত? কিন্তু বলা হচ্চে সশরীরেই নাকি ফিরিস্তা তার কাছে আসতে। আমরা তো দেখি বরং মৃগী রোগীদের যখন রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় অনেক সময় আবোল তাবোল বলে আর প্রচন্ড কষ্ট বোধ হয় ও শরীর দিয়ে ঘাম বের হয়। কিন্তু নবির কাছে আসত এক স্বর্গীয় জীব, তার সাথে মোলাকাত করলে ঘাম কেন আসবে, কেনই বা প্রচন্ড কষ্ট হবে?
এ সম্পর্কিত আরও একটা হাদিস দেখা যেতে পারে (সহি বুখারী, বই-৬১, হাদিস-৫১২):
আল বারা বর্ণিত- এ আয়াত টি নাযিল হলো, “যে সব বিশ্বাসী ঘরে বসে থাকে তাদের মর্যাদা যারা জান মাল দিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে তাদের সমান নয়” (কোরাণ ৪:৯৫)। নবী বললেন, যায়েদকে আমার কাছে ডাক আর তাকে একটা বোর্ড বা হাড়ের টুকরা ও কালি আনতে বল। তারপর তিনি বললেন- “লেখ, সে সব বিশ্বাসী ঘরে বসে থাকে…” এবং এমন সময় আমর বিন উম মাখতুম যে ছিল একজন অন্ধ মানুষ সে সেখানে নবীর পিছনে বসেছিল, নবীকে বলল, “হে আল্লাহর নবী! আমি তো একজন অন্ধ মানুষ, আমার জন্য তোমার কি হুকুম?” সুতরাং সাথে সাথেই আগের আয়াতের পরিবর্তে এ আয়াত নাযিল হলো- “যারা অক্ষম তারা ছাড়া যে সব বিশ্বাসী ঘরে বসে থাকে তাদের মর্যাদা যারা জান মাল দিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে তাদের সমান নয়” (৪:৯৫)।
উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে প্রথমে যে আয়াত নাজিল হয়েছিল তা অসম্পূর্ন। তাহলে জিব্রাইল কি প্রথমে অসম্পূর্ন আয়াত নাজিল করেছিল? তা কি করে হয়? আল্লাহ তো সর্বজ্ঞানী, সে তো কোন অসম্পূর্ণ আয়াত নবির কাছে পাঠাতে পারে না। যাহোক অসম্পূর্ন আয়াত নাজিল করে জিব্রাইল কি চলে গেছিল? চলে গেলে অত:পর অত দ্রুত কিভাবে আবার ফেরত এসে সাথে সাথে সম্পূর্ন আয়াত নাজিল করল? এক্ষেত্রে জিব্রাইল কি আল্লাহর কাছ থেকে ওহি নিয়ে নবির কাছে দিল নাকি নিজেই বানিয়ে সেটা নবির কাছে দিল? কিছুই তো বোঝা যাচ্ছে না। কারন ঘটনা তো মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটেছে যা দেখা যাচ্ছে হাদিসের ঘটনা পরিক্রমায়। আয়াত নাজিলের যে সমস্ত কাহিনী আমরা জানি তাতে দেখা যায়, সাহাবিরা কোন বিষয়ে ফয়সালা চাইলে নবি তাদের কাছ থেকে সময় নিতেন। তারপর দুতিন দিন পর বা আরও দেরী করে তার কাছে আয়াত নাজিল হলে তিনি সে বিষয়ে সমাধান দিতেন। কিন্তু উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সমাধান হাজির। তাহলে অন্য ক্ষেত্রেও কেন দ্রুত আয়াত নাজিল হতো না? সবচাইতে বড় প্রশ্ন - যে বিষয়টা আমর বিন মাখতুম নামের অন্ধ লোকটি বুঝতে পারল, সেটা প্রথমেই আল্লাহ কিভাবে বুঝতে পারল না যে প্রথমে আয়াতটি আংশিক নাজিল হয়েছে?
