Friday, September 11, 2015

গবেষণা অনলাইনে কারা বেশি পর্নো দেখে?


অনলাইনে ট্রাফিক বা দর্শক টেনে আনার ক্ষেত্রে যেসব ওয়েবসাইট ভূমিকা রাখে তার মধ্যে পর্নো সাইটগুলো অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এ ধরনের পর্নো সাইট বা অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইট থেকে কী পরিমাণ ট্রাফিক আসে বা এসব ট্রাফিকের উৎস কোথায়?
অনলাইন পর্নোর দর্শকদের নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছে সিমিলারওয়েব নামের একটি প্রতিষ্ঠান। দ্য নেক্সট ওয়েবের এক প্রতিবেদনে এই গবেষণা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, গবেষণার ফলাফল শুনলে অনেকেরই চোখ কপালে উঠে যাবে! শুধু তাই নয়, এ গবেষণায় কারা বেশি পর্নো দেখে সে তথ্য জানার পাশাপাশি অনলাইনে পণ্য বিপণনকারীরা কীভাবে এ ধরনের সাইট ব্যবহার করে তাঁদের লাভের পাল্লা ভারী করছে তারও নতুন দিক খুজে পাওয়া যাবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত হিসাব করার পর জানা গেল, বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটে ডেস্কটপ থেকে যত ট্রাফিক আসে তার মধ্যে চার দশমিক ৪১ শতাংশ ট্রাফিকই অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইটগুলো থেকে আসে।
এই বিষয়টি বিবেচনায় ধরে এক্সট্রিম টেক নামের একটি জরিপকারী প্রতিষ্ঠান গুগলের ডাবলক্লিক অ্যাড প্ল্যানারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ইন্টারনেটে জনপ্রিয় একটি অ্যাডাল্ট সাইটের প্রতি মাসে গড় পেজ ভিউ ৪৪০ কোটির বেশি সেখানে রেডিটের মতো জনপ্রিয় সাইটের পেজ ভিউ মাত্র ২৮০ কোটি! আর যদি ক্যাটাগরি বা বিভাগের তুলনা করা হয় তবে অ্যাডাল্ট ক্যাটাগরি শীর্ষ সাতে অবস্থান করছে যা এখনকার জনপ্রিয় কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিকস ক্যাটাগরির পরের অবস্থান। আবার গেম ও স্পোর্ট ক্যাটাগরিরও ওপরে!
অবসরে দেখার সাইটগুলোর মধ্যে বিবেচনা করলেও অ্যাডাল্ট সাইটগুলো শীর্ষে রয়েছে। জুয়া খেলার সাইট, সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্যচর্চার সাইট, ভ্রমণ সাইট, স্বাস্থ্যবিষয়ক বা অবসর-বিনোদন ধরনের সাইটের চেয়েও জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। ট্রাফিক বা অনলাইন দর্শক টেনে আনার ক্ষেত্রে এবং বিপুল মুনাফা করার ক্ষেত্রেও অ্যাডাল্ট সাইট অনেক এগিয়ে। অনলাইন ফাইন্যান্স ইন্ডাস্ট্রির চেয়েও দ্বিগুণ মুনাফা করছে এ ধরনের সাইট। বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের ট্রাফিক আনার ক্ষেত্রেও চতুর্থ বৃহত্তম ক্যাটাগরি হচ্ছে অ্যাডাল্ট সাইট। জুয়া, গেম ও শপিংয়ের পরেই রয়েছে অ্যাডাল্ট বিভাগ। তবে লক্ষণীয় যে, শপিংয়ের বিজ্ঞাপনগুলো বেশি ট্রাফিক টানছে। বেশির ভাগ ভিজ্যুয়াল বা চাক্ষুষ বিষয় দেখানোর ফলে এই ক্যাটাগরিতে বেশি ট্রাফিক আসছে।
সিমিলারওয়েবের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যে দুটি দেশ থেকে অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইট বা পর্নো সাইট বেশি দেখা হচ্ছে সে দুটি হচ্ছে ইরাক ও মিশর। সামাজিকভাবে রক্ষণশীল এই দুটি দেশ থেকে বেশি পর্নো সাইট দেখার বিষয়টি অনেককেই অবাক করে দিয়েছে। এই তালিকায় থাকা শীর্ষ দশটি দেশ হচ্ছে ইরাক, মিশর, সার্বিয়া, জাপান, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, পেরু, ক্রোয়েশিয়া, চিলি, স্পেন, মরক্কো, ইতালি ও হাঙ্গেরি। তালিকার অধিকাংশ দেশই ইউরোপের। তবে গড়ে বেশিক্ষণ ধরে পর্নো দেখার হিসাব করলে পশ্চিমাদের হারিয়ে দিয়েছে পূর্বাঞ্চল। মধ্য-প্রাচ্য ও এশিয়ার দেশগুলোই বেশিক্ষণ ধরে পর্নো দেখার তালিকার শীর্ষে।
বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে তিন ঘণ্টা ১৬ মিনিট করে পর্নো সাইট দেখা হয়। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশিক্ষণ ধরে পর্নো সাইট দেখা হয় কুয়েত থেকে। কুয়েত থেকে গড়ে চার ঘণ্টা ১৯ মিনিট করে পর্নো দেখা হয়। এরপর রয়েছে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, সৌদি আরব, কাতার, হংকং, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, চিলি, ভেনেজুয়েলা, ইন্দোনেশিয়া, ইসরায়েল, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ড। সৌদি আরব ও কাতারের মতো দেশে গড়ে সাড়ে তিন ঘণ্টার ওপরে পর্নো সাইট দেখা হয়।
যে দেশগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি পেজ ভিউ বা ভিজিট হয় সেগুলোর মধ্যেও এগিয়ে আছে ইউরোপের দেশগুলো। বিশ্বজুড়ে অবশ্য পেজ ভিউ এর গড় হচ্ছে তিন দশমিক আট। পেজ ভিউয়ের দিক থেকে শীর্ষে আছে হংকং। এরপরে রয়েছে নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস। তারপরের অবস্থানটি এশিয়ার আরেক দেশ সিঙ্গাপুরের। যেসব সার্চ ইঞ্জিন থেকে পর্নো সাইটগুলোতে বেশি ট্রাফিক আসে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে গুগল। মোট সার্চ ট্রাফিকের ৮৩ দশমিক ৪৮ শতাংশই আসে গুগল থেকে।

