Friday, September 11, 2015

অপ্রকৃতস্থ আমি ও কাকগুলো ---

প্রথম পর্বঃ-
কাক
আমার অপ্রকৃতিস্থ হওয়ার গল্প তাহলে আপনাদের শোনাই-
এক
আমি যা করছি এটাকে চরম নির্লজ্জতায় বলা যায় কিন্তু তবুও করছি, কারণ করতে হবেই, এটা তো অফিসিয়াল সুবিধা হয় তুমি গ্রহণ কর অথবা না করলে তোমার পরিবর্তে অন্য কাউকে এটা দেওয়া হবে অথবা কাউকে দেওয়া হবে না। এখানে নিয়ম মানা হয় নীতিমালা দেখে। বাংলাদেশে কোথাও না বেড়ালেও ভারতে আমাকে বেড়াতে যেতে হবে কারণ অফিস ধার্য করেছে এবার নির্বাচিত ব্যক্তিদেরকে ভারতে বেড়াতে নিয়ে যাবে। অফিসের নির্দেশ অনুযায়ী পাসপোর্ট করা হয়ে গেছে, বিরাট সৌভাগ্যবশত: আমি যে অফিস থেকে পাসপোর্ট করলাম সেখানকার অফিস কর্ণধার নাকি নতুন এসেছেন যথেষ্ট সৎ, পাসপোর্ট করতে যেয়ে তাই মনে হয়েছিল, কারণ পাসপোর্ট করতে যেয়ে কোন প্রকার সমস্যায় পড়তে হয়নি, কোন বাড়তি টাকা পয়সাও খরচ করতে হয়নি। সরকারী অফিস সম্পর্কে আমার ধারণাটাই পাল্টে গেছে। তবে আমার ভুলের কারণে পাসপোর্টে ছোট্ট একটা গণ্ডগোল আছে।
বিপত্তিটা তখনই শুরু হল, যখন আমাকে ভারতীয় ভিসা সংগ্রহ করতে হল। যেহেতু আমার কম্পিউটার ও অনলাইন এ সব সম্পর্কে কিছুটা ধারনা আছে সেহেতু চাইছিলাম নিজেই অনলাইনে ভিসার আবেদন করে ভিসা সংগ্রহ করব। আমার কলিগদের ভিসা ফর্ম দেখে দেখে মোটামুটি নির্ভুল ভাবে ফর্ম পূরণ করলাম কিন্তু ইন্ডিয়ান এমবাসিতে যাওয়ার তারিখ কোন ভাবে সংগ্রহ করতে পারলাম না, কিন্তু আমি নাছোড় বান্দা তিন মাস ধরে একাধারে চেষ্টা করতে থাকলাম। এদিকে অফিসের সকলেই ভারত থেকে ঘুরে এসেছে। আমি কখনও দেশে বা বিদেশে সেই অর্থ ঢাকা ছাড়া একা কোথাও বেড়াতে যাইনি। ঢাকা যদি একা বেড়ানো যায় বিশ্বের যে কোন জায়গা একা বেড়ানো সম্ভব এই দৃঢ় বিশ্বাস অনেক আগে থেকে আমার মনে জন্ম নিয়েছে। সবাই নানান রকম ভাবে একা যাওয়া ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করতে লাগল। অন্যের উৎসাহ অনুৎসাহ বেশ কিছু দিন খুব একটা পাত্তা দেইনা, এবারও দিলাম না। এদিকে তিন মাস ধরে ভিসা সংগ্রহ করতে না পেরে দালাল ধরে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সংগ্রহ করতে তা সমর্থ হলাম। টাকা প্রকৃত খরচের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি লাগল বটে; তবে আমাকে ভারতীয় এমবাসিতে পর্যন্ত যেতে হল না।
ভিসা সংগ্রহ করার পর একজন সঙ্গী খুঁজতে লাগলাম কম বেশি Xenophobia তো কাজ করছেই। তবে একদিন খোঁজার পরে দুর্ভাগ্যবশত: অথবা সৌভাগ্যবশত যখন কাউকে খুঁজে পেলাম না খুব দ্রুতই তার পরদিন অফিস থেকে টাকা নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। আমার বাসা থেকে চেকপোস্ট সব মিলিয়ে তিন কিলোমিটারের মত হবে। ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ গুছিয়ে নিলাম গুছানো মাত্রই একজন কলিগকে পেয়ে গেলাম। মোটর বাইকে করে ভদ্রলোক বাংলাদেশী ভারতে ঢোকার চেকপোস্টে সর্বোচ্চ দশ মিনিটের মধ্যে আমাকে পৌঁছে দিলেন। চেকপোস্টে ঢোকার পরপরই বেশ কয়েকজন লোক আমার পাশে এসে উপস্থিত হলেন। তারা আমাকে সহযোগিতা করতে চায়, প্রয়োজনীয় সমস্ত লেখালেখির কাজ তারাই করে দিবে। এমন সময় দেখি আমার শশুরের ফোন আসল, বললেন-
-আলমগীর তুমি তোমার কুদ্দুস আঙ্কেলের সাথে দেখা কর ও সব ঠিকঠাক করে দেবে।
আমি চেক পোস্টে একজন কে জিজ্ঞেস করলাম-
-এখানে কুদ্দুস আঙ্কেল কে?