***********************************************************************************
ইসলাম বোঝার সহজ তরিকা , পর্ব -৪ ( কুরান সংকলনের ইতিবৃত্ত)
দাবী করা হয় গত ১৪০০ বছর ধরে কুরান অবিকৃত ও বিশুদ্ধ। দাবীটা ঠিক আছে। ফাকটা হলো কিভাবে কুরান সংকলিত হয়েছিল সেটা তেমন কেউ বলতে চায় না। বরং এরকমই ভাব করা হয় যেন আল্লাহ একটা কুরান প্রিন্ট করে জিব্রাইলের মাধ্যমে নবীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল। আর তাই আল্লাহ যা নবীর কাছে আয়াত হিসাবে নাজিল করেছিল তার সবটাই অবিকৃত ও বিশুদ্ধ অবস্থায় কুরানে আছে। দাবীটা যে কতটা হাস্যকর ও ভিত্তিহীন সেটা এ পর্বে দেখানো হবে।
এটা সবাই জানে যে নবী নিজেও কুরানকে পূর্ণ আকারে সংকলিত করে যান নি যদিও তার ইচ্ছা থাকলে সেটা খুব ভাল করেই করে যেতে পারতেন। কিন্তু কেন সেটা করেন নি? এর উত্তর আছে কিন্তু কুরানেই। দেখুন:
আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। (সূরা-আল হিজর ১৫:৯, মক্কায় অবতীর্ণ)
যেহেতু আল্লাহ নিজেই তার কুরান সংরক্ষণ করার ঘোষণা দিয়েছে তাই নবী নিজে আল্লাহর সাথে পাল্লা দিয়ে সেটা সংরক্ষণ করার দু:সাহস দেখান নি। তাই নবী নিজে যেটা করেন নি ,সেটা অন্যের করাটা শুধু নবীকে অমান্য করাই নয় , বরং একই সাথে আল্লাকেও অমান্য করা। মনে হয় না কেউ বিষয়টাকে সেভাবে দেখে। অনেকে যুক্তি দেয় যে, যখন আয়াত নাজিল হতো তখন নবী তার সাহাবীকে সেগুলো লিখে রাখতে বলতেন। এ থেকে বোঝা যায় তিনি কুরান সংকলন করতেন। কিন্তু সেটা কেন আমরা বুঝব যখন দেখলাম যে তিনি নিজেই সময় সুযোগ থাকতেও নিজে সেটা সংকলন করেন নি? আমরা তো বরং সেটাই বুঝব যে কিছু লোক মুখস্ত করার আগ পর্যন্ত তিনি সেটা লিখে রাখতে বলতেন। মুখস্ত করার পর সেটা আল্লাহ সংরক্ষন করবে এ বিষয়ে নবীর দৃঢ় আস্থা ছিল। আর তা্ই তিনি সম্পূর্ন কুরানকে সংকলন করেন নি। যাহোক, এত কিছুর পর যেভাবে কুরান সংরক্ষন হয় সেটা সম্পর্কে একটা হাদিস দেখা যাক:
যায়েদ বিন তাবিত (যিনি আল্লাহর বাণী লেখায় নিয়োজিত ছিলেন) বর্ণিত – ইয়ামামা যুদ্ধে (যে যুদ্ধে বহু সংখ্যক কোরানে হাফেজ মারা যায়) বহু সংখ্যক সাহাবী হতাহত হওয়ার পর পর আবু বকর আমাকে ডেকে পাঠালেন যেখানে ওমরও উপস্থিত ছিলেন, বললেন, ওমর আমার কাছে এসে বললেন, “ইয়ামামার যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক মানুষ (যাদের মধ্যে অনেক কোরানে হাফেজও আছে) হতাহত হয়েছে এবং আমার আশংকা হয় অন্যান্য যুদ্ধক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে যাদের মধ্যে অনেক কোরানে হাফেজও থাকবে, আর এভাবে কোরানে হাফেজ মারা যেতে থাকলে কোরানের একটা বিরাট অংশই হারিয়ে যাবে যদি তুমি তা সংগ্রহ না কর।