Saturday, September 12, 2015

ইসলাম বোঝার সহজ তরিকা, পর্বঃ-১-২

ইসলাম বোঝার সহজ তরিকা, পর্ব-১
সারা দুনিয়াতে মুসলমানদের মধ্যে যে কত বিভাগ উপ-বিভাগ আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। মোটা দাগে প্রধানত: চারটি। বিভাগ - সুন্নি, শিয়া, আহমাদিয়া ও সুফি। সুন্নিদের মধ্যে মূল ৪টি মাজহাব যেমন - হানাফি, হাম্বলি, শাফাঈ, মালিকি থাকলেও এদের মধ্যে আবার অসংখ্য উপ-বিভাগ আছে। যেমন - সালাফি, তাবলিগি, মারেফতি, মাইজভান্ডারি, পীর বাদ আর তাদের দর্শনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইসলামি দল ও সংগঠন। যেমন - মুসলিম ব্রাদারহুড, জামাত ইসলাম, আল কায়েদা, তালেবান, জে এম বি, হেফাজতে ইসলাম, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, খেলাফত মজলিস, তাহরিক ইসলাম, আহলে হাদিস ইত্যাদি হরেক রকম দল। প্রশ্ন উঠতে পারে - এত বিভাগ ও উপ-বিভাগ কেন? নানা জনে নানা উত্তর দিলেও, আসল উত্তরটা হবে - কুরান ও সুন্নাহ-কে যে যেভাবে বুঝতে পেরেছে সে সেই ভাবে একটা আদর্শ স্থাপন করেছে। একটা উদারহন দিলে বিষয়টা পরিস্কার হবে।

যেমন বাংলাদেশে তাবলিগ জামাত অনুসরন করে নবির মাক্কি ইসলাম অর্থাৎ যে ইসলাম নবি তার প্রাথমিক যুগে মক্কাতে প্রচার করেছিলেন যার বানীর মূল ভাবই ছিল দাওয়াত ও শান্তি। নবি যখন মক্কায় প্রাথমিক যুগে ইসলাম প্রচার করতেন, তখন তিনি ছিলেন খুব দুর্বল, অনুসারী তেমন ছিল না তাই তার তখনকার বানীর মধ্যে শান্তির ও দাওয়াতের কথাই ছিল মূখ্য। পক্ষান্তরে তিনি মদিনাতে গিয়ে যখন একজন শক্তিশালি শাসকে পরিণত হলেন তখন তার শান্তির ও দাওয়াতের বানী পরিবর্তিত হয়ে জিহাদ, যুদ্ধ বিগ্রহ ইত্যাদিতে রূপ নেয়, আর তখনকার প্রচারিত ইসলামকে মাদানি ইসলাম বলা যায়। তালেবান, আল কায়েদা, লস্কর ই তৈয়বা, বাংলাদেশে জেএমবি, আহলে হাদিস, কোন কোন ক্ষেত্রে জামাত ইসলাম এই মাদানি ইসলামকে অনুসরন করে।

ইসলামকে বুঝতে হলে তাই সর্বপ্রথম নবির জীবনী ভালভাবে জানতে হবে। তার যে দুই পরিস্থিতিতে দুই রকম জীবন ছিল সেটা প্রথমে বুঝতে হবে। ইসলামের বানীর মধ্যে দুই পরিস্থিতির প্রভাব যে অত্যন্ত প্রবল সেটা জানাও ইসলাম বোঝার জন্যে জরুরী যেটা পূর্বেই বলা হয়েছে। একটা উদারহন দিলেই বিষয়টি আরও পরিস্কার হবে:

আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য। সূরা - আ'রফ- ০৭: ১৮৮ ( মক্কায় অবতীর্ণ)

তুমিতো শুধু সতর্ককারী মাত্র; আর সব কিছুরই দায়িত্বভার তো আল্লাহই নিয়েছেন।সূরা - হুদ-১১: ১২ ( মক্কায় অবতীর্ণ)

আপনার কাজ তো ভয় প্রদর্শন করাই এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে পথপ্রদর্শক হয়েছে।সূরা-রাদ-১৩:০৭ (মক্কায় অবতীর্ণ)

আমি তো একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র। সূরা - আনকাবুত ২৯:৫০ ( মক্কায় অবতীর্ণ)

বলুনঃ হে লোক সকল! আমি তো তোমাদের জন্যে স্পষ্ট ভাষায় সতর্ককারী। সূরা -হজ্জ ২২:৪৯( মদিনায় অবতীর্ণ)

বলুন, আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র এবং এক পরাক্রমশালী আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই।সূরা-ছোয়াদ-৩৮:৬৫ ( মক্কায় অবতীর্ণ)

উপরে ছয় টি আয়াত আছে যাতে খুব পরিস্কারভাবে বলা হচ্ছে নবি শুধুই একজন সতর্ককারী মাত্র। অর্থাৎ তার কাজ হলো আল্লাহর বানী প্রচার করে বিপথগামী মানুষকে সতর্ক করে দেয়া। অত:পর যে কেউ সেটা গ্রহন করতে পারে, না হলে নাও গ্রহন করতে পারে, এটা যার যার ইচ্ছা খুশির ব্যপার আর সেটাও বলা হচ্ছে নিচের আয়াতে:

