Saturday, September 19, 2015

"জিনে ধরা, ভূতে ধরা কালু ওঝার ঝাড়ফুঁক---

জিনে ধরা, ভূতে ধরা বা জিনের আছর, ভূতের আছর কথাগুলোর সাথে পরিচয় নেই এমন লোক খুব কমই আছে।
- ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে ‘জিন’ অর্থ আগুনের তৈরি অদৃশ্য দেহধারী জীববিশেষ। এছাড়া অন্যান্য মতে আরো অনেক অর্থ বোঝায়।
- ‘ভূত’ অর্থ হিন্দুমতে শিবের অনুচর, পিশাচ। এর বাংলা অর্থ অতীত, এবং বিপরীত শব্দ ভবিষ্যৎ। এ ছাড়াও অনেক অর্থে শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এর আর একটি অর্থ আছে ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’।
আমার মতে যারা কাণ্ডজ্ঞানহীন, মূর্খ তাদেরকেই জিনে-ভূতে আছর করে...!
- জিন-ভূত বাস্তব অথবা অবাস্তব হতে পারে!
,
তবে আমি আজ যে কাহিনীটি বর্ণনা করবো সেটি বাস্তব।
কালুমামু গ্রামের একজন কবিরাজ। দুই মাথা ওয়ালা মাদারবাঁশ লালসালু দিয়ে মুড়িয়ে, কালো পাঞ্জাবি ও লম্বা একটি লালসালু গায়ে দিয়ে সব সময় চলাফেরা করতো।
,
একদিন কবিরাজ ওঝা একটি ছেলের সামনে পড়লো। ছেলেটি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাড়িতে বেড়াতে গেছে। ছেলেটিকে বললো, “বাবা, ভাল আছো?” ছেলেটি বললো, “জি ভালো।”
কোথায় যাবে জিজ্ঞাসা করলে বললো, “জিনের আছর, ঝাড়তে যাই।”
,
জিন-ভূতের ব্যাপারটির প্রতি ছেলেটির একটি কৌতূহল ছিল। ছেলেটি তার সাথে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলো। সে ছেলেটিকে বললো, “চল বাবা, ভালো হবে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে। জিন-ভূতের গল্প শুনতে শুনতে সেই বাড়িতে চলে গেল।
ছেলেটির গ্রাম থেকে দুই গ্রাম পরেই বাড়িটি। সময় লাগলো আধঘণ্টার উপরে। বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখি বাচ্চা-কাচ্চা সহ অনেক লোক জমায়েত হয়েছে। এ বাড়ির একজন ষোড়শীকে জিনে আছর করেছে। মামু বললো, “বেশি দেরি করা যাবে না, আমার জোগাল-পাতি নিয়ে আসেন এখনেই কাজ শুরু করতে হবে।”

,
ওঝার কথামতো ধুপ, লাল শাড়ি, এক পাতিল জেতা নদীর পানি ও একশতো পাঁচ টাকা জোগাড় করে রেখেছে। মামু বললো, “রুগী কই?” মামুকে রুগীর ঘর দেখিয়ে দিলে মামু বললো, “আমি যতক্ষণ ঝাড় দিব ততোক্ষণ এ ঘরে কেউ যাওয়া তো দুরের কথা, উঁকিও দিতে পারবে না, এর ব্যাতিক্রম হলে কোন কাজ হবেনা।” মামু ঘরের ভিতরে গিয়ে ১০ মিনিট পর চলে আসলো। তার পর মেয়ের মাকে বললো পানিপড়া খুব যত্ন সহকারে তালাবন্দ করে রাখবেন। যদি কোনদিন আবার জিনে আছর করে এক গ্লাস পানিপড়া পান করাবেন। এখন কোন জিন নেই, ইচ্ছা করলে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন।
,
কিছুক্ষণ বসে আলাপ করার পর ডাব খাওয়ালো। চলে আসার সময় মেয়ে কেমন আছে, জিজ্ঞাসা করলে, তার মা বলল, “ভাল, ভাত খাচ্ছে।” বাড়ি থেকে বের হয়ে বললাম, “মামু, কি করলেন? কিছুই দেখলাম না, কিছুই বুঝলাম না, জিনও চলে গেল। সে বললো, “ আরে বেটা, এসব চালাকি আর বুদ্ধির কাজ, জিন-ভূত কিছুই না।” ছেলেটি বললো, “আসল ঘটনা কী? বলেন তো শুনি। আসল ঘটনা শুনতে চাও? তাহলে শোন, এ মেয়ের সাথে পাশের বাড়ির এক ছেলের প্রেম আছে। অন্য জায়গায় বিয়ের কথা পাকা হওয়াতে জিনের আছর বলে ভান ধরেছে। বিয়েটি ভেঙ্গে দেয়ার জন্য। মেয়ে যেমন ফাঁকিবাজী করেছে আমিও তেমন ঝাড়া দিয়ে জিন তাড়িয়েছি।
,
ছেলেটি বললো, “কী ঝাড়া দিয়েছেন তাতো জানতে পারলাম না।” সে বললো বুদ্ধি–বুদ্ধি, শোন তাহলে, ঘরে ঢুকে দেখলাম, মেয়ে শুয়ে আছে। মেয়ে যাতে বুঝতে পারে অন্যদিকে ফিরে পানির পাতিলে শব্দ করে প্রস্রাব করলাম। এরপর মেয়েকে দেখিয়ে দেখিয়ে পাতিল থেকে একগ্লাস পানি নিয়ে তাকে খেতে দিলাম। সাথে সাথে মেয়ে আমার পায়ে ধরে বললো, “চাচা, এখন আমার শরীরে কোন জিন নাই, আর কোনদিন আমাকে জিনে ধরবে না। আমি বললাম, “ ঠিক আছে, মা-বাবা যেখানে বিয়ের কথা বলবে সেখানে রাজি হবে তো? না হলে আমি আবার আসবো এবং এই পানিপড়া খাওয়াবো।
মেয়ে বললো, “ঠিক আছে চাচা।” মামু ঘটনাটি শেষ করে বললো, “এই হলো ফাঁকিবাজীর খেলা বুঝলা ভাগিনা...!

"কালেক্টেড"