আর আমারও অভিমত যে তুমি কোরান সংগ্রহ কর”। আবু বকর আরও বললেন, “কিভাবে আমি সেটা করতে পারি যা আল্লাহর নবী নিজেই করেন নাই?” ওমর বললেন, “আল্লাহর শপথ, এটা নিশ্চয়ই একটা ভাল কাজ”। “তাই ওমর আমাকে এ ব্যপারে চাপ দিয়ে যেতে লাগল, আমাকে তার প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য বুঝাতে লাগল, অবশেষে আল্লাহ আমার হৃদয় খুলে দিলেন এবং এখন আমারও ওমরের সাথে একই মত”। (যায়েদ বিন তাবিত আরও বললেন) ওমর আবু বকরের সাথে বসে ছিলেন ও আমার সাথে কথা বলছিলেন না। আবু বকর আরও বললেন, “তুমি একজন জ্ঞানী যুবক এবং আমরা তোমাকে সন্দেহ করি না: এবং তুমি আল্লাহর রাসুলের ওহী লেখার কাজে নিয়োজিত ছিলে। অতএব এখন খোজাখুজি করে কোরান সংগ্রহ কর”। আমি (যায়েদ বিন তাবিত) বললাম- “আল্লাহর কসম, কোরান সংগ্রহের মত এরকম কাজ করার চেয়ে যদি আবু বকর আমাকে একটা পাহাড়ও স্থানান্তর করতে বলত সেটাও আমার কাছে অপেক্ষাকৃত সহজ মনে হতো”। আমি তাদের উভয়কে বললাম- “আপনারা কিভাবে সে কাজ করতে সাহস করেন যা আল্লাহর নবী নিজেই করেন নি?” আবু বকর বললেন, “আল্লাহর কসম, এটা প্রকৃতই একটা ভাল কাজ। তাই আমি ওমরের সাথে এটা নিয়ে অনেক তর্ক করেছি যে পর্যন্ত না আল্লাহ আমার অন্তর খুলে দিলেন যা তিনি আমাদের উভয়ের জন্যই খুলে দিয়েছিলেন”। অত:পর আমি কোরান সম্পর্কিত বস্তু অনুসন্ধান করতে লাগলাম, আর আমি পার্চমেন্ট, খেজুর পাতা, হাড় ইত্যাদিতে লেখা এবং এ ছাড়াও যাদের কোরান মুখস্ত ছিল তাদের কাছ থেকে আয়াত সমূহ সংগ্রহ করতে লাগলাম। আমি সূরা আত-তাওবা এর শেষ আয়াতটি খুজাইমার কাছ থেকে সংগ্রহ করলাম যা আমি অন্য কারও কাছ থেকে পাই নি (সে আয়াতগুলো ছিল- তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁর পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। কোরান,০৯:১২৮)
যে পান্ডুলিপিতে কোরানের আয়াত সমূহ সংগৃহীত হয়েছিল, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা আবু বকর তা নিজের কাছেই রেখেছিলেন, অত:পর তা ওমর তাঁর কাছে রেখেছিলেন তাঁর মৃত্যুর পর, এবং অবশেষে তা ওমরের কন্যা হাফসার নিকট ছিল। (সহি বুখারি, বই-৬০, হাদিস-২০)
উক্ত হদিসেই দেখা যাচ্ছে- আবু বকর কুরান সংকলন করতে চান নি, নবীর পদাংক অনুসরন করে, বস্তুত তিনি সেটা করেন ওমরের চাপা চাপিতে। ওমর বলছেন- এভাবে কোরানে হাফেজ মারা যেতে থাকলে কোরানের একটা বিরাট অংশই হারিয়ে যাবে যদি তুমি তা সংগ্রহ না কর। এর অর্থ কি? যেটা আল্লাহ নিজেই সংরক্ষন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সেটা হারিয়ে যায় কেমনে? তার মানে কি ওমর আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না? তারপর বলা হচ্ছে- আল্লাহ তার হৃদয় খুলে দিলেন এটার অর্থ কি? আল্লাহ কি তার কাছে ওহী পাঠাল নাকি কুরান সংরক্ষনের জন্য? কিন্তু সেটা তো অসম্ভব। সে রাস্তা নবী নিজেই বন্দ করে দিয়ে গেছেন। তাছাড়া আল্লাহই বা সেটা করতে যাবে কেন যেখানে সে নিজেই ঘোষণা দিয়েছে কুরান নিজেই সংরক্ষন করবে? সেটা আরও দেখা যাচ্ছে যায়েদ বিন তাবিতের দৃঢ় বক্তব্যে। সে বলছে- “আপনারা কিভাবে সে কাজ করতে সাহস করেন যা