তোমার ধর্ম তোমার কাছে, আমার ধর্ম আমার কাছে। সূরা কাফিরুন -১০৯: ০৬ ( মক্কায় অবতীর্ণ)

এখন খেয়াল করতে হবে উক্ত মোট ৭ টি আয়াতের ১ টি বাদে বাকি সবগুলোই কিন্তু মক্কাতে নাজিল হয়েছিল অর্থাৎ এগুলি নাজিল হয়েছিল নবির ইসলাম প্রচারের একেবারে প্রাথমিক যুগে। আর এটাই কিন্তু এখানে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ইসলামকে বুঝতে। বোঝাই যায় - নবি মক্কাতে দুর্বল ছিলেন তার কোন লোকবল ছিল না, সঙ্গত কারনেই তার সতর্ককারীর ভূমিকা নেয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। মক্কায় নাজিল হওয়া কোন সূরাতেই তাই জিহাদের কথাবার্তা নেই। অথচ এই মক্কাতেই কিন্তু কুরানের সিংহভাগ সূরা নাজিল হয়েছে। কুরানের মোট ১১৪ টি সূরার ৮৬ টি-ই নাজিল হয়েছে মক্কাতে। কুরানের যে কিছু দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক দিক দেখা যায় তার সবই এই মাক্কি সূরাগুলোতে যদিও সেগুলো মূলত বাইবেল থেকেই এসেছে।

এভাবে দীর্ঘ দশ বছর তিনি মক্কাতে শান্তিপূর্ণ ও দাওয়াতী ইসলাম প্রচার করেছেন, কিন্তু কুরাইশরা তার ইসলাম গ্রহন করে নি। দশ বছর পর হঠাৎ করে ছয় মাসের মাথায় তার চাচা আবু তালিব ও তার স্ত্রী খাদিজা মারা যান। উভয়েই তাকে মক্কাতে আশ্রয় ও সমর্থন দিতেন। তারা মারা যাওয়াতে, আশ্রয় ও সমর্থনহীন হয়ে নবির মক্কাতে জীবন ধারন কঠিন হয়ে পড়ল। আগেই কিছু সংখ্যক মুসলমান মদিনাতে হিজরত করেছিল, তিনি তাদের সাথে যোগাযোগ করলেন ও তারা সবাই নবিকে মদিনায় চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। নবি সাথে সাথে রাজী হলেন না, কিন্তু অবশেষে মক্কায় ইসলামের কোন ভবিষ্যত দেখতে না পেয়ে তিনি মদিনাতে হিজরত করলেন। মদিনাতে যাওয়ার আগেই মক্কাতে সূরা বাক্কারা নাজিল শুরু হয়ে গেছিল। মদিনাতে গিয়েও সেটা নাজিল হতে থাকল ও এক পর্যায়ে সমাপ্ত হলো, যদিও কুরানে সূরা বাকারাকে মাদানি সূরা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মদিনাতে যাওয়ার সাথে সাথেই সেখানে তিনি সেখানকার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে বসতে পারেন নি। কারন সেখানে বেশ কিছু ইহুদি ও খৃষ্টান ছিল। তারা তাকে নবি হিসাবে মেনে নেয় নি। আর তাই দেখা যায় তার মদিনা জীবনের প্রারম্ভেই নাজিল হয় নিচের শান্তির আয়াত:

দ্বীন নিয়ে জবরদস্তি নেই। সূরা বাকারা -০২: ২৫৬

অর্থাৎ উক্ত আয়াত নাজিল হয় ইহুদি ও খৃষ্টানদের সাথে একটা সহাবস্থান করার জন্যে কারন তখনও তারা মদিনাতে বেশ প্রভাবশালি ছিল যদিও তারা বাদে মদিনার পৌত্তলিকরা তাকে আশ্রয় দিয়েছিল। এভাবে তিনি অত্যন্ত সুকৌশলে মদিনায় নিজের প্রভাব বৃদ্ধি করতে ও মদিনাবাসীকে একত্র করে শক্তিশালী করতে থাকেন ও নিজেকে একজন নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে উল্লেখযোগ্যরকম শক্তিশালি নেতা হয়ে গেলেনে এবং অত:পর তার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্পর্কিত আয়াত ও নিজেকে সতর্ককারীর ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত করার আয়াত নাজিলের সেখানেই সমাপ্তি ঘটে। এর পর কি আয়াত নাজিল হয় তা একটু দেখা যাক:

আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। সূরা বাক্কারা -২:১৯০ (মদিনায় অবতীর্ণ)

আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুতঃ ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি। সূরা বাক্কারা -২:১৯১(মদিনায় অবতীর্ণ)

আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)। সূরা বাক্কারা -২:১৯৩ (মদিনায় অবতীর্ণ)

সম্মানিত মাসই সম্মানিত মাসের বদলা। আর সম্মান রক্ষা করারও বদলা রয়েছে। বস্তুতঃ যারা তোমাদের উপর জবর দস্তি করেছে, তোমরা তাদের উপর জবরদস্তি কর, যেমন জবরদস্তি তারা করেছে তোমাদের উপর। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, যারা পরহেযগার, আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন। সূরা বাক্কারা -২:১৯৪(মদিনায় অবতীর্ণ)