 

অর্থাৎ, পর্নো সাইটগুলো সার্চ করতে অধিকাংশ মানুষ গুগলকে ব্যবহার করেন। এর কারণ হচ্ছে যে সার্চ ইঞ্জিনকে মানুষ বেশি বিশ্বাস করেন সেখান থেকেই এ ধরনের সাইট তারা অনুসন্ধান করেন। তবে গুগলের ফিল্টারিংয়ের ফলে বিং সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করেও অনেকে এ ধরনের সাইটে যান।
সিমিলারওয়েবের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে কমসংখ্যক অ্যাডাল্ট সাইট দেখা যায় এমন দেশগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এর মধ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, সৌদি আরব, কাতার ও ইন্দোনেশিয়া। অবশ্য বেশি বাউন্স রেট (সাইটে ঢুকে দ্রুত সরে পড়া) হিসাব করলেও মুসলমান দেশগুলোর সংখ্যাধিক্য দেখা যায়। ঝঁুকির কথা মাথায় রেখে এ ধরনের সাইটে ঢোকার পর তা থেকে সরে যাওয়ার ঘটনা যে দেশগুলোতে বেশি ঘটে তার মধ্যে পাকিস্তান শীর্ষে। এরপর রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, কাতার, সৌদি আরব, ভারত, ইরাক ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ।
সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট থেকে পর্নো সাইটের ভিজিটর আসার কথা বিবেচনা করলে  ফেসবুকের চেয়ে রেডিট এগিয়ে।  রেডিট থেকে ভিজিটর আসে ৫৭ শতাংশের ওপরে। সেই তুলনায় ফেসবুক থেকে আসে প্রায় ২৭ শতাংশ ভিজিটর। এরপর রয়েছে ইউটিউব ও টুইটার।
দ্য নেক্সট ওয়েবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিমিলারওয়েবের এই গবেষণা থেকে আমরা কী জানলাম? আমরা জানলাম যে, পর্নো সাইটগুলো এখনো অনলাইনে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এসব সাইটগুলোর অধিকাংশ তৈরি হয়েছে ইউরোপের কোনো দেশ থেকে যার ট্রাফিক বাড়ানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। মূল বিষয় হচ্ছে, পর্নো ছবির এই শিল্প গড়ে উঠেছে লস অ্যাঞ্জেলেসকে কেন্দ্র করে। তাই অনলাইন ট্রাফিক বাড়ানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকেও বিবেচনায় ধরতে হবে। অবশ্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে অধিকসময় ধরে পর্নো দেখা হলেও সেখানকার বাউন্স রেটও বেশি।
পর্নো সাইটগুলোর সফলতার পেছনে রয়েছে এর অধিক জনপ্রিয়তার বিষয়টি। অবশ্য পর্নো সাইটকে ব্যবহারকারীর পছন্দমাফিক করে তোলা, বিভিন্ন বিধি-নিষেধ ও আইন-কানুনের আওতায় আনার মতো বিষয়ও এই ক্ষেত্রটিকে প্রভাবিত করছে। তারপরও এমন নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বিশ্বজুড়ে পর্নো সাইটের জনপ্রিয়তা বেড়েই যাচ্ছে এবং এই ব্যবসাও চলছে রমরমা।