আল্লাহর নবী নিজেই করেন নি?” এর অর্থ কি এটাই যে আল্লাহ বুঝতে পারল যে সে আর কুরান সংরক্ষন করতে পারছে না তাই আবু বকরের হৃদয় খুলে দিল? সেটাও তো অসম্ভব। কারন আল্লাহর অসাধ্য কিছু নেই। উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে মাত্র একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে ৯:১২৮ নং আয়াতটি কুরানে সংকলিত হয়। অথচ প্রচার করা হয় কুরানের যে সব আয়াতগুলো কোন কিছুতে লেখা ছিল না, কমপক্ষে দুইজন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে সেগুলো সংকলন করা হয়েছে। এখানে আরও একটা ব্যপার উল্লেখ্য, প্রচার করা হয় সেই সময় বহু কুরানে হাফেজ ছিল। কুরানে হাফেজ অর্থ সম্পূর্ন কুরান যার মুখস্ত। অথচ বাস্তব অবস্থা দৃষ্টে সেটা সেই সময় ছিল অসম্ভব। আজকের মত একটা সম্পূর্ন কুরান তখন কারও কাছে ছিল না। তাই কারও পক্ষে নিয়মিত দৈনিক দুই চার ঘন্টা করে বসে বসে সেগুলো পড়ে মুখস্ত করাও সম্ভব ছিল না। তার অর্থ বহু মানুষ ছিল যাদের হয়ত শুধুমাত্র দুই তিনটি সূরা বা আয়াত মুখস্ত ছিল, তাদের কাছ থেকে শুনে শুনে মুখস্ত করতে হতো। এভাবে জনা জনার কাছ থেকে শুনে শুনে পুরো কুরান মুখস্ত করা যে নিতান্তই অসম্ভব একটা কাজ তা যে কেউই বুঝতে পারে। কারন সেই সময়ে মানুষের জীবন ছিল অত্যন্ত কষ্টকর, জীবিকার তাড়নায় নানা কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। মদিনার জীবনে কিছু মানুষ বসে বসে কুরান চর্চার সুযোগ পায় ঠিকই কিন্তু ১১৪ আয়াতের ৮৬ টি আয়াতই নাজিল হয় মক্কাতে আর সেখানে দাস দাসি শ্রেনীর কিছু মানুষ ছাড়া কেউ ইসলাম গ্রহন করে নি। তাদের কারও পক্ষে মালিকের কাজ ফাকি দিয়ে পুরো ৮৬ আয়াত মুখস্ত করা কি ভাবে সম্ভব তা বোঝা মুস্কিল। তাছাড়াও তাদের কাছে সম্পূর্ন এক খন্ড কুরান ছিল না বসে বসে মুখস্ত করার জন্য। সুতরাং এরকম অবস্থায় ইয়ামামার যুদ্ধে যে বহু মুসলমান মারা যায়, সে সময় শুধুমাত্র দু চারটি আয়াত যাদের মুখস্ত ছিল তারা মারা যাওয়াতে সেসব আয়াত যে চিরতরে হারিয়ে যায় নি - তার নিশ্চয়তা কি? যখন আমরা দেখছি ৯:১২৮ আয়াত শুধুই মাত্র একজনের মুখস্ত ছিল? এছাড়াও দেখা যায় বহু আয়াতই কুরানে সংকলিত হয় নি, যেমন নিচের হাদিস:
আয়শা বর্ণিত-পাথর মারা ও প্রাপ্ত বয়স্কদেরকে স্তন্য পান করানোর বিষয়ে যে আয়াত নাযিল হয়েছিল, তা একটা পাতায় লিখে আমার বিছানার নিচে রাখা হয়েছিল।যখন নবী মারা গেলেন আর আমরা তার দাফন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, তখন একটা ছাগল ঘরে ঢুকে আয়াত লেখা পাতা খেয়ে ফেলে। (ইবনে মাজা, হাদিস ১৯৩৪)