সুতরাং দেখা যাচ্ছে তোমার ধর্ম তোমার কাছে বা দ্বীন নিয়ে বাড়া বাড়ি নাই বা আমি একজন সতর্ককারী মাত্র এরকম অবস্থা থেকে নবির বিবর্তন ঘটে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে। অনেকটা রাতারাতি শান্তি ও দাওয়াতের বানী হাওয়া হয়ে গেছে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে নবির মদিনায় হিজরত করে সেখানে শক্তি সঞ্চয়ের পর। মদিনায় নাজিল হওয়া সূরা গুলোর মূল প্রতিপাদ্যই হলো - জিহাদ, যুদ্ধ, হত্যা, গণিমতের মালামাল বন্টন এইসব, এখানে তেমন কোন আয়াত পাওয়া যাবে না যা আধ্যাত্মিক বা দার্শনিক ভাব যুক্ত। একথা বহুল ভাবে প্রচলিত যে মক্কায় কুরাইশরা নবিকে অনেক অসম্মান ও অত্যাচার করত, কিন্তু তখন আল্লাহ কখনই এ ধরনের লড়াই করার বা হত্যা করার আয়াত নাজিল করে নি। তখন এ ধরনের আয়াত নাজিল করলে কি আল্লাহ তখন নবিকে রক্ষা করতে পারত না? আল্লাহ তো অসীম ক্ষমতাশালি, নিশ্চয়ই নবিকে সামান্য কুরাইশদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারত। কিন্তু তারপরেও এ ধরনের আয়াত তখন আল্লাহ নবির কাছে নাজিল করে নি। বিষয়টা বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে জানতে এ বিষয়টা সব সময় মাথায় রাখতে হবে।

আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই সব সময় মনে রাখতে হবে যে বর্তমানে যে কুরান আমরা দেখি তাতে কিন্তু সময় ক্রম অনুযায়ী সূরা সমূহ সংকলন বা সন্নিবেশ করা হয় নি। ঠিক সেকারনে এ কুরান পড়ে ইসলামের এ বিবর্তন সম্পর্কে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। ইসলামের বিবর্তনের ধারা সম্পর্কে ভালভাবে বুঝতে হলে প্রথমেই কুরানের সূরাগুলোকে নাজিলের সময়ক্রম অনুযায়ী সাজাতে হবে। তাহলে অনেক বিষয় খুব সহজেই পরিস্কার হয়ে যাবে। এখানে সূরা সমূহের সময়ক্রম অনুযায়ী তালিকা দেয়া হলো:

