বনু কোরায়যার যুদ্ধঃ
সেই পুরনো
ক্যাচাল। মোহাম্মদের বর্বরতা দৃষ্টান্ত তুলে ধরার জন্য এই যুদ্ধ (আসলে
গণহত্যা)একটা নাম মাত্র। মুসলমানগণ কোরায়যা গোত্রের এই গণহত্যাকে বলেন এটি
মূলত ইহুদী নিধনমাত্র। ইহুদীরা মুসলমানদের চিরশত্রু এবং তারা মোহাম্মদের
বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতো বলে বনু কোরায়যার বিরুদ্ধের মোহাম্মদ এই গণহত্যা
চালিয়েছিলো বলে মুসলমানগণ এর পক্ষে কথা বলতে চান। প্রকৃতপক্ষে মোহাম্মদের
জীবনের অন্যান্য ঘটনার মত এর সম্পর্কেও বেশিরভাগ মুসলমান তেমন কিছু জানে
না। আমার মনে হয়, অনেক নাস্তিকগণও বনু কোরায়াযা গোত্র নিধনের এই ঘটনার
প্রকৃত ইতিহাস জানেন না (আমার অজ্ঞতা হলে মাফ চাইছি)। তাই, আমি মনে করি এ
গণহত্যার ইতিহাসটা ব্লগে থাকা দরকার। এর সকল ঘটনা আর রাহীকুল মাখতুম (
মোহাম্মদের উপর লিখা শ্রেষ্ঠ জীবনী) হতে নেয়া।
এ গণহত্যাটি সংঘটিত হয়েছিল খন্দকের যুদ্ধের পরেই। কথিত আছে, খন্দক থেকে
প্রাত্যাবর্তন করে মোহাম্মদ যোহরের নামায পড়ছিল। সে সময় জিবরাইল এসে বলল, “
হে আল্লাহর রাসুল! আপনি অস্ত্র রেখে দিয়েছেন, অথচ ফেরেশ্তারা এখনও অস্ত্র
রাখেনি। কওমের অনুসরণ করে আমিও আপনার নিকট আগমন করেছি। উঠুন, আপনার
বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বনু কোরায়যার নিকট চলুন। আমি আগে আগে যাচ্ছি। ওদের
দূর্গে কাঁপন এবং মনে ভয় ও আতঙ্ক ধরিয়ে দেবো।” মোহাম্মদ একজন সাহাবি দিয়ে
ঘোষনা দেয়ায় যারা শুনতে পাচ্ছে এবং অনুগত্য করার মন যাদের আছে তারা যেনো
আছরের নামায বনু কোরায়যায় গিয়ে আদায় করে। এরপর মোহাম্মদ বনু কোরায়যার
উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। কিছুক্ষণ পরেই মোহাম্মদ সেখানে পৌছে যায়। কিছুক্ষণ পর মদীনার মুযাহির ও আনসাররাও রওয়ানা হয়ে যায়। পথে আসরের নামাযের সময় হয়ে গেলে কেউ কেউ নামায না পরেই চলতে থাকে। মোহাম্মদের কথামত বনু কোরায়যায় গিয়ে আসরের নামায আদায় করে (যদিও ততক্ষণে এশার নামাযের সময় পার হয়ে যায়)।
এরপর তিন হাজার লোক মিলে বনু কোরায়যা গোত্র অবরোধ করে। অবরোধ কঠোর হলে ইহুদীদের সামনে তিনটি প্রস্তাব দেয়া হয়,
১) ইসলাম গ্রহনের মাধ্যমে দ্বীনে মোহাম্মদীতে প্রবেশ এবং এর মাধ্যমে নিজেদের জানমাল ও পরিবার পরিজন হেফাজত করা। আল্লাহর কসম, তোমাদের নিকটে এটাতো স্পষ্ট হয়েছে জে, মোহাম্মদ প্রকৃতই নবী এবং তিনি হলেন সেই নব যার কথা তোমাদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
২) নিজ পরিবার পরিজনকে স্ব-হস্থে এবং তলোয়ার নিয়ে সর্বশক্তিতে মুসলমানদের উপর ঝাপিয়ে পড়া। এরপর হয় তো জয় অথবা পরাজিত হতে হবে। এমনও হতে পারে যুদ্ধে সবাইকে নিহত হতে হবে।
৩) রাসুল্লাহ ও সাহাবিদের ধোঁকা দিয়ে শনিবার তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়। কেননা তারা নিশ্চিত থাকবে শনিবার কোন লড়াই হবে না।