ইবনে আব্বাস বর্ণিত- ওমর বললেন, আমার ভয় হয় অনেক দিন পার হয়ে গেলে লোকজন বলাবলি করতে পারে -“ আমরা কোরানে রজম(পাথর মেরে হত্যা) সম্পর্কে কোন আয়াত পাচ্ছি না এবং অত:পর তারা আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম ভূলে বিপথগামী হয়ে যেতে পারে।দেখ, আমি নিশ্চিত করে বলছি, যেই ব্যভিচার করবে তার ওপর পাথর মেরে হত্যার শাস্তি কার্যকর করা হোক এমনকি যদি সে বিবাহিত হয়, অথচ তার অপরাধ যদি সাক্ষী বা গর্ভধারণ বা স্বীকারোক্তি দ্বারা প্রমানিত হয়, তাহলেও”। সুফিয়ান যোগ করল, “আমি বিবৃতিটি এভাবেই শুনেছিলাম যা আমি স্মরণ করি এভাবে যে ওমর আরও বলল-আল্লার নবী নিজেও পাথর মেরে হত্যার শাস্তি কার্যকর করেছিলেন এবং আমরাও তাঁর পর এটা কার্যকর করেছিলাম”। (সহি বুখারী, বই-৮২, হাদিস-৮১৬)
উক্ত হাদিস থেকে দেখা যাচ্ছে বয়স্কদের দুধ পান করানো ও ব্যভিচারের শাস্তি পাথর ছুড়ে মারার জন্য আয়াত নাজিল হয়েছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা বর্তমান কুরানে নেই। কেন নেই? এমনকি কুরানের আয়াত ছাগলে পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে। এভাবে আরও যে কত আয়াত ছাগল বা দুম্বায় খায় নি তার প্রমান কি? উল্লেখ্য, দুধ পান করানোর বিষয়টা হলো - কোন পর পুরুষ যদি কোন নারীর স্তনের দুধ ৫ বার খায় তাহলে সেই লোকের সাথে উক্ত নারীর (মা-ছেলের সম্পর্ক) স্থাপিত হবে।এ ব্যপারে বিস্তারিত জানা যাবে এখানে - পরপুরুষকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ফতোয়াঃ।
এবার আমরা নিচের হাদিসটি দেখি:
মাসরুক বর্ণিত- আমরা আব্দুল্লাহ বিন আমর এর নিকট গমন করতাম ও কথা বার্তা বলতাম। একদা ইবনে নুমাইর তার নিকট আব্দুল্লাহ বিন মাসুদের নাম উল্লেখ করল। তখন তিনি(আমর)বললেন-তোমরা এমন একজন ব্যাক্তির নাম বললে যাকে আমি অন্য যে কোন মানুষের চেয়ে বেশী ভালবাসি। আমি আল্লাহর রসুলকে বলতে শুনেছি- চারজন ব্যাক্তির কাছ থেকে কোরান শিক্ষা কর, অত:পর তিনি ইবনে উম আবদ্ (আব্দুল্লাহ মাসুদ) এর নাম থেকে শুরু করে মুয়াদ বিন জাবাল, উবাই বিন কাব ও শেষে আবু হুদায়ফিয়ার নাম উল্লেখ করলেন। (সহি মুসলিম, বই-৩১, হাদিস-৬০২৪)
এ হাদিসটি থেকে জানা যাচ্ছে- নবী নিজের জীবদ্দশায় চারজন সাহাবীকে প্রত্যয়ন করেন এ মর্মে যে তারাই কুরান সবচাইতে ভাল জানত ও যারা ছিল তার কথায় কুরানে হাফেজ। যদি খেয়াল করা হয় আবু বকর যখন কুরান সংকলন করার উদ্যোগ নিলেন তখন উক্ত চারজন সবাই বেঁচে ছিল। কিন্তু তাদের কাউকেই তিনি কুরান সংকলনের দায়িত্ব দেন নি। সুতরাং প্রশ্ন করা যেতেই পারে কেন তিনি দেন নি? কারন নবী কর্তৃক সত্যায়িত এ চারজনের যে কেউই তো কুরান সবচাইতে ভাল সংকলন করতে পারতেন।
আবু বকর, মৃত্যু: ৬৩৪ সালে।
ওমর, মৃত্যু: ৬৪৪ সালে।
ওসমান মৃত্যু: ৬৫৬ সালে।
আব্দুল্লাহ মাসুদ, জন্মঃ মক্কা, মৃত্যু: ৬৫০ সালে।
উবাই ইবনে কাব, জন্ম: মদিনা, মৃত্যু:৬৪৯ সালে।
মুয়াদ বিন জাবাল, জন্ম: মদিনা- কখন মারা যায় সঠিক রেকর্ড নাই, তবে ওমরের আমলে বেঁচেছিল কারন ওমর তাকে বাইজান্টাইনের বিরুদ্ধে এক সেনাদলের প্রধান করে পাঠায়।
আবু হুদায়ফিয়ার, জন্ম: মক্কা- আবু বকরের আমলে বেচে ছিল। (সূত্র: wikipedia.org)