-জামাই আমি।
বুঝলাম শশুর মশাই ওনাকে যা বলার বলে দিয়েছেন।
-তুমি এখানে বস, আমি চায়ের কথা বলে দিচ্ছি, এই জামাইকে এক কাপ স্পেশাল চা দাও। এক দোকানদারকে বললেন।
বুঝলাম অন্যদের ধরে গেলে যে টাকা খরচ হতো ইনার মাধ্যমে গেলে তারচেয়ে একটু বেশিই খরচ হবে কারণ ওনার স্নেহও অতিমাত্রা সহযোগিতার একটা মূল্য দিতে হবে। তথ্য সংগ্রহ করলাম সাধারণত: যারা সহযোগিতা করে তাদেরকে কত টাকা দিতে হয়। ধরে নিলাম শশুরের রেফারেন্স-এর কারণে খরচটা আমাকে দ্বিগুণ করতে হবে।
-বাবা তুমি কি ইন্ডিয়া যাবা? এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন।
-জী, আপনিও কি যাচ্ছেন?
-হ্যাঁ বাবা কিন্তু দেখো এরা আমাকে খুব ঝামেলা করছে, সকাল সাতটা থেকে আছি এখন সাড়ে নয়টা বাজে, আড়াই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি।
আমি চিন্তা করলাম আমার সবে মাত্র মিনিট দশেক হয়েছে। তার মানে এখনও ঘণ্টা দুই/তিন অপেক্ষা করতে হবে।
-জামাই বাবাজি এসো। কুদ্দুস আঙ্কেল আমাকে ডাক দিলেন।
ভদ্রলোকের পিছে পিছে গেলাম, একটি রুমে নিয়ে গেলেন, পুলিশের মত পোশাক পরে থাকা কম্পিউটারের সামনে বসা ব্যক্তিটি, আমাকে জিজ্ঞেস করলেন-
-কি করেন আপনি?
-একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করি।
-কেন ভারতে যাচ্ছেন?
-বেড়াতে যাচ্ছি, অফিস বেড়ানোর সুযোগ দিয়েছে।
-স্যার ইনি আমার জামাই। কুদ্দুস আঙ্গেল বসে থাকা ব্যক্তিকে বললেন।
অনেক লোকের মধ্যে আমার পাসপোর্ট আগে হাতে নিয়ে আমারটার কাজ আগে সেরে দিলেন। ভাবলাম এত সুবিধা যখন পাচ্ছি টাকা দু’শো অতিরিক্ত খরচ হলে সমস্যা নেই। দুইশ টাকার বিনিময়ে দুই ঘন্টা সময় পাচ্ছি মন্দ কি।
-জামাই তোমার সব কাজ শেষ।
মাত্রই পনের মিনিটই সব হল। আমি বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম।
-আঙ্কেল আপনাকে কয় টাকা দিতে হবে?