তারা তিনটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে অস্ত্র সমর্পনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু অস্ত্র সমর্পনের আগে তারা মুসলমানদের সাথে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করে। আলোচনার জন্য তারা লোবাবাকে বেছে নিয়েছিল, কারণ লোবাবার কিছু বাগান ইহুদীদের সীমার মধ্যে ছিলো। লোবাবা তাদেরকে পরামর্শ দেয় অস্ত্র সমর্পন করার, সাথে সাথে সে এই ইঙ্গিত করে যে, যাই করা হোক না কেন, মৃত্যু ভিন্ন ইহুদীদের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। এই পরামর্শের পর ইহুদীরা সিদ্ধান্ত নেয়। মুসলমানরা এখানে আত্মসমর্থন করে যে, ইহুদীরা অস্ত্র সমর্পন না করে যুদ্ধ করতে পারতো।
অস্ত্র সমর্পনের পর মোহাম্মদ সাহাবীদের নির্দেশ দিলো পুরুষদেরকে বেঁধে ফেলার জন্য। এ কথা শোনার পর সকল পুরুষদের বেঁধে ফেলা হল। নারী ও শিশুদের পৃথক করা হলো।
এরপর মদীনার বাজারে গর্ত করা হয়। গভীর গর্ত করার পর হাত বাঁধা ইহুদীদের দলে দলে নিয়ে আসা হয় এবং শিরোচ্ছেদ করে সেই গর্তে নিক্ষেপ করা হয়। পাইকারী হত্যাকাণ্ড শুরু হয়ে গেলে কয়েকজন ইহুদী তাদের সর্দার কা’ব ইবনে আসদকে বললো, আমাদের যে আচরণ করা হচ্ছে এ ব্যপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কি? সে রূঢ়ভাবে বললো, তোমরা কি কিছুই উপলব্ধি করতে পার না? দেখতে পাচ্ছো না যাকেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সে আর ফিরছে না। নতুন করে ডেকে নেয়াও বন্ধ হচ্ছে না। হত্যা করা হচ্ছে, স্রেফ ডেকে নিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। মোদ্দাকথা কথা সকল হাত বাঁধা ইহুদীদে মদীনায় হত্যা করা হয়। তাদের সংখ্যা ছিলো ছয় থেকে সাতশয়ের মাঝামাঝি।
মোহাম্মদ নির্দেশ দিয়েছিল যাদের নাভির নিচে চুল গজিয়েছে তাদেরই যেনো হত্যা করা হয়। আতিয়া কারযি নামক এক লোকের নাভির নিচে চুল গজায়নি, এ কারণে তাকে হত্যা করা হয়নি। (কি মহানুভব দৃষ্টান্ত মাইরি!)
বনু কোরায়যা গণহত্যা শেষে দেড় হাজার তলোয়ার, দু হাজার বর্শা, তিনশত বর্ম, পাঁচশত ঢাল, বিরাট এক খেজুর বাগান, নারী এবং শিশুদেরকে গণিমতের মাল হিসেবে পাওয়া যায়। কয়েদী এবং শিশুদের নযদে প্রেরণ করে তাদের বিনিময়ে আরও অস্ত্র এবং ঘোড়া ক্রয় করা হয়। গণিমতের মাল থেকে মোহাম্মদের জন্য এক পঞ্চমাংশ বের করে রেখে অবশিষ্ট সবকিছু মুসলমানদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হয়। মোহাম্মদ বনু কোরায়যার নারীদের মধ্যে রায়হানা বিনতে আমর ইবনে খানাফাকে তার নিজের জন্য পছন্দ করে।
বনু কোরায়যা গণহত্যা ও খন্দকের যুদ্ধ সম্বন্ধে কোরানে সূরা আহযাবে বহু আয়াত অবতীর্ন হয়। এতে উভয় যুদ্ধের বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা পাওয়া যায়।
মোহাম্মদের যুদ্ধের পক্ষে ওকালতি করতে গিয়ে মুসলমানেরা দাবী করে শত্রুপক্ষের আক্রমন ঠেকানোর জন্যই মোহাম্মদ যুদ্ধ করেছে। কিন্তু, অন্যান্য সকল যুদ্ধের মতই এ গণহত্যার কোন নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এ গণহত্যাটি শুধুই ধন-সম্পদ লুন্ঠন ও নারী শিশু দখল করার জন্য সংগঠিত হয়েছিল এ ব্যপারে কোন সন্দেহ নেই।