উক্ত তালিকা থেকে দেখা যায় নবী কর্তৃক সত্যায়িত চারজনই আবু বকরের আমলে বেঁচে ছিল।
আনাস বিন মালিক বর্ণিত- হুদায়ফিয়া বিন আল ইয়ামান ওসমানের কাছে আসল যখন কিছু শাম ও ইরাকি দেশীয় লোক তাঁর কাছে উপস্থিত ছিল। হুদায়ফিয়া শাম ও ইরাক দেশীয় লোকদের ভিন্ন উচ্চারণে কোরাণ পাঠ নিয়ে ভীত ছিলেন, তাই তিনি বললেন- হে বিশ্বাসীদের প্রধাণ, ইহুদী ও খৃষ্টানরা যেমন তাদের কিতাব বিকৃত করেছিল তেমনটি থেকে কোরাণকে রক্ষা করার জন্য আপনি কিছু করুন। সুতরাং ওসমান হাফসা (নবীর স্ত্রী ও ওমরের কন্যা) এর নিকট এক বার্তা পাঠালেন- দয়া করে আপনার নিকট রক্ষিত কোরাণের কপিটা আমাদের কাছে পাঠান যাতে করে আমরা তার একটা বিশুদ্ধ কপি করতে পারি ও তারপর সেটা আপনার নিকট ফিরিয়ে দেয়া হবে। হাফসা সেটা ওসমানের নিকট পাঠালেন। ওসমান তখন যায়েদ বিন তাবিত, আব্দুল্লাহ বিন আয যোবায়ের, সাদ বিন আল আস ও আব্দুর রহমান বিন হারিথ বিন হিসাম এদেরকে কোরাণের পান্ডুলিপি পূন: লিখতে আদেশ করলেন। ওসমান তিনজন কুরাইশ ব্যাক্তিকে বললেন- যদি তোমরা কোন বিষয়ে যায়েদ বিন তাবিত এর সাথে কোরাণের কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ কর, তাহলে তা কুরাইশ উচ্চারণে লিখবে, কারণ কোরাণ সে উচ্চারণেই নাজিল হয়েছিল। তারা সেরকমই করলেন আর যখন অনেকগুলো কপি লেখা হলো তখন ওসমান আসল কপিটা হাফসার নিকট ফেরত দিলেন। অত:পর ওসমান একটি করে কপি প্রতিটি প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন এবং একই সাথে বাকী সব পান্ডুলিপি যা সম্পূর্ণ বা আংশিক ছিল সেসব পুড়িয়ে ফেলার হুকুম করলেন। যায়েদ বিন তাবিথ আরও বলেন- আল আহযাব সূরার একটি আয়াত আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম যখন আমরা কোরাণ সংকলন করছিলাম ও আমি তা আল্লাহর নবীকে তেলাওয়াত করতে শুনেছি। তাই এটা আমরা খুজতে শুরু করলাম ও খুজাইমা বিন তাবিথ আল আনসারি এর নিকট তা পেলাম। আয়াতটা ছিল ৩৩:২৩। (সহী বুখারী, বই-৬১, হাদিস-৫১০)
উক্ত হাদিস মোতাবেক জানা যাচ্চে যে ওসমান পূনরায় আর একটি কুরান সংকলন করেন, যা অবশ্য আবু বকরের কুরানের দ্বারাও সত্যায়িত ছিল। কিন্তু যেহেতু এবারও পূর্ববর্তী যায়েদ বিন তাবিত সহ আরও দুইজন কে দায়িত্ব দেয়া হয় ও বলা হয় কুরান লিখতে হবে কুরাইশ আঞ্চলিক আরবী ভাষায় তা থেকে বোঝা যাচ্ছে আবু বকর কৃত কুরান সম্পূর্ণ ছিল না। তবে ওসমান যে কুরান সংকলন করেন তা যদি তিনি বহু কপি করে সংরক্ষন ও বিতরন করতে পারেন, তাহলে তার কুরান যে পূর্ববর্তী হাফসার কাছে রক্ষিত কুরান থেকে হুবহু কপি করা হয়েছিল সেই মূল কপি কেন তিনি সংরক্ষন করলেন না? বা পরবর্তী খলিফারা কেন সেই মূল পান্ডুলিপি সংরক্ষন করলেন না? সেটা করা তো তাদের জন্য খুব সহজ ছিল। তাহলে আমরা কিভাবে বলতে পারি যে হযরত ওসমান কৃত পরবর্তী কুরানের সংকলন হুবহু আগের সংকলনের অনুরূপ বা আগের সংকলনের সব সূরা বা আয়াত বর্তমান সংকলনে কপি করা হয়েছে? অথচ এ ধরনের এক অভিযোগ তুলে কিন্তু ইসলামী স্কলাররা বাইবেলের সংরক্ষনকে প্রশ্ন বিদ্ধ করে দাবী করে যে বর্তমানে বাইবেলের যে কপি পাওয়া যায় তা মূল বাইবেলের অনুরূপ নয় বা বিকৃত। তারা বলতে চায় মূল হিব্রু বা এরামাইক ভাষার পান্ডুলিপি যেহেতু নাই তাই বর্তমান বাইবেল বিকৃত। কিন্তু সেই একই যুক্তি কেন কুরানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে না? এবার আর একটা হাদিস দেখতে পারি -