-মেয়েকে ভাল করে দেখেশুনে রেখো, টাকা তোমাকে দিতে হবে না।
খুব লজ্জা পেয়ে গেলাম। কি বলব বুঝতে পারছি না।
-চল তোমাকে বিজিবিদের সাথে পরিচয় করে দিয়ে আসি। তাহলে ওরা তোমাকে কোন ঝামেলায় করবে না।
বলতে বলতে কয়েকজন বিজিবি সদস্য বসে আছেন সেখানে পৌঁছে গেলাম।
-স্যার আমার জামাই।
-আচ্ছা যান আপনি চলে যান। একজন ভারত ফেরত ব্যক্তির ব্যাগ চেক করতে থাকা বিজিবি সদস্য আমাকে বললেন।
ইশারায় জানতে চাইলাম আমার ব্যগ চেক করবে কিনা। ইশারায় উনারও ব্যাগ চেক না করার কথা জানিয়ে দিলেন।
-জামাই তুমি ভ্যানে চলে যাও; গেদে চেক পোস্ট পর্যন্ত চল্লিশ টাকা ভাড়া নেবে।
-হেঁটে গেলে কত সময় লাগবে? আমি একটু লাজুক ভঙ্গিমায় জিজ্ঞেস করলাম।
-তোমার ব্যাগতো ভারি না। তুমি হাটতে হাটতে যাও মাত্র চার পাঁচ মিনিট লাগবে।
-ভ্যানে না উঠলে আবার কোন প্রকার সমস্যা হবে নাতো।
-না তা হবে না।
-তা হলে হাঁটতে হাঁটতে যাই।
কুদ্দুস আঙ্কেল একটা কার্ড মানি ব্যাগ থেকে বের করে দিলেন। বললেন-
-তুমি এর কাছে চলে যাও ও সব কিছু ঠিক-ঠাক করে দিবে, ওখান থেকে তুমি টাকা ভাঙিয়ে নিবে। তাহলে ঠকবে না। অন্য জায়গায় গেলে ঠকতে হবে।
দুই/তিন মিনিট হাঁটার পরই ঠিক কাঁটা তারের বেড়া যেখানটাতে দেওয়া ঠিক সেই জায়গায় পৌঁছে গেলাম। তখনই ঠিক মাথার উপর দিয়ে কয়েকটি কাক ভারতীয় সীমান্তবর্তীয় গাছ থেকে উড়ে বাংলাদেশে এসে প্রবেশ করল। পাখিগুলোর পাখার শাঁ শাঁ শব্দ আমার কানে এসে লাগল। মানুষ হিসাবে জন্মানোর চরম নির্লিজ্জ্বতা উপেক্ষা করার একটা সলজ্জ হাসি হাসলাম। একটু সামনেই বিজিবি সদস্যগণ ভারত গামী ও ভারত ভ্রমণ শেষ করে ফেরত আসা বাংলাদেশীদের পাসপোর্ট চেক করছে। আমার পাসপোর্টের যেহেতু একটা সমস্যা আছে সেহেতু মনের মধ্যে একটু ভয় লাগতে শুরু করল। ওখানে তো আর শশুরের বন্ধু নেই।

পর্ব দুইঃ-
Crow on the Branch

এক কথায় মেয়েটা শ্যাম সুন্দরী। ভুরু দুইটা সাজানো গোছানো। কাল বড় দু’টো চোখের উপরে ভ্রুগুলো শিল্পী দিয়ে মনে হয় সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ইউনিফর্মটা অফিসিয়াল বানানোর পরিবর্তে আরও সুন্দরী বানিয়েছে। উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চির মত হবে। অপ্রয়োজনীয় মেদ শরীরের কোন অংশে অহেতুক ভিড় করেনি। শরীরের যে অংশ যেমন হলে মানায় ঠিক সেই অংশটি সেই রকমই আছে।
-হ্যালো দাদা তোমার পাসপোর্টটা দাও আর এই নাও এখানে স্বাক্ষর কর।
পাসপোর্টের গণ্ড-গোলটা আমাকে খোঁচা দিতে লাগল। এই বুঝি সমস্যায় পড়ে যাই। পাসপোর্টটা হাতে দিয়ে স্বাক্ষর করলাম।
-দাদা তুমি এটা কি করলে?