Quran Verses in Chronological Order

Chronological Order Sooreh Name Verses Revelation Traditional Order

1 Alaq (Al-) 19 Mecca 96
2 Qalam (Al-) 52 Mecca 68
3 Muzammil (Al-) 20 Mecca 73
4 Mudathir (Al-) 56 Mecca 74
5 Fatehah 7 Mecca 1
6 Masad (Al-) 5 Mecca 111
7 Takwir (Al-) 29 Mecca 81
8 A'la (Al-) 19 Mecca 87
9 Leyl (Al-) 21 Mecca 92
10 Fajr (Al-) 30 Mecca 89
11 Dhuha (Al-) 11 Mecca 93
12 Sharh (Al-) 8 Mecca 94
13 Asr (Al-) 3 Mecca 103
14 Aadiyat (Al-) 11 Mecca 100
15 Kauthar (Al-) 3 Mecca 108
16 Takathur (Al-) 8 Mecca 102
17 Ma'un (Al-) 7 Mecca 107
18 Kafirun (Al-) 6 Mecca 109
19 Fil (Al-) 5 Mecca 105
20 Falaq (Al-) 5 Mecca 113
21 Nas (Al-) 6 Mecca 114
22 Ikhlas (Al-) 4 Mecca 112
23 Najm (Al-) 62 Mecca 53
24 Abasa 42 Mecca 80
25 Qadr (Al-) 5 Mecca 97
26 Shams (Al-) 15 Mecca 91
27 Bhruj (Al-) 22 Mecca 85
28 T'in (Al-) 8 Mecca 95
29 Qureysh 4 Mecca 106
30 Qariah (Al-) 11 Mecca 101
31 Qiyamah (Al-) 40 Mecca 75
32 Humazah (Al-) 9 Mecca 104
33 Mursalat (Al-) 50 Mecca 77
34 Q'af 45 Mecca 50
35 Balad (Al-) 20 Mecca 90
36 Tariq (Al-) 17 Mecca 86
37 Qamr (Al-) 55 Mecca 54
38 Sad 88 Mecca 38
39 A'Raf (Al-) 206 Mecca 7
40 J'nn (Al-) 28 Mecca 72
41 Ya'sin 83 Mecca 36
42 Farqan (Al-) 77 Mecca 25
43 Fatir 45 Mecca 35
44 Maryam 98 Mecca 19
45 Ta Ha 135 Mecca 20
46 Waqiah (Al-) 96 Mecca 56
47 Shuara (Al-) 226 Mecca 26
48 Naml (Al-) 93 Mecca 27
49 Qasas (Al-) 88 Mecca 28
50 Israa (Al-) 111 Mecca 17
51 Yunus 109 Mecca 19
52 Hud 123 Mecca 11
53 Yousuf 111 Mecca 12
54 Hijr (Al-) 99 Mecca 15
55 Ana'm (Al-) 165 Mecca 6
56 Saffat (Al-) 182 Mecca 37
57 Luqman 34 Mecca 31
58 Saba 54 Mecca 34
59 Zamar (Al-) 75 Mecca 39
60 Ghafer 85 Mecca 40
61 Fazilat 54 Mecca 41
62 Shura (Al-) 53 Mecca 42
63 Zukhruf (Al-) 89 Mecca 43
64 Dukhan (Al-) 59 Mecca 44
65 Jathiyah (Al-) 37 Mecca 45
66 Ahqaf (Al-) 35 Mecca 46
67 Dhariyat (Al-) 60 Mecca 51
68 Ghashiya (Al-) 26 Mecca 88
69 Kahf (Al-) 110 Mecca 18
70 Nahl (Al-) 128 Mecca 16
71 Noah 28 Mecca 71
72 Ibhrahim 52 Mecca 14
73 Anbiya (Al-) 112 Mecca 21
74 Muminun (Al-) 118 Mecca 23
75 Sajdah (Al-) 30 Mecca 32
76 Tur (Al-) 49 Mecca 52
77 Mulk (Al-) 30 Mecca 67
78 Haqqah (Al-) 52 Mecca 69
79 Maarij (Al-) 44 Mecca 70
80 Naba (Al-) 40 Mecca 78
81 Naziat (Al-) 46 Mecca 79
82 Infitar (Al-) 19 Mecca 82
83 Inshiqaq (Al-) 25 Mecca 84
84 Rum (Al-) 60 Mecca 30
85 Ankabut (Al-) 69 Mecca 29
86 Motafefin (Al-) 36 Mecca 83
87 Baqarah (Al-) 286 Madina 2
88 Anfal (Al-) 75 Madina 8
89 Imran (Al-) 200 Madina 3
90 Ahzab (Al-) 73 Madina 33
91 Mumtahana (Al-) 13 Madina 60
92 Nisa (Al-) 176 Madina 4
93 Zilzaleh (Al-) 8 Madina 99
94 Hadid (Al-) 29 Madina 57
95 Muhammad 38 Madina 47
96 Ra'd (Al-) 43 Madina 13
97 Rahman (Al-) 78 Madina 55
98 Ensan (Al-) 31 Madina 76
99 Talaq (Al-) 12 Madina 65
100 Beyinnah (Al-) 8 Madina 98
101 Hashr (Al-) 24 Madina 59
102 Nur (Al-) 64 Madina 24
103 Hajj (Al-) 78 Madina 22
104 Munafiqun (Al-) 11 Madina 63
105 Mujadila (Al-) 22 Madina 58
106 Hujurat (Al-) 18 Madina 49
107 Tahrim (Al-) 12 Madina 66
108 Taghabun (Al-) 18 Madina 64
109 Saff (Al-) 14 Madina 61
110 Jumah (Al-) 11 Madina 62
111 Fath (Al-) 29 Madina 48
112 Maidah (Al-) 120 Madina 5
113 Taubah (Al-) 129 Madina 9
114 Nasr (Al-) 3 Madina 110


সূত্র :http://www.qran.org/q-chrono.htm

ইসলামে বিভিন্ন গ্রুপ , উপ গ্রুপ সৃষ্টির কারনও মূলত ইসলামের এই বিবর্তন। বিবর্তনের পর্যায়ে যে অংশটুকু এক দলের ভাল লাগে তারা তার ওপর ভিত্তি করে একটা দর্শন তৈরী করে সেটার ভিত্তিতে একটা গ্রুপ তৈরী করে। বিভিন্ন গ্রুপের বিচ্ছিন্ন অংশটুকু ভাল লাগার কারন হলো দুনিয়ার বাস্তব সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা। এ ব্যপারে বিস্তারিত আলোচনা পরের পর্বে করা হবে।
**********************************************************************************

ইসলাম বোঝার সহজ তরিকা, পর্ব-২

প্রথম পর্বে আমরা জেনেছি নবির ইসলাম ছিল আসলে দুই রকম- মাক্কি ও মাদানি ইসলাম। মক্কায় যখন দুর্বল ছিলেন লোকবল ছিল না তখন তিনি শান্তির বানীপূর্ণ ইসলাম প্রচার করেন কিন্তু মদিনায় গিয়ে শক্তিশালী শাসকে পরিণত হওয়ার পর জিহাদি ইসলাম প্রচার করেন। এ পর্বে আমাদের জানতে হবে যে নবীর ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে নাজিলকৃত অনেক আয়াত আল্লাহ পরবর্তীতে বাতিল করে দিয়েছিল। আরবীতে যাকে বলে - নাসেক-মানসুক। ইংরেজীতে বলে -Abrogation। নাসেক হলো - যে আয়াত দ্বারা অন্য কোন আয়াতকে বাতিল করা হয় এবং মানসুক হলো - যে আয়াত বাতিল হয়ে গেল।