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস বর্ণিত- আল্লাহর নবী বলেছিলেন, জিব্রাইল আমার কাছে কোরাণকে এক রীতিতে উচ্চারণ করত। অত:পর আমি তাকে বলতাম তা অন্য রীতিতে উচ্চারণ করতে এবং সে বিভিন্ন রীতিতে তা উচ্চারণ করত এবং এভাবে সে সাতটি রীতিতে উচ্চারণ করে আমাকে শিখাত। (সহী বুখারী, বই-৬১, হাদিস-৫১৩)
দেখা যাচ্ছে সাতটি ভিন্ন উচ্চারনে কুরান নাজিল হয়েছিল। তাই যদি হয় বর্তমানে শুধুমাত্র একটি উচ্চারনের কুরান কেন দেখি? আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে কুরান যদি সংকলিত করতেই হয় তাহলে সেই সাতটি উচ্চারনের কুরানকেই সংকলন করার দরকার ছিল তাহলেই সেটা হতো বিশুদ্ধ সংকলন। এখন সব আয়াত সম্বলিত কাঠ, খেজুরপাতা, চামড়া ওসমান পুড়িয়ে ফেলার পর আমরা বুঝব কেমনে যে সত্যি সত্যি তিনি যথাযথ কুরান সংকলন করেছেন? বর্তমানে যে কুরানের কপি দেখি, উক্ত কুরানের সূরা ও আয়াত সম্বলিত একটা করে সেই কাঠ, খেজুরপাতা বা চামড়া লিখিত পান্ডুলিপি সংগ্রহ করে রাখলেই আমরা বুঝতে পারতাম যে হযরত ওসমান যথাযথভাবে কুরান সংকলন করেছেন, অন্তত: পক্ষে আমরা সেটা পরীক্ষা করে দেখতে পারতাম। সহি হাদিস থেকেই যেখানে আমরা দেখছি অনেক আয়াতই কুরানে সংকলিত হয় নি সেখানে ওসমান যে সত্যি সত্যি উক্ত আদি পান্ডুলিপি থেকে সকল আয়াতই তার কুরানে সংকলিত করেছেন তার গ্যরান্টি কি? সাতটা ভিন্ন উচ্চারনের কুরান যে সাত রকম অর্থযুক্ত ছিল না তার প্রমান কি?
ইউসূফ বিন মাহক বর্ণিত- যখন আমি আয়শা, সমস্ত বিশ্বাসীদের জননী এর নিকট বসে ছিলাম , ইরাক থেকে এক লোক এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “কোন ধরনের আচ্ছাদন সর্বোত্তম?” আয়শা বললেন- তোমার ওপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন। কিন্তু বিষয় কি? সে বলল- হে জননী, আমাকে আপনার কোরান থেকে দেখান। তিনি জিজ্ঞেস করলেন- কেন? সে বলল-কোরাণকে সেটার অনুযায়ী অনুলিপি করতে চাই কারণ লোকজন এর সূরা সমূহ সঠিকভাবে উচ্চারণ করছে না। ……অত:পর আয়শা তার কোরাণটা বের করলেন আর লোকটাকে কোরাণের সূরা কিভাবে সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে হবে তা শিখিয়ে দিলেন। (সহী বুখারী, বই-৬১, হাদিস-৫১৫)
উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে আয়শার কাছেও একটা কুরান ছিল, কিন্তু সেটা এখন কোথায়? কুরান সংকলনের সময় এ কুরান থেকে কোন সাহায্য নেয়া হয়েছে সেটা তো দেখা যাচ্ছে না। সেই কুরান এখন কোথায়?