ভয় পেয়ে গেলাম, পাসপোর্টের সমস্যাটা ধরে ফেলল নাকি। ধরলে অনেক যন্ত্রনা হতে পারে। বিশেষত এসব ক্ষেত্রে ছোটখাট সমস্যা থাকলেও বড় ধরনের যন্ত্রনা দেয়, কিছু টাকা পয়সা খরচ করলে আবার ছেড়ে দেয়। একবার মোটর সাইকেল নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলাম। কাগজ দেখার জন্য আমাকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আটকালো। নতুন মোটর সাইকেল। রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত বিষয়াদি তখনও পর্যন্ত শেষ হয়নি। কাগজ দেখতে চাইলে নিবন্ধন সংক্রান্ত কাগজপত্রের ফটোকপি দেখালাম। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চাইলে দেখাতে পারলাম না। স্বাভাবিক ভাবেই আটকে রাখল, মামলা করবে বলছে। কর্তৃপক্ষের সমস্যা হচ্ছে তারা মোটরসাইকেল আটকে রাখতে পারেন না যা পারেন তাহলো এইসব ভুলের জন্য মোটর সাইকেলের নিবন্ধন সংক্রান্ত কাগজপত্র আটকে রেখে মামলা করতে। ব্যাপারটা আমি পথ চলতে চলতে বুঝে গেছি। কিন্তু কাগজগুলোতো ফটোকপি আটকে কোন লাভও হবে না। আবার যারা গাড়ীগুলো আটকাচ্ছে তাদেরও গাড়ীর কাগজপত্র চেক করার বৈধ ক্ষমতা আছে বলে মনে হলো না। যারা একাজগুলো করতে পারে তাদের সহজেই চেনা যায় কিন্তু আমি চিনতে পারিনা। লক্ষ্য করলাম অন্য আরোহীদের কাছ থেকে পঞ্চাশ টাকা একশ টাকা যা পাচ্ছে তাই নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। ব্যাপারটা বোঝার পর আমি টাকা দিতে চাইলাম না। বললাম
- মামলা করে দেন আটকে রাখছেন কেন?
একজন পুলিশ সদস্য আলাদা জায়গায় ডেকি নিয়ে বললেন-
-ভাই একশ টাকা দিয়ে দেন ছেড়ে দিবে, অহেতুক ঝামেলায় জড়াতে চাচ্ছেন কেন?
-না ভাই আমি ঘুষ দিতে পারবনা, পারলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করে দেন।
নানান ধরনের ঝামেলার ভয় দেখালেন কিন্তু কিছু করতে পারছেন না। কিছুক্ষণ পরে কয়েকটা প্র্রশ্ন করে ওপরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দিলেন। আর বলে দিলেন আমি যেন কাউকে কিছু না বলি।
এখানে হয়তো ঝামেলা হলে ভালই হবে। সামলাতে পারবনা, এই সেক্টরে আমার মামা খালু কেউ চাকুরী করেন না ঝামেলা হলে যারা সমাধান করে দিবেন।
-দাদা তুমি কোথায় স্বাক্ষর করলে? দেখছো না এক ঘর ফাঁকা রাখতে হবে। শ্যাম সুন্দরী একটু বিরক্ত হয়ে বললেন।
-সরি, সরি, সরি।
-ঠিক আছে যাও, এই দিক দিয়ে ট্রেন স্টেশনে যাও।
যাক পাসপোর্ট সংক্রান্ত সমস্যাটা তাহলে ওনার চোখেও ধরা পড়েনি। তবে এখানে আরও দশ মিনিট সময় দেরী হলে সময়ের খুব একটা অপচয় হতো না।
-দিদি এখানে পার্থকে? শ্যাম সুন্দরীকে জিজ্ঞেস করলাম
-স্টেশনে চলে যাও, মানি চেঞ্জারের কেউ হবে।
আর চার/পাঁচ মিনি হাটার পর গেদে ট্রেন স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। সব মিলিয়ে এই স্টেশনটি আমার বাসা থেকে সাড়ে তিন থেকে চার কিলোমিটার হবে। কাঁটাতার এই দূরত্বকে অনেক অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষের অবিশ্বাসী দৃষ্টি কাটা তারের গ্লাস দিয়ে ঢাকতে চাইছে, বড়ই হাস্যকর।
-Excusme দাদা, এখানে পার্থ কে?
-আপনি আলমগীর? একজন অনুর্দ্ধো ত্রিশ বছর বয়সের এক যুবক এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল।
- জি
-আসুন আমার সাথে আসুন
-দেখি আপনার মোবাইল বের করেন।
-মোবাইল কি করবেন?