এই সব বিষয় যারা জানে না, তারা আল্লাহর আয়াত বাতিলের খবর শুনেই ক্ষেপে উঠতে পারে। তারা প্রশ্ন করতে পারে - আল্লাহর আয়াত আবার বাতিল হয় কি করে? আল্লাহ কি মানুষের মত চঞ্চলমতি নাকি যে এখন এক কথা বলবে, তো পরে অন্য কথা বলবে? আল্লাহ তো সর্বজ্ঞানী আর তার বানী হবে শ্বাশ্বত, তার বানী হবে চিরন্তন, যার কোন পরিবর্তন হবে না।তাদেরকে বিনয়ের সাথে জানান যাচ্ছে যে, কুরানের আল্লাহ যখন তখন তার বানী পরিবর্তন করে ফেলত। বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে দেখুন-

আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান? (সূরা বাক্কারা ২:১০৬)

এবং যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন; তখন তারা বলেঃ আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না। (নাহল ১৬:১০১)

উপরের আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় বলছে যে যেহেতু সে সর্বশক্তিমান তাই তার যখন ইচ্ছা খুশি তার বানী পরিবর্তন করতে পারে। এটা অবশ্যই যৌক্তিক। যা খুশি করতে বা বলতে না পারলে সে কিসের সর্ব শক্তিমান? এটা যে মনগড়া উক্তি তা কিন্তু নয়। খোদ তাফসির ইবনে কাথিরের ভাষ্যও তাই, যেমন-




তাফসির ইবনে কাথির, ১৩শ খন্ড, সাইট: http://www.quraneralo.com/tafsir/

একবার একটা অনুষ্ঠানে ইসলামের নব জাগরনের অগ্রদুত ডা: জাকির নায়েককে এ ব্যপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তো দেখলাম জাকির মিয়া খুব দৃঢ়তার সাথে উত্তর দিল- আমাদের নবি যেহেতু সর্বশেষ নবী, তার পূর্ববর্তী নবীদের কিছু কিছু বিধান এ যুগে যেহেতু আর চলবে না, সেসব পরিবর্তন করার জন্যেই উক্ত বাতিলকরন আয়াত নাজিল হয়েছিল। আর সে আরও বলল - একারনেই ইসলাম হলো আধুনিক ও প্রগতিশীল ধর্ম। উপস্থিত লোকজন বুঝে বা না বুঝে হাত তালি দিল। কিন্তু ডা: জাকির নায়েক যে সম্পূর্ন সত্য কথা বলে নি তার প্রমান হলো খোদ কুরানেরই বহু আয়াত অর্থাৎ শেষ নবীর ওপর নাজিলকৃত বহু আয়াত কিছু কাল পরেই আল্লাহ বাতিল করে দিয়েছিল। তাই প্রশ্ন উঠতে পারে - এটা কিভাবে সম্ভব যে মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই আল্লাহ তার বানী যেমন ইচ্ছা পাল্টিয়ে ফেলে অস্থিরমতি মানুষের মত? সেটা যদি সে করে তাহলে তার বানী চিরন্তন হয় কি করে, তার বানী চিরন্তন না হলে সে নিজেই বা কিভাবে চিরন্তন বা শ্বাশ্বত?

এবার দেখা যাক কুরানের আয়াত বাতিলের কিছু উদাহরন দেয়া যাক:

তোমাদের কারো যখন মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, সে যদি কিছু ধন-সম্পদ ত্যাগ করে যায়, তবে তার জন্য ওসীয়ত করা বিধিবদ্ধ করা হলো, পিতা-মাতা ও নিকটাত্নীয়দের জন্য ইনসাফের সাথে পরহেযগারদের জন্য এ নির্দেশ জরুরী। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সবকিছু শোনেন ও জানেন। (বাক্কারা ২:১৮০)

২:১৮০ আয়াত নিচের ৪:১১-১২ আয়াতদ্বারা বাতিল হয়ে যাবেঃ

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু'জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু'এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে। যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ। (নিসা-৪:১১)

আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের স্ত্রীরা যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তোমাদের হবে এক-চতুর্থাংশ ঐ সম্পত্তির, যা তারা ছেড়ে যায়; ওছিয়্যতের পর, যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর। স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর। যে পুরুষের, ত্যাজ্য সম্পত্তি, তার যদি পিতা-পুত্র কিংবা স্ত্রী না থাকে এবং এই মৃতের এক ভাই কিংবা এক বোন থাকে, তবে উভয়ের প্রত্যেকে ছয়-ভাগের এক পাবে। আর যদি ততোধিক থাকে, তবে তারা এক তৃতীয়াংশ অংশীদার হবে ওছিয়্যতের পর, যা করা হয় অথবা ঋণের পর এমতাবস্থায় যে, অপরের ক্ষতি না করে। এ বিধান আল্লাহর। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। (নিসা ৪:১২)