কুরানের দিকপাল ও সর্বমান্য স্কলার ইবনে কাথির বিভিন্ন হাদিস, সিরাত এসব পর্যালোচনা করে নিচে যে তাফসির করেছেন তা একটু দেখা যাক:
মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে যে, হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রা) হযরত যির (রা) কে জিজ্ঞেস করলেন- সূরায়ে আহযাবে কতটি আয়াত গণনা করা হয়? তিনি উত্তর দিলেন- তিয়াত্তরটি।তখন হযরত উবাই ইবনে কা'ব বললেন- না না, আমি তো দেখেছি সূরাটি সূরা বাকারার প্রায় সমান ছিল। এই সূরার মধ্যে আমরা নিম্নোক্ত আয়াতটিও পাঠ করতাম -
বুড়ো বুড়ি যদি ব্যাভিচার করে তাহলে তাদেরকে পাথর ছুড়ে হত্যা করে ফেল, এটা হলো আল্লাহর পক্ষ হতে শাস্তি। আল্লাহ মহা পরাক্রমশালি ও বিজ্ঞানময়।- এর দ্বারা জানা যায় যে - এ সূরার কতকগুলি আয়াত আল্লাহর নির্দেশ ক্রমে বাতিল হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী।
(পৃষ্ঠা ৭৩৩, খন্ড ১৫, তাফসির ইবনে কাসির, অনুবাদ : ড, মুজিবুর রহমান, প্রাক্তন অধ্যাপক ও সভাপতি, আরবি ও ইসলামিক ষ্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়।)
অনলাইনে এ বাংলা তাফসির পাওয়া যাবে এখানে, http://www.quraneralo.com/tafsir
উক্ত বর্ণনা মতে দেখা যায় শুধুমাত্র সূরা আহযাব থেকেই প্রায় ২০০ এর মত আয়াত বাদ পড়েছে। কারন সূরা বাকারাতে মোট আয়াত সংখ্যা ২৮৬ কিন্তু আহযাবে মাত্র ৭৩ টা।
কুরান আসলে কিভাবে সংকলিত হয়েছে এ সম্পর্কিত আরও বহু দলিল দেখানো যেতে পারে। এ বিষয়ে কিছু আলেমকে প্রশ্ন করলে তারা বলে - শুধু হাদিস বা তাফসির থেকে কুরানের সংকলন বোঝা যাবে না বা ইসলাম বোঝা যাবে না। কুরান সংকলন বুঝতে গেলে কোথা থেকে বুঝতে হবে সেটাও তো বোধগম্য নয়। তারা তখন কুরানের উক্ত আয়াত বর্ণনা করে যেখানে বলা হয়েছে আল্লাহ বলছে - আমিই কুরানের সংরক্ষনকারী,এটা তারা এমন ভাবে বলে যেন আল্লাহ একটা ছাপান কুরান সুন্দর বাধাই করে জিব্রাইলের মাধ্যমে তা নবীর কাছে পাঠিয়েছে, না হয় আল্লাহ নিজেই এসে কুরানকে বর্তমান আকারে সংকলন করে গেছে। তারা বুঝতেই পারে না, কুরানের নিজের বানী কুরানকে ডিফেন্ড করে না, কুরান যার কাছে নাজিল হয়েছিল বা নাজিল হওয়ার পর যারা তার সংরক্ষন করেছিল তাদের সাক্ষীই একমাত্র কুরানের বানীকে ডিফেন্ড করতে পারে। যার কাছে নাজিল হয়েছিল বা যারা নাজিলের পর সেসব সংরক্ষন করেছিল, তাদের ঘটনার ইতিবৃত্ত আমরা কুরানে পাই না, পাই হাদিস, সিরাত ও পরিশেষে তাফসির থেকে। আর উক্ত কিতাবগুলোই বলছে কুরান কিভাবে সংরক্ষিত হয়েছিল। সেটাই এখানে বিবৃত করা হলো মাত্র। তবে এতসব প্রশ্নের একটা সহজ উত্তরও আছে তা হলো কুরানই একমাত্র সত্য বাকি সব মিথ্যা। সেক্ষেত্রেও প্রশ্ন থাকে বাকী সব মিথ্যা হলে কুরানের অস্তিত্ব থাকে কেমনে?