-ইন্ডিয়ান সিম নিবেন না।
-হুম,
মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে দিলাম, অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করল কিন্তু আমার স্বল্প মূল্যের স্মার্ট ফোনে কোন ভাবেই ইন্ডিয়ান সিম সাপোর্ট করল না। এনিয়ে একটা ট্রেন মিস করেছি। আরেকটা ট্রেনের ছাড়ায় সময় হয়ে গেলো প্রায়।
-অফিসে চলেন
-একবার তো পাসপোর্ট দেখেছে আবার দেখবে নাকি
-দেখবে না? ওরতো বিএসএফ শুধু আপনার নাম এন্ট্রি করেছে মাত্র। এখানে এরা আপনার পাসপোর্ট স্ক্যান করে নেবে, আপনার ছবিও তুলে নেবে।
একটু ভয় পেয়ে গেলাম। না জানি কি সমস্যায় পড়ে যায়।
-ওখানে পাসপোর্টটা দেন।
-আপনার নাম কি? ভেতর থেকে পাসপোর্ট মেলে ধরে আমাকে একজন জিজ্ঞেস করলেন।
-আলমগীর কবির
-নাম তো ভুল বললেন
-উমম না ঠিকইতো বললাম।
-পুরো নাম বলেন
-আলমগীর কবির
-আগে কিছু নেই
-মোহাম্মদ আলমগীর কবির।
-হুমম এই বার ঠিক বলেছেন। এই ইনিকি তোমার পরিচিত? পার্থ বাবুকে জিজ্ঞেস করলেন। যান আপনি চলে যান আপনার কাজ শেষে।
একটা নাভিশ্বাস ছাড়লাম। তাহলে এযাত্রাও বেঁচে গেলাম।
-ও আপনার টাকা চেঞ্জ করতে হবে?
-হুমম
-কত টাকা করবেন?
-আপাতত দশ হাজার টাকা করি।
-দশ হাজার টাকা দিলে কত রূপি পাব?
-সাত হাজার নয়শ রূপি।
দ্রুত দশ হাজার টাকা বের করে দিলাম,
-সাত হাজার নয়শ থেকে সিম ও সিমের রিচার্জ বাবদ বাদ দেন দু’শ রুপি এবং ট্রেনের টিকিট বাবদ ত্রিশ রূপি তাহলে আপনি পাচ্ছেন সাত হাজার ছয়শ সত্তর রূপি।
দ্রুত রূপিগুলো কয়েক ভাগে ভাগ করে কয়েকটি পকেটে রেখে দিলাম। আগামী এক সপ্তাহ মেয়ের সাথে যোগাযোগ না করে থাকতে হবে, মনটা প্রচণ্ড খারাপ হতে শুরু করল।
-দাদা আপনার ট্রেন চলে এসেছে, দ্রুত আপনার ভোডাফোনের সিমটা দেন।
-কিন্তু আমি তো ওটার টাকা আপনাকে দিয়ে দিয়েছি এমনকি আমি রি-চার্জও করেছি।
-দাদা দ্রুত দিননা সিমটা, আপনার ট্রেন ছেড়ে দেবে।
কিচ্ছু করার নেই সিমটা ওনার হাতে দিয়ে ট্রেনের দিকে ছুটতে থাকলাম
-আরে যাচ্ছেন কোথায়? দাঁড়ান।
-ট্রেন ছেড়ে দেবেতো।
-আরও চার মিনিট আছে তারপর ছাড়বে।
-টিকি নিতে হবে না?
-আপনার টিকিট তো কাটা হয়েছে গেছে।
দ্রুত একটি বাড়ীর মধ্যে দৌড়ে গেলো, বলল
-দাঁড়ান আমি যাব আর আসব।
প্রায় ত্রিশ চল্লিশ সেকেন্ডের মধ্যে বাড়ীর মধ্যে থেকে ফিরে আসল
-এই নিন এই মোবাইলটা নিন, একটি পুরনো মোবাইল হাতে দিয়ে বলেলন।
-কত টাকা দিতে হবে?
-কোন টাকা দিতে হবে না, আপনার ট্রেন এখনই ছেড়ে দেবে। এই নেন টিকিট টা নেন।
আমি একটু কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম, মোবাইল কি ওনি ফেরত নিবেন না, নাকি পরে এসে টাকা দিতে হবে, নাকি ছোট খাট কোন ঝামেলা অপেক্ষা করছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। দৌড়ে ট্রেনে উঠে পড়লাম। ভাবতে লাগলাম বাসা থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত চেকপোস্টে আসতে ফুয়েল ফুরিয়েছে বড় জোর পাঁচ টাকার আর ট্রেনের টিকিটের মূল্য ত্রিশ রুপী মোট বাংলাদেশী টাকা চল্লিশ টাকায় আমি কলকাতা যেতে পারব। আমার বাসা থেকে আমার গ্রামের বাড়ীতে বাসে দু ঘণ্টা সময় এবং একশত টাকার মত অর্থ ব্যয় করতে হয়। এই একশত টাকার পথে আমি সপ্তাহে একবার যাতায়াত করি কিন্তু কাঁটাতারের বেড়া চল্লিশ টাকার পথ অতিক্রম করার সুযোগ আর কখনও দিবে কিনা জানি না।