এখানে ৪:১১-১২ হলো নাসিক এবং ২:১৮০ হলো মানসুক। ২:১৮০ আয়াতে সম্পদ বন্টনের কোন নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকাতে সম্পদের বন্টন যেমন খুশী করা যেতে পারত, কিন্তু ৪:১১-১২ দ্বারা সম্পদের বন্টন সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে তাই উক্ত ২:১৮০ এর কার্যকারিতা আর থাকবে না, পরিবর্তে ৪:১১-১২ আয়াতের কার্যকারীতা বলবত হবে।

আর যখন তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে তখন স্ত্রীদের ঘর থেকে বের না করে এক বছর পর্যন্ত তাদের খরচের ব্যাপারে ওসিয়ত করে যাবে। অতঃপর যদি সে স্ত্রীরা নিজে থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে সে নারী যদি নিজের ব্যাপারে কোন উত্তম ব্যবস্থা করে, তবে তাতে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী বিজ্ঞতা সম্পন্ন। (বাক্কারা ২:২৪০)

উক্ত ২:২৪০ আয়াত, নিচের ২:২৩৪ আয়াত দ্বারা বাতিল হয়েছেঃ

আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে। (বাক্কারা ২:২৩৪)

২:২৪০ আয়াতে প্রথমে বিধান ছিল কোন নারী তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তার মৃত স্বামীর গৃহে অবস্থান করতে পারবে এবং মৃত স্বামীর পরিবার এক বছর পর্যন্ত সেই স্ত্রীর ভরণ পোষণ করবে। কিন্তু ২:২৩৪ দ্বারা সেই বাধ্যবাধকতা আর থাকল না। স্ত্রী ইচ্ছা করলে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত ইদ্দত পালন করে নিজের ইচ্ছামত সিদ্ধান্ত নিয়ে মৃত স্বামীর গৃহ ত্যাগ করে অন্যত্র বিয়ে করতে পারবে বা পিতৃগৃহে চলে যেতে পারবে।


হে নবী, আপনি মুসলমানগণকে উৎসাহিত করুন জেহাদের জন্য। তোমাদের মধ্যে যদি বিশ জন দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে দু’শর মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে একশ লোক, তবে জয়ী হবে হাজার কাফেরের উপর থেকে তার কারণ ওরা জ্ঞানহীন। (৮:৬৫)

উক্ত ৮:৬৫ নিচের ৮:৬৬ আয়াত দ্বারা বাতিল হয়ে গেছে

এখন বোঝা হালকা করে দিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর এবং তিনি জেনে নিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্য দূর্বলতা রয়েছে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যদি দৃঢ়চিত্ত একশ লোক বিদ্যমান থাকে, তবে জয়ী হবে দু’শর উপর। আর যদি তোমরা এক হাজার হও তবে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী জয়ী হবে দু’হাজারের উপর আর আল্লাহ রয়েছেন দৃঢ়চিত্ত লোকদের সাথে। (৮:৬৬)

দেখা যাচ্ছে আল্লাহ মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করার জন্যে ৮:৬৫ বলছে একজন মুসলমান সমান দশজন কাফের, কিন্তু ৮:৬৬ তা পাল্টিয়ে বলছে একজন মুসলমান সমান দুইজন কাফের। ৮:৬৬ আয়াতে বলছে - তিনি জেনে নিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্য দূর্বলতা রয়েছে। তাহলে আল্লাহ কি আগেই জানত না যে মুসলমানদের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে ও একজন মুসলমান দশজন কাফেরদের সাথে মোকাবেলা করতে পারবে না? নাকি নবি আল্লাহকে বলার পরই সেটা আল্লাহ জানতে পারল ? আর তাই তাকে তড়ি ঘড়ি বানী পরিবর্তন করতে হলো?

হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি, ফুফাতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি, খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করে, নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশে। মুমিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার জানা আছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। (আহযাব ৩৩:৫০)

উক্ত ৩৩:৫০ নিচের ৩৩:৫২ আয়াত দ্বারা বাতিল হয়ে গেছে

এরপর আপনার জন্যে কোন নারী হালাল নয় এবং তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের রূপলাবণ্য আপনাকে মুগ্ধ করে, তবে দাসীর ব্যাপার ভিন্ন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপর সজাগ নজর রাখেন।আহযাব-৩৩:৫২

৩৩:৫০ আয়াতে আল্লাহ তার নবি ও হাবিবকে যত ইচ্ছা খুশী বিয়ে করার অনুমতি দান করেছিল নবির বিশেষ অসুবিধা দুর করার জন্য, অত:পর ৩৩:৫২ আয়াত দ্বারা তা আবার নিষেধ করে দিয়েছে। তবে পরমকরুনাময় আল্লাহ বলতে ভোলেনি যে বিয়ে না করতে পারলেও দাসীর সাথে মেলা মেশা করতে কোন নিষেধ নাই।

উক্ত তালিকা নেয়া হয়েছে এ সূত্র থেকে :http://www.sunnipath.com/library/books/B0040P0021.aspx

উক্ত নাসিক মানসুকের তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ শাহ ওয়ালিউল্লা( মৃত্যু ১৭৫৯)।

