অনেক ধরনের নাটক, সিনেমা, শর্ট ফিল্ম তৈরি হচ্ছে। এবং সবকিছু সববয়সীর উপযুক্ত নয়। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে সবাই সবকিছু উপভোগ করতে পারছে, কথা সত্যি। তাই বলে কি আমরা টিভিতে এমন কিছু আর প্রচার করবো না, যা বাচ্চাদের উপযুক্ত না? ইন্টারনেট থেকে এমন সব কিছু সরিয়ে ফেলবো যা গলা চেপে ধরা নিয়মনীতি না মেনে বানানো হয়নি? অবশ্যই না। আর্টিস্টিক লিবারেশনকে এভাবে আটকে ফেলা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
যেটা উচিৎ হবে, সেটা হচ্ছে প্রযুক্তির আরো উন্নতি ঘটানো। এবং এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করা যেখানে প্রত্যেকে তার বয়সের বাইরে “নিষিদ্ধ” কিছু দেখার সুযোগ পাবে না। আমি নিষিদ্ধের আগে-পরে উদ্ধৃতি চিহ্ন দিয়েছি, কারণ কোনটা নিষিদ্ধ, কোনটা নয়, এটা জাজ করার সিস্টেম নিয়ে আমার প্রভূত প্রশ্ন আছে।
যাই হোক, যেটা বলতে চাইছিলাম, সেটা হচ্ছে – আমাদেরকে ঐ ধরনের প্রযুক্তির কথা চিন্তা করতে হবে। প্রযুক্তিটা এমন হতে পারে – প্রত্যেকের এমন একটা ইউনিভার্সাল আইডি থাকবে, যা দিয়ে ইন্টারনেটে বা টিভিতে লগিন করলে যেটা শুধু ঐ প্রোগ্রামগুলোই বীম করবে, বা ঐ সার্চ রেজাল্টগুলোই দেখাবে – যা ওর বয়সের জন্য প্রযোজ্য। এটা নিকট ভবিষ্যতে হবেই, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তখনো বয়সে বড় বন্ধু বা কাজিনদের কাছ থেকে (বা ওদের আইডি ব্যবহার করে) “নিষিদ্ধ” তথ্য পাওয়া কমবে না, স্রেফ ইন্টারনেট থেকে সার্চ করে পাওয়াটা আরেকটু কঠিন হবে, এই আর কি।
এখন উন্নত বিশ্বে কাছাকাছি একটা সিস্টেম আছে। ওরা প্রত্যেক প্রোগ্রামের প্রত্যেক এপিসোডের জন্যই একটা রেটিং দেয়। যেমন, গেইম অফ থ্রোনস এর বেশির এপিসোডই থাকে TV-MA ক্যাটাগরির। এখানে MA হচ্ছে Matured Audience এর সংক্ষিপ্ত রুপ. এটা দিয়ে বোঝাচ্ছে এটার ভাষা শিশুদের উপযুক্ত নয়, এখানে নগ্নতা আছে, হিংস্রতা আছে। বাংলাদেশেও সবকিছুতে এ ধরনের ক্যাটাগরি করা প্রয়োজন।
এখন নাকি অনেকে পরিবারের সাথে একত্রে কোনো প্রোগ্রাম দেখতে গিয়ে বিব্রত হন। আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, সেগুলোর অনেক প্রোগ্রামই হয়তো এমন যেগুলো নিয়ে হয়তো বিব্রত হবার কথা না। তারপরেও অনেকেই হয়, অতিরিক্ত রক্ষণশীলতার কারণে। আবার কিছু হয়তো আসলেই ওরকম প্রোগ্রাম, যেগুলো সববয়সীরা একসাথে দেখতে গেলে সমস্যা হতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে এই ক্যাটাগরিগুলো খুব কাজে দেবে। বড়রা প্রোগ্রাম শুরুর আগেই দেখে নিতে পারবেন, কত বয়সের ওপরের বাচ্চারা সেই প্রোগ্রাম দেখার উপযুক্ত। এবং সেই অনুসারে বাচ্চাদেরকে ঘুমাতে পাঠাতে পারবেন, বা সাথে রাখতে পারবেন।
এই ব্যাপারগুলো নিয়ে উদারনীতি অবলম্বন করা বেশ ঝামেলার ব্যাপার। অনেকেই হৈ হৈ করে উঠবেন হয়তো; বলবেন, আমাদের মত লোকেরাই নাকি সবকিছু ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, রক্ষণশীলতা দিয়ে কিছুই ঠেকানো যাচ্ছে না কিন্তু। শুধু মাঝে মাঝে খারাপটাই উঠে আসছে। তার চেয়ে বরং আসুন, এমন একটা সিস্টেম তৈরি করি যেখানে সবকিছুকে সহজভাবে নিয়ে অধিকতর সুন্দরটাকে বেশি করে উঠিয়ে আনা যায়। আমি বলছি না যে, এই ব্যবস্থাগুলো নিলে সব ঝামেলা চলে যাবে। সব সিস্টেমই প্যাঁচালো, এর মধ্যে থেকেই কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের প্রযুক্তি এখনো তার দুরন্ত শৈশব পেরোচ্ছে। আস্তে আস্তে সে যুবক হয়ে উঠবে। সৃজনশীলতার প্রতি খড়গহস্ত হবার কিছু নেই।