যে কোন আগ্রহী পাঠক গুগল সার্চে গিয়ে Abrogation in quran or Nasik Mansuk লিখে সার্চ করলেই অজস্র তথ্য পেয়ে যাবেন যেগুলো প্রখ্যাত সব মুসলিম স্কলারদের মন্তব্য দিয়ে ভর্তি ।

বস্তুত: আয়াত বাতিল করন বুঝতে বিরাট স্কলার হওয়া লাগে না। একটু সাধারন জ্ঞান থাকলেই হয়। উক্ত নাসিক মানসুকের ঘটনা থেকে যে নিয়মটা পাওয়া গেল তা হলো -

কোন একই বিষয় বা বিধানের ওপর দুই বা ততোধিক আয়াত নাজিল হলে সর্বশেষ আয়াতটা পূর্বোক্ত আয়াতগুলোর কার্যকারিতা বাতিল করে দিয়ে সর্বশেষ আয়াতটির বিধান অত:পর বহাল থাকবে।

যে কোন রাস্ট্র বা সমাজে যখন আইন প্রনয়ন করা হয়, ঠিক উক্ত নিয়মটাই অনুসরণ করা হয়। ধরা যাক, বাংলাদেশের সংসদ কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে একটা আইন ২০০১ সালে প্রনয়ন করেছিল, ২০১৩ সালে এসে যদি হুবহু একই বিষয়ে আর একটা নতুন আইন সংশোধিত আকারে প্রনয়ণ করে, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ২০০১ সালের প্রণীত আইন বাতিল হয়ে গিয়ে অত:পর ২০১৩ সালের আইনটাই কার্যকরী হবে। একই সাথে ২০০১ ও ২০১৩ সালের আইন কার্যকরী হবে না। যদি কেউ দাবী করে যে উভয় আইনই কার্যকরী হবে - তাহলে হয় সে বদ্ধ পাগল, না হয় আইন সম্পর্কেই জানে না। আর বাস্তবে উভয় আইন একই সাথে কার্যকরী করে উক্ত বিষয়ে কোন বিচার আচার করাও সম্ভব নয়। যদি কেউ সেটা চেষ্টা করে তাহলে বুঝতে হবে সে গোজামিল দিয়ে ধান্ধাবাজী করার কু-মতলবে আছে।

এতক্ষন যে সব আয়াত বাতিল হয়ে নতুন সব আয়াত নাজিল হয়েছিল সে সম্পর্কে আলোচনা করে দেখা গেল, উক্ত বিষয়গুলো আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় তেমন কোন সমস্যা সৃষ্টি করে না বরং দেখা গেল যে সংশোধিত আয়াতসমূহ যথেষ্ট যুগোপযোগী ছিল। তবে এ প্রশ্নটা কিন্তু রয়েই গেল - আল্লাহ কিভাবে যখন খুশী তখন তার বানী চঞ্চলমতি মানুষের মত পরিবর্তন করতে পারে? চির শ্বাশ্বত সর্বজ্ঞানী আল্লাহর যে কোন বিষয়ে বানী হবে একটাই, সে বার বার একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বানী দিলে তার শ্বাশ্বতা বা সর্বজ্ঞানতার বিষয়ে সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক। এবারে আসা যাক ভিন্ন একটা বিষয়ে। আমরা আবার দেখতে পারি, মক্কায় থাকতে বা মদিনায় হিজরত করার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে শান্তির বিষয়ে কি সব আয়াত নবি প্রাপ্ত হয়েছিলেন-


তোমার ধর্ম তোমার কাছে, আমার ধর্ম আমার কাছে। (সূরা কাফিরুন ১০৯:৬, মক্কায় অবতীর্ণ)

দ্বীন নিয়ে জবরদস্তি নেই। (সূরা বাকারা ২:২৫৬, মদিনায় অবতীর্ণ)

আয়াতদ্বয়ের বক্তব্য থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে - উক্ত আয়াত দ্বয় মূলত মুসলমান ও অমুসলমানদের মধ্যে সহাবস্থান বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছে। বলা বাহুল্য, এটাও বোঝা যাচ্ছে যে তারা পরস্পর পরস্পরের প্রতি ও তাদের ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে শান্তিতে বসবাস করবে। ১ম পর্বে কুরানের আয়াত নাজিলের যে সময়ক্রম অনুযায়ী সারণী দেয়া হয়েছিল তাতে যদি দেখি তাহলে দেখা যায় সূরা কাফিরুন নাজিল হয়েছিল ১৮ নম্বরে মক্কাতে, আর সূরা বাকারা নাজিল হয়েছিল ৮৭ নম্বরে নবির মদিনা যাওয়ার পর পরই। কারন সুরা বাকারা নাজিল হয় কিছুটা মক্কাতে বাকীটা মদিনাতে। উক্ত সূরা বাকারা নাজিলের পর নবি মদিনাতে প্রায় দশ বছর অবস্থান করেন এবং মদিনায় অবস্থানের একেবারে শেষ দিকে নাজিল হয় সূরা আত তাওবা সারনী থেকে দেখা যায় নম্বর - ১১৩। বিভিন্ন ইসলামি পন্ডিতদের বক্তব্য সূরা আত তাওবাই নবির জীবনের সর্বশেষ নাজিলকৃত সূরা। এখন এই সূরাতে মুসলমান ও অমুসলমানদের সহাবস্থান বিষয়ে যে সব আয়াত নাজিল হয়েছিল সেসব একটু দেখা যাক-

অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আত তাওবা -৯:৫)

তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে। (সূরা আততাওবা ৯:২৯)

এবারে ৯:৫ আয়াত সম্পর্কে ইবনে কাসিরের তাফসির দেখা যাক-





সূত্র : তাফসির ইবনে কাসির, ৮ম,৯ম,১০ম ও ১১শ খন্ড। সাইট:http://www.quraneralo.com/tafsir/

উক্ত তাফসিরের ৬৪৩ নং পাতায় দেখা যাচ্ছে- মুসলমানরা আগ বাড়িয়ে অমুসলমানদেরকে আক্রমন করবে, তারপর তাদেরকে ইসলাম কবুল করতে বলবে, যদি তারা ইসলাম গ্রহন না করে তাহলে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে ও অত:পর পাকড়াও করে হত্যা করতে হবে।

৯:২৯ নং আয়াতের তাফসির দেখা যাক:




সূত্র: তাফসির ইবনে কাসির, ৮ম, ৯ম, ১০ম, ১১শ খন্ড। সাইট:http://www.quraneralo.com/tafsir/

উক্ত তাফসির থেকে দেখা যাচ্ছে- হজ্জের সময় আর কোন অমুসলিমকে কাবা ঘরের নিকট আসতে নিষেধ করা হচ্ছে, বিশেষ করে খৃষ্টান ও ইহুদিদেরকে। তারা আসত ব্যবসা করতে। তারা আসতে না পারলে মুসলমানরা দরিদ্র হয়ে যাবে এ আশংকা করলে আল্লাহ তাদেরকে বলছে খৃষ্টান ইহুদিদেরকে আক্রমন করে বশ্যতা স্বীকার করার পর তাদের কাছ থেকে জিজিয়া কর আদায় করে তাদের অভাব মোচন হবে। অন্য কথায় অন্যদের সম্পদ কুক্ষিগত করে সম্পদ শালী হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে এখানে আল্লাহ।

উক্ত ৫: ৯ ও ৫:২৯ ও এর আশপাশের আয়াতসমূহ ও তাফসির পড়লে দেখা যায় এগুলো মোটেই আত্মরক্ষার নিমিত্তে যুদ্ধ বা জিহাদের ডাক নয় বরং এটা আগ বাড়িয়ে আক্রমনাত্মক জিহাদ বা যুদ্ধের জন্য আল্লাহ বলছে। অথচ বিভিন্ন বিতর্ক বা আলোচনা অনুষ্ঠানে আমাদেরকে নানা ভাবে বুঝ দেয়া হয়, নবি কখনই আগ বাড়িয়ে কাউকে আক্রমন করেন নি বা হত্যা করেন নি। কিন্তু কুরানে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ন ভিন্ন কথা। তাহলে এভাবে আমাদেরকে অসত্য তথ্য জানিয়ে বিভ্রান্ত করার অর্থ কি?

এমতাবস্থায় কতকগুলি প্রশ্নের মীমাংসা হওয়া দরকার।

এক : নাসিক মানসুক বিধি মোতাবেক সর্বশেষে ৯:৫ ও ৯:২৯ আয়াত নাজিলের পর কি অত:পর বহু পূর্বে নাজিলকৃত শান্তির আয়াতের বিধান - তোমার ধর্ম তোমার কাছে, আমার ধর্ম আমার কাছে (১০৯:৬) বা দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি নেই (২:২৫৬)- এগুলো কি আর বহাল থাকবে? যদি থাকে তাহলে সেটা কিভাবে সম্ভব? একই সাথে যুদ্ধ ও শান্তির কার্যকারীতা বহাল রাখা কিভাবে সম্ভব?

দুই: ব্যবসা বানিজ্য বাদ দিয়ে জিজিয়া কর আদায়ের নামে অন্যের সম্পদ কুক্ষিগত করার বিধান, এটা কতটা যুক্তি সঙ্গত ও ন্যয়সঙ্গত এবং সেটা কিভাবে সে ধরনের বিধান আল্লাহ তার বান্দাদেরকে অনুসরন করতে বলতে পারে?

তিন: অমুসলিমরা যদি জানে যে মুসলমানরা সর্বদাই সুযোগ পেলে তাদের ওপর আক্রমন করে অত:পর জোর করে জিজিয়া কর আদায় করে তাদেরকে নিম্ন শ্রেনীর নাগরিক হিসাবে জীবন যাপন করতে বাধ্য করবে, তাহলে অমুসলিমরা কিভাবে আর মুসলমানদেরকে বিশ্বাস করতে পারে? অত:পর অমুসলিমরা যদি নিজেদের আত্মরক্ষার স্বার্থে আগ বাড়িয়ে মুসলমানদেরকে আক্রমন করে ছার খার করে দেয়, সেটা কি তাদের জন্য খুব অন্যায্য হবে?